#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠ_গোলাপ
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
কেটে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ, নেহা এখন পুরোপুরি সুস্থ। সেই দিন সবাই নেহাকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় একাই মারিয়াকে বাবার বাড়ি পাঠানো হয়েছিলো। কয়েক দিন পর নোমান গিয়ে মারিয়াকে নিয়ে এসেছে। সব কিছু ঠিকি আছে শুধু বদলেছে নেহা আর নিদ্রর মধ্যকার সম্পর্ক। নিদ্র অনেক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে নেহার সাথে, কিন্তু নেহা বরাবর ইগনোর করেছে নিদ্র কে। আগের মতো আর নিদ্র সাথে পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া করে না। নিদ্র খোচা মেরে কথা বললেও নেহা তার জবাব দেয় না।
নিদ্রও অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে নেহা প্রায়ই দেখে নিদ্র আখির সাথে কথা বলে, এমন কি দুজনের মাঝে দেখাও হয়।
এই তো সেদিন টিফিন টাইমে কলেজের কেন্টিনের পাশের রেষ্টুরেন্ট থেকে নিদ্র আর আখি কে বের হতে দেখেছে সে।
নিদ্রও এখন কথা বলে না নেহার সাথে, একটা মানুষের পাশে কতখনি বা থাকা যায়।
বান্ধবিদের বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরছে নেহা, রোজ নিদ্রর বাড়ির সামনেে দিয়ে যেতে হয়। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি, একা একাই হেটে যাচ্ছিলো নেহা হঠাৎ কোথা থেকে মিরাজ এসে বলে কেমন আছো নেহা।
হঠাৎ এভাবে ডাকায় নেহা চমকে ওঠে, তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মেরাজের দিকে তাকিয়ে বলে জি ভাইয়া ভালো আছে।
আপনি কেমন আছেন।
এই তো ভালো, তা বাড়িতে যাচ্ছ বুঝি?
হুমম।
এরপরে দুজনেই কিছু সময় নিরবতা পালন করে।তখন মেরাজ বলে নেহা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। তোমার কি একটু আলাদা সময় হবে।
নেহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা অনেক গড়িয়ে গেছে। তাই বলে ভাইয়া আজতো আমি শুনতে পারবো না আগামী কাল কলেজ ছুটির পর কলেজের পাশে যে রেষ্টুরেন্ট আছে ওখানে আসবেন আমি দেখা করবো।
হঠাৎ করে উপড় দিকে তাকিয়ে দেখে নিদ্র ভাই নেহা আর মিরাজের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নেহা একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে কি ব্যাপার নিদ্র সাহেব, জ্বলছে নাকি আপনার, কিন্তুু কেন আপনার না আখি আছে।
আমারও কষ্ট লাগছে।
কি ভাবছো এতো নেহা।
না তো কিছু না বাড়ির কাছা কাছি চলে এসেচে সেই জন্য বলে, মেরাজ ভাইয়া চলেন, মারিয়া ভাবির সাথে দেখা করে আসবেন।
আজ না নেহা অন্য কোনো দিন। আজ আসি।
অপর দিকে নিদ্র কাউকে ফোন দিয়ে কিছু বলে ফোন রেখে কটমট করতে করতে রুমে চলে যায়।
অন্য দিকে নেহা মেরাজ কে বিদায় জানিয়ে একটা টেডি মার্কা হাসি দিয়ে বাড়িতে নাচতে নাচতে ডুকে পড়ে।
গান গাইতে গাইতে হঠাৎ চোখ যায় বাগানে, দোলনায় মুগ্ধ আর ইশা বসে আছে৷ মুগ্ধর কাধে ইশার মাথা
নেহা বলে আহা দুইজন কি সুন্দর চুটিয়ে প্রেম করছে, আর আমাকে দেখো প্রেম না হতেই ছ্যাকা খেয়ে বসে আছে, কষ্ট।
হঠাৎ নেহার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসে।
নেহা চুপি চুপি মুগ্ধ আর ইশার পেছনে গিয়ে হাউ বলে চেচিয়ে ওঠে।
নেহার চিৎকারে মুগ্ধ আর ইশা দুজনেই চমকে গিয়ে দাড়িয়ে যায়।বুকে হাত দিয়ে হাপাতে হাপাতে পেছনে তাকিয়ে দেখে নেহা কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু জোরা উচু করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি ব্যাপার এখানে কি হচ্ছে? ফুপাতো চাচা তো এই সন্ধায়।
মুগ্ধ কাপা গলায় বলে কই কি হচ্ছে।
আমি যে কিছু দেখলাম।
মুগ্ধ আর ইশা বুঝে যায় নেহা ওদের দুজন কে ওই অবস্থায় দেখে ফেলেছে।
তুবুও নেহর থেকে লুকানোর জন্য ইশা বলে ক কি দেখেছিস তুই হ্যা।
কি দেখেছি মানে, অনেক কিছুই দেখেছি।
মুগ্ধ এবার তুতলে বলে আরে বইন তুই আর ইশা তো আমার কাছে একি নাকি। ও র আর তোর মাঝে তফাৎ নেই। ও বলছিলো চলো মুগ্ধ ভাইয়া একটু দোল নায় বসি তাই আমি ওর সাথে একটু বসছিলাম এই আর কি।
এদিকে মুগ্ধর কথা শুনে ইশা তো রাগে ফায়ার, ও আর নেহার মধ্যে সব সমান। মানে ও মুগ্ধর বোন লাগে।
ওই তুমি কি বললা আমি আর নেহা তোমার কাছে এক? এই তোমার ভালোবাসা?
ওদের জগড়া দেখে নেহা হাসতেে হাসতে বলে, আরে আমি জানি তোমরা দুজন যে দুজন কে ভালোবাসো, সেইদিন যখন তুমি ইশা কে প্রপোজ করেছো তখনি আমি দেখেছি। কিন্তু কি বলবো আমার দুঃখের কথা তোমাদের কে আর বলতে পারি নাই, সেই দিনের ওই ঘটনার জন্য।
মুগ্ধ আর ইশা বুঝে যায় যে নেহা সেইদিন প্রপোজ করতে দেখেছে, একন আর ওর থেকে কিছু লুকানো যাবে না।
তাই মুগ্ধ বলে, তুই জানিষ ভালো কথা। কিন্তু কাউকে একনি বলিস না বইন।
ওকে বলবো না। তুমি শুধু আমাকে একটু ট্রিট দিও।
আচ্ছা তোকে কালি ট্রিট দিবো, তাও কাউকে বলিস না।
নেহা খুশি মনে বাসায় ডুকে দেখে ডইং রুমে নোমান, নিদ্র, আখি আর মারিয়া বসে আছে।
নিদ্র আর আখিকে দেখেই নেহার মুখটা চুপসে গেলো।
সে কাউকে কিছু না বলে চলে আসতে নিলে নোমান পিছু ডেকে বলে, কি বোন রাগ করছিস নাকি। কিছু বলছিস না যে।
যদিও নোমান জানে নিদ্র কে ইগনোর করছে বলেই এমন করছে।
সে আবারো বলে, এমনি দিন তো নিদ্রকে দেখলে লাফাতে লাফাতে এসে নিদ্রর সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতি। তা আজ আবার কি হলো।
নোমানের শেষ কথাটা শুনে নেহা থমকে দাড়িয়ে বলে, সব সময় তো আর মুড এক রকম থাকে না।
আর ননিদ্র ভাইয়ার কাছে আমি মাফ চাই অনেক জ্বালিয়েছি, সরি। আমার আসলে ওমন করা ঠিক হয়নি।
আর সেই দিনের জন্য এক্সট্রা সরি, আমি আপনার আর আখি আপুর সুন্দর মোমেন্ট নষ্ট করেছি।
ওর এই কথা শুনে আখি উঠে এসে হেসে বলে, ওমা নেহা এসব তুমি কি বলছো। আরে পাগলি মেয়ে আমি তো জাষ্ট নিদ্র কে দিয়ে ট্রাই করছিলাম কি ভাবে প্রপোজ করা যায়। আসলে আমি শুভ কে ভালোবাসি, ওর সাথে আগামী মাসের লাষ্ট উইকে আমার বিয়ে। তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।
আখির কথা শুনে তো নেহার চোখ কপালে, আরে আখি আপু এই সব কি বলেন, আপনি তো নিদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসেন, আর নিদ্র ভাইয়াও আপনাকে, এখন আপনি যদি কাউকে বিয়ে করেন তাহলে তো নিদ্র ভাই ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে যাবে।
নেহার এমন কথা শুনে নিদ্রর কাশি উঠে যায়, আর ওদিকে নোমান আর মারিয়া হাসিতে ফেটে পড়ে।
নেহার কথা শুনে আখি বলে আরে নাহ্ নিদ্র তো তোমাকে ভালোবাসে, মাঝ খান থেকে আমি হলাম ভিলেন।
ও তোমাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালো বাসে।
আখির এহেন কথায় নেহা লজ্জা পেয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে হাপাতে থাকে। কোনো কিছু না নিয়েই ওয়াশরুমের ভিতরে ডুকে যায়।
অর্ধেক ভেজার পর মনে পড়ে সে কিছুই আনে নি। তাই তরিঘরি করে বের হয়ে জামা পাল্টে ডেসিং টেবিলের সামনে আয়নায় গিয়ে দেখে নিদ্র শটান হয়ে শুয়ে আছে তা৷র বিছানায়।
নেহার তো মাথায় হাত, এখন কি হবে। নিদ্র কি সব দেখে ফেলেছে৷
এদিকে নিদ্র নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে নেহা সংসয়ে মাঝে আছে, ওকে একটু খোচানোর জন্য বলে, কি ভাবছিস, আরে আমি তো তোর সব দেখে ফেলেছি এখন কি হবে।
নিদ্র মুখ থেকে এমন কথা শুনে নেহার মাথা ঘুরছে।
সত্যি আপনি সব দেখে ফেলেছেন?
নিদ্র মুচকি হেসে বলে হুম তো৷
হায় হায় এখন কি হবে।
নিদ্রর তখন টনক নরে আরে এমনিতেই পনেরো দিন ধরে কথা বলে না। এখন যদি এই কারনে আর সামনেই না আসে।
আরে রিলাক্স আমি কিছুই দেখি নি। কেবল তোর রুমে ডুকেছিলাম।আর এমনি শুয়ে ছিলাম।
তোকে আজকে অনেক কিছু,,,
চলবে,,,,