Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"বৃষ্টিভেজা আলাপনবৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-৪০+৪১

বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-৪০+৪১

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (৪০)

সেদিনের পর তিনদিন বৃষ্টি হয়েছে। তবে উষশী’র সাথে দেখা হলো না। অভিরাজের ভেতরের অবস্থা খুব করে অনুভব করছিল লাবণ্য। সেই জন্যেই মেয়েটির খোঁজে বের হয়েছে। বেশি দূরে নয় উষশী’র বাসাটা। সেখানকার খোঁজ পেতে খুব সময় লাগল না ওর। উষশী গার্ডেনেই ছিল। খুব সহজেই ভেতরে প্রবেশ করল লাবণ্য। সেদিনের মতো অহংকার দেখা গেল না যুবতীর মাঝে। এ যে সেই কিশোরী। তবে লজ্জিতবোধটুকুও নেই। আগের মতোই জেদি আর একরোখা স্বভাবের।
“এলাম দেখে কিছু মনে কর নি তো?”

“কি মনে করব? বসো ওখানটায়।”

চেয়ারের অপর পাশে বসেছে উষশী। মেয়েটি হাতের জাদু তৈরিতে ব্যস্ত। পাশে বসে আছে কোকো। প্রাণীটা সার্বক্ষণিক ওর সাথেই থাকে বুঝি। লাবণ্যকে চিনতে অসুবিধা হয় নি কোকোর। প্রাণীটা কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি যে মায়া হলো লাবণ্য’র। সে উঠে এসে কোলে তুলে নিল।
“তুই তো বুড়ো হয়ে গেছিস রে কোকো।”

“বুড়ো হয় নি আপু। শুধু ওর বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে।”

উষশী’র মুখে আপু ডাকটা সুন্দর লাগছে। লাবণ্য উষ্ণ শ্বাস ফেলল। কোকোর শরীরে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। শুধু কোকো নয় তুমিও বেশ বড়ো হয়ে গিয়েছ উষশী।”

“অথচ তুমি বদলাও নি। বরং আরও বেশি সুন্দরী হয়ে গিয়েছ। বয়স যেন থমকে গেছে।”

কথাতে বিদ্রূপ ছিল না কি লাবণ্য জানে না। তবে উষশী’র দিকে তাকিয়ে ওর মুখটা মলিন হয়ে এল। উষশী একটিবার ও তার দিকে নজর দিচ্ছে না।
“একটু সময় হবে?”

“হুম। শুনছি তো।”

“একটু আলাদা সময় কাটাতে চাচ্ছি। এখানে নয়।”

“ঠিক আছে। ঐদিকটায় চলো।”

উষশী নীরবতার সহিত হেঁটে চলেছে। লাবণ্য ও তাই। দুজনের এই নীরবতা ভাঙল কোকো। প্রাণীটার ক্ষিধে পেয়েছে।
“তুমি একটু থাকো। আমি আসছি।”

কথা ফুরোতেই মিলিয়ে গেল উষশী। লাবণ্য ঘুরে দেখল চারপাশ। বেশ সুন্দর বাড়িটা। উষশী যতক্ষণে ফিরল ততক্ষণে সময় ফুরিয়ে গিয়েছে। লাবণ্য ভুলে বসেছিল মিটিং এর কথা। উষশী’র হাতে কফি কাপ।
“অন্য একদিন আসব। আজ সময় নেই উষশী।”

“ঠিক আছে।”

লাবণ্য চলে গেলে আগের জায়গায় এসে দাঁড়াল উষশী। সেদিন লাবণ্য’র সাথে ওমন আচরণ করার পেছনে একটাই রহস্য। সেটা হচ্ছে অভিরাজ। মেয়েটি খুব করে ভেবেছিল তার সেই আচরণ দেখে অভি বুঝি তাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটে নি। উল্টো কতটা যত্ন নিয়ে এসেছিল। সেদিন বৃষ্টির মাঝে অভি’র শরীরের উষ্ণতা গুলো খুব করে মনে হতে লাগল। খানিক বাদেই সেই ভালো লাগাটা মিলিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল এক নীল ব্যথা।

অভি’র সাথে উষশী’র দূরত্ব যেন কিছুতেই যাচ্ছে না। সারাদিন কাজ করে অভি যখন ফিরে তখন খুব রাত। তবু সে মেয়েটির বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করে। অথচ এ বাড়িতে কে কে আছে সে জানে না। কখনো ইচ্ছেও করে না। অনেকটা অদ্ভুত হয়ে গিয়েছে সে। বলা চলে ভালোবাসায় অন্ধ। উষশী’র প্রতি যে গভীর টান রয়েছে সেই টানের বিপরীতে কোনো বাজে কল্পণা মাথায় আসে না। এমন কি মেয়েটির সব ধরণের আচরণ খুব সহজে মেনে নেয়। এসব কতটা ঠিক সেটা প্রেমিক অভিরাজের মস্তিষ্ক মিলাতে পারে না। প্রতি রাতের মতো আজও এসেছে অভিরাজ। উষশী’র বাড়ির কাছে বিশাল এক সিলভাটিকা গাছ। সেই গাছে নীল রঙের ফুল ফুটে আছে। সেখান থেকে কিছু ফুল তুলে নিয়েছে অভি। কল্পণায় গিয়ে মেয়েটির পিনাট বাটারের মতো চুলে সেই ফুল গুজে দিয়েছে। উষশী তখন লাজুক হেসে বলছে,’এত ভালোবাসেন কেন বলেন তো।’

ভাবনার অন্তিমক্ষণে এসে বৃষ্টির জল অনুভব করল অভিরাজ। হুট করেই ভীষণ বৃষ্টি হতে শুরু করেছে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সমস্ত শরীর। উষশী’র বাড়ির দিকে তাকাতেই মেয়েটির দেখা মিলল। যে মেয়েটি বৃষ্টি দেখলেই ভেজার জন্য পাগল হয়ে যেত সেই মেয়েটা আজ নিরস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির জল গুনছে যেন। অভিরাজ ধীর স্থির ভাবে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। উষশী ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে। তার দৃষ্টি প্রাণহীন। হাত নাড়িয়ে ডাকল অভিরাজ। তাতে সাড়া দিয়ে উষশী বলল,”আপনি এখানে কি করছেন?”

“তোমার জন্য এসেছি।”

“ভিজে যাচ্ছেন তো।”

“তুমিও আসো। একসাথে ভিজব।”

“চলে যান অভিরাজ।”

“তোমার সাথে কথা না বলে যাব না রেইন।”

এই নামে ডাকতেই উষশী’র শরীর কম্পিত হলো। মেয়েটি চট জলদি নেমে এল। তার বুকের ভেতরে ধীম ধীম আওয়াজ হচ্ছে।
“কি যে করেন আপনি।”

“কি করলাম।”

“এই রাতের আঁধারে ভরা বৃষ্টিতে চলে এসেছেন।”

“এটা নিশ্চয়ই নতুন নয়।”

“নতুন না হলেও সময় তো পেরিয়েছে।”

“তাতে কি যায় আসে?”

“অনেক কিছু যায় আছে।”

“কেমন?”

“তখন আমরা সম্পর্কে ছিলাম।”

“আর এখন?”

এ প্রশ্নের উত্তর মিলল না। উষশী কিছুটা এগিয়ে এসে অভিরাজের গালে স্পর্শ করল। মেয়েটির খুব কান্না পাচ্ছে।
“এভাবে দ্বিতীয় বার ভালোবাসায় আটকে ফেলবেন না অভিরাজ। সহ্য করার মতো শক্তি আমার নেই।”

“আমার ভালোবাসার সবটুকু উত্তাপ তোমার জন্য উষশী। বত্রিশ বছর বয়সেও একই ভাবে পাগলামি করতে পারি।”

“তবে আমি পারি না।”

“কেন পারো না?”

“কিশোরী নই এখন। যুবতী হয়ে গেছি।”

“সমস্যা কি তাতে?”

“জানি না। আজকের পর আর কখনো আসবেন না মিস্টার রাগি। এবার আমি শেষ হয়ে যাব।”

মেয়েটির চোখের জল বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যেতে লাগল। অভি’র যে কি হলো। সে তৎক্ষণাৎ কাছে টেনে নিল ওকে। আলতো হাতে পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,”কিচ্ছু হবে না উষশী। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ভরসা রাখলে অভিরাজ চাঁদকেও মাটিতে এনে দিবে।”

উষশী একটা শব্দ ও করল না। এমনকি নড়ল ও না। বরং একই ভঙ্গিতে থেকে ছেলেটার শরীরের উষ্ণতা প্রাণ ভরে নিতে লাগল। তার ভেতরটা কেমন সতেজ হচ্ছে ক্রমশ। সুন্দর মুহূর্তটুকুর লোভ সামলাতে পারছে না। এত দুঃখ বেদনার মাঝেও হেসে উঠল মেয়েটি। যেই হাসির সাথে ধুয়ে যেত লাগল বিগত পাঁচ বছরের বেদনা।

তারপরের দিনের ঘটনা। হাতে সময় থাকাতে উষশী’র বাড়িতে এল লাবণ্য। মেয়েটিকে দেখে আগেরদিনের মতো খুশি হলো না উষশী। বরং একটা তাড়াহুড়ো দেখাতে লাগল। লাবণ্য সময় নিয়ে দেখল ওকে। সেই দৃষ্টি লক্ষ্য করেই উষশী প্রশ্ন ছুড়ল।
“কিছু বলবে?”

“একটা কথা তখন থেকে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”

“কি?”

“তোমার বদল।”

“কেমন?”

“গতদিন কতটা সমাদর করেছিলে। আজ ই পাল্টে গিয়েছ। কোথাও যাচ্ছ নাকি?”

“না তো।”

“তোমার মম পাপা এখানেই থাকেন?”

“উহু।”

“তাহলে?”

“একাই থাকি।”

উষশী’র ভেতরটা কেমন আন্দোলন শুরু করেছে। সে যে ব্যস্ততা লুকাল তা বেশ ভালোই বুঝল লাবণ্য।
“ঘরে নিবে না উষশী? নাকি বাইরে থেকেই বিদেয় দিবে।”

“তেমন নয়। চলো,ভেতরে।”

উষশী’র বাড়িটা বেশ ভালোই বড়ো। এখানে একাধিক মানুষের বাস নেই। চারপাশ ঘুরেই সেটা বুঝতে পারল লাবণ্য। উষশী’র রুমের দেয়ালে অভিরাজের ছবি আঁকা। লাবণ্য সেগুলোতে হাত বুলিয়ে বলল,”অনেক দিন ধরে এগুলো করেছ?”

“হুম।”

“এর মানে অভি কে এখনো ভালোবাসো।”

কালো মেঘের ন্যায় বর্ণ ধারণ করল উষশী’র মুখটা। ওর এই রঙ পরিবর্তন দেখে লাবণ্য বলল,”অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছ উষশী। তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে তোমার থেকে এগার বছরের বড়ো আমি।”

“এসব শুনতে ভালো লাগছে না আপু।”

লাবণ্য অন্যদিক ফিরে রইল। ঘরটা ভীষণ অগোছালো হয়ে আছে। উষশী’র অসহায় দুটো চোখ। অপরাধবোধ আর খারাপ লাগাটা বেড়েই চলেছে। ওর শারীরিক স্বাস্থ্যও কিছুটা ভালো নয়। সেটা লক্ষ্য করেছে লাবণ্য।
“তুমি কি অসুস্থ?”

“না তো।”

“কেমন মলিন দেখাচ্ছে।”

“ঘুম হয়নি গতরাতে। তাই এমন লাগছে।”

“এক কাপ কফি পেতে পারি?”

“হ্যাঁ নিশ্চয়ই।”

উষশী নিচে যেতেই বেডের উপর বসল লাবণ্য। তারপর কি মনে করে উঠে গেল। চারপাশ ভালো করে পরখ করে নিতেই একটা ভয়ঙ্কর সত্য ওর চোখে ধরা পড়ল। মৃদু আন্দোলিত হলো ওর শরীর। ঘোলাটে হয়ে এল চোখের দৃষ্টি।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (৪১)

“অভি কোথায় আছিস তুই?”

“শহর থেকে একটু দূরে আছি। কেন?”

“দ্রুত আয় প্লিজ।”

“কি হয়েছে লাবণ্য?”

“তুই প্লিজ আয়।”

“লাবণ্য আমাকে ফাইল গুলো সাইন করাতে হবে। আজকের পর আর সুযোগ পাব না।”

“অভি,উষশী।”

উষশী’র নাম শুনেই ধক করে উঠল বুক। অভি ঝটপট শুধাল,”উষশী’র কি হয়েছে? লাবণ্য কথা বলছিস না কেন? এই লাবণ্য।”

“তুই দ্রুত আয় প্লিজ।”

কল রেখে একটা বেঞ্চে এসে বসল লাবণ্য। তার শরীর আন্দোলিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে সব কেমন ঘোলাটে। উষশী যে ড্রা গ নেওয়া শুরু করেছে এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। মেয়েটার শারীরিক অবস্থা দেখেও তেমন কিছুই বোঝা যায় না। মাঝে মধ্যে মদ্যপান করে এর রেশটুকু ও নেই। সব কেমন লাগছে। অভি আসতেই ছুটে এল লাবণ্য। ছেলেটার শরীর কাঁপছে। মনে হচ্ছে একটা ভয় ওকে পাগল করে তুলেছে।
“উষশী কোথায় লাবণ্য?”

“বাসায়।”

“কিন্তু কি হয়েছে?”

“তুই একটু শান্ত হয়ে বোস অভি।”

“শান্ত হতে পারছি না লাবণ্য। উষশী’র বাসায় যেতে হবে।”

কথা শেষেই ছুটতে লাগল অভিরাজ। পিছু নিল লাবণ্যও। কিন্তু সেখানকার চিত্র ভিন্ন। সেখানে বড়ো করে তালা ঝোলানো। গার্ড ও চলে যাচ্ছেন। ছুটে গিয়ে অভি পথ আটকালো।
“বাড়িটা তালা কেন দিলেন?”

“ম্যাম তো বাসায় নেই।”

“কোথায় গেছে?”

“জানা নেই। যাওয়ার আগে আমায় কিছু টাকা দিয়ে বলল এর পর থেকে আর কাজ করতে হবে না।”

“হুট করেই কোথায় চলে যাবে!”

অভি উন্মাদের মতো হয়ে গেল। কন্ট্রাক নাম্বার ও নেই। লাবণ্য’র শরীর কাঁপছে। চোখ দুটো প্রাণহীন।
“অভি।”

জবাব আসল না। এমনকি ঘুরেও দেখল না। রাজ্যের চিন্তা তার মস্তিষ্কে। মেয়েটা কি আবার পালিয়ে গেল?
“অভি আমার কথাটা শোন।”

“সময় নেই লাবণ্য। উষশীকে খুঁজতে হবে।”

“অভি শোন।”

শুনছে না অভিরাজ। তার ভেতরটা উত্তপ্ত হয়ে আছে। মনে হচ্ছে যত্ন নিয়ে খুড়ছে কেউ। দু চোখ ভেঙে কান্না আসছে। তবে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই। ওদের হতে হয় পা ষা ণ।
“উষশী ড্রা গ নেয়।”

কণ্ঠটা কয়েকবার কানের এসে বাজতে লাগল। অভি’র পা থমকে গিয়েছে। লাবণ্য ফের চেচাল।
“ড্রাগ নেয় উষশী। ওর বাসা থেকে এগুলো পেয়েছি।”

কত গুলো প্যাকেট দেখাল লাবণ্য। অভি যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। দু চোখের পাপড়ি গুলো অবধি নড়ছে না।
“এটা কি করে সম্ভব লাবণ্য? ওর আচরণে তো এমন কিছু নেই।”

“কারণ হতে পারে স্বল্পমাত্রায় নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে। জানি না মেয়েটা এখন কোথায় চলে গেল। আমার খুব ভয় হচ্ছে।”

উষশী’র চিন্তাটা অভিরাজকে শক্ত করে তুলল। দেহ যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। মেয়েটার বাদামি রঙা চুলের কথা স্মরণ হলো। যেই চুলের মাদকে নিজের সবটা হারিয়ে বসেছে অভিরাজ।

আমিনা ভাত বসিয়েন। তরকারি রান্না করছেন মালতি। লতিফা বিরস হয়ে বসে আছেন। ছোঁয়া আর ঈশানের ব্যাপারটা জেনেছে সবাই। মালতি এই বিষয়ে টু শব্দটি করেন নি। বরাবরই চুপ তিনি। লতিফা’র দু চোখে কালি জমে গিয়েছে। ছেলেটা বাড়ি ফিরছে না কতদিন হলো। একটা মাত্র ভুলের জন্য ছেলে হারালেন তিনি। অনেক সময় ধরে চুপ ছিলেন আমিনা। এবার তিনি বলে উঠলেন।
“এখন তো কেঁদে লাভ নেই। আগে বোঝা দরকার ছিল। তাছাড়া ছেলের জন্য ছোঁয়া’র থেকে ভালো কাউকে পেতি? পেতি না। মানছি মেয়েটার কিছু সমস্যা আছে। তবে আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যায়। দেখলি তো ছোঁয়া ঠিকই সন্তানের মা হতে চলেছে।”

এত গুলো কথা বলেও তিনি আরও কিছু বলতে চাইলেন। মালতি হাত ধরে ইশারায় না করলেন। লতিফার থেকে একটি শব্দও শোনা গেল না। খানিক বাদে আমানের দেখা মিলল। ভদ্রলোক কয়েকদিন হলো দেশে ফিরেছেন। আজীবন টাকার পেছনে ছুটে গিয়েছেন। মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে না এসে পারেন নি। মালতি স্বামীকে চা এনে দিল। ভদ্রলোক চা কাপ রেখে বললেন,”সব গুছিয়ে নেও মালতি।”

“কোথাও যাবে তোমরা?”

চুলার পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে ড্রয়িং এ এসে দাঁড়ালেন আমিনা। আমানের মুখে কালো মেঘের ছায়া। হুট করেই আমিনা’র মন কু গাইছে।
“আমরা চলে যাব বড়ো ভাবি।”

“চলে যাবে মানে?”

“অন্য বাসায় চলে যাব।”

“কি বলছো এসব?”

“যে বাড়িতে আমার মেয়ের জায়গাটা হয় নি সে বাড়িতে থাকতে পারব না বড়ো ভাবি। সবাই অনেক করেছেন আমাদের জন্য। আজীবন টাকার পেছনে ছুটেছি আমি। স্ত্রী সন্তানের প্রতি ঠিক ঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারি নি। সবটা আপনারা দেখেছেন। এই ঋণ শোধ সম্ভব না। তবে ঋণ বাড়াতে চাচ্ছি না।”

মালতির দু চোখ ভরে উঠেছে। কয়েক বছর পূর্বে ছোঁয়ার কারণে পরিবারটা ভেঙে বসেছিল। ছোঁয়া বেশ কান্নাকাটি করেছিল। একটা সময় ছোঁয়া’র অনুভূতি সম্পর্কে জানতে পারেন মালতি। মেয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা হয়েছিল। সেদিন মেয়ের গায়ে আ ঘা ত ও করেন। প্রথমত অলকের সাথে ওর প্রেমের বিয়ে। দ্বিতীয়ত বিয়ের পর অন্যের উপর অনুভূতি থাকাটা মহাপাপ। লতিফা আর আতিফ ও বিষয়টা জানতে পারেন। তাদের কাছে চক্ষু লজ্জায় পড়তে হয় মালতিকে। সেদিনই একটা সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাড়ি ছেড়ে চলে যান। ঈশান তখন বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করছে। এদিকে লাবণ্য’র অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। একটা রাগ ক্ষোভ থেকেই লতিফা আর আতিফও বাড়ি ছাড়া হয়। কেমন করে যেন পরিবার টা ভেঙে গিয়েছিল। আর তারপর যখন সবটা ঠিক হলো তখন এই সত্যটা উঠে এল। এরপর এ বাড়িতে থাকা আসলেই সম্ভব না। ছোঁয়া’র সাথে যে অন্যায়টা হয়েছে তার কোনো ব্যাখা হয় না।

তিনটা রাত অভি’র চোখে ঘুম নেই। ঘুম নেই লাবণ্য’র চোখেও। মেয়েটিকে বদ্ধ পাগলের মতো খুঁজে চলেছ ওরা। আশে পাশের সব জায়গায় খোঁজ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা খবর এল। খবরটা বার দূর্ঘটনার। বেশ বড়ো সড়ো ক্ষতি হয়েছে। অনেক গুলো মানুষের জান গিয়েছে। সেই থেকে অভি’র হৃদয়টা ঠিক নেই। কারণ কয়েক ঘন্টা আগের সেই বার ফুটেজে উষশী’র দেখা মিলেছে। লাবণ্য থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। ওর উপর যে কি চাপ যাচ্ছে। একদিকে ছোট ভাইয়ের খোঁজ নেই। অন্যদিকে পরিবারের সমস্যা গুলো। এখন আবার অভিরাজ। সব মিলিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। তবু অভিকে একা ছাড়ছে না। কয়েক ঘন্টার ড্রাইভিং শেষে ঘটনাস্থলে পৌছাল ওরা। অভি’র শরীর কাঁপছে। চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে। ফ্যাকাশে হয়েছে মুখশ্রী।
“উষশী ঠিক আছে অভি।”

লাবণ্য’র ভরসাটুকু কাজে দিচ্ছে না। মস্তিষ্ক পজেটিভ চিন্তা ধরে রাখতে পারছে না। অন্তর ‘কু’ গাইছে। মনে হচ্ছে সবটা শেষ হতে চলেছে। পেয়ে হারানোর ব্যাথা অভিরাজকে দগ্ধ করে যাচ্ছে। সামনে থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। চারপাশ মাতম তুলেছে যেন। ঝাপসা হয়ে আসে চক্ষু দৃষ্টি। লাবণ্য অভি’র হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে।
“আমাদের ভেতরে যেতে হবে।”

ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভেতরে যেতে পারল না ওরা। পুলিশ জনগনকে সামলাতে পারছে না। এত ভীড় জমায়েত হয়েছে চারপাশে! এদিকে উত্তপ্ত অভিরাজের দেহ। সে স্থির থাকতে পারছে না। লাবণ্য বার বার ভরসা দিচ্ছে। অথচ সেসব কিছুই কাজে লাগছে না। একটু ফাঁক পেতেই জায়গাটায় ঢুকে গেল অভিরাজ। ওর পিছু ছুটছে লাবণ্যও। বি স্ফো রণে চারপাশ ধসে গিয়েছে। চারপাশে ইট কংক্রিটের স্তুপ। পো ড়া গন্ধে বমি আসার মতো অবস্থা। থেকে থেকে অভি’র ভেতরটা আতকে উঠছে। সে খুব করে চাইছে এখানে উষশী না থাকুক। মেয়েটা ওর থেকে বহু দূরে চলে যাক তবু ঠিক থাকুক। বেঁচে থাকুক। বারের ভেতরে এখনো আগুন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। দুটো ছেলেমেয়েকে ভেতরে চলে যেতে দেখে মানুষ চেচাচ্ছে। লাবণ্য দেখল অভি তার থেকে বেশ এগিয়ে আছে। আর যে দিকে যাচ্ছে সেদিকের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। যেকোনো সময় ধস নামবে।
“আর যাস না অভি।”

কণ্ঠটা কানে পৌছালেও খেয়াল নেই অভিরাজের। সে শুধু উষশীকে খুঁজে চলেছে। একটু পর পর আগুনের বড়ো বড়ো স্তুপ জ্বলছে। লাবণ্য’র বুকের ভেতর ছ্যত করে উঠল। সে বার বার চেচাচ্ছে। তবে শুনছে না অভিরাজ। ওর ধ্যান জ্ঞান সব হারিয়ে গেছে। ভেতরে চলে এসেছে অভিরাজ। চারপাশ থেকে ধোঁয়া আসছে। কাশি উঠে গেল ওর। কাশতে কাশতে নজরে এল কোকোকে। প্রাণীটা মেঝেতে পড়ে আছে। শরীরে র ক্তে র দাগ। অভি ছুটে গিয়ে ধরল ওকে।
“কোকো, কোকো কি হয়ে গেল তোর।”

প্রাণীটার খুব কষ্ট হচ্ছে। সে তবু মিউ শব্দটা উচ্চারণ করল। অভি’র পুরো শরীরে শোক লেগে গিয়েছে। কোকো কে বুকে জড়িয়ে আছে সে। উষশীকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। পা চলছে না। দু চোখে টলমল করছে অশ্রু। কোকোর আর্তনাদ কানে পৌছাচ্ছে। বাঁচবে কি না জানা নেই। এক আকাশ সম কষ্ট নিয়ে কোকো কে নিয়ে বের হবে ওমন সময় মেঝেতে অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা বাদামি চুল গুলো নজরে এল।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