#বেশি_কিছু_আশা_করা_ভুল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#৩য়_এবং_শেষ
আমি আয়ানের সাথে দুই দিন যাবত টোটালি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি,
আর গত রাতে ইমরানকে জিজ্ঞেস করেছি,ও কি চায়!
ইমরান আমার প্রশ্নের জবাবে যা বল্লো,তা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
ইমরান নাকি ওর পরিবারকে কষ্ট দিতে পারবেনা।
তাই ও ওর পরিবারের পছন্দ করা মেয়েকে আগে বিয়ে করবে।
তারপর ছয় মাস এক বছর পর আমাকে বিয়ে করবে।
কিন্তু আমিতো তা চাইনা।
আমি চাই ও শুধুই আমার হবে।
ওর উপর আমি ছাড়া আর কারো কোন রকম অধিকার থাকবেনা।
আর কথা তো তাই ছিলো।
তাহলে ও কেন এখন অন্য কথা বলছে?
আমি তো ওর ভাগ কাউকে দিতে পারবোনা।
আমি ইমরানের উপর রেগে গেলাম।
আর ওকে বললাম,
তোমার মাথা ঠিক আছে?
তুমি এসব কি বলছো?
তোমার মনে যদি এই ছিলো,তাহলে আমাকে এত দিন স্বপ্ন দেখালে কেন?
আমি তোমার ভাগ কাউকে দিতে পারবোনা।
প্লিজ আমার সাথে এমন টা করোনা।
আমি ইমরানকে অনেক বুঝালাম।
কিন্তু ইমরান ওর কথায় অটল রইলো।
ও ওর পরিবারকে কষ্ট দিতে পারবেনা।
তাই আগে তাদের পছন্দের মেয়ে বিয়ে করবে,তারপর আমাকে।
তাই আমি ওকে বলে দিলাম আমি পারবোনা এটা মেনে নিতে।
আর এ ও বললাম সে যেনো আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ আর না করে।
কিন্তু ইমরান আমাকে ছাড়বেনা বলে ফোন কল মেসেজ সব করেই যাচ্ছে।
এদিকে আয়ানের পাগলামিও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
আয়ান আমাকে ছাড়া নাকি কিছুই ভাবতে পারেনা।
ওর নাকি আমাকেই চাই।
এভাবে কেটে গেলো অনেক গুলো দিন।
আমি আবার ইমরানকে অনুরোধ করলাম।
সে যেনো আমাকে ফিরিয়ে না দেয়।
আমি আবার নতুন করে বাঁচতে চাই।
তার সাথে সংসার করতে চাই।
কিন্তু সে আর আমার কথায় সাড়া দেয়না।
এদিকে আয়ান খুব কান্নাকাটি করে আমার জন্য।
আর বার বার বলে ও আমার সন্তানদের বাবা হতে চায়।
ওদের দায়িত্ব নিতে চায়।
আমাকে একটা নতুন জীবন দিতে চায়।
আমি আয়ানের বাড়াবাড়ির জন্য আয়ানের সাথে খুব ঝগড়া করি।
কিন্তু আয়ানের কান্না দেখে কেন যেন আর খারাপ ব্যবহার করা সম্ভব হলোনা আমার।
তারপর ওকে সব খুলে বললাম,ইমরান কি বলে আমাকে।
আর কি চায়।
তখন আয়ান বল্লো,ও তোমায় সুখী রাখবে, বিয়ে করবে এর কোন নিশ্চয়তা আছে?
আমি তখন চুপ করে রইলাম।
ও আবার বল্লো,তুমি কি চাওনা তোমার সন্তানেরা বাবার আদর পাক?
তুমি নতুন করে জীবন গড়ো।তোমার একটা সংসার হোক।
চাওনা তুমি?
আমি উত্তর দিলাম হুম চাই।
তখন আয়ান বল্লো,
আমি তোমাকে সব দিবো।
ওরা আমার সন্তান।
আমি ওদের আগলে রাখবো।
বিয়ে করবে আমায়?
আমি ওকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,
তোমার পরিবার মানবে?
আর সমাজ কি বলবে?
আমি ডিভোর্সি একটা মেয়ে।
তাছাড়া আমার বাচ্চাও আছে।
আর একটা বাচ্চা হলেও কথা ছিলো।
দুই বাচ্চার মা আমি।
দুইটা বাচ্চা সহ তোমার পরিবার আমাকে মানবে?
যেখানে তাদের ছেলে ইয়াং আনম্যারিড।
হ্যান্ডসাম একটা ছেলে।
আয়ান উত্তর দিলো,
আমার পরিবারকে আমি রাজি করাবো।
আর সমাজ আমি মানিনা।
সমাজ কি বল্লো এসব দেখার টাইম নেই আমার।
সমাজ আমাকে খাওয়ায় নাকি পড়ায়?
আমি আয়ানকে বললাম,
তুমি আমার সাথে কথা বলতে বলতে মায়ায় পড়ে গেছো।
এটা মোহ।
এই মোহ কিছু দিন পর ঠিক কেটে যাবে।
তখন আর আমাকে ভালো লাগবেনা।
তখন মনে হবে জীবনে খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছো।
তখন আমার কি হবে বলতে পারো?
আয়ান আমাকে বলে,
ইমরানও তো আনম্যারিড।
ওর পরিবার কি রাজি তোমার জন্য?
অবশ্যই না।
আর ইমরান তোমাকে তো বিয়েই করতে চায়না।
আর আমিতো চাই।
আর আমি তোমার জন্য পুরো দুনিয়া এক করবো তুমি দেখে নিও।
এই বলে আয়ান ফোন রেখে দেয়।
অনেক দিন হয়ে যায় আয়ান আমাকে কোন রকম কল বা মেসেজ দেয়না।
এদিকে আমি ইমরানকে পাগলের মত বুঝিয়েছি।
আমাকে বিয়ে করতে বলেছি।
আর বলেছি,যদি আমাকে বিয়েই না করবে।
তাহলে এতদিন আমাদের দেখাশোনা কেন করলে?
ও উত্তর দেয়।
তখন আবেগে ছিলাম।
বুঝতে পারিনি।
এখন আবেগ কেটে গেছে।
তুমি চাইলে আমার ২য় বউ হতে পারো।
তবে প্রথম নয়।
আমি ওর এই কথা শুনে সেদিন ওকে বলি,
এতদিন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাওনি।
আজ আমি তোমাকে রিজেক্ট করলাম।
আজকের পর আমি ভুলে যাবো,ইমরান নামে কেউ যে আমার জীবনে ছিলো।
এরপর আমি ওকে আমার সব কিছু থেকে ব্লক করে দেই।
আয়ানের সাথেও কোন যোগাযোগ করিনা।
এখন যদি ওর সাথে যোগাযোগ করি,তাহলে ও মনে মনে বলবে হয়তো আমি সুবিধাবাদী।
এখন ইমরান নেই তাই আমি ওর সাথে যোগাযোগ করছি।
এই ভেবে আয়ান এর সাথেও যোগাযোগ করিনা।
হঠাৎ একদিন আমি আমার বেড রুমে বসে আছি।
হঠাৎ আম্মু ডাকলো,
এসে দেখি কিছু গেস্ট এসেছেন আমাদের বাসায়।
আমি দেখে সালাম দিলাম।তবে চিনলাম না কাউকেই।
এবার আমাকে চমকে দিয়ে তারা তাদের পরিচয় দিলেন,
তারা আয়ানের মা বাবা ভাই বোন।
আমি তো অবাক।
এরা এসেছেন কেন আমাদের বাসায়।
তারপর আয়ানের মা আমার কাছে এসে বসে বল্লেন,তুমিই নীলিমা নাহ?
আমি নাথা নাড়িয়ে বললাম হুম।
আয়ানের মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বল্লেন,
আমরা আয়ানের জন্য তোমাকে চাইতে এসেছি।
আয়ান তোমাকে খুব ভালবাসে।
আর ও চায় তোমার আর তোমার সন্তানদের দায়িত্ব নিতে।
যদিও আমরা কেউই রাজি ছিলাম না প্রথমে।
তবে শেষমেস আয়ানের জেদের কাছে হার মানতেই হলো।আমরা আমাদের ছেলেকে হারাতে পারবোনা।
তাছাড়া মানুষের লাইফে এক্সিডেন্ট হতেই পারে।
তাই বলে কি সে নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাবেনা?
আমাদের আর কোন আপত্তি নেই।
তোমার আব্বু আম্মুর সাথেও কথা হয়েছে।
তারাও চান তাদের মেয়ে সুখী হোক।
এখন বলো তুমি কি চাও?
তখনই আমার ছেলে আর মেয়ে চলে আসলো।
ওদের দেখে আয়ানের বাসার সবাই এক এক করে কোলে নিতে লাগলো।
কেন যেন আজ আমার চোখ ভিজে আসছে।আমি কোন রকম আমার কান্না আটকে বললাম,আমি একটু আয়ানের সাথে কথা বলবো।
আয়ানের মা আমাকে কথা বলে আসতে বললেন।
আমি আমার রুমে গিয়ে আয়ানকে ফোন দিলাম।
আয়ান রিসিভ করতেই কান্না করতে লাগলাম।
আয়ান আমার কান্না শুনে ভয় পেয়ে গেছে।
আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে।
আর বার বার বলছে কি হয়েছে আমার।
আমি কোন রকম কান্না চেপে বললাম,
_যার সাথে বিয়ে হলো সে ছেড়ে দিলো।যাকে ভালবাসলাম সে হাত ধরলোনা।
আর তুমি?
আমার তো বেশি কিছু আশা করা ভুল।
কেন পাঠিয়েছো সবাইকে?
আয়ান উত্তর দেয়,
কোন কিছুই আশা করা ভুল না।
সবারই সুখে থাকার অধিকার আছে।
আর ওহ, বলেনি তারা কেন তাদের পাঠিয়েছি?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
কোন দিন ছেড়ে যাবেনাতো আমায়?
আমার বাচ্চাদের বাবার আদরে আগলে রাখবে তো?
আয়ান উত্তর দিলো,
কোন দিন ছেড়ে যাবোনা।
আর শোন,ওরা আমার সন্তান,তোমার আমার সন্তান।
আমাদের সন্তান।
এরপর যদি শুধু তোমার বাচ্চা বাচ্চা বলো তাহলে খবর আছে।
এরপর আয়ানের বাসার সবাই আমাকে আংটি পরিয়ে যান।
এই তো সামনের মাসেই আয়ান দেশে আসবে।ও প্রবাসী।
আর ও আসলেই আমাদের বিয়ে।
সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
আমরা যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।
(সমাপ্ত)