– মা, পাত্রী কোথায়?
– কোথায় মানে? ওর রুমেই আছে।
– না, রুমে নেই।
– তাহলে বোধহয় পার্লার থেকে আসেনি এখনও।
– না, পার্লার থেকে চলে এসেছে । ওর সাথে তো তোমার বউমাও গিয়েছিল, অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছে।
– তাহলে অন্যরুমে খুঁজে দেখ।
– দেখেছি। বাথরুম, বারান্দা, ছাদেও খুঁজে এসেছি। কোথাও নেই
– তাহলে একটা ফোন কর ওকে!
– এক ঘন্টা ধরে ফোন করছি। ফোন বাজছে, ধরছে না!
– কি বলছিস্!
মা এতক্ষণে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিলেন। আমার ছোটবোন নাবিলার বিয়ে, অনেক কষ্টে ওকে বিয়েতে রাজী করেয়েছি আমরা। কেন বিয়ে করতে রাজী হচ্ছিল না জানি না তবে পাড়ার এক মাস্তান টাইপের ছেলেকে ওর পছন্দ ছিল, মা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন ওর সাথে কিছু করা যাবে না। ও করেও নি কিন্ত বিয়েতেও রাজী হচ্ছিল না। মা সমসময় চিন্তায় থাকতেন, ও হয়ত গোপনে সম্পর্ক রাখছে মাস্তানটার সাথে। ওর বিয়েটা না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই পুরোপুরি শান্তি পাচ্ছি না। আজকে রাতেই ওর বিয়ে। তাই আমরা ওকে চোখের আড়াল করছিলাম না। কিন্ত গত এক ঘন্টা ধরে ওকে আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
– বউমা কি বলে? ওর সাথে আসেনি?
– এক সাথেই এসেছিল ওরা পার্লার থেকে। ও নেমে গেল, নাবিলা বলল, আমি একটু গুছিয়ে নামছি। ও বাসায় ঢুকল কিন্ত এরপরে আর দেখেনি ও।
– কি সর্বনাশ!
মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বিয়ে বাড়ি হলেও বাসায় আমরা কয়েকজনই আছি। আত্মীয়পরিজন সবাই ঢাকায় থাকে বিধায় কমিউনিটি সেন্টারেই সবার চলে আসার কথা। তারপরও বাসায় সবাইকে ডেকে জিগ্গেস করলাম, কেউ দেখেছি কিনা ওকে। কাজের বুয়া বলল, ও গাড়িতে যেতে দেখেছে নাবিলাকে। গাড়ীটা আবার নাবিলার অফিসের, আমাদের কারো কাছে ড্রাইভারের ফোন নাম্বারও নেই। মা ওর ক্লোজ দুই বান্ধবীকে ফোন করলেন, ওরা বিয়েতে আসার প্রিপারেশন নিচ্ছে, কিচ্ছু বলতে পারল না। মামা, খালাদের বাসায় ফোন করে লাভ নেই, ওখানে যাবে না ও।
আরো আধাঘণ্টা কেটে গেল। কোন খবর নেই। মা অসুস্হ বোধ করা শুরু করলেন। বড় মামাকে ফোন করব কিনা চিন্তা করছি এমন সময় দেখি নাবিলা বাসায় ঢুকছে। প্রচন্ড রাগ হলেও সামলে নিলাম, আজকে বিয়ের দিনে বকাবকি করতে চাইনা।
– এই কাউকে কিছু না বলে কোথায় গেছিলি?
– কেন, ভাইয়া? কি হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে? কিছুক্ষণ পর তোর বিয়ে, তুই বাসায় নাই! কোথায় গেছিস্ কেউ জানে না, ফোনও ধরছিস না।
– ও, ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিল, বুঝতে পারিনি।
– কিন্ত তুই এতক্ষণ ছিলি কোথায়?
– ছবি তুললাম!
– ছবি তুললি?
– হ্যা, ফটোগ্রাফার বলেছিল, বিয়ের সাজে সেঁজে চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে চলে যেতে, ন্যাচারাল পরিবেশে কিছু ছবি তুলবে।
– তাই বলে তুই একা চলে গেলি?
– একা যাব কেন? তোমাদের হবু জামাইওতো বরের সাজে আসল, দুজনে চন্দ্রিমায় ছবি তুললাম। এখন সেন্টারে যেয়ে কিছু সিঙ্গেল ছবি তুলব, তারপর বরযাত্রী আসলে বরের সাথে স্টেজে ছবি তোলার পালা, এগুলো দিয়েই তো বিয়ের ডকুমেন্টারিটা হবে।
কি বলব ওকে! এখন তো বিয়ের চেয়ে পাত্র-পাত্রীর ছবি তোলাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ! পরিবারের চেয়ে ফটোগ্রাফারেরই অধিকার বেশি এদিন!