বুকপকেটের বিরহিণী পর্ব-১২+১৩

0
308

#বুকপকেটের_বিরহিণী
কলমে: মম সাহা
দ্বাদশ পর্ব:

(২০)

করবীর শরীর সুস্থ হয়েছে বেশ ক’দিন হলো। শরীর সুস্থ হতেই আবার ব্যস্ত হলো নিজের অভাব-অনটনের জীবনে। দারিদ্র্যের ঘরে রোজগার করা ব্যাক্তি অসুস্থ হওয়া মানেই ভাঙা প্রাচীর থেকে আরেকটু অভাব গলিয়ে পড়া। করবীদের ক্ষেত্রেও তা হলো। তার অসুস্থতায় হাতে থাকা টাকা গুলো খরচ হয়ে যাওয়ায় আজকাল আরও বেশি খারাপ দিন কাল যাচ্ছে। ঘরে আলুও নেই। বাবা-মেয়ে কোনোরকমে ভাত ফুটিয়ে দু’টো লঙ্কা মেখে খেয়ে চালিয়ে দিচ্ছে। তার উপর অসুখের সময় হীরণও বেশ কিছু টাকা খরচ করেছে। সেগুলো পরিশোধ করার একটা ভারী চিন্তা তার মাথায় বোঝার মতন ভার হয়ে লেপটে আছে।

আজকেও করবী সকাল সকাল উঠে তৈরী হয়ে নিল। নিত্য পরিহিত পোশাক গুলো ধুতে দিয়েছে। শুকোয়নি। আলমারিতে তিন সেট জামা আছে অবশ্য। কিন্তু এই বৃষ্টি কাঁদার রাস্তায় ভালো জামাগুলো তার পরতে ইচ্ছে হলো না। অনেক ভেবে চিন্তে সে গাঢ় বেগুনি রঙের বাটিক ছাপার বহু পুরোনো একটি শাড়ি বের করল। এই শাড়িটা এইচএসসিতে গোল্ডেন পাওয়ার খুশিতে বাবা তাকে উপহার দিয়ে ছিলেন। গাঢ় বেগুনি রঙটা সময়ের বিবর্তনে নিজের ঝকঝকে রূপ হারিয়েছে। কিছুটা মেটে হয়ে গিয়েছে। তবে করবীর অতি সুন্দর; ফর্সা শরীরে শাড়িটা যেন বহুগুণ সৌন্দর্য লাভ করেছে। শাড়ির সাথে মিলিয়ে ব্লাউজও পরেছে। ভারী কেশ গুচ্ছ কোমড় ছাড়িয়ে উড়ছে নিজ মনে। করবীর আজ ভীষণ সাজতে ইচ্ছে হলো। শাড়ি পরলে মনটা কেমন নিজে নিজে শৌখিন হয়ে পড়ে। তার উপর একটি চাকরির ইন্টারভিউও আছে আজ। একটু পরিপাটি হয়ে গেলে হয়তো চাকরিটা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে! যদিও এই কেনা-বেচার বাজারে, মোটা অঙ্কের ঘুষ না দিলে চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য পার্সেন্ট। তবুও ক্ষীণ আশা মনে তো রাখতেই হয়! আশা না থাকলে যে জীবন চলবে না।
ভীষণ সুন্দর সাজগোছ করে তৈরী হলো মেয়েটা। ঘনপল্লব বিশিষ্ট ছোটো ছোটো চোখ গুলোতে মোটা করে কাজলও দিলো। সিঁথি করল মাঝ বরাবর। সারা শরীরে অলঙ্কার বলতে কেবল নাকের ছোটো পাথরের নোসপিনটাই আছে। কপালে টিপ লাগাতেও ভুলল না।

এমনেতেই করবী সীমাহীন সৌন্দর্যের প্রতীক বলা যায়। তার উপর আজ বেগুন রঙটা যেন সেই সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিলে বহুগুণ। তৈরী হয়েই ও দেখা করতে গেল বাণীর সাথে। বাণী তখন ঝিমচ্ছিল। করবী গিয়ে খাঁচাটা নাড়তেই পাখিটা সজাগ হলো। যথারীতি বলল,
“সই, সই, সই, মনের কথা কই?”

করবী হাসল। মাথা নাড়িয়ে বলল, “না। আজ না। আজকে আরেকটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি, বাণী। দোয়া কর, চাকরিটা যেন পেয়ে যাই।”

পাখি আদৌও দোয়া করতে পারে কি-না করবীর জানা নেই। তবুও সে এই অবুঝ প্রাণীটির উপর ভরসা রাখে। তারপর ব্যস্ত হাতে খাঁচাটিকে ছোটো বারান্দার এক কিনারায় আড়াল করে রেখেই ছুটে রান্নাঘরে৷ তৈয়ব হোসেন মেয়ের অসম্ভব রূপ দেখে শঙ্কিত হন কিন্তু বুঝতে দেন না।
ভাত খেতে বসে প্লেটে মাছ দেখে চমকায় করবী। পরে জানতে পারে বিন্দু এসে মাছ দিয়ে গেছে। কৃতজ্ঞতায় চোখ ভারী হয় তার। ইশ্, এত মানুষের এত ঋণ সে কখনো মিটাতে পারবে? হয়তো পারবে না। একসময় তার টাকা হবে ঠিকই, কিন্তু ভালোবাসার ঋণ টাকা দিয়ে কখনো শোধ করা যায় না।

করবী অনাকাঙ্খিত চোখের জল গুলো বহু প্রচেষ্টায় লুকিয়ে ভাতটুকু শেষ করল। তারপর বাবাকে সালাম করেই ছুটল। তৈয়ব হোসেন মনে মনে মেয়ের জন্য অনেক দোয়া করেন। অভাব কিংবা মানুষ, সবকিছুর কালো ছায়া যেন মেয়েটার থেকে দূর হয়ে যায়।

করবী সিঁড়ি বেয়ে নামে দ্রুত। বিন্দু কিংবা আমেনা খালা কেউই এখন আর বাসায় নেই। পেটের দায়ে ভোরেই তারা ছুটে কর্মস্থানে। নাহয় সে তাদের থেকেও দোয়া নিয়ে যেতো।

গেইট পেরিয়ে রাস্তায় নামতেই পেছন থেকে করবীর ডাক ভেসে আসে,
“বাণীর মা, খাঁড়াও।”

হুতুমের আধো কণ্ঠ পেতেই করবী দাঁড়ায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে ছোটো মেয়েটা ছোটো ছোটো পায়ে বেশ দ্রুত ছুটে আসছে। করবী সাবধান করে, “আস্তে আসো। পড়ে যাবে।”

হুতুম শোনার পাত্রী নয়। সে জোড়েই ছুটে আসে। হাঁপিয়ে উঠে বাচ্চাটা। অনভিজ্ঞ হাতে মুখের সামনের চুল গুলো সরানোর প্রচেষ্টা চালায়। হাতের মুঠোয় থাকা পাঁচশ টাকা নোটটা সে এগিয়ে দেয় করবীর দিকে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে অতঃপর ফিসফিস করে বলে,
“বিন্দুবালা তোমারে দিতে কইছে এইডা। বিন্দুর মা যেন না জানে হেইডাও কইছে তোমারে কইতে।”

করবী ভারী অবাক হয়। বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
“বিন্দু দিয়েছে?”

হুতুম আদুরে ভঙ্গিতে উপর-নীচ মাথা নাড়ায়। যার অর্থ, হ্যাঁ। করবী টাকাটা নিতে দোনোমোনো করে। তখনই ছোটো হুতুম বিজ্ঞ স্বরে বলে,
“বিন্দুবালা কইছে, তুমি যেন হাইট্টা না যাও। হের জন্য ও তোমারে টেকাটা দিয়া গেছে। বুজছো। নিতেই কইছে তোমারে।”

করবীর চোখে ভোরে উঠে অযাচিত অশ্রুতে। মুখে লেগে থাকে বহু পুরোনো সেই কৃতজ্ঞতার হাসি। টাকাটা নিয়ে সে হুতুমের ফুলো ফুলো গালে চপাস করে একটা চুমু খায়। বাচ্চাটার অত্যাধিক কোঁকড়া সোনালি চুল গুলো গুছিয়ে দেয় আলগোছে। তারপর কিছুক্ষণ জাপটে ধরে রাখে বুকের মাঝে। এতক্ষণ তার যেই বুক ধড়ফড় ব্যাপারটা ছিল, এখন আর সেটা অনুভব করতে পারল না। নিমিষেই যেন উধাও হয়ে গেল। চাকরি না হলেও আজকের দিনটা তার আর খারাপ যাবে না। এমন স্বর্গ মুখ দেখলে কারই বা দিন খারাপ যাবে?

(২১)

ইন্টারভিউ যথেষ্ট ভালো হয়েছে তবে করবী জানে, এই চাকরিটাও তার হবে না। ইন্টারভিউ তো কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! চাকরি এখন এমনেই হয়ে যায়। কেবল অর্থ থাকলেই হয়। চাকরির ইন্টারভিউ ছিল দশটায়। ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে হয়েছে কলেজ। কিছুদিন পর ইনকোর্স পরীক্ষা। তারই খোঁজ নিতে এসেছে। আর কয়েকটা দিন পর মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। এরপর কী করবে সে? দিন দিন অভাব কেবল বাড়ছেই। কোনো দিকদিগন্ত তো পাচ্ছে না! কলেজ থেকে গিয়েছে টিউশনি করাতে। দু’টো টিউশনি আছে এখন। বাকি গুলো অসুস্থতার জন্য বাদ দিয়ে দিয়েছে তাকে। বাচ্চাদের নাকি পড়াশোনোর ক্ষতি।

টিউশনি বাসা থেকে বের হয়েই করবী বড়ো রাস্তা ধরল। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তন্মধ্যেই তার ব্যাগে থাকা আধভাঙা ফোনটা বেজে উঠল। করবী রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে ফোন করল। ফোন বের করতেই দেখল তিমিরের নাম্বার। যা অজান্তেই করবীর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে দিল। লোকটা এখন রোজ নিয়ম করে কল দেয়। খোঁজ নেয়। যা না চাইতেও করবীকে প্রশান্তি দেয়। স্বস্তি দেয়। যেমন আজ দিল।
করবী বেশি অপেক্ষা না করেই ফোনটা রিসিভ করল। রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে তিমিরের স্বচ্ছ কণ্ঠ ভেসে এলো,
“মাথায় ফুল দিলে আরেকটু বেশি সুন্দর লাগতো তোমাকে।”

তিমিরের অপ্রত্যাশিত কথায় বিস্ময়ে হা হয়ে গেল করবীর মুখ। কথাও যেন বের হচ্ছিল না। তবুও অস্ফুটস্বরে কেবল উচ্চারণ করল,
“আপনি কীভাবে বুঝলেন?”

“কীভাবে বুঝলাম তা পরের ব্যাপার। সঠিক বুজেছি কি-না তা বলো।”

করবী হাসল। লজ্জায় লাল হলো গাল। ছোটো করে বলল, “হুম”।

ব্যস্ তার সেকেন্ডের মাথায় সে অনুভব করল তার মাথায় কিছু একটা লাগাচ্ছে কেউ। করবী ঘাড় ঘুরাতে নিলেই বাঁধ সাধলো পরিচিত কণ্ঠ,
“নড়বে না। তাহলে লাগাতে পারব না।”

করবী অক্ষরে অক্ষরে তা মানল। সত্যিই সে আর নড়লো না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল বিপরীত পক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না আসা অব্দি। তিমির নিবিড় হাতে ফুলটা বাঁধল। তারপর মুচকি হেসে করবীর সামনে এসে দাঁড়াল। মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,
“মাশআল্লাহ্ তোমার চুল ভীষণ সুন্দর।”

করবী লজ্জা পেল ঠিক কিশোরীর ন্যায়। ডানে-বামে তাকিয়ে লজ্জা কাটানোর চেষ্টা করল। তিমির করবীর সে চেষ্টা দেখে হাসল। মেয়েটাকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম নারী লাগছে। যার রূপে অনায়াসে গলে যাবে কঠিন বরফ। মোহমুগ্ধ কণ্ঠে তিমির বলল,
“আজ স্বয়ং চাঁদ মাটিতে যে!”

করবী লজ্জায় নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল। তিমির তা দেখে হাসল নৈশব্দে। তার আলতো হাত ছুঁয়ে দিল করবীর হাত গুলো। হাস্যরসাত্মক কণ্ঠে বলল,
“দোষ নিও না, রক্তকরবী। এই অধমের এতো বড়ো স্পর্ধা ক্ষমা করো। কিন্তু আজ একটু আধটু অপরাধ হলেও আমি তা মেনে নিবো বিনা যুদ্ধে। তবুও এই অসাধারণ সুন্দর মেয়েটির হাত না ধরে নিজের আত্মাকে কষ্ট দিতে পারছি না। সে তুমি আমাকে নষ্ট পুরুষ ভাবতেই পারো। তোমার সান্নিধ্য পেতে আমি হাজার বার নষ্ট হতে রাজি।”

তিমিরের এহেন কথায় খিলখিল করে হেসে উঠল করবী। হাতের মুঠো নিজ ইচ্ছেয় শক্ত করল। এ যেন নীরবে প্রশ্রয় দেওয়া। সোডিয়ামের আলো যেন আজ আরও ঝলমল করে উঠল। চারপাশে কেমন রঙিন আলো ঝলমল করছে। নাকি করবীর প্রেমে পড়া চোখ সবকিছুতেই রঙ খুঁজে পাচ্ছে?

গলির কিছুটা আগে এসেই করবী হাত ছাড়লো। তিমিরের থেকে বিদায় নিয়ে ঢুকলো গলির ভেতর। গলিতে আসতেই দেখা মিলল বিন্দুর। মেয়েটাও মাত্র কাজ থেকে ফিরল। করবীকে দেখেই গাল ভোরে হাসল সে। চকচক করে উঠল মেয়েটার চোখ। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“আরে আপা, তোমারে তো পুরা নায়িকা লাগতাছে? হায় আল্লাহ, এই রূপে নজর যেন না লাগে। এমন অপ্সরার লাহান রূপ তোমার আপা! হীরণ ভাইরেই বা কী দুশ দিমু কও? আমারেই তো মনে পোলা হইলে তোমারে তুইল্যা নিয়া বিয়া করতাম।”

বিন্দুর বলার ধরণে হেসে ফেলল করবী। ছোটো চ ড় দিয়ে শুধাল,
“তোর হীরণ ভাই বোকা বলে আমার পেছন লাগে। চালাক হলে তার একমাত্র ধ্যান, জ্ঞান হতিস তুই। তোর মতন কেউ ভালোবাসতে পারে আদৌও? এমন করে ভালোবাসা পায়ে ঠেলে কারা জানিস? বোকারা।”

“তাইলে কী তুমিও বোকা, আপা?”
বিন্দুর প্রশ্নে স্থির হয়ে গেল করবীর চোখের মনি দু’টো। হাসির প্রসস্থতা হ্রাস পেল। ধীর স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“আমি বোকার মতন কিছু করেছি, বুঝি?”

“করো নাই বলতাছো? এই যে হীরণ ভাই যে তোমারে ভালোবাসে, এমন করে আদৌও কেউ ভালোবাসতে পারে কও? তার ভালোবাসাও তো তুমি মূল্য দেও না।”

“মূ্ল্য দিলে তোর কষ্ট হবে না, বিন্দু?”

“হীরণ ভাই সুখী হলে আমার ক্যান কষ্ট থাকবো, আপা?”

কথাটা বলতেই বিন্দুর কণ্ঠ কাঁপল। ভেতর ভেতর যে এই উত্তরটা দিতে তার কতটুকু যন্ত্রণা হয়েছে তা করবী ভালো করেই আন্দাজ করতে পারল। তাই কষ্ট কমাতে বলল,
“মজার ব্যাপার কী জানিস, বিন্দু? অনেক সুন্দর যারা, তাদেরকে মন-প্রাণ থেকে কেউ ভালোবাসে না। বেশিরভাগ মানুষ তার রূপে মুগ্ধ হয় যায় এবং তার নাম দেয় ভালোবাসা। আমার এই রূপ কোনোদিন এসিডে ঝলসে গেলে দেখবি আমাকে ভালোবাসার মতন হয়তো কেউ নেই। কেউ না। কিন্তু এমন অত্যাধিক সুন্দর না যারা, তাদের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার দারুণ আছে। তা হলো— কেউ যদি তাদের ভালোবাসে বলে দাবী করে তবে বলা যায় সে সত্যিই ভালোবাসে। কারণ এক্ষেত্রে মুগ্ধতার তো কোনো উপায় নেই। তবে আমি চাই, হীরণ তোকেই ভালোবাসুক। আর জানি, একদিন ও তোকে পৃথিবীর সবথেকে বেশি ভালোবাসাটা দিবে।”

বিন্দু করবীর কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো। বলল,
“অভাগীর আশায় পড়ে ছাঁই, জানো তো?”

বিন্দুর কথাটা শেষ হতেই কোথা থেকে যেন হীরণ ছুটে এলো। এই মানুষে পরিপূর্ণ গলিটিতে এসেই চারপাশ না তাকিয়ে করবীর চুলের মাঝে থাকা ফুলের খোপাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলল। সাথে কয়েকটা চুলও নির্দয়তার সাথে ছিঁড়ে গেল। করবী হতভম্ব। হীরণ কেমন ফোঁসফোঁস করতে করতে করবীর হাত মুঠ করে ধরল। দাঁত কিড়মিড় করে বলতে লাগল,
“আমার না হলে তুমি কারো না। কারো না।”

বিন্দু ছুটে গেল। হীরণের শক্ত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল। বার কয়েক বললও ছাড়তে কিন্তু হীরণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। পাড়া প্রতিবেশীর মানুষরা ভীড় জমালো। রাস্তা ভোরে গেলে মুহূর্তেই। এসব মানুষ যে পরবর্তীতে রসিয়ে রসিয়ে এই ঘটনাকে আরও বড়ো করবে তা আর বুঝতে বাকি রইল না বিন্দুর। দিশে না পেয়ে বিন্দু সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিল হীরণের বুকে। কেমন আক্রোশ নিয়ে বলল,
“তুমিও কাপুরুষ, হীরণ ভাই। কাপুরুষ। নারীর গায়ে যে পুরুষরা হাত দেয় তারা সবাই কাপুরুষ। ছিঃ, ছিঃ। তুমিও ভুল মানুষ। তুমিও ভুল।”

#চলবে…..

#বুকপকেটের_বিরহিণী
পর্ব: ত্রয়োদশ
কলমে: মম সাহা

বিনা পয়সায় মজা লুটতে ভীড় জমলো মানুষের। আগ্রহী, কৌতূহলী দৃষ্টি গুলো যেন কাঁটার মতন বিঁধল করবীর শরীরে। হীরণের চোখের সাদা অংশটুকু ততক্ষণে লাল রঙ ধারণ করেছে। করবী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেই ভীষণ শক্ত কণ্ঠে বলল,
“এই মুহূর্তে আমার হাতটা না ছাড়লে আপনার গালে চ ড় বসাতে আমি দু’বার ভাবব না।”

ব্যস্, বাক্যটুকু আগুনে ঘি ঢালার কাজ করল। হীরণ হাতটা আরও শক্ত করে টেনে ধরল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,
“তোমার যা ইচ্ছে করো। আমিও দেখবো তুমি আমার নাহয়ে কার হও।”

বিন্দুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে বহুক্ষণ আগেই। সে এবার হীরণের টি-শার্ট টেনে ধরল। মেয়েটার চোখ জলে টলমল করছে। কোনোরকমে অস্ফুটস্বরে বলল,
“ছাইড়্যা দেন আপারে। আপনি কোন সাহসে আপার ইজ্জত নিয়া টান দিছেন, কন? আপনি কী অমানুষ হইছেন? এই আপনারে আমি এত ভালোবাসলাম?”

হীরণের সামগ্রিক রাগ এবার যেন লেলিহান দাবালনের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। তার পুরুষালী শক্ত হাতের চড়টা গিয়ে পড়ল বিন্দুর ডান গালে। বিন্দুর যেন সমগ্র পৃথিবী ঝনঝন করে উঠল। হতভম্বতার গাঢ় বাতাস ছুঁয়ে গেল পুরো জনস্রোতকে। বাদ গেল না করবীও। হীরণ মুখ ঝামটি মেরে বলে উঠল,
” কে বলেছে তোকে ভালোবাসতে? আমি বলেছি? আমি কাপুরুষ হলে তুই কী? ভালো মানুষ? তুইও তো নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়েমানুষ। তাই তো আমি না করা স্বত্তেও আমার পিছনে পরে থাকিস।”

বিন্দু যেন মুহূর্তেই ভাষাহারা হয়ে গেল। ভালোবেসেছে বলে আজ এমন ভাবে কলঙ্কিত হতে হলো? এই দাম দিল ভালোবাসা তাকে? এই দাম?
আজ আমেনা খালা বাড়ি ফিরে ছিলেন সন্ধ্যার আগেই। ঘরে বসে তিনি রান্না করছিলেন। কিন্তু মহল্লার হৈচৈ-এর ভারী শব্দ তার কানে এসেও বারি খায় যার ফলস্বরূপ তিনি নিচে ছুটে এসে ছিলেন। কিন্তু নিচে এসে এমন দৃশ্য দেখতে হবে তিনি ভাবতেই পারেননি। ভরা বাজারে সম্মানহানির এহেন দৃশ্য উনার মাথা নত করে ফেলছিল। হয়তো উনারা গরীব কিন্তু তাই বলে ভরা মানুষের ভীড়ে তার মেয়ে এমন ভাবে মা র খাবে একটা যুবক ছেলের হাতে? ছি! এমন দৃশ্য দেখার আগে সে অন্ধ হলো না কেন?

ঝামেলার মোড় এবার বিশ্রী ভাবে ঘুরে গেল। আমেনা খালা গিয়ে বিন্দুর চুলের মুঠি টেনে ধরলেন সাথে ক্ষমা চাইলেন হীরণের কাছে। করবী আমেনা খালাকে বুঝানোর জন্য বলল,
“বিন্দুকে ছাড়েন, খালা। ও কিছু করেনি। ওর দোষ নেই।”

“অর দোষ নাই কেডা কইছে? অর অবশ্যই দোষ আছে। অর সবচেয়ে বড়ো দোষ ঐ তোমার মতন অপ্সরার লগে মিশছে। আইজক্যা না অয় তোমার লগে মিশতো, আর না ভরা বাজারে অরে মাইর খাইতে হইতো। মা** যেমুন মাইনষের লগে মিশবি হেমুনই তো হইবো। মানুষ তোরে রাস্তার মাইয়্যা বানায় দিল।”

আমেনা খালার প্রথম কথা গুলো যতটা না করবীকে আঘাত করল তার পরের কথা গুলো তারচেয়ে দ্বিগুণ অপমানে আচ্ছাদিত করল তাকে। ভীড়ের মাঝে দু-চার মহিলা সহমত পোষণ করে আরেকটু বাজে ইঙ্গিতে বলল,
“হ হ হুতুইম্যার আম্মা, ঠিক-ঐ কইছেন। বিন্দুর বয়স হইলো কম। ঐ কী এতকিছু বুঝে? এই মাইয়্যা হইলো সেয়ানা। এত বয়স হইলো অহনো বিয়া না কইরা ঘুরে। কিছু কইলেই কেমন দাঁত কিড়মিড় কইরা জবাব দেয়। মা নাই ঘরে। বাপ একটা ল্যাংড়া, ঘরবন্দী। মাইয়্যা নাকি সংসার চালায়। কোন জায়গায় কোন আকাম কইরা সংসার চালায় আল্লাহ্ মালুম। আমরা লাগে কিছু বুঝিনা। আর হীরণ পোলাডা তো সারাক্ষণ মহল্লাতেই থাকে, কই কহনো তো কোনো মাইয়্যার লগে এমুন করতে দেহি নাই। অর লগেই কেন করল? নিশ্চয় এমন জ্বালা ধরা রূপ দিয়া ভুলাইছে। এহন তো আমাগো ঘরের বেডাগোরেও সাবধানে রাখতে হইবো দেহি।”

এমন ঘৃণিত ইঙ্গিতপূর্ণ কথার বিপরীতে করবীর চিৎকার করতে মন চাইলো, বলতে ইচ্ছে হলো অনেককিছু। কিন্তু সে অনুভব করল তার গলা দিয়ে কথা আসছে না। শরীর কেবল অনবরত কাঁপছে। জীবনের প্রথম এত ঘৃণা ভরা বাণ ছুটে এসেছে বলেই হয়তো হজম করতে কষ্ট হচ্ছে! যেদিন বাড়িওয়ালা আবদুল ওরে ছুঁয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেছিল— সেদিনও বোধহয় করবীর এতটা ঘৃণা ধরেনি শরীরে, আজ যতটা ধরল। একজন নারী হয়ে কীভাবে আরেকজন নারীকে এতটা অপমান করা যায় তা-ই কেবল ভেতর ভেতর করবীকে ভাবিয়ে অবাক করে তুলল।
সেখানে আরও হয়তো কথা বাড়ার ছিল কিন্তু করবী পরাজিত সৈনিকের ন্যায় এক পা, দু’পা টেনে কেবল বেরিয়ে এলো সবকিছু পিছনে ফেলে। করবীর মাথা শূন্য শূন্য লাগছিল। পেছন থেকে হীরণের চেঁচামেচি পাওয়া যাচ্ছিল। হয়তো উপস্থিত জনতাদের উদ্দেশ্যে সেই হিংস্রতা ছিল। কিন্তু করবীর একটিবার সাহস করে আর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার ইচ্ছে হলো না৷ তার কেবল মনে হলো, ঘাড় ঘুরালেই দেখতে পাবে কতগুলো নোংরা দৃষ্টি তার চরিত্র টেনেহিঁচড়ে ছিড়ে ফেলার খেলায় মেতেছে। সেই এই খেলা দেখতে পারবে না। কখনোই না।

করবী ক্লান্ত পা গুলো টেনে যখন নিজের ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল তখন অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করল দরজাটা খোলাই আছে। করবীর মন ভীত হলো। বাবা কী কিছু আঁচ করেছেন? ভয়, শঙ্কা নিয়ে সে ঘরে ঢুকতেই চিন্তা হ্রাস পেল। নাহ্, বাবা ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু অবেলায় তো বাবা ঘুমান না! করবী গিয়ে বাবার শরীরে হাত রাখল। শরীরটাও তো স্বাভাবিক আছে।
করবী অন্ধকার রুমেই বেশ কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভাগ্যিস বাবা ঘুমিয়ে আছেন, যদি এসব কথা শুনতেন, দেখতেন তাহলে নিশ্চয় মানুষটা আর সহ্য করতে পারতেন না।

বিধ্বস্ত শরীরটা টেনে ঘরের বাহিরে চলে গেলো মেয়েটা। নিজের রুমে গিয়ে দরজা দিল। কিন্তু একবার যদি বাবার অন্ধকার রুমের আলো জ্বালাতো তবে সে দেখতে পেতো, অসহায় বাবা মেয়ের অপমানে বোকার মতন কেঁদেছেন। নিজের অক্ষমতাকে অভিশাপ ভেবে কতটা হা-হুতাশ করেছেন!

(২২)

বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল গতিতে। অসময়ে যেন কালবৈশাখি ঝড়ে প্রকৃতি দিশেহারা। ছন্নছাড়া বৈরী বাতাস চারপাশ জুড়ে বিরাজমান। করবী পরীক্ষার হলে বসে থেকে শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে বাহিরে। প্রকৃতির এই অশান্ত রূপে সে যেন নিজের চূর্ণবিচূর্ণ মনকে খুঁজে পাচ্ছে। গত কয়েকদিনের বিধ্বস্ত প্রায় মনটা বড়ো যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। এমন ধ্যানে কাটিয়ে দিল মেয়েটার পরীক্ষার অধিকাংশ সময়টুকু। মনমতো পরীক্ষাটাও শেষ করা হলো না তার!

পরীক্ষা শেষ হতেই সবার প্রথম হল ছেড়ে বেরিয়ে এলো সে। চোখের নিচে কালী জমেছে তার। মনে হচ্ছে যেন গাঢ় কুহেলি ছক কষছে বড়ো কৌতূহলে। শুভ্র রাঙা গাল গুলোতে অযত্নের দু-একটি ব্রণ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। বেশ কয়েকদিন হলো তার সাথে বিন্দুদের কোনো কথাবার্তা হয় না। সেও ব্যস্ত থাকে ভীষণ। টিউশন, কলেজ, পরীক্ষা, বাকি সময়টুকু নতুন বাসা খুঁজতে খুঁজতেই কেটে যায়। তারপর যখন পৌঁছায় বাসায় তখন আর মন ভরসা দেয় না, সাহস করে এক তলা ডিঙিয়ে চিলেকোঠার ঘরটায় যাওয়ার। আত্মসম্মানে যে গাঢ় দাঁগ জখম করেছে, সে দাগ যে এত সহজে মুছবার নয় তা করবী ভালো করেই আন্দাজ করতে পেরেছে।

“আমাকে এভাবে ইগ্নোর করার কারণ কী জানতে পারি?”

করবীর পা থেমে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল কণ্ঠের মালিকটির দিকে। তার মনে হলো, তার সামনে দাঁড়ানো পাঞ্জাবি পরা ছেলেটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ।
তিমির দু’পা এগিয়ে এলো। ভরাট তার কণ্ঠস্বর, “কী ব্যাপার! কথা বলছো না কেন?”

করবীর মুগ্ধতার ঘোর কেটে গেলো। চোখের সামনে ভেসে উঠল সেদিনের রাস্তায় তার চরিত্র নিয়ে রংতামাশা খেলার দৃশ্যটি। শিউরে ওঠল সে। আর কোনো ভাবে এত অপমানিত হতে পারবে না সে। তাই আলগোছে কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
“ব্যস্ত ভীষণ।”

“কতটা ব্যস্ততা তা আমিও জানতে চাই। কী এমন কারণে ব্যস্ত যে আমাকে তুমি দেখেও দেখছো না?”

করবী উত্তর খুঁজে পেল না। কিন্তু ভেতর ভেতর তার ভালো লাগার স্বত্তা অবহেলায় শক্ত হয়ে গিয়েছে। বেশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে সে স্বাভাবিক স্বরে জবাব দিল,
“আপনাকে দেখতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কখনো তো আমার ছিলোও না।”

করবীর রাশভারি কণ্ঠে চমকে গেল তিমির। এই প্রথম বুঝি মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলল তার সাথে! এত রূঢ়ভাষী তো ও কখনো ছিল না!

তিমির বিস্মিত কণ্ঠে বলল, “বাধ্যবাধকতা ছিল না কিন্তু কোথাও তো একটা অদৃশ্য বাঁধন ছিল তাই না?”

“কই? আমার তেমন মনেহয় না।”

করবীর শক্ত জবাবে তিমির আহত হলো। দু’হাতে করবীর ডান হাতটা ধরতেই করবী ছিটকে দূরে সরে গেল। চোখের উপর আবারও সেইদিনের দৃশ্য ভেসে ওঠল। সেদিন না সে হাত ধরে হাঁটতো আর না এতটা অপমান, অপদস্ত তাকে হতে হতো।
তিমির যেন আজ চমকের উপর চমক পাচ্ছে। করবীর বদলে যাওয়া রূপ। টানা কিছুদিনের অবহেলা যেন তার মানতে কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা এত শক্ত কখনোই ছিল না। তবে কী তার এলাকায় গিয়ে যে ঘটনা শুনেছে সেটা সত্যি! মেয়েটার সাথে কেউ খারাপ আচরণ করেছে? কিন্তু তিমিরের আর জিজ্ঞেস করা হলো না। তার আগেই সব ছাত্র-ছাত্রীদের উপচে পড়া ভীড়ে নিজ ইচ্ছায় হারিয়ে গেল করবী।

কলেজের গেইটের সামনে দ্রুত পায়ে আসতেই আবারও থেমে গেল করবীর পা। আমেনা খালা দাঁড়িয়ে আছে ঝুম বৃষ্টিতে। করবী অবাক হলো এসময়ে এখানে মানুষটাকে দেখে। একবার মনে হলো গিয়ে কথা বলবে, আরেকবার মনে ভয় হলো— আমেনা খালা কী তাকে ভার্সিটির সবার সামনে আবার অপমান করার জন্য এখানে এসে়ছেন? করবী কি করবে বুঝতে না পেরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়।
তবে হাসি মুখে তার দিকে এগিয়ে এলো আমেনা খালা নিজেই। এসেই বরাবরের মতন আদুরে স্বরে বলল,
“কি গো, আমারে দেইখাও গেলা না কেন আমার কাছে? গোসসা বুঝি কমে নাই তোমার? আম্মার উপর কেউ এত রাইগ্যা থাহে কও?”

করবীর ছোটো ছোটো চোখে তখনও বিস্ময়। ভিজে একাকার তার শরীর। অস্ফুটস্বরে বলল, “রাগ করিনি, খালা।”

“হেইড্যা তো তুমি আমারে খুশি করার লাইগ্যা কইতাছো। আমি কী আর হেইড্যা না বুইঝ্যা! তয় আম্মা, রাগ কইরা থাইকো না খালার উপর। খালা বড়ো বোকা মানুষ তো তাই তোমারে দুক্কু দিয়া ফালাইছি। মাফ করো আমারে, আম্মা।”
কথা শেষ করেই ভদ্রমহিলা হাত জোর করলেন।

করবী মহিলার হাত চেপে ধরল, ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“ছি! ছি! খালা, আমার পাপ বাড়াবেন না। আপনি এভাবে ক্ষমা চাইলে আমার পাপ হবে যে!”

“আম্মা, তোমারে হেইদিন যা সব বলছি তা কখনোই ক্ষমা হয় না। তবুও, ক্ষমা না চাইলে আমার আত্মা বড়োই জ্বালাতন করছিলো। খচখচ করতাছিল। আমারে ক্ষমা কইরো, আম্মা।”

“আমার কোনো রাগ নেই, খালা। আপনি আর ক্ষমা চাইবেন না।”

ভদ্রমহিলা হাসলেন। করবীর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন,
“আমাগো বিন্দু আর হুতুমের তো প্রাণ তুমি। মাইয়্যা দুইডা তোমার আশায় বইস্যা আছে। তুমি কী আইজ একটু জলদি বাসায় ফিরবা? ওরা তোমারে পাইলে একটু ভরসা পাইতো।”

“অবশ্যই খালা, আমি এখুনি যাব। চলুন।”

আমেনা খালা দু’পা পিছনে গেলেন। ঘাড় কাঁত করে বললেন,“তুমি যাও আম্মা, আমার একটা কাজ আছে। তুমি গেলে বিন্দুডা একটু শান্তি পাইবো।”

কথাটা শেষ করেই আমেনা খালা হাঁটা ধরলেন। মধ্যবয়স্ক এই নারীটিকে আজ অন্যদিনের তুলনায় খুব বেশি বৃদ্ধ দেখালো। মনে হলো যেন নুইয়ে নুইয়ে হাঁটছেন। বয়স মনে হলো কিছু দিনেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে!

করবী আজ আর টিউশনিতে গেল না। কী মনে করে রিকশা নিয়েই ছুটলো। অথচ আজ তার নতুন বাসার এডভান্স দেওয়ার কথা ছিল।

রিকশা গলির মোড়ে আসতেই মানুষের ভিড়ের জন্য আর ঢুকতে পারল না। করবীর মন কেমন যেন খচখচ করল। তার চোখে কেবল আমেনা খালার সেই হলদেটে চোখ গুলো ভেসে উঠতে লাগল। খালা তো ভীড়ের কথা কিছু বললেন না! এলাকায় কী হলো?

করবীর আর বেশি ভাবতে হলো না কী হলো নিয়ে। তার আগেই মানুষের ভীড়ের ফাঁকফোকরে লাশ বাহী খাটটি তার দৃষ্টিগোচর হলো। সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটির উপর বিরাট ছাতা লাগানো। আতুরের ঘ্রাণে ভোরে গেছে চারপাশ। স্বজন হারানোর চিৎকারও ভেসে আসছে। করবী ভ্রু কুঁচকালো, কার লাশ এটা!

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে