#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#পর্ব_৮_এবং_শেষ
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
রাত একটা পয়তাল্লিশ, ঘুম ভেঙ্গে যায় নেহার। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখে ঘরের ডিম লাইট নেভানো।
আরে কি ব্যাপার আমি তো ঘুমানোর সময় লাইট জালিয়েই শুয়েছিলাম, তাহলে কি হলো।
নেহার অন্ধকারে ফোবিয়া আছে, তাই সে ডেকে ওঠে ভাইয়া, বাবাই, মাম্মা কেউকি আছো প্লিজ একটা ক্যান্ডেল দিয়ে যাও না,
কিন্তু নেহার ডাকে কেউ সারা দেয় না। নেহা ভয়ে ভয়ে নেহা এক পা একপা করে বাইরের দিকে এগিয়ে যায়। পুরো বাড়ি নিকশ কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে। নেহা ভিষন ভয়ে যখন ডইং রুমের মাঝে এসে পৌছায় তখন এক সাথে পুরো বাড়ির লাইট জলে উঠে আর সবাই এক সাথে বলে ওঠে হ্যাপি বার্থ ডে নেহা।
নেহা ভয়ে চোখ খিচে রেখেছে। আলোর তৃব্রতা কমার পর সবাইকে এক সাথে উইশ করতে দেখে নেহা অনেক খুশি হয়, আবার রাগও করে।
নেহা তাকিয়ে দেখে বাবা, মা, বড় চাচ্চু ছোট চাচ্চু, মুগ্ধ, আরিয়ান, ইশা ইরা, নিদ্র, এমন কি আখিও ডইং রুমে রয়েছে।
নেহা মনে মনে অনেক খুশি হলেও রাগদেখানোোর জন্য বলে, তোমরা সবাই খুব খারাপ। আমি যে অন্ধকারে ভয় পাই তোমরা কি সেটা জানতে না তাহলে কেনো এতো ভয় পাইয়ে দিলে।
তখন সবাই বলে তাহলে সারপ্রাইজ দিতাম কিভাবে।
বারোটা বাজার সাথে সাথেই নেহার প্রিয় ফ্লেবারের চকলেট আর স্টবেরি কেক কাটা হয়। নেহাও আঠারো বছরের তরুনিতে পরিনতি লাভ করে।
সবাই অনেক আনন্দ করে।
দেরটার দিকে বড় রা সবাই রুমে চলে গেলে বাকিরা নিদ্র কে বলে আজকের দিনে নেহা কে নিদ্রর প্রপোজ করতে হবে।
নিদ্র ফ্লাওয়ার ভাস থেকে একটা টকটকে লাল গোলাপ নিয়ে নেহার সামনে হাটু গেড়ে বসে চোখ বন্ধ করে গোলাপটা নেহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
আমি সিনামার নাইক নাইকাদের মতো তোমাকে ভালোবাসি হয়তো বলতে পারবো না, কিন্তুু ওদের মতো আমাদের মাঝে তৃতীয় কাউকে কখনো ঠাইয়ো দেবো না, যেইদিন তুমি এই ধরার বুকে প্রথম এলে সেই দিন আমি এতটাই আনন্দিত হয়েছিলাম হযতো তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না। সবার প্রথমে তোমায় কোলে নিয়ে আমার ফুপি কে বলেছিলাম এই পরিটা আমার,এর পর তুমি আমি ধিরে ধিরে বড় হই, কিন্তু তোমাকে আর মুখ ফুটে বলা হয়না ভালোবাসি, ক্যারিয়ারের কারনে ছুটে যাই সুদুর আমেরিকা, সে খানে গিয়ে তোমার পাগলামি গুলো খুব মিস করেছি।
আমি জানি তুমি বিরক্ত হচ্ছো কিন্তু আমার এই বিরক্তি গুলোকে মেনে নিয়ে হবে কি আমার পথ চলার সঙ্গি। আমার কাচা চুল পেকে বৃদ্ধ হওয়ার পযন্ত কি তুমি আমার ছায়া হবে। যার কাছে দিন শেষে খুজে পাবো আমার আশ্রয়।
চারদিক থেকে সকলে হস্র ধ্বনি করছে নিদ্র কে বাহ্বা দিচ্ছে। আর নেহাএখনো মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
নেহার কাছে সব যেনো কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে, হয়তো ঘুম ভাংলেই সব শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে নেহাকে কিছু বলতে না দেখে নিদ্র বলে কিরে কোন জগতে হারালি নে ফুলটা ধর। আমার পা তো এখনি ব্যাথা করতেছে।
নিদ্রর এহেন কথায় নেহা ঝটপট ফুলটা নিয়ে মুখ ভেংচি কাটে আর সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে।
নেহাকে সবাই অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিষ গিফ্ট করে, আখি গিফ্ট করে কিছু ফুলের গাছ, নোমান অনেক গুলো আর্টের কাগজ।
নিদ্র চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
নবার দেয়া দেষ হলে নিদ্র বলে রুমে আয়, অনেক রাত হয়েছে।
সবাই যার যার মতো রুমে চলে যায়।
নেহা রুমে গিয়ে দেখে নিদ্র উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে আছে।
কি ব্যাপার উনি আমার রুমে কেন!
ওই আপনি আমার রুমে কি করেন, ভুলে ভালে আমার রুমে ডুকে পড়ছেন নাকি।।
নেহার কথার মাঝেই নিদ্র গলায় কিছু একটা পড়িয়ে দেয়, নেহা তো অবাক।
ডেসিং টেবিলে আয়নায় তাকিয়ে দেখে খুব সুন্দর লাভ সেপের একটা লকেট। যেটা সেই দিন সুপার মলে দেখেছিলো।
নেহা অনেক খুশি হয়।
কি রে পছন্দ হয়েছে?
হুমম খুউব, এটা সেইদিন সুপার মলে দেখেছিলাম।
তাহলে তো ভালোই হলো। শোন এটা সব সময় গলায় পড়ে থাকবি। এটা যতখন পড়ে থাকবি আমি বুঝবো ততখন তুই আমার কাছে আছিস।
এখন গুমিয়ে পর, কাল কলেজে আমি নামিয়ে দিবো।
কলেজ ছুটির পর নেহা দাড়িয়ে আছে, মিরাজ দাড়াতে বলেছে।
হাপাতে হাপাতে মিরাজ এসে বলে সরি সরি নেহা,আসতে রেট হয়ে গেলো চলো ওই পার্কে গিয়ে বসে।
হুম চলেন।
পার্কে গিয়ে মিরাজ বলে বাদাম খাবে?
থাকলে মন্দ হতো না। আপনি না আমায় কি বলবেন।
দারাও বাদাম নিয়ে আসি তার পরে বলছি।।
নেহা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে মিরাজ চলে যায়।
অনেক সময় ধরে বসে আছে নেহা।কিন্তু মিরাজের আসার কোনো খবর নেই। বিরক্ত হয়ে নেহা রাস্তার কাছে আসলে একটা কালো গাড়ি এসে নেহার সামনে কয়েক জন নেমে মুখে রুমাল চেপে ধরে সেন্স লেস করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে কোথাও চলে যায়।
নেহাকে গাড়িতে উঠিয়ে একজন বলে,, এতো সময় লাগে আসতে। বাপরে কি মেয়ে।
হুম চুপ কর এটা নিদ্রের মহারানী।
একটা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে নেহা। এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার, অপর দিকে নুর জাহান মঞ্জিলের প্রত্যেকটা মানুষের মুখে চিন্তার ছাপ। রাত প্রায় সাতটা বাজে এখনো নেহার কোনো খোজ পাওয়া যায় নি।
নিদ্র, নোমান, সহ বাড়ির সব ছেলে মানুষি যে যেখানে পারে খোজ নিচ্ছে। পুলিশ কেউ ইনফর্ম করা হয়েছে।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে একটার রুমের মাঝে াবিষ্কার করে নেহা।
ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে গেছে।
কে আছো, আমি কোথায়।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নেহা, এমন সময় নিজের সামনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে সামনে তাকিয়ে মিরাজ কে দেখে বরে আপনি, আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন।আমি বাসায় যাবো।
মিরাজ বাকা হেসে বলে কিসের বাসা, তোমাকে সহ আরো নিরানব্বই টা মেয়েকে মুম্বাই পাঠানো হবে।
তোমার জন্য আমি আমি অগ্রীম টাকা নিয়েছি, আর তুমি বলছো বাসায় যাবে।
মিরাজের কথা শুনে নেহার রাগ ওঠে যায়,আর ভয়ও পায়।
আপনার তো সাহস কমনা আমাকে পাচার করতে চাইছেন। আমার ভাইয়া আর নিদ্র জানলে আপনার কি অবস্থা হবে কল্পনাও করতে পারবেন না।
হা হা হা তুমি কাকে তোমার ভাই বলছো নোমান কে, আরে তুমি তো ওর আপন বোন না, আর নিদ্র ওকে তো আমার বোন আখি ভালোবাসে। সামনের মাসে ওদের বিয়ে হবে।
কিহ্ পাজলামি করেন আমার সাথে, নোমান ভাইয়া আমার আপন ভাই না এসব পাগলের কথা কে বলেছে শুনি।
আমি পাগল নই তুমি পাগল, আরে তোমার তো সাইকোলজিক্যাল সমস্যাও আছে। তোমার কি মনে হয় তোমার মতো মেয়েকে নিদ্র বিয়ে করবে। ও তো আখির মতো কাউকে ডিজার্ফ করে। আর রইলো বাকি তোমার আপন ভাই নোমানের কথা। তুমি ওর বায়োলজিকালি বোন নও, যখন তোমার বয়স দশ তখন তুমি আমার বাবার হাতে শিশু পাচার দলে পড়েছিলে। যে রাতে তোমাকে পাচার করা হবে ওই রাতে রাস্তায় আমাদের কার নষ্ট হলে তোমরা কিছু মেয়ে আমাদের অসাবধানতার পালানোর চেষ্টা করো।
সবাই কে ধরতে পারলেও তোমাকে পাইনি আমার বাবা কারন তার আগেই পুলিশ চলে আসে, আর তুমি দৌড়াতে গিয়ে গাছের সাথে বাড়ি লেগে জ্ঞান হারাও, তখন তুমি নোমান আর নিদ্রদের টুর গাড়ির সামনে পড়ে যাও।
ওরাই তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায় আর ডক্টর জানায় তুমি আগের সব ভুলে গেছো। সেই থেকে তোমাকে নোমানের বোন হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ওরা।
আর তোমাকে এতো কিছু বলছি কেন, এই ইনজেকশন টা ওর গায়ে পুশ করে দাও।
জি, বস।
নেহা আবার সেন্স হারায়।
রাত আড়াইটা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একশোটা মেয়েকে নিয়ে একটা টার্ক এসে থামে। রাত তিনটায় ওদের অজানার উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে।
হঠাৎ চারদিক থেকে হুইশেল বাজাচ্ছে, বিমানে ওঠানোর টিক আগ মুহূর্তে চনরপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয় মিরাজের পুরো দল কে।
আকি এসে মিরাজের গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয়।,
তোকে আমার ভাই বলতেও ঘৃনা হচ্ছে, বাবতেও ভয় লাগে আমার বাবা বাই এতো খারাপ মানুষ। তুই কি ভেবেছিস আমরা কিছু জানতে পারবো না। আরে পাপ বাপকেউ ছারে না। তোকে ফাইন্ড করার জন্য আমাদের দেশে আশা। প্রথম আমি তোর নাম শুনে চমকে গিয়েছিলাম।
কিন্তু তোর জন্য তো আর হাজার মেয়ের জিবন নষ্ট করতে পারি না।
নিদ্র মিরাজের কলার ধরে বলে কি ভেবেছিস নেহাকে খুজে পাবো না। নিদ্র এতোটাো বোকা না। নেহার গলায় নিদ্রের ভালোবাসার চিন্হ লকেটে ইস্পিকার লাগিয়ে দিয়েছবলাম। যা এবার হাজতে গিয়ে মর।
নেহা সহ বাকি সব মেয়েকে নিরাপদে বাড়িতে পৌছে দেয় নিদ্রর স্পেশ্যাল টিম।নিদ্রও গোয়েন্দা বিভাগের হেড হিসেবে প্রমোশন পায়।
নেহাকে বাড়িতে আনলে নেহা একদম চুপ হয়ে যায়। ওর মুধু মনে হয় ও এই বাড়ির আপন কেউ না। এমন কি নিদ্রর সাথে বিয়ে করতেও। মানা করে দেয়।
নেহা বাড়ি থেকে পালানোর চেস্টা কররে নিদ্র ধরে ফেলে আর আসল বিষয় জানতে চায়। তখন নেহা বলে আমি আমার আসল মা বাবার কাছে যেতে চাই। তুমি যদি আমাকে তাদের খুজে দিতে পারো তবেই তোমায় বিয়ে করবো।
নিদ্র বলে যেই দিন তুই আমাকে বিয়ে করবি সেই দিন তোকে তোর বাবা মার কাছে নিয়ে যাবো।
আজ নেহা নিদ্রের বিয়ে, নেহার টেনশনে নিল হয়ে গেছে নিদ্র তার বাবা মাকে এনে দিবে। কিন্তু বর যাত্রি চলে এসেছে কই তার মা বাবা।
কবুল বলার সময় নেহা যখন চুপ আছে তখন একজন বৃদ্ধ মহিলা বলে মা রে তুই আর নিদ্র রে কষ্ট দিস না। তোরে পাওযার জন্য আমি যে দশটা বছর বুক খালি করে আছি।
এরপর নেহা কবুল বলে দেয়, জানতে পারে এই মহিলাই ওর আসল মা আর নিদ্রর ফুপু।
বাসর ঘরে ফেলের মাঝ খানে বউ সেজে বসে আছে নেহা, বুক দরপর করছে ওর, এক সাথে এতো কিছু পেয়েছে এখন শুধু নিদ্র কে আপন করে নেয়া।
ভাবনার মাঝেই নিদ্র রুমে প্রবেশ করে নেহার দিকে এগিয়ে যায়।
নেহা সালাম করতে গেলে নিদ্র বুকে জরিয়ে ধরে।
ইই কি করছিস তুই।
কেনো সালাম করছি। এটাই তো নিয়ম।
কে বলেছে তোকে, শোন তোর জায়গা পায়ে না আমার বুকে। যা ভারি কাপড় বদলে আয় আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি।
দুজনে ওযু করে নামাজ পড়ে, নিদ্র বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে একটা কাঠগোলাপ ফুটেঠে, আর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে কাঠগোলাপের গাছ
কান্ডেল লাইটের আলোয় দুজন বেলকনিতে সুচনা করে তাদের নতুন জিবন। একটা ভালোবাসায় মুরানো রাত।
সমাপ্ত
(গল্পটা যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন ডাইরিতে লিখেছিলাম৷। যা এতোদিন আপনাদের সাথে শেযার করেছি।জানিনা কেমন হয়েছে। আজকে সবার ভালো কমেন্ট আশা করছি।)