বিসর্জন তৃতীয় পর্ব

0
1866

বিসর্জন তৃতীয় পর্ব

এর মধ্যেই হটাৎ করে একদিন মেয়ের বাবা ফোন দিয়ে বলল তুমি কালকে আমাদের বাসায় আসো।আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে।

ওনি আজকে ফোন না দিলে হয়তো ওনার কথা আমার মনেই হতো না।আমি এতটাই আনন্দের মধ্যে ছিলাম যে সবকিছুই কেমন করে যেন ভূলে গিয়েছিলাম।সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই।দিনগুলি আমার ভালই যাচ্ছিল।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম মেয়েকে দেখার জন্য মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে।যাওয়ার সময় বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছিল তখন আমার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল তাই যে মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হবে তাকে না দেখেই তার বাবার থেকে টাকা নিয়ে চলে এসেছি।এখন যদি মেয়েকে দেখে আমার একটুও পছন্দ না হয় তাহলে কি হবে,,,,

পছন্দ না হলে তখন তো আর আমার কারার কিছুই থাকবে না।টাকা গুলিও জমা দেওয়া হয়ে গেছে যে।ওনি টাকা চাইলেও তো আর টাকা গুলি আমি ওনাকে ফেরৎ দিতে পারবো না।

দূর,,,এখন আর এত চিন্তা করে কি হবে।যা হওয়ার তা তো অনেক আগেই হয়ে গেছে।এখন মেয়ে যদি আমার পছন্দ নাও হয় তাহলেও এই মেয়েকেই বিয়ে করব।যা আছে কপালে।

মেয়েদের বাসার কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কেউ তো দরজা খুলছে না।যেই না দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতে যাবো ঠিক তখনেই দরজা খুলে গেল।দরজা খুলে যাওয়ার পর আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।এই দৃশ্য দেখে আমি কিছুতেই আর চোখ ফেরাতে পারছি না।তাই হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে,,,

ঠিক তখনেই ভেতরে থাকা মেয়েটা বলে উঠলো,,,

– কি ব্যাপার,কাকে চাই ?

আঙ্কেল আমাকে গতকাল ফোন করে বলেছিলেন আজকে আসার জন্য।

ওহ্ বাবা তাহলে আপনার কথাই বলেছিলেন।ওকে আপনি ভেতরে আসুন।

ভেতরে গিয়ে বসলাম।আর মনে মনে বললাম এতক্ষণ আমি কি ভাবতে ছিলাম আর এখানে এসে কি দেখলাম।এমন মেয়ে আমি আর আগে কখনো দেখিনি।এ আমার যেন কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে,,,

এখন আর মনের মধ্যে আগের সেই ভাবনাটা নেই।এখন শুধু মনে হচ্ছে বিয়েটা আমি কখন কবরো।আর মনে হচ্ছে এই মেয়েকে বিয়ে না করতে পারলে আমার জীবনটাই হয়তো বৃথা হয়ে যাবে যে,,,

– তুমি কখন আসলে বাবা ?

এইতো আঙ্কেল কিছু কিছুক্ষণ হল আসলাম।

– আমি একটা কাজে শহরে গিয়েছিলাম।মাত্রই বাসায় আসলাম।তুমি বসো আমি ভেতর থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেছি।

ওকে আঙ্কেল আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি এখানেই অপেক্ষা করতেছি।

আঙ্কেল ভেতরে চলে গেল।আমি একাই বসে আছি।বাড়ির কাজের মেয়ে এসে নাস্তা দিয়ে গেল।কিন্তু,কিছুই খেতে হচ্ছে না।আমার ভাবনায় শুধু মেয়েটাই ঘুরছে।চোখ বন্ধ করলেই দরজার সামনের ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠে।

এর মধ্যে আঙ্কেল এসে পরেছে,,,

– কি ব্যাপার কিছুই খাচ্ছ না যে।

এখন খিদে নেই আঙ্কেল।তাই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

– তোমার চাকরির ব্যাপারটা কি হল ?

টাকা জমা দিয়ে সবকিছু কমপ্লিট করে আসছি আর ওরা বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই নাকি জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবো।

– ওকে।

কালকে আমার বড় মেয়ে লিজা বাসায় এসেছে তাই তোমাকে আজকে আসতে বলেছি।আমি লিজার সাথে কথা বলেছি।ও বলেছে বাবা তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।তোমার মতামতেই আমার মতামত।আর আমি যানি তোমার পছন্দ কখনই খারাপ হবে না।

আঙ্কেল এর থেকে কথা গুলি শুনে খুব খুশি খুশি লাগছিল আমার।

– তুমি বসো আমি লিজাকে নিয়ে আসি।

আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি আরেকটা বার তাকে দেখবো বলে।কি মায়াময় ছিলো তার সে চাহনি,,,,

একটু পরেই আঙ্কেল সাথে করে ওনার মেয়েকে নিয়ে আসলো।কিন্তু,আঙ্কেলের তো শুধু লিজাকে নিয়ে আসার কথা তাহলে সাথে আরেকটা মেয়ে আসলো ওটা আবার কে ?

ওহ্,,,আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আঙ্কেলের তো দুই মেয়ে।ও হয়তো আঙ্কেলের ছোট মেয়ে হবে।

তারপর আঙ্কেল ওনার মেয়েদের আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এ হচ্ছে আমার বড় মেয়ে লিজা আর এইটা হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে লিনা।লিজা এবার মাস্টার্স ফাইনাল দিবে আর লিনা এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরাশুনা করছে।

আঙ্কেলের এই কথাটা আমার বুক ত্রিশূলের মত হয়ে খোঁচা দিল।দরজা খোলার সময় যাকে দেখলাম,যাকে নিয়ে এতকিছু কল্পনা করলাম সে কিনা আঙ্কেলের ছোট মেয়ে।এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতেছি না।

এটা শুনার পরে ভেতর থেকে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম।তাই কথাবার্তা সংক্ষিপ্ত করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

বাসায় এসে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম।এতদিন ছিল এক চিন্তা,মেয়ে আমার পছন্দ না হলে কি করব।আর আজ থেকে নতুন চিন্তা হল যাকে আমার পছন্দ হয়েছে সে হচ্ছে ওনার ছোট মেয়ে।তবে বড় মেয়েও খুব ভালো দেখতেও যতেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু আমার যে ছোট মেয়েকেই ভালো লাগে।

এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু এখনো কোন উপায় বের করতে পারলাম না।তাই বাধ্য হয়েই অবশেষে আঙ্কেলকেই ফোন দিলাম,,,,

ওনার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেই ফেললাম।আঙ্কেল আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই।কিন্তু, কথাটা আপনাকে যে কিভাবে বলব বুঝতেছি না।আর কথাটা শুনে আপনিই বা কি মনে করবেন,,,,,

– আমি কিছুই মনে করবো না বাবা।তুমি কোন রুকম সংকোচ না করেই আমাকে কথাটা বলতে পারো।

আঙ্কেলের মুখ থেকে কথাটা শুনে মনে কিছুটা সাহস পেলাম আর সেই সাহস নিয়েই বলে ফেললাম।আঙ্কেল আমি আপনার বড় মেয়েকে নয়,আপনার ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

আমার কথা শুনে ওনি চুপ হয়ে গেলেন।

তারপর বললেন,,,দেখো বাবা তোমাকে তো আগেই বলেছি আমি আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই।আর এই ব্যাপারে আমার মেয়ের সাথে কথা হয়ে গেছে।আমার মেয়ে আমার এক কথাতেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে।তাছাড়া বড় মেয়েকে রেখে আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিলে মানুষ জনেই বা কি বলবে।

আঙ্কেল আপনি যদি চান আগে আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে তাহলে তাই হবে।লিজার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেই না হয় আমি লিনাকে বিয়ে করব।আমি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করব আঙ্কেল।

আমি চাইলেই হয়তো আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে করে নিতে পারতাম।এই কাজটা করলে এটা আমার মনের বিরুদ্ধে করা হতো।এতে লিজা বা আমি কেউ সুখী হতে পারতাম না।বিয়েটা তো আঙ্কেল দুই-চার দিনের ব্যাপার না।এটা হচ্ছে সারাজীবনের ব্যাপার।

– ওকে।

আমি ভেবে দেখি কি করা যায়।পরে তোমাকে জানাবো।

সাহস করে হয়তো কথা গুলি আঙ্কেল কে বলেছি।কিন্তু,এখন নিজের মধ্যেই কেমন যানি একটা অপরাধ বোধ কাজ করতেছে।যে মানুষটা আমার বিপদে আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই মানুষটাকেই আজ আমি বিপদে ফেলে দিলাম,,,,

এভাবেই সময় গুলি চলে যাচ্ছিলো।আর আমার মাঝে একটা অজানা ভয় থেকেই গেল।

এর মধ্যেই হটাৎ একদিন আঙ্কেল ফোন দিয়ে বলল।আগামীকাল তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসো,,,,,,

চলবে…..

লেখা || Tuhin Ahamed

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে