ব্রহ্মকমল পর্ব-০১

0
7

#ব্রহ্মকমল
প্রথম পর্ব
Sinin Tasnim Sara

“বাবা-মায়ের যখন ডিভোর্স হলো তখন আমার এডমিশান পিরিয়ড চলছে।
প্রকৃতিতে সে এক ভয়াবহ ঋতু। ঠিক করে বলা যাচ্ছে না ভাদ্র নাকি আশ্বিন মাস। রোজ যেমন খুশি তেমন সাজো খেলার পার্ট চলছে যেন প্রকৃতিতে। আজ বৃষ্টি তো কাল কাঠফাটা রোদ। আমি পড়ে গেলাম মহা মুশকিলে৷ আমার না অতিরিক্ত গরম সহ্য হয় আর না ঠান্ডা। মাঝামাঝি পর্যায়ের আবহাওয়া না থাকলে বছর কাটে অসুস্থতায়। জ্বর, সর্দি হয়ে কি ভয়াবহ দশা!
বাবা মায়ের একমাত্র বড় মেয়ে; ভীষণ আদরের। সেই ছোট্টবেলা থেকে সামান্য হাঁচি পড়লে দুশ্চিন্তায় প্রেশার হাই হয়ে যায় দুজনের এমন অবস্থা। ডাক্তারি ভাষায় আমার ইমিউন সিস্টেমে বেশ গড়বড়, মানে দুর্বল আরকি। বাবা মায়ের দুশ্চিন্তাও তাই দুর্বলের বিপরীতে বেশ সবল। মা পাখি তার ডানায় আগলে যেমন শিশু পাখিটিকে যত্ন করে, বুকে করে রাখে; তেমনই আমার বাবা-মা আমায় বুকে করে রাখতেন বরাবর। আমি অবশ্য উপভোগ করতাম তাদের মাত্রাছাড়া ভালোবাসা। উপভোগ্য লাগত আমায় নিয়ে তাদের সমস্ত দুশ্চিন্তাও। মাঝেমধ্যে মনে হতো আমি বোধহয় ইচ্ছে করেই একটু নরম-সরম দুর্বল রাখার চেষ্টা করছি নিজেকে। আদর সোহাগ নইলে কমে যাবে না?

বছর বিশ পর্যন্ত আমার গোটা পৃথিবী ছিল শুধুমাত্র বাবা-মা আর পড়াশোনা কেন্দ্রিক। এই দুটো ভাবনার বাইরে জগতে অন্য কোনো ভাবনা থাকতে পারে আমার বিশ্বাস হতো না। বোধহয় মানতে চাইতাম না আমি অন্যকিছুকে। অনেকে বলত বাবা-মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা আমায় অন্ধ বানিয়ে রেখেছে। হতে পারে। আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাসী ছিলাম এই পৃথিবীতে সমস্ত স্বচ্ছ নির্মল ভালোবাসার প্রতি আমার বিশেষ অধিকারবোধ আছে। জন্ম থেকেই আমি সমস্ত সৌভাগ্যের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী। কিন্তু লোকের ভাষায় বাস্তবতা যাকে বলে, সেই বাস্তবতা নামক বইয়ে আমার ভাবনা কি সত্যি কোনো পৃষ্ঠায় লেখা ছিল? নাকি সব ভুল ধারণা পুষে রেখেছিলাম বুকের ভেতর শুধু আমিই; বোকামি করে।

যে জগৎটা আমায় বিশ বছর গড়েপিঠে একটু একটু করে সাজিয়েছিল নিজের মত তা এক ধাক্কায় মিথ্যে হয়ে গেল আমার এডমিশানের সময় বাবা-মায়ের ডিভোর্সের মাধ্যমে। যে মিথ্যেটার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। এমনি থেকেই পরীক্ষার প্রেশার, রোগের ঝক্কি আর মেডিকেলের সিট ছুটে যাওয়া নিয়ে আমি পাগল পাগল দশায় পিষে যাচ্ছিলাম প্রতিনিয়ত; তার ওপর গোদে বিষফোঁড়া হয়ে জুটল বাবা মায়ের আলাদা হওয়ার খবর৷

মজার ব্যাপার হলো খবরটা এত সাবলীলভাবে এসেছিল আমার সামনে! ওর ভীষণ স্বাভাবিকতা আমাকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না এটা আসলে একটা অস্বাভাবিক ঘটনা, যার প্রভাব ভবিষ্যতে খুব খারাপভাবে এফেক্ট করতে যাচ্ছে আমার গোটা জীবনকে, আমাদের সবার অজান্তে।

দিনটা ভুলতে পারি না আজও। গড়পড়তা ঠিকঠাক দিনের মতোই সেদিনও সন্ধ্যাবেলা নাশতার টেবিলে আমি আর বাবা বসে। মা রান্নাঘরে খুটখাট কাজ করতে করতে একবার এসে চা-নাশতা রেখে গেলেন আমাদের সামনে। পড়ার ফাঁকে হাতড়ে হাতড়ে কোনোরকমে খাবার নেবার চেষ্টা করছি অমনি ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে ঠান্ডা গলায় বাবা বললেন,
— “আমি আর তোমার মা আলাদা হতে চাইছি ইপশা। প্রসিডিওর মোটামুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। পরের মাস থেকেই হয়তো আমরা লিবারল লাইফ লীড করতে পারব”

কথাটা আমি শুনিনি শুরুতে। খাবারের ট্রেতে হাত দুষ্টু ঘোরাফেরা করলেও আমি প্রাণপণে মুখস্থ করছি মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস। মা ও বাবা = মা-বাবা৷ আমার সবচেয়ে প্রিয় উদাহরণ, সবচেয়ে প্রিয় টপিক৷ বাবার কথায় কান দেব সময় কোথায়?
একবার তাকিয়েও প্রতিক্রিয়া দেখলাম না৷ বাবা বুঝলেন আমি শুনতে পাইনি অথবা বিশ্বাস করিনি কথাটা৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাপ নামিয়ে আবার বললেন,
— বাচ্চাদের কাস্টডি নিয়ে কথা উঠতে পারে। তুমি কার কাছে থাকতে চাও ইপশা? বাবার কাছে নাকি মা’র কাছে?

এবার আমাকে পড়া বন্ধ করতে হলো। হাত গুটিয়ে বইয়ের ভেতর আঙুল রেখে চশমার কাঁচ দিয়ে বিস্মিত চোখে তাকালাম। বলতে পারব না ওটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ছিল নাকি অবিশ্বাসের। বাবা অপেক্ষা করলেন ধৈর্য নিয়ে। আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু বলা দরকার। একটা কিছু প্রতিক্রিয়া দেয়া দরকার বোধহয়। কিন্তু দিতে পারছিলাম না। শেষে একরাশ অসহায়ত্ব নিয়ে শুকনো কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললাম,
— সমাসটা যে এত কঠিন লাগছে বাবা! আমি যাই ঘরে গিয়ে পড়াটুকু কমপ্লিট করি। কেমন?

গায়ে শক্তি ছিল না একফোঁটা। মাথাটাও বনবন করে ঘুরছিল আমার। ভীষণ কষ্টে কোনোরকমে বই বুকে আগলে নিয়ে নিঃশব্দে ঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে শরীর টলমল করতে লাগল। পাত্তা দিলাম না। তবে মনে হলো আমার দিকে তাকিয়ে বাবা আরও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বোধহয়। ঠিকঠাক শুনতে পেলাম না৷
ঘরে এসে দরজা বন্ধ করতেই মনে হলো আমি কাঁপছি। তৃষ্ণায় গলা চৌচির হয়ে বুকের ভেতরে ধুকপুক ধুকপুক করছে। আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছি? অতিরিক্ত পড়ার চিন্তায় ডিপ্রেশন থেকে ভুলভাল দেখছি, শুনছি?
প্রশ্ন করলাম নিজেকে বারবার। কিন্তু সঠিক কোনো উত্তর ভেসে এলো না। শিয়রের কাছে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু না ভেবে কল করলাম অংককে। অংক; আমার ছোটভাই। অংক সাবজেক্ট অনেক প্রিয় ছিল বলে অনেক শখ করে মা ওর নাম রেখেছিল অংক।
ওর আমার বয়সের তফাৎ বিশেষ নয়। তবে ছোটবেলা থেকে ও ফুপুর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে বলে আত্মিক টান আর পাঁচটা ভাইবোনের থেকে কম। তবু আমরা একে অপরের ভরসার জায়গা ছিলাম। অংকর জীবনের সব সুখ-দুঃখের গল্প যেমন আমার জানা ছিল, তেমনই আমারগুলো জমা ছিল অংকের কাছে। কিন্তু এমনি করে, এক দুঃখ সমানুপাতিক ভাবে আমাদের ঝুলিতে একসাথে কখনো এসে পড়বে আমরা কিন্তু তা জানতাম না। আমিই কখনো ভাবিনি। তাই আজ ভাবনার বাইরে ঘটনাটা যখন ঘটে গেল তখন মনে হলো আমার মতো পাগলাটে দশা কি বাচ্চা ছেলেটারও? নাকি ধ্বসে পড়া মিথ্যে পৃথিবীর বিপরীতে একমাত্র সত্যিটা এখনো ওর সামনে উন্মোচিত হয়নি?
প্রশ্ন এবার নিজেকে নয় সরাসরি অংককেই করলাম। জানতাম না উত্তরে চমকাতে হবে। ফোন ধরে আমাকে বিস্মিত করে ওই আগে জিজ্ঞেস করল,
— তোকে তাহলে জানাতে পেরেছে নিউজটা?
— কেন তুই আগে থেকে জানতি?

বিড়বিড় করে পাল্টা প্রশ্ন করলাম আমি। উত্তরে ও বাবার মতই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সময় নিয়ে বলল,
— ফুপির বাসায় চলে আয় আপু। ওদের একজনের সাথেও আমরা থাকব না। ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জানিয়েছে? এখন তাহলে কাস্টডি নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেন।
— বাবা মাকে ছাড়া থাকতে পারব অংক?

ভয়ে কেঁদেই ফেললাম আমি। ফোনের ওপাশে অংক ধমকাল। ও যেন টুপ করে আমার বড় ভাই হয়ে গিয়েছে। তেমনই গম্ভীর আর কঠিনভাবে বলল,
— তাহলে কি দু’জনের জেদে বলি হয়ে পাগলাগারদে যাবি? সারাদিন পড়া পড়া করে পৃথিবী সম্পর্কে কোনো খবরই রাখিস না তুই আপু। বুঝতেও পারিসনি তোর কোচিং এ যাওয়ার সময়টুকুর সুযোগ নিয়ে, আমাকে দেখতে আসার বাহানায় কত কতবার ওরা পারিবারিক সালিশ ডেকেছে। একে অপরকে দোষারোপ করে গালমন্দ করে আমাদের মান কমিয়েছে গোটা পরিবারের সামনে। তোর কাছে মনে হয় ওরা ফেরেশতা তাই তো? জেনে রাখ ওরা দুজন হলো সাক্ষাৎ…

কথা অসম্পূর্ণ রেখে অংক লাইন কেটে দিল। দিব্যি টের পেয়েছি শেষের কথাগুলো বলার সময় কণ্ঠ ভিজে উঠেছিল অংকর। ভাইটাও নিশ্চয়ই টের পেয়েছে আমার অসহায়ত্ব। তাই কথা শেষ করার সাহস পায়নি।
ফোন কাটার পর অনেকক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি ফ্যাল ফ্যাল করে স্ক্রিনে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। বুকের ভেতর অবিশ্বাসের পাহাড় ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল আমার। মস্তিষ্কের একাংশে হাতুড়ি পেটা হতে লাগল মিলনাত্মক দ্বন্দ্ব সমাসের সংজ্ঞা। আচ্ছা এই সমাসের কোনো বিপরীত সমাস আছে কি? থাকলে তাকে কি বলে? আমার জানা নেই তো।
___________________

সম্পর্ক এমন একটা জিনিস। এখানে কখনো তৃতীয় পক্ষের শক্ত কোনো ভূমিকা থাকে না। হয়তোবা তৃতীয় পক্ষ বলতে যে শব্দটা আছে এটা কিছুটা ইনফ্লুয়েন্স করতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্তের জায়গাটা সবসময় দুটো মানুষের হাতে।
তাই আমি কিংবা অংক সন্তান হয়ে বাবা-মায়ের আলাদা হওয়াটাকে যতই আটকানোর চেষ্টা করি, শেষ পর্যন্ত সফল হলাম না। অবশ্য অংক যে পুরোপুরি আমার সাথে তালে তাল মিলিয়ে আটকাতে চাইল তাঁদের বিচ্ছেদ তাও নয়। চেষ্টা শুধু আমি একা করলাম। কেঁদেকেটে, আত্মীয়দের কাছে ধর্না দিয়ে কিংবা বাবা-মায়ের পায়ে পড়েও!

আমি যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলাম একটা। ছোটবেলা থেকে আমার জগৎ ছিল ওই মানুষদুটো। ওদের বিশ্বাস, ভালোবাসা…
বিশেষ কোনোকিছু দেখিনি কখনো, তবু ওরা আমার কাছে বিশেষই ছিল। ছিল কাপল হিসেবে আইডল। সেই আইডল যখন সেপারেটেড হয়ে যাচ্ছে, এটা আমার পক্ষে মানা কঠিন ব্যাপার তাই না?
বিষয়টা বুঝল পৃথিবীর সবাই। আমার ভাই, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি। বুঝল না শুধু দু’জন। যাদের ঘিরে আমার এত অস্থিরতা, এত পাগলামি;আমার বাবা মা।
বাবা-মায়ের জেদ বরাবর সমান। কেউ কাউকে একচুলও ছাড় দেয়ার অভ্যেস নেই। তাই হলো সেটাই যা ওদের প্ল্যান ছিল। ডিভোর্স।

চোখের সামনে দিনের আলোর মতো ছিলো হয়তোবা অনেককিছুই, তবু আজ পর্যন্ত বাবা-মায়ের ডিভোর্স কেন হয়েছিল আমি বলতে পারব না৷ শুনতে চাইনি ভয়ে। অংক বলে আমি খুব বোকা, আর ভীতুও। তাই পৃথিবীর সবার কাছে যা স্বাভাবিক তা যদি আমার মন না মানতে চায় তাহলে নাকি আমি সেটা ধরি না৷ দেখেও না দেখার ভাণ করি, জেনেও অবুঝ সাজার নাটক করি।
হতে পারে ওর অনুমান সত্যি। তাই তো ওরা যতবার এই নোংরা বিষয়টার পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্যি আমাকে শোনানোর চেষ্টা করেছে, ততবার পালিয়ে সত্যকে অগ্রাহ্য করে বেড়িয়েছি আমি;ভীতুর মতই।
অন্যদিকে ছোট হলেও অংক বেশ স্ট্রং হয়ে উঠেছে ততদিনে। যতটা আমাকে সামলেছে, তার চাইতে বেশি সামলেছে পরিস্থিতি। রোজ দেখতাম এই ছাড়াছাড়িটা নিয়ে ও কিছু অ্যাজামশন দাঁড় করাচ্ছে। আমি শুনতে না চাইলেও কানের কাছে এসে রহস্য রহস্য গলায় বলছে,
— বুঝলি আপু এই যে বাবা-মায়ের ডিভোর্স, এটা কিন্তু একদিনে হয়নি। এতবছর সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ওদের মধ্যেকার ভালোবাসা ফুরিয়ে গিয়েছে। সেখানে জায়গা নিয়েছে ঘৃণা কিংবা তেঁতো ভাব।
— রিপ্লেসমেন্ট?
— হুমম রিপ্লেসমেন্ট।
— সত্যি ভালোবাসা পাল্টে ঘৃণা হতে পারে অংক?

আমার আহত প্রশ্ন শুনে ও আঁড়চোখে তাকাত তারপর। খুক খুক করে কেশে গলা ঝেড়ে বলত,
— এই থিওরি মেলানোর জন্য আমার বয়সটা কম। তুই কি কিছু বুঝতে পারিস?
— উঁহু।

দুদিকে মাথা নেড়ে জবাব দিই আমি। অংক ফস করে শ্বাস ছাড়ে। বলে,
— তাহলে প্রশ্নটা পেন্ডিং থাকুক। আরেকটু বড় হলে তোকে উত্তর দেব।

চুপচাপ মেনে নিই ওর ডিসিশন। মুখ ফুটে বলতে পারি না, ভালোবাসা তো কোনোদিন ঘৃণায় পাল্টে যেতে পারে না।
বইয়ে পড়েছি ভালোবাসা আর ঘৃণা দুটো বিপরীত শব্দ। দুই মেরুর দুটো শব্দ কোন লজিকে কোনো বিন্দুতে মিলিত হবে! এটা তো ত্রিভুজ নয়, বরং সরলরেখার দুই প্রান্তের মতো।
বলা হয় না, আমার আস্তে আস্তে মনে হতে শুরু করেছে বাবা মায়ের মধ্যে ভালোবাসা নামক কিছু তৈরিই হয়নি কখনো। হলে অন্তত মায়া থাকত, টান থাকত একে অপরের প্রতি। ভুলে যাওয়া কিংবা বিরক্তিবোধের জন্ম নিতো না। ঘৃণা আরও দূরের ব্যাপার।
কাউকে বুঝতে না দিয়ে বোধহয় জোর করে চাপিয়ে দেয়া একটা সম্পর্ক বয়ে বেড়াচ্ছিল দুজনে এতদিন যাবৎ। ভেবেছিল সময়ের সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাবে সবকিছু। সন্তান এলে টান হবে। ওরাও ভালোভাবে মেনে নিতে পারবে একে অপরকে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। কোথাও একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছিলই। যেটা সময়ে ডালপালা মেলে বেড়েছে। তারপর সম্পর্ক নামক বোঝার ভার যখন নিজের সীমানা ছাড়িয়েছে, তখন আর কাঁধ পেতে ওকে বয়ে নেয়ার সাহস ওরা দেখাতে চায়নি। তাই শেষে আলাদা হয়ে গিয়েছে।
খুব সহজ সমাধান তাই না? যে সমাধানকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে এর অপর পৃষ্ঠায় লেগে থাকা কাঁটার আঘাত কাদেরকে ঠিক সহ্য করতে হতে পারে এ ভাবনাও তাঁরা ভাবতে চায়নি। চাপিয়ে দেয়া সম্পর্কের ভার বুঝি এত?

ডিভোর্স থিওরির সলিউশন হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে এই প্রশ্নটা আমায় খোঁচাতে লাগল। আমি তো ভীতু, তাই অনেকবার চেষ্টা করেও শেষ মুহুর্তে উত্তর খোঁজার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতাম। কে জানে কেন বাঁচিয়েছি তখন! সৃষ্টিকর্তা নিজের জীবনে একটা চাপিয়ে দেয়া সম্পর্কের নতুন রূপ দেখাবেন বলেই হয়ত.. ”

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে