বেলা শেষে ২ পর্ব-০৮

0
867

#বেলা_শেষে- ২
[০৮]

রাত এগারোটা ছুঁইছুই। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি বারবার। ঘুম কিছুতেই ধরা দিচ্ছেনা দু-চোখের পাতায়। অন্যসময় হলে মোবাইল নিয় পরে থাকাতাম। কিন্ত এখন মোবাইল ছুয়ে দেখতেও ইচ্ছে করছে না আমার। এইতো এখন মোবাই হাতে নিয়ে ডাটা অন করতেই দেখবো ভাইয়া সাথে তার বান্ধুবি এ্যানির ছবি। আর সেখানে পাবলিক কত সুন্দর রোমান্টিক রোমান্টিক কমেন্ট করছে। কেও কেও তো এদের দুজনকে এবছরের সেরা কাপল হিসাবেও ঘোষণা করছে। যা দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার। দুপুরে জিয়ান চলে যাওয়ার পর কল করেনি একবারও। হয়তো ওকেও ওর বাড়ি থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেদ করেছে। এই কয়দিন জিয়ানের সাথে কথা বলে আমার অভ্যাসটাই বদলে গেছে। না আজ আর কিছুতেই ঘুম আসবে না। গায়ের চাদর সড়িয়ে উঠে বসলাম। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে আমার রুমের সুন্দর্য যেন আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেরেছে। পাশেই কেবিনেটে থাকা টেডিগুলো জ্বলজ্বল করছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে লাইট অন করে নিলাম। তারপর কেবিনেট থেকে একটা সাদা কালারের টেডি বের করে আনলাম। যেটা দু বছর আগে আমার জন্মদিনে ভাইয়া আমাকে গিফ্ট করেছিল। ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম সেই টেডিবিয়ারের দিকে। ভাইয়ার উপর থাকা যত রাগ সব আমার এই টেডির উপর ঝাড়তে ইচ্ছে করছে। হয়তো আজ আমার ঘুম না আসার কারনও ভাইয়া। রাগে দাঁত কটমট করে টেডির এক কান টেনে ধরলাম। তারপর টেডির নাক বরাবার এখখান ঘুসি দিলাম। তবুও আমার রাগ কিছুতেই কমছে না। তাই টেডিকে বিছানার উপর বসিয়ে আমি সেটার উপর উঠে বসলাম আর দু হাতে টেডির মুখে একের পর এক ঘুসি দিতে লাগলাম। মাঝে মাঝে টেডির কান টেনে ধরছি। তারপর কি করলাম দিলাম টেডির নাকে এক কামড় বসিয়ে। এমনি সময় কানে ভেসে আসলো কারো শীতল আওয়াজ,

– আহারে বেচারি টেডিবিয়ার,

এতরাতে কোথা থেকে এমন শীতল আওয়াজ ভেসে আসলো সেটার নিরক্ষণ করতে যখন পুরো রুমে চোখ বুলালাম তখন দেখলাম বেলকনিতর দরজার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে হিটলার অভি। তাকে দেখে আমি দ্রুত টেডির উপর থেকে নেমে যাই। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার। ভাইয়া আমার রুমে। এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন। ঘটনাটি বুঝার জন্যে আমি নিজেই নিজের হাতে চিমটি কাটলাম। উহঃ সত্যিই, ভাইয়া এখন আমার রুমে মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এমন অবস্থা দেখে ভাইয়া আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলে উঠলো,

– এভাবে হা করে কি দেখছিস??

– তোমাকে, না মানে এত রাতে তুমি আমার রুমে? কখন এলে মানে কেন এসেছো? ভাইয়া আমার কথার কোন জবাব দিলো না। সে আমাকে এড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো আর টেডি হাতে নিয়ে সেটাকে নিরক্ষণ করে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

– মেরে টেডির নাক ভোঁতা করে দিয়েছিস? এখন এটাকে কে বিয়ে করবে?? ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। এই ছেলে বলে কি। টেডির বিয়ে। আমি দ্রুত পায়ে ভাইয়ার সামনে গিয়ে তার কপালে মাথায় গলায় হাত রাখলাম। তখন সে আমার হাত ধরে বলে,

– কি করছিস??

– তুমি ঠিক আছো। জ্বরটর হয়নি তো তোমার। কিসব আবোলতাবোল বকছো বলতো।

– আমি ঠিক আছি। বাট তুই ঠিক নেই। কি হয়েছে তোর?

– কই নাতো আমার আবার কি হবে। আমিও ঠিক আছে। ভাইয়ার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালম আমি। ভাইয়া টেডিটা আগপর জায়গায় রেখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

– তুই ঠিক নেই। এত রাতে টেডিবিয়ারের সাথে যুদ্ধ করা কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়।

– কি বলতে চাইছো তুমি আমি পাগল।

– সেটা আবার কখন বললাম। পাগল তো আমি হয়েছি। বিরবির করে বলল ভাইয়া।

– কিছু বললে তুমি।

– আমাকে একবারও কল করিস নি কেন? আগে তো প্রতি মিনিটে মিনিটে কল করতি তাহলে এবার কি হলো তোর। নয় দিনে একবারও কল করলি না।

– তুমিই তো বলেছিলে তোমাকে ডিস্টার্ব না করতে।
আমার বলা শেষ হতে না হতেই ভাইয়া আমার দুই বাহু শক্তকরে চেপে ধরলো আর বলল,

– তোর সাথে কথা না বললে যে আমি আরো বেশী ডিস্টার্ব ফিল করি। তোর পাগলামো কথা, ঝগড়া করা আর আমাকে দেখে ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া এগুলো না দেখলে আমি আরো বেশী ডিস্টার্ব হই। এগুলো থেকে আমাকে রেহাই দিবি কি করে??

ভাইয়ার এমন নেশালো কথা আমার মনে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগিয়ে তুলেছে। মনে ভিতরে হীম শীতল দোলা দিয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগছে ভাইয়ার এমন জড়ানো কথা। তখনি মনে পরে যায় তার বান্ধুবী এ্যানির কথা। আমি ঝাড়া দিয়ে ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর শান্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,

– রেহাই কেন দিবো ভাইয়া তোমাকে আমি। তেমাকে ডিস্টার্ব করার জন্যে তো এ্যানি আছে। এ্যানি আপু তোমাকে ডিস্টার্ব করবে। আমার কথা শুনা মাত্রই তার চোখ মুখ শক্তহয়ে গেলো। সে আমাকে কিছু বলবে তার আগেই আমি বলে উঠলাম,

– চলে যাও ভাইয়া। এতরাতে আমার রুমে তোমাকে কেও দেখতে পেলে লোকজন নানা কথা লুটাবে। তুমি চলে ভাইয়া। আমি চাইনা তোমার কারনে কেও আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলুক। আমার কথার প্রতিউত্তরে ভাইয়া আর কিছু বলল না। সে আমার দিকে নিরব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রইলো খানিকক্ষণ। তারপর নিঃশব্দে প্রস্থান করে সে। আমি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। হঠাৎ করে ভাইয়ার এতটা পরিবর্তনের কারনটা আমার অজানা। আচ্ছা আমার অনুপস্থিতি কি ভাইয়ার এমন পরিবর্তনের কারন।

পরেরদিন কলেজ থেকে বের হয়েই জিয়ানের মুখোমুখি হতে হলো আমাকে। আমি ওকে এড়িয়ে চলে আসতে চাইলে জিয়ান আমাকে ডেকে দাঁড় করায়। আমি বেশী আচর্য হই যখন জিয়ান নিজে থেকে আমাকে সরি বলে। এতদিন মোবাইলে কথা বলার জন্যে সরি বলে। অর্ণার কাছ থেকে নাম্বার নেওয়ার জন্যে সরি বলে। জিয়ানের কথার কোন মানেই বুঝতে পারছিলাম না আমি। এ বিষয়ে আমি ওকে জিগ্যে করলে সে বলে,

– তোমাকে হ্যাপি ফ্যামিলি আমি দিতে পারবো না। আবারও তোমার সুখ কেড়ে নেওয়ার অধীকার নেই আমার। তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় জিয়ান। আমি জিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার অভিমান যে এতদূর পর্যন্ত গড়াবে সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিলো। যাই হোক জিয়ান নিজ থেকে চলে গেছে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে

এখন আর ভাইয়াদের বাড়িতে যাওয়া হয়না আমার। মাঝে মাঝে ভাইয়ার সাথে দেখা হলেও কথা হয় না। ভাইয়া নিজ থেকে কথা বলতে চাইলে আমি তাকে এড়িয়ে চলে আসি। কাল বিকালে যখন স্পর্শকে নিয়ে বেড়িয়েছিলাম তখন মাঠে ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো আমার। ভাইয়া মাঠে তার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলছিল। তার পরনে ছিলো বায়ারমেনিকের জার্সি। যেটা দেখে স্পর্শ আমার কাছে বায়না শুরু করে দিয়েছে ওর ওই জার্সিটা চাই। এর আগেও যখন ভাইয়ার কোন জার্সি টি-শার্ট স্পর্শের ভালো লাগতো তখন আমি সেটা লুকিয়ে ভাইয়ার কাবার্ড থেকে নিয়ে নিতাম। কিন্ত এখন আর সেটা নিতে ইচ্ছে করছে না আমার। আমি স্পর্শকে বলে ছিলাম নতুন কিনে দিবো। কিন্ত না স্পর্শের বায়না ওর ওটাই তাই। ছোট ভাইয়ের আবদার পূরনের জন্যে আমাকে ও বাড়িতে যেতে হচ্ছে।

প্রায় চারদিন পর আজ মামনিদের বাসায় আসলাম আমি। আর আগে এমন কোন দিন ছিলো না যেদিন আমি এই বাড়িতে আসি নি। ড্রয়িংরুমে পা ফেলতেই দেখলাম মামনি তার শ্বাশুড়ির সাথে বসে কথা বলছে। আমি তাদের সাথে কোন কথা না বলে সোজা ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। ভাইয়া তখন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বসে লেপটপে কাজ করছিলো। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করলাম। তারপর পুরো রুমে চোখ বুলালাম কোথায় সেই জার্সি। সুফার এক কোনে জড়সড় হয়ে পরে আছে সেই বায়ারমেনিকের জার্সিটা। আমি গিয়ে সোজা সেই জার্সিটা হাতে নিলাম। তারপর পিছনের দিকে ঘুড়তেই ভাইয়ার সাথে বড়সড় ধাক্কা খেলাম। ঘটনার আকস্মিক আমি পরে যেতে নিলে ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেলে।

চলবে,,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে