ব্যস্ততা পর্ব_২
#লেখা_আরজুমান_তাশা_আরু।
২.
–
কোন কিছু না খেয়ে অভি অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে জেনো অভির মন বসছেনা। বারবার শুধু মোবাইলটা চ্যাক করছে, কিন্তু নাহ!কোন কল কোন মেসেজ আজ আর আসলো না অভির ফোনে। অসহ্য লাগছে অভির আজকে। যখন ইরা ফোন মেসেজদিয়ে জিজ্ঞাসা করতো তখন অভি কতোটা বিরক্তিকর বোধ করতো। আর আজ! কল মেসেজ না আসাতেও বিরক্তিকর বোধ করছে। আসলেই মানুষ এক অদ্ভুত প্রানী৷
কোন মতে বিকেল অবধি অফিস করে চলে আসে। মনে মনে এটায় ভেবে রেখেছে হয়তো ইরা ফিরে এসেছে। কিন্তু! বাসায় ফিরে দেখে পুরো বাসা খালি পরে আছে আর কেমন জেনো গুম মেরে আছে পুরো বাড়িটা। অভির নিশ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে এমন পরিবেশে। মনে মনে ভাবছে দুই মিনিটে তার এমন অবস্থা না জানি ইরার কি কস্টটায় না হয়েছে। নাহ এভাবে বেশিক্ষন থাকলে অভি পাগল হয়ে যাবে। তাই সে অফিসের ড্রেসটা পরা অবস্থায় বেড়িয়ে পরে।
কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে অভি সে কখন থেকে কিন্তু দরজা কেউ খুলছেনা। কিছুটা অসস্থি বোধ করছে সে। আরেকবার কলিংবেল বাজাতেই ইরার মা দরজা খুলে দেই।
-আসসালামুয়ালাইকুম মা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। আরেহ অভি! আসো ভিতরে আসো।
-মা ইরা??
-ও মনে হয় ছাদে তুমি বসো আমি ডেকে নিয়ে আসছি।
– না মা থাক আপনাকে কস্ট করে ডাকতে হবেনা বরং আমি যায় ছাদে। মা প্রিতি কোথায়?
– আর প্রিতি, ওর কি আর কাজ আছে? স্কুল থেকে এসেই ঘুমাচ্ছে।
-অহহ।
-আচ্ছা তুমি যাও ছাদে। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-জ্বী মা।
–
ইরা গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থেকে সূর্যাস্ত দেখছে। চোখ মুখ ফুলে আছে, হয়তো খুব কেঁদেছে।
–
অভি ছাদে এসে এদিক সেদিক তাকিয়ে অবশেষে ছাদের এক কোণায় ইরাকে দেখে। আস্তে আস্তে করে ইরার পাশে গিয়ে অভি দাঁড়ায়। ইরা জেনো অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে ওর পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে সেটা ইরা খেয়ালি করলো না।
-ফিরে চলো।
—
অভির এমন কথায় চমকে উঠে ইরা! পাশ ফিরে দেখে অভি দাড়িয়ে আছে।অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইরা।
-ফিরে চলো প্লিজ ইরা।
-সম্ভব না আর। তুমি ফিরে যাও অভি।
-আমি একা ফিরে যেতে আসিনি তোমাকে সহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।
-সেটা সম্ভব না। আমি আর ফিরে যাবোনা। খুব শীঘ্রই সেপারেশন লেটার পাঠিয়ে দিবো।
– ইরা!!! প্লিজ লাস্ট টাইমের মতো ফিরে চলো। আর এমন হবেনা। আমি তোমার সে আগের অভি হয়ে যাবো।
-নাহ অভি, সেটা আর হবার নই।
-ওকে সম্ভব না তো? ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার মতো করে। আর হ্যা সেপারেশন লেটার তোমার পাঠানো লাগবেনা আমিই পাঠিয়ে দিবো। বাই
–
এই বলে অভি হনহন করে ছাদ থেকে নেমে যায় আর ইরা ছলছল নয়নে অভির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। বুকের মাঝে এক অসহ্য ব্যথা অনুভব করছে ইরা। অভি ছাদ থেকে নেমে গেলে ইরা ছাদে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। সে জানে তার এই কাঁন্না অভির কান অবধি পৌছাবে না। ইরা কাদছে চোখের জলের জেনো আজ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরা ছাদে বসে কাঁদতে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে করে ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পরে ইরা।
