ভবঘুরে পর্বঃ০৩

0
900

ভবঘুরে পর্বঃ০৩
লেখাঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ

সকাল ন’টা। সচরাচর এতো দেরি করে ঘুম থেকে জাগে না আবিদ। গতদিনের এতোসব ধকলে শরীরটা বিছানা ছাড়তে গাঁইগুঁই করেছে ভীষণ। যাবতীয় ক্লান্তিগুলো গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা ছাড়ল সে। ব্যাগ থেকে ব্রাশ বের করে পেস্ট লাগিয়ে আস্তে আস্তে বাগানের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ল। সকালবেলা একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য না পেলে দিনটা ভারি হয়ে থাকে তার। কোনো কাজ ঠিকমতো আগায় না। তাছাড়া গতকাল ইশতিয়াক সাহেব এই বাড়ির সীমানায় আবিদের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কিছুই বলে গেছেন। অর্থাৎ এই বাড়ির সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ অনস্বীকার্য। সেই স্বাধীনতা সে পেয়ে গেছে। কাজেই,গোটা দিনটা মাটি না হওয়ার স্বার্থে বাগানে সে একটু ঘুরে আসতেই পারে! গেট পার হতেই চোখে ধাঁধা লাগালো সুবিস্তৃত বাগান চোখে পড়ল আবিদের। সকালের গ্রীষ্মের সূর্যের দীপ্তি আছে বটে তবে তেজোহীন। পুবের রাশিরাশি আমগাছের মাথায়-মাথায় মৃদু উষ্ণতা ছড়াচ্ছে দিনপতি। ভোরের তুলনায় পাখিদের কিচকিচ কমে এসেছে এখন। বোধহয় প্রাতঃকৃত্য সেরে নিজনিজ কর্মস্থলে পাড়ি দিয়েছে তারা। আমবাগানের ভিতর একটা শীতল ঝিরিঝিরি হাওয়া বিরাজমান। চারিপাশে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাঁতে খচখচ করে ব্রাশ সঞ্চালন করতে করতে বাগানের ভিতর দিয়ে হাঁটছে আবিদ। একটু পরপর মুখে ‘পিচ্’ শব্দ করে পেস্টসমেত থুথু ফেলছে। আচমকা টসটস করে পাঁচ-সাতটা পানি-পঁচা আম তার বুকে,হাতে, গলায় নিক্ষিপ্ত হল। নিমেষেই উটকো
পঁচা গন্ধ নাকে ধাক্কা দিল আবিদের। উদগ্র গন্ধে নাকে হাত দিয়ে উবু হয়ে বসে পড়ল সে। ভীষণ বিবমিষার ইচ্ছে হল। কিন্তু পেটে কিচ্ছুটি নেই। বারকয়েক চেষ্টা করে গলা দিয়ে এসিডীয় লালা ভিন্ন কিছুই বেরেলো না। খানিক বাদে চোখ তুলতেই লক্ষ্য করল দুইজন ধিঙ্গি মেয়ে লাফাতে লাফাতে বাগানের ভিতর দিয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে। খুব বেশি দূরে নয়। এইতো তার লম্বা পায়ে চার কদম দিলেই ছোঁয়া যাবে। তার সক্রিয় ইন্দ্রীয়গুলো বলছে, এই মেয়েগুলোই এই অকাজটা করেছে। সে নিজেকে আপাদমস্তক একবার নাক-মুখ কুঁচকে দেখে নিয়ে জনান্তিক করল, “অসভ্য মেয়ে কোথাকার”
প্ল্যানমাফিক ছুটতে থাকা উরবি আর নিরু বোধহয় আবিদের উদ্ধত গনগনে কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়াল। চকিতে ঘাড় ঘুরাল দু’জনেই । একজন মুখ লুকিয়ে লজ্জিত হাসল এবং অন্যজন পাক্কা একমিনিট অট্টহাসি হেসে সুমুখে এক ইঞ্চি পরিমাণ জিভ বের করে মুখ ভেংচি কেটে বলল,
-‘ আপনার চৌদ্দগুষ্টি অসভ্য’ বলে আবার হাসতে লাগল। কানে তালা লাগানো তীক্ষ্ণ হাসি। বেশিক্ষণ কানে লাগলে মনে হয় কানের আশেপাশে ঝিঁঝি পোকারা বাসা বেঁধেছে আর দলবদ্ধ হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। আবিদ নড়ল না। কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাল না। এদেরমধ্যে একজনকে সে হাড়ে-হাড়ে চেনে। গতরাতে কয়েকঘন্টার ব্যবধানে সেই ক্ষীণাঙ্গী মেয়েটার মূর্তি সে ভেতরে এঁকে নিয়েছে। এই মেয়ের মতো চরম উদ্ভুট্টি মেয়ে মানুষ সে এর আগে দেখেনি। তার সঙ্গে তর্ক করতে যাওয়া নিষ্ফল। দুই উরুতে ভর করে একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল আবিদ। পরাস্ত গলায় বলল,
– ঠিক আছে আমার চৌদ্দপুরুষ অসভ্য। এই শরীর নিয়ে তো ঘরে যাওয়া যাবে না। আশেপাশে পুকুর বা খাল আছে?
আবিদ কথাটা নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল। ঐ মেয়ে এককথায় উত্তর দিবে না তার জানা আছে। তাই লাজুক চেহেরার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতকুলশীন মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করা। নিরু বলল,
-‘ হ্যাঁ বাগান পেরিয়ে একটা গেট আছে। ওদিকেই যাওয়া যাবে চাচাদের পুকুরে’
তৎক্ষনাৎ উরবি চোখ পাকিয়ে বলল,
-‘চুপ থাক, কোনো পুকুর নাই। যান।
বলে আর একমুহূর্তও দাঁড়াল না। খপ করে নিরুর ডানহাত জাপটে ধরে একপ্রকার জোর করে টেনে নিয়ে বাগানের ভিতর দিকে চলে গেল। আবিদ হাত বাড়িয়ে মুখে একবার অস্ফুটে বলল, “আরে শুনুন… এখন কী করব? উফ্!”
অনন্যোপায় হয়ে আবিদ সতর্ক চোখে তাদের পিছুপিছু এগোলো।
——————————-

পুকুর ঘাটে এসে বসে উরবি অট্টহাসির ছটায় কাঁপতে কাঁপতে নিরুর গায়ের উপর আছড়ে পড়তে লাগল। নিরুও হাসছে। তবে তার চোখেমুখে একটা সুপ্ত অপরাধবোধ খেলে বেড়াচ্ছে সৌদামিনীর মতো। এই হাসছে এই নিশ্চুপ! উরবির হাসির তীব্রতা কমে এলে বলল,
-‘ বেটাকে আচ্ছামতো জব্দ করছি। কেজানে কি করতেছে এখন!
নিরু আমোদে আকণ্ঠ ডুব দিয়ে বলল,
-‘ হা হা, কি বাজে গন্ধ বের হইছিল। বমি করতেও গেছিল। বেচারা!
– হ, তুই ভাব একবার!কালকে আমার সে কি জ্বর! তার ওপর এই লোকটা ধপাস করে এসে আমার গায়ের উপর এসে শুয়ে পড়ছে৷ কি শক্ত শরীর আল্লাহ!
নিরু এই ঘটনার আদ্যোপান্ত কিছুই জানে না। সে উৎসাহে উদ্বেলিত হয়ে বলল,
-‘ বলিস কি রে! একেবারে গায়ের ওপর?
– আরে ইচ্ছে করে না তো!
– তাহলে?
উরবি ঘুরে বসে বলল,
– বাবা তাকে নিয়ে আসছিল কোত্থেকে যেন!তারপর বাবা তাকে থাকতে দিল পাশের ফ্ল্যাটে। আমি ঐ ঘরেই শুয়ে ছিলাম। সে অন্ধকারে এসে আমার পিঠের ওপর শুয়ে পড়ল। কি বাজে অবস্থা দেখ্!
নিরু ফোঁড়ন কাটল,
– পুরাই ফিল্ম মামা! তা! হৃদয়ে কি ঘন্টা বেজেছে নাকি তখন?
উরবি দাঁতে নিচে অধর চেপে ধরে নিজের সরু- লম্বা আঙুলগুলো দিয়ে নিরুর হাতের ডান পেশিতে ঠাস করে চপেটাঘাত করে বলল,
-‘ ধ্যাৎ, বাজে কথা বলিস ক্যান?’
নিরু আবারো টিপ্পনী কাটল,
– ‘বাজে কথা কি শুধু ঢাকার মেয়েরা বলে?’
উরবি নিজের খোলা চুলগুলো হাত-খোঁপা বেঁধে পায়ের ওপর পা তুলে বলল,
-‘ আমি মোটেই ঢাকার মেয়ে না। আমি এই গ্রামেরই মেয়ে। ‘
-আচ্ছা?
সেসময় পানি-পঁচা আমের উৎকট গন্ধটা আবারো নাকে এলো দু’জনের। তড়িৎ তারা একসঙ্গে একে অপরের দিকে তাকাল। উরবি তাড়াতাড়ি নিজের হাত শুঁকে নিল এবং পরক্ষণে নিরুর হাতও শুঁকে নিল। কিন্তু উভয়ের হাত থেকে দুর্গন্ধের কোনো আলামত মিলল না। তারা হাতে পলিথিন মুড়িয়ে আম ছুঁড়েছিল, তাহলে এই গন্ধ কোত্থেকে? দুজনেই ব্যস্ত হয়ে নিজেদের শরীর,পোশাক, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। গন্ধটা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। আলপটকা নিরু ঘাড় ঘুরাতেই চমকে উঠল। চমকালো উরবিও। লম্বা দীর্ঘকায় লোকটা তাদের পাশে বুক ফুলিয়ে পাথরের মতোন দাঁড়িয়ে আছে আর মুখে দিক্বিজয়ের হাসি হাসছে। দেখে মনে হয় পুকুরের দেখা পেয়ে সে বিশ্বজয় করেছে। উরবি মুখে হাত দিয়ে তেজোদৃপ্ত গলায় বলল,
– এই খাটাস লোক। দূরে যান। গন্ধে মরে গেলাম বাপরে!
আবিদ নড়ল না। পাষাণে গড়া মূর্তির ন্যায় বিকারহীন দাঁড়িয়ে রইল। উরবি খুব সাবধানে শুষ্ক জায়গা খুঁজে আবিদের পেটে আঙুল ঠেসিয়ে ঠেলা দিয়ে বলল,
-‘যান বলছি’
আবিদ রোবটের মতো ঘাড় ঘুরিয়ে উরবির চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত মুচকি হেসে বলল,
-‘যেতে পারি, এক শর্তে। আপনি আমার ব্যাগ থেকে তোয়ালে,শার্ট, প্যান্ট নিয়ে আসবেন। ও হ্যাঁ আন্ডারওয়্যারও নিয়ে আসবেন। সাবান যদি দয়া করে আনেন তো চলবে না আনলে জোর নেই। কাদামাটি ডলে কাজ সেরে দিব।
নিরু ওড়না নাকে দিয়ে ভিতরে মিটমিট হাসছে। উরবি বদ ছেলেটার সাহসিকতায় কোপদৃষ্টিতে তাকিয়ে আবিদের দিকে। পিটপিট করে পড়ছে চোখের পলক। ঠোঁটের কোণে রাগ,ক্ষোভ আর অপমানের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্ষীণ দুইহাত পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি এঙ্গেলে কটিদেশে ঠেসানো। হঠাৎ সে ঝাঁজালো গলায় বলল,
-যা তো নিরু, নিয়ে আয়। দাঁড়িয়ে আছস কেন এখনো।
নিরু বেচারি থতমত খেয়ে হাসি মুখটা মুহূর্তে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। দুর্গন্ধ তোয়াক্কা না করে হাত নামিয়ে উল্লেখ্য বস্ত্রাদি আনার জন্য পা বাড়াল। আবিদ বাঁধাগ্রস্ত গলায় বলল,
-‘ আপনি নন,ইনি যাবে। বেশি আম কে মেরেছে?… আপনি কয়টা মেরেছেন?’ প্রশ্ন করা হল নিরুকে। নিরু আমতাআমতা করে বলল,
-‘একটা’
বলেই চোখ নামিয়ে নিল সে। আবিদ এলো খোঁচা দাড়িতে আঙুল চালিয়ে বলল,
-‘তাহলে…আমার গায়ে পঁচা আম পড়েছে মোট…উমম… আটটা। তাহলে বাকিগুলো ইনি মেরেছে। সুতরাং আপনিই যাবেন।’ শেষ কথাটা উরবির দিকে আঙুল তুলে বলল আবিদ।
উরবি রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
-‘যাব না, কী করবেন? আমাকেও আম ছুঁড়বেন? পঁচা আম কুড়িয়ে আনব? আসেন আম ছোড়াছুড়ি খেলি। খুব মজা হবে।
আবিদ গা নাড়া দিয়ে একটু হেসে উঠল শব্দহীন। রায়বাঘিনীর ন্যায় ফোঁসফোঁস করতে করতে মুখ ফেরাল উরবি। এই বেপরোয়া নিরুচ্চার হাসিটা কাটা ঘায়ে নোনের ছিঁটার মতো মনে হল উরবির। ব্যাটা জংলি! খাম্বা, ঠুনি, দৈত্য! মুখে বিড়বিড় করে রংবেরঙের গঞ্জনায় মনোরথ পূরণ করল সে। অবস্থা ঝঞ্ঝাটময় দেখে নিরু নিজ উদ্দ্যেগে জায়গাটা ছাড়ল কাপড়চোপড় আনতে। উরবি ক্রোধভরে বসে পড়লো ঘাটলার বেদির ওপর।

নিরু প্রস্থানের পর আবিদ উরবির সামনে থেকে সরে গেল বিনা বাক্যব্যয়ে। জুতোজোড়া খুলে একপাশে রেখে এক টানে টিশার্ট খুলল সে। এরপর ঝপাং করে লাফ দিল পুকুরে। হঠাৎ ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠল পুষ্করিণীর ঈষৎ সবুজাভ জল। ছোটবড় আন্দোলিত ঢেউয়ের তরঙ্গ ক্রমে ক্ষীণ হতে হতে পুকুরের পাড়ে উৎসর্গ করল প্রাণ। দীর্ঘকায় লোকটা ঝপঝপ করে দু-তিনটা ডুব একসঙ্গে দিয়ে নিজেকে যেন নিষ্কলুষ করল। তার সুদীর্ঘ চুল ঝরঝরে চুলগুলো অবগাহনে সামনে ঝুলে পড়ছে আর সে সুনিপুণ দক্ষতায় গুচ্ছচুলকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। উজ্জল-শ্যামল গা হতে দ্রুতবেগে ঝরছে বিন্দু বিন্দু উদক। পুরু ভুরু যুগলের নিচে ছোট ছোট দুটি চোখে যেন অসীম মায়া ঝরছে জলের সঙ্গে সঙ্গে। উরবির ভেতরটা যেন হাহাকার করে ওঠে, “ওরে গোসল করিস না। মায়া যে ঝরে পড়ছে!” ঘাটে বসে বাঁকা চোখে লোকটাকে দেখতে দেখতে উরবির চোখদুটো স্নিগ্ধ হয়ে এলো অজ্ঞাতেই। হঠাৎ টনক নড়তেই আগের রূপে ফিরে চোখমুখ শক্ত করে নিল সে। খাটাস একটা! বিড়বিড় করল সে।
– ‘কিছু বললেন?’ পাকা ঘাটের উপর থপথপ করে জলসমেত পা ফেলে উঠে বলল আবিদ।
-‘ নাহ, বলে বিরক্তিসূচক মুখ ঘুরিয়ে নিরু আসার পানে উঁকি দিল সে।
– এটা বোধহয় আপনার? ইউজ করতে পারি? ঘাটের কোণা থেকে একটা অর্ধব্যবহৃত ছোট সাবান তুলে নিয়ে শুধালো আবিদ।
উরবি বোধকরি ঝগড়াটে গলাটা বজায় রাখতে ভুলে গেল। শান্ত গলায় বলল,
-‘কী করে বুঝলেন এটা আমার?’
-‘এমনেই’ —এড়িয়ে যেতে চাইল আবিদ।
উরবি নাছোড়বান্দা। হুকুমের স্বরে বলল,
– ‘বলুন বলছি’
আবিদ আঁটুবাঁটু হয়ে মনের সত্য ভাবনা উগরালো,
– সাবানের মধ্যে আপনার ঝগড়াটে চেহারাটা ভাসছিল কি না। তাই…
আচানক শিকারকে সামনে পেয়ে বাঘ যেমন তড়িৎগতিতে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় শিকারের দিকে, উরবি ঠিক তেমনি জ্বলন্ত চোখে বিদ্যুদ্বেগে তাকাল আবিদের দিকে। যেন শুধু বড় বড় দাঁত আর গিলে খাওয়ার অপেক্ষা! তবুও উরবি দাঁতে দাঁত দংশন করে কপট নিভন্ত গলায় বলল,
-‘কী বললেন আবার বলেন তো!
ততক্ষণে নিরু জামাকাপড় নিয়ে এসে পৌঁছেছে ঘাটে। আবিদ কথা না বাড়িয়ে সাবানটা ঘষতে শুরু করল গায়ে। সর্বাঙ্গে সাবানের ফেনায় ভূতের মতো দেখাচ্ছে লোকটাকে। ভেতরে ভেতরে উরবির পিত্তি চটে দৃশ্যটা দেখে। হঠাৎ নিরুর আগমনে প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেল ঠিক। কিন্তু উরবির মনে কথাটা গেঁথে রইল যুদ্ধ ময়দানে নিহত সৈন্যের শরীরে বিঁধা তিরের মতো। মুসাফির জানে না এই কথাটার তার ভবিষ্যতে ঝগড়াটে মেয়েটার ক্রোধানলে পড়তে হবে? সময় হোক,বুঝবে মজা! ইচ্ছে করেই প্রসঙ্গটা আর তুলল না উরবি। এটার শোধ পরে তোলা যাবে। উরবি ঝগড়াটে তাই না?
নিরুকে দেখে আবিদ সোৎসাহে বলল,
-‘থ্যাংক্স,বাই দা ওয়ে নাম কী তোমার?
-‘ নিরুপমা’ কান পর্যন্ত কপোল প্রসারিত করে হেসে বলল নিরু।
– সুন্দর নাম। মুচকি হেসে বলল আবিদ। তবে সাবান মাখানো মুখে সেই হাসি উদ্ভাসিত হল না।
উরবি ভুরু কুঁচকে সন্দেহের চোখে একবার নিরুর দিকে তাকায় আরেকবার আবিদের দিকে। এরপর ঝট করে নিরুর হাত থেকে কাপড়-চোপড়গুলো পাকা ঘাটের বেদিতে সদম্ভে রেখে টানতে টানতে নিয়ে গেল নিরুকে।

———————————

একটু আগে ইশতিয়াক সাহেব স্বয়ং এসে সকালের নাশতা দিয়ে গেল আবিদকে। আবিদ যথেষ্ট অসন্তুষ্ট হলেও ইশতিয়াক সাহেব জোরজবরদস্তির করে তাকে খাওয়ালেন এবং ইন্ধনের সঙ্গে ভবিষ্যতে যদ্দিন এবাড়িতে সে অবস্থান করবে তদ্দিন খাওয়ানোর ভার কাঁধে নিয়ে খুশিমনে চলে গেলেন। আবিদ ইশতিয়াক সাহেবের আথিতেয়তায় আতিশয্যে বেজায় বিরক্ত। হয়তো এসবে অভ্যাস নেই বলে। সে কাজে এসেছে। বেকাজে নয়। আর্থিক সক্ষমতা তার যথেষ্ট আছে। কারণেই এসব তার বিরক্ত লাগছে। তবে উপায় নেই, বৃদ্ধ মানুষটার মুখের ওপর না বলার সাধ্য তার নেই। থাক অতো ভেবে কাজ নেই। দীর্ঘশ্বাসের ফুঁৎকারে সমস্ত ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বিলম্ব না করে ঝটপট তৈরি হয়ে নিল সে। যে কাজে এসেছে সেই কাজ সিদ্ধ করে তবেই ফিরতে হবে। শুরুতে গ্রামটা ঘুরে দেখা দরকার। গ্রামের কিছু সহজসরল অথচ সব বিষয়ে জ্ঞান রাখে এমন লোকদের সঙ্গে মেশা দরকার। পর্যাপ্ত খোঁজখবর নিয়ে তবেই মাঠে নামতে হবে। দূরালাপনিতে যা শুনেছিল তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো মিল নেই। তবে একটু গভীর চোখো অবলোকন না করলে সঠিকটা বলা যাচ্ছে না। পাঠকের কাছে এই আলাপ নিষ্ফল মনে হতে পারে। আশা রাখি ধীরে ধীরে সেই ভুল ভাঙবে।
সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে ঘর থেকে বেরোল আবিদ। উদ্দেশ্য গ্রাম ঘুরে দেখা। তার হাতে প্যাঁচানো একটি সিক্স ডি ডিএসএলআর ক্যামেরা। বেশ দামি। কয়েকবছর আগে শখের বসে নিজেই ক্রয় করেছে ইন্ডিয়া থেকে। নিরু মেয়েটাকে একবার নেওয়ার ইচ্ছে হলেও পরক্ষণে ইচ্ছেকে মাটিচাপা দিতে হল। একে তো ঐ ঝগড়াটে মেয়েটা নিরুকে যেতে দিবে না তার-ওপর গ্রামের মানুষ তার গ্রামের ভালো দিকটাই ফলাও করে দেখাবে, খারাপটা সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাবে। তবে আবিদের যে খারাপটাই চাই! ফটফট করে বাগানের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলতে তুলতে মূল ফটকের দিকে এগেচ্ছিল সে। হঠাৎ দূর হতে নারীকণ্ঠে ভেসে এল,
-‘ বাগানে ছবি তোলা নিষেধ’ এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সমস্বরে খলখল হাসি। একটা হাসির খরতা সে ঠিকি আঁচ করতে পারল। সেই পাগলপারা, ঝগড়াটে মেয়েটা! যে মেয়েটার নামটা অবধি সে এখনো জানে না। গতকাল তার বাবার মুখে একবার শুনেছিল বটে। তবে তখনকার সময়টা এতোই দুর্দশা আর দুরন্ত ছিল যে আবিদের মতো বুদ্ধিমান ছেলের মস্তিষ্ক বিকল হয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা, মেয়েটার মাথায় কি দোষ আছে? নাট বল্টু একটু ঢিলা কি? কিংবা মাথার তারে একটু উনিশ-বিশ হয়েছে? হতে পারে! অসম কিছু না। নয়তো এমন আককাটা আর অকারণে হাউকাউ স্বভাবের হবে কেন? ভাবতে ভাবতে আবিদ দীর্ঘ পদক্ষেপে মূল ফটকে পৌঁছে গেল। আহ্লাদে ফুটকড়াই হাসির শব্দ ভেসে আসছে এখনো। হাসির প্রসূত উৎস লক্ষ্য করে আবিদ ঘুরে তাকাল একবার। তদ্দণ্ডেই হাসি থেমে গেল। দ্বিতলা থেকে দুটি অগ্নিচোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ‘দূর হও’ ভঙ্গিতে আঙ্গুলি নির্দেশ করল। আবিদ ইতস্তত করে ঝেড়ে কেঁশে দ্রুত বেরিয়ে গেল। বিড়বিড় করে বিপন্ন গলায় আওড়াল,
– স্টুপিট মেয়ে!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ধীরে পায়ে আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে বাজারের দিকে এগুচ্ছে আবিদ। গতকালের বাজার থেকে ফেরার পথটা তার অস্পষ্ট মনে আছে। গোটা দিনটা আজ বাইরেই কাটাতে হবে তার। মাটির কাঁচা রাস্তার ওপর উদ্দেশ্যেহীন হাঁটতে লাগল সে। মাঝেমধ্যে একচোখ বন্ধ করে ক্যামেরায় বুঁদ হয়ে ফ্রেমবন্দী করছে পাখিদের উড়ে যাওয়া, বাচ্চাদের অদ্ভুতুড়ে স্বহস্তে বানানো গাড়িকে ঘিরে কোলাহল, খালের শনশন শব্দে নিরবচ্ছিন্ন বয়ে চলে, পথিকের সাইকেলের টুংটাং, বয়োবৃদ্ধ মহিলার সবজি তোলা, কিশোর ছেলেদের সঙ্গে লিচু গাছের মালিকের উগ্র আচরণ, খালের হাঁটুসম পঙ্কিল পানিতে দাঁড়িয়ে যুবকের হাতজাল ছোঁড়া, নিঃসীম তেপান্তরে কৃষকের ছুটে চলাসহ একে একে অনেকগুলো জীবনযাত্রা আটকে রইল চারকোণার ছবিতে। অর্ধেক এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তা পর ইট বিছানো রাস্তা। এরপরেই বিটুমিনে ঢালায় করা বড় পাকা রাস্তা। ইট বিছানো রাস্তায় হাঁটতে গেলে পায়ের তলায় নড়বড়ে ইটের খটরমটর শব্দ কানে আসে। দোলে শরীর। রাস্তা সঙ্গে লাগোয়া খালটা অবিরত বয়ে চলা তার মতোই উদ্যমহীন। ভীষণ ভালো লাগে আবিদের, তারসঙ্গে যুক্ত হয় খারাপও। নিস্তব্ধতায় শূন্যতা ছেঁকে ধরে মানুষকে। বুক চিরে বের করে আনে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস। সেই নিশ্বাসের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে প্রকৃতিরও মন বেজার হয়।

বাজারের সেই চায়ের দোকানটায় এসে দাঁড়াল আবিদ। দোকানদার মজিদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। লোকটাকে নিপাট সাদাসিধা মনে হয়েছে তার। তবে দোকানে কয়েকজন যুবক আড্ডা দিচ্ছে। দেখতে-শুনতে কেমন সন্দেহজনক মনে হয়। এঁদের সামনে কিছু জিজ্ঞেস করা সমীচীন নয়। বাইরে বেঞ্চিতে বসে চা অর্ডার করল আবিদ। দীর্ঘক্ষণ হাঁটার ফলে এলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো হাতের তালু দিয়ে পিছনে ঠেলে দিল সে। যুবকগুলো চোরা চোখে তাকিয়ে কানাকানি ফিসফাস করছে তা না তাকিয়েও বুঝতে পারল আবিদ। তবে সেদিকে দৃকপাত না করে অভিনিবিষ্ট হয়ে তোলা ছবিগুলো একের পার এক দেখতে লাগল। হঠাৎ একটা সাত-আট বছরের টিনটিনে বালক এসে বলল,
-‘ ভাইয়া,একটা ছবি তুইল্যা দিবেন?আপফনার কেম্রাটা সোন্দর।
আবিদ মুচকি হেসে একপলক আড়চোখে যুবকগুলোর দিকে তাকিয়ে বালককে বলল,
– পোজ দাও।
ছেলেটা বুঝতে না পেরে বিপন্ন গলায় বলল,
-ফোজ কী?
আবির এবার একটু শব্দ করেই হাসল। বলল,
-‘ ছবি তোলার জন্য সুন্দর করে দাঁড়াও।’
বালক আহ্লাদে আটখানা হয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল। ছবি তোলা হলে ছেলেটা কাছে এসে বিস্ময় নিয়ে ছবিটা বিভিন্ন কোণ থেকে দেখে খুশিতে লাফাতে লাফাতে চলে গেল। জনে জনে বাতলাতে লাগল ‘তার ছবি তোলা হয়েছে’। বালকের খুশিতে নিজেও বেশ খুশি হল আবিদ। মানুষ কত অল্পতেই না খুশি হয়! তবু দিনে দিনে চাহিদার স্তুপ উঁচু হতে থাকে মানুষের, ছোটছোট বিষয়গুলোতে সে আর আগের মতো প্রসন্ন হয় না। মানুষের ভেতরের মনটা যেমন ক্রমশ বড় হয় চাওয়া-পাওয়াটাও তেমনি বড় হয়। আবিদের সল্প পরিসরের ভাবনায় অনধিকারচর্চা করল যুবকগুলোর উচ্চকণ্ঠ কথোপকথন।
-‘ ভাই আমি আর আপানাদের বাকী দিত পারব না। আমার পোষাইতেছে না। আপনেরা তিন মাসের বাকী রাইখা দিছেন।’- বিরস মুখে অন্যদিকে ফিরে ভয়ে ভয়ে বলল দোকানদার মজিদ।
যুবকদের একজন দুর্বিনীত গলায় বলল,
-‘কইলাম তে দিয়া দিমু। এহন যাই। বেশি বকোস ক্যান?’
দোকানদার বাকীর খাতাটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও খসখস করে কি যেন লিখে টাস করে বন্ধ করে বলল,
-‘ ঠিক আছে মনে থাহে য্যান্।’
– হালা বেশি বাইরা গেছে। দোকান থেকে বের হতে হতে বলল চড়া ছেলেটা। বাকীরাও সহমত পোষণ করে একটা একটা করে স্পর্ধিত বাক্যপ্রয়োগ করল। কেউ কেউ মজিদকে আচ্ছামতো ঠ্যাঙানোর প্রস্তাবও রাখল। আবিদ ছেলেগুলো চলে যাওয়ার পানে একবার তাকিয়ে মজিদকে প্রশ্ন করল,
-‘সমস্যাটা কী ভাই?’
মজিদ ভারি চিন্তিত মুখে চায়ের কাপটা আবিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘সমস্যাটা দ্যাখলেন ভাইজান, গাঁজাখোর পোলাপাইন। বাকী খাইয়া এহন ঝুলাই রাখছে। টাহা দেয় না। উল্ডা হুমকিধামকি দে।’
আবিদ তাল দিয়ে বলে,
-‘ এতো বড়ো সমস্যার কথা। আচ্ছা, শুধু গাঁজা খায়, না?
মজিদ হাতের কাজ বন্ধ করে সন্দিহান হয়ে তাকায়,
-‘ আফনে পুলিশের লোক? থানায় নতুন আইছেন? দোহায় লাগে, মদতিগুলারে ধইরা নিয়া যান। ‘
আবিদ মজিদের কাণ্ড দেখে হো হো করে হেসে বলল,
– ‘আরে নাহ্, পুলিশের লোক না।’
মজিদ ক্যামেরাটার দিকে চেয়ে বলল,
– ‘তাইলে সাংবাদিক নাহি?’
– ‘হবো কিছু একটা।’
-‘ যাই হন… আপনি এহন যান। আফনের লগে পরে কথা কমু। হঠাৎ বাইরে চোখ যাওয়ার পর গলার সুর বদলে চলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিল মজিদ। মজিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে আবিদ ঘুরে তাকাল। সে দেখল, খাড়া রোদ্দুরে সোনার মতো চকচক করছে ভবিতব্য মেম্বার মনসুরের টাকলা মাথা। ধবধবে সাদা লুঙ্গি একহাতে উঁচা করে ধরে তিনি এদিকেই আসছেন।
…………………………………………
মাথার ওপর সিলিং ফ্যান ঘুরছো শাঁ শাঁ করে। জানালার বাইরে গ্রীষ্মের দুপুরের তেজস্বী সূর্য কড়া আলো ছড়াচ্ছে। আলোর পীতাম্বর কিরণ বাইরের পৃথিবীকে ছড়িয়ে এসেছে ঘরেও। ঘরময় ভাসা হলদেটে ভাব। ছোট মামি চা দিয়ে গেল মাত্র। উরবি আর নিরুর হাতে গরম ধোঁয়া ওঠা চা। ধোঁয়াগুলো কুণ্ডলি পাকাতে-পাকাতে যাচ্ছে একসময় গিয়ে নিঃশেষ হয়ে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। নিরু আজ দুপুরে এখানেই খাবে। কোনো বিশেষ দিন নয় অবশ্য, তবুও দুপুরে ভালোমন্দ রান্না হবে বলে জানিয়েছে উরবির ছোটমামি। চা পান করতে করতে নিরু কথা বলল,
-‘ তারপর কী ভাবলি?’
-‘ কী নিয়ে?’ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল উরবি।
-‘জিসানের ব্যাপারে?’
-‘ ধুর, ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছি’ তাচ্ছিল্যভরে বলল উরবি।
– ‘আসলেই?’ নিরুর চোখে বিস্ময় এবং সন্দেহ।
উরবি নির্বিকার গলায় বলল,
– ‘হ্যাঁ, মিথ্যা কেন বলব তোর সাথে?’
নিরু খুশিতে আটখানা হয়ে উরবির উরুতে চাপড় দিয়ে বলল,
-‘ তারমানে এতোবছর পর তোর আরেকটা হয়ে গেল। সেই স্কুল জীবনে একবার প্রেমে পড়ছিলি নাহিয়ানের। সে বেচারা তোকে গ্রহন করল না।’
উরবি মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– ‘ছাই হয়েছে। ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই।’
– ‘আজব, তাহলে হ্যাঁ কেন বললি?’
– ‘কী করব? যেখানেই যাই, সেখানেই সে। সারাদিন খালি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। না করলে হাত কাটে। এগুলা দেখার চেয়ে হ্যাঁ বলে দিয়ে বাবু ঠাণ্ডা করা ভালো। এতো টেনশন নিতে পারি না।’
বলে আবারো চায়ের কাপে ঠোঁট ভেজায় উরবি।নিরু কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে কি যে ভাবল।বলল,
-‘তো…ওর সঙ্গে কথা হয় না?’
– ‘কথা হয়। দুই-তিনদিনে একবার। কিন্তু প্রেমালাপ না। ওগুলা হয় না আমার দ্বারা।’
নিরু জহুরি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– ‘হ্যাঁ বলে ঠিক করসনাই। মিউচুয়ালি হ্যান্ডেল করতে পারতি ব্যাপার। এখন যদি ও বিয়ে করতে চায় তখন? আচ্ছা বাদ দে। শোননা। ঐ ছেলেটা কিন্তু জোস।’
– ‘কোনটা?’ উরবির যেন বুঝেও বুঝে না। তার একটু বিস্তারিত জানা চাই।
– ‘ঐযে তোদের নিচতলায় থাকে।’
কথা মাটিতে পড়তে দেরি উরবির ভর্ৎসনা করতে দেরি হয় না। সঙ্গে সঙ্গেই সে আড়বুঝো গলায় বলল,
– ‘কচু জোস। খাম্বার মতো লম্বা। জংলির মতো চুলদাড়ি। ছ্যাঃ কি বাজে চয়েস রে তোর! আর তাছাড়া লোকটার আলুর দোষ আছে।’
নিরু গোবেচারাভাবে মুখ হাঁ করে তাকিয়ে বলল,
– ‘আলুর দোষ আবার কী?
-‘এটাও বুঝস না আল্লাহ? বুঝবি ক্যামনে পড়াশোনা তো করস না। আলোর দোষ মানে চরিত্রের দোষ আছে। শালা একটা আলুবাজ! চরম লেভেলের আলুবাজ’

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share