বুকপকেটের বিরহিণী পর্ব-৮+৯

0
333

#বুকপকেটের_বিরহিণী
কলমে: মম সাহা
অষ্টম পর্ব:

(১৩)

রাতের রাস্তায় শূন্য চোখে কেবল তাকিয়ে রয়েছে কুকুর। এছাড়া এই পথে আর কোনো জনমানসের চিহ্ন নেই। কুকুরটা থেকে-থেকে কয়বার উচ্চস্বরে ডাকছ তারপর আবার চারপাশ শুনশান নীরবতায় চুপ হয়ে যাচ্ছে।
কুকুরটার পাশেই বসে আছে বিন্দু। চিন্তায় কপালে তার ভাঁজ! কাজ থেকে আজ ছুটি পেয়েছি দেরিতে যার ফলে বেশ খানিকটা রাতই নেমে গিয়েছে বলা যায়। গাড়ি-ঘোড়া না পাওয়াতে হেঁটেই বাসায় পৌঁছানোর মত ঠিক করেছিল কিন্তু এতেই বাঁধলো বিপত্তি। তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছানোর জন্য বড়ো রাস্তা ছেড়ে ধরেছিল গলির পথ। এই অন্ধকারে দ্রুত পা চালিয়ে এগুতে গিয়েই বিপদটা হলো। রাস্তার কিনারে থাকা ইটের সাথে পা আটকে ঠাস করে পড়ে গেলে রাস্তায়। বেশ ভালোভাবে মচকে গেলো পা-টাও। ব্যাথায় মুখ দিয়ে বের হলো চিৎকার। অথচ সাহায্য করার জন্য আশেপাশে কেউ ছিল না কেবল অবুঝ কুকুরটি ছাড়া। মচকে যাওয়া পা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়েই সে খেয়াল করল পায়ে জোর পাচ্ছে না। এত ব্যাথা পেয়েছে যে পায়ে শক্তিই দিতে পারছে না। তারপর আর কী, অসহায় হয়ে ঠাঁই বসেই রইল।

বিন্দুর ব্যাথার মাঝেই কুকুরটা আবার শব্দ করে ডেকে উঠল। এতে চমকে উঠল মেয়েটা। বেশ ঘাবড়েও গেলো আচমকা এমন শব্দে। সাথে সাথে বুকে থুতু দিল সে। কুকুরটার দিকে তাকিয়ে শাসনও শুরু করল,

“এ্যই এ্যই, তুই এত জোরে চিল্লাছ ক্যান? আমারে কী দেইখ্যা তোর চোর ডাকাইত মনে হয়? অমানুষ কুত্তা।”

কুকুরটা কী জানি কী বুঝল! বিন্দুর ধমকে একদম চুপ হয়ে গেলো। উঁচিয়ে রাখা মাথাটাও নামিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইল। মায়া হলো বিন্দুর। আহারে! ধমক দেওয়াতে কী ও কষ্ট পেল? কতক্ষণ আড় চোখে তাকিয়ে রইল কুকুরটার দিকে। অবশেষে না পেরে সে আবার ডাকল,

“থাক, কষ্ট পাইছ না। এদিকে আয় তো। তোরে ধমক দিতে চাই নাই। ভয় পাইছিলাম দেইখ্যা দিছি। রাগ করিছ না। তুই তো আমাগো হুতুমের থেইক্যাও ভালা। হুতুমরে তো একটা ধমক দিলে হের বিপরীতে দুইডা ধমক খাইতে হয়। কিন্তু তুই কি সুন্দর মাইন্যা নিলি আমার ধমক! জানছ, কেউ এমন ভাবে আমারে মানে নাই এ পইযন্ত। না না, ভুল কইছি। করবী আপা আমারে আবার বেশ মানে। একমাত্র হের কাছে গেলেই মনে হয় আমি মানুষ। নাহয় হীরণ ভাই আমার লগে যেমুন করে! আমার না মাঝে মাঝে অনেক কান্দন পায়, জানোছ?”

শেষের কথার সুরে ছিল অবুঝ অভিমান৷ মন খারাপের রেশ। কুকুরটা এবারও বিন্দুর কথা মানল। অলস গা ঝেরে বিন্দুর গা ঘেঁষে বসল। এতে খুশি হলো বিন্দু। ব্যাগ থেকে বিস্কুটের প্যাকেটটা বের করল। প্যাকেটটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে আবার কুকুরটিকে বলল

“এই বিস্কুটটা হুতুমের লাইগ্যা নিছিলাম। হেয় আবার অপেক্ষায় থাহে আমি কহন যামু, হের লাইগ্যা কিছু নিমু। হের ভাগের অর্ধেক বিস্কুট তোরেও দিলাম। নে খা…”

কথাটা বলেই সে সত্যি সত্যি অর্ধেকটা বিস্কুট কুকুরটির মুখের সামনে রাখল। কী বিস্ময়কর দৃশ্য! মানুষ কখনো মানুষের ভালোবাসার ভাগ কুকুরকে দিতে পারে? পারে না। মানুষের উচ্ছিষ্টটুকুই যদি কুকুর খায় তাও সহ্য করতে পারে না সেখানে নিজেদের ভাগ দিবে তা অসম্ভব। অথচ এই অসম্ভব কাজটুকু নির্দ্বিধায় করে ফেলল বিন্দু। কুকুরকে বিস্কুট দিল, সাথে গল্প শুনালো তার কত সুখ দুঃখের! হীরণ ভাই কবে কালো শার্ট পরেছিল আর তার বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে ছিল তা বলল। কবে মার্কেটে একটা নীল রঙের শাড়ি পছন্দ হয়েছিল আর দামাদামি করে টাকার অভাবে রেখে এসেছিল সেই শাড়িটি, সেই গল্পটিও বলতে বাদ রাখল না এই বেনামি কুকুরটিকে। কুকুরটিও ফ্যালফ্যাল চোখে গিলল সকল কথা, গল্প কিংবা বলা যায় ব্যাথা!

গল্প করতে করতে রাত আরও ঘনীভূত হলো অথচ হুঁশ নেই সেদিকে মেয়েটার। হাতে থাকা বাটন ফোনটা বন্ধ। এটা দিনের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে এ আর নতুন কিছু না। কথা বলতে বলতেই বিন্দু অনুভব করল এই শুনশান রাস্তায় চপল পায়ে কেউ এগিয়ে আসছে। কয়েকটি পদধ্বনি। বিন্দু যেন আশার আলো দেখতে পেল। সে ভুল করেও একবার ভাবলো না এখানে যারা আসছে তারা খারাপ মানুষও হতে পারে। ভালো মানুষদের এই এক সমস্যা। তারা নিজেদের ভালো মন দিয়ে বিচার করে বিধায় না ঠকা অব্দি তাদের কাছে পৃথিবীর সকলেই ভালো মানুষ। এমনকি ঠকে গেলেও এরা নিজেদের দোষী ভাবে। ভাবে, তার কারণেই হয়তো বিপরীত পক্ষ তাকে ঠকিয়েছে।

বিন্দুর আশার আলো সত্যি হলো। পথ ধরে আসা মানুষ গুলো আর কেউ নয়, করবী ও হুতুম। হুতুমের চঞ্চল পা প্রায় ছুটছে বললেও হয়। কোঁকড়া কোঁকড়া বাদামী চুল গুলো ছুটার তালে লাফাচ্ছে যেন!
করবী বিন্দুকে দেখতে পেয়ে প্রায় ছুটেই এলো। ভয়ার্ত তার মুখমন্ডল। কিছুটা হড়বড়িয়ে বলল,

“কিরে, তুই এত রাতে এখানে বসে আছিস কেন? তোকে আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজছি।”

“আগে একটু জিড়াও তো, আপা। দৌড়াইয়া তো ক্লান্ত হইয়্যা গেছো।”

করবী এবার ধাতস্থ হলো। জোরে জোরে শ্বাস ফেলল কয়েকটা। বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দ এখনো শোনা যাচ্ছে তার। করবী এবার আস্তে-ধীরে শুধাল,

“কী হয়েছে তোর? এখানে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“আর কী হইবো! ধুপ করে পইড়া গিয়া পা-টা মচকায় লাইছি। ভাঙাই গেলো কি-না সেই চিন্তায় আছি।”

পা ভাঙার কথা শুনতেই করবী ধপ করে এই ধুলোবালি মাখানো রাস্তায় হাটু ভেঙে বসে পড়ল। বিজ্ঞ হাতে পা-টাকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখল।

“কীভাবে যে তুই হাঁটা-চলা করিস আমি বুঝিনা। এত ব্যাথা পেয়েছিস জানাবি না?”

“কেমনে জানামু, কও? মোবাইল তো একটা আল্লাহ্ আল্লাহ্ কইয়া দম যায়। এইড্যা দিয়া কী কিছু করা যায়?”

করবীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। মেয়েটার ব্যাথায় ব্যাথা পেলো যেন সে-ও।

হুতুম এতক্ষণ এক ধ্যানে পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর ধীর পায়ে গিয়ে বসল বিন্দুর সাথে গা ঘেঁষে। জ্ঞানী চোখে একবার বিন্দুকে পরখ করে বলল,

“বিন্দুবালা, তুই এত ব্যাথা পাবি ক্যান? বিন্দুর মা কী তাইলে ঠিকই কয়? তোর কোনো আক্কেল জ্ঞান নাই।”

হুতুমের কথায় চিন্তিত করবী হেসে দিল। কিন্তু কপাল কুঁচকালো বিন্দু। ধমকে বলল,

“বড়োদের এহনো সম্মান দিতে শিখলি না, হুতুম।”

“তুই আবার বড়ো হইলি কবে থেইক্যা? এহনো তো বিন্দুর মা’র হাতে মাইর খাছ। যারা বড়ো তারা মাইর খায় না।”

হুতুমের কৌতূহলী ড্যাবডেবে বাদামী রঙের চোখ গুলো বিন্দুর দিকেই নিবদ্ধ। বিন্দু কীভাবে বড়ো সেটারই হয়তো হিসেবনিকেশ করতে ব্যস্ত বাচ্চাটা। করবী এবার শব্দ করেই হাসল। বলল,

“ঝগড়া থামাতো তোরা। এত ঝগড়া কীভাবে করিস দু’টো!”

বিন্দু অভিযোগ করল, “আমি ঝগড়া করি না-কি এই হুতুম করে!”

“হ, হ, এহন তো সব আমারই দুশ আর তুই হইলি অনেক ভালা।”

হুতুমের দু-হাত নাড়িয়ে কথার ভঙ্গিতে এবার না হেসে পারল না বিন্দুও। তারপর করবীর সাহায্য কোনোমতে উঠে দাঁড়াল সে। হুতুমের ছোটো হাত ধরে রওনা দিল গন্তব্যে। পথে রেখে গেলে একা কুকুরটিকে আরও সঙ্গীহীন করে। যে বিন্দুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। হয়তো এমন একটা বোকা-সোকা মেয়েকে দেখার তৃষ্ণা তারও ভীষণ!

বাসার কাছে পৌঁছাতেই আমেনা খালা মেয়েকে রাস্তার মাঝেই সশব্দে চ ড় মারলেন। করবী থাকায় এ যাত্রায় বেশি মারতে পারলেন না। কিন্তু মেয়ের পায়ে ব্যাথা শুনতেই মহিলার রণমূর্তি থিতিয়ে গেল। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আদুরে হলো তৎক্ষণাৎ। বাকি পথটুকু সে-ই হলো মেয়ের ভরসার কাঁধ। করবী হুতুমের হাত ধরে বেশ দ্রুতই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কারণ গলির মোড়ে হীরণকে দেখেছে সে। আজ হীরণ চুপচাপ। হুতুমকেও কিছু বলেনি না বলেছে বিন্দুকে। করবীর তো ভয়ে পেট মোচড় দিচ্ছে। ভার্সিটিতে ঐ দৃশ্যের পর হীরণ অবশ্য সাথে সাথেই ভার্সিটি ত্যাগ করেছিলো কিন্তু সারাটা দিন ভয়ে কাটাতে হয়েছে করবীকে। এই বুঝি হীরণ আক্রোশে ফেটে পড়ে ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেলল!

(১৪)

অপরাহ্নের ডাহুক তখন বিরহী স্বরে ডাকছে খুব দূরে। করবী নতুন টিউশনির বাসাটা থেকে বের হলো। এত অমায়িক অভিভাবক সচারাচর দেখাই যায় না এই শহরে। এত অসাধারণ একটা টিউশনি পেয়ে যাবে হুট করে তা তার কল্পনাতেও ছিল না। বিকেলের গগণ বক্ষ নীলাভ হওয়ার কথা হলেও এখানের আকাশ রঙহীন। গম্ভীর গম্ভীর বাউণ্ডুলে মেঘের আনাগোনায় ভোরে গেছে আকাশ। বিকালটাকেই যেন সন্ধ্যে মনে হচ্ছে। করবী ছাতা আনেনি সঙ্গে। বের হওয়ার সময় আকাশ ছিল ঝকঝকে পরিষ্কার। হুট করে আকাশের মন উদাস হবে সে কীভাবে জানবে?

টিউশনির বাসা থেকে বেরিয়েই সে বড়ো রাস্তায় উঠলো। এখন একটা মোবাইল শপে যাবে। একটা মোবাইল কিনতে হবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ব্যস্ত পায়ে বড়ো রাস্তায় উঠেই সে একটি মোবাইল শপে ঢুকল। সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি সুন্দর মোবাইল কিনে নিল। বাটন ফোন। মোবাইল কিনে শপ থেকে বেরুতেই দেখে ঝুম বৃষ্টিতে ডুবে আছে শহর। আকাশ ডাকছে ঘন ঘন। করবীর ছোটো মুখটি ফ্যাকাশে হলো। কিছুদিন পর পরীক্ষা, এখন সর্দি-জ্বর বেঁধে গেলে সমস্যা। তার উপর হাতে এখন টাকাও নেই। করবীর চিন্তিন মুখ শুকিয়ে এলো। এত সুন্দর বৃষ্টিও তার কাছে বিরক্তির ঠেকল। ঠিক তখনই পরিচিত পুরুষালী ভরাট কণ্ঠ ভেসে এলো,
“কী করছো?”

কণ্ঠটি তিমিরের। করবীর সেটা মুখস্থ। তাই তো তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরালো না। রয়েসয়ে ঘুরালো। স্মিত হেসে উত্তরে বলল,
“অপেক্ষা করছি।”

তিমির হাসলো। ডান ভ্রু উঁচু করে বলল, “কার?”

“বৃষ্টি কমার।”

তিমির এবার এগিয়ে এলো, দাঁড়ালো খুব নিকটে। একদম পাশাপাশি। নড়লে চড়লে গায়ের সাথে গা লেগে যাওয়ার মতন কাছাকাছি। নিকটে এসেই নিঃশব্দে করবীর ডান হাতে থাকা বাজারের ব্যাগটা নিয়ে নিল। করবী বাঁধ সাধলো,
“আমি পারব।”

তিমির তেমন গা করল না কথাটা। একপলক তাকালো কেবল। করবী এই টিউশনি বাসায় আসার আগেই বাজার করেছিল। ঘরে বাজার ফুরিয়েছে অনেকদিন তাই বাজার দিয়ে আসার সময় প্রায় পুরো মাসের প্রয়োজনীয় জিনিস মোটামুটি কিনে নিয়েছিল। এমন বৃষ্টি হবে জানলে কখনোই কিনতো না।
তিমির করবীর থেকে একটু, নামমাত্র সামনে দাঁড়াল। এমন ভাবে দাঁড়ালো যে বৃষ্টির ছাঁট আর গায়ে লাগল না মেয়েটার। তিমিরের দৃষ্টি মেয়েটার দিকেই। টান টান কণ্ঠে শুধালো,
“এই দোকানে এসেছিলে কেন?”

করবী আদ্র স্বরে জবাব দিল, “বোনের জন্য মোবাইল কিনতে।”

“তোমার বোনও আছে?”

করবী উপর-নীচ মাথা নাড়াল। অর্থাৎ আছে। সময় পেরুলো নিজ গতিতে। বৃষ্টি কমার বিপরীতে তা পাল্লা দিয়ে কেবল বাড়লোই। তিমির এবার আলগোছে করবীর হাতটা ধরল। ধীর কণ্ঠ বলল,
“সামনে আমার গাড়ি আছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকল লাভ হবে না। চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই।”

করবী কিংকর্তব্যবিমূঢ়, “আপনার গাড়ি থাকলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ভিজেছিলেন কেন?”

তিমির হাসলো নৈশব্দে। মেয়েটার মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে ভিজতে দিবো না বলে।”

করবীর হতভম্ব স্বর, “তাহলে তো প্রথমেই গাড়ির কথা বলতে পারতেন।”

তিমির এবার মেয়েটার বোকা বোকা দৃষ্টি দেখে শব্দ করেই হাসল। মেয়েটার মাথায় আদুরে হাতে রেখে বলল,
“প্রথমেই গাড়ির কথা বললে গল্প বাড়ার আগেই তো সমাপ্তি হতো। আমি তো কেবল তোমার সঙ্গ চাওয়ার বাহনা খুঁজছিলাম।”

অম্বরে বিজলি চমকালো এবার রূপালী আলোয়। মেয়েটার মায়া মুখের লজ্জাবৃত ছন্দ দৃষ্টি এড়ালো না তিমিরের। আজকাল তার ঐ মুখেতেই যে শান্তি লাগে বুঝাবে কেমন করে?

#চলবে…….

#বুকপকেটের_বিরহিণী
কলমে: মম সাহা

নবম পর্ব:

বর্ষণ ধারায় ধরিত্রীর লতার মতন অঙ্গ ভিজে নবযৌবনা লাভ করেছে যেন। নিঃসঙ্গ কাকটি হতে শুরু করে পথের ধারে বসে থাকা পাগলটাও নেত্র যুগল বন্ধ করে ধুয়ে মুছে ফেলছে নিজেদের সকল ক্লান্তি, সকল উদাসীনতা। আবার খুব কাছেই বজ্রপাত হলো।
নৈশব্দের মুগ্ধতা ঝেড়ে লাজুকলতার আভা কিছুটা সরিয়ে ফেলল করবী। নিভু নিভু স্বরে ডাগর নয়ন দু’টো পথের মাঝে নিবদ্ধ করে বলল,
“গাড়ি লাগবে না। আমি যেতে পারব।”

তিমির পলকহীন তাকিয়ে হাসল। মেয়েটার উত্তর তার আগেই জানা ছিল। তবে সে জোর করল না। বরং প্রশ্রয় দিল,
“তাহলে চলো। ভিজেই যাওয়া যাক।”

তিমিরের সম্মতিতে ঘাড় বাঁকিয়ে আবছা ভাবে তাকাল করবী। তারপর ছোটো করে একটা শ্বাস ফেলল,
“আপনার যেতে হবে না। আমার অভ্যাস আছে।”

“সে তো আমি অস্বীকার করিনি। তবে, একদিন অভ্যাস ভাঙলে খুব ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।”

মেয়েটা প্রতিবাদ করতে চাইল। বলতে চাইল, তার অভ্যাস ভাঙতে ইচ্ছে হয় না। পরে অভ্যাস ভাঙার বদঅভ্যেস অশান্তিতে ভুগাবে। কিন্তু বলা হয় না আর। তিমিরের সঙ্গ তার বেহায়া মন ভীষণ ভাবে চাচ্ছে। যেমন ভাবে খড়ার জমিন বৃষ্টি চায় ঠিক তেমন ভাবে।
তিমির গলা ঝাড়ল। ফিচলে কণ্ঠে বলল,
“আসো, একদিন অভ্যাস ভেঙে আমার সাথে হেঁটে দেখো, ভালো না লাগলে বলো আমাকে। আমি নাহয় দু-পা পিছিয়ে হাঁটবো।”

করবীর আর বাকি কথা সম্পূর্ণ করা হয় না। বা’হাতের তালুতে থাকা ঘনিষ্ট পুরুষালী হাতটার দিকে সে তাকায়। লোকটার ধরে রাখা হাতটার মুঠোর ভাঁজ কোমল তবে দৃঢ়। করবীর মন দ্বিধায় ভুগে, এত দৃঢ় বাঁধন ক্ষাণিকের হয়, না দীর্ঘস্থায়ী?

(১৫)

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। বৃষ্টির আজ কোনো থামার নাম নেই। অক্লান্ত ভাবে তার বিচরণ ঘটছে কেবল। তিমির বসে আছে তার ঘরে। হাতে মোটা ইংরেজি কোনো একটা বই। তার ধ্যান সেখানেই নিবদ্ধ। কপালে গাঢ় ভাঁজ।
তন্মধ্যেই তার ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। বিরক্ত হলো তিমির। কণ্ঠস্বর খানিকটা উঁচুতে তুলল, শুধাল, “কী সমস্যা?”

তখনই দরজা ঠেলে ঢুকল বিদিশা। হাতে তার খাবারের প্লেট, বলল,
“খেতে হবে না? সারাদিন কপাল কুঁচকে বসে থাকলেই হবে?”

তিমির মেয়েলি রিনরিনে কণ্ঠে চোখ উঠিয়ে চাইল। অতঃপর হাতের বইটা কিঞ্চিৎ বন্ধ করে বলল,
“খাওয়ার ইচ্ছে নেই, ভাবী। নিয়ে যান।”

তিমিরের কথা বিদিশা তেমন গা করল বলে মনে হলো না। বরং সে এগিয়ে এসে খাবারের প্লেটটা রাখল ছোটো টেবিলটার উপর। কিছুটা নিবিড় কণ্ঠেই বলল,
“খেয়ে নিও তো। না খেয়ে থাকলে অশান্তি লাগবে। রাতে আর ঘুম হবে না।”

“এমনেও যা শান্তিতে আছি, বাপরে।”

কথাটা তিমির বেশ তাচ্ছিল্য করেই বলল। কণ্ঠের মাঝে কেমন হেয় ভাব। বিদিশা ঠোঁট উল্টালো। শাসনের ভঙ্গিতে বলল,
“চুপচাপ খাবার খেয়ে তারপর ঘুমাবে। খাবের প্লেট যেন খালি পাই। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

অতটুকুন মেয়ের শাসনের ভঙ্গিতে হাসল তিমির। বিদিশা তার বড়ো ভাইয়ের বউ হলেও বয়সে বেশ ছোটো। কিন্তু মেয়েটা সম্পর্ক সামলানোতে পাক্কা গিন্নী।
তিমিরকে হাসতে দেখে বিদিশা যেন ভরসা পেল। সাহস করে শাশুড়ির শিখিয়ে দেওয়া কথাটা উগড়ে দিতে চাইল,
“একটা মেয়ের ছবি……”

বাকিটা আর বলা হলো না। তিমিরের চেহারার অভিব্যক্তি বদলাতেই থেমে গেলো সে। মুখটা শুকিয়ে আমসির মতন হয়ে এলো। আমতা-আমতা করতে লাগল সেখানেই।
তিমির তড়িৎ গতিতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কর্কশ গলায় বলল,
“আপনি আপনার শাশুড়িকে বলবেন আপনারে যেন এসব কথা শিখিয়ে পড়িয়ে না দেয়। আপনি আমার কাছে অন্তত ঠিক থাকুন।”

“এভাবে কথা বলো না। উনি তোমার মা।”

“সেটাই আমার সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্য।”
বেশ অবজ্ঞা করেই কথাটা বলে বারান্দায় চলে গেলো তিমির। বাক্যটাতে যেন রাজ্যের অভিযোগ, অভিমান বিনি সুতোর মালার মতন গেঁথে রাখা ছিল। বিদিশা হতাশ চোখে একবার তিমিরের প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরালো ঘরের ভেজানো দরজাটায়। তার শাশুড়ি বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছেন। কী জানি, মানুষটা শুনতে পেয়ে কেমন কষ্ট পেলেন!

(১৬)

মধ্যরাত….
বৃষ্টির টুপটাপ ছন্দের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ল করবীর জ্বর। মেয়েটার বৃষ্টি সহ্য হয় না। কোনো এক অচেনা কারণে তার শৌখিন বৃষ্টির সাথে হয়তো একটি নিবিড় মনমালিন্য রয়েছে। সেজন্য বৃষ্টিতে ভিজলেই তার জ্বর উঠে। যেমন-তেমন জ্বর নয়। গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। ফর্সা শরীর উত্তাপে লাল হয়ে যায়। প্রায় হুঁশ থাকে না বললেই চলে।
আজও ব্যাতিক্রম হয়নি। তুমুল জ্বরে মেয়েটা প্রায় বেহুঁশ বলা যায়। তৈয়ব হোসেন কোনো রকমে সিঁড়ির কোণায় গিয়ে হাঁক-ডাক করে বিন্দুকে জানালেন সে খবর। ব্যস্, হন্তদন্ত হয়ে বিন্দু, হুতুমসহ আমেনা খালাও নেমে এলো এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই। আমেনা খালা অভিজ্ঞ হাতে মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দেওয়া শুরু করল। হাত-পা মুছিয়ে দিতে লাগল বিন্দু। হুতুমের চোখে ক্ষণে ক্ষণে জমছে জল।
ঠোঁট উল্টে কেবল বার বার আতঙ্কিত মনে প্রশ্ন ছুঁড়ছে,
“বিন্দুর মা, কী হইলো বাণীর মা’র? বাণীর মা আইজক্যা আমারে দেইখাও হাসলো না ক্যান? বাণীর মা ঠিক হইয়া যাইবো তো?”

আমেনা খালা জলপট্টি দিতে দিতে ছোটো হুতুমকে আশ্বাস দেয়,
“কিচ্ছু হইবো না তোর বাণীর মায়ের। সামান্য জ্বর।”

হুতুম তবুও ভরসা পায় না। ঠোঁট উল্টে চেয়ে থাকে করবীর ফ্যাকাশে মুখমন্ডলে। রাত বাড়ার সাথে সাথে যখন জ্বর না কমে আরও বাড়তে লাগল তখন দমে গেলেন আমেনা খালাও। বিন্দুরে তাড়া দিয়ে বললেন,
“যা তো আম্মা, একটু দেখ গিয়া বড়ো রাস্তার কোণার ফার্মেসীডা খোলা নি। থাকলে একটু ডাক্তাররে আইস্যা দেইখ্যা যাইতে ক। মাইয়্যাডার তো জ্বর কমার নামই লইতাছে না।”

মায়ের দমে যাওয়া দেখেই বিন্দুর আত্মা শুকিয়ে গেলো। মা এত সহজে দমে যাওয়ার মানুষ তো নন। তার মানে আপার অবস্থা গুরুতর। এবার হুতুমের মতন চোখে জল এলো বিন্দুরও। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আম্মা, আপা ঠিক হইয়া যাইবো তো?”

নিজের এত বড়ো মেয়েকেও ভ্যা করে কাঁদতে দেখে এবার ধমক দিলেন আমেনা খালা। শক্ত কণ্ঠে বললেন, ”তুই বইয়্যা বইয়্যা এহন মরা কান্দন না কাইন্দা গিয়া ডাক্তার আন। আর সামাইন্য জ্বর হইলে মাইনষের কিছু হয় না। যা তুই।”

বিন্দু অপেক্ষা করল না। ব্যস্ত পায়ে ছুট লাগালো। বিন্দুর সাথে যাওয়ার বায়না ধরল হুতুমও। বিন্দু আজ না করল না। এমন বিপদে তার একলা চলতে পা কাঁপে। তা-ও হুতুমটা থাকলে একটু তো ভরসা পাবে। তৈয়ব শেখ ব্যতিব্যস্ত বিন্দুর হাতে ছাতা দিলেন। মাথায় স্নেহের হাত রেখে বললেন,
“তোমার ভালো হোক, মা।”

অসহায় বাবাকে দেখে বিন্দুর ঠোঁট ভেঙে আরও কান্না এলো কিন্তু সে কাঁদলো না। বরং সেই বাবার ভরসা হয়ে উঠলো নিমিষেই,
“তুমি চিন্তা কইরো না, চাচা। আপার কিচ্ছু হইবো না।”

তৈয়ব হোসেন হাসলেন। তাকে মোটেও বিচলিত দেখা গেলো না। বরং সে ঝলমলে কণ্ঠে বললেন,
“তোমরা থাকতে আমার কিসের চিন্তা গো, মা? আমার রক্তকরবী অনেক ভাগ্য নিয়ে আসছে, তাই তো তোমাদের পেয়েছে।”

বিন্দু কান্না নিয়েই হাসল। চোখ মুছেই ছুটল বাহিরে।
মধ্যরাত হওয়ায় প্রায় শুনশান গলি। মাথার উপর ছাতা ধরে হুতুমকে নিয়েই সে ব্যস্ত পায়ে গলি পেরিয়ে রাস্তায় উঠলো। চঞ্চল পায়ে রাস্তায় উঠতেই নিরাশ হলো সে। ফার্মেসী বন্ধ। বড়ো রাস্তাটাও ফাঁকা, শুনশান। বিন্দু খেঁই হারালো। এখন কী করবে? ডাক্তারকে সে কোথায় পাবে এখন!
বিন্দুকে দিকভ্রান্ত দেখালো। কী করবে, না করবে বুঝে উঠতে পারল না তার ছোট্টো ব্রেন। অসহায় চোখে হুতুমের দিকে চাইল সে। হুতুমও তার দিকে তাকিয়ে আছে। বিন্দুকে তাকতে দেখে নিষ্পাপ হাসল বাচ্চাটা। বিন্দুকে বলল,
“মন খারাপ করিছ না, বিন্দুবালা।”

বিন্দু জাপটে ধরল হুতুমকে। এই একাকীত্বে এই ছোটো সঙ্গীটিকে তার ভীষণ আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। ঠিক তখনই ছন্নছাড়া পুরুষালী কণ্ঠটি ভেসে এলো,
“এ্যই, তোরা রাতে বাইরে ক্যান? তোদের ঘর-বাড়ি নাই?”

আচমকা শুনশান রাস্তায় শক্ত ধমকে চমকে গেলো বিন্দু। ভয় পেলো হুতুমও। বিন্দু পিছু ফিরে চাইল। পিছু ফিরতেই হীরণের লাল লাল চোখ গুলো দৃষ্টিগোচর হলো। হীরণকে দেখতেই আশার আলো দেখল যেন বিন্দু। হড়বড়িয়ে বলল,
“হীরণ ভাই, করবী আপার না ম্যালা জ্বর উঠছে। মানুষটার হুঁশ নাই। ডাক্তাররে নিতে আইছিলাম। কিন্তু দোকান তো বন্ধ হইয়া গেছে।”

বিন্দুর কথা মনযোগ দিয়ে শুনল হীরণ। করবীর অসুস্থতার কথা শোনার পরই তাকে অস্থির দেখা গেল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“বৃষ্টিতে আরও হাত ধরে হাঁটতে বল, তাইলে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।”

হীরণের অস্ফুট কথার মানে বুঝল না বিন্দু। জিজ্ঞেস করল, “কী?”

হীরণ কথা বাড়ালো না। হুতুমকে ছোঁ মেরে বাইকে উঠিয়ে ফেলল। তাড়া দিয়ে বলল,
“আমি ডাক্তাররে নিয়া আসি। তুই যা। এত রাইতে তোর এলাকা ঘুরতে হইবো না। বেক্কল মাইয়া। তোর কাছে না আমার নাম্বার আছে? এমনে সময় তো হুদাই কল দেছ। আজকে দরকারের সময় দিতে পারলি না? তোর তো খালি রাস্তায় বের হওয়ার সুযোগ পেলেই হয়। বে কু ব একটা। সোজা বাসায় যা। আমি আসতাছি ডাক্তার নিয়া।”

কথাটা বলেই বাইক স্টার্ট দিল হীরণ। শা করে নিমিষেই চোখের পলকে চলে গেলো সে। বিন্দু কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে কেবল বলল,
“হীরণ ভাই, সবকিছুতে আমারই দোষ খুঁইজ্যা পায়।”

তারপরের ঘটনা সবটাই ঘটলো হীরণের মাধ্যমে। বিন্দু বাসায় পৌঁছানোর পনেরো মিনিটের মাঝেই হীরণ ডাক্তার নিয়ে উপস্থিত হলো। ডাক্তার চেক-আপ করলেন। জ্বর পরীক্ষা করলেন। তারপর ওষুধ লিখে বিদায় হলেন। ডাক্তারকে আবার সহিসালামত পৌঁছানোর কাজটাও এই লোক করল। বৃষ্টিতে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে লোকটার টি-শার্টটা। ডাক্তারকে পৌঁছে দিয়ে এই মধ্যরাতেই কোথা থেকে ওষুধ খুঁজে বের করে সেটাও নিয়ে আসলো। ভিজতে ভিজতে মাথার চুল গুলো দিয়ে অব্দি টপটপ করে পানি পড়ছে। অথচ সেদিকে তার ধ্যান নেই। পারলে হয়তো সে এখনই করবীকে সুস্থ করে ফেলে।

এই সবটাই বিন্দু নীরব চোখে দেখল। হীরণ প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করেই বাসার নিচে গিয়ে দাঁড়াল। বলে গেলো প্রয়োজনে তাকে ডাকতে। সে আছে।
রাত পেরিয়ে ভোর হবে হবে ভাব। করবীর জ্বরটা স্থিতিশীল। আমেনা খালা মাথার কাছেই ঘুমিয়ে আছেন। হুতুম ঘুমিয়েছে করবীর পাশ বালিশে। তৈয়ব হোসেন আধভাঙা কাঠের চেয়ারটায় বসে ঝিমুচ্ছেন। ঘুম নেই বিন্দুর। সবাইকে ঘুমুতে দেখেই সে নিচে নামল সিঁড়ি ভেঙে। হীরণ ভাইকে জানাতে হবে তো, আপার জ্বর নেমেছে। লোকটা আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে?

সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে নামতেই দেখল হীরণ তার বাইকে বসে আছে। বৃষ্টির ছাঁটে আবার ভিজেছে নতুন করে। লোকটা কী পাগল হলো? এত ভিজলে তো নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবে! চিন্তিত বিন্দু এগিয়ে গেলো নিঃশব্দে। নিজের গায়ের ওড়নার অবশিষ্ট অংশ দিয়ে হীরণের ঝাঁকড়া চুল গুলো মুছে দিতে উদ্যোত হলো।
আচমকাই বিন্দুকে এতটা ঝুঁকতে দেখে মাথা পেছালো হীরণ। বিন্দুর হাত ঝারা দিয়ে বলল,
“এ্যই মেয়ে, কী করছিস? গায়ের উপর এসে পড়ছিস কেন?”

বিন্দু লজ্জা পেল কিঞ্চিৎ। ছোটো ছোটো করে জবাব দিল,
“আসলে, তোমার শইলড্যা তো পুরা ভিইজ্যা গেছে হীরণ ভাই। মুইছা দিতাছিলাম।”

হীরণ ভ্রু কুঁচকালো, “তোরে বলছি মুইছ্যা দিতে?”

বিন্দু জবাবে ডানে-বামে মাথা নাড়াল। অর্থাৎ, না।
হীরণ এবার শুধালো, “কেমন আছে, রুবী? জ্বরটা কমেছে রে?”

হীরণের কণ্ঠে চিন্তার রেশ। ড্যাবড্যাব করে তাকাল বিন্দু। সারাটা রাত লোকটা আপার জন্য বেখেয়ালে কাটিয়ে দিল কেমন! কত ভালোবাসে আপাকে!

হীরণ জবাব না পেয়ে ধমকালো,
“কিরে বোবায় ধরছে তোরে? কথা কইতে ভুইল্যা গেছোছ নাকি?”

বিন্দু হতাশ শ্বাস ফেলল,
“আপা ঠিক আছে। তুমি বাড়ি যাও এহন।”

“আরেকটু থাকি নাহয়। যদি আবার দরকার পরে?”

বিন্দু কোমল চোখে তাকালো। কেমন অদ্ভুত কণ্ঠে বলল,
“আপারে অনেক ভালোবাসো তাই না, হীরণ ভাই? আমারে কী তার থেইক্যা একটু ভালোবাসা দিতে পারো না?”

হীরণ রামধমক দিতে গিয়েও থমকে গেল। বিন্দুর চোখমুখ উপচে মায়ার বিল দেখা যাচ্ছে। সেই মায়ার বিল দেখে হীরণ আর ধমক দিতে পারল না। সিগারেট ধরিয়েই বাইক স্টার্ট দিল। চোখের পলকেই চলে গেলো বহুদূরে।
বিন্দু বিষণ্ণ হাসল,
“আপার কী ভাইগ্য! হেয় যারে ভালোবাসে না, সেও হেরে ভালোবাসে। অথচ আমি ভালোবাইস্যাও পাই না! সুন্দর হইলে কত ভালা! ক্যান যে কালা হইলাম!”

#চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে