#বৈধ সম্পর্কের জোর
#জান্নাত
#পর্ব_৪
এশা ওদের বাসায় এসেই ওর বাবাকে ডাকতে লাগলো।এশার বাবা ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে জানতে চাইলেন কেন ডাকছে।এশা বললো,তুমি এমনটা কেন করলে আব্বু।
এশার বাবা বললেন,কিসের কথা বলছো?আমি বুঝতে পারছি না।
এশা বললো,আমি না বোঝার মতো কিছু বলি নি।তুমি কেনো রাফিদের মা বাবাকে অপমান করেছো,কেন আমাকে আর রাফিদকে আলাদা করলে কেন?)কাঁদতে কাঁদতে)
এশার বাবা বললেন,সেটা তুমি ভালো করেই জানো,জেনেও আবার জিজ্ঞেস করার কারন?
এশা বললো,তোমার বোনের কাছে ওয়াদা করেছো তাই আমাদের আলাদা করলে,আমার কি কাউকে ভালোবাসার অধিকার নেই।
এশার বাবা বললেন,অবশ্যই আছে,থাকবে না কেন,তুমি যেন অন্য কাউকে পছন্দ না করো বা রাজিব অন্য কাউকে পছন্দ না করে সেই জন্য তোমাদের ছোট বেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত তোমাদের বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন ভুলে না যাও।কই রাজিব যখন দেশে ছিলো তখন তো কাউকে তোমার ভালো লাগে নি,আর যেই রাজিব তিন বছরের জন্য দেশের বাহিরে গেলো ওমনি তুমি কাউকে ভালো বেসে ফেললে।কই রাজিব তো অন্য কাউকে পছন্দ।কারন ওর কাছে সবার কথার মূল্য আছে যা তোমার কাছে নেই।তুমি ওর ফোন রিসিভ না করলে তোমার ভাই বা আমাদের কাছ থেকে খোঁজ নেয়।আজও নিয়েছে।প্রতি বারই কিছু না কিছু বলে ওকে শান্ত রেখেছি।সত্যটা জানতে পারলে ও কতো কষ্ট পাবে বুঝতে পারছো।
এশা বললো মানলাম আমি ওর সাথে অন্যায় করেছি,কিন্তু তুমি,তুমি তো আমার বাবা আমার ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।আমি কিসে সুখি হবো তাতে কি তোমার কিছু যায় আসে না।
এশার বাবা বললেন,না যায় আসে না।তোমার কাছে যদি আমাদের বাইশ বছরের ভালোবাসা, রাজিবের ছোট থেকে এই পর্যন্ত ভালোবাসার,সবচেয়ে বড় কথা আমার মৃত বোনের কাছে দেওয়া ওয়াদার কোনো মূল্য না থাকে,তবে আমার কাছে ও তোমার দু বছরের ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।
এশা বললো,তুমি এতোটা কঠোর কি করে হতে পারো বাবা,আজ আমার কান্নায় ও তোমার মন গলছে না।তুমি কেনো বুঝতে পারছো না আমি এখন রাফিদকে ভালোবাসি।ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।রাজিব আমার ভালোলাগা ছিল।
এশার বাবা বললেন,রাজিব থাকতে যখন অন্য কাউকে ছাড়া থাকতে পারতে রাজিব আসলে তখন আবার রাফিদকে মনে পরবে না।আমি চিনি তোমাকে।যেটাকে ভালোবাসা বলছো ওটা আবেগ।মিলিয়ে নিও।
এশা চিৎকার করে বললো,আমি মেলাতে চাই না।আমি রাফিদকেই চাই।
এশার বাবা তখন ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে বললো,তোমার এত বড় সাহস এখন তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করছো,একে তো ভুল করেছো আবার আওয়াজ উঁচু করে কথা বলছো,আর ভুলে যেও না রাফিদ এখন বিবাহিত। তাই ওকে নিয়ে ভাবনা বন্ধ করো।
এশা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,তোমার কারনেই তো রাফিদ এখন বিবাহিত,তুমি যদি ওর বাবাকে অপমান না করতে তাহলে তো ওনারা রাফিদের বিয়ে দিতো না,আসল কথা ওদের আমাদের থেকে কম সম্পত্তি আছে তাই তুমি ওকে মেনে নেও নি।আর এসব নিয়েই তো অপমান করেছিলে তাইনা(তাচ্ছিল্য হেসে)
এশার বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন,তুমি ভালো করেই জানো আমার কাছে সবাই সমান,ওনাদের আগে ভালোভাবেই বলেছিলাম,হয়তো রাফিদকে তারা বুঝিয়েও ছিলেো যার কারনে তোমরা পালাতে চাইছিলে তাই আমি তাদের এভাবে অপমান করি কারন আমি জানি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষের যখন আত্মসম্মানে আঘাত লাগে তখন তারা যে সহজে মেনে নেয় না।সেটাই হলো রাফিদের বাবা অন্য একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন।যদি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অপমান মেনে নেয় তাই হুমকিও দিয়েছি।জানি এগুলো করা ঠিক হয়নি।কিন্তু আমিই বা কি করতাম তুমি তো এখন কন্ট্রোল এর বাহিরে তোমাকে বোঝাতে গেলে উল্টো সেই কাজটাই করতে।তাই এমনটা করেছি।তোমার আর রাজিব এর বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার সময় ক্ষমা চেয়ে নেবো।আর বুঝিয়ে বললে তারাও বুঝবেন বলে আশা করছি।
আর কি বললে আমাদের থেকে কম সম্পত্তির মালিক তাই।এতে আমার না তোমার প্রবলেম হতো কেনো না যদি তোমরা পালিয়ে যেতে আমি কোনো দিনই তোমাদের মেনে নিতাম না তাই তোমার অংশের কোনো সম্পত্তিও পেতে না।তোমার কি মনে হয় তুমি ভালোবাসে এক সাথে ওদের নিয়মে খাপ খায়িয়ে নিতে পারতে,নাহ পারতে না।যে মেয়ে এসি কার ছাড়া চলতেই পারে না যে দামি ড্রেস না পরলে নাকি কারো সামনে লজ্জায় যেতে পারে না।ওর্ডার করার সাথে সাথে প্রিয় রেস্টুরেন্টেের খাবার সামনে না পেলে যার মাথা নষ্ট হয়ে যায় প্রতি সপ্তাহে নিম্নে একবার যার শপিং করতেই হবে না হলে চলে না আর নাই বা বললাম সেই মেয়ে ওদের সাথে মিলিয়ে চলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।আবেগ দিয়ে নয় বিবেক দিয়ে ভাবো একবার যদি ভুল মনে হয় তো আবার এসো আমার সামনে।বলে এশা বাবা নিজের রুমের দিকে হাটা দিলেন।তারপর আবার থেমে গিয়ে বললেন,আর হ্যা আগে সিওর হয়ে নেও যে রাফিদ তোমার ভালোবাসা নাকি আবেগ।এর উত্তর পেলে তখন ওদের সাথে মিলিয়ে চলতে পারবে কিনা তার উত্তর খুঁজো। যদি হ্যাঁ হয় তবেই আমার সামনে আসবে।তার আগে নয়।বলেই দ্রুত তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।
আর এশা নিচে বসে কাঁদতে লাগলো।
রেস্টুরেন্ট থেকে আমরা দুজনেই মন খারাপ করে বাড়ি ফিরলাম।আমার মন খারাপ কারন এশা পজিটিভ নেগেটিভ কোনো উত্তরই দেয়নি।যদি পরে ঝামেলা করে তাই আগে থেকেই মন খারাপ হয়ে আছে।
রাফিদের মন খারাপ হয়তো ওকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে আসার কারনে।
দুজনে বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়াম।উনি শুয়ে বিশ্রাম করছে আর আমি আম্মু আব্বুর রুমে চলে আসলাম।তারপর তাদের সব বললাম।তারা বললেন,কোনো চিন্তা না করতে এশাকে কখনই তারা মেনে নিবে না।আরও বললেন রাফিদ যদি আমার সাথে খারাপ আচরণ করে বা এশার সাথে যোগাযোগ করে আর আমি জানতে পারি তাহলে ওনাদের জানাতে।
তারপর আব্বু বাহিরে চলে গেলেন।আমি আর আম্মু এসব আলোচনা বাদ দিয়ে গল্প করতে লাগলাম।গল্পের মাঝে এক সময় আম্মু বললো,তোমার তো আর তিন’মাস পর ফাইনাল এক্সাম।তোমার বই খাতা সব আনানোর ব্যবস্থা করছি।তুমি এখান থেকে পড়াশোনা করো তারপর তোমার বাবার বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসো।তারপর সেকেন্ড ইয়ারে উঠলে এখানের কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবো।শুনে আমি খুব খুশি হলাম,খুশি হয়েই বললাম আচ্ছা, আমি আমি এখনই কল করে আম্মুকে জানিয়ে দিচ্ছি।
শাশুড়ী আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে আম্মুকে কল দিয়ে জানালাম।আম্মুও খুশি হলো তারপর বললো আমার এক্সামের পর ভাইয়ার বিয়ে দেবে।বিয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিলো তবে ডেট দেওয়া হয়নি।
ওখান থেকে এসে রাফিয়ার সাথে কিছু ক্ষন গল্প ফাজলামো করে জামাইয়ের কাছে চলে আসলাম।
উনি ঘুমিয়ে ছিলেন আর আমি দেখছিলাম।দেখছিলাম বলতে ভাবছিলাম ও।আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দু’জনকেই এগিয়ে আসতে হবে।কিন্তু উনি তো এখন ছেঁকা খাওয়া দেবদাস জীবনেও উনি আগাবেন না।আমারই আগাতে হবে।সম্পর্ক ঠিক করতে না হয় একটু বেহায়া হয়।পরে নয়তো এর শোধ তুলবো।
উনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললাম।উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,আমি কিছু ক্ষন একা থাকতে চাই প্লিজ।
আমি মনে মনে বললাম,হুম একা একা থাকতে চাও যেন এশা নামক পেত্নী তোমার মাথায় ঘুর ঘুর করতে পারে।বাঙ্গি কোথাকার।আমি বেঁচে থাকতে তা কিছুতেই হতে দেবো না।তোমার মাথায় শুধু আমার কথা ঘুরপাক খাবে সেটা বিরক্ততে হোক,রাগে হোক বা ভালোবাসায় হু।
তারপর তাকে আব্বুর বলা কথা বলে ব্লাকমেইল করে আইসক্রিম আনতে বললাম।
তিনি রেগে প্রথমে বললো,আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না।সব সময় জ্বালাও।আমি ছল ছল নয়নে বললাম আমি এখনই আব্বুকে বলবো বিয়ের আট দিন না যেতেই আমাকে ধমকাচ্ছেন।
তিনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো, ওকে ওকে আব্বুকে বলতে হবে না।আমি যাচ্ছি।যত্তসব (আস্তে করে)
আমি মনে মনে বললাম সব হিসাবের খাতায় তোলা থাকলো আমার সাথে খারাপ আচরণের মজা বুঝবেন বাঙ্গি, তরমুজ কোথাকার।
কিছুক্ষণ পরেই এক বক্স আইসক্রিম নিয়ে আসলেন।আমি খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালাম।তিনি উত্তর না দিয়ে আবার শুয়ে পরলো।আর আমি ওখান থেকে তিনটা আইসক্রিম নিয়ে বাকি গুলো ফ্রিজে রেখে দিলাম।একটা রাফিয়াকে দিলাম দুইটা আমি খেলাম।
এভাবেই আরো দশ দিন কেটে গেলো।এই দশদিন উনাকে প্রচুর জ্বালিয়েছি।উনি আব্বুর ভয়ে কিছু বলতে পারেন নি। সব মুখ বুজে সহ্য করেছেন।কিন্তু এখন ঠিকই প্রতিশোধ নিচ্ছে আমাকে পড়ানোর মাধ্যমে। আমি খুব মেধাবী বা একে বারে খারাপ ছাত্রীদের তালিকায় নেই।মধ্যে অবস্থান করছি।তাই যখন কিছু ভুল ভুল করছি সেই সুযোগ উনি কাজে লাগাচ্ছেন।আম্মু কিছু বলতে আসলে বলে এগুলো পড়া না পারার শাস্তি। এসবের মাঝে যেন তারা না আসে।নাহলে আহ্লাদে নাকি আমি ফাঁকি বাজ হয়ে যাবো।
চলবে,,,,,,,,