#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৮
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
একদিন বিকেলে বেডে বসে ফোনে গেমস খেলছিলাম।হঠাৎ স্যার এসে আমার সামনে একবাটি ফ্রুটস রেখে বলল,খাও।
আমি সাথে সাথে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললাম।
এই ফল মূল আমার একদমই ভালো লাগে না।
আমি তো একদমই খাইই না।আর কলা তো আমার চোখের বিষ।এটা কোনো খাওয়ার জিনিস হলো!
ইয়াক!মুখে দিলেই আমার বমি আসে।বাবা কতবার ধমক দিয়ে আমাকে ফ্রুটস খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু বাবার সামনে এক কামড় দিয়ে বাবা সামনে থেকে যেতেই লুকিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিতাম।পরে বাবা জিগ্যাসা করলে বলতাম সব খেয়েছি।
স্যার আমাকে আবার ধমক দিয়ে বলল,
কি হল,খেতে বলছি না!
আমি তার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বললাম, এগুলো খেতে আমার ভালো লাগে না।এগুলো কোনো খাওয়ার জিনিস হলো?
স্যার আমাকে মুখ ভেংগিয়ে বলতে লাগল,না না এগুলো তো খাওয়ার জিনিস না!
খাওয়ার জিনিস তো ফুচকা,চটপটি,ঝালমুড়ি।
তুমি যে প্রতিদিন দুপুরে কম খাবার খাও আর তার কারণ যে প্রতিদিন খাওয়া ফুচকা,ঝালমুড়ি তা আমি সবই জানি।
যাহ বাবা!সে আবার আমাকে কখন দেখলো এগুলো খেতে।আমার পেছনে কি কোনো ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে।আমি তো ভয়ে শেষ।আমার ফুচকা খাওয়া আবার বন্ধ না করে দেয়।
আমার ভয় কে সত্যি করে সে বলল,ফুচকা খাওয়া
কি বন্ধ করে দিতে চাও?
আমি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।
তাহলে তাড়াতাড়ি লক্ষী মেয়ের মত সব খাও।বলেই সে আমার সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল।আর আমি চোখ মুখ কুচকে খেতে লাগলাম।আশায় আছি কখন বাইরে যাবে আর আমি এগুলো ফেলতে পারব।
কিন্তু না অ্যাংড়ি বার্ডটা বাইরে যাওয়ার নামও
নিচ্ছে না।সব কোনোমতে খেলাম।এখন শুধু বাকি আছে কলা।
আমি স্যারের উদ্দেশ্যে বললাম,আমি কলা খেতে পারব না।
স্যার আমাকে রাগী গলায় বলল,তাড়াতাড়ি খাও।
আমি আরো জোর দিয়ে বললাম,আমি কিছুতেই খাবো না।
স্যার এবার হাত মোড়ামুড়ি করতে করতে বলল,আচ্ছা আমিও দেখব তুমি আর কিভাবে ফুচকা খাও।
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে একটু একটু করে খাওয়া শুরু করলাম।স্যার এসে আমার হাত থেকে কলা নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে বেশি করে আমার মুখে তুলে দিতে লাগল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
এই অ্যাংড়ি বার্ড টা এভাবেই আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।ঝাল খেতে না দিয়ে,সকালে জগিং করিয়ে,সকাল সকাল গোসল করিয়ে,ব্রেকফাস্টে এক গাদা ফল আর কলা খাইয়ে আবার রাতে একগ্লাস দুধ।সব আমার অপছন্দের জিনিস।আমার যত্ন নিয়েই আমাকে সে জ্বালিয়ে যাচ্ছে।
তার জ্বালায় রাতে একটু না খেয়ে ঘুমাতেও পারি না।
একদিন রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আগে আগে।কিন্তু স্যার এসে শুনেই প্লেটে এক গাদা ভাত নিয়ে আমাকে একটান দিয়ে বসিয়ে দিল।
আর নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল।
আর আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘুমঘুম চোখে খেতে থাকি।
এভাবে যখনই আমি খেতে চাইব না তখনই আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।তার কথা না শুনেও উপায় নেই তার ধমক আর শাস্তি তো আছেই।
একদিন রাতে আমার হাতে একগ্লাস দুধ দিয়ে সে বাথরুমে চলে গেলে আমি আস্তে আস্তে ব্যালকনিতে গিয়ে সব দুধ ফেলে দিয়ে আসি।তারপর এমন ভাব করি যে সব খেয়েছি।
একটু পরেই বাড়িতে ড্রাইভারের চেচাঁমেচিতে সবাই নিচে চলে যায়।ড্রাইভারের চেচাঁমেচির কারণ হল,সেই এক গ্লাস দুধ।বুঝতে পারলাম আমি যেই দুধ ব্যালকনি দিয়ে ফেলে দিয়েছি সব ড্রাইভারের মাথায় পড়েছে।আর বেচারা সেগুলো ভুতের কান্ড মনে করে ভয়ে ভূত ভূত করে চেচাঁমেচি করছে।স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।তার মানে ইনটেলিজেন্ট ছেলে সবই বুঝে গেছে।
সেদিন আমাকে দুধ না খাওয়ার জন্য আঠারো মিনিট কানে ধরে দাড়ঁ করিয়ে রেখেছে তাও আবার টি টেবিলের উপর।তাহলে বুঝো ঠ্যালা!
তবে একটা কথা,স্যার যখন আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় আমার বেশশশ ভালো লাগে।
রাতে একা একা কিছু করার নেই দেখে আলমারিটা ঘাটাঘাটি করছিলাম।হঠাৎ একটা ছবি পেলাম।আমাদের কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানের।সকল টিচার আর ক্লাসের সবাই মিলে যে ছবিটা তুলেছিলাম।কলেজের ছবিটা দেখে আগের সব কথা মনে পড়তে লাগল।স্যারের সাথে আলাপ,ঘোরাঘুরি করা,তারপর যোগাযোগ বন্ধ করা।
মনে খারাপ হয়ে গেল।তখনই স্যার এসে ছো মেরে আমার হাত থেকে ছবিটি নিয়ে আমার হাত শক্ত
করে ধরে বলল, এগুলো বের করেছো কেনো?
সেই যন্ত্রণার কথা আমাকে মনে করিয়ে দিও না।
তুমি আমার সাথে যা করেছো তা আমি কোনোদিনই ভুলতে পারব না।এই বলে সে রেগে টি টেবিলটায় একটা লাথি দিয়ে চলে গেল।
আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম।আমার কথা আমাকেই শুনাচ্ছে।এই কথা গুলো তো আমার বলা উচিত।বড্ড অভিমান জমা আছে আমার তার উপর।কেনো করল আমার সাথে এমন?আর এখন আবার আমাকেই রাগ দেখাচ্ছে।আমার চোখ ছলছল করে উঠল।
আমার ইনকোর্স এক্সাম শেষ হয়েছে কয়দিন আগেই।সন্ধ্যা বেলা বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলাম।এমন সময় স্যার এসে টিভির মেইন সুইচ অফ করে দিল।আমি বিরক্ত মুখে বললাম,কি হল টিভি বন্ধ করলেন কেনো?এখনই কি সুন্দর একটা সিন হত।
সে থমথম গলায় বলল,সারাদিন শুধু ঘুম, মোবাইল আর টিভি।ভুলেও বই হাতে নিতে তো দেখিই না।
তারপর রাগী বলায় বলল,তোমার ইনকোর্স এক্সামের রেজাল্ট দিয়েছে।A মাইনাস পেয়েছো।
তার কথা শুনে বুঝলাম সে ভার্সিটিতে গিয়ে আমার রেজাল্ট নিয়ে এসেছে।রেজাল্ট আমিও পেয়েছি আগেই ফোনে।কিন্তু এই ইনকোর্স এক্সামের রেজাল্টে কি হয় তাই শুধু শুধু আর মাথা ঘামাই নি।
তারপর স্যার আমাকে বলল,যাও তোমার সব বই নিয়ে আসো।আমাকেই এখন থেকে তোমায় পড়াতে হবে।আমি না ধরলে তুৃমি আর ঠিক হবে না।
আমি মুখ ফুলিয়ে রইলাম।উফ! এখন আবার আমার সাথে স্যারগিরি ফলাবে।বই নিয়ে তার সামনে রাখলাম।
সে বই নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,কতটুকু পড়েছো।
আমি তার কথা শুনে মাথা চুলকাতে লাগলাম।
কারণ আমি এখনো এই সেমিস্টারের কোনো বই পড়া শুরুই করিনি।আসলে আমি সারাবছর বেশি বই পড়ি না।পরীক্ষার আগে আগে পড়ি।
এখন স্যারকে কি বলব?
স্যার আবারো আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কি হল
বলো?
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে স্যার বুঝে গেল।
তারপর বিরক্ত হয়ে বলল,হাফ সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে আর তুমি এখনও বই ধরোও নি।
এখন দাঁড়িয়েই থাকবেন নাকি তাড়াতাড়ি পড়তে বসবেন।
আমি মুখ ফুলিয়ে তার সামনে পড়তে বসে গেলাম।স্যার আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু আমি ঠিকঠাক মনোযোগ দিচ্ছি না।একবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি তো একটু বিছানার সাথে হেলান দিচ্ছি আবার হাম দিচ্ছি,ঝিমুচ্ছি।স্যার কয়েকবার ধমক দিয়ে ফেলেছে কিন্তু আমাকে পড়ায় মনোযোগ দেওয়াতে পারছে না।
স্যার বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে চলে গেল।আমিও একটু সুযোগ পেয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম হাতের উপর মাথার ভার দিয়ে।
একটু পর স্যার রুমে ফিরে আসল।তার হাতের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ!
ধরফরিয়ে শোওয়া থেকে উঠে বসলাম।স্যার বেত হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি চোখ কপালে তুলে তাকে বললাম,আপনি কি এখন পাজী ছেলেদের মতন বউ পেটাবেন?
স্যার একটা চোখ টিপ মেরে বললেন,বউ পেটাবো না ছাত্রী পেটাবো।
তারপর আবার গম্ভীর হয়ে বললেন,তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে পড়।
আমি তো বেত দেখে সোজা হয়ে বসলাম।কিন্তু পড়তে একদমই ইচ্ছে করছে না।মোচড়ামোচড়ি করতে লাগলাম।একটু পরপরই ঝিমুনি এসে পরে।
আর যখনই একটু ঝিমুই স্যার দেয় বেত দিয়ে একটা বারি।
একটুপর আমি মুখে রাজ্যের সব ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে ন্যাকু ন্যাকু করে বললাম,স্যার পুরো বই কি আজকেই শেষ করে দিবেন?
এখন একটু ঘুমিয়ে পড়ি প্লিজজ।
আমার এত ইনোসেন্ট ভাবের কোনো দাম না দিয়ে
সে বলল,চুপ। পড়তে থাকো।বলেই আমাকে পড়া দেখাতে লাগলেন।
আমিও মুখ ভেংগিয়ে হাত দিয়ে তার গলা টেপার ভঙ্গি করে বিড়বিড়িয়ে গালি দিতে লাগলাম।
এভাবেই আমার ঝিমুনি,মোচড়ামোচড়ি,স্যারের ধমক আর একটু পরপর বেতের বারি খেতে খেতে পড়া চলতে লাগল।রাত বারোটা বাজে পেলাম ছুটি।
ছুটি পেয়ে আমি একলাফে যে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।তারপর এক ঘুমিয়ে রাত কাবার।
এরপর থেকে প্রতি রাতেই চলতে লাগল স্যারের আমাকে বেত দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পড়ানো।রাত বারোটার আগে একদমই ছাড়ে না।যখন স্যার ছিল তখন যা করেনি এখন বর হয়ে তা করছে।
আমার তো মনে হয় আমি শ্বশুরবাড়িতে না টুয়েন্টি ফোর আওয়ার একটি ট্রেনিং স্কুলে আছি।
হায় আল্লাহ!আমার জীবনটা তো এই অ্যাংড়ি বার্ড টা ত্যানা ত্যানা করে দিচ্ছে।
এখন আমি শুধু সুযোগ খুঁজছি কিভাবে এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাওয়া যায়।হঠাৎ এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় আমার মাথায় আসল।
আর তা হল……..
চলবে,,