বৃষ্টিভেজা আলাপন পর্ব-১৫

0
680

#বৃষ্টিভেজা_আলাপন (১৫)

“কোকো তোমার খুব প্রিয় তাই না?”

“হুম। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। ওকে খুঁজতে এসেই তো ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি। যখন ঠিকানা পেলাম তখন মম কে হারিয়ে ফেললাম।”

“চিন্তা কোরো না পেয়ে যাবে।”

“হুম। আচ্ছা ছোঁয়া আপু কি চলে এসেছে?”

“হয়ত না।”

“অনেক রাত হলো তো।”

ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে দশটা বাজে। ঈশানের কপালে কিছু ভাঁজের সৃজন হলো। কোকো মিউ মিউ করে ডেকে উঠতেই ধ্যান ভাঙল ছেলেটার।
“তুমি বসো। আমি একটু পর আসছি।”

ঈশান চলে গেলে কোকো কে কোলে তুলে নিল উষশী। ট্রেরেসে বসে থাকতে ভালো লাগছে। হাল্কা বাতাসে চুল গুলো নড়ছে। চাঁদের আলো সরাসরি শরীরে এসে পড়ছে যেন।
“কোকো,বলো তো মম এখন কি করছে।”

অবলা প্রানীটি উত্তর দেওয়ার মতো করে লাফাল। এই মুহূর্তে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে উষশী’র। তার দু চোখ ভিজে উঠেছে। ইরা এদিকেই আসছিল। উষশী’র মুখটা লক্ষ্য করে বলল,”একি উষশী। কি হয়েছে?”

“কিছু হয় নি আপু।”

“তুমি কাঁদছ কেন ডল?”

“মম এর কথা মনে আসছে।”

“পেয়ে যাবে।”

“ভালো লাগছে না। খুব খারাপ লাগছে আমার।”

ইরাকে জড়িয়ে বসে রইল উষশী। ইরা ঈষৎ নরম হাতে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“জানো ভাইয়া একটা কথা বলে। জীবন নাকি কোনো কিছুর জন্য থেমে থাকে না। তোমার ও থাকবে না। তুমি তোমার আম্মুকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবে।”

কথাটির মর্মার্থ কি তা জানে না উষশী। তবে সে চোখের জল মুছে নিল। গাড়ির আওয়াজ হতেই বুঝল ছোঁয়া এসেছে। মেয়েটার শরীরে থাকা কুসুম রঙা শাড়িটা বড়ো চোখে লাগছে।

অভি’র দেওয়া নীল পাথরের পেন্ডেন্টটা নাড়াচাড়া করছে উষশী। খুবই সুন্দর এটা। অনেকটা দামি তা উষশী বুঝতে পারে। মনে মনে এর দাম ও কল্পণা করে ফেলল মেয়েটি।
“তোমার হাতে কি উষশী?”

“একটা পেন্ডেন্ট।”

“দেখি। এটা তো খুব সুন্দর।”

“হুম।”

“আগে তো দেখি নি। কে দিয়েছে?”

“মিস্টার রাগী।”

“অভি দিয়েছে? আমায় তো বলল না কিছু।”

শেষ বাক্যের জবাব মিলল না লাবণ্য’র। সে পেন্ডেন্টটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,”রাতে আবার গোসল করেছ?”

“হ্যাঁ।”

“এভাবে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে। পরের বার এমনটা করবে না। কেমন?”

“ঠিক আছে আপু।”

উষশী লাবণ্য’র কোলে মাথা রাখল। লাবণ্যকে বিশেষ পছন্দ করে সে। কেমন মা মা গন্ধ থাকে। লাবণ্য উষশী’র বাদামী রঙা চুল গুলোতে হাত গলিয়ে দিল। ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে সে।

অভিরাজের চোখে ঘুম নেই। সে সারাটা রাত একটা বিষয় কল্পণা করেছে। তার আর উষশী’র বয়সের ফারাক এক যুগ। অর্থাৎ একটা জেনারেশনের গ্যাপ। শুরু’র দিকে অভি বেশ গরম মেজাজ দেখিয়েছে। উষশী ও তাই। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু হুট করেই দুজনের সম্পর্ক মসৃণ হয়ে এল। লাবণ্য’র থেকে, তার কাছে বেশি সময় কাটায় উষশী। ভরসা পায় অনেক। অভি কখনোই মেয়েটির প্রতি সরু অনুভূতিটা অস্বীকার করতে পারবে না। এটা যে শারীরিক মোহ নয় তা এ কদিনে বেশ স্পষ্ট। উষশী সুন্দরী কিশোরী। তাকে দেখে যে কারো ভালো লাগার কথা। তবে অভি’র মনে যা চলে তা ভালো লাগার বাইরে অন্য একটি শব্দ। তবে উষশী? উষশী’র মনে কি এমন কিছু হয়? এ প্রশ্নের জবাব শুধু উষশীই দিতে পারবে। এরপর ও অনেক রকমারি ঝামেলা রয়েছে। সেই থেকে ভাবুক হয়ে আছে ছেলেটা। যন্ত্রণা’য় মস্তিষ্ক জ্যাম হয়ে গেছে। ভোর হতেই চা দিতে চলে এসেছে লাবণ্য। মেয়েটা অভি’র সব কাজেই সঙ্গ দেয়।
“শুনলাম সারারাত জেগে ছিলি।”

“কে বলল?”

“দারোয়ান কাকা। তোর রুমের লাইট অন ছিল নাকি।”

“হুম। চায়ে চিনি এত বেশি দিয়েছিস কেন?”

“বেশি হয়ে গেছে? দে বদলে এনে দিচ্ছি।”

“না থাক।”

চায়ে চিনির পরিমাণ ঠিকই আছে। শুধুমাত্র প্রসঙ্গ বদলাতে কথাটা বলেছে অভিরাজ। লাবণ্য ক্লোজেট খুলে দেখল সব এলোমেলো হয়ে আছে। সে সব গুলো গুছিয়ে দিল।
“তুই বিয়ে করছিস কবে?”

“যেদিন ইচ্ছে হবে।”

“সবার মতো তুই ও পাগল হয়েছিস লাবণ্য? বয়স তো বেড়ে যাচ্ছে।”

“সবে ছাব্বিশ।”

“তোর জন্য পাত্র দেখছি আমি। কবে আসবে বল।”

“মানা করে দে।”

“লাবণ্য! শেষমেশ বিয়ে না করার পরিকল্পনা করিস না।”

“আমার কথা ছাড়। তোর কথা বল। কবে বিয়ে করবি?”

“তুই রাজি থাকলে আজই করব।”

মৃদু হাসল লাবণ্য। অভিরাজ বরাবরই এসব কথা বলে থাকে। অথচ এর কোনোটাই সত্য নয়। সবটাই মজার ছলে।
“কোকোর ক্ষিধে পেয়েছে।”

দরজার কাছ থেকে কথাটা বলল উষশী। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অভিরাজ।
“ভেতরে এসো উষশী।”

“কোকো খাবারের জন্য খুব লাফাচ্ছে।”

অভি উঠতে যেতেই বাঁধা দিল লাবণ্য। হাতে থাকা বই গুলো বুক স্লেফে রেখে বলল,
“আমি যাচ্ছি। তুই বোস।”

উষশী’র চোখে এখনো ঘুম। সম্ভবত কোকো’র চেচামেচিতে ঘুম ভেঙেছে। ছিমছাম শরীরে লেপ্টে থাকা জামাটা বেশ অগোছালো হয়ে আছে। কাছিয়ে এল অভিরাজ। হাতের জামাটা গুটিয়ে দিয়ে শুধাল,”ঘুমাও নি একদম?”

“ঘুমিয়েছি তো।”

“চোখ ফোলা ফোলা লাগছে যে।”

উষশী বিষয়টা গোপন করল। গতরাতে বেশ কান্না করেছে সে। মা কে ভীষণ স্মরণ হচ্ছিল তার। অভি মুখ দেখে খুব একটা বুঝতে পারল না। সে ভাবল মেয়েটি’র ঘুমের সমস্যা। রেস্ট নেওয়ার জন্য রুমে পাঠিয়ে দিল। দুই ঘন্টা পর ঘুম থেকে উঠল উষশী। ততক্ষণে বেরিয়ে পড়েছে অভিরাজ। হসপিটালটা ওর বাবা আসাদের। ওনার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু ছেলে আবার ডাক্তার হতে নারাজ। অবশ্য ওনার শখ পূরণ করেছে ভাতিজি লাবণ্য। অভিরাজ আর লাবণ্য’র মাঝে বন্ধুত্ব খুব ভালো হওয়ার দরুন সবাই ভেবেছিল একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয় নি। দীর্ঘদিন একে অপরের খেয়াল রাখলেও প্রণয়টা ঠিক হয়ে উঠে নি। উষশী অভিরাজের রুমে এসে বসে রইল। এই রুমের সব কিছু ওর আপন লাগে। রুমের এক পাশের দেয়ালে অভিরাজের বিশাল এক ছবি টানানো। ছেলেটা দেখতে কোনো হিরোর থেকে কম নয়। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সে।
“উষশী, কি করছো? নাস্তা করবে না?”

ছোঁয়া তাকেই খুঁজতে এসেছিল। মেয়েটাকে পুরো বাড়ি খুঁজেও যখন পাওয়া গেল না তখন অভি’র রুমে এসেছে সে।
“জানো সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে।”

“কেন?”

“তুমি কোথাও নেই।”

“আমি তো এখানেই ছিলাম।”

“অভি ভাইয়ার রুমে কেউ তো আসে না। তাই এখানটা খোঁজা হয় নি। তুমি তো নাস্তাই কর নি। আসো আমার সাথে।”

ছোঁয়া প্রয়োজন মতো নাস্তা দিল। ছোট আলুর তরকারি’র সাথে লুচি করা হয়েছে। এ বাড়িতে লুচি তরকারি বেশ পছন্দের খাবার। তেল চিটচিটে হওয়ায় একটা লুচিও খেতে পারল না উষশী। মেয়েটা একটু বেশিই স্বাস্থ্য সচেতন। তাকে গরম গরম চা দেওয়া হলো। ছোঁয়া সমস্ত কিছুর তদারকি করছে। লাবণ্য তাকে বিশেষ ভাবে উষশী’র খেয়াল রাখতে বলেছে।

পুরো বিকেলেও অভি কিংবা লাবণ্য’র দেখা পেল না উষশী। এ বাড়িতে ওর নিকট সব থেকে পরিচিত ওরাই। সারাদিনে কারো সাথেই কথা বলল না সে। এমনকি কোকো খাবারের বায়না করলেও না। কোকো এখন কোথায় আছে তা ও জানে না উষশী। অভি কিংবা লাবণ্য না থাকায় তার মন ভীষণ খারাপ।
“কার কথা ভাবছ?”

ঈশানকে পেয়ে ভালো লাগছে উষশী’র। সে নিজের পাশটা খালি করে দিল।
“লেট মি গেইস। উম ব্রো এর কথা ভাবছ?”

“নো।”

“তাহলে?”

“কারো না। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”

“আমি তো ভবঘুরে। সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াই।”

“আমাকে নিলে না কেন?”

“তুমি যেতে চাও?”

“হ্যাঁ।”

“এখন যাবে?”

“হুম।”

উষশীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ঈশান। ছেলেটাকে প্রথম থেকে ভালো লাগে উষশী’র। বিশেষ করে ওর কথা বলার ধরন।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে