বিসর্জন ষষ্ঠ পর্ব
– কে বলছেন ?
যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
– ওহ্ আপনি,,, আমার নাম্বার কোথায় পেলেন ?
আপনার বাবার থেকে নাম্বারটা পেয়েছি।
– তো ফোন দিয়েছেন কেন ?
চাকরিটা আমার হয়ে গেছে।এই মাসেই চাকরিতে জয়েন দিয়েছি।আর আমার পোস্টিং হয়েছে ঢাকাতে।ঢাকায় আসার আগে আপনার বাবার সাথে দেখা করতে গেছিলাম।তিনি আমাকে বলেছেন আপনার সাথে দেখা করতে আর আপনার খোঁজ খবর রাখতে।
– ও আচ্ছা।
কালকে বিকেলে কি আপনার সাথে দেখা করা যাবে ?
– সামনে আমার পরীক্ষা আমি এখন আপনার সাথে দেখা করতে পারবো না।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর কোন একদিন না হয় দেখা করবো।
দেখা করতে পারবে না কথাটা শুনে মনটা কিছু টা খারাপ হয়ে গেল তারপরই মনে হল লিনার পরীক্ষা না থাকলে হয়তো সে দেখা করত।
এভাবেই কেটে গেল আরও এক সপ্তাহ।রাতে আবার ফোন দিলাম।লিনা ফোন রিসিভ করে বলল ওর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা ও পরে কথা বলবে।
লিনার অসুস্থতার কথা শুনে সেদিন রাতে আমার আর ঘুম হল না।
খুব সকালে আবার লিনাকে লিনাকে ফোন দিলাম,,,
মাথা ব্যাথা কমছে ?
– হ্যাঁ,,,ব্যাথার ঐষুদ খেয়েছি এখন আর ব্যাথাটা নেই।
আজকে বিকেলে একটু দেখা করতে পারবেন ? প্লিজ না বলবেন না।
– ওকে,,,,আমি বের হওয়ার আগে আপনাকে জানিয়ে দিব কোথায় দেখা করব।
লিনা যে ঠিকানা দিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সেখানে বসে আছি।ও বলেছিল পাঁচটায় আসবে আমি চারটায় এখানে এসে বসে আছি।ওর সাথে দেখা করব বলে সময় যেন কিছুতেই যাচ্ছিল না।তাই এক ঘন্টা আগেই এখানে চলে এসেছি।এখানে বসে বসে লিনার কথা কল্পনা করতেছি।এর মধ্যেই কে যেন পেছন থেকে বলে উঠলো,,,,
– কখন আসলেন ?
এইতো ঘন্টা খানেক হবে।
– এত আগে আসলেন কেন।আমি তো বলেই দিয়েছি আমি পাঁচটায় আসবো এখানে।
বাসায় একা একা ভাল লাগতেছিল না।তাই চলে এসেছি।
– তাই বলে এক ঘন্টা আগে আসতে হবে।
কি আর করব।একা বাসায় থাকি,কথা বলার মানুষ নেই।তাই একটু আগেই চলে আসলাম।
তো কাল রাতে হটাৎ এত মাথা ব্যাথা হল কেন ?
– যানি না।তবে মাঝে মধ্যেই এমন হয়।ব্যাথার ঐষুদ খেলে আবার কমে যায়।
ডাক্তার দেখিয়েছেন ?
– ডাক্তারের কাছে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছে না।
কালকেই আপনি ডাক্তার দেখাবেন।মনে থাকবে ?
– ওকে দেখাবো।
তো আপনার চাকরি জীবন কেমন চলছে ?
হম ভালোই চলতেছে,,,,,
সেদিন লিনার সাথে দেখা করে বাসায় চলে আসি।তারপর মাঝে মধ্যেই লিনার সাথে আমার কথা হত।তবে বেশি একটা না।
আর এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিল,,,,
এর মধ্যেই একদিন অফিসে থাকা কালীন সময়ে লিনা ফোন দিল।এখন পর্যন্ত ও আমাকে একবারও ফোন দেয়নি।হটাৎ করে ওর ফোন পেয়ে আমি একটু এবাক হলাম,,,,
তাই ফোন রিসিভ করে বললাম।
হ্যাঁ বলেন,,,
– আচ্ছা,,,আপনার খুঁজে কি A- রক্তের কেউ আছে ?
আমার রক্তের গ্রুপেই A-
– সত্যি আপনার রক্তের গ্রুপ A- ?
হম।
– আপানাকে আমি একটা ক্লিনিকের নাম বলছি আপনি এক্ষুনি এখানে চলে আসুন।খুব তারাতারি আসবেন কিন্তু।
ওকে আমি আসতেছি।
– ওকে তাহলে এখন আমি ফোন রাখছি বাই।
এই বলেই লিনা ফোন রেখে দিল।আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেলাম ঐ ক্লিনিকে।সেখানে গিয়ে দেখি লিনা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।আমাকে দেখেই বলল,,,
– আপনি এসেছেন,,,
হম এসেছি।আপনি বলছেন আর আমি আসবো না।এখন বলুন কাকে রক্ত দিতে হবে।
– আমার এক বান্ধবী কাল রাতে এক্সিডেন্ট করে পা অনেকটা কেটে গেছে।শরীর থেকে অনেক ব্লাড বের হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে খুব দ্রুত ওরে ব্লাড দিতে হবে।অনেক জাইগায় A- ব্লাড খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।তারপর আপাকে ফোন দিলাম।কি অদ্ভুত ব্যাপার আপানাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম আপনার ব্লাড A-।এখন আমার বান্ধবীকে আপনার রক্ত দিতে হবে।
তারপর রক্ত দেওয়ার জন্য লিনা আমাকে নিয়ে গেল।
সেদিন লিনার বান্ধবীকে রক্ত দিয়ে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই বাসায় এসে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লিনা অনেক বার ফোন দিয়েছে।এটা দেখার সাথে সাথেই আমি আবার লিনাকে ফোন দিলাম,,,,
– কি ব্যাপার,,,রাতে আমি আপনাকে এতবার ফোন দিলাম আপনি ফোন রিসিভ করলেন না কেন ?
শরীর খুব ক্লান্ত ছিল তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
– আপনার কি শরীর খারাপ ?
না শরীর ঠিক আছে।
– জানেন আমার বান্ধবীরা সাবাই কাল আপনার খুব প্রশংসা করেছে।তখন আমার খুব ভালো লাগছিল ওদের মুখে আপনার প্রশংসা শুনতে।
আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ কেন ?
– আমার বান্ধবীকে রক্ত দিলেন তাই আপানাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম।
ধন্যবাদ দিতে হবে না।আপনার বান্ধবী মানে তো………….. !!
– কিছু বললেন ?
না কিছু বলিনাই।
সেদিনের পর থেকে লিনার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হতে শুরু করল।এখন আমি ফোন দেওয়ার আগেই সে আমাকে ফোন দেয়।তারসাথে রাত জেগে অনেক কথা বলি।এখন আমি তাকে তুমি করে বলি আর সে আমাকে আপনি করেই বলে।দিনগুলি খুব ভালোই যাচ্ছিল আমাদের,,,,,
তারপর একদিন সে আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলল।আমিও তার সাথে দেখা করতে গেলাম,,,,
– জানেন আজকের দিনটা না আমার জন্য খুব স্পেশাল।
কেন আজকে কি ?
– আজকে আমার জন্মদিন।তাই আজকের দিনটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।
এটা শুনার সাথে সাথেই আমি লিনাকে উইশ করলাম।তারপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বড় একটা কেক অডার করলাম।ওকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে আমি একটু বাহিরে আসলাম।তারপর মার্কেটে গিয়ে আমার পছন্দে ওর জন্য একটা নীল শাড়ি কিনলাম আর ওকে দেওয়ার জন্য কিছু ফুল নিলাম।
তারপর রেস্টুরেন্টে এসে ওকে ফুল আর শাড়িটা দিলাম।শাড়িটা ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।তারপর দুজনে কেক কাটবো এমন সময় লিনা বলল আমার মাথাটা কেমন যানি করছে আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
এক বছর পর••••••
– কিরে আর কতক্ষণ লাগবে তোর,,,,
এইতো মা আমার হয়ে গেছে।
– সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করতেছে।
তুমি যাও আমি আসছি।
আজ আমার বিয়ে।আমি বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি আর এদিকে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে।মা এটাই বলতে আসছিল আমাকে।
বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরে আমাকে বরন করার জন্য লিনা তার বান্ধবীদের নিয়ে এসেছে।লিনাকে দেখার পরেই আমার বুকের ভিতর টা কেমন করে উঠল।কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও খুব হাঁসিখুশি।
লিনাকে দেখার পরে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে একটা মানুষ এতটা কষ্ট নিয়ে কি করে হাঁসতে পারে।
লিনা আমাকে বরন করে ভেতরে নিয়ে গেল।আমি শুধু তাকিয়ে দেখিতেছি মেয়েটাকে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।
তারপর বিয়ে পারানোর জন্য কাজী এসে যখন আমাকে বলল,,, বলুন বাবা কবুল।অনেক চেষ্টা করতেছি কবুল কথাটা বলার কিন্তু কিছুতেই এই ছোট শব্দটা আমার মুখে আসতেছে না।আমার শুধু বার বার লিনার কথাই মনে হচ্ছিল।
এর মধ্যেই লিনা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।ওকে দেখার পর আর কবুল না বলে থাকতে পারলাম না।
অবশেষে আমার সাথে লিজার বিয়েটা হয়ে গেল।প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্তেও এই বিয়েটা আমাকে করতেই হল।
চলবে,,,,,,,,
লেখা || Tuhin Ahamed