#বেলা_শেষে- ২
[০৯]
ভাইয়াকে ইগনোর করে ড্রয়িংরুমে চলে আসলাম আমি। আমার পিছু পিছু ভাইয়া চলে আসলো ড্রয়িংরুমে। সেখানে আসতে মামনি আমাকে ডাক দিয়ে তার পাশে বসালেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আমার উপর খুব রাগ হয়েছে তোর, তাই না মিষ্টি।
– না মামনি। আমি কেন তোমার উপর রাগ করব বল তো। তাছাড়া জিয়ান এর সাথে তো আমি শুধু,, পুরো কথাটা বলতে পারলাম না আড় চোখে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। ভাইয়ের দৃষ্টি স্থির আমার দিকে। সে বেশ উৎসাহ নিয়েই তাকিয়ে আছে। আমাকে থেমে যেতে থেকে ভাইয়া এসে মামনির পাশে বসতে বসতে বলল,
-এই জিয়ানটা আবার কে?
– জিয়ান হায়দার। অস্ফুটভাবে বলল মামনি। মামনির কথা শুনে ভাইয়ার এমন হাস্যউজ্জল চেহারা নিমিশেই কুৎসিত আকার ধারন করলো। মেঘের কালো ছায়া এসে ভীড় করেছে ভাইয়ার মুখের উপর। চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো নিমিশেই। সে মামনির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-আবার সেই হায়দার ফ্যামিলি। কি করেছে জিয়ান হায়দার বলো আমাকে। আমি ওর থেকে কলিজাটা আলাদা করে নিবো।
ভাইয়ার এমন হুংকার দেওয়া কথায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। হঠাৎ করে তার এমন রাগের কারন বুঝতে পারলাম না আমি। তাছাড়া ভাইয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা জিয়ান ওর তার পরিবার সম্পর্কে আগে থেকে অবগত। বাংলা সিনেমার মতো পুরনো কোন শত্রুতা নাকি। যেটা আবার নতুন করে জ্বলে উঠেছে। আমার বেশ কৌতুহল হচ্ছে সবটা জানার। নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে বলে উঠলাম,
– হায়দার ফ্যামিলি মানে কি ভাইয়া। তোমরা কি ওদের আগে থেকেই চিনো। কোন পুরনো শত্রুতা তোমাদের মধ্যে, যেটা কালক্রমে আরো দৃড় হয়ে উঠেছে।
– তোর ছোট্ট মাথায় এসব ডুকবে না। জিয়ান হায়দারের সাথে তোর পরিচয় কি ভাবে। আমাকে ছুঁড়ে দেওয়া ভাইয়ার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে আমি মৃদু সুরে বললাম, সে আমাকে পছন্দ করতো। কিন্ত তোমরা তাকে কি করে চিনো?? আমার প্রশ্নের কোন জবাব দিলো না ভাইয়া। আমার দিকে ক্রোধ নিক্ষেপ করে হনহন করে চলে গেল তার রুমে। সে চলে যাওয়ার পর দাদি ও তার পিছন পিছন যায়। তার নাতিটা যে বেশ রেগে আছে এই রাগটা কমাতে হবে তো।
– জিয়ান এসেছিল।
মামনির এমন শান্ত বাক্যে আমি ফের মামনির দিকে তাকাই। আমার চোখ মুখে বেশ উৎসাহ। জিয়ান কেন এসেছিল আবার সেটাই জানার ইচ্ছে। আমার এমনধারা চাওনি মামনির বুঝতে অসুবিধা হল না। সে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো,
-সেদিন এখান থেকে চলে যাওয়ার পর জিয়ান ওর বাড়িতে তোকে বিয়ে করার কথা জানায়। কিন্তু ওর পরিবার সাফসাফ বলে দেয় তারা তোকে কিছুতেই জিয়ানের বউ হিসাবে মেনে নিবে না। অবশ্য এটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই সে দিন আমি জিয়ানকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
– তোমরা সবাই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো। মামনির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।
– জিয়ানকে হাড়িয়ে কষ্ট হচ্ছে তোর? আমার প্রশ্ন এড়ানোর জন্যে বলল মামনি।
– নাহ।
– ওহ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল মামনি।
আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি মামনি আমার থেকে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে। যেহেতু মামনি নিজ থেকে আমাকে কিছু বলতে চাইছে না তাই আমিও কিছু জিগ্যেস করলাম না। শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রইলাম মামনির দিকে
মামনির সাথে কথা বলা শেষ করে বাসায় চলে আসলাম। কিন্ত আমার মন পরে রইলো মামনিদের বাসায়। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সবাই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছে! কিন্থু কি লুকাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি। রাতে আম্মুর রুমে গেলাম। আব্বু তখনো অফিসেই ছিলো। স্পর্শ পড়তে বসছে আর আম্মু বসে বসে টিভিতে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখছিলো। আমি গিয়ে আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ি। আমি সচরাচর আব্বু আম্মুর রুমে আসি না। ছোট থেকেই মামনির কাছে বেশী থকতাম আমি। ভাইয়ার সাথে শত ঝগড়া মারামারি করেও আমি ও বাড়িতে থাকতাম। আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তেই আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– কি হয়েছে মিষ্টি? এভাবে মন মরা হয়ে আছিস কেন?
– মাথাটা খুব ব্যাথা করছে আম্মু।
– খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন টইটই করে ঘুড়ে বেড়ালে তো মাথা ব্যথা করবেই। তোকে কত করে বলি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া কর, ঘুমা। তুই তো আমার কোন কথাই শুনিস না। নিজের যা মন চায় তাই করিস।
আম্মুর ননস্টপ কথা শুনে আমি উঠে বসলাম। তারপর বললাম,
– তোমার এমন বকবকানি শুনে মাথাটা আরো ব্যথা হয়ে গেলো।
– আমি কিছু বললেই তো তোর কাছে বকবকানি হয়ে যায়। ভালো কথা শুনতে কার ভালো লাগে বলতো।
– একদম ঠিক বলেছে আম্মু। সবমসময় এত ঞ্জানের কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগেনা। আসলে কি বলতো ঞ্জানে আমার প্রচুর এলার্জি। আচ্ছা আম্মু শুনোনা,
– কি বল??
– হায়দার নাম কিংবা কারো নামের আগে পরে হায়দার আছে এমন কাউকে কি তুমি চেনো?
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন? রুমের প্রবেশ করতে করতে বলল আব্বু। আমি সে দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এমনি। তুমি চিনো এমন কাউকে?
– অপরিচিতদের নিয়ে কথা না বলাই ভালো। আমি চাইনা আমার বাড়িতে অন্যকোন মানুষ বা কারো ফ্যামিলি নিয়প কথা হোক। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাও। লেখাপড়া তো নেই ই তোমার। আব্বুর এমন কড়া কথা শুনে আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। তখন আম্মুর মুখের অবস্থাটা ছিলো একই রকম। দেখে মনে হচ্ছে তারা আমাকে এড়িয়ে যেতে পাড়লেই বেঁচে যায়।
পরের দিন সকাল হতে না হতেই আমি বেড়িয়ে পড়লাম মামনির বাড়ির উদ্দেশ্যে। হায়দার ফ্যামিলির সাথে সবার কি এমন সম্পর্ক সেটা আমাকে জানতেই হবে। তাছাড়া মামনি জিয়ানকে কি এমন বলল যে সে এক কথায় চলে গেলো। চিন্তায় সারারাত ঘুৃম হয়নি আমার। এসব ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে যায় আমার। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বেড়িয়ে পরি মামনিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই দেখি মামনি তার শ্বশুড়কে ইনসুলিন দিচ্ছে। দাদি রান্নঘরে আর আরাভ আংকেল সুফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছে আর চা খাচ্ছে।আমি রান্নাঘরে থাকা দাদির কাছে গিয়ে বলি,
– ভাইয়ার কফি দাও আমি দিয়ে দিবো।
আমার কথা শুনে দাদি তার কাজ বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকায়। পা থেকে মাথা অবধি আবলোকন করে নিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠলো,
– ভুতের মুখে রাম নাম। বলি আজ সূর্য কোন দিক থেকে উঠছে।
– উহঃ দাদি তুমি না সবসময় বেশী বকো। তাড়াতাড়ি কফি করে দাও।
– আমার দাদুভাইয়ের প্রতি এত দরদ কাহিনি কি? ভ্রুতে কিংচিৎ ভাজ ফেলে বলল দাদি। প্রেমেটেমে পড়লে নাকি।
– উষ্ঠা খেয়ে গর্তে পরবো তবুও তোমার হিটলার নাতির প্রেমে পরতে রাজি নই বুঝলে দাদিজ্বি। আমি কেন জেনেশুনে কোন মেয়েই তোমার হিটলার নাতির প্রেমে পরবে না। কফিটা করে দিবে। ঠিক আছে দিতে হবে না। আমি নিজেই করে নিচ্ছি। তারপর এক কাপ কফি বানিয়ে সোজা চলে গেলাম ভাইয়ার রুমে। ভাইয়া তখনো গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। আমি গিয়ে জানালার পর্দা টেনে থাইগ্লাস খুলে দিলাম। সেখান দিয়ে বাহিরের কড়া রোদ এসে পরছে ভাইয়া মুখে। জানালা দিয়ে সূর্যের রশ্নি এসে মুখে পড়তে চোখ পিটপিট করতে থাকে সে। আমি কফির মগ হাতে নিয়ে ভাইয়ার শয়নের কাছে দাঁড়ালাম তখনো ভাইয়া তার চোখ খুলে নি। আমার মাথায় একটা দুষ্ঠ বুদ্ধি আসলো। আমি বিছানার এক পাশে বসে ভাইয়া হতের তর্জনী টেনে গরম কফির মগে ডুকিয়ে দিলাম। আহঃ শব্দ করে ভাইয়া উঠে বসে। ততক্ষণে আমি তার হাত ছেড়ে দিয়েছি। ঠোঁটের কোনে ভুবন ভুলানে হাসির রেখা টেনে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া কিছুক্ষণ হাত ঝাঁকিয়ে নিয়ে আমার দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। পরক্ষণেই তার দৃষ্টি স্বাভাভিক করে বলে উঠলে,
– মিষ্টি তুই!!
– তোমার কফি। কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললাম আমি। আমার কথা শুনে ভাইয়া বিষম্মের দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।
– তুই আমার জন্যে কফি নিয়ে আসছিস! মৃদি হেসে বলল ভাইয়া।
– এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে আজ প্রথমবার নিয়ে আসলাম।মৃদু হাসলো ভাইয়া। তারপর আমার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে তাতে নিজের অধরোষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
– এখনো রেগে আছিস।
– তাতে তোমার কি যায় আসে?
– অবশ্যই আমার যায় আসে। তোর মন খারাপ দেখলে আমার আকাশে মেঘ জমে। তোর চোখে পানি দেখলে আমার আকাশে বৃষ্টি ঝড়ে। তুই যখন আমার উপর রেগে থাকিস তখন আমার আকাশে বজ্রপাত শুরু হয়। আর যখন আমাকে এড়িয়ে চলিস তখন আমার* দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ভাইয়া। অতঃপর বলল, আর তুই বলছিস আমার কি আসেযায়।
ভাইয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার কথা শুনছি। আচ্ছা এটাই কি আমার সেই অভি ভাইয়া যে কারনে অকারনে আমার সাথে ঝগড়া করতো।
চলবে,,,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।