–
অভি ছাদ থেকে হনহন করে নেমে গিয়ে কারো সাথে কথা না বলে বেড়িয়ে পরে।ইরার মা অভি এভাবে চলে যাওয়া দেখে বেশ অবাক হলেন। মনে মনে কিছ একটা আঁচ করছেন তিনি। ইরাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে অভি তার এক বন্ধুর রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে থাকে। চুপচাপ কোন টু শব্দ করছে। অবশ্য অভির বন্ধু দুইতিনবার অভির সাথে কথা বলার চেস্টা করেছে কিন্তু অভি একটা শব্দ ও করেনি। শাওন হয়তো বুঝতে পেরেছে অভির মন খারাপ তাই সে আর আগ বারিয়ে কথা বললোনা। অভিকে একা ছেড়ে দিলো।
-রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা অভি এখনো সেই একই জায়গায় বসে আছে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষন। কাস্টমার সব চলে গেছে, রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার সময় হয়েছে শাওনের। শাওন এবার সাহস করে অভির পাশে গিয়ে অভির কাঁধে হাত রাখে। শাওনের হাতের স্পর্শে অভির ধ্যান ভাঙ্গে।
-এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি বলতো! রাত তো কম হলোনা।
-ওহ।
-কি হয়েছে বলতো? তখন থেকে কি চিন্তা করে চলেছিস। কতোবার তুকে ডাকলাম কিন্তু তুই শুনতেও পাসনি।
-কিছু হইনি। (দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে)
-দেখ অভি তুই আমার ছোট বেলার বন্ধু তোকে আমি খুব ভাল করে চিনি। কি হয়েছে খুলে বল আমায়। একটা salutation তো দিতে পারবো।
-শাওন ইরা ডিভোর্স চাই। আমার সাথে ও আর থাকতে চাইনা।
-হুয়াট! কেনো কি হয়েছে?
-আসলে সব দোষ আমার,আমার জন্যই এমন টা হয়েছে। আমি এমন ভাবে টাকার নেশায় পড়ে গিয়েছি আমি প্রায় ইরাকে ভুলতে বসেছি। আমি ভুলেই গেছি আমার জীবনের সাথে ইরা নামে কেউ জড়িয়ে আছে। ও আমার থেকে একটু সময় চাইতো আমি সেটায় ওকে দিইনি। দিনরাত শুধু অফিস অফিস করেছি। বাসায় গেলেও অফিসের কাজ নিয়ে পরে থাকি। ইরা খেয়েছে কিনা সেটা জানার ও আমার কাছে সময় নেই। খুব অবহেলা করেছি মেয়েটাকে।
–
তারপর অভি গত রাত থেকে আজ বিকেল অবধি যা হলো সব বললো। শাওন ও চিন্তায় পড়ে গেলো। আর কেউ না জানলেও শাওন জানে ইরার জন্য অভি কতটা পাগল। কি পরিমান ভালবাসে তা। কিছুক্ষন চুপ থেকে শাওন অভিকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। অভি বাসায় এসে সারাঘর ঘুরছে। সব কিছুতে জেনো ইরার হাতের ছোয়া লেগে রয়েছে। চুপচাপ অভি তাদের রুমে গিয়ে শুয়ে পরে না খেয়ে। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
মনে মনে ভাবছে অভি ইরার সাথে রাগ না করে ঠিক ভাবে শান্ত ভাবে বললে হতো ইরা চলে আসতো কেনো যে রাগ দেখাতে গিয়েছি। মেয়েটাকে বোঝার ক্ষমতা বোধ হয় আমার হয়নি৷ আমি না চাইতেও বেশি কিছু পেয়ে ফেলেছি তাই ইরার কদর টা বুঝিনি। এখন হারে হারে বুঝছি ইরা আমার জন্য কতোটা প্রয়োজন। কালকে আমি আবার যাবো তোমার কাছে। দরকার হলে তোমার পায়ে ধরবো। যে কিছুর মূল্যে তোমায় আমি আবার আমাদের সংসারে নিয়ে আসবো। তোমায় আমি আর ব্যস্ততা দেখাবোনা ইরা।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুঝে রই অভি আর অপেক্ষা করে সকাল হওয়ার।
#চলবে______
(বিঃদ্রঃ তিন পর্বের গল্প)
#রিপোস্ট।
লেখাঃ ১১/১১/২০১৮।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন