#বেনিফিট_অফ_লাভ -১২
Tahrim Muntahana
পড়ন্ত বিকেলের সূচনা। সূর্যের হালকা রশ্মি হক বাড়ির ছাদে লুটোপুটি খাচ্ছে। শিতাব সবে গেইট পেরিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। দারোয়ানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। মুখ বিশাল হা। অদ্ভুত দেখতের দারোয়ান নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারলো না তার পূর্বেই বেনিফিট খাজা ছোট ছেলেকে রিকশা চালাতে দেখে মাথা ঘুরিয়ে ঠাস করে পড়ে গেলেন জমিনে। মোটা সোটা শরীর মাটি স্পর্শ করা মাত্রই মনে হলো প্রকান্ড এক ভূমিকম্প হয়ে গেল। কেঁপে উঠলো ডেজি। শাশুড়ি, বউমা বাগানে বসে গল্প করছিল।ডেজি ইচ্ছে করেই খুব ভালো ভালো কথা বলছিল, বেনিফিট খাজা ক্রমশই গদগদ হয়ে আরেকটু ফুলে যাচ্ছিলেন। মুখ্যম সময়ে শিতাবের কথাটাই বলতে যাচ্ছিল ডেজি, এর মধ্যে শিতাব রিকশা নিয়ে প্রবেশ করে। যা দেখে এতক্ষণের গদগদ ভাব কাটিয়ে বেনিফিট খাজা বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান। ডেজি শাশুড়ির পাশে বসে, ছুটে আসে শিতাবও! মায়ের মাথা কোলে রেখে ডাকতে শুরু করে। কাজের লোক পানি নিয়ে আসে। ছিটিয়ে দেয় মুখে। বেনিফিট খাজা পিটপিট করে চোখ খুলেন। শিতাব কে দেখেই আঁতকে উঠেন। বলেন,
-“মাই সন নাহয় ইউ ফেইল করেছো! তাই বলে ইউ রিকশা চালাবে? ইউ ম্যাড হয়ে গেছ?”
শিতাব কিছু বলতে পারলো না। তার পূর্বেই বেনিফিট খাজা পুনরায় বলে উঠলেন,
-*নাউ আই মাই সিসটার কে কি বলবো? বলেছিলাম মাই সন পাশ করলে হার ডটার কে নিয়ে আসবো ওয়াইফ করে!”
-“এই মিসেস গাঁজা , কথা না শুনে নাটক শুরু করছেন? শিতাব তো ফেইল কর…”
ডেজি আর কিছু বলতে পারলো না। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে শিতাব। ডেজি উম উম করতে থাকে, এদিকে শিতাব মা কে বলে,
-“মম আমি খুব সরি, একটুর জন্য পাশ করতে পারি নি। আমি তো চেষ্টা করেছি বলো? তুমি কি রাগ করেছো আমার উপর?”
মলিন কন্ঠস্বর। বেনিফিট খাজা ছেলের মুখ আঁজলে তুলে নিলেন। বললেন,
-“মাই সন ইউর মম বিগ ব্যাড নয়! মাই সন ফেইল করেছে তো হোয়াট হয়েছে? ইউ চিন্তা করো নো!”
-“মম, একজন ফেইল করা ছেলের কাছে তোমার মেয়েকে বিয়ে দিতে? দিতে না তো! তাহলে খালা কেন দিবে? মেয়েটার সাথে অন্যায় করা হবে! আবার তুমি যদি বলতে যাও তোমার ছেলে ফেইল করেছে, তোমার ওই কুটনি বোন ঠিকই হাসবে। তোমার মানসম্মান সব যাবে! তাই তুমি তাদের মুখের উপর না করে দিবে, বলবে ‘মাই সন ওয়ান গার্ল কে লাভ করে এন্ড আই মাই সনের লাভ কে মেনে নিয়েছি। বিকজ মাই কাছে মাই সন দের চাওয়ায় আগে’।”
ঠিক মায়ের মতোই বললো শিতাব। বেনিফিট খাজা হা করে তাকিয়ে আছেন। ডেজি শিতাবের এমন করার মানে না বুঝে চুপ করেই আছে। সে বললে আবার ঘেঁটে যেতে পারে। বেনিফিট খাজা ভাবলেন কিছুক্ষণ, তারপর গদগদ হয়ে বললেন,
-“মাই সন, ইউর এত বুদ্ধি। আই নাউ ই ক্যান্সেল করে দিচ্ছি!”
বেনিফিট খাজার খুব তাড়া। সাথে সাথে ফোন দিয়ে না করে দিলেন। তারপর এক গাল হাসলেন। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে বললেন,
-“বাট মাই সন, ইউর আন্ট যখন জানতে চাইবে গার্ল টি হো তখন হোয়াট বলবো?”
-“এত ভাবার কি আছে? আমার মতো ফেল্টু ছেলে কে বিয়ে করবে মম? কিন্তু তুমি এক কাজ করতে পারো! এমন কোনো মেয়ে খুজো যে চাকরি করে! আমাকে সহ পালতে পারবে!”
ছেলের বুদ্ধির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেলেন বেনিফিট খাজা। মাটি থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন। চাকরি করা মেয়ে খুঁজতে হবে। বেনিফিট খাজা যাওয়া মাত্রই শিতাব ডেজির পা ধরে ফেললো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,
-“তুমি বলেছিলে ভাবী রিকশা চালানোও কর্ম! আমি রিকশায় কিনে নিয়ে এসেছি। চাকরির ইন্টারভিউ দেরী আছে, আমি দু তিন মাস রিকশা চালিয়েই বউ কে পালবো। প্রায় কাজ আমি করে দিয়েছি, বিয়ে ভেঙেছি, চাকরিওয়ালা মেয়ের কথা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছি, এখন তুমি শুধু সিলসিলা রানীর কথাটা মমের মাথায় ঢুকিয়ে দাও!”
ডেজি কি বলবে বুঝতে পারলো না। শিতাবের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-“মিথ্যে বললে কেন তুমি? মা পরে যখন জানতে পারবে?”
-“আরে বাবা আগে বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর পুরো দুনিয়া গোল্লায় যাক। আমার কিচ্ছু আসে যায় না।”
ডেজি বুঝলো এ পাগল কে বুঝিয়ে লাভ নেই। সে চললো শাশুড়ির কাছে। বুক ধুকপুক করছে, গলা মনে হয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ভয় লাগছে, কিভাবে নেবে কে জানে! বেনিফিট খাজা তখন কথা বলছিলেন। ডেজি এসে উঁকি দিতেই তিনি জলদি করে ফোন রেখে হাসি মুখে অনুমতি দেন। ডেজি গিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে, বেনিফিট খাজা বুঝতে পেরে বলেন,
-“এই ডেজি বেজি ইউ সামথিং বলবা?”
-“আসলে মা, আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। আপনি তো চাকরিওয়ালা মেয়ে খুঁজছিলেন। শিতাব আমাকে মনে করিয়ে দিল, আমার বোন সিলভিয়া রেড কে ওর ভালোলাগে। না মানে আপনাকে বলতে সাহস পাচ্ছিল না!”
মাথা নত করে কথা টা বলেই ডেজি একপলক বেনিফিট খাজার দিকে তাকালো। পিলে চমকে উঠলো সে। ভীষণ রেগে গেছেন বেনিফিট খাজা। চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে তার। তিনি গর্জে বলে উঠেন,
-“ওই বেয়াদব গার্ল কে আই মেনে নিবো নো! ইউ বেজি মাই রুম থেকে গেট আউট হও। আই মাই সিস্টার ডটারের সাথেই মাই সনের বিয়ে দিবো। এবং হোয়াট টুডেই!
দরজার আড়াল থেকে সবটাই শুনলো শিতাব। যা ভয় পেয়েছিল তাই হলো। বুকের ভেতর শেষের কথাটা যেন ধড়াম করে লাগলো। ভালোবাসা কে হারানোর ভয় ক্রমশও তাকে পাগল করে তুলছে। ডেজি ঘর থেকে বের হলো না, জেদ ধরে বসেই রইলো। ছেলেটাকে সে কথা দিয়েছিল। মুখ খুলে কিছু বলবে তার পূর্বেই শিতাব ঘরে ঢুকে মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়ে। লাল চোখ দেখে আঁতকে উঠেন বেনিফিট খাজা। মায়ের হাত জোড়া নিজ হাতের মুঠোয় পুরে শিতাব বলে,
-“আই লাভ সিলভিয়া রেড, মম!”
চমকালেন বেনিফিট খাজা, সেই সাথে রাগ টাও বেড়ে গেল। মনে পড়ে গেল সিলভিয়ার করা অপমান। সেসব তুলে ধরার সুযোগ শিতাব দিল না। বললো,
-“ওই মেয়েটার পেছনে আমি গত তিনবছর ধরে ঘুরছি মম! সেই দ্বিতীয় বর্ষ থেকে। যখন তখন ছুটে যেতাম! হুট করে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছিলাম কেন, জিজ্ঞেস করতে না? তার কারণ ওই মেয়েটি। চরকির মতো ঘুরা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।তবুও মেয়েটা আমাকে পাত্তা দেয় নি। এইযে আবার আমাকে ভার্সিটি যেতে দেখছো, সবটাই ওই মেয়ের জন্যই। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া, বখাটে জীবন বাদ দিয়ে ভালো পথে ফিরে আসা, একদিনে দুই তিন প্যাকেট সিগারেট শেষ করা আমি এই কয়েক মাসে মাত্র তিন বার সিগারেট খেয়েছি মম; ওই মেয়েটার জন্য। আমি ফেইল করিনি মম, ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি! চাকরির আবেদন ও করেছি! একমাত্র ওই মেয়েটার জন্য মম! ভাবী বলেছিল মানুষ হতে হবে, চাকরি করতে হবে তবেই তোমাকে মানাবে, সিলভিয়া আমার হবে! আমি সবটাই করেছি মম! এমনকি আজ ভাবী এই বাড়িতে ওই মেয়েটার জন্যই। ওই মেয়েটা একটু এমনই মম। কাট কাট কথা বলে, অন্যায় সহ্য করতে পারে না, মুখে লাগাম নেই; কিন্তু ওর মতো ভালো মেয়ে আর হয় না মম! মেনে নাও না মম! আমি সিলভিয়া কে বড্ড বেশী ভালোবাসি মম, মরে যাবো ওকে ছাড়া! ওই লবিন ছেলেটা কবে থেকে সিলভিয়ার পিছে পড়ে আছে, বাড়িতেও বলবে; আর সিলভিয়ার মা ঠিকি রাজী হবে। আমাকে এনে দাও না, মম! আমার সিলভিয়া কেই চাই। এনে দাও না মম!”
পুরুষ মানুষের কাঁদতে হয় না, কিন্তু ছেলেটা কাঁদছে। গড়িয়ে পড়ছে জল! বেনিফিট খাজা স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে আছেন ছেলের পানে। তার ছোট ছেলেটা যে তিনটে বছর একটা মেয়ে কে এতটা ভালো বেসে আসছে সে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি! বেনিফিট খাজা ছেলেকে বিছানায় বসালেন। তাকালেন ডেজির দিকে। মেয়েটা নিজেও বিস্মিত! তিনি মুচকি হেসে বললেন,
-“তোমার বাড়িতে জানাও, আমরা আসছি!”
শিতাব ফট করে মায়ের দিকে তাকালো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার মম তার কথা মেনে নিল। অপছন্দের মেয়ে টাকে নিজের ঘরেই তুলবে! বেনিফিট খাজা ছেলের অবাক মুখশ্রী দেখে হাসলেন। গালে আদুরে হাত বুলিয়ে বললেন,
-“মায়েদের কাছে সন্তানের সুখের চেয়ে আর কিছু বড় হয় না! মেয়েটা একটু ওমন, তবে খারাপ না! আমার ছেলের পছন্দ খারাপ হতেই পারে না!”
শিতাব জড়িয়ে ধরলো বেনিফিট খাজা কে। ডেজি আর এক মুহূর্তও দেরী করলো না। নিজের ঘরে ছুটে এসে ফোন দিল মা কে। সিমা শিকদার কথা শোনা মাত্রই নাকচ করে দিলেন। ডেজি রেগেই বললো,
-“মা, আমার শশুড় বাড়ির লোক যাবে তুমি না করছো?”
-“না করবো না? তোরা তো ঘুরতে আসবি না। আমি কিছুতেই ওই বাড়িতে আরেক মেয়ে দিবো না!”
-“কথা বাড়িও না মম। আমরা আসছি, তুমি আপুকে বাড়িতে থাকতে বলবে। পরের কথা পরে হবে।”
ডেজি সাথে সাথে ফোন টা কেটে দিল। না হলে কথায় কথা বাড়বে। ঠিক করলো বাড়ি গিয়ে ভালো করে বুঝাবে। খানিক চিন্তাও হচ্ছে তার। সিলভিয়া ঠিক কিভাবে নিবে, সেটাই বুঝতে পারছে না। এরপর আর ভাবলো না। সব চিন্তা বাদ দিয়ে সে মনের সুখে সাজতে লাগলো। খুশিতে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা!
…..
প্রায় আধাঘণ্টা হয়ে এলো হক বাড়ির সদস্য রা লস্কর বাড়িতে এসেছে। এখন পর্যন্ত সিলভিয়ার খোঁজ নেই। সিমা শিকদার যতটা পেরেছেন আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন। ফোন করার পরপরই যে এসে পড়বে তিনি ভাবেন নি। বেনিফিট খাজা আশপাশ দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
-“ওই গার্ল টা হোয়ার?”
শিতাবের মন টাও আঁকুবাঁকু করছিল। ডেজি ফট করে উত্তর দিতে পারলো না। সিমা শিকদার আমতা আমতা করে বললেন,
-“এই তো চলেই আসবে, আপনারা খান না!”
বলতে বলতে সত্যিই সিলভিয়া চলে এলো। এবং কি শিতাবদের দেখে তার কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া হলো না। সরাসরি নিজের ঘরে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে আবার নেমে এলো নিচে। ভুমিকা হীন সে বসলো সোফায়। সিমা শিকদার চোখ রাঙালেও পাত্তা দিল না সিলভিয়া। নিজের মতো বললো,
-“কি কি যৌতুক হিসেবে চাইবেন মিসেস গাঁজা?”
ভড়কালেন বেনিফিট খাজা। সাথে সাথেই উত্তর দিতে পারলেন না। মায়ের হাতের উপর হাত রাখলো শিতাব। মুচকি হেসে বললো,
-“যৌতুক হিসেবে নাহয় তুমি তোমার স্বপ্ন টা আমাকে দিও, আমি যত্ন করে লালন করবো!”
সিলভিয়া শান্ত, দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। নিজেও মুচকি হেসে বললো,
-“মিসেস খাজা, আপনি জানেন আমি আপনার ছেলের থেকে দু বছরের বড়?”
এবারও উত্তর টা শিতাবই দিয়ে দিল,
-“ভালোবাসা বিচার শুধু হৃদয় দিয়ে হয়, বয়স দিয়ে নয়!”
-“মানুষ নানান কথা বলবে, বুড়ি বলবে, বলবে বোনের দেবর কে পটিয়ে বউ হয়েছে।”
-“মানুষ তো পাগল কে পাগল বলেই, তাতে কি পাগল ক্ষেপে যায়? নাকি পাগল মন খারাপ করে? সে তার মতোই অযহত হাসে, লাফায়, ঘুরে বেড়ায়! তাহলে আমি ভালোবাসার পাগল কেন ছন্দ ভুলে মানুষের কথায় কান দিবো, মন খারাপ করবো? আমি আমার মতো ভালোবাসা নিয়ে হাসবো, নাচবো, ঘুরে বেড়াবো, শুধুই ভালোবাসবো!”
-“বেকার ছেলের কাছে কোনো বাবা-মা মেয়ে দিবে?”
-“উম হাম, ভুল! বেকার নয়, ভাবী বলেছিল রিকশা চালানো টাও কর্ম! আমি নাহয় চাকরি না হওয়া পর্যন্ত ওই পেশাটাকেই বেছে নিলাম। হালাল উপার্জনে বউ কে খাওয়াবো।”
-“একজন পুলিশের এসপি রিকশা চালক কে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিবে ভাবা বোকামো নয়?”
-“সেটা সম্পূর্ণই পুলিশের এসপির ভাবনা। আমার কাছে রিকশা চালক, কুলি, দোকানের কর্মচারী বা চাকরিজীবী সবাই সমান! নিজের শক্তি, বুদ্ধি খাটিয়েই তো রোজগার করছে! চাকরিজীবী হলো শিক্ষিত চাকর, রিকশাচালক হলো অশিক্ষিত চাকর; উভয়ই কারোর না কারোর উপর ডিপেন্ড করে। এক্ষেত্রে রিকশাচালক ই মনে হয় এগিয়ে। স্বাধীন মতো সে রোজগার করবে, যেদিন ইচ্ছে হবে রিকশা নিয়ে বের হবে, যেদিন ইচ্ছে হবে না বের হবে না! আমার মতো শিক্ষিত চালক ও হয়তো আছে!
সিলভিয়া একপলক শিতাব কে দেখে উঠে দাঁড়ালো। হন হন করে চলে গেল উপরে। শিতাব মায়ের দিকে করুণ চোখে তাকালো। মেয়েটা হ্যাঁ, না কিছুই বলে গেল না। রাগ খানিক ডেজির ও হলো। সেও পিছু নিল বোনের। সিমা শিকদার এবার খুশিতে গদগদ! এতক্ষণ না না করছিলেন, শিতাবের কথায় পটে গিয়ে রাজী হয়ে গেছেন। প্রার্থনা করছেন মেয়েও যেন রাজী হয়! সিলভিয়ার ঘরে গিয়েই ডেজি কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
-“হ্যাঁ না কিছুই বললে না আপু!”
সিলভিয়া বোনের দিকে তাকিয়ে আলমারির দিক ছুটে গেল। কি যেন খুঁজতে খুঁজতে গম্ভীর স্বরে বললো,
-“দশমিনিট পর শিতাব কে ছাদে পাঠাবি। একা! উঁকি ঝুঁকি মারা আমার একদম পছন্দ নয়!”
বোনের ভরাট কন্ঠস্বর শুনে পাল্টা প্রশ্ন করার সাহস হলো না। নিচে নেমে এলো সে। টেনশনে এবার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আগেভাগে না জানানোর জন্য যদি শিতাব কে বকে? শশুড় বাড়িতে তার মুখ থাকবে না! আল্লাহ আল্লাহ করে নিচে নেমে এলো!
…..
ঠিক দশ মিনিট পরই শিতাব ছাদের দিকে এলো। যত এগোচ্ছে বুকের ধুকধুকানি টা তত বাড়ছে, শরীর মৃদু কাঁপছে তার। খানিক ঘামছেও সে। এইবার যদি না মত করে সিলভিয়া আর জীবনে পাওয়া হবে না শিতাবের। অপমানে বেনিফিট খাজা হয়তো আজই তার বোনের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। ছাদের দরজা টা খোলা। শিতাব তবুও একটু আওয়াজ করলো। সিলভিয়া শুনতে পেয়ে বললো,
-“আয়!”
শিতাব এগিয়ে গেল। রেলিং ধরে নিচের দিক ঝুঁকে আছে সিলভিয়া। পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তিনশন আশি খান চুমু পাওনা আছি! দেনাদার কি পাওনাদার কে সুযোগ দিবে?”
সিলভিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে মুখোমুখি দাঁড়ালো শিতাবের। শিতাব কিছু বলার পূর্বেই স্বভাব বশত ঠাস করে লাগিয়ে দিল চড়! আপনাআপনি গালে হাত চলে গেল শিতাবের। এবারও ঠোঁট উল্টে বললো,
-“আবার চড়! একশত একানব্বই চড়! দুটো চুমু বেড়ে গেল!”
শেষ হওয়া মাত্রই আরো দুটো চড়! শিতাব আহম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যা দেখে সিলভিয়ার রাগ টাও বেড়ে গেল। ঠাস ঠাস করে আরো দুটো চড় মেরে অন্যদিকে তাকালো সে! গাল লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। তবুও শিতাবের চোখ মুখে রাগ, ব্যথার আভাস নেই। সে বুঝার চেষ্টা করছে, আসলে সিলভিয়া কেন তাকে মারছে! কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছে না। হুট করেই সিলভিয়া বললো,
-“সিলভিয়া রেড একটি ফুলের নাম হলেও, সিলভিয়ার আরেকটি অর্থ আছে! বন, জঙ্গল! আর শিতাব যাবী অর্থ বনের দ্রুত হরিণ! কাকতালীয় ব্যাপার না? দুটো নামের অর্থ কেমন জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে! বনের দ্রুত হরিণ যেমন বন কে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে, বনের এপাশ, ওপাশ ছুটোছুটি কর; তেমনি শিতাব যাবী নামক জুনিয়র ছেলেটা সিলভিয়া রেডের মনে কি করে আঁকড়ে রইলো বুঝতেই পারলাম না! মন থেকে তা মস্তিষ্কেও ছুটে এলো! এখন শিতাব যাবী সিলভিয়া রেডের সর্বত্রই বিচরণ করে!”
সিলভিয়া কথা শেষ করা মাত্রই শিতাবের লাল হয়ে আসা গাল দুটো যত্ন নিয়ে ছুঁয়ে দিল। বিস্মিত, স্তব্দ শিতাব চোখ বড় বড় করে সামনের যুবতী কে দেখছে। সিলভিয়া এবার আরেকটু কাছে এলো। ফিসফিস করে বললো,
-“যে ছেলেটা সিলভিয়া রেডের সবর্ত্র বিচরণ করে সে কেন গুনে রাখা চুমুতে সন্তুষ্ট হবে? ভালোবাসা তো অগণিত! তাহলে চড় হোক বা চুমু তা কেন নির্দিষ্ট থাকবে?”
শিতাব আর নিতে পারলো না। কাঠখোট্টা, গম্ভীর সিলভিয়া রেড কে নতুন রূপে দেখে হৃদযন্ত্র স্পন্দন নিতে ভুলে গেছে। এই সিলভিয়ার মুখে ভালোবাসার কথা যেন পার”মাণবিক বো”মার মতো মনে হচ্ছে। যার বিস্ফো”রণে তার হৃদয় থমকে গেছে। বুকে হাত চেপে ধরলো শিতাব। আকস্মিক রূপ টা না মানতে পেরেই লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে। আহম্মক হয়ে গেল সিলভিয়া! কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝলো না। পরক্ষণেই শিতাবের বুকে চেপে ধরা হাতটার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। এ হাসি যেন থামতে চায় না, আনন্দের বহিঃপ্রকাশ! প্রাপ্তির খুশি!
চলবে…?