#বৈধ সম্পর্কের জোর
#জান্নাত
#পর্ব_২
রাফিদ অবাক হয়েই জবাব দিল,কিহ ওকে কেন কল দেবো এত রাতে?
শশুর বাবা বললেন,ও যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই কারন আছে।কল দিতে বলেছে কল দাও।
উনি আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে এশাকে কল দিলেন।
একবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে রিসিভ করে এক মেয়ে ভেজা কন্ঠে বললো,হুম বলো ঐ আপুকে বলেছো সব।আপু কি মেনে নিয়েছে।
কথাটা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে রাফিদের দিকে তাকালাম,আর আস্তে করে বললাম এখন আমি যা যা বলবো আপনার প্রেমিকাকে তাই তাই বলবেন।
উনি রেগে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই শশুর ,ও যা বলতে বলছে বলো।
দুজনেই যে বেশ রেগে আছে তা তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
তারপর আমি বললাম,ওনাকে বলুন,দেখো আমি এখন যা বলবো মন দিয়ে শুনবে আর বোঝার চেষ্টা করবে।
উনিও এশাকে তাই বললেন আমি যা বললাম,ওপাশ থেকে এশা বললো,আচ্ছা বলো(কান্না জড়িত কন্ঠে)
আমার এশার কথা শুনে একটু খারাপ লাগলো তারপরও খারাপ লাগাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম,ওনাকে বলুন দেখো আমার বিয়ে হয়ে গেছে, আমি আর তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবো না।কারন সেটা হবে অবৈধ সম্পর্ক। আমি চাই তুমি আমাকে ভুলে যাও।
এমন কথা শুনে উনি চুপ করে রইলেন কিছু বলছেন না।আর ওপাশ থেকে এশা নিচু স্বরে কান্না করেছে।
আমি বললাম কি হলো বলুন। শশুর বাবাও রেগে বললেন,কি হলো চুপ করে আছো কেন বলো।
তিনি কোনো মতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে দাঁতে দাতঁ চেপে বললেন,দেখো আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আমি আর তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবো না।আমি চাই তুমি আমাকে ভুলে যাও।
কথাটা শোনার সাথে সাথে এশা জোরে কান্না করে দিলো, তারপর বললো,এসব তুমি কি বলছো,আমি কিভাবে তোমাকে ভুলে থাকবো,তুমি কি করে এমনটা বলতে পারলে।(কাঁদতে কাঁদতে)
দেখলাম ওনার চোখও ছল ছল করছে।
আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো, হয়তো তারা সত্যিই একে অপরকে ভালোবাসে।কিন্তু আমিই বা কি করবো।বিয়ে না হলে তো সমস্যা হতো না।এখন কিভাবে আমি উনাদের সম্পর্কে মেনে নেই। নাহ আমাকে আরো কঠোর হতে হবে।
আমি উনাকে বললাম এশাকে বলেন,ভালো থেকো নিজের জীবন গুছিয়ে নিও।আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
উনি অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আরও জোর দিয়ে বললাম কি হলো বলুন।
উনি অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে ফোন রেখে দিলেন।
তারপর আমি বললাম,এবার এশাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিন।
উনি চিৎকার করে বললেন,এক কাজ করো আমাকে মেরে ফেলো তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।বলেই ফোন আছাড় দিলেন।
আমিও চিৎকার করে বললাম, কেন এখন খুব কষ্ট হচ্ছে?আমার বুঝি কষ্ট লাগে নি যখন জানলাম আমাকে ঠকিয়ে এই বিয়ে হয়েছে।আরে আপনার কয়েক বছরের ভালোবাসার প্রেমিকাকে ছাড়তে আপনার এত কষ্ট হচ্ছে। আর আমি আমি আমার পরিবার ছেড়ে একটা অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের মাঝে এসেছি।আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন।যেখানে আপনার উচিৎ ছিল আমাকে মানসিক সাপোর্ট করা সেখানে উল্টো আরো মানসিক অশান্তি দিচ্ছেন।আপনার মা যা ভেবে জোর করে আমাদের বিয়ে দিলো ওনার ধারণা মতো যদি না হয় বুঝতে পারছেন তিনটে মানুষ মরার মতো বেঁচে থাকবে।
আপনাকে কি আর বলবো,আপনি তো আরো বেশি ভালো মানুষ, নিজের মায়ের কসমের জন্য আমাকে বিয়ে করলেন আবার নিজের প্রেমিকার মন রাখতে আপনারা ভালো থাকার জন্য আমাকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন।পুতুল খেলা পাইছেন।ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন ডিভোর্স এরপর আমার জীবন কেমন হবে একবারও ভেবেছেন সমাজে আমাকে কোন চোখে দেখবে।ভাববেন কেন অন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হলে আপনাদের কি আপনারা সুখে থাকলেই হলো তাইনা।তাহলে যেখানে আপনারা আমার কথা একবারও ভাবছেন না সেখানে আমি কেনো আপনাদের জন্য স্যাক্রিফাইজ করবো।বিয়ের আগে একটাবার বললে আজ এমন পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।(কাঁদতে কাঁদতে)
সবাই আমার কথা শুনে চুপ হয়ে রইলেন কারণ তাদের বলার মতো কিছু নেই।
তারপর আবারও আমি উনাকে বললাম,বিয়ে যখন একবার হয়ে গেছে তো ডিভোর্স এর কথা ভুলে যান।আমি আমার অধিকার ছাড়বো না।স্ত্রী করে যখন এনেছেন তখন স্ত্রীর সব দ্বায়িত্বও আপনাকে পালন করতে হবে।সেটা মন থেকে হোক বা জোর করে।তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম আমি এখন খুব ক্লান্ত রুমে যাচ্ছি। যেহেতু এই বাড়িতেই আছি তাই বাকি প্রশ্নের উত্তর পরেও জানতে পারবো(শশুর শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে বললাম)
ওনারা কিছু বললেন না শুধু তাকিয়ে ছিলেন।তারপর রাফিদকে ঘরে চলুন বলে হাটা দিলাম।কিন্তু রাফিদ আসছে না দেখে আবারও জোরে বললাম, কি হলো আসুন।
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসলো।
রুমে এসে দেখলাম রাত প্রায় তিনটে বাজতে গেলো।তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে বললাম,জীবনে হয়তো এরকম বাসররাত কেউ কাটায়নি।উনি আসলে উনাকে বললাম,যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। নামাজ পড়বো এক সাথে।উনিও রোবটের মতো ফ্রেশ হয়ে আসলেন। আমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে বলে একটা থ্রি পিস নিয়ে নিজেও গেলাম ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আসলাম।তারপর জায়নামাজ বিছিয়ে দুজনে নামাজ আদায় করে মোনাজাতে দোয়া করলাম”হ্যা আল্লাহ পরম দয়ালু তুমি আমাকে ধর্য্য দান করো।আমার স্বামীর মনে আমার জন্য অনুভুতি সৃষ্টি করে দিও।ওনি যেন অবৈধ সম্পর্কে না জড়ায়।আরো কিছু দোয়া করে নামাজ শেষ করলাম।
উনারও নামাজ শেষে উনি বিছানায় মাতা নিচু করে বসে রইল।আমি উনাকে বললাম,দেখুন আমি জানি যাই হোক জোর করে ভালোবাসা হয় না।আর একজনকে ভালোবাসলে বলার সাথে সাথে তাকে ভোলাও যায়না।তাই আমি আপনাকে কিছুদিন সময় দিচ্ছি সব কিছু মেনে নেওয়ার।
আমার কথা শুনে উনি আমার মুখের দিকে তাকালেন।
উনার তাকানো দেখে বললাম,এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আমি কিছুদিনের সময় দিচ্ছি সারা বছরের না।আর হ্যাঁ সময় দিচ্ছি বলে তার অপব্যবহার করার চেষ্টা করবেন না।সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।
কালকে আমি এশার সাথে দেখা করতে চাই সামনাসামনি।আপনি নিয়ে যাবেন।
এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।
উনি কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।
আমি বিছানার এক পাশে শুয়ে পরলাম।যতই এত কঠোর দেখাই ভেতর থেকে অনেকটাই ভেঙে পরেছি।
দেখলাম উনি আগের মতোই বসে আছে। তাই তাকে বললাম সিনেমা নাটকের মতো আলাদা ঘুমানোর ভাবনা বাদ দিয়ে এখানে শুয়ে পরুন(আমার উল্টো পাশ দেখিয়ে)
এখানে অনেক জায়গা আছে।
উনি কিছু না বলে শুয়ে পরলেন।মনে হচ্ছে কথা বলতে জানে না।
রাত তখন হয়তো তিনটার শেষের দিকে চোখে ঘুম নেই।চোখ দিয়ে অবিরাম পানি পরছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।ওবাড়ির সবাইকে খুব মিস করছি।যখন আমার মন খারাপ থাকতো তখন আম্মুর কোলে মাথা রেখে শান্তি অনুভব করতাম।ভাইয়া যতক্ষণ না খুশি হই ততক্ষণ বিভিন্ন হাসির কাজ করে যেন হাসি।আর আব্বু যখন আদুরে গলায় জিজ্ঞাসা করতো তখন অতিরিক্ত আহ্লাদে কেঁদে দিতাম।
আজও আমার ভিষণ মন খারাপ তবে পাশে কেউ নেই।
আমি কাঁদলে কখনও শব্দ বা শরীর কাপে না তাই কাঁদলে পাশে জাগ্রত থাকা মানুষও বুঝতে পারে না আমার কান্না।
অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে অবশেষে ঘুমিয়ে পরলাম।
আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পর উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে এসে উনাকে ডেকে তুললাম।উনি ওজু করে মসজিদে গেলেন।আর আমি নামাজ শেষ করে।রুমের বাহিরে গেলাম।দেখলাম শাশুড়ীর রুমে লাইট জ্বলছে হয়তো তিনিও নামাজ আদায় করছেন।
সারাবাড়ি টইটই করে ঘুরে দেখতে লাগলাম।ওহ বলাই হয়নি তো আমাদের বিয়ে তেমন অনুষ্ঠান করে করা হয়নি।তাই এই বাড়িতে কেউ নেই।যারা উপস্থিত ছিলেন তারা কালকেই যার যার বাড়ি চলে গেছেন।কিছু কাজিন ছাড়া।
চলবে,,,,