ব্যস্ততা।১
আরজুমান তাশা।
.
__”কখন আসবে বাসায়?
-জানিনা,
-জানিনা মানে কি? তুমি আমাকে আজকে কথা দিয়েছো তাড়াতাড়ি আসবে।আর এখন বলছো জানোনা!
-ফিরতে অনেক রাত হবে জরুরি একটা মিটিং আছে।
-তুমি কোন দিনটায় তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছো যে আজ আবার নতুন করে বলছো দেড়ি হবে?
-দেড়ি হবে তাই দেড়ি হবে বলছি। আর প্রতিদিন এই এক প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগেনা।
-অভি এই এত্তো বড় বাড়িতে আমি একা থাকি। আমার কি ভয় লাগেনা একা থাকতে। আর একটা দিন জলদি বাসায় আসলে সমস্যা কোথায়?
-আজকে একদমি সম্ভব না, অন্য একদিন। আসি উম্মাহ।
-অ,অভি ইইইইই।
অভি চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে ইরা। ভালবেসে বিয়ে করেছে। কলেজ জীবনের প্রেম তারপর বিয়ে। ইরার এতো বড় বাড়ি, গাড়ির দরকার নেই ও শুধু অভির থেকে সময় চাই আর অভি দিনরাত টাকার পিছনে ছুটছে সে প্রায় ভুলতে বসেছে তার সাথে আরো একটা জীবন জড়িয়ে আছে। সকালে অফিসে যায় আসে রাতে বাসায় ফিরে,বাসায় ফিরে আবার অফিসের কাজ নিয়ে বসে। ইরা কে জেনো অভির চোখেই পরেনা।
–
খেতে এসো।
-খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়ে নাও।
-মানে? আমি আজ তোমার পছন্দের রান্না করেছি আর তুমি কিনা খেয়ে এসেছো।
-ক্লাইন্ট অনেক জোড় করছিলো তাই খেতে হলো তাদের সাথে।
-আর আমি যে কস্ট করে এতোসব রান্না করলাম সেগুলো?
-ফ্রিজে রেখে দাও।পরে খাওয়া যাবে।
-আচ্ছা নাই খেলে একটু আমার পাশে তো বসো। আমি খাবো আর তুমি দেখবে।
-ইরা কি শুরু করেছো বলোতো? সবসময় শুধু বাচ্চাদের মতো বায়না ধরো। দেখতেই তো পারছো কাজ করছি।
-কিসের এতো কাজ তোমার? দিন নাই রাত নাই, শুধু কাজ আর কাজ। সেই সকাল বেলা যাও রাতে আসো সারাদিনন একটা কল দিয়ে খোজ নিয়ে দেখোনা বেচে আছি কিনা মরে গেছি রাতে যাও আসো তাও অফিসের কাজ নিয়ে পরে থাকো।
-আমি যদি কাজ না করি তাহলে এই এতো বাড়ি,গাড়ি এসব কোথায় থেকে পেতে?
-কে চেয়েছে এতো কিছু তোমার থেকে? আমিতো চাইনি এতোসব।
-দেখো ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই, আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
-আমি ঝগড়া করছি? তোমার সাথে কথা বলাটাও এখন ঝগড়া?
-তুমি যাবে নাকি আমি এখান থেকে চলে যাবো।
–
এই বলে অভি সেখান থেকে উঠে অন্য রুমে চলে যায় আর ইরা পাথরের মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জ্বল গড়িয়ে পরছে। সোফায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পরলো, ওতো এই অভি কে চাইনি যে অভি কিনা তাকে অবহেলা করবে। কিন্তু কেনো এতো পরিবর্তন। সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ইরা। কতক্ষণ যে এভাবে বসে কেঁদেছে ইরা নিজেও জানেনা। তারপর আস্তে আস্তে করে ধীর পায়ে রান্না ঘরে যায় আর রান্না করা সব কিছু ডাস্টবিনে ফেলছে আর চোখ জল মুছছে। তারপর রুমে গিয়ে ইরা শুয়ে পরে।
———
অভি কাজ করতে করতে কখন যে সোফায় ঘুমিয়ে গেছে সেটা অভির অজানা। ঘুম থেকে উঠেই অভি ইরা কে ডাকতে থাকে।
-ইরা আমার চা টা দিয়ে যাও।
—
——
অনেক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু ইরার কোন সাড়া শব্দ নেই। তাই অভি সোফা থেকে উঠে কিচেনের দিকে যায়, গিয়ে দেখে রান্না ঘর ফাকা। তারপর রুমে বেলকনি, ছাদে গিয়ে খুজে দেখে কোথাও নেই। রুমে আবার আসে অভি ইরা ইরা বলে ডাকতে থাকে। কিন্তু সাড়া পায়না। হঠাৎ টেবিলের উপর অভির চোখ গেলো। একটা গ্লাসের নিচে একটা চিঠি!চিঠি টা অভি হাতে নেই, তার বুঝতে বাকি নেই লেখা গুলো কার হাতের।
—-
অভি,
আমি কখনোই তোমার কাছ থেকে দামি বাড়ি, গাড়ি,আসবাবপত্র কিছুই চাইনি। আমি শুধু চেয়েছি মাথার উপর একটা ছাদ আর সেই অভিকে যে অভি কিনা আমায় পাগলের মতো করে ভালবাসে। আমার মুখ একটু গুমড়া হলে যে অস্থির হয়ে যেতো আমার মুখে হাসি ফুটাটো সেই অভিকে। তুমি এখন সে অভি নেই। বদলে গেছো টাকার নেশায় পরে। তোমার কাছে তোমার অফিস, তোমার ক্লাইন্টরাই সব। আমি কিছুনা।অনেক মানিয়ে চলতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে দিয়ে আর হচ্ছেনা তাই চলে গেলাম তোমার কাছ থেকে। আজ থেকে এই ইরা আর তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেনা কখন ফিরবে বাসায়? কেউ তোমায় আর কল দিয়ে ডিস্ট্রাব করবেনা। একসাথে বসে খাওয়ার বায়নাও ধরবেনা। আর হ্যা খুব শীঘ্রই সেপারেশন লেটার পেয়ে যাবে। কাল রাতে তোমার চোখে মুখে আমি আমার জন্য বিরক্তির চাপ দেখেছি। মুক্ত করে দিবো একে বারের জন্য। ভাল থেকো
‘ইরা’
—–
——
চিঠিটা পেয়ে অভি যেনো খুবব বড় একটা ধাক্কা খেলো । মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিতে থাকে ইরাকে রিং হচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছেনা দুইতিনবার কল দেওয়ার পর অভি খেয়াল করলো ইরার মোবাইল বালিশের নিচে রাখা। কি করবে বুঝতে পারছেনা। চুপ করে বিছানাতে বসে পরে অভি। কাল রাতের কথা ভাবছে আসলেই কাল রাতে বেশি বলে ফেলেছে ইরাকে এতো বলা উচিত হয়নি। কি বা চেয়েছে একটু সময় তো আর অভি সেই একটু সময় দিতে পারলো না ইরাকে এখন নিজের প্রতি নিজেরি রাগ হচ্ছে অভির। তাই তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে অভি না খেয়ে।
#চলবে____
(বিঃদ্রঃ তিনপর্বের গল্প)
লেখাঃ৯/১১/২০১৮.
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন