বিসর্জন দ্বিতীয় পর্ব
– তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে এই বাড়িতে তোর কোন যায়গা হবে না।এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।
এই কথা গুলি বলেই বাবা চলে গেল আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি করবো এখন।পরাশুনা শেষ করেছি দুই বছর হল এখনো একটা চাকরি হল না।বাবা যদি এখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে কোথায় যাবো।আর ওনাকে কথা দিয়ে এসেছি পাঁচ দিনের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করবো।
খুব টেনশনে না পরলে আমি সাধারণত সিগারেট খাই না।তাই আজকে একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেট খেলে কেমন যানি একটা প্রশান্তি পাই।সিগারেট টানতে টানতে হটাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন এলো।আমি যদি “দশ” লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে পারি,তাহলে “দশ” লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারবো না কেন ?
চাকরির জন্য যখন বলেছিল পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা দিলে চাকরিটা হবে।আর আমিও তখন ওনার এক কথায় রাজী হয়ে গেছিলাম।কই তখন তো একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি ঘুষ দিয়ে চাকরি নিচ্ছি।তাহলে এখন আমার এটা মনে হচ্ছে কেন,,,আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না।
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো আমার জানা নেই।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাবার ঘরে গেলাম। বাবা আমাকে দেখেই বলল,,, কি সিদ্ধান্ত নিলে ?
আমি এই বিয়েটা করতে চাই বাবা।তুমি ওনাদের সাথে কথা বলো।
আমার কথা শুনার পরে বাবাকে দেখে মনে হল ওনি খুব খুশি হয়েছেন।খুশি হওয়ারি তো কথা বাবা তো এটাই চেয়েছিলেন।আমি যেন এই বিয়েটা করে নেই।
হাতে যেহেতু সময় বেশি নেই তাই আর সময় নষ্ট না করে পরের দিনেই চলে গেলাম মেয়ের বাবার সাথে দেখা করতে।মেয়েদের বাড়ি দেখে আমি অবাক হলাম।এর আগে এত সুন্দর বাড়ি আর কোথাও দেখিনি আমি।বাড়ির ভেতরটা খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো।
আমি আর বাবা বসে আছি ডাইনিং রুমে।কিছুক্ষণ পরেই মেয়ের বাবা আসলো আমাদের সাথে দেখা করতে।বসা থেকে উঠে ওনার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।
ওনার সাথে অনেক কথা হল আমাদের।ওনাকে আমি আমার সম্পর্কে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।ওনি আমার সব কথাই মনোযোগ সহকারে শুনলো।আর ওনার হাঁসি মাখা মুখটাই বলে দিচ্ছিলো ওনার হয়তো আমাকে পছন্দ হয়েছে।
আমারা দুপুরের দিকে ওনার বাসায় গেছিলাম তাই দুপুরের খাবার না খাইয়ে আমাদের ছাড়ল না।দুপুরের খাওয়া শেষে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঠিক তখনেই মেয়ের বাবা এসে আমার হাতে একটা “দশ” লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন।
আমি টাকা টা হাতে নিয়ে প্রথমে বাবার দিকে তাকালাম আর মনে মনে বললাম বাবার জন্যই আজ আমাকে টাকার কাছে বিক্রি হতে হল।
তারপর মেয়ের বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম। আজকেই আমাকে টাকা টা দিয়ে দিলেন যে,,,আর আপনার মেয়ের সাথে তো দেখা হল না।
আমার কথা শুনে ওনি বললেন,,,,
– তুমি না বললে টাকা টা পাঁচ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।তাই আজকেই তোমাকে টাকা টা দিয়ে দিলাম।আর আমার মেয়ে তো এখন বাসায় নেই।আমার দুই মেয়েই ঢাকায় থাকে।তারা সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে।আমার বড় মেয়ে বাড়িতে আসলেই আমি তোমাকে জানাবো তখন তুমি আমাদের বাড়িতে চলে এসো।
আমি এই টাকা টা নিয়ে আমার চাকরির জন্য জমা দিয়ে দিলাম।পরে যদি আপনার মেয়ের আমাকে পছন্দ না হয় তখন আমি কিভাবে আপনাকে টাকা ফেরৎ দিব ?
– সে সব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমার মেয়েদের আমি খুব ভাল করেই চিনি।ওরা কখনো আমার কথার অবাধ্য হয় না।আমার কথাই ওদের কথা।
ওকে আমি তাহলে আজকে আসি,,,,,
সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে রাতের ট্রেন ধরেই ঢাকায় চলে আসলাম।তারপর সকাল বেলা টাকা গুলি নিয়ে জমা দেওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলাম,,,
টাকা গুলো অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবেন।এখন মনের মাঝে অন্যরকম একটা প্রশান্তি অনুভব করতেছি।
এখন সময় গুলি খুব ভাল কাটছে।ইচ্ছা মতো খাচ্ছি ঘুমাচ্ছি নেই কোন চিন্তা ভাবনা।সময় গুলি যেন খুব তারাতারিই চলে যাচ্ছিল।
এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে,,,,
চলবে…….
লেখা || Tuhin Ahamed