বিরিয়ানি বনাম পান্তাভাত

0
1106

বিরিয়ানি বনাম পান্তাভাত

এই শহরে ভাতের চাইতে বিরিয়ানি সস্তা, পাঙ্গাস বা নলা মাছ দিয়া হোটেলে ভাত খাইতে লাগে তিনশ টাকা, বিরিয়ানি খাইতে লাগে নব্বই টাকা, কেমন আজব শহর এইটা- এমন দার্শনিক চিন্তা প্রায়ই আলতাফ মিয়ার মাথায় উঁকি দেয়।
আলতাফ একটা ছোট্ট চাকরী করে, কেরানী গোছের।দুপুরে রাজধানী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে সে মাঝে মাঝে বিরিয়ানি খায়।
বন্দোবস্ত করা আছে।
বাকি দিন গুলো ভর্তা ডাল প্যাকেজে ভাত।

থাকে একটা ঘুপচি মেচে।
চিপা গলির মধ্যে অন্ধকার একটা বাড়ি।
ছোট ছোট পায়রার খুপরীর মতো কামরা।
সারাদিন পর ফিরে আলতাফের ভালো লাগে না, এর চাইতে ভাল আস্তানা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।
বাড়িতে টাকা পয়সা দিয়ে হাতে যা থাকে, তাতে মাসের শেষ কদিন রাজধানী হোটেলে বাকিতে খেতে হয়।
আলতাফের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, ওই যে বড় বড় দালান গুলো, ওর কোনোটায় উঠে যেতে।
আকাশকুসুম চিন্তাভাবনা।
যদি একটা ব্যবসা করা যেত, মাস গেলে ভাল টাকা ইনকাম হতো, আলেয়াকে নিয়ে একটা ছোট্ট সংসার এই শহরে….
ভাবনা গুলো এখানেই থামে।
বাড়িতে মা কঠিন ভাবে নিষেধ করেছে, বউ ঢাকা নেওয়া চলবে না।
এই বুড়ো বয়সে তারা কি রান্না করে খাবে নাকি!
আলতাফ বলেছে আলেয়াকে, তুমি চিন্তা কইরো না বউ, দিন কতেকের মধ্যেই তোমারে নিয়া যামু।
একথা বলার পরেও বছর ঘুরে এসেছে।
আলতাফের ইচ্ছে করে, কেউ ভাত রান্না করে বসে থাকুক তার জন্যে, সারাদিন পর যখন বাসায় ফিরবে, অন্ধকারে টিমটিমে বাতি না, বাসায় একটা টিউবলাইট জ্ন্বলবে।
ফকফকা আলো।
এই হলুদ পঁচিশ পাওয়ারের বাল্ব দেখতে দেখতে চোখটা মনে হয় রাতে আলো সহ্য করতে পারে না আর।
অথচ আলতাফের ভালো লাগে আলো ঝলমলে এই শহর।
গ্রামে গেলেই মনে হয় আলেয়াকে সাথে নিয়ে আসি।
দেখুক এই শহর কত সোন্দর।
আলতাফ একদিন গল্প করেছে, সে প্রায়ই বিরিয়ানি খায়!
আলেয়া মহা খুশি, মানুষটা বিরিয়ানি খায় যখন, মনে হয় ভালোই থাকে।

বৈশাখের আগে আগে আলতাফ বোনাস পেয়ে যায় কিছু টাকা।
মায়ের হাত পা ধরে রাজী করিয়ে আলেয়াকে নিয়ে ঢাকায় আসে।
কি সোন্দর শহর, আলতাফ কি এমন বড় বড় বাড়িতে থাকে?? আলেয়া মনে মনে ভাবে।
কিন্তু না, আলেয়াকে নিয়ে আলতাফ ওঠে সদরঘাটের কাছে একটা সস্তা হোটেলে।
সেখানে সকাল বিকাল লঞ্চের সাইরেন সোনা যায়।
আর শোনা যায় নানা রকম হকারের আওয়াজ।
এত ছোট্ট ঘর, আলো বাতাসও নেই তেমন।
আলতাফ মিয়া বের হয় আলেয়াকে নিয়ে।
বৈশাখে এ শহরে ইদের উৎসব শুরু হয়!
বড়লোক থেকে মুসাফির সবাই জামাকাপড় কেনে।
আলেয়াট জন্য সস্তা লাল সাদা শাড়ি কেনে আলতাফ, নিজের জন্য শ তিনেক টাকায় একটা পাঞ্জাবী।
আলতা চুড়িও কেনা হয়, আলেয়ার জীবনটা খুব সুখী সুখী মনে হতে থাকে, শহরে উৎসবের সাজ।
আলেয়া জিজ্ঞেস করে, শহরে কি এমন সব সময়ই অনুষ্ঠান চলে?
আলতাফ হাসে, না গো বউ কি যে কও!
বৈশাখে আলতাফ বউকে নিয়ে পার্কে যায়, সবাই খাইতেছে একটা স্টলে, আলতাফও আগায়।
পান্তা ভাত, ভর্তা আর ইলিশের টুকরা, পাঁচশ টাকা!!
আলতাফ বলে, চলো আমরা বিরিয়ানি খাই, এই শহরে ভাতের চাইতে বিরিয়ানির দাম কম।
আলেয়া অবাক হয়ে বলে, কেমুন আজব শহর, পান্তা ভাত পাঁচশ টেকা, আর বিরিয়ানি একশ টেকা!

বিরিয়ানি বনাম পান্তাভাত

লেখিকা: শানজানা আলম
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shanjana.alam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে