বৃষ্টি ভেজা দিন | রোমান্টিক ছোট গল্প

0
13

গল্প: বৃষ্টি ভেজা দিন

তানিয়া আর অয়ন একই অফিসে কাজ করত। অয়ন ছিল শান্ত, সংযত প্রকৃতির। আর তানিয়া ছিল প্রাণোচ্ছল, সব সময় হাসিখুশি। অফিসের সবার মধ্যেই তানিয়া ছিল বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে অয়ন নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত, কারো সঙ্গে বেশি মিশত না।

একদিন বিকেলে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। অফিস শেষ হওয়ার পর সবাই ছাতা নিয়ে বের হয়ে গেল, কিন্তু তানিয়ার ছাতা ছিল না। সে অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির থেমে যাওয়ার অপেক্ষা করছিল।

অয়ন হঠাৎ দেখল তানিয়া একা দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“তুমি কি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছো?”
তানিয়া একটু হাসল, “হ্যাঁ, ছাতা আনতে ভুলে গেছি। তোমার ছাতা আছে?”
অয়ন বলল, “আছে। চল, একসঙ্গে বের হই।”

তানিয়া একটু দ্বিধায় পড়লেও অয়নের সঙ্গে ছাতা শেয়ার করে রাস্তায় নামল। সেই দিন প্রথমবার তানিয়া অনুভব করল, অয়ন আসলে অনেক ভালো মানুষ। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তারা অনেক কথা বলল। অয়ন তার পরিবারের গল্প বলল, তানিয়া বলল তার শৈশবের স্মৃতি।

বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল, আর তানিয়ার মিষ্টি হাসি অয়নের মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। সেই দিনই অয়ন বুঝল, তার মন তানিয়ার জন্য কেমন জানি অন্যরকম অনুভব করছে।

পরের দিন অফিসে তানিয়া অয়নকে বলল,
“কালকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি না থাকলে তো ভিজে একাকার হয়ে যেতাম।”
অয়ন লজ্জায় মৃদু হেসে বলল,
“তেমন কিছু না।”

এরপর থেকে তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। প্রায়ই লাঞ্চ ব্রেকে তারা একসঙ্গে বসে কথা বলত। তানিয়া হাসিখুশি মেয়ে হলেও, তার জীবনে অনেক কষ্ট ছিল। তার মা মারা গেছেন ছোটবেলায়, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এই গল্পগুলো অয়নের সঙ্গে শেয়ার করার সময় তানিয়ার চোখে জল চলে আসত। অয়ন তার পাশে বসে শান্তভাবে তাকে সান্ত্বনা দিত।

একদিন তানিয়া হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
“অয়ন, তুমি এত চুপচাপ কেন? তোমার কি কখনো কারো সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে?”
অয়ন বলল,
“আমার জীবনেও খুব বেশি রঙ নেই। তবে তোমার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়, জীবনে রঙ যোগ হচ্ছে।”

তানিয়া একটু অবাক হলো, কিন্তু কিছু বলল না।

কয়েক মাস কেটে গেল। তানিয়া বুঝতে পারছিল, অয়ন তার প্রতি আলাদা কিছু অনুভব করে। তবে সে নিজে থেকে কিছু বলছিল না। একদিন তানিয়া সাহস করে বলল,
“অয়ন, তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে?”
অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“তানিয়া, তুমি আমার জীবনে এমন একটা জায়গা নিয়েছ, যেটা আমি আগে কখনো অনুভব করিনি। তোমার হাসি, তোমার কথা, সবকিছু আমার খুব প্রিয়। আমি হয়তো তোমাকে ভালোবাসি।”

তানিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তুমি জানো, আমার জীবনে অনেক জটিলতা। তুমি কি সত্যি এই ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত?”
অয়ন দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“তোমার পাশে থাকতে হলে আমি সবকিছু মেনে নিতে রাজি।”

তানিয়ার চোখে জল এল, তবে সেটা আনন্দের। সেই দিন তারা দুজন একসঙ্গে হাঁটল, যেমন বৃষ্টি ভেজা দিনটায় হাঁটছিল। তবে এবার তাদের হাঁটার পথে ছিল ভালোবাসার ছায়া।

শেষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে