বাহ তোমাকে তো খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। কি নাম তোমার? মেয়েপক্ষ না ছেলেপক্ষ?
– পরের প্রশ্ন কি বিয়ে হয়েছে না হয়নি?
এ কথা কেন বলছো?
– আমাকে আপনি চেনেন না, জানেন না; শুধু কিছুক্ষণ পাশে বসার বিনিময়ে এরকম মধুর কথা শুধুমাত্র তারা মানে যেসব আন্টিরা বিয়ের পাত্রী খুঁজছেন তারা ছাড়া জিজ্ঞেস করেনা। এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা অনেক দিনের। এবার উত্তর দিন, আপনি কোন পক্ষের? নিজের ছেলে না পরের ছেলে?
দুজনের জন্যই। যার সাথে মানায় তার জন্যই না হয় কথা বললাম তোমার বাবা মায়ের সাথে।
– আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই শুধু চেহারা দেখেই বিয়ের কথা শুরু করে দেবেন?
খোঁজ নেবো।তারপরই না হয় শুরু করলাম।
– আচ্ছা তাহলে নিজ দায়িত্বে খোঁজ নিন এবং কথাবার্তা এগিয়ে যান।
সেটা না হয় করা যাবে। কিন্তু একটা কথা বলতো, তুমি এতো ক্ষেপে গেলে কেন? বিয়ের বয়স হলে তো লোকে খোঁজ নেবেই।
– আপনাদের মতো অতি উৎসাহী কিছু মানুষের জন্য মাঝে মাঝে জীবন কারো কারো জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। দেখতে খারাপ হলে, ইস বিয়েই তো হবেনা যে রঙ গায়ের। দেখতে ভালো কিন্তু বিয়ে না হলে বিয়ে হয়নি এখনো? বিয়ে হলে এখনো বাচ্চা নেই? একটা বাচ্চা থাকলে আরেকটা নিয়ে নিচ্ছোনা কেন? দুটো হলে দুটোই মেয়ে একটা ছেলে হলে ভালো হতো? বিয়েবাড়ি বা গ্যাদারিংয়ে লোকে আসে আমোদ ফূর্তি করতে। কিন্তু অচেনা আন্টিদের থেকে এ জাতীয় উদ্ভট প্রশ্নে আমোদ ফূর্তি উড়ে গিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটাই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাগ রাখবেন না। তবে ভেবে দেখবেন ভবিষ্যতে আর কাউকে এরকম কথা বলার আগে।
কি বেয়াদপ মেয়েরে বাবা।
…………….
পারিবারিকভাবেই আবিদ আর রিয়ার বিয়ে ঠিক হয় এই ঘটনার বছর দেড়েক বাদে। ছোটবেলা থেকেই রিয়া একটু প্রতিবাদী ধরনের। এ নিয়ে বাসায় অভিযোগ কম আসেনি জীবনে। পেছনের সত্য ঘটনা বাবা মাকে সবসময় বলে দিতো বলে মা বাবা অল্প বকা নয়তো বুঝিয়ে বলে মেয়েকে সামলাতেন। অতি চিন্তিত রিয়ার মা তাই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর আগে পইপই করে বুঝিয়ে বলেন যেন এরকম সে ঐ বাড়িতে না করে। তাহলে সবাই মা কিছু শেখায়নি বলে রিয়াকেই কথা শোনাবে।
মায়ের কথা মেনে নিয়ে রিয়া মুখে যতোটা সম্ভব কুলুপ দিয়েই থাকে। প্রায় প্রতিদিন বাড়ির বৌ দেখতে আসার নামে লোকজন আসতেই থাকে আবিদদের বাসায়। মতান্তরে রিয়ার কানের ভার বাড়তেই থাকে শাশুড়ীর সাথে নানা পদের লোকের কথায়। ছেলের বৌয়ের চাকুরী করার দরকার কি? সারাদিন সংসারের কাজে লাগিয়ে রাখবেন। ছেলের সাথে বেশী বেশী বাইরে যেতে দেবেন না। প্রথম থেকেই চাপে রাখবেন নয়তো দেখবেন লাই পেয়ে মাথায় উঠে বসেছে। রিয়ার যে কি মুখ নিশপিশ করে কখনো কখনো কথার জবাব দেয়ার জন্য; কিন্তু মায়ের কথা মনে করে চুপ করে নিজের রুমে সরে যায় প্রতিবারই।
সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় একদিন শাশুড়ি মা মুখোমুখি হন রিয়ার।
– বিয়ের আগে তো লোকের মুখের কথা মাটিতে পরতে দিতেনা। এখন যে লোকে এতো দুষ্টু কথা বলে গেলেও মুখে কুলুপ এঁটে থাকো। বলি, ঘটনা কি?
আমি অতিথিদের দু কথা শুনিয়ে দিলে পরে আপনিই তো আমায় বেয়াদপ মেয়ে বলবেন।
– আমি তো উচিত কথা বলতে পারা বেয়াদপ ছেলের বৌ ই চেয়েছি। একটা জীবন আমি কখনো কাউকে কিছু মুখের ওপর বলতে পারিনি। কত লোকে কত কথা বলে গেলো জীবনে, রাগে শরীর কেঁপেছে কিন্তু মুখে জবাব দিতে পারিনি। বিয়ের পরে আমার এক বড়লোক চাচাতো জা, বয়সে আমার কয়েক বছরের বড়, কোন কারণ ছাড়াই আমার পেছনে লেগে থাকতেন। আমি দেখতে ভালোনা, আমার ছেলে গাধা কিসিমের, আমি সংসার করতে পারিনা এটা সেটা আরো কত কি। প্রতিবার বেড়াতে এসে আমার ঘরে একটা অশান্তি লাগিয়ে না দিয়ে কখনোই যেতোনা। কখনো কিছু বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম তুমি এ বাড়ির বৌ হয়ে এলে বাড়ি বয়ে এসে কথা বলে যাওয়া ঐ লোকগুলোর মুখের ওপর আমাদের হয়ে জবাব দিয়ে দেবে। কিসের কি, এ বাড়িতে এসে তুমিও আমাদের মতো মেনীমুখো হয়ে গেছো।
আপনি আমাকে কোথায় দেখেছেন বলুন তো মা?
– দেড় বছর আগে এক বিয়েবাড়িতে আমার ঐ দুষ্টু জা টাকে তুমি বেশ কড়কে দিয়েছিলে।
ওনাকে তো বিয়েতে দেখিনি আসতে। যদিও সেভাবে চেহারা মনে নেই।
– সেজন্যই তো কথা তুললাম, ও কাল আসবে তোমায় দেখতে। তোমাদের বিয়ের সময় কি যেন ঝামেলা ছিল। কয়েকদিন নাকি থাকবে।
ভালোই তো হলো মা। এই কয়েকদিনে আপনি আর আমি দুজনে মিলে না হয় তাকে সারা জীবনের শিক্ষা দিয়ে দিব।
……………….
ওপরে ওপরে রিয়ার সাথে সায় দিলেও শাশুড়ি মা আতিয়া জাহান ভেতরে ভয়ে থাকেন না জানি কি সমস্যা তার এই প্রভাবশালী চাচাতো জা কোহিনূর এবার লাগান।
– কই গো আতিয়া তোমার ছেলের বৌ কই? এইবার কিন্তু সাতদিনের জন্য আসছি। তোমার বেটার বৌয়ের হাতের রান্না না খেয়ে যাচ্ছি না।
এইতো আসছে আপা। নতুন বৌ তো একটু সাজগোজ করে আসছে।
– ঘরের মধ্যে এতো সাজগোজের কি আছে? নাকি তোমার মতো দেখতে একজন নিয়ে আসছো ঘরে?
না আপা, মেয়ে আপনার পছন্দের। মানে আপনার কাছে আমি আসলে সেজন্য কৃতজ্ঞ।
– আমার পছন্দের মানে? আমিতো বিয়েতেই আসতে পারলাম না।
আপনি সবসময় বলেন আমার ছেলেটা ভ্যান্দা টাইপ। তাই ওর জন্য একটু কথাবার্তা জানা চটপটে মেয়ে আনছি। মেয়েকে আপনি চেনেন বেশ ভালোভাবেই।
– আমি যখন চিনি তাহলে তো অবশ্যই ভালো মেয়ে। তা কে সে?
ঐ যে বছর দেড়েক আগে শফিক ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে একটা মেয়ে আপনাকে বেশ কথা শুনিয়েছিল, ওকেই বৌ করে এনেছি। ভালো করেছি না?
– ও হ্যা হ্যা ভালো তো অবশ্যই করেছো। তা আমি আজ উঠি, একটু আমার বোনের বাসায় যেতে হবে।
‘সে কি চাচী এইমাত্র এলেন, সাতদিন থাকবেন বলেছিলেন; এখন যে দরজা থেকেই বিদায় নিচ্ছেন?’ পেছন থেকে রিয়া কথা বলে ওঠে।
তড়িঘড়ি করে ব্যাগ নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া কোহিনূরের গমন পথের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে বৌ শাশুড়ি।
#ডা_জান্নাতুল_ফেরদৌস