বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-২৭+২৮

0
621

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (২৭)

গুণী মানুষের গুণের শেষ নেই। লাবণ্যকে চোখ বন্ধ করে গুণবতী বলা যায়। উষশী হা হয়ে লাবণ্য’র মাছ রান্না দেখছে। সকালেই জলাশয় থেকে মাছ ধরা হয়েছে। সেই মাছ কে টে ছে বাড়ির বউরা। আর রান্না করছে রত্না, লাবণ্য। ইরা অবশ্য এসব কাজ পারে না। সে হা হয়ে দেখছে উষশী’র মতো। লাবণ্য দুদিন হলো সুস্থ হয়েছে। এর মধ্যেই কেমন কাজে নেমে গিয়েছে। সে ভীষণ আগ্রহে মাছ রান্না দেখছিল। ওমন সময় অভিরাজ এসে ইশারা করল। এত গুলো মানুষের সামনে থেকে উঠতে বেশ ভোগান্তি হলো তার।
“এই সময়ে ডাকছেন কেন? দেখছেন না মাছ রান্না দেখছি।”

“দেখে কি করবে?”

“কি করব মানে। শিখব, সবাই কে ইমপ্রেস করা লাগবে না?”

“আমার সুন্দরী বউ দেখে সবাই এমনিই গলে যাবে। এসব রান্না করে ইমপ্রেস করা লাগবে না। আমাকে আদর করলেই হবে।”

“ছি,একদম বেহায়া হয়ে গেছেন।”

“স্বাভাবিক। তুমি কি ভাবো, বিদেশীরাই শুধু বেহায়া হতে পারে? ট্রাস্ট মি, বাঙালিরা যতটা পারে তার এক ভাগ পারে না ওরা।”

ঠোঁট টিপে হাসল উষশী। একটু উঁচু হয়ে অভিরাজের গালে স্পর্শ করে বলল,”আপনি যে এতটা বাজে সেটা জানা ছিল না।”

“বাজে তো শুধু তোমার জন্যেই হব বউ।”

মন খোলা হাসল উষশী। অভিরাজের কণ্ঠে এই ডাকটা বড়ো মধুর শোনাল। উষশী এক মনে তাকিয়ে আছে। তাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল অভি। আকাশ মেঘলা। বর্ষার সময়ে গ্রামে বক শাপলা বেশ পরিচিত একটা নাম। উষশী বক শাপলা দেখে নি কখনো। তাই তাকে নিয়ে বিলে এসেছে অভিরাজ। আগে থেকেই নৌকা ভাড়া করে রেখেছে সে।
“আবার নৌকা ভ্রমণ। ওয়াও, থ্যাংক ইউ সো ভ্যারি মাচ মিস্টার রাগি।”

“ইটস মাই প্লেজার জেদি মেয়ে।”

গাল ভরাট করে হাসল অভিরাজ। ওর বাহু চেপে ধরেছে উষশী। তার চোখে মুখে এক রাশ মুগ্ধতা। জলে থৈ থৈ করছে চারপাশ। বিলের একটু গহীনে বক শাপলা দেখা যাচ্ছে। সেগুলোর শুভ্রতা দূর থেকেই অনুভব করতে পারছে উষশী। খোলা নৌকা নিয়েছে ওরা। মাঝি হিসেবে আছে নয় দশ বছরের একটা ছেলে। তার বয়স কম হলেও নৌকা চালনায় ভীষণ দক্ষ সে।
“এই টুকু ছেলে বেশ ভালো নৌকা চালায় তো।”

“হুম। অনেক টেলেন্টেড, তোমার মতো।”

“আমার মতো!”

“হুম। এই যে তুমি, পনের বছরের এক কিশোরী হয়ে সাতাশ বছরের এক যুবককে জল খাওয়াচ্ছ। মনে হচ্ছে তোমাকে না পেলে ম রে ই যাব। তাহলে বলো টেলেন্টেড না?”

“হুম বেশ গুণবতী অনুভব হচ্ছে এবার।”

অভিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ানোয় মাথায় হাল্কা করে চ ড় দিল অভিরাজ।
“বাচ্চা বাচ্চাদের মতো থাকবে।”

“আচ্ছা। আমি বাচ্চা?”

“হুম। তা নয় তো কি?”

“তাহলে তুমি বুড়ো। এই তোমার লজ্জা হয় না এমন বাচ্চা এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করতে?”

“হয় না তো।”

“কেন হয় না?”

“ভালোবাসায় বয়স কোনো বিষয় হলো?”

“সমাজ তো অন্য কিছু বলে।”

“যায় কি আসে তাতে? তুমি আমি একে অপরের এটাই আসল কথা।”

উষশী অভি’র সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসল। মেঘ ডাকতে শুরু করেছে। চারপাশে নেমে এসেছে আঁধার। ওরা বিলের মাঝে এখন। এক হাতে মেয়েটির কোমর জড়িয়ে ধরল অভিরাজ। অন্য হাতে শাপলা তুলতে লাগল। দু এক বিন্দু জল শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। আনন্দ হচ্ছে উষশী’র। অভি’র মুখটা ওর ঘাড়ের কাছে। একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। মেয়েটির বাদামি রঙা চুল থেকে মুখ উঠিয়ে অভিরাজ বলল,”কি মুগ্ধতা আছে তোমার মাঝে,যা আমায় এত কাছে টানে?”

এই প্রশ্নের জবাবে উষশী কেবল হাসল। তার হাসির সাথে মিশে যেতে লাগল বৃষ্টির জল। একটা শীতল অনুভূতিতে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। তাদের ভালোবাসা যেন বৃষ্টির সাথে আলাপন শুরু করেছে। এক বৃষ্টিভেজা আলাপন।

লাবণ্য যে দুপুরে ভাত খেল না তা কেউ ই জানল না। তার ভেতরটা যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। উষশী আর অভিরাজকে একসাথে দেখলেই মন কেমন করছে। সে নিজেকে সংযত করতে পারছে না। ইচ্ছে করছে সব ধ্বং স করে দিতে। তার এই বিষন্নতা কিছুটা অনুভব করতে পারছিল ইরা।
“কোনো বিষয়ে আপসেট আছ?”

“না। তুই কখন এলি?”

“অনেকক্ষণ। অথচ তুমি খেয়াল ই করো নি।”

“মাথা ব্যথা একটু।”

“সাথে মন ও?”

এমন প্রশ্নে বিব্রত হলো লাবণ্য। কথা ঘুরিয়ে বলল,”বোকার মতো কথা বললি। মন আবার ব্যথা করে কেমন করে?”

“করে রে আপু। আমার করে।”

“তোর আবার কি হলো?”

“একটা সম্পর্কে আছি সেটা তো জানোই। প্রচন্ড ঝামেলার ছেলেটা। অথচ ছাড়ার কথা ভাবলেই মনের মধ্যে ব্যথা হয়। ভালো লাগে না আর।”

“থাক এত টেনশন করিস না। সময় নে।”

“হুম। আচ্ছা তুমি কি কাউকে ভালোবাসো? সবাই তো চায় ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হোক। কিন্তু তোমরা চাও না। অন্য কাউকে পছন্দ করো?”

এ প্রশ্নের জবাবে লাবণ্য অন্যমনস্ক হয়ে গেল। ইরাও আর ঘাটাল না। হাজার হোক লাবণ্য তার বড়ো বোন। দুজনের বয়সেও বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা প্রয়োজন।

মেয়েদের চুলে অন্যরকম আকর্ষণ বোধ করে পুরুষ মানুষ। কথাটি উষশী আর অভিরাজের ক্ষেত্রে খুবই সত্য। ওরা যখনি কাছে এসেছে তখনি সমস্ত কিছু ভুলে কিশোরী’র চুলের ঘ্রাণ মেখেছে অভি। সেই কারণেই একটা চুল গলার কাছে আটকে গেছে। সেটা চোখে পড়ল ইরার। সে চেচিয়ে উঠল প্রায়।
“ভাইয়া,তোমার গলায় এটা কার চুল! ব্রাউন কালার ও মাই গড।”

ইরার বাক্য শেষ হওয়ার পূর্বেই সকলের চোখ চলে গিয়েছে অভিরাজে দিকে। লাবণ্য সবে ভাতের লোকমা তুলেছে। পূর্ণ নজরে দেখল সে। বাদামি রঙা চুলটি যে উষশী’র এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অভি নিশ্চুপ। একদমই শান্ত পাহাড় যেন। ওর নীরবতা দেখে ইরাও আর ঘাটে নি। তবে লাবণ্য ঠিক ই ঘাটল। এত রাগ হচ্ছিল ওর। ঘরে এসে জামা কাপড় ফেলতে শুরু করেছে। বারান্দার দুটো টব ভেঙেছে। মিররের কোণ করেছে চৌচির। তার এত রাগ ক্ষোভ সব গিয়ে পড়ল উষশী’র উপর। সে জানত উষশী’র ত্বক বেশ নাজুক প্রকৃতির। প্রসাধনী ও মেপে ব্যবহার করে। পরিবেশের সাথে কোনো মতে খাপ খাইয়েছে। এমতাবস্থায়,গ্রামের মেলা থেকে আনা সাধারণ জিনিস গুলো একেবারেই সইবে না,সেটা জানা সত্ত্বেও সেগুলো উষশীকে দিল। উষশী মেকাপ ব্যবহারে সচেতন। তবে তাড়াহুড়ো করে ঘোরার প্ল্যান করায় তাকে সেই জিনিসেই সাজতে হচ্ছে। বিকেলটা বড়ো আনন্দে পার হলেও সন্ধ্যাটা বেশ করুণ হলো কিশোরী’র জন্য। মুখ ঘাড় হাত চুলকোতে শুরু করল। ধীরে ধীরে লাল হতে শুরু করেছে। ওর কান্না পাচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। র‍্যাশ উঠে যা তা অবস্থা। এটা সবার পূর্বে নজরে এল লতিফার। তিনি লাবণ্য’র জন্য দুধ নিয়ে এসেছিলেন। এসে লাবণ্য কে না পেলেও দেখতে পেলেন উষশী’র করুণ অবস্থা।
“একি, মুখে কি হয়েছে উষশী?”

কথা বলতে পারছে না কিশোরী। অস্বস্তি হচ্ছে তার। হাঁসফাঁস করছে সে। ওকে ধরে উঠালেন তিনি।
“কি করে হলো?”

“জানি না।”

“খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মা?”

“ভালো লাগছে না আন্টি। এটা কি হলো।”

তিনি বিস্তর চিন্তায় ডুবে গেলেন। বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই। অভিরাজ নাকি লাবণ্যকে নিয়ে বেরিয়েছে। কেউ বুঝতে পারছিল না কি করবে। সাধারণ টোটকায় যদি হিতে বিপরীত কিছু হয় তাই সেটাও লাগানো হচ্ছে না। কিছু সময় পর বাড়ি ফিরল ঈশান। উষশী’র অবস্থা দেখে বলল,”এটা কি করে হলো?”

উষশী উত্তর দিচ্ছে না। ওর চোখ টলমল করছে।
“মা,ওকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। এভাবে বসে থাকলে সমস্যা হবে।”

“এই সন্ধ্যায় কোন হসপিটালে যাবি?”

“শহরে গেলেই ভালো হয়।”

কোনো কিছু চিন্তা না করেই রওনা হলো ওরা। ওদের সাথে গেল রত্না। উষশীকে ধরে রেখেছে সে।
“একটু পানি খাও উষশী।”

কিশোরী’র চোখ মুখে অন্ধকার নেমে এসেছে। ফুলে উঠেছে চারপাশ। ঈশান এর মধ্যেই অভিরাজকে কল করেছে। সে জানিয়েছে এখনি আসছে। ড্রাইভিং এ মনোযোগ থাকছে না ঈশানের। বার বার তাকাচ্ছে তুষারের ন্যায় ফর্সা মেয়েটার পানে। সুন্দর মুখটা কেমন মলিন হয়ে উঠেছে। তার সমস্ত সৌন্দর্য যেন একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (২৮)

এক দৃষ্টিতে অভিরাজের দিকে তাকিয়ে আছে লাবণ্য। কতটা ভালোবাসা থাকলে মানুষ এভাবে বিচলিত হতে পারে সেটাই ভাবছে সে। অজান্তেই কি না অভি’র জীবনে ভিলেন হয়ে উঠেছে সে। অথচ অভিরাজের সবথেকে প্রিয় বন্ধুর তালিকা করলে লাবণ্যকে শীর্ষে রাখা হবে। লাবণ্য অপরাধবোধে ভুগছে। সে এতটা বেপরোয়া হতে চায় নি। কিন্তু ঝোঁকের বসে কাজটা করে ফেলেছে। অভি’র বিচলিত মুখটা তাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে। দেড় ঘন্টা পর হসপিটালে পৌছাল ওরা। উষশী’র ট্রিটমেন্ট শুরু হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন এডমিট থাকতে হবে। তাই হসপিটালের পোশাক পরানো হয়েছে। মেয়েটিকে এই পোশাকে দেখে অভিরাজের বুকটা কেঁপে উঠল। চোখ বন্ধ করে আছে কিশোরী। চোখের কোণে জল। সকলকে বাইরে পাঠিয়ে কিশোরী’র হাত মুঠোয় নিল অভিরাজ। শুরুতেই উষশী’র প্রশ্ন।
“আমি খুব বাজে হয়ে গিয়েছি তাই না?”

অভি নিরুত্তর। সে মেয়েটির হাতটা শক্ত করে চেপে রেখেছে।
“কথা বলেন না কেন? আমাকে বাজে দেখাচ্ছে নিশ্চয়ই? খুব বিশ্রি। লাইক বিস্ট?”

এবার ও অভিরাজের উত্তর নেই। ঠোঁট কামরে ধরল উষশী। অভি কি তাকে আর ভালোবাসবে না?
“খুব খারাপ দেখাচ্ছে আমায়। আপনি আমাকে আর ভালোবাসবেন না তাই না? একটা বাজে দেখতে মেয়েকে কেন কাছে টানবেন।”

ডুকরে উঠল উষশী। তাতেও অভিরাজের খেয়াল নেই। সে হুট করেই মেয়েটির ঠোঁটে নরম স্পর্শ করল। অভিকে খামচে ধরল কিশোরী। যেন একদমই মিশিয়ে নিবে নিজের সাথে।
“ইউ আর দ্য মোস্ট বিউটিফুল ইন দ্য ওয়াল্ড। ফর এভার এন্ড এভার। মন ছোট করো কেন উষশী? তোমার কি মনে হয় শুধুমাত্র এই শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য তোমায় ভালোবাসি আমি? আকর্ষণ সৌন্দর্যে আসলেও ভালোবাসাটা মনের বিষয়। তুমি বিস্ট হয়ে গেলেও আমার ভালোবাসা হয়েই থাকবে।”

এক মনে অভিরাজের দিকে তাকাল উষশী। সত্যিই কি এভাবে ভালোবাসা যায়? তার অনুভূতি ও কি এমনি? অভিরাজ যেমন করে ভালোবাসে সেও কি সেভাবেই ভালোবাসে? এই প্রশ্নটা বড়ো জটিল। উষশী’র পনের বছরের জীবনে শারীরিক ভালোবাসা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে নি। নাকি পড়েছে সে ধরতে পারে নি।

হসপিটাল থেকে ফিরে আসার পর উষশী’র প্রতি সকলেরই খেয়াল বেড়েছে। মেয়েটা বিদেশের মাটিতে বড়ো হয়েছে। এখানকার সবকিছু সহজেই মানাতে পারবে না। ওর খাওয়া দাওয়ায় বদল হয়েছে। তবে এ জীবন পছন্দ নয় কিশোরীর। সে আগের মতো ঘুরে বেড়াতে চায়। নতুন খাবারের স্বাদ নিতে চায়। কিন্তু অভি সচেতন। সে কিছুতেই মেয়েটির যত্নে ক্রুটি করতে দিবে না। দুপুরে অভি’র টি শার্ট পরে বসে আছে উষশী। বাড়িতে বড়ো রা কেউ নেই। দাওয়াতে গিয়েছে তারা। ছোটরা কেউ আগ্রহী ছিল না। তাই বাড়িতে থেকে গিয়েছে। গোসল করে এসে উষশীকে দেখল অভিরাজ। তার গায়ে টি শার্ট দেখে মৃদু হাসল। উদাম শরীরে দাঁড়িয়ে অভিরাজ। অন্য কেউ হলে নিশ্চয়ই লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিত। তবে উষশী তা করল না। সে একরাশ উল্লাস নিয়ে তাকিয়ে রইল। মেয়েটি খুব কম লজ্জা পায়।
“লু চু কিশোরী। এভাবে আমার যৌ ব ন শুষে নিচ্ছ!”

“যৌ বন আছে? অলরেডি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন মিস্টার রাগি।”

“এতটা অবিশ্বাস? প্র্যাক্টিকাল দেখতে চাচ্ছ মনে হলো।”

“দেখালে সমস্যা নেই।”

“আসলেই?”

“হুম।”

“পরে দোষ দিবে না।”

“দোষ কেন দিব?”

অভিরাজ মজা করেই উষশী’র একদম নিকটে চলে এল। উষশীও কম যায় না। সে একদমই ভয় পাচ্ছে না। উল্টো অভি’র গলা জড়িয়ে ধরেছে।
“ভয়ঙ্কর মেয়ে তুমি।”

“এইটুকুতেই দমে গেলেন?”

“আপনি আমাকে বিচলিত করতে চাচ্ছেন রেইন। কিন্তু একটুও বিচলিত নই আমি। সব তোলা রইল। বিয়ের পর বোঝাব,অভি কি করতে পারে।”

“বুড়ো মানুষের এত তেজ?”

“ষাট বছরেও অভির ভালোবাসায় কেঁপে উঠবে তুমি। আর এখন তো সবে পনের।”

বাক্যটি শেষে অভিরাজ উঠে এল। উষশীও পেছন পেছন এসেছে। অভি শরীরে শার্ট জড়িয়ে বলল,”টি শার্ট পরে আছ কেন?”

“লম্বা পোশাক গুলোতে গরম লাগছে খুব।”

“আচ্ছা পরে থাকো। তবে বাইরে যাবে না।”

“ঠিক আছে। কিন্তু আমার যে খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”

“বিকেলে এনে দিব।”

“না,না ঐ মাঠে তিন চাকার ভ্যানে করে আইসক্রিম আনা হয়েছে। ঐ গুলো খাব।”

“বরফ গোলার কথা বলছো?”

“হুম।”

“বাড়ির অন্যদের বললেই তো হতো।”

“অন্যদের বলতে ভালো লাগে না।”

উষশী’র এই বাক্যে খুব একটা খুশি হতে পারল না অভিরাজ। মেয়েটি সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। তাদের ভবিষ্যৎ এ এটা নিয়ে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে সবাই লাবণ্যকে পছন্দ করে সেখানে উষশীকে কি করে বসাবে সেটাই বুঝতে পারছে না। অনেক গুলো ঝড় দেখতে পারে সে। দিন শেষে সত্যিই সম্পর্কটা ভীষণ অনিশ্চিতের দলে।

উষশী’র ঘাড়ের লালচে দাগ গুলোতে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে লাবণ্য। বাড়িতে ফেরার পর তার যত্ন লাবণ্যই নিয়েছে। খারাপ লাগার পরিমাণ ও কম নয়। ইদানীং ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে কোথাও হারিয়ে যেতে। উষশী বরফ গোলা খাচ্ছে। ঔষধ লাগানো শেষ হতেই অভিকে খুঁজতে বের হলো লাবণ্য। অভি বাগানে আম পাড়তে গিয়েছে। তার সাথে আছে জাবেদ সিনহার দুই ছেলে জাবিন আর জোভান। তারা নিচে দাঁড়িয়ে আর অভি আম গাছে।
“গাছে উঠেছিস কেন অভি? পড়ে যাবি তো।”

“এতটাই বেক্কেল মনে হয় আমায়?”

“যদি পড়ে যাস। নেমে আয়। অন্যভাবেও তো পাড়া যায়।”

“তাতে কি মন ভরে রে লাবণ্য।”

বলতে বলতে আম ছিড়ে নিচে ফেলল অভি। সেটা গিয়ে লাগল লাবণ্য’র মাথায়। সে শক্ত চোখে তাকাল।
“সরি, সরি। তুই এখানে কেন দাঁড়িয়েছিস।”

“ঠিক হলি না তুই। ছোট বেলাতেও এমন করে মাথায় আম ফেলতি।”

দুষ্টুমির হাসি হাসল অভিরাজ। ছেলেটা ইচ্ছে করেই এমন করেছে। সে যেন ছোট বেলায় ফিরে এসেছে। জোভান আম কুড়াতে কুড়াতে বলল,”অভি ভাইয়া,আরো লাগবে। এ কটায় কিছু হবে না।”

“অপেক্ষা কর।”

আরো কিছু আম পাড়ল অভিরাজ। বেশ বড়ো আর উঁচু গাছ। অভি নামার সময় লাবণ্য’র দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একটু পা হড়কে গেলেই শেষ! অভিরাজের সাথে অবশ্য তেমন কিছুই হলো না। সে বেশ সাবলীল ভাবেই নেমে এল। কিন্তু লাবণ্য বিপদটা ঘটিয়েই ফেলল। অসাবধানতাবশত চলতে গিয়ে গাছের মোটা শিকরের সাথে পা আটকে গেল। ফলস্বরূপ মচকে গেল পা। ব্যথায় দু চোখে জল বেরিয়ে এসেছে।
“ব্যথা পেলি কি করে। বোকা মেয়ে,দেখে চলবি না।”

লাবণ্যকে ধরল জোভান আর জাবিন। তারা কোনো মতে ধরে দাঁড় করালেও চলতে পারছে না মেয়েটি। অভিরাজকে আসতেই হলো। সে আম গুলো জাবিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,”যা,বাসায় নিয়ে কুচি করে ফেল।”

জাবিন চলে গেল। জোভান সরঞ্জাম নিয়ে চলতে লাগল। লাবণ্যকে দু হাতে জাপটে ধরল অভিরাজ।
“অদ্ভুত। এইটুকু পথ চলতে পারছিস না। কোলে না নিতে হয়।”

লাবণ্য নাক ফুলিয়ে বলল,”থাক আর ধরতে হবে না। ছাড় এমনি যেতে পারব।”

আশ্চর্যভাবে অভিরাজ তাকে ছেড়ে দিল। একটু কষ্ট পেল লাবণ্য। কিন্তু এক পা চলতে গিয়েই পড়ে গেল। অভি তাকে উঠিয়ে নিল। এবার আর হাত ধরে নয় একেবারে কোলে তুলে নিয়েছে। লাবণ্য অবাক হয় নি। ছেলেটার কোলে চড়ার অভিজ্ঞতা এর পূর্বেও রয়েছে। একবার নয় বহুবার রয়েছে। তাদের সম্পর্কটা অন্যদের তুলনায় বেশ ভিন্ন। আর সেই জন্যেই পরিবারের লোক একটা শক্ত পোক্ত নাম দিতে চেয়েছে। অথচ শুরুর দিকে দুজনেই হেলায় নিয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনুভূতি’র রঙ ব‍দলায়। নিজের ভেতর এর অনুভূতি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারে না লাবণ্য। তার আজকের অনুভূতি ভীষণ ভিন্ন। যদি কোনো ভাবে অভি তার নামে দলিল হয়। নিজেকে বড়ো ভাগ্যবতী বলেই মনে হবে।

উষশী উল্লাসিত হয়ে বের হলো। শুরুতেই চোখে পড়ল অভিরাজের কোলে থাকা লাবণ্যকে। সে দ্রুত নেমে এল।
“আপু’র কি হয়েছে?”

“পা মচকে ফেলেছে।”

অভি লাবণ্যকে বসিয়ে দিয়ে শ্বাস নিল। কপালে জমে থাকা ঘামটুকু মুছে বলল,”তুই এর ভারী কেন লাবণ্য?”

একটু লজ্জা পেল লাবণ্য। তবে সে অতও ভারী নয়। তার ওজন চুয়ান্ন কেজি। অবশ্য তার তুলনায় উষশী একদমই কম ওজন। কিশোরীকে দেখলেই বোঝা যায় চল্লিশ এর খুব বেশি নয়। বিষয়টা কল্পনা করতেই মন খারাপ এসে স্পর্শ করে গেল।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে