#বেলা_শেষে
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#অন্তিম_পর্ব
সকাল হতেই আমি নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই,
কলেজের কাজ সেরে যখনই গাড়ীতে উঠবো,
ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ এক জন আমার হাত টেনে ধরে।
আর আমি আঁতকে উঠি।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি কল্প!
কল্প কে সেটাই তো ভাবছেন?
কল্প আমার ভালবাসার মানুষ।যার সাথে অল্প কিছু দিন আগেই আমি সব কিছু শেষ করে দিয়েছি।আই মিন আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে।
তাই আমি আমার হাত টা ঝাড়া দিয়ে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়ীতে উঠে যাই।
কল্প আমাকে বার বার ডাকতে থাকে,বলতে থাকে দাঁড়াও আদ্রু তোমার সাথে আমার কথা আছে।
তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।
আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ।
আমি ওর কোন কথাই শুনিনা,চলে আসি।
কারণ আজকাল কিছু পুরুষ মানুষের উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।
যেখানে আমার নিজের বাবা এত বছর সংসার করার পরও আম্মুকে মূল্য দিতে পারেননি।আম্মুকে ঠকিয়েছেন।
সেখানে ও তো আমার অল্প কিছুদিনের প্রেমিক।
ও কিভাবে আমাকে মূল্য দিবে।
এরকম কিছু পুরুষ মানুষ শুধু পারে আমাদের মত মেয়েদের কষ্ট দিতে।
আমি ওকে সব কিছু থেকে ব্লক করে রেখেছি।তাই কোন ভাবেই ও আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা।
কিন্তু ওর ভালবাসা সত্যি হলে ঠিকই ও সব কিছু ঠিক করার জন্য আমাদের বাসায় যেতো।
কিন্তু ও যায়নি।
এখানেই বোঝা যায় ও আসলেই একটা বে ঈ মান।
ও আমাকে ঠকিয়েছে।
ওকে যেদিন আমি প্রথম দেখেছিলাম ও একটা জিন্সের ব্লু রঙের শার্ট পরা ছিলো,যার বোতাম ছিলো খোলা।
তার ভেতরে ছিলো সাদা একটা টিশার্ট।
কানে ইয়ারফোন।
সেদিন ওকে প্রথম দেখায় আমার ভালো লেগে যায়।
এই প্রথম কারো জন্য আমার অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
আমি জানতাম না,ও নিজেও যে আমাকে মনে মনে ভালবাসে।
পছন্দ করে।
ওর চোখ দুটো ছিলো আমাকে খু ন করার জন্য ওর বিশাল অ স্ত্র।
ওর চোখে আমি খু ন হতাম বারংবার।
আমাদের সামনাসামনি কোন কথা হতোনা।
দূর থেকেই শুধু চোখাচোখি হতো।
আমি মুচকি একটু হাসতাম ওকে দেখে,ও ও হাসতো।
এই টুকুই।
হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়।আমি প্রায় ভিজেই গিয়েছিলাম।
সেদিন কল্প একটা ছাতা নিয়ে দৌড়ে এসে আমার মাথার উপর ধরে।
আর বলে,
এই মেয়ে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
আমি সেদিন ওকে বলেছিলাম,আপনি বৃষ্টি ভালবাসেন না বুঝি?
সেদিন ও উত্তর দিয়েছিলো অনেক ভালবাসি।
কিন্তু তোমার থেকে বেশি না।
আমি বলেছিলাম,তাহলে ভিজুন আমার সাথে।
সেদিন ছাতা টা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তার মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে কল্প আমায় বলে,
_এই মেয়ে সারাজীবন ভিজবে আমার সাথে বৃষ্টিতে?
_আমি ওর হাত টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে উত্তর দিয়েছিলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
সেদিন থেকেই শুরু হয় আমাদের ভালবাসার অধ্যায়।
কিন্তু আজ তা শুধুই স্মৃতি।
যাইহোক আমি আর কিছু ভাবতে চাচ্ছিনা।
চোখ বন্ধ করা মাত্র চোখের সামনে স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছিলো।
তাই আমি চোখ খুললাম।
মামার বাসার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
কেন যেন বার বার কল্পর সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলোর কথা মনে পড়ছে।
আসলে আমি কঠোর হতে চাইলেও পারছিনা কঠোর হতে।
চোখ ভিজে আসছে।
বাসায় পৌঁছালাম,
মামী আমাকে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসতে বললেন।
আম্মু আমাকে দেখেই বললেন,
_কিরে কি হয়েছে?
মুখ টা এমন মলিন হয়ে আছে কেন?
_এমনি আম্মু গাড়ীতে আসছি তো।
আর জানোই তো জার্নিতে আমার প্রবলেম হয়।
_হুম যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে আসলাম।
আম্মু খাটে বসে আছেন।
আমি আম্মুর কোলে গিয়ে মাথা রাখলাম।
রেখে আম্মুকে বললাম,
_আম্মু নিজের চোখে দেখা কোন কিছু কি কখনো মিথ্যে হয়?
_হুম হয়।
_যেমন?
_এই ধর তুই চোখে যা দেখলি,তার পেছনে অন্য কোন কারণও লুকিয়ে থাকতে পারে।
_আচ্ছা আম্মু,কেউ ঠকালে তাকে কি ক্ষমা করে ২য় বার সুযোগ দেয়া উচিৎ?
_সেটা তার উপর নির্ভর করে,যে সে আসলেই শোধরাবে কিনা।
সেটা বুঝে।
আচ্ছা কি হয়েছে তোর?
এসব কেন বলছিস?
_কিছুনা আম্মু।
এমনি।
_তুই কি কোন কিছু নিয়ে আপসেট?
_না আম্মু ঠিক আছি।
_আচ্ছা চল তাহলে খাবি।
_হুম আম্মু।
ওইদিকে হঠাৎ আদ্র ভাইয়ার কল আমার ফোনে,
_আদ্রিতা তুই তাড়াতাড়ি ফুফু কে নিয়ে বাসায় চলে আয়।
_কেন ভাইয়া কি হয়েছে?
_চলে আয় সব বুঝতে পারবি।
আমি আর আম্মু ভয় পেয়ে যাই,আর ভাবতে থাকি কি হলো বাসায়।
ভাইয়া এভাবে আমাদের যেতে বলছে কেন।
আমি আর আম্মু দ্রুত আমাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
বাসায় গিয়ে যা দেখি তা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে যায়।
আমি দেখি,
আব্বুর ২য় স্ত্রী,তার বোন আর তার মা চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে।
আমি যেতেই আমাকে দেখে তারা অবাক হয়ে যান।
ভূত দেখার মত আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
আর বলেন,তু তু তুমি কে?
_আদ্র,এসব কি?
ওদের কে এভাবে কে বেঁধে রেখেছে?(আম্মু)
_আমি বলছি,
ওদের কে আদ্র আর আদ্রিতা বেঁধেছে।
কিন্তু ও কে?
দুজন একই চেহারার।
কে ও? (আব্বু)
_ও আদ্রিতা,আর আমরা যাবার পর যে এতদিন এই বাসায় ছিলো সে অনুদ্রিতা।
আদ্রিতার জমজ বোন।
ওদের মা মারা গিয়েছে বলে ও আদ্রিতাকে খুঁজতে এখানে এসেছে।
কিন্তু কেন যে আদ্রিতা সেজে বসে আছে আমি জানিনা।
আচ্ছা যাইহোক,ওদের ওরা বেঁধে রেখেছে কেন?
_কারণ ওরা প্ল্যান করে আমাকে ইঞ্জে*কশন দিয়ে বাড়ীর,জায়গা সম্পত্তির দলিলে আমার সাইন নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।
আদ্র আর অনুদ্রিতা সময় মত দেখে ফেলে।
এবং ওদের বেঁধে ফেলে।
_কিন্তু তোমার স্ত্রী না তোমাকে ভালবাসে,তাই ওকে বিয়ে করেছো।
ও তোমাকে সন্তান দিবে সেই জন্য আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছো,তাহলে এখন কেন সে এসব করছে?
_কেন করছে আমি জানিনা।
_আমি জানি,আমি বলবো?(অনুদ্রিতা)
অনুদ্রিতা ওর ফোন টা বের করে একটা ভয়েজ ক্লিপ প্লে করে,
যেখানে আব্বুর ২য় স্ত্রী তার মাকে গত রাতে যা কিছু বলে সব রেকর্ড করা ছিলো।
রাতে কোন বিড়াল গিয়ে ফুলের টব ভেঙে ফেলেনি।
বরং অনুদ্রিতা যখন তাদের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলো।আর রেকর্ড করছিলো তখনই হঠাৎ ওর ধাক্কায় ফুলের টব টা পড়ে ভেঙে যায়।
ভয়েজ ক্লিপে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো তাদের কথোপকথন,
যেখানে বলা হচ্ছিলো
_মা শোনো একটু মুখ টাকে বন্ধ রাখো,
আমি এত কষ্টে সব গুছিয়ে আনছি,আর তুমি কিনা সব শেষ করে দিচ্ছো।
কে বলেছিলো তোমাকে আদ্রিতার আব্বুর সামনে এসব বলতে?
তুমি জানোনা,আদ্রিতার আব্বু রাগের মাথায় ওরকম ডিসিশন নিয়েছেন।
বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে আদ্রিতার মাকে।
আসলে সে আজো আদ্রিতার মাকেই ভালবাসে।
শুধু একটা সন্তানের আশা,আর আমাদের কারসাজিতে তার মাথাটা এলোমেলো হয়ে গেছে।
দেখো মা,এত কষ্ট করে,কত কারসাজি করে তাকে বিয়ে করেছি।
প্রেগন্যান্সির নাটক করলাম।
বাচ্চা ন ষ্ট হবার নাটক করলাম।
যেখানে কিনা বাচ্চাই ছিলোনা পেটে।
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আদ্রিতার মাকে বাড়ী ছাড়া করলাম।
এখন আদ্রিতার সম্পত্তি ভাগ টুকুও দখল করতে ওর সাথে খাতির দিচ্ছি তাল মেলাচ্ছি,মিথ্যে মায়া মমতা দেখাচ্ছি।
এত কষ্ট করতেছি।
শেষে এসে তুমি সব কিছুতে পানি ঢেলে দিওনা প্লিজ।
কাজ হয়ে যেতে দাও।
তখন বাপ মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ী ছাড়া করে দিবো।
আর তখন শুধু হবে আমাদের রাজত্ব
এ কয়টা দিন একটু চুপ থাকো।
সহ্য করো।
যে যা বলুক হজম করো।
ভয়েজ ক্লিপ শুনে আব্বুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
আব্বু নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তার ২য় স্ত্রীর গালে ঠাস করে এক চ র বসিয়ে দেন।
আর বলেন এত বড় বে ঈ মান তুই।
আমার সাথে এরকম বিশ্বাস ঘাতকতা করলি?
আর আমি একটা সন্তানের আশায় কি না কি করে ফেলেছি।
তোকে আমি আজই ডি ভোর্স দিবো।
_আমারও আপনার সংসার করার কোন ইচ্ছে নেই।
সব দখল করতে পারলে আমিই ডি ভোর্স দিয়ে দিতাম।
আমার প্রেমিক আছে।
আব্বু তার গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বলেন,
নির্লজ্জ কোথাকার,তোদের আমি পু লিশে দিবো।
_বেঈ মান তো ওরা না তুমি।
যে কিনা আমার ভালবাসার কোন মূল্য দাওনি।
যেদিন আমাদের তাড়িয়ে দিলে সেদিন আমার আর আদ্রিতার কোন কথাই তুমি শোনোনি।
অথচ আমরা ওদের গোপন কথা শুনে ফেলেছিলাম বলেই ওরা নাটক সাজিয়েছিলো।
আর তুমি তাদের কথা বিশ্বাস করে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।
বেলা শেষে আমার হাত টা ছেড়ে দিলে।
অথচ আমি এটা জানার পরও তোমার হাত ছাড়িনি যে তুমি সন্তান জন্মদানে অক্ষম।
_মানে?কি বলছো তুমি?
_হ্যাঁ তোমার মনে আছে তুমি টেস্ট গুলো করেই অফিসের কাজে বাইরে চলে গিয়েছিলে?
ডাক্তার রিপোর্ট দেখে স্পষ্ট আমাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন আমার কোন সমস্যা নেই।
তুমি কোন দিন বাবা হতে পারবেনা।
কিন্তু আমি তোমাকে সেদিন কিছুই জানাইনি।
কারণ আমি চাইনি তুমি সারাজীবন আমার সামনে মাথা নিচু করে থাকো।
তাই সব নিজের উপর নিয়ে নিয়েছিলাম।
আর সেই তুমি কিনা এত বছর পর আমাকে এই ভাবে আঘাত দিলে।
আমার উপর সন্তান না হবার অপবাদ ছুড়ে দিলে।
_দেখো আমার ভুল হয়ে গেছে।
আমি তোমাকে আজো ভালবাসি।
কিন্তু একটা সন্তানের নেশা আমাকে পা গল করে দিয়েছে।
এই ডা ই নি আমাদের অফিসেই ছোট একটা পোস্টে জব করতো।
দিন রাত আমাকে বলতো,নিজের সন্তান না হলে কোন দাম নেই।
এত জায়গা সম্পদ দিয়ে কি হবে যদি নিজের সন্তানই না থাকে।
আমি আর রফিক ভাই একদিন কথা বলছিলাম,সেদিনই ও দূর থেকে শুনে নিয়েছিলো আদ্রিতা আমাদের পালিত সন্তান আমার যে আর কোন সন্তান নেই।
সেই থেকে ও আমার দিন রাত মাথা খেতো।
আমি বললাম,আমি সবই বুঝি কিন্তু এখন এই বয়সে কে আমাকে সন্তান দিবে?
কে আমাকে বিয়ে করবে?
সে আমাকে বল্লো সে আমাকে বিয়ে করবে।
সন্তান দিবে।
সেই সন্তানের লোভে আমি ওকে বিয়ে করি।
তোমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করি।
ওদের মিথ্যা সন্তানের নাটক বিশ্বাস করে তোমাকে বাসা থেকে বের করে দেই।
আমাকে তুমি মাফ করে দাও আদ্রিতা মা।
যেখানে আমিই ছিলাম অক্ষম।
সেখানে তুমি আমাকে সেটা বুঝতে দাওনি জানতে দাওনি আমি কষ্ট পাবো বলে,ছোট হবো বলে।
আর আমিই কিনা তোমাকে কষ্ট দিলাম।
ছোট করলাম।
আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য তারপরও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমার আর কিছু বলার নেই।
_কিছু ভুলের ক্ষমা এত সহজ হয়না আদ্রিতার বাবা।
আমি তোমায় ক্ষমা করতে পারবোনা।
_ফুফু তোমাদের ঝামেলা পড়ে মিটমাট করো,
এখন এই অনুদ্রিতাকে বাঁধতে হবে।
ও নিজেও বিরাট এক প্ল্যান করে এ বাসায় এসেছে।
এ কথা বলেই আদ্র ভাইয়া অনুদ্রিতার হাত টেনে ধরে।
_আরে আরে ছাড়ুন লাগছে আমার।
_আগে বলো তুমি কি প্ল্যান নিয়ে এ বাড়ীতে এসেছো?
আদ্রিতার জায়গা দখল করে এ বাড়ীর মালিক হবার স্বপ্ন দেখেছো না?
_ধুর কি সব বলছেন আপনি?
_কি সব বলছিনা?
আমি সেদিন তোমাদের কথা নিজ কানে শুনেছি তুমি ফোনে বলছিলে,
_আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
আপনি যেইভাবে বলেছেন।
আমি ঠিক সেই ভাবেই কাজ করছি।
আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে সফল হবোই ইনশাআল্লাহ।
কি তোমাদের উদ্দেশ্য শুনি?
আর বিগ প্ল্যানার টা কে?
যে তোমাকে বুদ্ধি দেয়?
যে তোমাকে প্ল্যান করে এ বাড়ীতে পাঠিয়েছে?
কে সে?
_আমি।
হ্যাঁ সেই ব্যক্তি টি আমি,
যার কথা আপনি অনুদ্রিতার কাছে জানতে চাচ্ছেন।
আমরা সবাই কথা শুনে ঘুরে তাকাই।
আমার তো মনে হচ্ছিলো আমি এই মুহূর্তে অ জ্ঞান হয়ে যাবো।
আমার ঠোঁট থেকে আস্তে করে জাস্ট একটা শব্দ বের হলো,
কল্প।
আদ্র ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো,
_কে আপনি?
_আমি কল্প।
_অনুদ্রিতার ববয়ফ্রেন্ড নাকি?দুজন প্ল্যান করে বাড়ীর দখল করতে চেয়েছিলেন নাকি?
_জ্বী না।
আমি আদ্রিতার..
_কি?
_কিছুনা।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো আপনি যাদের বেঁধে রেখেছেন তাদের হাত থেকে এই বাড়ী টাকে বাঁচানো।
আর সুখের সংসার টাকে জোড়া লাগানো।
আর তাই আমি অনুদ্রিতাকে সেই মোতাবেক এই বাসায় পাঠাই।
আর সেই অনুযায়ী কাজ করতে বলি।
_হ্যাঁ কল্প ভাইয়াই আমাকে সব শিখিয়ে পাঠিয়েছে এই বাসায়।
আমি যখন আমার বোন আদ্রিতাতে খুঁজতে এই বাসায় ঢুকবো ঠিক সেই মুহূর্তে ভাইয়া এসে আমার হাত টেনে ধরে,আর বলে আদ্রিতা প্লিজ ভুল বুঝোনা আমায়।
আমি আর কোন দিন কোন মেয়ের সাথে কথা বলবোনা।কোন মেয়ের হেল্প করবোনা।কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাবোনা।
তাছাড়া আমি মেয়েটাকে হেল্প করছিলাম জাস্ট তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।
আর কত দিন এভাবে দূরে থাকবে?
ব্লক করে রাখবে সব কিছু থেকে?
মেয়েটা আমার কিচ্ছুনা। কিচ্ছু হয় না আমার।
মেয়েটা আমার বন্ধুকে ভালবাসে।
আর আমার বন্ধু তাকে ইগ্নোর করছে।
তাই আমি মেয়েটার অনুরোধে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করি।
যাতে আমার বন্ধু দেখে জেলাস ফীল করে আর তার কাছে ফিরে যায়।
সেদিন রেস্টুরেন্টে তুমি শুধু আমাকে আর ওই মেয়েকে দেখেছো।আমি মেয়েটার হাত ধরে বসে ছিলাম তা তুমি দেখেছো।
কিন্তু একটু দূরে আমার বন্ধুও ছিলো,তা তুমি দেখোনি।
তুমি চলে আসার পর ওদের আমি মিলিয়ে দেই।
কিছু সময় চোখে যা দেখা যায়,তা সত্যি হয়না।
এর আড়ালেও কিছু লুকানো থাকে।
তোমাকে ফোন মেসেজ সব করার চেষ্টা করি,তুমি আমাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে রেখেছো।
আর আমি তোমার বাসায়ও আসতে চেয়েছিলাম,তোমার ভুল ভাঙাতে।
কিন্তু আসতে পারিনি।কারণ হঠাৎ খবর আসে গ্রামে আমার চাচা মারা গেছেন।
তাই মাকে নিয়ে আমার তখনই গ্রামে চলে যেতে হয়।
আজ ফিরেই তোমার কাছে এসেছি।
প্লিজ ভুল বুঝোনা আমায়।
আমি তোমাকে ভালবাসি আদ্রু।
ওই মেয়ে আর মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথেও আমি তোমায় কথা বলিয়ে দিবো পাক্কা প্রমিস।আর রাগ করে থেকোনা প্লিজ।
ওদের মিল করিয়ে দিয়ে আমি যদি কোন ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দাও।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
আমি বুঝতে পেরেছি,তোমার আব্বুর ২য় বিয়ের পর তোমার মনে ভয় ঢুকে গেছে।
অবিশ্বাস ঢুকে গেছে।
কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি তোমায় কোন দিন ঠকাবোনা।
ভাইয়া এক নিঃশ্বাসে একটার পর একটা বাক্য বলে যাচ্ছিলো।
আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিচ্ছিলোনা।
ভাইয়ার উদ্দেশ্য ছিলো যেভাবেই হোক আদ্রিতার ভুল ভাঙাতে হবে।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি বুঝলাম ভাইয়া আদ্রিতাকে ভেবে আমাকে এসব বলছে।
কারণ আদ্রিতা আর আমি দেখতে একই রকম।
তখন ভাইয়াকে আমি বললাম,ভাইয়া আমি আদ্রিতা নই অনুদ্রিতা।
ভাইয়া তো কোন ভাবেই আমার কথা বিশ্বাস করবেনা।
পরে আমি তাকে আমাদের সব কথা খুলে বলি।
তারপর তিনি আমার গালের তিল টার জন্য বিশ্বাস করেন আমি আসলেই অনুদ্রিতা।
কারণ আদ্রিতার গালে কোন তিল নেই।
তখনই ভাইয়ার ফোনে একটা কল আসে,
আমি জানিনা কে,কিন্তু সে ফোন করে বলে,
আদ্রিতা আর আদ্রিতার মাকে ওর বাবা বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
_হ্যাঁ। তখন অর্পা আমাকে ফোন করেছিলো।
আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড।
_হ্যাঁ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অর্পা।
ওকেই আমি সব মেসেজ করে জানিয়েছিলাম।
গ্রামে তোমাদের খুঁজতে যাবার সময়।আর এও বলেছিলাম তোমাদের খুঁজে তারপর মামার বাসায় যাবো আমরা।
তাছাড়া ওর সাথে আমি আমার সব কিছুই শেয়ার করি।
ও আমার সব কিছুই জানে।(আদ্রিতা)
_হ্যাঁ তারপর অর্পা আমাকে সব কিছু বিস্তারিত জানায়।
তোমার সৎ মায়ের ব্যাপারেও সব কিছু বলে।আর বলে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা।
তাই আমি অনুদ্রিতাকে প্ল্যান করে তুমি সেজে বাসার ভেতর প্রবেশ করতে বলি।
আর শিখিয়ে দেই,কিভাবে কি করতে হবে।
যাতে অনুদ্রিতা তাদের অন্তরে ঢুকে সব কিছু জেনে নিতে পারে।
কলে কৌশলে লুকিয়ে যেভাবেই হোক তাদের উদ্দেশ্যর প্রমাণ জোগাড় করে তোমার আব্বুকে জানাতে পারে।
তাছাড়া আমি তোমার আর আম্মুর খবরও নিচ্ছিলাম সব অর্পার কাছ থেকে।
অর্পাকে আমি বলেছিলামও কি কারণে তুমি আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে রেখেছো।আর ওকে এই বলেছিলাম ও যেন তোমাকে কিছু না জানায়।
কারণ তুমি আমার মুখ থেকে না শুনলে কখনোই বিশ্বাস করবেনা।
তোমাকে তো আমি চিনি।
তাই ভাবলাম এদিক টার একটা সুরাহা হোক,তারপর তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো।
সামনাসামনি না বললে তোমার ভুল ভাঙবেনা।
_হ্যাঁ কল্প ভাইয়াই আমাকে বলে আমি যেন তোমার সৎ মায়ের অন্তরে ঢুকে যাই তার সাথে খাতির দিয়ে।
আর এমন ভাব করি,যেন আমি তোমার আম্মুকে রাস্তায় একা ফেলে চলে এসেছি।
কারণ তাকে ছাড়তে পারবো আমি।
কিন্তু এই আরাম আয়েস না।
এই বাড়ী আর সম্পত্তি না।
যেদিন আমি বাসার গেইটে ঢুকলাম সেদিন তোমার আব্বুর এই ২য় স্ত্রী মানে আমি যাকে এখন আম্মু ডাকছি প্ল্যান মোতাবেক খাতির দিয়ে,
তিনিতো আমাকে পেয়ে খুশিতে বলতে লাগলেন,তুমি এসেছো মামণি?
আমি বললাম,হ্যাঁ আমি চলে এসেছি।
আজ থেকে আমি তোমার মেয়ে।
উনি তো আমার আপন মা না যে উনি চলে যাবেন বলে আমিও এই বাড়ী, সয় সম্পত্তি ছেড়ে চলে যাবো।
আপন মা হলেও একটা কথা ছিলো।
আমি এত আরাম আয়েসি জীবন ছেড়ে যেতে পারবোনা।
_হ্যাঁ মামণি কে বলেছে তোমাকে এত আর আয়েস ছেড়ে যেতে?তোমার বাড়ী ছেড়ে যেতে?তোমার আব্বু বললেন না তোমার যাওয়ার দরকার নেই।
এই বাড়ীর অর্ধেক তোমার নামে তোমার আব্বু লিখে দিয়েছেন।
তুমি আমার মেয়ে হয়ে থেকে যাও মামণি।
_হ্যাঁ আম্মু,আমি তোমার বুকেই ফিরে এসেছি।
এই বলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি।
তিনিও ভাবেন আমি আদ্রিতা।
আর আমি সব ভুলে তার কাছে চলে এসেছি।
কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি।
তাদের পর্দা ফাঁ স করার জন্যই যে আমি এ বাড়ীতে ঢুকেছি।
ও হ্যাঁ আমার কোন ফোন ছিলোনা।
কল্প ভাইয়া আমাকে একটা ফোনও দেন যাতে আমরা যোগাযোগ করতে পারি।
আর এই যে এই আদ্র,
উনার সাথে এই মহিলা আমাকে কথা বলতেই না করে দিয়েছেন।
তাই আমিও তাকে এড়িয়ে চলেছি।
কারণ আমি চাইনি উনার মনে কোন সন্দেহ ঢুকুক আমাকে নিয়ে।
আর প্রথম দিন যেদিন আদ্র এই বাসায় আসে সেদিন আমি ইচ্ছে করেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেই,গেইট আটকে দেই।
কারণ আমি আমার এই আম্মু ওরফে এই মহিলাকে বুঝাই যে ওই বাড়ীর কোন লোককেই আমি সহ্য করতে পারিনা।
আমার সাথে তার, কিংবা তার ফুফুর আর কোন সম্পর্ক নেই।
যাতে করে উনার মনের ভেতর বিশ্বাসের জায়গা গড়ে নিতে পারি আমি সহজেই।
এইতো আমার আর কল্প ভাইয়ার এই উদ্দেশ্যই ছিলো।
উনাদের ষড়যন্ত্র তোমার আব্বুর সামনে প্রকাশ করা।
আর তোমাদের বাসায় ফিরিয়ে আনা।
অবশেষে আমরা সাক্সেস তাইনা কল্প ভাইয়া?
_হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ।
তখনই পু লিশ এসে পড়েন,আব্বু ফোন করে তাদের জানিয়েছিলেন তাকে ইঞ্জেক*শন দিয়ে তার সাইন নিতে চেয়েছেন এরা।
পু লিশ আবার আব্বুর বন্ধু তাই তিনি শোনা মাত্রই দ্রুত চলে আসেন।
এবং এদের নিয়ে যান।
আদ্র ভাইয়াকে আমি বলি,এবার তো আমার বোনের হাত টা ছাড়ো।ভাইয়া হাত ছাড়ে।
অনুদ্রিতা দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের দুজনেরই চোখ ভিজে যায়।
আম্মু আব্বু দুজন আমাদের জড়িয়ে ধরেন।
আব্বু বলেন,আজ থেকে আমার একটা মেয়ে নয়,দুটো মেয়ে।
অনুদ্রিতা আরো জোরে কান্না করতে থাকে।
আম্মু ওর চোখের জল মুছিয়ে দেন।
আব্বু আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু দূরে সরে যান।
আব্বু আম্মুকে মানানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
ক্ষমা চাইতে থাকেন।
সে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত।
আদ্র ভাইয়া অনুদ্রিতার কাছে ক্ষমা চায়,আর বলে,
_এই নাগিন,
আমি সরি।
আমার ভুল হয়ে গেছে,আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
ক্ষমা করে দাও আমায়।
_আমিও সরি,আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি সেই জন্য।
_উম্ম ক্ষমা করতে পারি কিছু শর্তে।
_কি শর্ত?
_আমাকে সারাজীবন নাগিন বলে ডাকার অধিকার দিতে হবে।
আর আমি যখন অফিস থেকে ফিরবো দ্রুত গেইট খুলে দিতে হবে।
ঠুস ঠাস মুখের উপর গেইট লাগিয়ে দিতে পারবেনা কখনো।
_উম্ম ঠিক আছে।কিন্তু রাতে যদি বাসায় দেরি করে ফিরেন,তাহলে গেইট বন্ধই থাকবে।
মনে থাকে যেন।
_আচ্ছা আমি আমি রাজি।
_তাহলে আমিও রাজি।
ওইদিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়।
আমি দৌড়ে ছাদে চলে যাই।
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি।
কল্পও আমার পিছু পিছু ছাদে চলে আসে।
একাই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
আমি ওর কাছে গিয়ে বলি,
_একা একাই ভিজবে?
আমাকে সাথে নিবে না?
আমার সাথে ভিজবেনা?
কল্প আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আর বলে,আমি আমৃ ত্যু তোমার সাথে ভিজতে চাই,আমৃ ত্যু।
ভালবাসি।
আমি কল্পর বুকে মুখ লুকিয়ে বলি,
#বেলা_শেষে আমি তোমাকেই চাই।
শুধু তোমাকে।
ভালবাসি।
(সমাপ্ত)