#বৈধ সম্পর্কের জোর
#জান্নাত
#পর্ব_১
আজ আমার বিয়ে হলো পারিবারিক ভাবেই।ভাবতেই অবাক লাগছে,কালকে এই সময় আমি এক বাড়ির মেয়ে ছিলাম।আর আজ অন্য একটা বাড়ির বউ।
আমি রাইসা।এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।আর যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার নাম রাফিদ,সে নিজেদের ব্যবসা সামলায়।এর থেকে বেশি কিছু জানি না।বিয়ের আগে একবার শুধু তার সাথে কথা হয়েছে।তাও প্রয়োজনীয় বিষয়ে।আমার এখনই বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না।অন্তত অনার্স কমপ্লিট করতে চেয়েছিলাম।
অবশেষে বিয়ের সব নিয়ম পালন করে এখন বাসর ঘরে বসে আছি।আমার স্বামীর অপেক্ষায়।
তিনি আরো দুই ঘন্টা পরে রুমে প্রবেশ করলেন।রাত তখন প্রায় বারোটা ছাড়িয়ে।
এসে সোজা আমার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো ভনিতা না করেই বললো”দেখুন আমি একজনকে ভালোবাসি”আমি আপনাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না,আমি এশাকে(ওনার জিএফ) খুব ভালোবাসি তাই ওর জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবো না,,,,,,,,,,
আরো কিছু বলবে তার আগেই আমি ঘোমটা খুলে বললাম বসে বলন,আর আপনি কি গরুর রচনার মতো মুখস্থ করে এসেছেন নাকি,দম না ফেলে বলতেই আছেন,আচ্ছা যাইহোক তারপর বাকিটা বলুন।
তিনি হতভম্ব হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সে যে খুব বেশিই অবাক হয়ে গেছে তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।নতুন বউয়ের মুখে এমন কথা শুনলে যে কেউই অবাক হবে।তার মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললাম,কি হলো বলুন।
তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বলতে লাগলেন,দেখুন আপনি কিছু মনে করবেন না।
আমি বললাম,না না কিছু মনে করার নাই।আপনি বলতে থাকুন (মুচকি হেসে)
নতুন বউকে এগুলো বললে কি কিছু মনে করতে পারে, সব শুধু শুনে নেই তারপর বোঝাচ্ছি (মনে মনে)
তিনি বললেন,আমি আসলেই নিরুপায় ছিলাম এক প্রকার বাধ্য হয়েই আপনাকে বিয়ে করেছি।মা কসম দিয়েছিল তাই বাধ্য হয়েছিলাম,তবে কথা দিচ্ছি আপনি যতদিন এখানে থাকবেন আপনার কোনো অযত্ন হবে না।নিজের মন মতো চলা ফেরা করতে পারবেন।তবে আমার কাছে ঘেঁষতে পারবেন না,আমার থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকবেন।আর প্লিজ এই কথা গুলো বাহিরে কাউকে বলবেন না।এটা আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে আমি চাইনা মা-বাবা কষ্ট পাক।
আমি বললাম,আচ্ছা তো এই কথা গুলো বিয়ের আগে বলেন নি কেন?তাহলে আমিই বিয়েটা ভেঙে দিতাম।
উনি বললেন,মা বলেছিল এই বিয়ে যদি না করি বা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করি বা আপনাদের কাউকে কিছু বলি তো মার মরা মুখ দেখবো।তাও ভেবেছিলাম আপনাকে বলবো কিন্তু কথা বলার সময় মা পাশে ছিল,তারপর আর বিয়ের আগ পর্যন্ত কথা বলতে দেয় নি।তাই কিছু জানাতেও পারি নি।
আমি বললাম,তো আমি যদি সবসময় আপনার কাছেই থাকি আপনার ভাষায় ঘেঁষি তো কি করবেন? (এক গালে হাত দিয়ে হাটুর উপর ভর দিয়ে)
উত্তরে তিনি একটু কঠোর হয়ে জবাব দিলেন,তখন আমি কঠোর হতে বাধ্য হবো আর সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।
আমি তাকে আর কিছু না বলে সোজা দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম।তিনি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি?আমি বললাম,আপনিই না বললেন আমি আমার মন মতো চলা ফেরা করতে পারবো তাহলে এখনই কৈফিয়ত চাচ্ছেন কেন?বলেই বেরিয়ে আসলাম।
আমাকে যেতে দেখে তিনি অনেকটা অবাক হয়েই আমার পিছু নিলেন।
বের হয়ে তার এক আত্মীয় হয়তো কাজিন হবে তাকে বললাম শশুর-শাশুড়ির রুমটা দেখিয়ে দিতে।তিনি চরম বিস্ময় নিয়ে মুখ হা করে বললেন,কোনো সমস্যা ভাবি।আমি বললাম না একটু দরকার ছিল।তিনি আমাকে সাথে করে শশুর-শাশুড়ির রুমে নিয়ে গেলেন।
আমি তাকে ধন্যবাদ জানালাম।তারপর শশুর-শাশুড়িকে সালাম দিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলাম।তারা জেগেই ছিলেন।
হঠাৎ এত রাতে আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হলো,তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই মুহূর্তে তারা এখানে আমাকে কল্পনাও করেননি।একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে অনুমতি দিলেন।আমি ভেতরে প্রবেশ তাদের সামনা সামনি বসলাম আর তখন রাফিদও রুমে প্রবেশ করলো।আমি এক পলক তার দিকে তাকিয়ে শাশুড়ীকে বললাম,আপনাদের সাথে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।তার আগে আমার আব্বুকে একটু ভিডিও কল দিন।আমার কথা শুনে তারাতাড়ি রাফিদ বললো,চলো ঘরে গিয়ে আমরা কথা বলি এখন আম্মু আব্বু রেস্ট নিবেন।কালকে সকালে বাসায় কথা বলো।
শশুর-শাশুড়ি বিস্ময় নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,পরে শশুর বললেন কি হয়েছে মা?হঠাৎ করে এত রাতে ঐবাড়ি কল দিতে বলছো কেন।
আমি বললাম সেটা কল দিলেই জানতে পারবেন প্লিজ একটু কল দিন।
তারপর শশুরবাবা তার ফোন এনে আব্বুর নাম্বারে কল দিলেন।আর এদিকে রাফিদ ঘামতে লাগলো।
দুবার রিং হওয়ার পর অপাশ থেকে আব্বু রিসিভ করলেন,সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে আব্বু বললেন কিছু কি হয়েছে বিয়াই এত রাতে যে কল দিলেন,রাইসা ঠিক আছে।
শশুর বললেন,জ্বি বউমা ঠিক আছে।কিন্তু ও আপনার সাথে কথা বলতে চায় তাই কল দিয়েছি।বলে আমাকে তার ফোনটা দিলেন, আমি আব্বুকে বললাম,এখন আমি সবাইকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই তাই তোমাকে এখন কল দিয়েছি।ভাইয়া আর আম্মুকেও ডেকে আনো।
এখন ঘরে আমি,রাফিদ,ননদ,শশুর-শাশুড়ি রয়েছি আর ওপাশে আম্মু,আব্বু আর ভাইয়া আছে।
নিরবতা ভেঙে আমি গলা পরিষ্কার করে প্রথমেই শাশুড়ীকে বললাম, আচ্ছা আম্মু, আম্মু বলেই ডাকলাম।আপনি তো জানতেন যে আপনার ছেলে অন্য একজনকে ভালোবাসে তাও কেন তাকে জোর করে আমার সাথে বিয়ে দিলেন।জানেন তো যে জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না।
আমার কথা শুনে আমাদের বাসার সবাই চমকে গেলো।
শাশুড়ী আম্মু রাফিদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আমাকে স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,আমি জানি কোন জিনিসে আমার সন্তানদের ভালো হবে,এখন অন্য মেয়েকে আবেগে ভালোবাসে পরে সংসার করতে করতে একদিন তোমাকেও ভালোবেসে ফেলবে।তখন তোমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না।আমি ভেবে চিন্তেই বিয়েটা দিয়েছি।
আমি বললাম,আপনার চিন্তা অনুযায়ী নাও তো হতে পারে।
তিনি বললেন কেনো হবে না,তোমাদের সম্পর্কটা একটা পবিত্র বন্ধন।আর পবিত্র বন্ধনে আল্লাহর তরফ থেকে এমনিই ভালোবাসা তৈরি হয়।
আমি বললাম,কিন্তু উনি(রাফিদ) তো আমাকে বললেন,উনি নাকি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবেন না।আমি নাকি কিছুদিনের অতিথি মাত্র।তিনি তার প্রেমিকাকে ভুলতে পারবেন না।
কথাগুলো শুনে শশুর বাবা গম্ভীর স্বরে বললেন,এগুলো কি সত্যি রাফিদ।
রাফিদ মাথা নিচু করে আমতা আমতা করতে লাগলেন।শশুর বাবা ধমক দিয়ে বললেন, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি।
তখন রাফিদ নিচু স্বরে বললো,হুম।
আমার পরিবার শুধু অবাক হয়ে সব শুনছে।রাফিদের কথা শুনে ভাইয়া রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি রাফিদের দিকে তাকিয়ে বললাম,তা আপনার কাছে কোন সম্পর্কের দাম বেশি বৈধ সম্পর্কের নাকি অবৈধ সম্পর্কের।
তিনি কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়েই রইলেন।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আম্মু আব্বু,ভাইয়াকে বললাম,কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়ই। তাই আগেই বলে রাখছি আমার যদি কিছু হয় বা কোনো অত্যাচার করা হয় আমি তোমাদের জানাবো,আশা করি তোমরা সঠিক পদক্ষেপ নিবে।ভাইয়া বললো,তুই চিন্তা করিস না বোন,আমি কালকেই ওখানে আসতেছি,তারপর এর একটা হেস্তনেস্ত ব্যবস্থা করেই ছাড়বো।
আমি বললাম না ভাইয়া যা করার আমিই করবো,তোমরা শুধু পাশে থেকো।পরে যদি তোমরা কেউ না বিশ্বাস করো তাই এত রাতে কল দিয়ে সবাইকে এক জায়গায় এনে বললাম (রাফিদের দিকে তাকিয়ে) উনি মাথা নিচু করেই আছে।বুঝতে পারে নি হয়তো যে এমন কোনো পরিস্থিতিতে পরতে হবে।তাই লজ্জায় কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে আছে।
তারপর আবারও আমি রাফিদকে বললাম,তো উত্তর তো দিলেন না।উনি এক পলক তাকিয়ে কিছু বললেন না।আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম,আপনার প্রেমিকাকে কল দিন।
আমার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।তার উনি এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেন উনার চোখ এখনই খুলে পরে যাবে।
চলবে,,,,,,,,