#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
২.
মেরিনা ভাত বেড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মিশকাত, আরিন্তাকে দেখেই তাড়া দিলেন,
“আয়, তাড়াতাড়ি খেতে বোস। আমার কাজ আছে। আরি, পেলব কি ভাত খাবে?”
আরিন্তা বলল,
“তা তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো। দেখলে না, এসেই বলল কেউ যাতে না ডাকে?”
“থাক তাহলে। ঘুম থেকে উঠলে খাবে নে।”
তারা খেতে বসলে মেরিনা বললেন,
“মিশু, যা লাগবে নিয়ে খাস। আমি বাইরে গেলাম। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। হাঁস, মুরগি ঘরে ঢুকাতে হবে।”
মিশকাত বলল,
“আচ্ছা খালা।”
মেরিনা চলে গেলেন ঘরের বাইরে। তার বাইরে পা দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে মিশকাত খপ করে বাঁ হাতে আরিন্তার ঘাড় চেপে ধরল। বলল,
“কী যেন বলছিলি? আমাকে বিয়ে করতে বয়ে গেছে?”
আরিন্তা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল,
“মিশু ভাই, শান্তিতে খেতে দাও বলছি। হাত সরাও, নইলে পরে তোমার খবর আছে।”
মিশকাত হাতের মুঠি আরও শক্ত করে বলল,
“পরে কী খবর আছে? এখন বল, শুনি।”
আরিন্তা ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করায় শান্ত চোখে চেয়ে বলল,
“ব্যথা পাচ্ছি।”
মিশকাত সঙ্গে-সঙ্গে হাত সরিয়ে নিল। খাওয়ার মাঝে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিয়ে আরিন্তার প্লেটে তুলে দিতে-দিতে বলল,
“সদর যাবি, বললি না কেন?”
আরিন্তা গম্ভীর গলায় বলল,
“কীভাবে বলতাম?”
“খালার ফোন দিয়ে কল করতে শিখিয়ে দিতে হবে নতুন করে?”
“মায়ের ফোনে মিসকল করারও টাকা ছিল না।”
একটু থেমে অভিযোগের সুরে বলল,
“নিজে দিয়েছিলে? আজকে যে এখানে আসবে, তা-ও তো খবর দিলে না।”
“সকালে তোরা বের হওয়ার পর কল করেছিলাম। তখনই তো খালা বলল তোরা সদর যাচ্ছিস। বিকালে আসবি শুনে তাড়াতাড়ি এসেছি। তা-ও তোদের খবর নেই।”
“তাড়াতাড়িই আসতাম। রাস্তায় একটু ঝামেলা হয়েছিল, ওইজন্য দেরী হয়ে গিয়েছিল।”
“কী ঝামেলা হয়েছিল?”
“ওই বাসের এক যাত্রীর সাথে।”
“কার?”
“এতকিছু জেনে কী করবে? চুপচাপ খাও তো।”
মিশকাত ভ্রুকুটি করল। আরিন্তা কথার মাঝে হঠাৎ করে যেভাবে খাওয়ায় অতি মনোযোগী হয়ে পড়েছে, তাতে তার সন্দেহ হচ্ছে ঝামেলাটা আরিন্তা বা পেলবের সাথেই হয়েছে। এর মাঝেই হঠাৎ দোতলা থেকে পেলব নেমে এল বেশ তাড়াহুড়া করেই। মিশকাতকে দেখে শুধাল,
“কখন এসেছিস?”
মিশকাত বলল,
“তোরা ফেরার অনেক আগেই। দাদির ঘরে ছিলাম। তুই ভাত খাবি?”
“না, তোরা খা।”
তারপর পেলব সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আরিন্তার কাছে এগিয়ে গিয়ে চাপা স্বরে বলল,
“আরি শোন।”
আরিন্তা উৎসুক হয়ে মুখ তুলে তাকাল। পেলব তার কানের কাছে ঝুঁকে পড়ে বলল,
“বাসের ঝামেলার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিস না কিন্তু। আব্বা শুনলে রাগারাগী করবে। ঠিক আছে?”
আরিন্তা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল। পেলব আর দাঁড়াল না। যেভাবে এসেছিল, সেভাবেই আবার ওপরে চলে যেতে-যেতে বলল,
“মিশু, খাওয়া শেষ হলে ওপরে আসিস।”
পেলব চলে গেলে মিশকাত সন্দিহান কন্ঠে আরিন্তাকে বলল,
“এদিকে তাকা।”
আরিন্তা তাকাল। মিশকাত জেরার সুরে বলল,
“সত্যি করে বল তো বাসে কার সাথে, কী ঝামেলা হয়েছিল।”
আরিন্তা সাবধানি সুরে বলল,
“ওহ্! আস্তে কথা বলো। মা শুনবে।”
“তাহলে বল আমাকে।”
আরিন্তা ধীরে-ধীরে বাসে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিস্তারিত বলল। ওসব শুনে মিশকাতের মুখ শক্ত হয়ে উঠেছে। খাওয়া থামিয়ে সে শক্তপোক্ত মুখে আরিন্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিন্তা বলল,
“তুমি আমাকে রাগ দেখাও কেন?”
মিশকাত রাগত স্বরে বলল,
“তোকে কোন সাহসে ছুঁয়েছে ওই হা’রামজা’দা?”
“খেতে বসে গালাগালি করতে হয় না। শান্তি করে খাও আগে।”
প্লেটে খাবারের শেষ অংশটুকু পড়ে ছিল। মিশকাত সামনে থেকে প্লেটটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমার শান্তি তোর সহ্য হয়? দিস তুই আমাকে একটা দিন শান্তিতে থাকতে?”
মিশকাতের কন্ঠে এমন ভয়াবহ রাগের আভাস পেয়ে আরিন্তা অবাক হয়ে বলল,
“তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন? আজব! আমি কি ইচ্ছা করে ওই লোকের কাছে গেছি?”
“চাপড়াব তোকে বেআক্কেল মেয়ে। উঠেছিলি কেন তুই ওই বাসের ভিড় দেখেও? আরেকটু অপেক্ষা করে অটোতে ওঠা যেত না?”
“দাদিই তো তাড়া দিচ্ছিল। আমি কী করতাম?”
“কিছু করার না থাকলে নাচতি।”
“তুমি চুপ করবে?”
“করলাম চুপ। আর একটা কথাও বলবি না আমার সামনে, অতি চালাক পোলাপাইন।”
কথাটা বলতে-বলতেই হাত ধুয়ে ফেলেছে মিশকাত। তাকে উঠতে দেখে আরিন্তা বলল,
“অযথা রাগ দেখাচ্ছ। খাওয়া রেখে উঠছো কেন? মিশু ভাই, খাওয়া শেষ করো।”
মিশকাত শুনেও শুনল না। আরিন্তা পিছু ডাকলেও আর একবারের জন্যও ফিরে তাকাল না। হনহনিয়ে হেঁটে ওপরে পেলবের কাছে চলে গেল। আরিন্তা থম মে’রে বসে রইল। তার খাওয়া শেষ। অথচ শেষ মুহূর্তে মিশকাতের এমন আচরণ তাকে থামিয়ে দিলো। এখন তার উঠতেও ইচ্ছা করছে না। গাল ফুলিয়ে সে আপন মনে বিড়বিড় করে বলল,
“পাগল-ছাগল জুটেছে কপালে।”
মিশকাত মেরিনার ছোটো বোনের ছেলে। পাশাপাশি এলাকায় তাদের দুই বোনের বাস। সেই সুবাদে একে অপরের ছেলে-মেয়েদের খালার বাড়ি আসা-যাওয়া হয় ঘন-ঘন। দুই বোনেরই একমাত্র ছেলে মিশকাত আর পেলব। পেলবের ছোটো-বড়ো দুই বোন থাকলেও, মিশকাতের শুধু ছোটো এক বোন। দুই বোনেরই একে অপরের ছেলে-মেয়ের প্রতি মাতৃসম টান। বলতে গেলে দুই বোনের পরিবারের মাঝেই নজরকাড়া সম্পর্ক। মিশকাত আর পেলব প্রায় সমবয়সী। তাদের পড়াশোনা, খেলাধুলা, বেড়ে ওঠা-ও একইসঙ্গে। পারিবারিক সম্পর্কের বাইরেও তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি। পেলবের চেয়ে মিশকাতের-ই তাদের বাড়ি আসা-যাওয়া হয় বেশি। তার বড়ো কারণ হলো আরিন্তা। আরিন্তার প্রতি মিশকাতের অন্যরকম টান সেই উঠতি বয়স থেকেই। তখন থেকেই সে আরিন্তাকে বোন মানতে পারে না। আরিন্তা বয়সে তার চেয়ে চার বছরের ছোটো। এই তো এখন সে মাস্টার্স করছে, আর আরিন্তা সবে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। রঙিন জগতের রং-চং বোঝার পর থেকেই আরিন্তা নিজের প্রতি মিশকাতের অনুভূতি বুঝতে পেরেছিল। বয়স কম হলেও সে ছিল ইঁচরেপাকা মেয়ে। আকর্ষণীয় চেহারার জন্য গ্রামের আর পাঁচটা ছেলের নজর সবসময়ই তার ওপরে ছিল। সেই অল্প বয়স থেকে প্রেম নিবেদন-ও সে কম পায়নি। কিন্তু কখনো কেউ মিশকাতকে ডিঙিয়ে তার মন অবধি পৌঁছাতে পারেনি। মিশকাত কখনোই তার সামনে নিজের অনুভূতি লুকায়নি। তার ভয় ছিল সে নিজের অনুভূতি লুকালেই আরিন্তা অন্য ছেলেদের পাল্লায় পড়ে যেতে পারে। আরিন্তা সবসময় দেখে এসেছে তার জন্য মিশকাতের যত পা’গলামি। আবেগী বয়সে মিশকাত-ই হয়ে উঠেছিল তার স্বপ্নের রাজকুমার। কিন্তু বাবা আর ভাইয়ের ভয়ে সে মিশকাতের রোজকার কৌশলে প্রেম নিবেদনে সায় দিতে পারত না। সারাক্ষণ তার মন ছটফট করত, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারত না। মিশকাতের-ও বিশেষ তাড়া ছিল না। সে নিজেও চেয়েছিল তার ছোট্ট অনুভূতিটা বড়ো হোক, ঠিকঠাকমতো জগতটাকে চিনতে শিখুক। আরিন্তার এখনো মনে পড়ে, সেই সময়গুলোতে মিশকাত সবসময় তাকে বলত,
“তুমি দ্রুত বড়ো হও আমার পোনি। আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। বড়ো হয়ে একবার আমায় অনুভূতি মিশিয়ে ডেকো। আমি বুঝে নেব আমাদের একে অপরের জীবনে জড়ানোর সময় হয়েছে।”
আরিন্তা তখন মুখ ফুটে বলতে পারত না মিশকাত তার ভেতরের ঠিক কতটা জায়গা দখল করে বসে আছে। মিশকাতের কথামতোই সে-ও সেই সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিল। আজও তার সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দিনটি হচ্ছে আঠারো বছরপূর্তি জন্মদিনটি। আরিন্তার বাবা ঘটা করে জন্মদিন পালন করা পছন্দ করেন না। তাই আরিন্তার মা সবসময় ছেলে-মেয়েদের জন্মদিনে নিজেই তাদের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়ান। সেবারেও তা-ই করেছিলেন। বোনের ছেলে-মেয়েকেও ডেকে এনেছিলেন। মিশকাত সেদিন আরিন্তার জন্য কিছু খাবার-দাবারের সাথে আঠারোটা গোলাপফুল দিয়েছিল। আরিন্তাকে থমকে দিয়ে এক ফাঁকে তার হাতে আঠারোটা চিরকুট-ও গুঁজে দিয়েছিল, যার প্রত্যেকটায় লেখা ছিল,
“পোল্ট্রির জীবনে স্বাগত পোনি। বড়ো হয়ে গেলে তো। এবারে অনুভূতির উত্তর দেওয়ার সময় হয়েছে। অপেক্ষার অবসান ঘটাবে না?”
সেই চিরকুট পেয়ে আরিন্তার মন নেচে ওঠার পরপরই ঝুপ করে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। বুঝেই উঠতে পারছিল না কীভাবে সে উত্তর দিবে। টানা তিন দিন সে মিশকাতের থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছিল। চতুর্থদিন আর পারেনি। মিশকাত সেদিন তার পায়ে শিকল বেঁধে দিয়েছিল। আরিন্তা অসহায় মুখে বলেছিল,
“মিশু ভাই, আমার লজ্জা লাগে। তুমি বুঝো না কেন?”
মিশকাত হাসতে-হাসতে বলেছিল,
“ইশ্! তুই আবার লজ্জাবতী হলি কবে রে? জানতাম না তো। না কি আমার সাথে প্রেম শুরুর কথা ভেবে নতুন লজ্জা আবিষ্কার হয়েছে?”
“হুহ্! তোমার সাথে প্রেম করার জন্য হা করে আছি আমি।”
“তুই কি আমাকে রিজেক্ট করতে চাইছিস? তাহলে সোজাসাপ্টা বলে দে। তুই না করে দিলে আমি রিমাকে অ্যাকসেপ্ট করে নেব।”
ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর নাম উঠতেই আরিন্তা হকচকিয়ে গিয়ে চোখ বড়ো করে জিজ্ঞেস করেছিল,
“রিমা তোমাকে প্রপোজ করেছে কবে?”
“তোকে বলব কেন?”
“ও তোমাকে পছন্দ করে কবে থেকে?”
“তা আরেকজনের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোর কী দরকার?”
“অবশ্যই দরকার। ও সেই প্রথম থেকে জানে আমি তোমাকে পছন্দ করি। ও জেনেশুনে এমন কাজ করবে কেন?”
মিশকাত সঙ্গে-সঙ্গে বলেছিল,
“তুই আমাকে পছন্দ করিস, তার প্রমাণ কী? রিমা তো আমাকে সরাসরি বলেছে, মিশকাত ভাই, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুই কী বলেছিস?”
“তারপর তুমি কী বলেছিলে?”
“আমি বলেছি তোর উত্তর জানার পর আমি ওকে উত্তর দিতে পারব।”
“তার মানে তুমি ওকে-ও সিরিয়ালে রেখেছ?”
“একজনের বিরহ কা’টাতে আরেকজনকে সিরিয়ালে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তুই বুঝবি না, কারণ তুই অতি বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। অতি বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীদের নিজের বেলায় সব বুদ্ধি উড়ে যায়।”
আরিন্তা রেগেমেগে বলেছিল,
“তুমি এতদিন ধরে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য মেয়েকেও সিরিয়ালে রাখলে কীভাবে? সব কি তাহলে মিথ্যা ছিল?”
“মিথ্যা হবে কেন? অবশ্যই একশো ভাগ সত্য।”
“তাহলে তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন?”
“কী করলাম?”
“অপরাধ করেছ, প্র’তারণা করেছ।”
মিশকাত আকাশ থেকে পড়ার ভান করে অবাক কন্ঠে বলেছিল,
“প্রতারণা হলো কীভাবে? তুই আমাকে এত বড়ো অপবাদ দিস কেন? আমার তো একতরফা ভালোবাসা। এখানে তোর অপবাদ দেওয়ার মানে হয় না।”
“একতরফা? নাটক করো? তুমি বুঝতে না আমিও তোমাকে ভালোবাসি? এতদিন তো নিজেকে খুব প্রেমিক পুরুষ দাবি করতে। রিমার প্রেম নিবেদন পেয়ে অবুঝ শিশু হয়ে গেছো?”
আরিন্তার চোখে পানি এসে পড়েছিল। মিশকাত হাসি-হাসি মুখ করে বলেছিল,
“আবার বল তো। তুই আমাকে ভালোবাসিস?”
“নতুন জানো?”
“সত্যি?”
ভেজা চোখে শক্ত কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠেছিল আরিন্তা,
“মিশু ভাই।”
মিশকাত নিচু স্বরে বলেছিল,
“তাহলে অবশেষে স্বীকার করলি তুই আমাকে ভালোবাসিস?”
আরিন্তা থতমত খেয়েছিল। মিশকাতের মিটমিটে হাসিটা লক্ষ্য করতেই নিজের বোকামির জন্য সে লজ্জিত হয়েছিল। মিশকাত বলেছিল,
“আমি কি এটা উত্তর ভেবে নেব? না কি রিমাকে -”
“খুন করে ফেলব মিথ্যাবাদী পোল্ট্রি।”
রিমার নাম তুলতেই আরিন্তা আচমকা মিশকাতের আস্তিন মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে ফট করে কথাটা বলে ফেলছিল। মিশকাত তখনই নিজের বন্দী হাতটা টান মে’রেছিল। আচমকা আরিন্তা হোঁচট খেয়ে মিশকাতের মুখোমুখি গিয়ে পড়েছিল। মিশকাত ঝুঁকে পড়ে মুচকি হেসে বলেছিল,
“মন পো’ড়ে না কি পোনি?”
আরিন্তার কেমন বুকের মধ্যে ধুপধাপ শব্দ বেড়ে গিয়েছিল। মিশকাতের আস্তিন ছেড়ে দিয়ে সে সঙ্গে-সঙ্গে দূরে সরে দাঁড়িয়েছিল। তারপর থেকে টানা এক মিনিট সে অন্যদিকে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। লজ্জায় মিশকাতের চোখে চোখ রাখতে পারেনি। মিশকাত গলা ঝেড়ে বলেছিল,
“তবে কি আজ আমার কপাল থেকে সিঙ্গেল ট্যাগটা মুছল? এরপর থেকে নিজেকে মিঙ্গেল দাবি করতে পারি? প্রেমিকার কী মতামত?”
আরিন্তার ঠোঁটের কোণে মিটমিটে হাসি ধরা দিয়েছিল। রয়েসয়ে সে উত্তর দিয়েছিল,
“জেনেশুনে এত ঢং কিসের? কেউ না কি আমার মন বোঝে? এত বুঝলে তাকে আবার ভেঙে বুঝাতে হবে কেন?”
মিশকাত চট করে আরিন্তার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
“বুঝাতে হবে না। একবার বল তো, ভালোবাসি।”
আরিন্তা পড়েছিল মহা ঝামেলায়। কিছুক্ষণ দোনামোনা করে সে ঘ্যানঘ্যান করে বলেছিল,
“মিশু ভাই, আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।”
মিশকাত হো-হো করে হাসতে-হাসতে আরিন্তার মাথায় দুই আঙুলে টোকা মে’রে বলেছিল,
“এখন থেকে সব ভালো লাগবে। প্রেমে পড়লে চোখে সরষে ফুল লাগে। তখন পচা ডোবাকে-ও বিলাসবহুল সুইমিংপুল মনে হয়।”
চলবে, ইন শা আল্লাহ্।