বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-২৫+২৬

0
665

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (২৫)

বাদামি রঙের চুলে কিছু নাম না জানা সাদা ফুল। গলায় ছোট্ট একটা মালা। হাতে চিকন ব্রেসলেট। তার বরফ সাদা মুখে হাল্কা প্রসাধনী’র ছোঁয়া। শরীরে জড়ানো বাঙালি পোশাক। পুরোদস্তুর বাঙালি মেয়ে,বউ হয়ে উঠেছে উষশী। অভি বেশ তাড়াহুড়া করছিল। মেয়েটির এমন রূপ দেখে তার পথ চলা বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ অস্বস্তি অনুভব করছে কিশোরী। একে একে তার উপর দৃষ্টি পড়ল সবার। রত্না মিটিমিটি হাসছে।
“ওকে কেমন দেখাচ্ছে? ভীষণ সুন্দর না? শাড়িতে একদম বাঙালি হয়ে উঠেছে।”

কিশোরী’র প্রশংসা করতে কেউ ই দ্বিধা করল না। অভিরাজ কিছু সময় পর বলল,”লেট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত চলো সবাই।”

উষশী গল্প করছে। তাকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে। লুকিং গ্লাসে মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে। এতেই যেন দৃষ্টিবদল হয়ে পড়ল। ওর অবস্থা দেখে ঈশান বলেই ফেলল,”ব্রো আমি ড্রাইভ করি। না হলে সবাইকে ভোগে যেতে হবে।”

“বে য়া দব! বড়ো ভাই এর সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?”

ঈশান ফের হাসল। অভিরাজ নিজেকে শক্ত করে গাড়ি চালনায় মনোযোগ দিচ্ছে। মেলার ভেতরে সবাই যখন যাচ্ছিল তখন অভি হাত আটকে দিল উষশী’র। মেয়েটি ছটফট করতে করতে শুধাল,”হাত ধরে রাখলেন কেন? ওরা তো চলে যাচ্ছে।”

“চলে যাওয়ার জন্যেই আটকে রেখেছি।”

“আমি কিভাবে ঘুরব?”

“ঘুরবে না।”

“মানে!”

“আমার সাথে যাবে।”

“আরে,আমি গ্রামের মেলা দেখি নি কখনো। আমি যাব।”

“সেটা হচ্ছে না মিস।”

অভিরাজের আলিঙ্গনে উষ্ণতা পেল উষশী। একটু নরম হয়ে এল তার কণ্ঠটা।
“মেলা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।”

“সন্ধ্যায় মেলা ঘুরাব। এখন আমরা আলাদা টাইম স্পেন্ড করব। এখানে আসার পর তোমাকে কাছে পাওয়া বড়ো দুষ্কর হয়ে উঠেছে রেইন। তুমি কি একটুও মনে করো না আমায়?”

উষশী এ প্রশ্নের উত্তর দিল না। তবে সে মনে করেছে। প্রতি বেলা প্রতিক্ষণ মানুষটাকে মনে করেছে সে। একটা শুনশান রাস্তায় এসে দাঁড়াল ওরা। এখানটা ঘন জঙ্গল বলা চলে। চারপাশ জুড়ে বিশাল রেইনট্রি গাছ। সেগুলো যেন কথা বলছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে ওদের শ্বাস গুলো কেমন ভয়ঙ্কর সুর তুলেছে। কিছুটা ভীত হয়ে গেল উষশী। অভিরাজের কোমর চেপে ধরে রইল। ওর ভয় দূর করতে শক্ত করে ধরে রইল অভিরাজও। তারা যে পথ ধরে চলছে সাধারণত এ পথে কেউ আসে না। এই রাস্তাটা বেশ পুরনো। জঙ্গলের পথে বিধায় চলাচল নেই। উষশী কেমন চুপ করে গেছে। ওর এই নীরবতায় চারপাশ যেন কাঁদছে।
“ভয় পাচ্ছ?”

“হুম।”

“বোকা মেয়ে। ভয়ের কিছু আছে এখানে? তাছাড়া যে মেয়েটা রাতের আঁধারে শহরের রাস্তায় একা থাকার মতো সিদ্ধান্ত নেয় সেই মেয়ে দিনের বেলায় ভয় পায়!”

“তখন তো অন্যরকম ছিল সব।”

“কি রকম ছিল?”

“পিছুটান ছিল না। শুধু মনে হয়েছিল মম কে পেলেই হবে।”

“আর এখন?”

“এখন তুমি আছ। প্রচন্ড ভয় করে আমার। যদি তোমায় হারিয়ে ফেলি।”

উষশী’র কণ্ঠে তুমি ডাকটা বড়ো মধুর শোনাল। মৃদু হাসল অভিরাজ। তারপর নিচু হয়ে শুধাল,”ভালোবাসো?”

“জানি না। তবে আপনার সঙ্গ আমায় আনন্দ দেয়। আপনিই তো বলেছেন আমরা সম্পর্কে আছি।”

একটা মিশ্র অনুভূতি পেল অভিরাজ। উষশী অন্যদের থেকে খুব আলাদা। সে বাঙালি মেয়েদের মতো সহজে ভালোবাসা বুঝতে পারে না। প্রকাশ ও করতে পারে না। তার পরিবেশ ভিন্ন। এত ভিন্নতার মাঝেও কোথাও একটা সুখ খুঁজে বেড়ায় অভিরাজ। মনে হয় তুলোর মতো দেখতে মেয়েটি তার খুব আপন। তাকে ছাড়া এ জীবন কাটানো অসম্ভব।

নদীর ধারে চলে এসেছে ওরা। সেখানে দু একটা নৌকা দেখা যাচ্ছে। আকাশে তেমন রোদ নেই। মনে হচ্ছে একটু বাদেই বৃষ্টি হবে। এই সময়ে গ্রামের সকলের মন খারাপ হয়ে গেলেও উষশী ভীষণ আনন্দিত। ওর কাছে বৃষ্টি মানেই ভালো লাগা। বৃষ্টি মানেই অন্য এক অনুভূতি। ঠোঁটের কোণের দীঘল হাসির দিকে তাকিয়ে মাঝিকে ডেকে নিল অভিরাজ। মাঝি আকাশের অবস্থা দেখে বলল,”মামা এহন তো যাওন যাইব না। যে বৃষ্টি আইতেছে।”

“আমরা বেশিদূর যাব না মামা।”

“টাকা কিন্তু বাড়ায় দেওন লাগবে।”

“সেটা নিয়ে ভাববেন না।”

মাঝি নৌকা তীরে নিয়ে এল। উষশী একটু ভয় পাচ্ছে। ছোট্ট পাতলা নৌকা ক্ষণে ক্ষণে দোল খাচ্ছে।
“হাত ধরে থাকো।”

উষশী হাত ধরে রইল। অভিরাজের শক্ত পোক্ত বড়ো হাতটার মাঝে ওর নরম তুলতুলে ছোট্ট হাত গলে গেল। মৃদু বাতাসে শীতল হয়ে এল শরীর। খানিক বাদেই উষশী অনুভব করল শীত লাগছে না। বরং কোথা থেকে যেন উষ্ণতা এসে জড়িয়ে নিচ্ছে। অভিরাজের মুখটা একদম ঘাড়ে মিশে আছে। নড়লেই কেমন একটা শিরশির অনুভূতি হয়।
“চুপ করে বসে থাকো। নড়লেই পড়ে যাবে।”

“এত কাছে আপনি!”

“কেন ভালো লাগছে না?”

“লাগছে তো।”

“তাহলে?”

“বুকের ভেতর কেমন লাগছে।”

“কেমন?”

“জানি না। এক মিশ্র অনুভূতি। না ছাড়তে পারব আর না এভাবে থাকতে পারব।”

অভিরাজ হাসল। সে হাসি’র শব্দ কেবল উষশী’র কানেই পৌছাল। একটা সুন্দর পরিবেশ। চারপাশে বিশাল বিশাল ঝাউ গাছ। আরেকটু বাদেই আকাশ চমকাতে লাগল। সে শব্দে কেঁপে উঠল উষশী। তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিল অভিরাজ। হাল্কা নরম বাতাসে ভেসে আসছে মন ভালো করা সুর। একটা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়ায় কিশোরী। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় শরীর। শাড়ি লেপ্টে যায় শরীরে। উষশী’র কোমল উদর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অভিরাজ তাকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছে। প্রিয়তমার সৌন্দর্যের এক বিন্দু ভাগ দিবে না কাউকে। সবটাই শুধু তার।

বৃষ্টির জন্য মেলার ছোট ছোট দোকান গুলোর বাইরে ভীড় কমে গিয়েছে। সবাই জড়সড় হয়ে আশ্রয় নিয়েছে চারপাশে। ওমন সময় রত্না’র কণ্ঠ বেজে উঠল।
“বিরক্তি, এই সময়েই কেন বৃষ্টি নামতে হলো!”

“ঘোরাঘুরির বারোটা বেজে গেল।”

“হুম। কখন থামবে কে জানে। রাতের যাত্রাটা বুঝি দেখতেই পাব না।”

“থেমে যাবে। এত চিন্তা করো না।”

“হুম।”

ইরা আর রত্নার কথা গুলো শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই অভিরাজ আর উষশী’র কথা স্মরণ হলো লাবণ্য’র। এরা তো সাথে নেই। আলাদা ঘুরছে নিশ্চয়ই। লাবণ্য চারপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।
“কি দেখিস আপু?”

ঈশান ওদের সাথেই আছে। তবে বড়ো চুপচাপ ছিল। হঠাৎ লাবণ্যকে প্রশ্ন করায় সকলেই নজর দিল।
“কিছু না।”

“তোরা কি আরো ঘুরবি?”

“হ্যাঁ।”

“আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। ভালো লাগছে না।”

“কেন?”

রত্নার প্রশ্নে ঘুরে তাকাল ঈশান। একটু শ্বাস ফেলে বলল,”এই বৃষ্টির মাঝে থেকে কি করব?”

“রাতে যাত্রা আছে তো। তাছাড়া আরেকটুপর ই বৃষ্টি থেমে যাবে। থেকে গেলে কি হয়?”

রত্নার সাথে সাথে ইরা ও জোরাজুরি করতে লাগল। ঈশানের ভালো লাগছে না। তবু থাকতে হলো তাকে।

কাক ভেজা হয়ে ফিরল উষশী,অভিরাজ। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আকাশ এখনো অশান্ত হয়ে আছে। আজ বৃষ্টি থামবে বলে মনে হচ্ছে না। লাবণ্য অনেক সময় ধরেই কল করছিল। গাড়িতে এসে ফোনের স্ক্রিনে মিস কল দেখতে পেল অভিরাজ।
“কোথায় তোরা?”

“মেলার বাইরে আছি।”

“ভেতরে আসছিস না কেন?”

“এই বৃষ্টিতে কি করব? তাছাড়া যাত্রাপালা ও ক্যানসেল হয়ে গেছে। আর উষশী,আমি দুজনেই নদীতে নৌকা নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা বেশ খারাপ। এখন আর মেলায় যাব না। সোজা ফিরে যাচ্ছি।”

এই অবধিই কথা হলো ওদের। লাবণ্য’র এত খারাপ লাগল। উষশী আর অভিরাজের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত চোখে ভাসছে। নৌকায়, বৃষ্টিতে ঠিক কতটা কাছাকাছি ছিল তারা সেটাই কল্পণায় আসছে। বুকের ভেতরের রিক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমশ। যন্ত্রণায় পুরো শরীর পু ড়ে যাচ্ছে। দু চোখ গভীর লাল। বৃষ্টির মধ্যেই দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। বৃষ্টির জলে দু চোখের নোনা জল মিশে যেতে লাগল। যেন কষ্ট লুকানোর নিদারুণ প্রয়াস।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (২৬)

ছোঁয়া হয়ত এই সময় তার প্রিয়তমের বুকে মাথা রেখে সুখ গুনে চলেছে। সময়টা মধ্য রাত কি না। দিনটা যতটা স্বস্তিতে গত হয় রাত ততই হয় বেদনার। রাতের এই সময়টায় এসে ঈশানের খুব করে মনে হয় নিজের একটা মানুষ প্রয়োজন। কিন্তু সেই মানুষের জায়গাটায় ছোঁয়া ছাড়া আর কাউকেই কল্পনা করতে পারে না সে। অথচ এটা ভীষণ অনুচিত। তীব্র বেদনা নিয়ে নিকোটিনে বুক পো ড়া য় সে। তার দু চোখে ঘুম না হওয়ার ছাপ যেন অন্যরকম সুর তুলেছে। শরীরের গঠন ভেঙে গিয়েছে এ কদিনেই। মনে হচ্ছে কত দিন ধরে যত্ন নেওয়া হয় না! বেসিং এর আয়নায় নিজের মুখশ্রী দেখতে দেখতে চোখে মুখে পানি দিচ্ছিল ঈশান। রাতের আঁধারে ঝিঝি পোকার দল শব্দ করছে। রাতের আকাশে নিশ্চয়ই মেঘ জমেছে। সন্ধ্যা থেকেই তো বৃষ্টি হলো। বড়ো অধৈর্য হয়ে ঘরে এল ঈশান। ক্লোজেট ঘেটে ঘুমের ঔষধ বের করল। প্রতি রাতে ঘুমের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। তবু কখনো কখনো দু চোখে ঘুম নামে না। নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে তার বেঁচে থাকা। কান্নারা হানা দিচ্ছে দু চোখে। মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল সে। এত কষ্ট কেন হয় তার?

উষশী ঘুম ভাঙতেই লাবণ্যকে পাশে পেল না। তাকে পাওয়া গেলে বারান্দায়। গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে অদূরের ফুল গাছ গুলো দেখছে সে। তার চুল গুলো এলোমেলো। গায়ে রাতের পোশাক। যা ভিজে পুনরায় শুকিয়েছে।
“আপু, তুমি কি গত রাতে ঘুমাতে আসো নি?”

কথা নেই লাবণ্য’র মুখে। সে হাল্কা হাতে মেয়েটির বাহু ছুঁতেই সর্বাঙ্গে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল।
“তোমার জ্বর এসেছে! আপু, আপু কি হয়েছে তোমার?”

ব্যগ্র হয়ে উঠেছে উষশী’র কণ্ঠ। লাবণ্য’র সাড়া না পেয়ে পাগলের মতো ছুটে বেরিয়ে পড়ল। পথিমধ্যে মালতির সাথে দেখা হলো।
“উষশী, এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?”

“লাবণ্যপু, লাবণ্যপু’র যেন কি হয়েছে।”

কথা জড়িয়ে আসছে মেয়েটির। মালতি সময় নষ্ট না করে সোজা লাবণ্য’র ঘরে এল। লাবণ্য তখন মেঝেতে বসে পড়েছে। শরীরে ভীষণ উত্তাপ।
“হায় আল্লাহ! জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। কাউকে ডাকিস নি কেন?”

সাড়া নেই লাবণ্য’র। ওর চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে এসেছে। উষশী’র কণ্ঠ পেয়ে ইতোমধ্যেই অভিরাজ চলে এসেছে। মিনিটের মধ্যেই চলে এল বাড়ির বাকি সদস্য। লাবণ্য শেষ বারের মতো দেখছে সবাইকে। তার চোখ দুটো বিষাদে মাখা। সে নিরলস ভাবে তাকিয়ে রইল অভি’র পানে। তারপরই ফুরিয়ে এল তার শক্তি। অসাঢ় হয়ে গেল সর্বাঙ্গ। ক্ষণিকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মেয়েটি।

অসুস্থ লাবণ্য। তার শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো দুদিন পর। অভিরাজ এই দুদিন অনেক বেশি যত্ন করেছে তার। সেই থেকেই সকলের মাঝে একটা গুঞ্জন চলছে। সবাই ভাবছে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে কিংবা হবে। ছোট বেলা থেকে বন্ধু আর কাজিন হওয়াতে এই সম্পর্কের নাম দিতে অস্বস্তি হচ্ছে ওদের। এমন সব ভাবনাই চলছে সকলের মাঝে। দুদিনে একটিবার কথা হয় নি উষশী’র সাথে। মেয়েটিও আসে নি সময় নিয়ে। সে রত্নার সাথে ঘুমিয়েছে। ঘর থেকেও খুব একটা বের হয় নি। লাবণ্য একটু সুস্থ অনুভব করতেই উষশীকে খুঁজতে লাগল অভিরাজ। পেয়েও গেল। মেয়েটি বাড়ির পেছনের বাগানে বসে আছে। সেখানে একটা পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরের জলে ছোট ছোট হাঁসের বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেগুলোই মুগ্ধ নয়নে দেখছে সে।
“ভোর বেলা একা একা এখানে কি করছো?”

না ঘুরেই উষশী বলল,”হাঁসের বাচ্চা দেখতে এসেছি। রত্না আপু বলেছিল দুই সপ্তাহ আগে বাচ্চা গুলো হয়েছে।”

“তাই বলে একা আসবে?”

“একা এলে কি হবে?”

“অনেক সমস্যা আছে। তুমি এই পরিবেশের সাথে পরিচিত নও উষশী।”

মেয়েটির পাশে বসল অভিরাজ। উষশী কোনো কথা না বাড়িয়ে ফের পুকুরের জলে দৃষ্টি ফেলল। মাথার উপর আম গাছ। সেখানে একটা পাখির বাসাও রয়েছে। পাখির বাচ্চা গুলো চি চি শব্দে ডেকে তুলেছে। কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করছে। কিশোরীর ঘনিষ্ঠ হলো অভি। কণ্ঠে একরাশ মায়া ডুবিয়ে ডাকল।
“রেইন,রাগ হয়েছে আমার উপর?”

উষশী বুঝতে পারছে না। সে রাগ করেছে কি না জানে না। তবে একটা কষ্ট,অভিমান ঠিক ই জড়ো হয়েছে।
“জানি রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। লাবণ্য’র যত্ন নিতে গিয়ে তোমার খোঁজ রাখা হয় নি।”

এবার ও উত্তর নেই উষশী’র। অভি’র খারাপ লাগছে। কিশোরীকে নিজের দিকে ফেরাল সে।
“তুমি তো চালাক বাচ্চা। সব বুঝতে পারো। আসলে আমি ভুল করে ফেলেছি। একদমই উচিৎ হয় নি। সরি রেইন।”

ওর কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে উঠল উষশী। বুকে হাত রেখে বলল,”এখানটায় সব সময় রাখলেই হবে। শারীরিক দূরত্ব আমার কাছে ম্যাটার করে না। তুমি শুধু ভালোবেসে যেও। কখনো ঘৃণা কোরো না। তোমার ভালোবাসার আন্দোলন সহ্য করে নিলেও ঘৃণা’র উত্তাপ সহ্য হবে না অভিরাজ।”

বর্তমান
অভি পারে নি মেয়েটিকে ঘৃণা করতে। আজ এত বছর হয়ে গেল যোগাযোগ নেই দুজনের। তবু একবিন্দু ভালোবাসা কমে নি অভিরাজের। সে সবটুকু দিয়ে একই ভাবে উষশীকে ভালোবেসে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটি তার সাথে ছলনা করেছে। চোখের কার্নিশে জমে থাকা জলটুকু বুড়ো আঙুলে মুছে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো সে। এক অজানা পথে।

ব্যবসায়িক নানা ঝামেলা নিতে নিতে আসাদ প্রায় অসুস্থ। ঈশান ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার দ্বারা এসব কখনোই হবে না সকলেই জানে। সে একটা ভালো পজিশনে জব করছে। ছোঁয়া’র বিয়ের পর একেবারেই ভেঙে বসেছিল। কোনো মতে গ্রাজুয়েশন শেষ করল। তারপরের একটা বছর একেবারেই ঘরকুনো হয়ে বসেছিল। এ পর্যন্ত আসতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন নিজের মতো ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। তাকে কেউ জোর করে না। বাড়ির দুই ছেলেই যদি এভাবে ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নেয় তবে ভবিষ্যৎ যে খুবই খারাপ হবে তা বেশ ভালোই বুঝেন আসাদ। পরিবারে ভাঙন ধরেছিল। সবাই আলাদা অবস্থান করছে দুইটা বছর। এখন আবার সবাই এক হয়েছে। ওনারা দুই ভাই ও আজকাল তেমন কাজ করতে পারে না। সকলেরই বয়স হচ্ছে। বিদেশের ডিল গুলো একটার পর একটা ক্যানসেল হচ্ছে। চিন্তায় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। ওনার এই অসুস্থ শরীর দেখেই হয়ত অভিরাজের মায়া হলো। সে নিজ থেকেই বলল ব্যবসায় জয়েন করবে। এই সময়টা পরিবারের প্রতিটা মানুষ বিস্মিত হয়ে রইল। অভিরাজ যে আগের মতো হবে সেই আশা বহু আগেই বাদ দিয়েছিল সকলে।

আমিনা আর আসাদ নিজ ঘরে বসে আছেন। লাবণ্য নক করে রুমে এল। হুট করেই বিশেষ দরকারে ডাকা হয়েছে তাকে।
“বড়ো আব্বু,কি বলতে চাইছিলে?”

“অভি’র বদল চোখে পড়ার মতো। আমার বিশ্বাস ও খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।”

“আমার ও তেমনটাই মনে হচ্ছে।”

“লাবণ্য মা, আমার ছেলের জন্য অনেক করেছিস তুই। বিনিময়ে কিছুই পেলি না। এখনো একই ভাবে করে যাচ্ছিস। তোকে যে কি বলব বুঝতে পারছি না।”

“এভাবে বলো কেন বড়ো আম্মু? আমি কি তোমাদের মেয়ে নই?”

“সেই জন্যেই তো আরেকটা আবদার করব মা।”

লাবণ্য আমিনার বাহু জড়িয়ে ধরল। ওনার সাথে ছোট থেকেই আদুরে সম্পর্ক ওর।
“কি বলবে?”

আমিনা স্বামীর পানে তাকালেন। ওনার রুগ্ন চেহারাটা আজ আরো বেশি মলিন দেখাচ্ছে।
“চাচ্ছিলাম অভি’র সাথে বিজনেসে তুই ও জয়েন কর।”

“হসপিটালের কি হবে বড়ো আব্বু?”

“সেই জন্যে তো আমরা আছিই। আর তুই তো তোর প্র্যাকটিস চালিয়ে যাবি। অভি সব থেকে বেশি তোর সান্নিধ্য পছন্দ করে। তুই যদি এত গুলো বছর আগলে না রাখতি তাহলে ছেলেটা ম রে ই যেত।”

লাবণ্য মাথা নত করে ফেলল। ওর দু চোখ নিশ্চয়ই ভিজে উঠেছে। আমিনা মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
“ছোঁয়া আর ইরা তো পুরো দমে সংসারী হয়ে উঠেছে। ঈশান ভবঘুরে। পারিবারিক ব্যবসায় ভীষণ অনীহা। তুই ই ভরসা মা। ব্যবসার সাথে সাথে অভি’র খেয়াল একমাত্র তুই ই রাখতে পারবি।”

পরের সপ্তাহে অভিরাজের সাথে লাবণ্য ও ব্যবসায় জয়েন করল। দুজনের এক সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটা সময় হসপিটালের সমস্ত দায়িত্ব তো ওদের উপর ই ছিল। দুজনে ব্যবসায় ও ভালো করবে এই নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রথম সপ্তাহেই বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ল ওরা। পুরো কাজ বুঝে নিয়ে একটা সুন্দর প্ল্যান ও করে ফেলল। গত ছয় মাসে ডেনমার্কের সাথে চারটে ডিল ক্যানসেল হয়েছে। এতে করে কোম্পানি’র হিউজ পরিমাণে লস হয়েছে। সেই লসের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে শত কোটি টাকায়! তাদের কোম্পানি কখনো এত লসের মুখোমুখি হয় নি। অভিরাজ একটা অপরাধ বোধে ভুগছে। ছেলে হিসেবে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। এই সময়ে লাবণ্য তাকে সান্ত্বনা দিল। আশ্বাস দিল সব ঠিক হয়ে যাবে বলে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (২৬)

ছোঁয়া হয়ত এই সময় তার প্রিয়তমের বুকে মাথা রেখে সুখ গুনে চলেছে। সময়টা মধ্য রাত কি না। দিনটা যতটা স্বস্তিতে গত হয় রাত ততই হয় বেদনার। রাতের এই সময়টায় এসে ঈশানের খুব করে মনে হয় নিজের একটা মানুষ প্রয়োজন। কিন্তু সেই মানুষের জায়গাটায় ছোঁয়া ছাড়া আর কাউকেই কল্পনা করতে পারে না সে। অথচ এটা ভীষণ অনুচিত। তীব্র বেদনা নিয়ে নিকোটিনে বুক পো ড়া য় সে। তার দু চোখে ঘুম না হওয়ার ছাপ যেন অন্যরকম সুর তুলেছে। শরীরের গঠন ভেঙে গিয়েছে এ কদিনেই। মনে হচ্ছে কত দিন ধরে যত্ন নেওয়া হয় না! বেসিং এর আয়নায় নিজের মুখশ্রী দেখতে দেখতে চোখে মুখে পানি দিচ্ছিল ঈশান। রাতের আঁধারে ঝিঝি পোকার দল শব্দ করছে। রাতের আকাশে নিশ্চয়ই মেঘ জমেছে। সন্ধ্যা থেকেই তো বৃষ্টি হলো। বড়ো অধৈর্য হয়ে ঘরে এল ঈশান। ক্লোজেট ঘেটে ঘুমের ঔষধ বের করল। প্রতি রাতে ঘুমের জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। তবু কখনো কখনো দু চোখে ঘুম নামে না। নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে তার বেঁচে থাকা। কান্নারা হানা দিচ্ছে দু চোখে। মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল সে। এত কষ্ট কেন হয় তার?

উষশী ঘুম ভাঙতেই লাবণ্যকে পাশে পেল না। তাকে পাওয়া গেলে বারান্দায়। গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে অদূরের ফুল গাছ গুলো দেখছে সে। তার চুল গুলো এলোমেলো। গায়ে রাতের পোশাক। যা ভিজে পুনরায় শুকিয়েছে।
“আপু, তুমি কি গত রাতে ঘুমাতে আসো নি?”

কথা নেই লাবণ্য’র মুখে। সে হাল্কা হাতে মেয়েটির বাহু ছুঁতেই সর্বাঙ্গে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল।
“তোমার জ্বর এসেছে! আপু, আপু কি হয়েছে তোমার?”

ব্যগ্র হয়ে উঠেছে উষশী’র কণ্ঠ। লাবণ্য’র সাড়া না পেয়ে পাগলের মতো ছুটে বেরিয়ে পড়ল। পথিমধ্যে মালতির সাথে দেখা হলো।
“উষশী, এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?”

“লাবণ্যপু, লাবণ্যপু’র যেন কি হয়েছে।”

কথা জড়িয়ে আসছে মেয়েটির। মালতি সময় নষ্ট না করে সোজা লাবণ্য’র ঘরে এল। লাবণ্য তখন মেঝেতে বসে পড়েছে। শরীরে ভীষণ উত্তাপ।
“হায় আল্লাহ! জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। কাউকে ডাকিস নি কেন?”

সাড়া নেই লাবণ্য’র। ওর চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে এসেছে। উষশী’র কণ্ঠ পেয়ে ইতোমধ্যেই অভিরাজ চলে এসেছে। মিনিটের মধ্যেই চলে এল বাড়ির বাকি সদস্য। লাবণ্য শেষ বারের মতো দেখছে সবাইকে। তার চোখ দুটো বিষাদে মাখা। সে নিরলস ভাবে তাকিয়ে রইল অভি’র পানে। তারপরই ফুরিয়ে এল তার শক্তি। অসাঢ় হয়ে গেল সর্বাঙ্গ। ক্ষণিকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মেয়েটি।

অসুস্থ লাবণ্য। তার শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো দুদিন পর। অভিরাজ এই দুদিন অনেক বেশি যত্ন করেছে তার। সেই থেকেই সকলের মাঝে একটা গুঞ্জন চলছে। সবাই ভাবছে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে কিংবা হবে। ছোট বেলা থেকে বন্ধু আর কাজিন হওয়াতে এই সম্পর্কের নাম দিতে অস্বস্তি হচ্ছে ওদের। এমন সব ভাবনাই চলছে সকলের মাঝে। দুদিনে একটিবার কথা হয় নি উষশী’র সাথে। মেয়েটিও আসে নি সময় নিয়ে। সে রত্নার সাথে ঘুমিয়েছে। ঘর থেকেও খুব একটা বের হয় নি। লাবণ্য একটু সুস্থ অনুভব করতেই উষশীকে খুঁজতে লাগল অভিরাজ। পেয়েও গেল। মেয়েটি বাড়ির পেছনের বাগানে বসে আছে। সেখানে একটা পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরের জলে ছোট ছোট হাঁসের বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেগুলোই মুগ্ধ নয়নে দেখছে সে।
“ভোর বেলা একা একা এখানে কি করছো?”

না ঘুরেই উষশী বলল,”হাঁসের বাচ্চা দেখতে এসেছি। রত্না আপু বলেছিল দুই সপ্তাহ আগে বাচ্চা গুলো হয়েছে।”

“তাই বলে একা আসবে?”

“একা এলে কি হবে?”

“অনেক সমস্যা আছে। তুমি এই পরিবেশের সাথে পরিচিত নও উষশী।”

মেয়েটির পাশে বসল অভিরাজ। উষশী কোনো কথা না বাড়িয়ে ফের পুকুরের জলে দৃষ্টি ফেলল। মাথার উপর আম গাছ। সেখানে একটা পাখির বাসাও রয়েছে। পাখির বাচ্চা গুলো চি চি শব্দে ডেকে তুলেছে। কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করছে। কিশোরীর ঘনিষ্ঠ হলো অভি। কণ্ঠে একরাশ মায়া ডুবিয়ে ডাকল।
“রেইন,রাগ হয়েছে আমার উপর?”

উষশী বুঝতে পারছে না। সে রাগ করেছে কি না জানে না। তবে একটা কষ্ট,অভিমান ঠিক ই জড়ো হয়েছে।
“জানি রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। লাবণ্য’র যত্ন নিতে গিয়ে তোমার খোঁজ রাখা হয় নি।”

এবার ও উত্তর নেই উষশী’র। অভি’র খারাপ লাগছে। কিশোরীকে নিজের দিকে ফেরাল সে।
“তুমি তো চালাক বাচ্চা। সব বুঝতে পারো। আসলে আমি ভুল করে ফেলেছি। একদমই উচিৎ হয় নি। সরি রেইন।”

ওর কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে উঠল উষশী। বুকে হাত রেখে বলল,”এখানটায় সব সময় রাখলেই হবে। শারীরিক দূরত্ব আমার কাছে ম্যাটার করে না। তুমি শুধু ভালোবেসে যেও। কখনো ঘৃণা কোরো না। তোমার ভালোবাসার আন্দোলন সহ্য করে নিলেও ঘৃণা’র উত্তাপ সহ্য হবে না অভিরাজ।”

বর্তমান
অভি পারে নি মেয়েটিকে ঘৃণা করতে। আজ এত বছর হয়ে গেল যোগাযোগ নেই দুজনের। তবু একবিন্দু ভালোবাসা কমে নি অভিরাজের। সে সবটুকু দিয়ে একই ভাবে উষশীকে ভালোবেসে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটি তার সাথে ছলনা করেছে। চোখের কার্নিশে জমে থাকা জলটুকু বুড়ো আঙুলে মুছে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো সে। এক অজানা পথে।

ব্যবসায়িক নানা ঝামেলা নিতে নিতে আসাদ প্রায় অসুস্থ। ঈশান ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার দ্বারা এসব কখনোই হবে না সকলেই জানে। সে একটা ভালো পজিশনে জব করছে। ছোঁয়া’র বিয়ের পর একেবারেই ভেঙে বসেছিল। কোনো মতে গ্রাজুয়েশন শেষ করল। তারপরের একটা বছর একেবারেই ঘরকুনো হয়ে বসেছিল। এ পর্যন্ত আসতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন নিজের মতো ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। তাকে কেউ জোর করে না। বাড়ির দুই ছেলেই যদি এভাবে ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নেয় তবে ভবিষ্যৎ যে খুবই খারাপ হবে তা বেশ ভালোই বুঝেন আসাদ। পরিবারে ভাঙন ধরেছিল। সবাই আলাদা অবস্থান করছে দুইটা বছর। এখন আবার সবাই এক হয়েছে। ওনারা দুই ভাই ও আজকাল তেমন কাজ করতে পারে না। সকলেরই বয়স হচ্ছে। বিদেশের ডিল গুলো একটার পর একটা ক্যানসেল হচ্ছে। চিন্তায় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। ওনার এই অসুস্থ শরীর দেখেই হয়ত অভিরাজের মায়া হলো। সে নিজ থেকেই বলল ব্যবসায় জয়েন করবে। এই সময়টা পরিবারের প্রতিটা মানুষ বিস্মিত হয়ে রইল। অভিরাজ যে আগের মতো হবে সেই আশা বহু আগেই বাদ দিয়েছিল সকলে।

আমিনা আর আসাদ নিজ ঘরে বসে আছেন। লাবণ্য নক করে রুমে এল। হুট করেই বিশেষ দরকারে ডাকা হয়েছে তাকে।
“বড়ো আব্বু,কি বলতে চাইছিলে?”

“অভি’র বদল চোখে পড়ার মতো। আমার বিশ্বাস ও খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।”

“আমার ও তেমনটাই মনে হচ্ছে।”

“লাবণ্য মা, আমার ছেলের জন্য অনেক করেছিস তুই। বিনিময়ে কিছুই পেলি না। এখনো একই ভাবে করে যাচ্ছিস। তোকে যে কি বলব বুঝতে পারছি না।”

“এভাবে বলো কেন বড়ো আম্মু? আমি কি তোমাদের মেয়ে নই?”

“সেই জন্যেই তো আরেকটা আবদার করব মা।”

লাবণ্য আমিনার বাহু জড়িয়ে ধরল। ওনার সাথে ছোট থেকেই আদুরে সম্পর্ক ওর।
“কি বলবে?”

আমিনা স্বামীর পানে তাকালেন। ওনার রুগ্ন চেহারাটা আজ আরো বেশি মলিন দেখাচ্ছে।
“চাচ্ছিলাম অভি’র সাথে বিজনেসে তুই ও জয়েন কর।”

“হসপিটালের কি হবে বড়ো আব্বু?”

“সেই জন্যে তো আমরা আছিই। আর তুই তো তোর প্র্যাকটিস চালিয়ে যাবি। অভি সব থেকে বেশি তোর সান্নিধ্য পছন্দ করে। তুই যদি এত গুলো বছর আগলে না রাখতি তাহলে ছেলেটা ম রে ই যেত।”

লাবণ্য মাথা নত করে ফেলল। ওর দু চোখ নিশ্চয়ই ভিজে উঠেছে। আমিনা মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
“ছোঁয়া আর ইরা তো পুরো দমে সংসারী হয়ে উঠেছে। ঈশান ভবঘুরে। পারিবারিক ব্যবসায় ভীষণ অনীহা। তুই ই ভরসা মা। ব্যবসার সাথে সাথে অভি’র খেয়াল একমাত্র তুই ই রাখতে পারবি।”

পরের সপ্তাহে অভিরাজের সাথে লাবণ্য ও ব্যবসায় জয়েন করল। দুজনের এক সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটা সময় হসপিটালের সমস্ত দায়িত্ব তো ওদের উপর ই ছিল। দুজনে ব্যবসায় ও ভালো করবে এই নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রথম সপ্তাহেই বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ল ওরা। পুরো কাজ বুঝে নিয়ে একটা সুন্দর প্ল্যান ও করে ফেলল। গত ছয় মাসে ডেনমার্কের সাথে চারটে ডিল ক্যানসেল হয়েছে। এতে করে কোম্পানি’র হিউজ পরিমাণে লস হয়েছে। সেই লসের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে শত কোটি টাকায়! তাদের কোম্পানি কখনো এত লসের মুখোমুখি হয় নি। অভিরাজ একটা অপরাধ বোধে ভুগছে। ছেলে হিসেবে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। এই সময়ে লাবণ্য তাকে সান্ত্বনা দিল। আশ্বাস দিল সব ঠিক হয়ে যাবে বলে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে