#বেনিফিট_অফ_লাভ -অন্তিম পর্ব
Tahrim Muntahana
বিয়েটা হয়ে গেল! অল্প কিছুটা সময়ের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেল। শিতাবের ঘরে চুপটি করে বসে আছে সিলভিয়া। ছেলেটা এত তাড়াতাড়ি কি করে সব ব্যবস্থা করলো তাই ভাবছে। জ্ঞান ফেরার পর কাকে যেন ফোন দিল, তার আধা ঘন্টা পরই কাজি নিয়ে হাজির। সিলভিয়া কে সাজতেও দিল না, তার এক কথা তার বউয়ের সাজতে হবে না। বিয়ে হওয়ার পরপরই চলে এলো হক বাড়িতে। এরপর আর এই ছেলের পাত্তা নেই। শিতাব এলো আরো আধা ঘন্টা পর। এসেই সিলভিয়ার পাশে বসে হাসলো। কিছুটা গদগদ ভাব। সিলভিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। বললো,
-“এমন করছিস কেন?”
-“ছিহ! বর কে কেউ তুই বলে? তুমি করে বলো।”
-“পারবো না। অভ্যেস হয়ে গেছে।”
-“পারতে হবে, বাহিরে এভাবে তুই করে ডাকলে লোকে নির্ঘাত মনে করবে ছোট ভাই! অসম্ভব, এ আমি মেনে নিতে পারবো না!”
মুখে হাত দিয়ে এমন ভান করলো সিলভিয়া না হেসে পারলো না। হেসেই বললো,
-“আচ্ছা, তুমি করেই বলবো।”
শিতাব এবার আরেকটু এগিয়ে গেল। সিলভিয়ার গাঁ ঘেঁষে বসে বললো,
-“কবে থেকে মন দিয়েছো? হাম হাম?”
-“দিয়েছি কোনো এক সময়। আমি চেয়েছিলাম তোর না তোমার পড়াশোনা শেষ হোক, চাকরিতে জয়েন করো, তারপর যদি মত থাকে এগোবো! এর জন্যই এতদিন বিয়ে গুলো ক্যান্সেল করে এসেছি। শামউল তোমার ভাই জেনেই বোন কে বিয়ে দিয়েছি। তোমার মায়ের সাথে ইচ্ছে করেই কিছুটা রুড ব্যবহার করেছি। আমি দেখতে চেয়েছি সিনিয়র মেয়ের জন্য একটা ছেলে কত কি করতে পারে।”
-“তোমার এসব বলতে লজ্জা করছে না?”
সিলভিয়া উঠে দাঁড়ালো। তা দেখে শিতাবও উঠে পড়লো। সিলভিয়া কি করতে চাইছে দেখতে চায়। সিলভিয়া সরাসরি শিতাবের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে হাঁটা ধরলো বাহিরের দিক। যেতে যেতে বললো,
-“লজ্জা আমার বরাবরই কম।”
শিতাব চোখ খানিক বড় করে হেসে উঠলো। এতক্ষণে বুঝে গেছে এই মেয়ে মোটেও আগের মতো নেই। এ যেন অন্য সিলভিয়া। সিলভিয়া গেল শাশুড়ির রুমে। বেনিফিট খাজা শুয়ে ছিলেন। সিলভিয়া সরাসরি ঘরে ঢুকে বললো,
-“এই বেনিফিট গাঁজা উঠো উঠো! সারাদিন শুধু শুয়ে থাকা, না?”
বেনিফিট খাজা উঠে বসেন। সিলভিয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেন। হাসে সিলভিয়াও। বিছানায় বসতেই জড়িয়ে ধরেন বেনিফিট খাজা। বলেন,
-“অবশেষে ইউ সেলিবেলি মাই সন ওয়াইফ! হোয়াট, মাই সন ভেরি গুড বলেছিলাম নো?”
-“তুমি কিন্তু পাক্কা অভিনেত্রী! এতটা দিন কিভাবে অভিনয় করে গেলে?”
-“ইউ হোয়াট কম অভিনেত্রী? মাই সন কে লাভ করেও শুধু মাত্র এক্সাম করার জন্য এতদিন স্টপ ছিলা।”
-“যেদিন প্রস্তাব নিয়ে গেলে, সেদিন যদি তোমার ছেলের কীর্তি না জানাতাম তাহলে এত কিছু হতো? না তুমি আমার প্ল্যানে সাথ দিতে, না আজকের বিয়ে টা হতো? আমি আসলে সিদ্ধান্ত হীন তাই ভোগছিলাম। ওর থেকে বড় আমি, লোকে অনেক কথায় বলবে! শেষমেষ না ওর মন ঘুরে যায়। তাই তো বিয়েতে ওমন নাটক করলাম। কিন্তু তোমার ছেলে তোমাকেও অসম্মান হতে দেয়নি, আমার কথাতেও বিরোধীতা করে নি। এরপর চললো অভিনয়। তোমারও পরীক্ষা হলো তোমার ছেলে দুটো আসলেই ভালো, তোমাকে খুব ভালোবাসে, আবার খুব ভালো মানুষ ও, বউকেও ভালোবাসে। সব ঠিকঠাক, শুধু ডেজিই একটু উল্টে দিল। ওকে জানানো উচিত ছিল, বলো? নাহলে সেদিন পুলিশ নিয়ে আসার অভিনয় টা করে তোমার ছেলেকে সিনেমাটিক প্ল্যানের শাস্তি দেওয়া লাগতো না। এক্ষেত্রে কিন্তু আবার ভালো হয়েছে। তোমার ছেলে যেভাবে পড়ালেখা বাদ দিয়ে পিছে ঘুরঘুর করতো, ডেজি অজান্তেই আমাদের উপকার করেছে। নাহলে তোমার গর্দভ ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পায়?”
কথা শেষ করেই সিলভিয়া বেনিফিট খাজার দিকে তাকালো। বেনিফিট খাজা হাসছেন। হাসতে হাসতে বললেন,
-“ইউ ভেরি সুইট গার্ল। আই লাভ ইউ সেলিবেলি। মাই সন দের শিক্ষা দিয়ে আই খুব হ্যাপি। নাউ ইউ গো, মাই সন ওয়েট করছে ইউর জন্য। গো, দেখ আবার হার্টের অসুখে না পড়ে যায় ওয়াইফ হীনা।”
-“হোয়াই, মিসেস গাঁজা? ইউর নো ভেরি ইচ্ছে ছিল, বাসর ঘরে আড়ি পাতার। কাম কাম!”
ডেজিকে দেখতে গিয়ে পরিচয় হয় দুজনের। সিলভিয়ার খুব ভালো লেগে যায়। তাই সব কথা শেয়ার করে বেনিফিট খাজার সাথে। বেনিফিট খাজারও অনেক প্রিয় হয়ে উঠে সিলভিয়া। এরপরেই দুজন প্ল্যান করে। আজ তারা সফল ও। মন কারোরই ভাঙে নি, বরং আনন্দে আটখানা সবাই। বন্ধুর মতো মিশেছে দুজন। একসময় মজা করে আড়ি পাতার কথা বললেও ভুলে গিয়েছিলেন বেনিফিট খাজা। সিলভিয়ার মুখে শুনে লজ্জা পেয়ে গেলেন। বললেন,
-“ইউ ব্যাড গার্ল! গো গো, লজ্জা নেই ইউর!”
সিলভিয়া হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে বললো,
-“চিন্তা করবেন না শাশুমা, পরের বছর এক হালি নাতি নাতনির মুখ দেখতে পারবেন।”
চোখ বড় বড় হয়ে এলো বেনিফিট খাজার। কি বলে এই মেয়ে? বিস্ময় কন্ঠে বললেন,
-“এক হালি?”
-“অবশ্যই শাশুমা, দরকার পড়লে জমজ ফল একসাথে দুটো খাবো! নাম রাখবো বেনি, ফিট, খাঁ, জা! আপনি হলেন শ্রেষ্ঠ শাশুড়ি, আপনাকে জিইয়ে রাখবো হাজার বছর। জয় হোক বেনিফিট গাঁজা, আই মিন খাজার!”
হেলতে দুলতে নিজের রুমে চলে গেল সিলভিয়া। বেনিফিট খাজা শুয়ে পড়লেন। মাথা ঘুরছে তার! এই মেয়ে বিপজ্জনক! এতক্ষণ আড়ি পেতে সব কথায় শুনছিল ডেজি। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সে শাশুড়ির ঘরে ঢুকে। কোমরে হাত গুঁজে দাঁড়াতেই বেনিফিট খাজা ভয় পেয়ে যান কিছুটা। পরক্ষণে যখন বুঝতে পারেন ডেজি সব শুনেছে। তখন দুজনার শুরু হয় ঝগড়া। সিলভিয়া নিজ ঘর থেকে ঝগড়ার আওয়াজ কিছুটা শুনতে পায়। তবে সে বের হয় না , করুক দুইজনে ঝগড়া।
শিতাব তখন শুয়ে শুয়ে ফোনে ভিডিও দেখছিল। সিলভিয়া সরাসরি শিতাবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। কিছুটা থমকালেও জাপটে ধরে শিতাব। এই মেয়েটার জন্য কত সংগ্রাম সে করেছে। কত গুলো চড়’ই না খেতে হয়েছে, কত কি করেছে; সেই মেয়ে এখন তার বুকে! ভাবতেই মন শরীর কেমন রোমাঞ্চিত হচ্ছে। সিলভিয়া ফিসফিস করে বলে,
-“আজ বাসর রাত!”
শিতাব মুচকি হাসে। বলে,
-“তো?”
-“তো মানে?”
-“তো মানে তো? বাসর রাত তো কি হয়েছে?”
রাগ হয় সিলভিয়ার। ছেলেটা তাকে ইচ্ছাকৃত রাগিয়ে দিচ্ছে। উঠে আসতে চাইলেও পারে। শিতাব হাসতে হাসতে বলে,
-“রাগে না বউ! আমার সিলসিলা রানী তোমাকে আজ ছাড়ছি না!”
-“ছাড়তে কে বলেছে?”
-“এই তুমি এত লাগামহীন কবে থেকে হলে?”
-“আমি আগে থেকেই এমন! আমার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করিয়েন!”
-“রিয়েলি?”
-“ইয়াহ! আজেবাজে কথা বাদ দিন! চলুন বেলকনিতে যাই!”
দুজনেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। শিতাব একটু পর পর সিলভিয়া কে দেখছে। সিলভিয়া হয়তো একটু বুঝতে পারলো। শিতাবের গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমাকে কি এখন ভালোবাসার সুবিধা বুঝাতে হবে?”
ভ্রু কুঁচকালো শিতাব,
-“বেনিফিট অফ লাভ? বুঝাও না! তুমি টিচার হলে আমি পৃথিবীর সবথেকে বাধ্যগত ছাত্র হবো!”
সিলভিয়া মুগ্ধ চোখে দেখলো শিতাব কে। ছেলে টা কি সুন্দর করে কথা বলে। অনুভূতি ব্যক্ত করে। বললো,
-“এটাই তো বেনিফিট অফ লাভ! যে ভালোবাসা অবাধ্য এক বখাটে কে বাধ্য করতে পারে, এটাই তো বেনিফিট! আরেকটা বেনিফিট আছে, দেখবে? না না, অনুভব করবে?”
শিতাব কিছু বলতে পারলো না! পূর্বেই অধরে অধর স্পর্শ হলো, দুজন ভালোবাসার মানুষ ডুবে গেল একে অপরের মাঝে! অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, সূচনা হলো নতুন অধ্যায়ের। চলতে থাকুক এমন সুবিধা, বয়ে যাক ভিন্ন ধারা। সুখে থাকুক ভালোবাসা, ভালোবাসা কে নিয়ে!
সমাপ্ত
!