#বেলা_শেষে- ২
[০৬]
আমি এখনো হাসি মুখে ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কখনো কখনো ভাইয়ার নাক ধরছি আবার কখনো তার গালে হাত বুলাচ্ছি। ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। না পারছে এসব সহ্য করতে আবার আমাকে কিছু বলতেও পারছে না। সব মিলিয়ে মহা ফাসাদে পরেছে সে। আবার একটু পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মামনি আসছে কি না সেটাই পরখ করছে সে। এখন যদি মামনি এসে আমাকে এই অবস্থায় দেখতে পায় তাহলে ভাইয়াকে খুব বকবে। ভাইয়া আমাকে টেনে নিয়ে আবার বিছানায় বসালো তারপর বলল,
-এখানেই চুপটি করে বসে থাকবি। আমি ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়ালাম। অতঃপর ভাইয়া উঠে দরজার কাছে গিয়ে বাহিরের দিকে উকি ঝুকি দিলো করেকবার। মামানি কিংবা আংকেল আসছে কি না সেটাই দেখছে। যখন দেখলো কেও আসছে না ভাইয়া বড় করে শ্বাস ত্যাগ করলো তারপর দরজা লক করে দিলো। পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই বড়সড় শক খায় সে। তার পিছনে ফ্যালফ্যাল করে হাসি দিয়ে কোমড়ে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
-মিষ্টু তু-তুই এখানে কি করছিস??
-তুমি কি চুরি করেছো বলতো। ভ্রু কুচকিয়ে বললাম আমি।
– ওয়াট,
-ওভাবে উকি দিচ্ছো কেন?? চুরি করার মতলব তাইনা। দাঁড়াও আমি এখনি মামনিকে ডাকছি। মামনির খেয়ে মামনির বাড়িতে থেকে মামনির জিনিস চুরি করছো তুমি। আজ আমি মামনিকে সব বলে দিবো। মামনি মামনি কোথায় তুমি,, আর কিছু বলতে পারলাম না ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরলো। আর ওই অবস্থাতেই টেনে বিছানায় বসালো। আমি ভাইয়ার হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্ত ভাইয়ার শক্তির সাথে কিছুতেই পেরে উঠছি না। মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। আড় চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভাবছে। এই সুযোগে আমি ভাইয়ার হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম। আহঃ শব্দ করে ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো। অতঃপর আমি উঠে ভোঁ দৌড় দিলাম। তখন মনে হলো আমি আকাশে উড়ে যাচ্ছি। রুমের ভিতরে দৌড়াচ্ছি আর ভাইয়াকে ডেকে বলছি,
-আমি উড়ে যাচ্ছি ভাইয়া আমাকে ধরো। ভাইয়া দেখো আমি উড়ে যাচ্ছি। আমার চিল্লানো শুনে সে বাধ্যহয়ে আমার পিছনে দৌড়াতে থাকে। আর বলে,
-তুই কোথায় উড়ছিস মিষ্টি। তুই তো দৌড়াচ্ছি, দাঁড়া বলছি।
– আমাকে ধরো ভাইয়া আমি উড়ে যাচ্ছি। বলেই খিলখিল করে হেসে দিলাম।
ভাইয়ার কি হলো জানিনা সে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার হাসির দিকে।
ভাইয়াকে আমার পিছনে আসতে না দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তার উপর ঝাপটে পরলাম। আর বললাম, আমি তো উড়ে যাচ্ছি আমাকে আটকাচ্ছো না কেন?? ওও বুঝছি আমি উড়ে গেলে তো তোমারই ভালো হয় তখন মামনি তোমারে একা আদর করবে তাই না। দেখো ভাইয়া আমাকে আটকাও বলছি আমি মামিকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সারাজিবন মামনির কাছে থাকতে চাই। মামনির আদর পেতে চাই। বলেই আবারও দৌড় দিতে যাব তখনি ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেলে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-বাহ্ মিষ্টি তোর মাথা তো ভালো কাজ করে। নেশা করার পরেও তোর মাথা কি সুন্দর কাজ করে। তাহলে এক্সামে ডিম পাস কেন??
– অভি ভাইয়া তুমি খুব পচা। ঠোঁট উল্টায়ে বললাম আমি।
– আমি আবার তোকে কি করলাম।
-আমি উড়ে যাচ্ছি আর তুমি আমাকে আটকাচ্ছো না।
– তুই কোথাও উড়ে যাচ্ছিস না পাগলি। এই দেখ আমি তোকে ধরে রেখেছি। বলেই আমাকে সুফায় নিয়ে বসিয়ে দিলো। তখন মামনি এসে দরজায় টুকা দিয়ে বলল,
-অভি দরজা আটকিয়ে রেখেছিস কেন? খেতে আয় আর মিষ্টিকেও নিয়ে আয়। মেয়েটা রাতে কিছু খায়নি।
মামনির কথার প্রতিউত্তরে আমি কিছু বলবো তখনি ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে মামনিকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
-মিষ্টির পড়া এখনো শেষ হয়নি। তুমি আর আব্বু খেয়ে নাও। লাকিকে দিয়ে আমার আর মিষ্টির খাবার রুমে পাঠিয়ে দাও। আমরা পরে খেয়ে নিবো।
মামনি চলে যায়। ভাইয়া যেন এবার প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে বড় বড় করে শ্বাস নিলো কয়েকবার তারপর আমার দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠে দাঁড়ালো। বুকের উপর হাত ভাজ করে কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেন কল করলো। তারপর তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো।
লাকি খাবার নিয়ে এসে দরজায় নক করতেই ভাইয়া গিয়ে ওর কাছ থেকে খাবার নিয়ে আসে। লাকি চলে যেতেই সে দরজা আবার লক করে দেয়। খাবারগুলো টেবিলের উপর রাখতে আমি সেগুলো পরখ করে নিলাম। তারপর ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
-আমি এগুলো খাবো না, আমি মিষ্টি খাবো।
-ফ্রিজের সব মিষ্টি তো খেয়ে ফিনিশ করে দিয়েছিস।এই রাতের বেলা মিষ্টি পাবো কোথায়?? ভাইয়ার কথা বলা শেষ হতে না হতেই আমি গিয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম। তারপর হাত দিয়ে ভাইয়ার গোলাপী ওষ্ঠের উপর হাত বুলিয়ে বললাম,
– তোমার ঠোঁটযুগল খুব মিষ্টি ভাইয়া আমি এগুলো খাবো। আমার কথা শুনে ভাইয়ার কাশি উঠে গেলো। সে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল,
-ছিহঃ মিষ্ট এসব কি বলছি তুই।
-আমি মিষ্টি খাবো।
– স্টোপ, জাস্ট স্টপ ইউর মাউথ। অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছি তোর পাগলামো। বেশ জোড়ে ধমক দিয়ে বলল ভাইয়া। আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তাতেও কোন কাজ হলো না। সে আমাকে। শাসিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর আমাকে জোড় করে শুইয়ে দিয়ে শরীরের উপর চাদর টেনে দিয়ে বলল,
– একটুও যদি নাড়াচাড়া করছিস না তুই তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে। আমি ছলছল নয়নে তার দিকে তাকালাম। সে ধমকের সুরে বলে উঠলো,
-চোখ বন্ধ কর। আমি কোন কথা না বলে দু-চোখ বন্ধকরে নিলাম। তারপর তখন ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছি কিছুই খেয়াল নেই আমার।
জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের কড়া রোদ এসে মুখে পড়তেই মিটমিট করে চোখ খুলি আমি। বেশ কড়া রোদ এই রোদে ঘুমিয়ে থাকা বেশ মুশকিল। মাথাটা ভিষন ভাড় লাগছে। এক হাতে মাথা চেপে ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলাম। আমার চেষ্টাতে আমি সফলও হয়েছি। কিন্ত সমস্যা হলো মাথাটা ভিষন ভাড় লাগলে। দু-চোখ বন্ধকরে মাথা চেপে ধরে বসে রইলাম। তখনি হিটলারের ঝাঁঝালো কন্ঠ ভেসে আসলো আমার কানে। ভাইয়ার এমন কর্কশের মতো কথা শুনে সামনের দিকে তাকালাম আমি। তাকে দেখেই বড়সড় শক খেলাম। সাথে সাথে দু-চোখ বন্ধকরে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বললাম,
-ছিহঃ ভাইয়া, তুমি সকাল সকাল এই অবস্থাতে আমার রুমে কি করছো? লজ্জা করে না তোমার টাওয়ার পরে একটা কুমারী মেয়ের রুমে আসতে। আমার কথায় ভাইয়ার কোন হেলদুল হলো না। এই অভিটার লাজ লজ্জা একটু কমই। একটু না অনেকটাই কম। নাই বললেই চলে। না হলে সকাল সকাল এভাবে একটা মেয়ের রুমে আসতে পারে না।
– হোয়াট ননসেন্স, আমি কেন তোর রুমে আসবো।টেবিলের উপর লেবুর শরবত আছে খেয়ে নি। আর আমার রুম থেকে বের হ। কাল সারারাত যা যন্ত্রনা দিয়েছিস না আমাকে। অন্যসময় হয়ে কানের নিয়ে ঠাটিয়ে একটা লাগিয়ে দিতাম। ভাইয়ার কথা শুনে মনে হলো আমি মহাশূন্যে ভাসছি। আমি তার রুমে আছি মানে। চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখি হ্যাঁ সত্যিই তো আমি তো ভাইয়ার রুমে। তারপর মনে পড়ে কাল রাতে ওয়াইন খাওয়ার কথা। আচ্ছা তারপর কি হয়েছিল, আমার কিছু মনে পড়ছে না কেন? ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। তারপর ভাইয়ার সামনে গিয়ে বললাম,
– কি করেছি আমি কাল রাতে?? ভাইয়া আমার কথার কোন জবাব দিলো না। আমাকে এড়িয়ে সে একটা টি-শার্ট পরিধান করে নিলো। এদিকে রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কাল রাতের কোন কথাই মনে পরছে না আমার। বিছানায় ওয়াইনের বোতল নিয়ে বসে ছিলাম এটুই মনে পড়েছে তারপর আর কিছুই কেন মনে পড়ছে না আমার। আমি গিয়ে ভাইয়ার টি-শার্টের কলার চেপে ধরলাম। তারপর শক্ত গলায় বললাম,
– কাল রাতে কি করেছি আমি বলো আমাকে। হঠাৎ করে আমার এমন রিয়্যাক্ট করা দেখে ভাইয়া তার চক্ষুদ্বয় কিছুটা সংকুচিত করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
– সারারাত আমাকে জ্বালিয়ে শান্তি হয় নি তোর। সকাল সকাল বকবক শুরু করে দিয়েছিস। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হো। না হলে কানের নিচে ঠাটিয়ে দিবো এল থাপ্পড় কানে শুনতে পাবি না কিছুদিন। মেজাজটা এমনিতেই বিগড়ে আছে।
-তোমার মেজাজ আবার ভালো থাকে কবে। হনুমান কোথাকার। বিরবির করে বললাম আমি।
-কিছু বললি।
– নাহ। তারপর আমি সেখান থেকে চলে আসতে নিলে আমার চোখ পড়ে খাটের পাশে রাখা ভাইয়ার লাগেজের দিকে। আমি লাগেজের দিকে তাকিয়ে ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,
– কোথাও যাচ্ছো নাকি?? ভাইয়া আমার কথার কোন জবাব দিলো না। সে নিজেকে তৈরী করতে ব্যাস্থ হয়ে পরে। আমিও ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে আসি।
চলবে,,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।