#বৈধ সম্পর্কের জোর
#জান্নাত
#পর্ব_৫
আজকে বিকালে সবাই মিলে ঘুড়তে যাবো ঠিক করলাম।সবই ঠিক আছে সবাই-ই রাজি শুধু আমার ঘাড় ত্যাড়া বাধ্য জামাই ছাড়া।আজকে ব্লাকমেইলেও কাজ হচ্ছে না।তার একই কথা তার প্রচুর কাজ আজকে কিছুতেই যেতে পারবে না।পারবে না মানে পারবে না।
তারপর কি আর করার প্রথম বার তার জেদের কাছে হেরে উনাকে ছাড়াই চললাম সবার সাথে।
কোনো বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই অনেক আনন্দ করে বাড়ি ফিরলাম।উনি ছিল না তাতে একটু মিস করছিলাম মাঝে মাঝে।তবে বেশির ভাগ সময়ই আনন্দে কেটেছে।এই পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।শাশুড়ী আম্মুতো তার সব দিকে নজর।ঠিকমতো খাচ্ছি কিনা,পড়ছি কিনা।খারাপ লাগলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।মাঝে মাঝেই আমার প্রিয় খাবার উনি বানিয়ে আনেন।আমি তখন লজ্জা পেয়ে বলতাম যে যেখানে আমার আপনাদের করে খাওয়ানোর কথা সেখানে আপনি করছেন।উনি মুচকি হেসে বলতেন,তোমার আম্মু বানিয়ে আনলেও বুঝি এমনটাই বলতে। নাকি আমাকে মা না ভেবে শাশুড়ী ভেবে ফ্রী হতে পারছো না।শোনো এখন শরীরে শক্তি আছে তাই করছি।যতদিন পারি করি তারপর তো সারা জীবন তোমারই করতে হবে।যতদিন শক্তি আছে ততদিন একটু আরাম করো।পরবর্তীতে সব তোমারই সব সামলাতে হবে।সব কিছুর দিকে খেয়াল রাখেন।আর রাফিয়ার কথা কি বলবো।আমরা এক ভাই এক বোন ছিলাম।তাই বোনের একটা অভাব বোধ করতাম।আমার সেই বোনের আফসোস ও পূরণ করেছে।আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতি যে এমন পরিবার পেয়েছি।
তবে একটা আফসোস জামাইয়ের মনে এখনও জায়গা করতে পারলাম না।তিনি আগের মতোই আমাকে দেখলে বিরক্ত হন।তবে আগের থেকে এখন একটু বেশি কথা বলেন।আগে তো কিছু বললে কোনো কথা না বলেই ঐ কাজ করতো।এখন আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর দেন বা নিজের প্রয়োজনেও কথা বলেন।
কাজ থেকে বাসায় ফিরলে একদম একা রাখি না।সবসময় তার সামনে ঘুর ঘুর করি আর বকবক করি যেন উনার অবসর সময়ে ভুলেও এশা উনার ভাবনায় আসতে না পারে।দেখতে দেখতে আজ প্রায় এক মাস বিশ দিন হতে চললো আমাদের বিয়ে হয়েছে।
রাতে যখন উনি বাসায় আসলেন।আমি অযথা অভিমান করি নি।যদিও মনে মনে প্রচুর অভিমান হয়েছে।কিন্তু উনাকে বুঝতে দেয়নি।কারন উনার কাছে এখন আমার অভিমান,অভিযোগ, রাগ কোনো কিছুরই দাম নেই।তাই শুধু শুধু অভিমান দেখানো বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। উনি অভিমান ভাঙাবেন তো দূরে থাক জিজ্ঞাসাও করবে না এতে বেশি কষ্ট পাবো।তাই উনার সাথে স্বাভাবিক আচরণই করছি।রাতে খাওয়া দাওয়া পড়া শেষে ঘুমানোর সময় উনাকে বললাম আজ থেকে প্রতি দিন আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন।
কথাটা শোনার সাথে সাথে উনি বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে পরলেন।যেন পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্য জনক কথা তিনি আমার মুখ থেকে শুনেছেন।
উনি অবাক হয়ে বললেন,এসব কি বলছো। তোমার মাথা ঠিক আছে।
আমি বললাম,এত ঢং করছেন কেন।না বোঝার মতো আমি কিছুই বলি নি।আর এটা হচ্ছে আমাদের সাথে ঘুড়তে না যাওয়ার শাস্তি।
উনি গম্ভীর স্বরে বললেন, দেখো সব সময় তোমার কথা শুনি তার মানে এই না যে তুমি উল্টো পাল্টা আবদার করবে আর আমি মেনে নেবো।সব কিছু জোর করে হয় না।
আমি বললাম, আমি আপনাকে ভালোবাসতে বলি নি শুধু জড়িয়ে ধরতে বলেছি।আর আমার কথা যদি না শোনেন তো আমি এখনি আম্মু আব্বুকে বিচার দেবো।
হটাৎ ই উনি হা হা করে হেসে বললেন,তো কি বিচার দেবে।বলবে যে আব্বু আপনার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে নি।(হাসি মুখেই)
আমি অবাক হয়ে তার হাসি দেখলাম। কারণ আমাদের বিয়ের পর উনাকে হাসতে দেখি নি। সব সময় গম্ভীর আর বিরক্তি নিয়ে থাকতেন।খুব ভালো লাগলো উনার হাসি দেখে।তবে আপাতত ভালো লাগাকে এক সাইডে রেখে ঠোঁট উল্টে বললাম,বলবো আপনি আমাকে বকেছেন আর মেরেছেন।
উনি হেসেই বললেন,তো যদি জিজ্ঞেস করে কেনো মেরেছি তখন কি বলবে।
আমি কিছু ক্ষন ভাবলাম,তারপর বললাম, কিছু একট বানিয়ে বলে দেবো।আর না হলে সত্যিই বলবো।
উনি বললেন,সত্যটা বলতে পারবে।
আমি বললাম, অবশ্যই পারবো।
উনি হামি দিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললেন,ঠিক আছে বিচার দেও।
উনি ভয় পাচ্ছেন না দেখে আমতা আমতা করে বললাম,আমি কিন্তু সত্যিই ডাক দেবো।
উনি বললেন,আমিও তো বললাম দেও।
আমি একটা শ্বাস নিয়ে চিৎকার করে বললাম,ও আব্বু গো ও আম্মু গো দেখেন আপনার ছেলে,,,,,,,,,,
আর কিছু বলার আগেই উনি আমার মুখ চেপে ধরলেন।আর বললেন,তুমি কি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো এসব কেউ মা বাবাকে বলে।
আমার চিৎকার শুনে আম্মু আব্বু দরজা কড়া নারতে নারতে বললেন কি হয়েছে রাইসা,দরজা খোলো।
উনি একটা ঢোক গিলে বললেন,ও আর পড়তে চাচ্ছে না আমি জোর করে পড়াতে চেয়েছি,তাই এরকম চিৎকার করেছে।
আম্মু বললেন,তুই দরজা খোল আমি রাইসার কাছে শুনবো।
উনি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন উনি যা বলেছেন তাই বলতে।
আমিও আম্মুকে বললাম যে, উনি যা বলেছেন সত্য।
তারপর উনারা দরজার ওপাশ থেকেই উনাকে বকে আর পড়াতে না বলে চলে গেলেন।
আমরা দুজন জোরে শ্বাস ফেললাম। আমি মনে মনে বললাম বাহ্ আমার জামাইটার কত বুদ্ধি দেখি।আমার তো এই বিষয়ে মাথায় ই ছিলো না।ভাগ্যিস উনি কিছু বলে মেনেজ করেছেন।আমি তো ভয় দেখাতে সত্যি সত্যিই ডাক দিছিলাম তবে ওনারা আসলে কি বললবো এটা ভাবি নি।
উনি ভ্রু কুঁচকে রাগি গলায় বললেন,এই মেয়ে তোমার মাথায় কি ঘিলু নেই।নাকি সব ঘিলু শুধু আমাকে কিভাবে জ্বালাবে তাতে কাজে লাগাও।এখনই তো মান সম্মান সব যাচ্ছিলো।
আমি বললাম,আপনি আমার কথা শুনলে তো আর আমি ডাকতাম না,তাছাড়া আপনি তো মেনেজ করেই নিয়েছেন।
উনি আমাকে ভেঙিয়ে আমাকে কপি করলেন।
আমি বললাম, এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমান।
উনি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে পাশে শুলেন।আর আমার দিকে এমম ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কাঁচা গিলে খাবেন।আমি আবারও দাঁত কেলিয়ে উনাকে বললাম কি হলো।উনি ধমক দিয়ে বললেন, ধরতেছি।
তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুলেন।উনাকে আসতে দেখে আমার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। যতই মুখে এতক্ষণ যাই বলি না কেন সত্যি বলতে আমারও অনেক লজ্জা লেগেছে।আমাদের মাঝে দূরত্ব কমানোর জন্য লাজ লজ্জা ভুলে এসব বলেছি।আর আব্বু আম্মু কে ভুলেও কি এ বিষয়ে কিছু বলতাম নাকি ওটা তো ভয় দেখিয়েছি।ওনারা আসলে আমিও বানিয়ে কিছু বলে দিতাম।
উনি চোখ বন্ধ করে বার কয়েক নিশ্বাস ফেলে জড়িয়ে ধরলেন।সাথে সাথে আমরা দুজনই কেঁপে উঠলাম।আনইজি ফিল হচ্ছে জীবনে প্রথম কোনো ছেলের এতো কাছে আসলাম।উনি আমার অস্থিরতা দেখে বললেন,নিজেই জড়িয়ে ধরতে বলে এখন নিজেই লজ্জা পাচ্ছো।
উনার কথায় প্রচন্ড পরিমান লজ্জা পেলাম।কিন্তু উনাকে বুঝতে না দিয়ে বললাম,আপনাকে আমি ব,লে,ছি যে আ,,মি ল,,,,জ,,,জা পাচ্ছি।
উনি বললেন তাহলে কাপছো কেন।
আমি বললাম,এমনিতেই এত কথা না বলে ঘুমোন তো।
তারপর যেহেতু অস্থিরতায় কারোই ঘুম আসছিল না তাই আজাইরা ঝগড়া করছিলাম। উনি জড়িয়ে ধরেই ছিলেন।আমিও ছাড়তে দেই নি।এক সময় এমন ঝগড়া করতে করতে দুজনই ঘুমিয়ে গেলাম।
আজানের শব্দে ঘুমি ভেঙে গেলো।
আমি চোখ খুলে দেখলাম। সে রকমই জড়িয়ে ধরে আছে।আমি মুচকি হেসে কিছু ক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।তারপর তাকে ডেকে তুললাম।তিনি ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদে চলে গেলেন আর আমিও ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।নামাজ শেষে দু পাতা কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করে উঠে রান্না ঘরে আসলাম।উনিও মসজিদ থেকে চলে এসেছেন।এসেই আবারও শুয়ে পরেছেন।আমি আর আম্মু মিলে সকালের সব কাজ করলাম।রাফিয়া অসুস্থ। তাই শুয়ে আছে।এমনি সময় তিন জন মিলেই সব করি।
উনি খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলেন।আমিও বাকি কাজ করে প্রায় নয়টার দিকে পরতে বসলাম।পড়া শেষে উঠে গোসল করলাম।তারপর রাফিয়ার সাথে কিছু ক্ষন আড্ডা দিলাম যেহেতু ও অসুস্থ তাই বেশি সময় থাকি নি।যোহরের আজান দিলে নামাজ আদায় করে উনার সাথে ফোনে কথা বলে ঘুমিয়ে পরলাম।এইভাবেই দিন কেটে রাত চলে আসলো।কালকের মতই উনি জড়িয়ে ধরে ঘুমালেন।তাতেও আমার প্রচুর বকবক করতে হয়েছে।
তবে একটা জিনিস খুব ভালো হয়েছে এশা আর এর মধ্যে কোনো ঝামেলা করে নি হয়তো বুঝতে পেরেছে।আর উনিও এশার নাম তেমন নেন নি।নেননি বলতে নিতে পারেন নি।
এভাবেই ওনাকে জ্বালানোর মধ্য দিয়ে আড়াই মাস দেখতে দেখতে চলে গেলো।এর মধ্যে আমি তিনবার অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম।মানে জ্বর কাশি হয়েছিলো।দুবারই আম্মু সেবা যত্ন করেছেন।তৃতীয় বার আল্লাহ আমার বাধ্য জামাইরে সঠিক বুদ্ধি দান করেছিলেন যে কারনে তৃতীয় বার উনিই আমার সেবা করেছিলেন।কারন বার বার যদি আম্মুই করে কেমন দেখা যায় আর তাছাড়া আম্মুরও বয়স হয়েছে। আমার সেনা করতে গিয়ে ওনি অসুস্থ হয়ে পরবেন।তবে আম্মু বার বার খোঁজ নিয়েছেন।
যাইহোক উনি আমার সেবা করেছিলেন তার শোধ নিতে হবে না।তাই এবার তার ধুম জ্বর হয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সেবা করেছি।উনিও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেছেন।প্রায় এক সপ্তাহ জ্বর ছিলো।
এভাবেই জোর করা,জ্বালানো,দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া খুনশুটির মাধ্যমে তিন মাস পার হয়ে গেছে। আর পনেরো দিন পর আমার ফাইনাল এক্সাম তারপর ভাইয়ার বিয়ে। তাই আজকেই আমাদের বাড়ি যাবো কিছু দিন ক্লাস করে সব নোট কালেক্ট করতে হবে রিভিশন দিতে হবে।তাই পনেরো দিন আগেই যাচ্ছি।একেবারে ভাইয়ার বিয়ে শেষে আসবো।প্রায় মাসের বেশি থাকবো।শশুর বাড়ির সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে। আম্মু আব্বু বিয়ের দিন যাবে আর রাফিয়া রাফিদ হলুদের আগের দিন যাবে।
ভাইয়া নিতে এসেছে।
রেডি হয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।উনাকে কল করলাম কারন উনি বাসায় নেই।রিসিভ করলে ও বাসায় যাওয়ার ব্যাপারে বললাম।উনি তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।হয়তো মনে মনে খুশিই হয়েছেন।এত দিন শান্তিতে থাকতে পারবে বলে।
আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,নিজের খেয়াল রাখবেন।আর হ্যাঁ যেহেতু আমার এক্সাম তাই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবো।তাই তেমন কল দিতে পারবো না।সুতরাং ভুলেও এক্সের কথা মাথায় আনবেন না।প্রতি দিন শপথ পরবেন।উনি হালকা হেসে বললেন আচ্ছা। যদিও উনার হাসি আমি দেখি নি।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম আমি যাওয়ার পর যদি একবার নিজ থেকে কল করেন তাহলে বুঝবো কিছুটা হলেও আমাকে মিস করছেন।আর যদি আমাকে দেখতে আমাদের বাসায় চলে আসেন তো বুঝবো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন,আর যদি দুটার একটাও না করেন তো বুঝবো,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,