সত্যঘটনাঅবলম্বনে
বিশ্বাসঘাতকতা
পর্ব_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
-“কিরে আমার মোবাইলটা কই?ওর তো কল দেওয়ার সময় হয়ে গেছে!উফ উফ….. কি বুদ্ধুই না আমি। কোথায় কি রাখি কিচ্ছুটা মনে থাকে না এখন।আর থাকবেই বা কি করে মনটাতো সারাক্ষণ ওর পাণেই থাকে।সালমা কথা না বাড়িয়ে মোবাইল খুঁজ ও যদি প্রথম রিং এ আমাকে না পায় তাহলে আমার অবস্থা ও যে কি করবে তা আল্লাহ মাবুদই জানে।আমার জন্য ওর এই চিন্তা,অস্থিরতা, আমাকে বকা দেওয়া ওর সবকিছুতেই আমি আমার জন্য ওর ভালোবাসা খুঁজে পাই।”
.
.
-“হ্যালো…”
-“এই তোমার কল ধরতে এতক্ষণ লাগে কেন হ্যা? এই পর্যন্ত কতগুলো কল দিছি তোমাকে সেই খেয়াল আছে তোমার?”
-“সরি সরি জান,প্লিজ রাগ কর না।আমার মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট মোডে থাক সেটাতো জানই।তুমি যে কল দিছ সেটা টের পায়নি।আর মোবাইল আমার হাতের কাছে ছিল না।”
-“……………”
-“কি ব্যাপার কথা বলবে না আমার সাথে।আমার জানটা কি আমার সাথে রাগ করছে।সরিতো…..এই কান ধরলাম আর জীবনেও এই ভুল করব না।”
-“………….”
-“আচ্ছা কেউ যেহেতু আমার সাথে কথা বলবে না তাহলে কলটা কেটে দেই।শুধু শুধু তোমার মোবাইলের টাকা নষ্ট করার কি দরকার।”
-“এই কল একদম কাটবি না।কল কাটলেই তোর খবর আছে।তুই জানোস তুই আমার কল না ধরলে আমি কত টেনশনে থাকি। মনে হয় এই বুঝি তোর মা বাবা আমাদের রিলেশন সম্পর্কে সব জেনে গেছে।তোকে হারানোর ভয় সবসময় কাজ করে আমার মনের মধ্যে।”
-“জানি তো আমি।”
-“তাহলে কেন এত টেনশনে রাখলি আমাকে?”
-“সরিতো। আর এইরকম ভুল করব না।”
-“মনে থাকে যেন।”
.
.
এতক্ষণ আমি যার সাথে কথা বললাম সে হচ্ছে রেহান।আর আমি সালমা।১ বছর ধরে রিলেশন চলছে আমাদের।ওর সাথে এতক্ষণ যে কথা বললাম সেইসব কথা আমার কলেজ ফ্রেন্ডরা তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে বলে বেড়ায় যা আমার কাছে অনেকটা ন্যাকামো আর ঢঙি ভালোবাসা লাগত।কিন্তু রেহানের সাথে আমার সম্পর্ক হওয়ার পর এখন আর এইগুলো ন্যাকামো লাগে না।বরং একধরণের ভালো লাগা আমার মধ্যে কাজ করে।
.
.
ইন্টারে উঠার পর আব্বা আমাকে একটা দামি মোবাইল কিনে দেয়।আমার ফ্রেন্ড সব কয়টা ফেসবুক চালায় আর তাদের ফেসবুক ফ্রেন্ডদের সাথে চ্যাট করে। তাই আমিও আমার দামি মোবাইল দেখে আর ফেসবুক সম্পর্কে কৌতুহলের কারণে ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলি।এরপর মোবাইলে প্রথম যার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে কৌতুহলবশত আর নতুন বন্ধু বানানোর জন্য তার সাথে আস্তে আস্তে চ্যাট করি।আইডি নামটা দেখে বুঝতে খুব কষ্ট হত আইডির মালিক ছেলে না মেয়ে।আইডির মালিককে এই কথা জিজ্ঞাস করাতে সে বলল,,সে মেয়ে।মেয়ে ফ্রেন্ড ভেবে খুশি হয়েই তার সাথে দিনরাত চ্যাট করতাম।আমি ঢাকার মেয়ে,কি করি না করি সারাদিন কেমন কাটল আমার… বলতে গেলে অনেক কিছুই তার সাথে আমি শেয়ার করতাম। ও নিজেও আমাকে বলল, ও ঢাকার ছেলে আর তার নিজের জীবনের অনেক কিছুই ও আমার সাথে শেয়ার করত।এইভাবে আস্তে আস্তে কেমন করে জানি ওর প্রতি আমার বিশ্বাসটা আপনাআপনি চলে আসলো।
.
.
কিন্তু একদিন সে বিশ্বাসটা পুরো ভেঙ্গে গেল যখন সে আমাকে জানালো সে মেয়ে না ছেলে।তাই ওর উপর রাগ করে দুইদিন নেটে আসেনি।কিন্তু তার সাথে কথা না বলে থাকতেও পারতাম না তাই নিজের রাগকে একপাশে ফেলে তার সাথে আবার কথা বলা শুরু করি আর তার ভুলের জন্য আমি তাকে মাফ করে দেই।এরপর জানি না কি থেকে কি হয়ে গেল আমার মনের অজান্তে ওকে আমি ভালোবেসে ফেললাম।এরপর ও আমাকে ফেসবুকে প্রপোজ করল আর তা আমি একসেপ্ট করলাম আর তারপর একে অন্যের নাম্বার আদান প্রদান।তখনো আমরা কেউ কারোর ছবি দেখেনি।খুব দেখতে ইচ্ছে করত তাকে, না জানি আমার স্বপ্নের রাজকুমারটা দেখতে কেমন।সবসময় মনের মধ্যে তার একটা ছবি নিজের রংতুলি দিয়ে আকঁতাম আর তাকে কল্পনা করতাম।সেটা আরেকটা ভালোলাগার অনুভূতি।
একদিন সে নিজেই আমাকে বলল,
-“সালমা তোমার একটা ছবি দাও না।তোমাকে দেখতাম।”
প্রথমদিকে জড়তা থাকলেও এরপর সে জড়তাটা নিজে নিজে কাটাই।ও আমাকে ভালোবাসে তাই আমাকে দেখার ইচ্ছা ওর হতেই পারে স্বাভাবিক কিন্তু আমাকে দেখে ওর পছন্দ হবে কিনা তা নিয়ে অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম।আমি দেখতে শ্যামলা কালো রংয়ের।এই গায়ের রংয়ের কারণে যদি সে আমাকে পছন্দ না করে তাহলে আমার কি হবে?ও কি আমার সাথের এতদিনের রিলেশনটা একদিনেই ভেঙ্গে দিবে।খুব ভয় করছিল তখন।আল্লাহর নাম করেই আমার একটা ছবি দিয়ে দিলাম।এরপর আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,
-“আল্লাহ ও যাতে আমাকে পছন্দ করে।”
এরপর ওর কোন রিপ্লাই পেলাম না।ভয়টা আরো গভীর হতে লাগল।
তাই আমি নিজেই ওকে নক করে বললাম,,
-“রেহান আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি?”
অনেকক্ষণ ধরে ওর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু ওর উত্তর পেলাম না।সেদিন সারাটাদিন কি কান্নাকাটি না করলাম।কাউকে ভালোবাসলে যে এত কাঁদতে হবে তা আমি আগে বুঝতে পারেনি।কোনরকমে রাতটা পার করলাম।এরপরের দিন সকালে ও আমায় কল দেয়।
কল রিসিভ করতেই ও আমাকে বল বসে,
-“সালমা আমাকে বিয়ে করবে?”
খুশিতে সেদিন কান্নাই করে দিলাম।এরপর আগের মত মোবাইলে ওর সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে লাগলাম।ওকে দেখার ইচ্ছাটা দিনদিন প্রবল হতে লাগল।তাই একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে ওকে জিজ্ঞাস করেই ফেললাম,
-“রেহান তোমার একটা ছবি দেও না?”
সেদিন তার উত্তরটা এইরকম ছিল…
-“সালমা সময় হোক এরপর না হয় আমাকে সামনাসামনিই দেখতে পাবে।”
ছবিতে দেখার চেয়ে ওকে সামনাসামনি দেখাটা আমার কাছে অনেক শ্রেয় মনে হল।তাই ওকে আর তেমন জোর করেনি।ওর ছবির ক্যানভাসতো আমি অনেক আগেই মনে মনে এঁকেই নিয়েছি সেটাই অনেক আমার জন্য।
.
.
মোবাইল সাইলেন্ট রেখে তার কলের জন্য অপেক্ষা করতাম আর অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেই কথা।কি সুন্দর সেই দিনগুলো ছিল।রিলেশন চলা অবস্থায় আমি আরেকটা সত্য কথা জানতে পারি যে, রেহান চট্টগ্রামের ছেলে।এতদিন ধরে জানতাম ও ঢাকার ছেলে আর এখন জানলাম ও চট্টগ্রামের ছেলে।একেতো প্রেমের রিলেশন এরউপর আবার ও হচ্ছে চট্টগ্রামের ছেলে।চট্টগ্রামের ছেলের সাথে আমার আম্মা আব্বা বিয়ে দিবে কিনা সেটা নিয়েও টেনশনে পড়ে গেলাম।কারণ আমার আব্বা, আম্মার ধারণা চট্টগ্রামের ছেলেদের বিয়ে করা মানে সামনে থেকে অপমান,অভাব আর মৃত্যুকে দেখা।এই দেশের ছেলেরা অনেক বাজে হয়। পড়ালেখা কম কিন্ত এদের অহংকারটা বেশি হয় আর এরা রাজার হালে থাকতে চায় কিনা তাই অন্যের অধীনের চাকরিটাও নাকি করতে চায় না।এদের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে তার মা বাবাকে রাস্তার থালা ধরতে বেশিদিন সময় লাগবে না কারণ সেখানে নাকি তাদের মন মতন কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে প্রচুর খরচাপাতি করতে হয়,মেয়ের বিয়ের দিতে হলে একটা ঘরটা সাজাতে গেলে যা যা লাগে সব উপহার হিসেবে দিতে হয় প্লাস অতিথি আপ্যায়নতো আছেই।এইজন্য আব্বা আম্মা মরে গেলেও চট্টগ্রামে আমার বিয়ে জীবনেও দিবেন না।
রেহানকে এই কথাটা বলতেই ও বলল,
” যদি পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিকের মধ্যে না থাকে তাহলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করব”।
আর তাই এই সিদ্ধান্ত আমরা দুইজনে মিলে নিলাম।
ও আরো বলত,,
-“তোমার এই সিদ্ধানের কারণে তোমার আব্বা আম্মা প্রথমে কষ্টতো পাবে পরে আবার সব মেনে নিবে”।
এই কথাটা বলে ও আমাকে বারবার বুঝাত আর সাথে এই গানটা গেয়ে আমার মনে সাহস যুগাত “পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া”।ওর সব কথাই আমার কাছে তখন সঠিক মনে হত তাই ওর কথামত চলার চেষ্টা করতাম।চলতে ফিরতে ওর এইসব কথাগুলো বারবার আমার কানে বাজত আর ওর গাওয়া গানটা বারবার মনে পড়ত।এখন এই গানটা শুনলে এক ভালো লাগা আর সাহস মনের মধ্যে চলে আসে।অবসর সময়ে মোবাইল থেকে এই গানটা ছেড়ে গান শুনি।
“”পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,পিয়ার কিয়া্,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,ছুপ ছুপ আহে ভারনা কিয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,পিয়ার কিয়া,
আজ কেহেংগে দিলকা ফাসানা,জান ভি লেলে চাহে যামানা,
মত ওহি যো দুনিয়া দেখে,ঘুট ঘুট কারনিউ মারনা কেয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,!!
.
.
এরপর হঠাৎ করেই একদিন আমার রুমে আম্মা এসে দেখে আমার টেবিলের বই খাতা সব এলোমেলো।বই খাতাগুলো গুছানোর সময় আমার সাইলেন্ট মোবাইলে রেহানের কল আসল।মোবাইলের আলো দেখে আমার আম্মা মোবাইলটা চেক করে দেখে মোবাইলে কল আসছে।কল রিসিভ করে আম্মা চুপ করে থাকে।আর এইদিকে গাধা রেহান কোনকিছু না ভেবে একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলে ফেলে।এরপর আম্মা জিজ্ঞাস করে,
-“এই ছেলে তুমি কে?আমার মেয়েকে তুমি চিনো কি করে?”
রেহান ভয়ে সেদিন চুপচাপ কল কেটে দেয়।
আর এইদিকে সেদিন আমি ভুলে মোবাইল রেখে কলেজ চলে যাই।সারাটাদিন খুব টেনশনে দিন কাটে আমার।একবার যদি আম্মার হাতে মোবাইলটা পড়ে তাহলে আমি শেষ। কলেজ শেষ হলেই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি।নিজের রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা খুঁজি।এত খোঁজার পরও মোবাইলটা আমার রুমে পেলাম না।তাই আম্মার রুমে চলে যায়। আম্মার রুমের চারপাশটা তন্নতন্ন করে খু্ঁজে আমার মোবাইলটা পাই।এইবার আমার ভয়টা দেখে কে?তার মানে আম্মা সব জেনে গেছে।এখন যদি আম্মা আব্বাকে গিয়ে সব কথা বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে?এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আম্মার গলার আওয়াজ পেলাম।
-“শেষ পর্যন্তটা মোবাইলটা পেলি?”
-“আম্মা……”
-“ছেলেটা কে ছিল?”
.
.
ভয়ে কথা গলায় আটকে থাকল।কিছু বলতে পারেনি।এদিকে আম্মার রাগটা চরমে গিয়ে পৌঁছল।রুমের চারাপাশটা হন্তদন্ত হয়ে কি জানি খুঁজতে লাগল।প্রথমে বুঝতে পারেনি এরপর আম্মার হাতে লাঠি দেখে আর বুঝবার বাকি থাকলো না যে এখন কি হবে আমার সাথে।আম্মার রাগ মনের মধ্যে যতক্ষণ ছিল ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত ওই লাঠি দিয়ে আম্মা সেদিন আমাকে ইচ্ছামত মারতে লাগল।
-“আম্মা আর মারিয়েন না আমাকে।আমি মরে যাব তাহলে।”
কিন্তু আমার কান্নার আর্তনাদ সেদিন আম্মা শুনে নাই।মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে আরো মারতে লাগল আর বলতে লাগল,
-“বাইরের ছেলের সাথে তোর এইসব খানপনা কতদিন ধরে চলছিল?তোকে কি আমরা এইসব করার শিক্ষা দিছি।ছেলে কারা ধরে জানোস?যারা খান,মা* যারা পুরুষ খুঁজে বেড়ায়।রাস্তার মারা এইসব করে।তুই কি রাস্তার মা…..হ্যা জবাব দে…..।
কথা বলার মতন ভাষা সেদিন হারিয়ে ফেলছিলাম।এইরকম কথা যে আম্মা আমাকেও বলতে পারে তা জানা ছিল না।শুধু মাথা নাড়াচ্ছিলাম আর না মারার জন্য আম্মার পা ধরছিলাম।
-“যদি তুই এইসবের কিছু না হস তাহলে কেন বাইরের একটা ছেলের সাথে রিলেশন করতে গেলি?জবাব দে……তোর ব্যা* মাগিরি আজকে ছুটাচ্ছি মা…..।কত্ত বড় বুকের পাঠা তোর আমাদের আড়ালে তুই এইসব করে বেড়াস। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলব তাহলে এইসব নোংরামি করার শখ তোর মেটে যাবে। বেশ্যা খানকি….মা* একটা।মর গিয়ে……।”
পুরো শরীরে সেদিন শুধু মারের দাগ ছাড়া আর কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না।এইরকম মার ছোট থাকাকালীন খেয়েছিলাম আব্বার হাতে।আম্মাও মাঝেমাঝে মারত। কারণটাও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম পরে।আর তা হচ্ছে আমার গায়ের রং।এই গায়ের রং আর পড়ার জন্য ছোটকালে অনেক মার খেয়েছি।এরপর বড় হওয়ার পর আম্মা আব্বা আমাকে তেমন আর মারেননি।কলেজে উঠার পর আজকে আবারো সেই একিরকম মার আম্মার হাতে খেলাম।
.
.
রাতে আব্বা বাসায় আসার সাথে সাথে আম্মা সোজা আব্বাকে গিয়ে আমার নামে বিচার দেয়।এমনিতেই আব্বা বাইরের কাজ শেষ করে আসছে আর এরমধ্যে এইসব খবর শুনে যে কারোরই মাথা খারাপ হয়ে যাবে।আব্বারও ঠিক তাই হল।রাগের মাথায় আব্বা সেদিন আম্মাকে ইচ্ছামত মারল।আর মারের সাথে সাথে কি ভাষার ছিরি।
-“খান* মা* সারাদিন ঘরে থেকে কি করস হ্যা?মেয়ে কার সাথে এই কি করে বেড়ায় এইসবের খেয়াল রাখস না?কি করস সারাদিন বাসায়।বাসায় যেদিন থাকি সেদিন দেখি বাসায় তুই থাকোস না।এইখানে ওইখানে ঘুরে বেড়াস আর বান্ধবীর সাথে গল্প করস।বান্ধবীর সাথে গল্প করস নাকি নতুন না*র খুঁজতে বাইরে যাস।তোর থেকেই তো মেয়ে এইসব শিখছে।যেমন তার মা তেমনি তার মাইয়া।”
আম্মার গলা টিপে সেদিন আব্বা কি পরিমাণ নোংরা ভাষা প্রয়োগ করছিল।
অবশ্য এইসব মার দেখা, নোংরা ভাষায় গালি দেওয়া, ঝগড়া করা আর আব্বার হাতে আম্মার মার খাওয়া আজ নতুন নয়,ছোট থেকেই এইসব দেখে আসছি আমি।তাই এইসবে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি।তাছাড়া কেন জানি মনে হত ওরা আমাকে তেমন ভালোবাসে না তাই ভালোবাসাটা পাওয়ার জন্য সবসময় তৃষ্ণার্ত থামতাম আমি।আর আমার সেই ভালোবাসার অভাবটা রেহান মিটিয়েছে।তাই কেন জানি না ওকে না ভালোবেসে থাকতে পারিনা আমি।এইসবের মাঝে আজকে শুধু একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগছে আর তা হচ্ছে আম্মা আজকে শুধু আমার জন্য মার খাচ্ছে।
এরপর আমার দিকে আব্বার চোখ গেলে রাগটা আব্বার আরো বেড়ে গেল।আম্মার সাথেসাথে সেদিন আমিও আরেকদফা মার খেলাম আর বস্তির নোংরা মানুষরা যেসব ভাষায় কথা বলে সেইসব ভাষা আব্বার কাছ থেকে শুনতে লাগলাম।তখন বারবার মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় থাকতেই আমার দোযখ দেখা হয়ে গেছে।আব্বা আর আম্মার কাছে থেকে খারাপ ভাষা শুনে তখন কেন জানি সত্যিই মনে হচ্ছিল আমি একটা বে* মা*।আমি নিজের জন্য ছেলে ধরে বেড়ায়।লজ্জায় তখন আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিল।
.
.
মারের চোটে সেদিন অজ্ঞান হয়ে গেলাম।এরপর আর কিছু মনে নাই।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো শরীরে কি ব্যথা।হাত পাও নাড়াতে পারছি না ব্যথার জন্য।অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখি আব্বা আম্মার চোখ ফুলা ফুলা।বুঝতে পারলাম ওরা কেউ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।
ঔষুধ এনে আব্বা আর আম্মা আমার সেবা করতে লাগল।এর কিছুদিন পর আস্তে আস্তে আমি ভালো হতে থাকি।কিন্তু আমার উপর আব্বা আম্মার রাগটা তখনো তিল পরিমাণ কমেনি।রাগে আর কষ্টে তারা আমার সাথে অনেকদিন কথা বলেনি। আর এইদিকে রেহানের কথা মনে পড়ায় আমার বুকের ভিতরটা জ্বলতে লাগল।
.
.
সুস্থ হওয়ার পর আম্মা আমাকে ডাকার জন্য আমার রুমে আসল।
-“সালমা তোর আব্বা তোকে ডাকছে।”
এই আজকে আম্মা আমার নাম ধরে ডাকল আর কথাও বলল।আহ্….কি যে শান্তি লাগছিল।মনে হচ্ছিল কতদিন আমি আম্মার কথা শুনি না।মনের মধ্যে যে একটা বড় পাথর ছিল সেটা তখনি সরে গেছে আম্মার এই কথায়।যতই আমাকে তারা গালাগালি করুক, মারুক আব্বা আম্মা তো আব্বা আম্মাই।তাদের জন্য এই দুনিয়ায় আমার আসা।আমার সব প্রয়োজন এতদিন তারা বিনা শর্তে মিটেয়েছে তাই তাদের ছাড়া আমার দুনিয়া কল্পনাই করা যায় না।যাক শেষ পর্যন্ত আব্বা আমাকে ডাকার খাতিরে আম্মাতো একটু হলেও আমার সাথে কথা বলল।