#বেলা_শেষে
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব
_আদ্রিতা,এ কি করে সম্ভব?
তোর আব্বু তো কোন দিন বাবা হতে পারবেন না।
_মানেহ?কি বলছো তুমি এসব আম্মু?
_আমি ঠিকই বলছিরে মা।
সন্তান না হবার অক্ষমতা আমার নয়,তোর আব্বুর।
আর তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি।
আমাদের যখন সন্তান হচ্ছিলোনা তখন আমরা ডাক্তার দেখাই।
ডাক্তার আমাদের অনেক গুলো টেস্ট দেন।
তোর আব্বু আর আমি সব গুলো টেস্ট করি।
তোর আব্বু টেস্ট গুলো করেই তার অফিসের কাজে কিছু দিনের জন্য বাইরে
চলে যান।
আমাদের রিপোর্ট আসে।
এবং আমার সব রিপোর্ট ভালো আসে।
কিন্তু তোর আব্বুর রিপোর্ট দেখে ডাক্তার আমাকে বলেন তিনি কোন দিন বাবা হতে পারবেন না।
এ কথা শুনে আমি সেদিন কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই।
কিন্তু তোর আব্বুকে কোন দিন বলিনি আসল সত্যি টা।
কারণ আমি চাইনি তোর আব্বু সারাজীবন ভেতরে ভেতরে গিলটি ফীল করুক।
নিজেকে ছোট মনে করুক।
নিজেকে দোষী মনে করুক।
তাই আমি ডাক্তারকেও অনুরোধ করি,তিনি যেন কোন দিন তোর আব্বুকে এ কথা না বলেন।
অফিসের কাজ শেষ করে যখন তোর আব্বু বাসায় ফিরেন।
আমি তাকে বলি,ডাক্তার বলেছেন আমার একটু সমস্যা আছে।
তোমার কোন সমস্যা নেই।
সব কিছু আল্লাহর হাতে।তুমি মন খারাপ করোনা প্লিজ।
তোর আব্বু কথা টা শুনে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।
একদিন আমার সাথে ভালো মত কথাও বলেন নি।
হয়তো কষ্ট পেয়েছিলেন ভীষণ।
পরে একদিন আমি তাকে বলি,চলো আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নেই।
ওকে সন্তানের আদরে বড় করি।
আল্লাহ যখন দেন দিবেন আমাদের বাচ্চা।
তোর আব্বুও রাজি হন।
তারপর তোকে আমরা নিয়ে আসি।
এত বছরে কোন দিন তোর আব্বু সন্তান নিয়ে আমাকে কোন কটু কথা বলেন নি।
তোকেও নিজের সন্তানের মতই আদর যত্নে বড় করেছেন।
কিন্তু হঠাৎ কেন যে ২য় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন এত বছর পর,তা আমি বুঝতে পারলাম না।
আর এখন এই বাচ্চা কিভাবে?
আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনারে মা।
_আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছিনা আম্মু।
হচ্ছে কি এসব।
আম্মু আর আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
হঠাৎ দেখি কলিং বেলের আওয়াজ।গেইট খুলে দেখি একজন মহিলা।
জিজ্ঞেস করলাম কাকে চায়,
উত্তর দিলো,এই বাসার মালিক তাকে কাজের জন্য ডেকেছেন।
আমি মাত্রই বলতে যাবো,আমরা তো কোন কাজের মানুষ খুঁজছি না
তখনই আব্বু এসে বললেন,আদ্রিতা উনাকে আসতে দাও।
আজ থেকে উনি এ বাড়ীতে কাজ করবেন,তোমার ছোট আম্মুর দেখাশোনা করবেন।
আর যাবার আগে বলে গেলেন,
এখন থেকে তোমার ছোট আম্মুর খাবার যেন তার রুমে দিয়ে আসা হয়।
তুমি পারলে তুমি দিয়ে এসো।
নয়তো উনাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে বলো তোমার আম্মুকে।
আব্বুর চোখে মুখে আনন্দের হাসি।
আমি আম্মুর মুখের দিকে তাকালাম।
আম্মু চলে গেলেন।
আব্বু এখন তার ২য় স্ত্রীকে বিছানা থেকেই নামতে দেন না।
কাপড়চোপড় ধোয়া,তাদের রুম ঝাড়ু এসব কাজের মহিলাটাই করেন।
আমার আর আমার জন্মদাত্রী আর জমজ বোনকে খুঁজতে যাওয়া হলোনা।
আব্বু অফিসে যাবার আগে আমাকে বলে যান,
সবাই যেন উনার স্ত্রীর খেয়াল রাখি।
রাতে আম্মু আমাকে বলেন,
_আদ্রিতা,
_জ্বী আম্মু
_আমি কি বাচ্চার বিষয় টা নিয়ে তোর আব্বুর সাথে খোলামেলা কথা বলবো?
_আমি কি করে বলবো বলো,তোমাদের স্বামী স্ত্রীর বিষয় এটা।
যা ভালো মনে হয় করো।
_কিন্তু কি বলবো বল,সে কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?
পরে না আমাকে ভুল বুঝে।
মনে করবে তার খুশিতে হিংসে করছি।
_তাহলে বাদ দাও।
কিছু বলতে হবেনা।
_তা না হয় বাদ দিলাম,
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।
তোর বাবা যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষমই হন,তাহলে এই সন্তান আসলো কোথা থেকে?
নাকি তোর আব্বুর সমস্যা সমাধান হয়ে গেলো?
না না।এ সমস্যা তো সমাধান হবার নয়।
ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিলেন সব।
_কি বলবো বুঝতে পারছিনা আম্মু।
আচ্ছা তুই ঘুমায় পড়।
আমি ভেবে দেখি কি করা যায়।
_কিচ্ছু করতে হবেনা আম্মু।
থাকতে দাও তাদের,তাদের মত।
_আচ্ছা তাহলে।
আব্বুর ২য় স্ত্রী এখন তার রুম থেকে বেরই হন না।
সারাদিন শুয়ে বসেই থাকেন।টিভি দেখেন,মোবাইল টিপেন এসবই তার কাজ এখন।
যদিও আগেও তিনি আম্মুকে কোন কাজেই হেল্প করেন নি।
আম্মু একাই নিজের হাতে সামলেছেন সব।
আজ তার মা আর বোন এসেছেন আমাদের বাসায়।
আম্মু তাদের দেখে ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস,মুরগীর মাংস বের করে রোস্ট পোলাও এসব রান্না করলেন।
আমাদের সাথে তারা ভালো মত কথাও বলেন না।
তাদের খাবারও আমাদের এখন রুমে দিতে হয়।
দেখতে দেখতে আরো কিছু দিন চলে যায়।
আব্বুর ২য় স্ত্রী তার মা বোনকে নিয়ে ভালোই সময় কাটাচ্ছেন।
কত হাসাহাসি রঙ তামাশা।
আব্বু অফিস থেকে ফেরার সময় ব্যাগ ভর্তি করে বিভিন্ন রকম খাবার, ফলমূল নিয়ে আসেন,তার ২য় স্ত্রীর জন্য।
সবাই বসে বসে গল্প করেন,
খান,আড্ডা দেন।
দেখতে দেখতে আরো কিছু দিন কেটে যায়।
মেহমানরা এখনো আমাদের বাড়ীতেই আছেন।
আজ কাজের মহিলা আসেন নি।
তাই তাদের দুপুরের খাবার আমি আর আম্মু তাদের রুমে দিতে যাই।
কারণ আব্বুর ২য় স্ত্রী যে প্রেগন্যান্ট।
আর মেহমান দের দিয়ে খাবার নেয়ানো আম্মু বললেন কেমন নাকি দেখা যায়।
তাই আমরা দুজনই তাদের খাবার দিতে গেলাম।
ও হ্যাঁ বলা তো হয়নি,
আম্মু এর মাঝে একদিন আব্বুকে ডেকে বলেছিলেন যে,
তোমার স্ত্রী যে মা হচ্ছে ডাক্তার দেখিয়েছো?
বা কোন টেস্ট করিয়েছো?
আব্বু তখন রেগে যান আম্মুকে যা তা বলে চলে যান।
আব্বু আম্মুকে বলেন,
ওহ তুমি আমাকে সন্তান দিতে পারোনি বলে আর কেউ দিতে পারবেনা বলে মনে হয় বুঝি তোমার?
নাকি তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আমি বাবা হচ্ছি?
আম্মু আর এরপর কিছুই বলেন নি।
আব্বুর ২য় স্ত্রী আর তার মা বোনেরা কি বিষয় নিয়ে যেন কথা বলছেন।
আমি আর আম্মু সবে মাত্র তাদের রুমে ঢুকবো,আর শুনতে পাই
_আর কত দিন এইভাবে প্রেগন্যান্ট এর নাটক করবো বলোতো?
এই লোকের এত কেয়ার তো আমার সহ্যই হচ্ছেনা।
বেশি বেশি সব।
_আরে আর কয়টা দিন অপেক্ষা কর।
ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ১৫/২০ হাজার করে নিতে পারবি এখন প্রতি মাসে।
বলবি এই টেস্ট দিয়েছে সেই টেস্ট দিয়েছে।
চেকাপ করতে হবে বাচ্চার জন্য।
বাচ্চার কথা শুনলেই সে কোন প্রশ্নই আর তোকে করবেনা।
আর বলবি,
আমার ছেলে/মেয়ের জন্য এখন থেকেই আমি স্বর্ণ কিনে রাখতে চাই।
স্বর্ণের যে দাম।দিন দিন তো বাড়ছে।
তুমি আমাকে এখনই কিনে দাও।
দাম কম থাকতে।
ছেলে হলে ছেলের জন্য, আবার ছেলের বউ এর জন্যও তো লাগবে।
আবার মেয়ে হলে মেয়ের জন্য।
মেয়ের বিয়েতেও তো দেয়া লাগবে।
তাছাড়া আমি তোমায় এত বছর পর সন্তানের মুখ দেখাবো,আমিও তো কিছু পাই।
এসব বলে ৮/১০ ভরি কিনে নে আগে।
এখন যা বলবি সে তাই শুনবে সন্তান হবার খুশিতে।
_তা তো বুঝলাম,কিন্তু কত দিন এই অভিনয় করবো?এক মাস দুই মাস ৫ মাস।
এরপর পেট যখন বড় না হবে।
তখন তাকে কি বলবো?
আর সে যদি ডাক্তার দেখাতে চায় তখন?
_আমি কি মরে গেছি?তোর মা বেঁচে থাকতে বুদ্ধির অভাব পড়বে?
বলবি মার সাথে গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে।
তুমি অফিসে ব্যস্ত ছিলে তাই।
আর তাছাড়া আমরা তো আর চলে যাচ্ছিনা।
যখন যা বলতে হবে করতে হবে শিখিয়ে দিবো।
আপাতত স্বর্ণ গুলো আদায় কর,এরপর পরের স্টেপ।
_চলে যাচ্ছিনা মানে?
কত দিন থাকবে তোমরা?
_কেন তাড়িয়ে দিতে চাস নাকি?
_না না তা কেন হবে?
এরমধ্যে তার বোনের চোখ পড়ে যায় আমাদের দিকে।
_আ আ আপু।
এবার আব্বুর ২য় স্ত্রী আর আর তার মা আমাদের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মত কেঁপে উঠলেন।
আমরা কোন রকম খাবার গুলো রেখেই চলে আসলাম।
আর সিদ্ধান্ত নিলাম আব্বুকে ফোন করে এখনই বাসায় আসতে বলবো আর সব কিছু আব্বুকে বলে দিবো।
ফোন টা হাতে নিয়ে আব্বুর নাম্বার ট্রাই করছি,
ওয়েটিং লিখা দেখাচ্ছে।
যে কয় বার ট্রাই করলাম ওয়েটিং।
২০ মিনিটের মাথায় দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ।
আমি দরজা খুলতেই দেখি আব্বু,
কোন কিছু বলতে যাবো আর সেই মুহূর্তে আব্বু ফোন কানে নিয়েই দৌড়ে দুতলায় তার ২য় স্ত্রীর রুমে যান।
আব্বু যাবার সাথে সাথে হঠাৎ করেই তাদের রুম থেকে সজোরে কান্নার আওয়াজ আসতে শুরু করে।
আম্মু আর আমি ভয় পেয়ে যাই।
আমরাও দৌড়ে তাদের রুমে যাই।
গিয়ে দেখি একটু আগেই যেই খাবার আমি আর আম্মু তাদের দিয়ে গিয়েছি,সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।
আর আব্বুর ২য় স্ত্রী আর তার মা বোন চিৎকার করে কান্না করছেন।
আম্মু কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে আব্বুর ২য় স্ত্রীর কাছে যেতেই আব্বু আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সজোরে বলে উঠেন সরোঅঅঅ।
আমি তাড়াতাড়ি করে আম্মুকে গিয়ে হাত ধরে তুলি।
আর আব্বুকে বলি,
এ কি করলেন আপনি?
আম্মুকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন কেন?
এবার আব্বু চেঁচিয়ে বলেন,
কেন ফেলে দিলাম?
ওকে যে মেরে ফেলছিনা এটাই তো বেশি।
_আজব, কি হয়েছে বলবেন তো।
_কি হয়েছে না?
_তোমার আম্মু কি করেছে জানোনা তুমি না?
_কি করেছি আমি বলো?
ওর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
_কি করেছো?
আমার সন্তানকে মে রে ফেলে বলছো কি করেছো?
_তোমার সন্তানকে মে রে ফেলেছি মানে?
_দেখেছো বাবা,কি অভিনয় টাই না করছে।
মনে হচ্ছে কিছুই জানেনা।
_তুমি হিং সে করে আমার স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো।
আর আমার বাচ্চা টা সঙ্গে সঙ্গে ন ষ্ট হয়ে গেছে।
আমার বাচ্চা টাকে মে রে ফেলেছো তুমি।
না হয় বেচারি খাবার আনতে যায়নি
তাই বলে খাবার দিতে এসে ঝগড়া করবে কথা শোনাবে আর হিংসেয় জ্বলে পুড়ে আমার স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার সন্তান টাকে মেরে ফেলবে?
_এসব কি বলছো তুমি?
আমি এসব কেন করতে যাবো?
তাছাড়া কিসের সন্তান?
কোন সন্তানই ছিলোনা ওর পেটে।
ও মিথ্যা বলেছে।
ও তোমাকে ঠকিয়েছে।
এগুলো সব ওর আর ওর মা বোনের প্ল্যান।
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আব্বু সবার সামনে আম্মুর গালে ঠাস করে এক থা প্পড় বসিয়ে দেন।
আর বলেন,এই মুহূর্তে তুমি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও।
তোমার মুখ আমি আর দেখতে চাইনা।
আম্মুর দু চোখ বেয়ে জল পড়ছে।
আমি কিছু বলতে যাবো,আব্বু আমাকে কোন কথাই বলতে দেন না।
আমার শেষ কথা এটাই।
বেড়িয়ে যাও আমার বাসা থেকে।
এক্ষুণি,এই মুহূর্তে।
আম্মু আর কোন কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে যান।
_আব্বু,আপনি সব কিছু না জেনে না শুনে এমন অন্যায় করতে পারেন না।
আম্মু চলে গেলে আম্মুর সাথে আমিও চলে যাবো।
_তোমার যেতে হবেনা।
তোমাকে যেতে বলিনি।কারণ এ বাসা যেমন আমার, তেমনি তোমারও।
আমি এ বাড়ীর অর্ধেক তোমার নামে লিখে দিয়েছি।
তবে তুমি তোমার আম্মুকে রাখতে পারবেনা।
এটা আমার সাফ কথা।
_যে বাড়ীতে আমার আম্মুর জায়গা নেই।
সেই বাড়ীতে আমিও থাকবোনা।
আপনি থাকেন আপনার বাড়ী আর আপনার স্ত্রীকে নিয়ে।
আমি আম্মুকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
তবে একটা কথা বলে যাই,
আপনি এক দিন সব হারাবেন।
সব।
অনেক আফসোস করবেন।
অনেক।
আব্বুর ২য় স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেলো।
আব্বু তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
আর আমি আম্মুর হাত ধরে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
আম্মুকে বললাম,কান্না করোনা।
আমিতো আছি।
_ওই ঠকবাজ মহিলার জন্য তোর আব্বু আমাকে এই ভাবে সবার সামনে অপমান করলো?
এত বছর এই মানুষ টার সাথে আমি সংসার করলাম?
আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না।
আম্মু বললেন, চল তোর মামার বাসায় যাই।
ওই ভাই ছাড়া এই দুনিয়ায় আর তো কেউ নেই আমার।
আর কার কাছে যাবো আমি বল?
আমি আম্মুকে বললাম, নাহ।
চলো আগে আমরা আমার জন্মদাত্রী মা আর জমজ বোনের কাছে যাই।
তুমি তো চেনো।
আর ঠিকানাও আছে।
আগে ওখানে যাই,সবার সাথে দেখা করে।
তারপর মামার বাসায় এক বারে চলে যাবোনে।
দেখোনা যাই যাই করে তো আর যাওয়াই হচ্ছেনা।
আম্মু বললেন,আচ্ছা চল তাহলে।
আমি আর আম্মু রওনা দিলাম আমার জন্মদাত্রী আর জমজ বোনের কাছে যাবার উদ্দেশ্যে।
সব থেকে বেশি এক্সাইটেড লাগছে আমার কার্বন কপিকে দেখতে পাবো বলে।
আম্মু বলেছেন, আমার বোন টা সেইম টু সেইম আমার মত দেখতে।
শুধু ওর গালে একটা তিল আছে।
যেটা আমার নেই।
ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ও নিজেও নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতে কয়েক ঘন্টা জার্নি শেষ করে আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্য স্থলে।
আম্মু জিজ্ঞেস কয়েক জনকে করতে করতে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন সেই বাড়ীতে।
যেখান থেকে আমাকে আম্মুর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু বাসার সামনে যেতেই দেখি ঘরে তালা।
আশেপাশের দুই একজন মানুষ আমাকে দেখে তো জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,কিরে চলে এলি কেন?
তুই না ঢাকায় গেলি?
আমি তাদের কথা কিছুই বুঝলাম না।
আম্মু তাদের সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,এই বাসার লোক কই?
একটা মেয়ে আর মেয়ের মা না থাকতো এখানে?
_হ্যাঁ থাকতো তো,ওই যে আপনার পেছনেই তো অনুদ্রিতা।
আর ওর মা তো কয়েক মাস আগে মা রা গেছে।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা,আমাকে এত ক্ষণ তারা আমার জমজ বোন মনে করেছেন।
আর আমার জন্মদাত্রী মা না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
_আম্মু আমার হাত ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,মন খারাপ করিস না।
আমি অশ্রুসিক্ত চোখে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আম্মু এবার মহিলা গুলো কে সব খুলে বললেন,
যে আমি আদ্রিতা আর আমার জমজ বোন হচ্ছে অনুদ্রিতা।
তারা এ কথা শুনে অবাক এবং খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,ও আমাদের আদ্রিতা?
আসলে উনারাও জানেন ছোট বেলায় আমাকে যে দত্তক দেয়া হয়েছিলো।
উনারা আমাকে আর অনুদ্রিতা দুজনকেই চিনতেন।
তারপর তারা আম্মুকে বললেন,
অনুদ্রিতা তো ঢাকায় গিয়েছে আদ্রিতাকে খুঁজতে।
ওর মা, মা রা যাবার আগে বলে গিয়েছেন ওকে আদ্রিতার কথা।
ওর তো দুনিয়াতে আদ্রিতা ছাড়া আর কেউ নেই এখন। তাই ও আদ্রিতাকে খুঁজতে আজই ঢাকায় গেছে।
ওর মা ওকে আপনাদের বাসার ঠিকানাও দিয়ে গেছে।
আম্মু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,এখন কি করবো?
রাত ও তো হয়ে আসছে।
তোকে নিয়ে রাতের বেলা রওনা দেয়াও ঠিক হবেনা।
মহিলা দুটো বললেন,
আজকের রাত টা তাহলে থেকে যান।
সকালে না হয় চলে যাইয়েন।
আমি তাদের বললাম,
অনুদ্রিতার মোবাইল নাম্বার টা আছে?
দেয়া যাবে?
তারা বললেন,অনুদ্রিতার কোন মোবাইল নেই।
আমি আর আম্মু বুঝতেছিনা কি করবো।
চলে যাবো,নাকি আজকের রাত টা থেকে যাবো।
থেকে গেলে অনুদ্রিতা যদি বাসায় গিয়ে পৌঁছায় তাহলে থাকবে কই?
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার ফোনে কল বেজে উঠে,
আমি রিসিভ করতেই আমার মামাতো ভাই ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে বলতে থাকে,
তুই আমাকে চিনিস না ভালো কথা।
তুই তোর সৎ মার কোলে বসে বসে আঙ্গুর খাবি খা।
সবার সামনে আমাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিয়ে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছিস তাতেও আমার কোন সমস্যা নেই।
আমি শুধু জানতে চাই আমার ফুফু কই সেটা আমাকে বল।
এর পর আর তোদের বাসায় পা ও রাখবোনা আমি।
না তোর চেহারা দেখবো,আর না তোর বাপের।
আমাকে শুধু বল আমার ফুফু কইইইই।
আমার মাথা কোন কাজ করছেনা ভাইয়া এসব আবোল তাবোল কি বলছে আমায়।
আমি আবার কখন ভাইয়াকে বাসা থেকে অপমান করে বের করে দিলাম?
ভাইয়া কি দিনের বেলা ঘুমিয়ে কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছে নাকি?
চলবে?