#বেশি_কিছু_আশা_করা_ভুল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব
দিন যাচ্ছে,অতীতের ক্ষত গুলো ভুলতে শুরু করেছি মাত্র,
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন ইমরান আমাকে যা বল্লো,
তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
ইমরান আমাকে বলে,ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে।
ও চায় আমার সন্তানদের আর আমার দায়িত্ব নিতে।
যদিও আমিও ওকে মনে মনে ভালবেসে ফেলেছিলাম।
কিন্তু বলার মত সাহস ছিলোনা আমার।
কিন্তু ও ওর ভালবাসার কথা প্রকাশ করার পর আমিও আর নিজেকে আটকাতে পারিনি।
আমিও বলে দিয়েছি,আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
এরপর থেকে শুরু হয় আমাদের বন্ধুত্বের সাথে সাথে ভালবাসার সম্পর্ক।
ইমরান আমার ছেলে মেয়েকে খুবই ভালবাসে।
আর বলে,ওরা আমারই ছেলে মেয়ে।
আমাদের ছেলে মেয়ে।
আমি আবার ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
একটা সংসার গড়ার সপ্ন দেখলাম।
ও আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখালো।
আমার বাচ্চা দুটোকে বাবার অভাব বুঝতে দিতোনা ও।
ওদের সকল চাহিদা পূরণ করতে লাগলো।
খুবই আদর করে ও আমার ছেলে মেয়েকে।
আমাদের সম্পর্ক যখন খুব গভীর। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আমাদের ছোট ভাই বোনকে দিয়ে বিয়ে করাবো।
আমার ছোট বোন আর ওর ছোট ভাই যদি বিয়ে করে,তাহলে আমরাও দুই বোন এক বাড়ীতে বউ হয়ে থাকতে পারবো।ভাইয়েরা বোনেরা মিলেমিশে এক সাথে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো।
এরপর আমি আর ইমরান আমাদের ছোট ভাই বোনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে দেই।
ওদের ও রিলেশন চলতে থাকে।
সাথে আমাদেরো।
এরপর একদিন ইমরানের বাসা থেকে ওর ছোট ভাইয়ের জন্য আমার ছোট বোনকে দেখতে আসে।
কিন্তু কেউ জানেনা আমার আর ইমরানের মধ্যেও যে সম্পর্ক আছে।
দুই পরিবার একত্রে বসে।
কথাবার্তার এক পর্যায়ে বুঝা যায় ইমরানের বাবার অনেক ডিমান্ড।চাওয়া পাওয়া অনেক।
তাই আমি প্রস্তাব টা না করে দেই।
এই নিয়ে ইমরানের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়,ঝগড়া হয়।
বলতে গেলে এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের সম্পর্কে অশান্তি।
এরপর আমার বোন আর ইমরানের ভাইয়ের ব্রেকাপ হয়ে যায়।
আর ইমরানের ছোট ভাইকে ওরা অন্য জায়গায় বিয়েও করিয়ে ফেলে।
কিন্তু তা আমার থেকে আমার বোনের থেকে ইমরান গোপন করে।
আমাদের কিছুই জানায় না।
অন্তত আমাকে তো জানানো উচিৎ ছিলো তার।
আমি যখন অন্যত্র থেকে জানতে পারি,তখন ইমরানের সাথে আমার আবার ঝগড়া হয়।
এখন আমাদের ভালবাসার থেকে ঝগড়াই হয় বেশি।
দেখতে দেখতে আমাদের সম্পর্কের কয়েক বছর চলে যায়।
ঝগড়া হলেও ও আমাকে দিন রাত ভালবাসি ভালবাসি বলতে থাকে।
আমার ছেলে মেয়ের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে।
যেহেতু আমাদের সম্পর্কের কয়েক বছর হয়ে গেছে।
তাই আমি ইমরানকে জিজ্ঞেস করি,কবে ও আমাকে বিয়ে করবে।
কিন্তু ও কেন যেন এখন সে কথা কানেই নেয়না।
সব ঠিকঠাক আছে।
শুধু বিয়ের কথা বললেই ও চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু আমি তো ওকে চাই।
একটা সংসার চাই।
আর ও আমার সব জেনেশুনেই তো আমার হাত ধরেছে।
আমিতো নিজে থেকে স্বপ্ন দেখিনি।
ও ই তো আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে।
আমাদের সম্পর্ক টা এভাবেই চলছে,শুধু বিয়ের কথা বললেই ও কোন কথা বলেনা।
আমাকে ইদানীং প্রচুর সন্দেহ করে ও।
ভুল বুঝে।
আমার নাম্বার একটু বিজি পেলে গালি গালাজ করে।
আমার একটা ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে।ওর নাম আয়ান।
যার সাথে আমি আমার সব কথা শেয়ার করি।দুঃখ কষ্ট সুখ আনন্দ সব।
আমার এক্স হাসবেন্ডের কথা,ইমরানের কথা সব শেয়ার করি।
তার সাথে কথা গুলো শেয়ার করলে নিজেকে একটু হালকা লাগে।কারণ ইদানীং আমি আবার মানসিক অশান্তিতে ভুগছি।আমার ভয় হয় যদি ইমরান আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
আমি কিভাবে থাকবো।
আয়ান আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেয়।
ও শুধু মাত্র ভালো একজন বন্ধু আমার।
ইমরানও জানে আমার এই ফ্রেন্ডের কথা।
মানে আয়ানের কথা।
দিন যাচ্ছে আমি ইমরানকে শুধু বিয়ের কথা বলছি,
কিন্তু ইমরান আমার এ কথায় কোন পাত্তাই দেয়না।
আমি এগুলো সব আয়ানের সাথে শেয়ার করি।
কারণ কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রাখলে দম বন্ধ লাগে।
শেয়ার করলে একটু হালকা লাগে।
আয়ান আর আমার বন্ধুত্বের ৯ মাস চলে।
একদিন আয়ান আমাকে বলে,
নীলিমা,
একটা কথা বলতে চাই।
কথাটা কিভাবে নিবে আমি জানিনা।
আমি তোমাকে ভালবাসি।
তোমাকে আমার ভালো লাগে।
তুমি চাইলে আমি তোমার আর বাবুদের দায়িত্ব নিতে চাই।
সারাজীবনের জন্য।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
তুমি রাজি থাকলে এই মুহূর্তেই করবো।
কথা গুলো শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।
যেখানে আয়ান ভালো করেই জানে আমি ইমরানকে ভালবাসি।
তাছাড়া আমি ডিভোর্সি, আমার দুইটা বেবী আছে।
আর আয়ান অবিবাহিত একটা ছেলে।
আর দেখতেও মাশাআল্লাহ যথেষ্ট সুন্দর হ্যান্ডসাম।যেকোন মেয়ে ওকে দেখে পছন্দ করবে।
এই ছেলে আমাকে এগুলো কি বলে।
আমিতো ওকে আমার বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবিনা।
ওর প্রোপোজাল পাওয়ার পর থেকে আমি কিছুটা ওকে ইগ্নোর করি।
আয়ান আমাকে বলে,
ইমরান আমাকে কোন দিনই বিয়ে করবেনা।
কিন্তু আমি বলি,ইমরান যদি আমাকে বিয়েই না করবে, তাহলে আমার সব খরচ আমার সন্তানদের ভরণপোষণ সব কিছু কেন বহন করছে?
এই নিয়ে আমার আর আয়ানের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়।
আয়ান আমাকে বলে,ঠিক আছে আমি তোমাকে জোর করবোনা।
কিন্তু এটা মনে রেখো,আমি আজীবন তোমার সাথে আছি।
তুমি যেই মুহূর্তে বলবে,আমি সেই মুহূর্তে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি।
আমি চাই তোমার স্বপ্ন গুলো পূরণ হোক।
বাবুরা বাবার আদর পাক।
আমি সব সময় তোমাদের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
আমি শুধু ওর কথা গুলো শুনি,
কিছু বলিনা।
শুধু বলি,আমি ইমরানকে পাগলের মত ভালবাসি।
দিন যাচ্ছে ইমরান যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছি ও আমাকে আর আগের মত ভালবাসেনা।
ওর এই পরিবর্তন দেখে আমি ইমরানকে বলি,
তুমি যদি সারাজীবনের জন্য আমার দায়িত্ব না ই নিতে চাও তাহলে ব্রেকাপ করে ফেলো আমাদের সম্পর্ক টা।
আমি আর এভাবে নিতে পারছিনা।
ইমরান সারাজীবনের জন্য আমার দায়িত্বও নিবেনা।
এই দিকে আমাকেও ছাড়বেনা।
ওর এই ব্যবহারে আমি অনেকবার চেয়েছি ওর থেকে সরে আসতে,কিন্তু পারিনি।কারণ আমি ওকে খুব ভালবাসি।
একটা সময় আয়ান আমার সাথে খুব ঝগড়া করে,আর বলে ও তোকে ভালবাসলে বল বিয়ে করতে তোকে।
কেন করেনা বিয়ে?
আর তোর সন্তানদের যখন এতই ভালবাসে তাহলে নেয় না কেন বাবার দায়িত্ব?
তুই প্লিজ ফিরে আয় ওর জীবন থেকে।
আমিও আয়ানের সাথে যা তা ব্যবহার করি।
কারণ আমি ইমরানের অপজিটে কোন কথাই শুনতে পারিনা।
আমি আয়ানের সাথে দুই দিন যাবত টোটালি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি,
আর গত রাতে ইমরানকে জিজ্ঞেস করেছি,ও কি চায়!
ইমরান আমার প্রশ্নের জবাবে যা বল্লো,তা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
চলবে,