জট পাকানো চুল ছিল বটতলায় বসা সাধু টাইপ লোকটির। সে বলেছিল তার কাছ থেকে একশত এক টাকা দিয়ে তাবিজ কিনলেই আমার প্রেম স্বার্থক হবে। যাকে ভালোবাসি সে আমার পিছনে ঘুরঘুর করবে। দেড় মাসের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে তাবিজ কিনেছিলাম ছাত্র জীবনে। যাকে ভালোবাসি সে যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে একশত এক টাকা কিছুই না। লোকটি বলে দিল মেয়েটি চলাফেরা করে এমন রাস্তার যে কোনো একটি গাছের ডালে তাবিজটি বেঁধে দিতে। গাছের নিচ দিয়ে গেলেই আমার প্রেমে পড়ে যাবে মেয়েটি। সে গাছের নিচ দিয়ে শতবার আসা যাওয়া করেও মেয়েটি আমার প্রেমে পড়ল না। পরবর্তীতে আবার পাগলার কাছে যাওয়ার পর সে বলল রাহু গ্রাসের খেলায় আমার রাশিতে বাঁধা পড়েছে। আবার এক হাজার এক টাকা লাগবে। তখন বুঝে গেছি আমি লোকটাকে বিশ্বাস করে বড্ড ঠকেছি।
টেলিভিশনে আজকাল চ্যানেলের অভাব নেই। বিভিন্ন চ্যানেলে ছবির ফাঁকে কিছু বিজ্ঞাপনের দেখা মিলে। পীর এ কামেল মুফতি মিছা মন্ডল জ্বীন স্বাধক আপনার যে কোনো সমস্যার সমাধান দিবেন ইনশা আল্লাহ।
ইনশা আল্লাহ বলেও অনেক ভন্ড সাধারন মানুষকে ফাঁকি দিয়ে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। তখন বুঝতে বাঁকি নেই যে দেশে অনেকে আছে যারা অন্ধ বিশ্বাস করে টাকা পয়সা হারিয়ে ঠকেছে, ঠকছে। এই ধরনের বিজ্ঞাপনের প্রতিটি লোক ভন্ড, প্রতারক।
বাড়ির পাশে রাস্তা হচ্ছে। লোহার বদলে সেখানে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার হচ্ছে। মাননীয় ক্ষেতা সাহেব হাসিমুখে আঙ্গুল তুলে বলছেন, “আমি নির্বাচনের আগে বলেছিলাম আপনাদের রাস্তাটি করে দেব। আমি আমার কথা রেখেছি। আশা করি এবারের নির্বাচনেও আপনারা আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।”
আমজনতা ক্ষেতা সাহেবের সাথে হাত মিলানোর জন্য এক এক করে ভীড় ঠেলে যাচ্ছেন।
এক মুরব্বী আস্তে আস্তে বলছেন, “এবার ভোট চাইতে আসিস। বাঁশের কঞ্চির জায়গায় তোকে শুইয়ে দিয়ে ডালাই দেব।”
কারন মুরব্বী বুঝেছেন, আগেরবারও ক্ষেতা সাহেবের মিষ্টি কথা বিশ্বাস করে ঠকেছেন। আগেরবার রাস্তা অর্ধেক করা ছিল। এখনো পুরোটা শেষ করেনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামীতে পাশ করলে করে দিবে।
জয়নাল বিদেশে যাবার আগে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বলেছিল, “তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে বিদেশ যাব, নয়তো যাব না।”
মেয়েটি বলেছিল, “আমি তোমার জন্য যুগ যুগ অপেক্ষা করব।”
জয়নাল আজ সিঙ্গাপুরের ডিসকো বারে বসে আধা বোতল ভোদকা শেষ করে গ্লাসে তাকিয়ে আছে। গ্লাসে আরেকটু ঢেলে বলছে, “শিখা, তুই না বলেছিলি যুগ যুগ অপেক্ষা করবি। আমার জন্য একটি বছর’ই অপেক্ষা করকে পারলি না। তবে কি তোকে বিশ্বাস করে আমি ঠকেছি?”
ঘরের বউটি সারাদিনের কাজের শেষে বিছানায় বসে হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে স্বামীর অপেক্ষা করছে। একটু আগে ফোন দেয়াতে বলেছিল সে মিটিংয়ে আছে। স্বামীর রাত দশটার সময়ও মিটিং থাকতে হবে এটা তার পছন্দ না। কিন্তু বউটি জানে না সে তার স্বামীকে অন্ধ বিশ্বাস করে ঠকছে। তার স্বামী একটি মেয়ের খুশির জন্য তাকে মার্কেট করে দিচ্ছে। হয়তো অঘোষিত নিষিদ্ধ কিছু স্বার্থ হাসিলের জন্য।
সম্পর্কের প্রথমে ভালোবাসার মানুষগুলো একটু বেশিই স্বপ্ন দেখে ফেলে, দেখিয়ে ফেলে।
“তোমাকে নিয়ে রোজ ঘুরতে যাব। আকাশের চাঁদ দেখব, একসাথে তারা গুনব। আমাদের মিষ্টি একটা বাবু হবে, বাবুর নাম রাখব টুনটুনি। তোমাকে একটুও কষ্ট দেব না। তোমার সব কথা মেনে চলব, তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই চলব। তোমাকে কখনো ছেড়ে যাব না। তুমি ছাড়া আমি থাকতে পারব না। তুমি ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারি না।”
এই বুলি যারা শুনেছে তাদের অনেকেও বিশ্বাস করে ঠকেছে।
“বিশ্বাস ভঙ্গ হবে না, কাউকে আশা দিও না। যতটুকু পারবে ঠিক ততটুকুই বলো। ”
“বিশ্বাস ভঙ্গ হবে না, কোন দায়বদ্ধতা রেখো না। কাউকে আটকে রাখার চেষ্টা করিও না জোর করে। স্বাধীনভাবে চলতে দাও। সে তোমাকে ভালোবাসলে তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে। তুমি তাকে ডানা মেলে ওড়তে দাও। তোমাকে ভালোবেসে থাকলে দিন শেষে তোমার নীড়েই ফিরবে।”
লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,
,,,,,,,ওমর ফারুক শ্রাবণ