বুকপকেটের বিরহিণী পর্ব-৪+৫

0
365

#বুকপকেটের_বিরহিণী
কলমে: মম সাহা

চতুর্থ পর্ব:

৬.

সকাল সকাল তৈরী হলো করবী। এইতো, সময় মাত্র সাড়ে আটটা। ওর ঘুম ভেঙেছে ভীষণ ভোরে। সারারাত ঠিক মতন ঘুম হয়নি। এ আর নতুন কী? প্রায় সময়ই তার ঘুম হয় না। এমন নয় যে ঘুম আসেনা। ঘুম আসে ঠিকই কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই যেন চোখের পাতায় নৃত্য করে অভাব, অনটন আর দুশ্চিন্তা। তারপর ঘুম যে কোথায় ছুটে পালায় আর আসেনা। তাছাড়া খুব ছোটোবেলা থেকেই করবীর ঘুম নিয়ে সমস্যা। ওর মা যখন হারিয়ে গেলো, তখন ওর বয়স চার। আধো কণ্ঠে ভীষণ পাকা পাকা কথা বলতো। দুষ্টুমি করতো বাড়ি-উঠোন জুড়ে। মা-বাবার একমাত্র আহ্লাদের সম্পদ ছিল কি-না সে! এরপর একদিন তার রূপকথার মতন জীবনে আছড়ে পড়লো ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী ঝড়। মা হারিয়ে গেলেন হুট করে। তারপর থেকে সমাজ তাকে কেমন বাঁকা নজরে দেখা আরম্ভ করল। যেখানেই পেতো, সেখানেই ছোটো করবীকে সকলে উৎসুকতা নিয়ে প্রশ্নে জর্জরিত করত— কিরে, তোর মা হুট করে কোথায় গেল? কারো সাথে পালিয়ে গিয়েছে নাকি? শুনলাম তোর বাবা বলছেন, তোর মা মারা গেছেন? তোর মা’কে যেদিন পাওয়া গেল না সেদিন রাতেই নাকি শহরের এক জায়গায় একটা মহিলার মাথাহীন লা শ পাওয়া গেলো সেই লা শটা নাকি তোর মায়ের ছিল? আরও কত কী…….
ছোটো করবী ফ্যালফ্যাল নয়নে প্রশ্ন গুলো শুনতো। উত্তর জানতো না বিধায় কেবল শুনেই যেত। তারপর উত্তরের আশায় বাবার কাছে আসতো, জানতে চাইতো তার চাঁদের মতন সুন্দর মা কোথায় গেল? কেমন করে মিলিয়ে গেলো এই কালের গহ্বরে? বাবা চুপ থাকতেন। কখনো কখনো আগলে নিতেন মেয়েকে বুকের মধ্যিখানে। তারপর ঐরকম একটা অসুস্থ পরিবেশে থাকতে থাকতে করবী অসুস্থ হয়ে গেলো একবার। অন্ধকার রুমে একা বসে ‘মা,মা’ করতো। কারো সামনে আসতো না, কান্না করতো। রোগ যখন ভয়াবহ হলো, ডাক্তার বললেন এই পরিবেশ থেকে দূরে নিয়ে যেতে। পরিবেশ বদলালেই, ভাবনা বদলালেই ছোটো মেয়েটা সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর আর কী? ছেড়ে এলো সোনার শৈশবের অর্ধাংশ সুখে কাটানো বাড়ি, ছেড়ে এলো প্রিয় জায়গা, ছেড়ে এলো বন্ধু-বান্ধব। এরপর তার বাবা আর কখনো কোনো আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করেননি। সেই যে আলাদা হলো, এরপর তারা চিরজীবন বাবা-মেয়ের পরম আত্মীয় হয়ে কেবল দু’জনই অবশিষ্ট রইল দু’জনের জন্য।

ভোরে উঠেই আজ রান্নার কাজটা সে সেড়ে ফেলেছিল। বাবা আজ নাহয় একটু বিশ্রাম নিলেন। রান্না শেষ করেই তৈরী হয়ে নিল সে। আজ সাড়ে নয়টায় ভার্সিটিতে একটা ক্লাস আছে। তারপর আবার দেড়টায় একটা। ভার্সিটি শুরু হয়েছে বেশ খানিকটা দিন তো হলো। ক্লাসে না গেলে পড়াশোনাটা ঠিক আয়ত্তে আনা যাবে না। তাই সকাল সকালই তৈরী হয়ে নিল। করবী প্রায় রেডি হয়েছে তন্মধ্যেই তাদের দরজায় টোকা পড়ল। একবার, দু’বার নয়, বেশ কয়েকবার। পাছে বাবার ঘুম ভেঙে না যায় সে ভয়ে করবী দ্রুত ছুটে গেলো দরজা খোলার জন্য। দরজাটা খুলতেই চার বর্ষীয়া, টিনটিনে শরীরের মেয়ে- হুতুমকে চোখে পড়ল। ময়লাটে একটা ফ্রক পড়নে, শ্যামলা আদলের মেয়েটি তার বড়ো বড়ো আশ্চর্য সুন্দর রকমের চোখ দু’টি মেলে হাসল। সরু ঠোঁট দু’টো কেমন নাটকীয়তার সাথে নাড়িয়ে বলল,
“এই যে বাণীর মা, তোমারে বিন্দুবালা যাইতে কইছে। তোমার লগে নাকি হের কথা আছে।”

হুতুমকে দেখেই গাল ভোরে হাসল করবী। এই হুতুমকে তার বেশ পছন্দ। হুতুম বিন্দুর বোন। বিন্দুর চেহারা অবয়বের সাথে হুতুমের পুরো মিল। তারা যে দু’জন দু’জনের আত্মীয় তা চেহারা দেখেই স্পষ্ট বুঝা যায়। কিন্তু দু’জনের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিন্দুর চোখের মনি কালো মিচমিচে হলেও হুতুমের চোখের রঙ গাঢ় বাদামী। বিদেশীদের যেমন হয় না? তেমন। এবং চুল গুলো কোমড় অব্দি তাও মাঝামাঝি রকমের সোনালী। কী যে সুন্দর লাগে বাচ্চাটাকে! মনেহয় জলজ্যান্ত পুতুল। গরীবের ঘরের মিষ্টি পুতুল। করবীর মাঝে মাঝেই মনেহয়, হুতুম যদি কোনো বড়োলোকের ঘরের মেয়ে হতো তাহলে হয়তো হুতুমের গায়ের রঙটা সঠিক যত্নে দারুণ ঝলমলে হয়ে যেত। কিন্তু ভাগ্যের ফের! এত সুন্দর পরীটা জন্মালো একদম হতদরিদ্রের ঘরে। যাদের দিন আনে দিন খায় অবস্থা। শখ করে বাচ্চা যত্ন করার সময় কই তাদের? সেজন্য গায়ের রঙটা কিছুটা মলিন হয়ে গিয়েছে বাচ্চাটার।
“তুমি কী যাইবা? নাকি বিন্দুবালারে বলমু তুমি দরজা খুইল্যা দাঁড়াইয়া ভাইব্যা ভাইব্যাই দিন কাটাই ফেলতাছো?”

হুতুমের আধো কণ্ঠের মিষ্টি কথায় হেসে ফেলল করবী। মেয়েটার গাল টেনে বলল,
“তুমি যাও, হুতুম। আমি আসছি।”

হুতুমকে যেতে বলা হলেও সে গেলো না। বিজ্ঞদের মতন দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকের মাঝে গুঁজে বলল,
“না, তোমার যা কাজ আছে তা এহনি সমাধান কইরা আহো। বিন্দু কইছে তোমারে সঙ্গে লইয়্যাই যাইতে।”

করবী কপাল চাপড়ালো। বাচ্চাটা এত পাকা! অবশেষে সে এক ছুটে ঘরে গিয়ে একটা ছোটো জামা নিয়ে এলো। জামাটা এনেই হুতুমের হাতে দিয়ে বলল,
“ধরো, তোমার জন্য এটা বানিয়েছি আমি নিজের হাতে। আজকে সুন্দর করে গোসল করে এ জামাটা পরবে কেমন? তারপর সন্ধ্যাবেলা আমি এলে, আমরা ঘুরতে যাব। কী বলো?”

আকস্মিক জামাটা পেয়ে হুতুম যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে যাওয়ার মতন খুশি হয়ে গেলো। উল্লাসিত মনে এক ছুটে চলে গেলো সিঁড়ি ডিঙিয়ে ছাঁদে। করবী দরজাটা বাহির থেকে আটকিয়ে পেছন-পেছনই গেল।

বিন্দু তখন রান্না-বান্নায় ব্যস্ত। আজ তাদের মা বাসায় নেই। যে বাড়িতে ভদ্র মহিলা কাজ করেন, সে বাড়ির বউয়ের বাচ্চা হবে তাই মাঝে মাঝেই সেই বাড়িতে থেকে যেত হয় উনাকে। এবং ঘরে বিন্দুর প্যারালাইজড বয়স্ক বাবা আছেন। যিনি দিন-রাত একটানা শুয়ে থাকেন। যেদিন ওদের মা’কে সেই বাড়িতে থেকে যেতে হয় সেদিন এই প্যারালাইজড বাবাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব পরে ছোট্টো হুতুমের হাতে। করবীর মাঝে মাঝে অবাক লাগে। এই ছোটো মেয়ে, যার নিজে হাতেই খাওয়ার কথা না সে কি-না এই মানুষটাকে খাইয়ে দেয়! পৃথিবীতে কত দার্শনিক ঘটনাই ঘটে। কেবল লোক সমাজে রটে না বলে এই বিস্ময়কর ঘটনা গুলো সকলের অজানাই থাকে।
করবীকে দেখেই বিন্দু রান্না রেখে উঠে আসল। হাসল,
“আপা, তোমারে একটা দরকারে ডাকছি।”

“কী দরকার? বল না?”

বিন্দু ছুটে ঘরে গেল। ঘর থেকে কিছু একটা নিয়ে আবার বাহিরে ছুটে এলো হন্তদন্ত পায়ে। করবীর দিকে তার ডান হাতে থাকা কিছু টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এইহানে সাড়ে তিন হাজার টেকা আছে, আপা। তোমার তো টেকার সমস্যা কয়ডা দিন ধইরা, তুমি রাহো টেহাডি। কাইল বেতন দিছিল। তোমার লাইগ্যা এই টেহাডি আলাদা কইরাই রাখছিলাম।”

করবী টাকা গুলো নিল না। বরং হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“এই না না বিন্দু, তোদেরই কত সমস্যা তার মাঝে আমাকে টাকা দিচ্ছিস কেন?”

“আরে রাহো তো,আপা। আমার লগে তোমার কী হেই সম্পর্ক যে টেহা নিতে পারবা না? তোমার বিপদে যদি সাহায্যই করতে না পারি তাইলে এই টেহা রোজগার কইরা কী লাভ!”

“না, তোর কষ্টের টাকা, বিন্দু। আমি কোনো একটা ব্যবস্থা করে নিবো।”

বিন্দু এবার টাকা গুলো জোর করেই করবীর হাতে গুঁজে দিল,
“হুনো, টেহা কেউই এমনে এমনে পায় না, সবার কামানোই লাগে। সবারই শ্রম দিতে হয়। এই যে তুমি কামাও, হেইড্যা কী মাগনা-মাগনা কামাও? না। কষ্ট কইরাই কামাও। খালি তোমার কষ্ট আর আমার কষ্ট একটু আলাদা। আমি করি অসম্মানের চাকরি। গার্মেন্টসের কাম। আর তুমি করো সম্মানের কাম, মেডাম।”

করবী বিন্দুকে তৎক্ষণাৎ বুকে জড়িয়ে ধরল। কম্পনরত কণ্ঠে বলল,
“আমি এই ঋণ ভুলবো না, বিন্দু। ভুলবো না।”

৭.

ভার্সিটির ক্লাস শেষ হতেই করবী হন্তদন্ত পায়ে বের হলো। আজকে সে খামে করে এক হাজার টাকা নিয়ে এসেছে তিমির নামক লোকটাকে শোধ করে দিবে বলে। সেই টাকাটা দেওয়ার জন্যই এত হন্তদন্ত হয়ে বের হওয়া।
পুরো ভার্সিটি ঘুরেও আজ তিমিরের খোঁজ পেল না করবী। মাথার উপর সূর্য তখন তার সমগ্র তেজ দু-হাতে দান করতে ব্যস্ত। করবীর অতি সুন্দর মুখমণ্ডল গরমে লাল হয়ে গেলো। ঘামে ভিজে একাকার হলো সুতির জামাটাও। সে হাতের চিকন ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল সময় প্রায় বারোটার বেশি। তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে ক্যাম্পাস ছাড়ল। ভেবে নিল পরবর্তীতে দেখা হলে টাকাটা ফেরত দিবে। ক্যাম্পাস ছেড়েই কলেজের পার্শ্ববর্তী গলি ধরে হাঁটা আরম্ভ করল। এখান দিয়ে গেলে একটু সময় সাশ্রয় হয়। আর সময় বাঁচলে তারও লাভ। দ্রুত পড়িয়ে বাসায় যেতে পারে। নাহয় খিদে নিয়ে এত বেলা অব্দি চলাফেরা করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

ব্যস্ত রাস্তায় করবীর শান্ত বিচরণ হুট করেই অশান্ত হয়ে গেলো। অতিরিক্ত সূর্যের তেজ আর খিদে সহ্য করতে না পেরে তার মাথা ঘুরে উঠল। এবং জ্ঞানশূন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ল পথের ধারে। ব্যস্ত রাস্তা ব্যস্তই রইল, উৎসুক জনতাদের ভীড় বাড়ল। কিছু কিছু মানুষ কেবল ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখলো এক ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপসীকে। এত সুন্দরও মেয়ে হয় আদৌও? মনে হচ্ছে পথের ধারে লুটিয়ে আছে কোনো অপ্সরা। রঙ উঠে মেটে নীল হওয়া সুতির জামাটাতেও এই মেয়েকে লাগছে স্বর্গের নন্দনকাননের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি।

কলেজের আইডি কার্ডটি শনাক্তকরণ করে কয়েকজন কলেজে খোঁজ পাঠালো। এত পথচারীর মেলা জমলো তবে কেউ মেয়েটাকে ছুঁয়ে অব্দি দেখল না আদৌ বেঁচে আছে না ম রে গিয়েছে অথচ চোখ দিয়ে গিলে খেলো কত শকুন!

৮.

আজ কারখানা বন্ধ থাকায় বিন্দু দুপুরের দিকে বাজার করতে বেরিয়ে ছিল। তার সাথে বের হওয়ার বায়না ধরলো হুতুমও। হুতুমের সঙ্গে বের হলো বাণীও। বাণীর আবার ঘুরার শখ। ঘুরবে, উড়বে আর বকবক করবে।
বিন্দুর বাজার শেষ হতেই হুতুম বায়না ধরল,
“বিন্দুবালা, আমারে আইসক্রিম কিইন্যা দে।”

বিন্দু তার চটচটে ঘামে ভেজা ওড়নাটা দিয়ে মুখ মুছল। বিরক্তি নিয়ে বলল,
“তোর খালি খাম খাম স্বভাব ক্যান, হুতুম?”

হুতুম মুখ কালো করলো,“তুই খোডা দিবি না একদম। আমি কইলাম বিন্দু’র মা-রে কমু।”

“গিয়া ক আমার মা’রে। আমি ডরাই না-কি?”

“ডরাছ না তুই? বিন্দুর মা যহন তোরে ধুমধাম কিল দেয় তহন কান্দছ ক্যান?”

হুতুমের উচিত জবাবটা ঠিক পছন্দ হলো না বিন্দুর। সত্যি কথা বলার অপরাধে হুতুমের পিঠে ধুম করে কিল পড়ে গেল একটা। তারপর বেশ জোরে গাল টেনে বলল,
“আয় খাওয়াচ্ছি তোর মরার আইসক্রিম।”

হুতুম মহা আনন্দে নেচে উঠলো। কিন্তু বাণীর বোধহয় পছন্দ হলো না বিন্দুর আচরণ। তাই কয়েকবার আওড়ালো,
“অসভ্য বিন্দু। অসভ্য বিন্দু।”

আইসক্রিম কিনে দোকান থেকে বের হতেই পাশের টং দোকানে হীরণকে দেখল বিন্দুরা। বরাবরের মতনই মনের আনন্দে সিগারেট ফুঁকছে সে। হীরণকে দেখেই মুখটা ঘষেমেজে নিল বিন্দু। হাতে থাকা ব্যাগটা থেকে গাঢ় গোলাপী একটা লিপস্টিক বের করেই ঠোঁটে লেপে নিল সে। আয়না ছাড়া লিপস্টিক দেওয়ার ফলে কিছু লিপস্টিক ছড়িয়ে গেলো ঠোঁটের বাহিরেও। তারপর হেলতে দুলতে সে উপস্থিত হলো টং দোকানে,
“আরে হীরণ ভাই, তুমি এইহানে যে!”

বিন্দুর কণ্ঠটি যেন নিমতেতো ঠেকলো হীরণের কাছে। সে বিন্দুর দিকে এক পলকও তাকালো না। তবে সিগারেট ফেলে দিল হুতুমকে দেখেই। তারপর দু’হাতে হুতুমকে টেনে নিয়ে বলল,
“কিরে হুতুম পেঁচা, তুই এই রোদে রাস্তায় বের হইছোছ ক্যান? পরে তো কাইল্যা হইয়া যাবি বিন্দুর মতন।”

হীরণের কথায় খিলখিল করে হাসল হুতুম। বিন্দুও বোকা বোকা হাসল। সরল কণ্ঠে বলল,
“কালা হইছি তো কী হইছে? আম্মা কয় আমার চেহারায় নাকি বড়ো মায়া।”

“মায়া না ছাঁই।”

মুখ ঝামটি দিয়ে বলল হীরণ। এবারও হীরণের কথা পছন্দ হলো না বাণীর। তাই সে আবার বলল,
“বে য়া দ ব হীরণ, বে য়া দ ব। ভালো বিন্দু, সুন্দর বিন্দু।”

#চলবে……..

#বুকপকেটের_বিরহিণী
নৈকট্যতার পঞ্চম পর্ব:

কলমে: মম সাহা

৯.

হসপিটালের করিডোরে অস্তায়মান সূর্যের কিঞ্চিৎ কিরণের আভা বুঝিয়ে দিল একটি ব্যস্ত দিনের সমাপ্তি হচ্ছে। করবীর মাথা ঝিমঝিম করছে। ডাক্তার বললেন, প্রেশারটা কমেছে অনেক। তাই হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল! তবে কে আনল তাকে এইখানে? অন্তঃস্থলে প্রশ্ন উদিত হতেই তার সামনে ঝলমলে হাসি নিয়ে উপস্থিত হলো পার্থিব। এসেই চঞ্চল কণ্ঠে শুধাল,
“ভালো আছো এখন, করবী?”

করবী মাথা নাড়াল। সে যেই বেডে শুয়ে আছে তার আশেপাশে আরও এমন বেড পনেরো-বিশটা। সেই কারণেই রোগী এবং তাদের আত্মীয় স্বজরের হৈচৈ-এর কারণে মাথাটা আরেকটু ভার হলো তার। তবুও কিছুটা অস্ফুট স্বরে উত্তর দিল,
“ভালো আছি। আপনি এখানে?”

“তুমি জ্ঞান হারানোর পরেই তো ক্যাম্পাসে খবর গেল। তারপর আমরা কয়েকজন এসে তোমাকে রাস্তায় জ্ঞানশূন্য পেলাম। বাসা থেকে খেয়ে আসোনি, করবী? এমন বোকামো কেউ করে? একটা বিপদ হয়ে যেতে পারতো।”

করবী কথা ঘুরানোর জন্য চাপা হাসল। বলল, “খাবো না কেন? খেয়েছিলাম তো।”

“সে তুমি কতটুকু খেয়েছ তা তোমার রিপোর্টই বলে দিয়েছে।”

এবারের জবাবটা এলো অন্যকারো কণ্ঠ থেকে। করবী মাথা হেলিয়ে পার্থিবের পেছনে তাকাতেই দেখল তিমির দাঁড়িয়ে আছে। তার একটি হাতে ডকুমেন্ট একটা। হয়তো রিপোর্ট গুলো। আরেক হাতে বিশাল দানবীয় আকারের একটি পলিথিন ব্যাগ। যেটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এর ভেতরে রঙবেরঙের ফল দিয়ে ভোরা।

করবী আমতা-আমতা করল, “আসলে তাড়াতাড়ি বের হতে গিয়ে খেতে মনে ছিল না।”

“তোমার যে পাকস্থলীতে আলসার আছে, সেটা মনে আছে তো?”

করবী এবার আরও হতভম্ব হলো। তার যে পাকস্থলীতে ছোটো আলসার দেখা দিয়েছিল সে-কথা তো ও কাউকে, কখনো জানায়নি। তবে ভদ্রলোক জানলো কীভাবে?
করবীর দ্বিধাদ্বন্দে আচ্ছাদিত মুখমন্ডল দেখে তিমির বোধহয় কিছুটা আঁচ করতে পারল। তাই সেই সংশয় পরিষ্কার করতেই সে কিছুটা ব্যাখ্যার্থে বলল,
“আমি জানতাম না, ডাক্তার জানালেন। এখানে আসার পর তোমার বেশ কয়েকটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেই সুবাধেই জানা। তা, যার আলসার আছে সে কীভাবে খালি পেটে থাকে আমাকে একটু বুঝাও? এটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ জানোনা?”

শেষের প্রশ্নটুকু বেশ কৈফিয়তের ভঙ্গিতেই ছুঁড়ল তিমির। করবী মাথা নত করল। আশপাশ হাতড়ে অজুহাত খুঁজতে গিয়েই ফিরে এলো অজুহাত বিহীন। এমন অস্বস্তিকর পরিবেশকে শীতল করতেই পার্থিব বলল,
“থাক তিমির, হয়তো ওর তাড়াহুড়ো ছিল তাই খায়নি। বাদ দে।”

তিমির বাদ দিল অবশেষে। ঠিক তন্মধ্যেই করবীর ছোটো ভাঙাচোরা ফোনটা বেজে উঠল। করবী এদিক ওদিক ঘুরল ফোনের খোঁজে কিন্তু পেল না। অথচ রিংটোনের শব্দটা বেশ কাছ থেকেই আসছে বুঝা যাচ্ছে। ঠিক তখনই তিমির নিজের পকেট থেকে করবীর ফোনটা বের করে এগিয়ে দিল। করবী কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়েই ফোনটা রিসিভ করল। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ঝাঁঝালো একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
“এই তুমি কী আর পড়াইবার পারবা না? না পড়াইবার পারলে কইয়া দিবার পারো না? কোনো দায়িত্বজ্ঞান নাই তোমার। কয়টা বাজে দেখছো? কখন আসবা কও দেখি?”

করবী কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল তার ছাত্র’র মায়ের কথায়। তাছাড়া তার ফোনটা নষ্ট হওয়ার কারণে অপর পাশের শব্দটা ভীষণ বেশি শোনা যায়। হয়তো পার্থিব এবং তিমিরও সেটা শুনেছে। করবী লাজুক স্বরে বলল,
“আন্টি আর চল্লিশ মিনিটের মাঝে আসছি।”

“কোথাও যেতে পারবে না বলে দাও।”
তিমিরের রুক্ষ, কঠিন স্বরে করবী চোখ উল্টে তাকাল। মিনমিন করে বলল,
“যেতেই হবে।”

“কোথাও যেতে হবে না। তুমি বলো যে এখন পারবে না। ফাস্ট।”

করবী আমতা-আমতা করল। এই মহিলা ভয়ঙ্কর। তাকে এখন এই কথা বললেই উনার কথার ট্রেন বুলেটের গতিতে ছুটবে। এদিকে তিমিরও তাকিয়ে আছে শক্ত চোখে। করবী কিছুক্ষণ দোনোমনা করে অবশেষে ভদ্রমহিলাকে বলল,
“আজকে না আসলে সমস্যা হবে, আন্টি?”

মহিলা রেগে গেলেন বোধহয়। ফুল্কির বেগে বললেন,
“আজকে না, আর কোনোদিনও আসবার প্রয়োজন নাই।”
কথাটা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন ভদ্রমহিলা। অসহায় চোখে তাকাল করবী। টিউশনিটা আজ গেলো বুঝি। কীভাবে যে সংসার চলবে! তপ্ত এক শ্বাস ফেলল সে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। এখন আর এত চিন্তা নিতে পারছে না সে। আর কত?

তিমির গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “শিক্ষকতার পেশা সম্মানের। যেখানে সম্মানই নেই, সেখানে এই পেশার মর্ম কী রইল?”

করবী হতাশ চোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল সাদা ঝকঝকে ফ্লোরে। উদাস ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
“পেটে খিদে থাকলে, সম্মানের পাঠ কেবল নথিবদ্ধ বিদ্যা মনেহয়। সম্মান দিয়ে আর যাই হোক সংসার চলে না।”

করবীর মলিন কথায় নিবিড় হয়ে গেলো পরিবেশ। কেউ আর টু শব্দটুকুও করল না। ডাক্তার এলেন আবার। করবীকে আরেকটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। কিছুদিন বিশ্রামের পরামর্শ এবং কিছু ওষুধপত্র লিখেই ছুটি দিয়ে দিলেন।
হসপিটাল থেকে বেশ সাবধানের সাথেই বের করল তিমির। ভীষণ যত্নে। এতটা যত্ন বহুদিন তাকে কেউ করেনি। প্রাপ্তবয়স্ক করবী কিছুটা বয়স ভুলে নির্লজ্জ হলো যেন! আড়চোখে প্রায় চার-পাঁচবারই তিমিরকে দেখল। শেষবার তো চোখে চোখও পড়ল। এবার সে একটু লজ্জা পেল। ইশ্, লোকটা কিছু ভেবে না বসে!

হসপিটাল থেকে বেরিয়েই করবী বিনীত স্বরে কৃতজ্ঞতা জানাল ওদের। বলল,
“রিকশা করে দিলেই চলে যেতে পারব। আপনাদের আজ বেশ ভোগান্তিতে ফেললাম।”

“পা গ ল নাকি? তোমাকে এ অবস্থায় আমরা একা ছাড়বো নাকি? বাসা অব্দি পৌঁছে দিয়েই তবে আমরা যাব।”

করবী এবার আতঙ্কিত হলো। বাবা অব্দি অসুস্থতার খবর পৌঁছানো যাবে না। এতে বাবা চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরবে। তাই সে অমত করল। বলা যায় সাহায্য করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল সংশয় নিয়ে,
“না না, পারব আমি।”

“পারলে, যাবে। সমস্যা নেই। এখন কিছু খেতে হবে। আমরা দুপুর থেকে না খাওয়া। তুমিও তো খাওনি, তাই না?”

তিমির খাওয়ার প্রসঙ্গ উঠাতেই করবীর পেটে খিদেরা হামাগুড়ি দিয়ে যেন পড়ল। তারও যে ভীষণ খিদে পেয়েছে!

পার্থিব বলল, “হ্যাঁ ভাই, ভালো কথা মনে করেছিস। আমারও ভীষণ খিদে পেয়েছে।”

“তাহলে চল, সামনের হোটেলে গিয়ে কিছু খাওয়া যাক।”

খিদে পেলেও করবী স্বীকার করল না। বরং ছলচাতুরীর ছক সাজাল কীভাবে ঋণের ভার আর বাড়ানো না যায় সেটার। কিন্তু ধোপে টিকল না সেই ছক। পৌঁছাতে দিল না তিমির। তিনজন মিলে গেল খাবার খেতে।

বেশ অনেকটা দিন পর করবীর খাবার প্লেটে সুস্বাদু মাংস উঠলো। কতদিন পর ঠিক মনেও করতে পারল না মেয়েটা। চুঁইঝালের খাসির মাংস করবীর অনেক প্রিয় খাবার কিন্তু অনেক মাস কিংবা বলা যায় বছর, এই খাবারটি খাওয়ার সামর্থ্য হয়নি তার। বাবারও তো ভীষণ প্রিয় এই মাংসটা। যাওয়ার সময় নাহয় নিয়ে যাবে বাবার জন্য একটু। অনেক হয়েছে হিসেব-নিকেশ, বাবাটা তো তার শখ পূরণ করার অনেক চেষ্টা করেছে তবে সে কেন বাবার এই ক্ষুদ্র পছন্দ অপরিপূর্ণ রাখবে?

করবী বেশ প্রশান্তি নিয়েই খেলো। খাবারের মাঝে একজনের খাবার প্যাকেট করেও দিতে বলল। পার্থিব তখন মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করেছিল,
“ছোটো ভাই-বোনের জন্য নাকি?”

করবী মাথা নাড়াল, খেতে খেতে উত্তর দিল, “বাবার জন্য।”

করবীর উত্তরে তিমির একবার কেবল চোখ উঠিয়ে তাকিয়ে ছিল। তারপর আবার নিজ খাওয়ায় মননিবেশ করেছিল৷ খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই বাড়ির পথ ধরল ওরা। পার্থিবের কল আসায় করবীর দায়িত্ব পুরোটাই তিমিরের কাঁধে দিয়ে সে ব্যতিব্যস্ত ভাবে গন্তব্যের দিকে রওনা দিল। কিন্তু করবীর দ্বিধাদ্বন্দ মন। এখন রাত আটটা। এই সময় যদি ও এলাকায় তিমিরের সঙ্গে যায় তবে কেউ কিছু আবার বলবে না তো! ওদের এলাকার মানুষ আবার এ-ওর পিছে লাগতে পছন্দ করে ভীষণ। করবী এত সুন্দরী অথচ বিয়ে করছে না বলেও তো প্রায় প্রায় কত কানাঘুষা করে ওরা। করবীর সংশয় ভোরা মনের খবর বোধহয় কিছুটা আঁচ করতে পারল তিমির। শুধালে,
“কোনো সমস্যা?”

করবী ধীরেসুস্থে জবাব দিল, “আসলে এত রাতে যদি কারো সাথে দেখা হয়, আর আপনাকে আমার সঙ্গে যদি কেউ দেখে তাহলে হয়তো খারাপ কথা উঠবে।”

করবীর দ্বিধা যুক্ত কথায় এই প্রথম তিমির হাসলো। লম্বা-চওড়া মানুষটা বাচ্চাদের মতন খিলখিল করে হাসল। ভীষণ প্রাণ খোলা সেই হাসি। করবী তাজ্জব বনে গেল। কী সুন্দর হাসি লোকটার! চুপচাপ তিমির এবং হাস্যোজ্বল তিমির, দু’জন যেন দু’টি ভিন্ন মানুষ। একজনের সাথে আরেকজনের যেন কোনো যোগসূত্র নেই। করবী হতভম্ব হয়ে শুধাল,
“কী হলো?”

তিমির হাসি থামাল। তবুও ঠোঁট জুড়ে লেপ্টে আছে সেই হাসির রেশ। বলল,
“সিএনজি দিয়ে গেলে তো আর সমস্যা নেই তাই না? তোমার এলাকার মানুষও দেখল না, আর সমস্যাও হলো না।”

করবী তাও বার কয়েক না করল কিন্তু তিমির এক কথার মানুষ। সে সিএনজি ভাড়া করল। তারপর উঠে পড়ল দু’জনেই। মাঝে বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখেই বসল। করবীর বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছে। এই এক বাজে স্বভাব তার। ভাত খেলেই ঘুমে ধরে। শরীরটা এখনও আরাম ভুলতে পারেনি।

পুরো রাস্তায় চুপচাপ রইল দু’জনেই। আসার পথে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ গুলোও কিনে দিল তিমির। করবী মনেমনে হিসেব কষলো ঠিক কত টাকার ঋণ উঠলো ঘাড়ে। অতঃপর টাকার বিরাট অঙ্ক ফলাফলে মিলতেই হতাশ হলো। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অভিযোগ করে বলল— গরীবরে কেন যে তুমি অসুখ দাও আল্লাহ্। অসুখ গরীবরের জন্য মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক যে!

সিএনজি বাড়ির কাছে আসার আগেই করবী ঘুমে বিভোর হয়ে পড়ল। ডাকল না তাকে তিমিরও। বরং আলগোছে মেয়েটার হেলে যাওয়া মাথার ভরসা হয়ে এগিয়ে দিল নিজের কাঁধটা। সোডিয়ামের আলো সিএনজির জানালা ভেদ করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে মেয়েটার হলুদাভ ফর্সা মুখটা। যখনই সোডিয়ামের উষ্ণ আলো মুখে পড়ছে তখনই যেন মেয়েটার রূপ জ্বলজ্বল করে উঠছে। মনে হচ্ছে অর্ধ-খষিত শুকতারা। তিমির তার সকল ধরা – বাঁধা নিয়ম ভেঙে তাকাল সেই মুখের দিকে। বড়ো বড়ো চোখের পাপড়ি গুলো কী ভীষণ সুন্দর লাগছে! ছোটো মুখটি পুতুলের মতন যেন সুন্দর। সচারাচর এত সুন্দর মানুষ দেখা যায় না। তিমিরের দেখেছে বলে মনেও পড়ে না। মনে হয় একটু বিশেষ ভাবেই যেন বিধাতা এই রূপ গড়েছেন।

সিএনজি এসে বাড়ির কাছে পৌঁছাতেই তিমির তার কাঁধে থাকা করবীর মাথাটা আলগোছে সরিয়ে নিল। অতঃপর নিরাপদ দূরত্বে এসে মৃদু স্বরে ডাকল। ডাকতে গিয়ে অবশ্য খেয়াল করল মেয়েটা ঘুমের চোখেও কেমন যেন দুশ্চিন্তা করছে। কিসের একটা চিন্তায় কপাল কুঁচকে রেখেছিল। তিমির ধীরেই ডাকল। আর খুব অবাকের ব্যাপার হলো মেয়েটা এক ডাকেই ঘুম থেকে উঠে গেল। এত বিভোর ঘুম কীভাবে এত ধীর আওয়াজেও ভেঙে গেল! তিমির কিছুটা অবাকই হলো বটে।
ঘুম ভাঙতেই করবী হাসল। সুন্দর হাসি। সদ্য ভোরের ফুটে উঠা পুষ্পের ন্যায়। বেশ নরম কণ্ঠে বলল,
“সরি সরি, চোখ লেগে গিয়েছিল।”

“সমস্যা নেই। তোমার বাসা এসে পড়েছে।”

করবী বেশ চটপটে পায়েই নেমে দাঁড়াল। তিমির বসে রইল ঠাঁই। ফলের ব্যাগ, হোটেলের খাবার গুলো এগিয়ে দিল করবীর হাতে। একবার জিজ্ঞেসও করল,
“পারবে একা?”

করবী চঞ্চল স্বরে উত্তর দিল, “পারবো, পারবো।”

তিমির বুঝল, মেয়েটা চাচ্ছে না সে নামুক এখানে তাই সেও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না। ভাঙাচোরা দোতলা বাড়িটার ভেতরে যাওয়া অব্দি সিএনজিটা ঠাঁই এক জায়গায় থেমে রইল। তারপর করবী নিজের ঘরে প্রবেশ করতেই দূর থেকে সিএনজির শব্দ শুনতে পেল। লোকটা বোধহয় এতক্ষণে গেল।

করবীর হাতে এত জিনিস দেখেই তৈয়ব হোসেন চমকালেন। অবাক কণ্ঠে বললেন,
“কিরে মা, এত ফলমূল যে! এতকিছু কিনতে গেলি কেন? আমার শরীর তো যথেষ্ট সুস্থই আছে। শুধু শুধু টাকা অপচয় করলি।”

বাবার প্রশ্নে করবীর বুকের ভারী ভাব হালকা হলো। যাক, বাবা কিছু বুঝতে পারেননি। সে খাবার গুলো রান্নাঘরে রাখতে রাখতে বলল,
“বাবা, আমি আনিনি। এগুলো দিয়েছে এক স্টুডেন্টের বাসা থেকে। তুমি এক কাজ করো তো, এখানে একটার মধ্যে অনেক খানি মাংসের তরকারি আছে। আমাদের জন্য কিছু রেখে বাকিটা হুতুমদের দিয়ে আসো। ওরাও তো ভালোমন্দ তেমন খায় না। হুতুমটা মাংস পেলে খুশি হবে অনেক। বিন্দুরও তো মাংস প্রিয় ভীষণ।”

তৈয়ব হোসেন মাথা নাড়ালেন। মেয়ের এমন মহৎ মনের পরিচয়ে খুশিই হলেন। ভেতর ভেতর গর্বে বুকটা ফুলে উঠল তার। মেয়েটার যদি টাকা থাকতো, নিশ্চয় সেই টাকা দিয়ে মেয়েটা কত মানুষের উপকার করতো! কিন্তু দুর্ভাগ্য, উপরওয়ালা যাদের টাকা নেই তাদের দেন বড়ো মন। আর যাদের টাকা আছে তাদের দেন ছোটো মন।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে