বিরহবিধুর চাঁদাসক্তি পর্ব-২৩+২৪

0
347

#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

২৩.
নিয়াজের খালার বাড়িতে পৌঁছে আরিন্তার মনে হলো তার শরীরে আর বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। তবু সে নতুন বউ। মুখ রক্ষার্থে নানান জনের সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করতে হয়েছে। তারপর নিয়াজের সাথে রুমে এসেই সে শরীর ছেড়ে বিছানায় বসে পড়ল। এই মুহূর্তে বিছানাটাকেই তার সবচেয়ে আপন মনে হচ্ছে। ইচ্ছা করছে জগত-সংসার ভুলে নিশ্চিন্তে এক লম্বা ঘুম দিতে। কিন্তু তার ইচ্ছায় ঘন্টা বাজিয়ে নিয়াজের খালা হোসনে আরা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে গলা তুলে ডেকে বললেন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে যেতে। তারপরই তিনি ছুটলেন টেবিলে খাবার সাজাতে। আরিন্তার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়াজ বলল,
“জার্নিতে তো তেমন কিছুই খেলে না। ফ্রেশ হয়ে এসো। খাওয়া-দাওয়া করে তারপর বিশ্রাম নিয়ো।”

আরিন্তা হতাশ মুখে বিনা বাক্যে ফ্রেশ হতে চলে গেল। দুজন ফ্রেশ হয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসে দেখল বিরাট আয়োজন। আদরের ভাগনে আর তার নতুন বউয়ের আপ্যায়নে হোসনে আরার কমতি নেই। বেছে-বেছে নানান পদ রান্না করিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো খাবারেই আরিন্তার রুচি নেই। তার দুচোখ ভর্তি ঘুম। ক্লান্তিতে শরীর নুয়ে আসছে। হোসনে আরা প্লেট ভর্তি খাবার দিতে চাইলেন। আরিন্তা বাঁধা দিয়ে বলল সে এখন এত খেতে পারবে না। অনেকদিন পর খালার বাড়ির রান্না নিয়াজ মজা করে খেলেও, আরিন্তা অল্প পরিমাণ খাবার নিয়েও সবটুকু শেষ করতে পারেনি। হোসনে আরা জোর করতে চাইলে নিয়াজ নিষেধ করে দিলো। নিয়াজের আগেই আরিন্তা খাবার শেষ করে রুমে ফিরে গেল। এখন আর তার বাঁধা নেই। দ্রুত বিছানায় উঠে সে গা এলিয়ে দিলো। কিন্তু খানিক বাদেই তার মাথাটা চিনচিন করে ব্যথায় ধরে গেল। দীর্ঘ জার্নির ফল এটা। নিয়াজ রুমে ফিরে দেখল আরিন্তা দুহাতে কপাল চেপে শুয়ে আছে। এমন কিছুই সে সন্দেহ করছিল। এগিয়ে গিয়ে শুধাল,
“তোমার কি মাথাব্যথা করছে?”
আরিন্তা চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিলো,
“একটু।”

নিয়াজ নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। গত এক মাসে এই মেয়েকে সে যতটুকু চিনেছে, তাতে এটা তার ভালোভাবেই বুঝা হয়ে গেছে যে, এই মেয়ে নিজের সমস্যার কথা মুখ ফুটে স্পষ্ট করে বলতে নারাজ। ব্যাগ থেকে ঔষধ বের করে নিয়াজ এক গ্লাস পানিসহ ঔষধ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ওঠো, খেয়ে নাও।”
আরিন্তা বলল,
“এটুকু মাথাব্যথা ঘুমালেই সেরে যাবে। ঔষধ লাগবে না।”
“তোমার চোখ-মুখের অবস্থা দেখেছ? ডক্টর আমি, তুমি না। ওঠো।”

তর্ক না টেনে আরিন্তা উঠে ঔষধ খেয়ে পুনরায় একইভাবে শুয়ে পড়ল। নিয়াজ গ্লাস রেখে আবার এগিয়ে গিয়ে আরিন্তার পাশে বসল। হাত বাড়িয়ে আরিন্তার কপাল থেকে দুহাত নামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার মাথা টিপে দিই, ঘুমাও।”

আচমকা আরিন্তা হকচকিয়ে গেল। নিয়াজ কপালে হাত ছোঁয়ানোর আগেই সে ঝট করে উঠে বসল। কপাল কুঁচকে বলল,
“কোনো দরকার নেই। দয়া করে আমাকে বিব্রত করবেন না। আমি একটু ঘুমাতে চাই।”

নিয়াজের খারাপ লাগালেও সে মুখে প্রকাশ করল না। মাথা দুলিয়ে উঠে রুম থেকে চলে গেল।

নিয়াজের খালাতো ভাই আবিরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এসে আরিন্তার মনে হচ্ছে আজই বিয়ে। বর-কনের একসঙ্গে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। চারদিকে দুই পক্ষের আপনজন, আত্মীয়-স্বজনে গিজগিজ করছে। সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করে আজকের অনুষ্ঠানকে আরও আনন্দময় করার চেষ্টা করছে। কোলাহল আজকাল আরিন্তার চরম শত্রু। নিরিবিলি পরিবেশেই তার মন শান্ত থাকে। চারদিকের এত রঙিন আলো তার চোখে বেরঙিন লাগছে। একা একপাশে দাঁড়িয়ে সে শুধু সবার আনন্দ দেখছিল। মাঝ থেকে নিয়াজের খালাতো বোনগুলো তাকে চেপে ধরে ফেলল বিপাকে। মেয়েরা সবাই একরকম হলুদ রংয়ের শাড়ি পরেছে। আরিন্তাকেও তার একটা শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হলো। অনিচ্ছাভর্তি শরীরে শাড়িটাকে এখন তার বোঝা মনে হচ্ছে। নিয়াজ আজ একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছে। মাঝে একবার সে আরিন্তাকে এক পলক দেখেছিল। হলুদ শাড়ি পরে মেয়েটা প্যাঁচার মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। শাড়িতে মেয়েটাকে দারুণ মানায়। অথচ বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত সে যেচে শরীরে শাড়ি জড়ায়নি। নিয়াজের মনে হচ্ছে শাড়ি পরিহিতা আরিন্তার মুখে এক টুকরো মিষ্টি হাসির রেখা থাকলে, মেয়েটাকে এক টুকরো চাঁদের মতো সুন্দর লাগত। কিন্তু মেয়েটা হাসতে চায় না। নিয়াজ জানে না এই মিষ্টি মেয়েটার হাসির সৌন্দর্য কেমন। ঠিক কতটা সুন্দর তার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা। এখনও অবধি হাসিখুশি এমন কোনো মুহুর্ত তাদের জীবনে আসেনি। তবে নিয়াজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কোনো এক শুভক্ষণে এমন মুহুর্তের সাক্ষী হওয়ার।

হাতের কাজ শেষ করেই নিয়াজ আরিন্তার খোঁজ করল। খুঁজতে গিয়ে মেয়েদের ভীড়ের মাঝে আরিন্তাকে চোখে পড়ল। স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েরা হাত নেড়ে নাচছে। আরিন্তাকে বোধ হয় ওরাই টেনেটুনে নিয়ে গেছে। নিয়াজ হাতের ইশারায় তার এক বোনকে বুঝাল আরিন্তাকে ডেকে দিতে। আরিন্তাকে ডেকে দিলে সে নিয়াজকে দেখেই ভীড় থেকে বেরিয়ে চলে এল। নিয়াজ তার মুখের অবস্থা দেখে শুধাল,
“খুব বিরক্ত হচ্ছ?”
আরিন্তা মুখ ফুলিয়ে উত্তর দিলো,
“এত চেঁচামেচি আর সাউন্ড বক্সের শব্দ মাথায় লাগছে।”
“বাইরে যাবে?”
“এখন কীভাবে?”
“এখন সবাই ব্যস্ত। বাইরে থেকে হেঁটে এলে তোমার মাথা হালকা হবে। চলো।”
“আন্টি‌ যদি খোঁজ করে?”
“বেশি দূরে যাব না।”

নিয়াজ হাঁটা ধরলে আরিন্তা-ও তার পিছু নিল। কিন্তু ভাগ্য খারাপ-ই বলা চলে। চার পা এগোতেই তারা হোসনে আরার ননদের মুখোমুখি হলো। মহিলা বোধ হয় খেয়াল করেছে তারা এখনও বর-কনেকে হলুদ ছোঁয়ায়নি। তাই তাদের দেখেই ডেকে নিয়ে গেল স্টেজের কাছে। আরিন্তা বিরক্ত মুখে নিয়াজের দিকে তাকাল। তার এখন রাগ লাগছে নিয়াজের ওপরেই। সে কেন তার কাছে আসতে গেল? তার কাছে আসার কারণেই এই মহিলার চোখে পড়তে হলো। নিয়াজ চোখের ইশারায় আরিন্তাকে অনুরোধ করল একটু সহ্য করে নিতে।

বর-কনেকে হলুদ ছুঁয়ে উঠতে গিয়ে আরেক বিপদে পড়তে হলো। সবাই মিলে নিয়াজ-আরিন্তাকে জেঁকে ধরল ছবি তোলার জন্য। যেহেতু তারা নতুন দম্পতি, অবশ্যই মিষ্টি কিছু ছবি তোলা বাঞ্ছনীয়। আরিন্তা ছবি তুলতে রাজি নয়। তার কথা ভেবে নিয়াজ-ও বারণ করতে চাইল। কিন্তু ভাই-বোনদের মিলিত কন্ঠের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়ল। তার ওপর বড়োরা-ও ছোটোদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বসল। অগত্যা আরিন্তাকে নিয়াজের পাশে দাঁড়াতে হলো ছবি তোলার জন্য। দুজনের মাঝে দুরত্ব দেখে ফটোগ্রাফার আরিন্তাকে বলল,
“ম্যাম, আরেকটু ক্লোজ হয়ে দাঁড়ান।”
আরিন্তা নিয়াজের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবি তুলল। এরপর ফটোগ্রাফার বলল,
“অন্য পোজে দাঁড়ান।”

নিয়াজ-আরিন্তা দুজনেই কনফিউশনে পড়ে গেল। বিয়ের পর থেকে এই অবধি তাদের সুন্দর কোনো পোজে ছবি তোলা তো দূর, এক ফ্রেমে ছবিই তোলা হয়নি। বিয়ের দিন ছবি তুলতে আরিন্তা নারাজ ছিল। সেদিন নিয়াজ ভেবেছিল আরিন্তা বেশি লজ্জায় পড়ে গেছে। তাই সে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ছাড়া অন্য কোনো পোজে ছবিও তোলেনি, কাউকে জোর করতেও দেয়নি। আজ সে জানে আরিন্তা আসলে লজ্জায় নয়, মনের অনিচ্ছায় ছবি তুলতে চায় না। অথচ আজ নিয়াজ না চাইলে-ও আরিন্তা ছবি তুলতে বাধ্য। তাদের মুখের অবস্থা থেকে এক মহিলা বলে উঠল,
“বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে, এখনও দুজন ছবি তুলতে গিয়ে পোজ খুঁজে পাচ্ছ না! না কি সবার সামনে লজ্জা পাচ্ছ? লজ্জা কোরো না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। এখনই তো সময় এমন সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখার। মনের আনন্দে ছবি তোলা।”

এরপরও দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফটোগ্রাফার নিজেই বলল,
“দুজন দুজনের দিকে তাকান।”

নিয়াজ আরিন্তার দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,
“তাকাও প্লিজ। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।”

আরিন্তা তাকাল। কিন্তু সে সরাসরি নিয়াজের চোখে চোখ রাখতে পারল না। তার দৃষ্টি আটকে রইল নিয়াজের নাকের কাছে। পাশ থেকে আবির বলে উঠল,
“ভাবি, ভাইয়ের বুকের কাছে হাত রাখুন। এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।”

আরিন্তা হাত তুলে খুব হালকা করে নিয়াজের বুকের একপাশে রাখল। এই ছবি তোলার পরপরই ফটোগ্রাফার বলে বসল,
“স্যার, ম্যামের কপালে কিস করুন। সুন্দর ছবি আসছে আপনাদের।”

সঙ্গে-সঙ্গে আরিন্তা ছিটকে সরে দাঁড়াল। নাকচ করে বলল,
“আর তুলতে হবে না।”
নিয়াজ-ও বলল,
“থাক, যথেষ্ট ছবি তোলা হয়েছে। এবার অন্য সবার ছবি তুলুন।”

আবির উঠে এসে বলল,
“ভাই, বিয়ের এক মাস পরে এসেও দেখি আগের মতোই আনরোমান্টিক রয়ে গেলে। ভাবিকেও এখন নিজের মতো বানাচ্ছ, না?”

নিয়াজ নিচু স্বরে বলল,
“আবির, এখানে অনেক মানুষ। আরিন্তা লজ্জা পাচ্ছে। বাদ দে এসব।”
“এত লজ্জার কী আছে? তোমরা নতুন কাপল। দিন-রাত সুন্দর মুহূর্তের ছবি তুলে জমাতে থাকবে। তা না। আজ পর্যন্ত তোমাকে ভাবির সঙ্গে একটা কাপল পিক পর্যন্ত আপলোড করতে দেখলাম না। আজ ছবি না তুলিয়ে তোমাদের ছাড়ছি না। আজকের এই ছবি দুজনের প্রোফাইলে সেঁটে দেওয়া হবে। কী বলিস তোরা?”

তাদের ভাই-বোন সবাই হৈ-হৈ করে গলা মিলাল। অর্থাৎ সবাই একমত। রাগে আরিন্তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে উঠছে। তবু সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। এই মানুষগুলো তো আর তাদের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর জানে না। তাদের কাছে এসব খুবই স্বাভাবিক। সবার জোরাজুরিতে শেষমেশ হার না মেনে উপায় পেল না আরিন্তা। শরীর শক্ত করে পুনরায় সে ছবি তুলতে দাঁড়াল। তবে ছবি তোলার সময় নিয়াজ তার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল না। তার কপাল আর নিয়াজের ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত দূরত্ব বজায় রাখল। এতে আর কেউ বাড়াবাড়ি করল না। এই ছবি তোলার পর আর আরিন্তা এক মুহুর্ত-ও স্টেজে দাঁড়াল না। অতি দ্রুত স্টেজ থেকে নেমে সরে পড়ল। রাগে, দুঃখে, লজ্জায় তার কান্না পাচ্ছে।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেক রাত করে। এখন রাত প্রায় দুটো। শাড়ি পালটে মাত্রই আরিন্তা শুয়েছে। শরীরটা অনেক হালকা লাগছে তার। শরীরের মতো মনটা হালকা নেই। পাথরের মতো ভার হয়ে আছে। বিছানায় যাওয়ার আগে আরিন্তা মিশকাতের দেওয়া ফোনটা বের করে নিয়েছে। বর্তমানে তার কাছে দুটো ফোন থাকে। একটা মিশকাতের দেওয়া, আরেকটা নিয়াজের। মূলত নিয়াজের দেওয়া ফোনটাই তার ব্যবহার করা হয়। আগের ফোনটা কেবল স্মৃতি হাতড়াতে কাজে লাগে। এই ফোনটা হাতে পাওয়ার পর থেকে সে অনলাইনে যাওয়া তো দূর, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ আইডি লগইন করার সাহস করে উঠতে পারেনি। এই ফোনটায় রোজ সে গ্যালারি ঘুরে বেড়ায়। প্রতিটা ছবি খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে। মিশকাতের স্মৃতিচারণা করে। দেখতে-দেখতে বুক ভারি হয়ে এলে কাঁদে। একসময় কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আজ ছবি ঘাঁটতে গিয়ে বারবার তার চোখে ভেসে উঠছে নিয়াজের সাথে ছবি তোলার মুহূর্তগুলো। মিশু ভাই তাকে অন্য পুরুষের সংস্পর্শে সহ্য করতে পারে না। সে দেখলে নিশ্চয়ই ভীষণ রাগ করত? রাগে কদিন কথাবার্তা বন্ধ করে বসে থাকত। তারপর যেদিন কথা বলত, সেদিন অযথাই বকাঝকা করত। পরপরই আরিন্তার মনে পড়ল সুবর্ণার বলা কথা। মিশু ভাই নিয়াজের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চায় না। কেন চায় না? হতে পারে নিয়াজ নির্দোষ। কিন্তু মিশু ভাই নিজেই তো বলেছিল আরিন্তাকে ভালোবাসার অধিকার সে ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের নেই। নিয়াজ কি সেই পুরুষদের কাতারের একজন নয়? কেন সে মেনে নিল? আরিন্তার ওপর কি তার সত্যিই কোনো রাগ নেই? কোনো অভিযোগ নেই? আরিন্তা যে নিজের কথা রাখতে পারল না, তার জন্য অপেক্ষা করল না; এই অপরাধের শা’স্তি দিতে সে আসবে না? তার এত সহজ ক্ষমা তো আরিন্তা এক জনমেও মানতে পারবে না। এরচেয়ে শা’স্তিস্বরূপ তার হাতে মৃ’ত্যু মেনে নেওয়া ঢের সহজ।

নিয়াজ রুমে এসে আরিন্তাকে দেখতে পেল বিধ্বস্ত অবস্থায়। আগের ফোনটা হাতে নিয়ে সে কাঁদছে। এই দৃশ্য নতুন নয়। গত একমাস ধরে দেখতে-দেখতে এই দৃশ্য নিয়াজের সয়ে গেছে। তবে মন সয়ে নিতে পারে কি না তা কেবল সে-ই জানে। রোজ রাতে আরিন্তাকে এমন অবস্থায় দেখলে নিয়াজ তাকে একা ছেড়ে দেয়। কাজের অজুহাতে হয় বারান্দায় গিয়ে বসে থাকে, নয় ড্রয়িংরুমে। কিন্তু এখানে তার কোনোটাই করা যাবে না। খালার বাড়ির এই রুমের সাথে বারান্দা-ও নেই। নিয়াজ নিঃশব্দে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ল। আরিন্তার কান্না থামেনি। ক্ষণে-ক্ষণে ফোঁপানোর শব্দ আসছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকার পর নিয়াজ বলল,
“তুমি কি আজকের ব্যাপারটায় কষ্ট পেয়েছ? তাহলে আমি সরি। ওরা এমন করবে জানলে আমি তোমাকে ডাকতাম না।”

আরিন্তার কোনো সাড়া না পেয়ে ফের বলল,
“আরিন্তা? আর কেঁদো না প্লিজ। এমনিতেই গতকাল থেকে মাথাব্যথা তোমার পিছু ছাড়ছে না। ঘুমিয়ে পড়ো। কাল আবার হৈ-হুল্লোড় সহ্য করতে হবে। শুনছো?”

আরিন্তা এবার মুখ খুলল। ভেজা গলায় বলল,
“আপনাকে না বলেছি আমার প্রতি এত খেয়াল দিবেন না?”
“তোমার প্রতি খেয়াল না দিলে আর কার প্রতি দিবো? আমার তো দ্বিতীয় কোনো বউ নেই খেয়াল দেওয়ার জন্য।”
“আমি আপনার কেউ না।”
“ভুল বললে। আমি তোমার কেউ না হতে পারি, তুমি সবসময়ই আমার বিয়ে করা বউ।”

আরিন্তা হুট করে উঠে বসে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি অধিকার দেখিয়ে কথা বলছেন কেন? আমি কি আপনাকে মেনে নিয়েছি? আশ্চর্য!”
আরিন্তার অশ্রুসিক্ত ফোলা চোখে তাকিয়ে নিয়াজ বলল,
“বারবার কেন ভুলে যাও আমার তোমাকে জয় করার চেষ্টা করার কথা?”
আরিন্তা বিরক্ত মুখে বলল,
“আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আমার ভালোবাসা পালটাবে না? এক মাসেও যা আপনি পাননি, তার আশা নিয়ে কীভাবে বসে আছেন?”
“আশা করতে তো দোষ নেই। ভালোবাসা না পেলাম। কে বলতে পারে? করুণা তো পেতে পারি। করুণা পেলে হয়তো এক ফোঁটা ভালোবাসা কপালে জুটেও যেতে পারে।”
“আপনাকে বুঝানোই বেকার।”

কথাটা বলেই আরিন্তা আবার শুয়ে পড়ল। এবার সে হাত থেকে ফোন রেখে দিয়েছে। হয়তো ঘুমাবে। নিয়াজ কন্ঠস্বর নরম করে বলল,
“ভেবো না, গত একমাসে যে তোমার ওপর জোর খাটায়নি, আগামী এক বছরেও সে জোর খাটাবে না। কিন্তু শেষ অবধি তোমাকে জয় করে নেওয়ার এক বিন্দু আশা-ও আমি ছাড়ব না। তোমার মনের ওপর আমার হস্তক্ষেপ নেই। রাখা সম্ভব-ও না। আমি জানি তোমার মনে আমার জন্য কোনো জায়গাই নেই। তবে এরজন্য আমি তোমাকে দোষারোপ করি না। কারণ আমি তোমার মনকে বুঝতে পারি। কোনোদিন হয়তো তুমি-ও আমায় বুঝবে। সেই দিনের অপেক্ষা আমি এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়ব না। আমি আমার অপেক্ষা আর ধৈর্যের ফল দেখতে চাই।”

আরিন্তা বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে চুপচাপ কথা শুনছিল। নিয়াজ থামলে সে থমথমে মুখে উত্তর দিলো,
“যা ইচ্ছা করুন। না বলেছে কে? আপনার ধৈর্যের ফল পেলে মিষ্টি বিলাতে ভুলবেন না।”

নিয়াজ হাসল। হাসিমুখে বলল,
“ওহ্! ভালো কথা মনে করলে। তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। আজ হলুদ শাড়িতে তোমাকে খুবই মিষ্টি লাগছিল। দৃষ্টি আটকে যাওয়ার মতো সুন্দর। শাড়ি পরলে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাব, এই শঙ্কাতেই বোধ হয় তুমি শাড়ি পরো না। তাই না?”
“আপনার মতো ব্যক্তি অযথাও প্রেমে পড়তে পারে।”
“তা অবশ্য ঠিক বলেছ। তবে একটু ভুল আছে। আমার মতো ব‌্যক্তি অযথা যার-তার প্রেমে পড়ে না। শুধু বউয়ের প্রেমে পড়ে। তোমার বর যে খুবই লয়াল, অন্তত এটা মানতে তুমি বাধ্য।”
আরিন্তা মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আপনি না আমাকে ঘুমাতে বলেছেন? এখন ঘুমাতে দিচ্ছেন না কেন?”

নিয়াজ ঘুরে শুয়ে আফসোসের সুরে বলল,
“আচ্ছা, ঘুমাও, ঘুমাও। আর বিরক্ত করছি না। দেখি আর কতদিন বিবাহিত সিঙ্গেল জীবন কা’টাতে হয়। আহারে! বেচারা নিয়াজের জন্য আমি ছাড়া কারো মায়া-ই জন্মাল না।”

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।

#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

২৪.
আজ আবিরের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামনে আবার বৌভাত বাকি আছে। কিন্তু আরিন্তার আর এই কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে থাকতে ইচ্ছা করছে না। নিয়াজকে সে জিজ্ঞেস করেছিল কবে বাড়ি ফিরবে। নিয়াজ সঠিকভাবে বলতে পারেনি। কাজের তাগিদে তারও চলে যাওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু খালার অনুরোধের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আরিন্তা আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে। নিয়াজ বুঝতে পারেনি সে ঘুমিয়ে পড়েছে কি না। নিয়াজ এসে বিপরীতে শোয়ার পরও আরিন্তার কোনো হেলদোল দেখা গেল না। আবিরের বিয়ের প্রতিটি মুহূর্ত নিয়াজ খেয়াল করেছে। আবির আর তার বউ কত খুশি ছিল! বিয়ের সম্পূর্ণ মুহূর্ত তারা বেশ আনন্দিত মনে উপভোগ করেছে। দুজনের মুখেই ছিল প্রশান্তির হাসি। নিয়াজের চোখে বারবার তাদের বিয়ের দিনটি ভেসে উঠছিল, যেদিন সে খুশি থাকলেও আরিন্তার মনভর্তি ছিল আর্তনাদ। এমনকি এক মাসেও ওই মুখে সে হাসি ফোটাতে পারেনি, পারেনি ওই মনের আর্তনাদ ঠেলে একটু জায়গা খুঁজে নিতে। সম্ভবত একজন পুরুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজের স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের জন্য কষ্ট পেতে দেখা, কাঁদতে দেখা। আর নিয়াজ সেই কঠিন কাজটাই ধৈর্যের সাথে করে এসেছে এই আশায় যে, একদিন আরিন্তা তাকে বুঝবে। এমন কোনো সম্ভাবনা এখনও অবধি না দেখা গেলেও সে হাল ছাড়ছে না। তবু সে একজন বিবাহিত পুরুষ। নিজের স্ত্রীর সংস্পর্শে যাওয়ার, তার ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার-ও আছে। মুখে সে আরিন্তাকে যতই বুঝাক সে অপেক্ষা করবে। প্রকৃতপক্ষে নিজের মনের আকাঙ্ক্ষা চাপা দিয়েই সে দিনাতিপাত করছে। তবু আরিন্তাকে বুঝতে দিচ্ছে না, এই যা।

রোজ রাতে নিয়াজ ঘুমন্ত আরিন্তার অজান্তেই মিনিটের পর মিনিট তার মুখে চেয়ে থাকে। ওই সময়গুলো নিজেকে ঘোর থেকে টেনে আনা তার জন্য ঠিক কতটা জটিল,তা কেবল সে-ই জানে। আজ আরিন্তা জেগেই ছিল। কিন্তু সে বিপরীত দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকায় নিয়াজ বুঝে উঠতে পারেনি। কিছুক্ষণ বিপরীত পাশ থেকেই আরিন্তার দিকে তাকিয়ে থেকে সে উঠে বসল, মেয়েটার মুখটা দেখার আকাঙ্ক্ষায়। নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিয়ে তাকাল আরিন্তার মুখে। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। কী মায়াবী মুখ! নিষ্পাপ ফুলের মতো মিষ্টি। এই ঘুমন্ত ফুলপরীর মুখে চেয়ে থাকতে-থাকতে কবে যে নিয়াজ প্রেমে পড়েছে, খেয়ালই নেই। এখন এই মুখটা বেশিক্ষণ চোখের আড়ালে থাকলে তার অশান্তি লাগে। এখন সে টের পায় মন বেচারা আরেকজনের ওপর তার সুখ-শান্তি আরোপ করে দিয়েছে। অথচ যার ওপর আরোপিত হয়েছে সে তার সুখ-শান্তির খবরই রাখে না। রোজকার মতো আজও আরিন্তার মুখে তাকিয়ে থেকে একসময় নিয়াজ ঘোরে চলে গেল। তার ভীষণ সাধ জাগল আরিন্তার কপালে একটা চুমু খাওয়ার। রোজই জাগে, কিন্তু সে নিজেকে ফিরিয়ে নেয়। আজও ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু কেন জানি মনটা আজ ভীষণ অবাধ্য হয়ে উঠল। তাকে বুঝাল, আরিন্তা তার স্ত্রী। নিজের স্ত্রীর কপালে চুমু খাওয়া অপরাধ নয়। তাছাড়া আরিন্তা ঘুমিয়ে আছে। চুমু খেলেও সে জানতে পারবে না। তার অজান্তে চুমু খাওয়া যদি ভুল হয়, হোক। তবু তার হাজারটা ইচ্ছার মধ্যে ছোট্ট একটা ইচ্ছা তো পূরণ হবে। মনের সঙ্গে তর্ক করতে-করতে নিয়াজের মাথায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো। সে একবার ভাবছে সরে যাবে, আবার ভাবছে কপালে একটা চুমু খাওয়াই যায়। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে ভাবনার এক পর্যায়ে নিয়াজ হঠাৎ করেই আরিন্তার দুপাশে হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়ে কপালে চুমু খেল। কিন্তু আরিন্তার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে তাকে নিজে থেকে সরতে হলো না। ঠোঁট সরানোর আগেই আচমকা ভয়ানক এক ধাক্কায় তার শরীরসহ মাথাটা ছিটকে গিয়ে ঠেকল খাটের হেডবোর্ডে। সঙ্গে-সঙ্গে মাথাটা ঝিমঝিম করে ব্যথায় ধরে গেল। চমকিত নিয়াজ মুখ বিকৃত করে ডান হাতটা মাথার পেছনে চেপে ধরে সামনে তাকাল। চোখের সামনে আরিন্তার রাগান্বিত মুখটা ভেসে উঠল। দৃষ্টি আটকাল আরিন্তার রক্তবর্ণ ধারণ করা চোখ দুটিতে। রাগে গজগজ করতে-করতে দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল,
“দয়াভর্তি শরীর থেকে দয়া খসে পড়েছে আপনার? ঘুমের মধ্যে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন? অথচ মুখে মিষ্টি বুলি আওড়ান, আপনি আমার ওপর জোর খাটাবেন না। জানতাম একদিন ঠিকই আসল রূপ বেরিয়ে আসবে। এই আপনার উঁচু মন-মানসিকতা?”

নিয়াজ হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল। মাথার যন্ত্রণায় সহসা সে কী বলবে বুঝেও উঠতে পারল না। আরিন্তা তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে যখন দেখল সে মাথা থেকে হাত সরাচ্ছে না, তখন কিঞ্চিত ভড়কে গেল। বুঝল নিয়াজের মাথায় আসলেই বেশি লেগেছে। নিয়াজের মতো সে-ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল। কী করা উচিত, কী বলা উচিত ঠিক করতে পারল না। খানিক পর আমতা-আমতা করে শুধাল,
“আপনার মাথায় অনেক লেগেছে?”
নিয়াজ ডানে-বায়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
“কিছু হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ো।”

আরিন্তা পুনরায় কিছু বলার আগেই নিয়াজ বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। আরিন্তা সেদিকে তাকিয়ে মূর্তির ন্যায় ঠাঁয় বসে রইল। কিছুক্ষণ আগের রাগ কোথায় গেল বুঝতে পারল না সে। রাগ ধরে রাখবে কীভাবে? রাগ উঠতে-উঠতেই তো সে অকল্পনীয় কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। তারই বা কী দোষ? তখনও তার ঘুম গাঢ় হয়নি। নিয়াজ অমনভাবে কাছে যেতেই কাঁচা ঘুম ছুটে গেছে। অকস্মাৎ নিয়াজ চুমু খেয়ে তাকে অপ্রস্তুত করে দিয়েছে। নিয়াজের থেকে সে এমনটা আশা করেনি বলেই রেগেমেগে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তাকে আঘাত করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। ঘটনার আকস্মিকতায় হয়ে গেছে। নিয়াজ ওয়াশরুম থেকে বেরোলো প্রায় দশ মিনিটের মাথায়। ততক্ষণ আরিন্তা থম মে’রে বসেই ছিল। নিয়াজ এসে এক মুহুর্ত-ও সময় নষ্ট না করে নিজের মতো শুয়ে পড়ে আরিন্তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ঘুমাও।”

যেন কিছুই হয়নি। আরিন্তা একবার জিজ্ঞেস করতে চাইল মাথার ব্যথা কমেছে কি না। নিয়াজ ওদিক ফিরে শুয়ে পড়ায় আর মুখ খোলা হলো না। মনের মধ্যে খচখচানি নিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল।

হোসনে আরা সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন। তার কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবাই খেতে বসে গেছে। শেষমেষ আর কাউকে কাজে হাত দিতে দেননি তিনি। আরিন্তা এসে সাহায্য করতে চাইলে বললেন,
“কাজ করতে হবে না মা। খেতে বসে পড়ো। নিয়াজ কোথায়?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“এখনও ওঠেনি? তাহলে তুমি গিয়ে খেতে বসো। ও পরে খেয়ে নিবে।”
“আমিও পরে খাব। এখন খেতে ইচ্ছা করছে না।”

হোসনে আরা জোর করলেন না। বরং কিছু সময় চুপ থেকে নিচু স্বরে বললেন,
“তোমার সাথে কথা বলা দরকার। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময়-সুযোগ হচ্ছে না।”
আরিন্তা কৌতুহলী হয়ে বলল,
“জি আন্টি বলুন।”
“দুলাভাইয়ের সাথে যতবার ফোনে কথা হয়, তিনি তোমার খুব প্রশংসা করেন।”
আরিন্তা মৃদু হাসল। হোসনে আরা পরপরই বললেন,
“কিন্তু তিনি তোমাদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন। কদিন ধরেই আমাকে এ কথা বলছেন।”
“কিসের দুশ্চিন্তা?”
“কিছু মনে কোরো না মা। আমি তোমার মায়ের মতো। সেই হিসেবেই কিছু কথা বলছি। দুলাভাই সম্পর্কে তোমার শশুর। তাই নিজে কিছু বলতে পারেননি। আমাকে তোমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে যা বলেছেন, আর আমি যা খেয়াল করেছি, তাতে তার দুশ্চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তোমাদের বিয়ের অনেকদিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও তোমাদের দেখে মনে হয় না বাকিদের মতো তোমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক। আমরা সংসার জীবনে অনেক বছর কা’টিয়ে ফেলেছি মা। সম্পর্কের খাদ চোখে পড়ে যায়। লাজ-লজ্জা ভুলে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তোমাদের মধ্যে কি কোনো সমস্যা চলছে? কোনো সমস্যা মনে হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো। আমি তোমাদের নিয়ে একটু নিশ্চিন্ত হতে চাই মা।”

আরিন্তা খানিক ইতস্তত বোধ করল। কিন্তু কোনোরকম ইতি-উতি না করে একটু ভেবে উত্তর দিলো,
“বুঝতে পেরেছি আন্টি। আসলে আমার-ই একটু সমস্যা হচ্ছে ওনার সাথে মানিয়ে নিতে।”

হোসনে আরা মাথা দুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“বুঝি গো মা। তোমার আর দোষ কোথায়? আমাদের নিয়াজটাই অন্যরকম। ওর ব্যাপারে তুমি কতটা জানো জানি না। না জানলে জেনে নেওয়া উচিত। আমার বোন চলে যাওয়ার পর থেকে নিয়াজটা খুব একা হয়ে পড়েছে। দুলাভাই কাজের তাগিদে ওকে তেমন সময় দিতে পারেনি। নিয়াজ ছোটোবেলা থেকেই শান্ত ছেলে। মাকে হারানোর পর ও আরও শান্ত হয়ে গেছে। আজ অবধি ওর কোনো সমস্যা তো দূর, নিজস্ব কোনো কথাই কারও সাথে শেয়ার করে না। সব কথা চেপে রাখে। তুমি ওর স্ত্রী। বাকি জীবন ওর সঙ্গে কা’টাবে। তোমার কাছে অন্তত ওর নিজেকে চেপে রাখা ঠিক না। কিন্তু আমার ছেলেটা বোধ হয় তা-ই করছে।”

আরিন্তা ভেবেছিল হোসনে আরা তার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু তার কথা শুনে বুঝল তিনি তাদের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন বুঝতে পারলেও, সঠিক কারণ ধরতে পারেননি। তার ভাষ্যমতে তাদের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থার জন্য নিয়াজ দায়ী। কিন্তু আরিন্তা জানে প্রকৃতপক্ষে সে নিজেই দোষী। নিয়াজ তো সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতেই চায়। তার কারণেই পিছিয়ে আছে। কিন্তু হোসনে আরার কথাগুলো আরিন্তাকে ভাবাল। কারণ তার বর্ণনার নিয়াজকে আরিন্তা আজ অবধি দেখেনি। প্রথম থেকেই সে নিয়াজকে যথেষ্ট মিশুক প্রকৃতির দেখে আসছে। কপালে মৃদু ভাঁজ ফেলে আরিন্তা বলল,
“কই? ওনাকে দেখে তো এমন মনে হয় না। আমি তো স্বাভাবিক-ই দেখছি।”
“তুমি স্বাভাবিক দেখছ, কারণ ও দেখাচ্ছে। শুধু তোমাকে না, সবাইকেই দেখায়। এই যে দেখছো না আমার সাথে খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে? একবার যদি জানতে চাই দিনকাল কেমন কা’টছে, কোনো সমস্যা আছে কি না, কখনোই উত্তর দিবে না। একদম গম্ভীর হয়ে যাবে। আস্তে-আস্তে বুঝবে।”

আরিন্তা উত্তর না দিয়ে ভাবছে সত্যিই নিয়াজ এমন কি না। তার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে হোসনে আরা দুঃখিত কন্ঠে বললেন,
“ছেলেটা প্রয়োজনের সময় মাকে পায়নি। কিন্তু স্ত্রী হিসেবে তুমি ওর পাশে থেকো। তোমার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমার ছেলেটাকে একটু সহ্য করে নাও। তোমাকে সবসময় পাশে পেলে দেখবে ও নিজেকে বদলানোর ভরসা পাবে মনে। অনেক ভালো একটা মানুষ পেয়েছ তুমি, যত্নে রেখো। এরপরও যদি তোমার মনে হয় আমার ছেলে সহ্যসীমার বাইরে, তবে আমাকে জানিয়ো। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব ওকে বুঝানোর। তবে তুমি নিজে আগে চেষ্টা করো। আমার বিশ্বাস তুমি পারবে ওর মন বদলে দিতে। আমার কথাটা রেখো মা। আমার ছেলেটাকে আমি একটু সুখী দেখতে চাই।”

হোসনে আরা আরিন্তার এক হাত মুঠোয় চেপে ধরে অনুরোধ করলেন। আরিন্তা বিপাকে পড়ে বলল,
“আচ্ছা আন্টি। আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে দেখব। আপনি চিন্তা করবেন না।”

হোসনে আরা আরিন্তাকে পাঠালেন খাওয়ার জন্য নিয়াজকে ডেকে আনতে। আরিন্তা গিয়ে দেখল নিয়াজ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে। সে যখন বলল আন্টি তাকে খেতে ডাকছে, নিয়াজ সঙ্গে-সঙ্গে উঠে হাঁটা ধরল। আরিন্তা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করে বসল,
“আপনার মাথা কি এখনও ব্যথা করছে?”
নিয়াজ তাড়াহুড়া করে চলে যেতে-যেতে উত্তর দিলো,
“না, না। কিসের ব্যথা?”

আরিন্তার মনে হলো নিয়াজ তার থেকে পালিয়ে বাঁচল। আজ দেরী করে ঘুম থেকে উঠল কি তার সামনে না পড়ার বাহানা খুঁজতে? খেতে বসেও নিয়াজ খুব স্বাভাবিকভাবে চুপচাপ খেয়ে চলল। আরিন্তা তাকে খেয়াল করল। হোসনে আরার বলা কথাগুলো তার মনে পড়ছে। সত্যিই কি এই সুন্দর মনের মানুষটার এত মিশুক স্বভাব লোক দেখানো? এরমধ্যে হোসনে আরা এসে বলে বসলেন,
“নিয়াজ, বউয়ের সাথে সবসময় গাল ফুলিয়ে থাকবে না বাবা। এমনিতেই বাড়িতে কথা বলার মানুষ নেই। দুলাভাই আর কতক্ষণ কথা বলে? তুমিও চুপচাপ থাকলে মেয়েটার একা-একা লাগবে। বুঝেছ?”

নিয়াজ অবুঝের মতো খালার মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাল। হোসনে আরা খাওয়া শেষ হওয়া অবধি এমন অনেক আদেশ দিয়েই চললেন। নিয়াজ যেন আরিন্তাকে ঠিকমতো সময় দেয়, তার মন খারাপ না করে, তার খেয়াল রাখে, বাকিদের মতো তার সাথেও গাম্ভীর্যতা না দেখায়, তার সাথে সব কথা শেয়ার করে, এসবই তার আদেশ। নিয়াজ শুধু শুনছে আর মাথা নেড়েই চলেছে। আরিন্তার হাসি পাচ্ছে। বেচারা জানেই না তাকে এসব আদেশ কেন দেওয়া হচ্ছে, অথচ আন্দাজে তাল মিলাচ্ছে।

খাবার টেবিল থেকেও মুক্তি মিলেও মিলল না। কোত্থেকে আবির তার ভাই-বোনদের নিয়ে এসে আ’ক্রমণ করে বসল। তাদের অভিযোগ সেদিন যে কাপল পিক তোলা হলো, তা নিয়াজ-আরিন্তার প্রোফাইলে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এখনও অবধি সে কথা রাখা হয়নি। এখন তাদের দাবি, এই মুহূর্তে নিয়াজ-আরিন্তাকে তাদের কথা রাখতে হবে। তারা নিজেরা দুজনের প্রোফাইল পালটে দিবে। তাই দুজনের ফোন চেয়ে বসল। নিয়াজ চোখ পাকিয়ে নিষেধ করল। কিন্তু তারা শুনল না। আবিরের বোন মিকা গিয়ে রুম থেকে দুজনের ফোন উদ্ধার করে নিয়ে এল। জোরাজুরি করে দুজনের ফোন আনলক করাল। নিয়াজের ফোনের ওয়ালপেপারে তাদের বিয়ের ছবি দেখা গেলেও, আরিন্তার ওয়ালপেপারে তার নিজের ছবিও না দেখে আবির আফসোসের সুরে নিয়াজকে বলল,
“দেখো, তুমি ভাবিকে কতটা আনরোমান্টিক বানিয়ে ফেলেছ। এ যুগে কোনো বিবাহিত মেয়ের ফোনের ওয়ালপেপার এমন খাঁ-খাঁ করতে দেখেছ?”

সর্বপ্রথম তারা নিয়াজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিয়াজের ছবি সরিয়ে কাপল পিক বসিয়ে দিলো। তারপর আরিন্তার প্রোফাইলে ঢুকতে গিয়ে দেখল তার ফোনে ফেসবুক অ্যাপই নেই। সবাই চরম বিস্ময় নিয়ে আরিন্তার দিকে তাকাল। নিয়াজের আরেক খালাতো ভাই অবাক হয়ে বলল,
“ভাবি, আপনি তো দেখি পীর-দরবেশ পর্যায়ে চলে গেছেন। আপনার ফোনে ফেসবুক অ্যাপই নেই!”
আরিন্তা বলল,
“আমি ফেসবুক চালাই না।”

মিকা প্রতিবাদ করে বলল,
“মিথ্যা কথা বোলো না ভাবি। আমি কিন্তু তোমার ফেসবুক আইডি পেয়ে রিকোয়েস্ট-ও দিয়েছি। কিন্তু তুমি এখনও অ্যাকসেপ্ট করনি।”
“ওই আইডি আগে চালাতাম। এখন চালাই না।”
“বিয়ের আগেও ওই আইডিতে পোস্ট করেছ তুমি। এখন চালাও না কেন? ভাইয়া কি তোমাকে বারণ করেছে?”
“নাহ্।”
“তাহলে কী সমস্যা? আজকাল ফেসবুক ছাড়া সময় কা’টে? তার ওপর তুমি একা মানুষ, সারাদিন বাসায় সময় কা’টাও কীভাবে? নাও, ওই আইডি লগইন করো। এখন থেকে ওটাই আবার ইউজ করবে।”
“না মিকা। আমার ভালো লাগে না ফেসবুক চালাতে। প্লিজ জোর কোরো না।”

নিয়াজ বলল,
“যা ভালো লাগে না বলছে তা নিয়ে জোর করিস না।”
আবির বলল,
“তুমি চুপ থাকো। তোমাকে দিয়ে জীবনে কিছু হবে না।”
নিয়াজ চোখ বড়ো করে বলল,
“কথাবার্তা সাবধানে বল, আমি তোর বড়ো ভাই।”
“কচু।”

আগের আইডি লগইন করার সাহস আরিন্তা করতে পারছে না। আইডিতে ঢুকলেই যে মিশকাতের আগের ম্যাসেজ সামনে আসবে, তা সে নিশ্চিত। তার মুখোভাব লক্ষ্য করে নিয়াজও আঁচ করতে পারল সে ওই আইডিতে ঢুকতে চায় না। দুজন বারবার নাকচ করলেও ভাই-বোনরা কিছুতেই ছাড় দিলো না। উলটো বলল আইডি না চালালে প্রোফাইল পালটে আবার লগআউট করে দিতে। তারা ফেসবুক অ্যাপ ইন্সটল করে আরিন্তাকে দিয়ে আইডি লগইন করিয়ে ছাড়ল। নিয়াজের প্রোফাইলে যেই ছবি দিয়েছে, সেই ছবিই আরিন্তার প্রোফাইলে দিয়ে তবেই তারা ক্ষান্ত হলো।

সারাদিনে আরিন্তা অনেকবার ফেসবুকে ঢুকে আবার বেরিয়ে গেল। ম্যাসেজ দেখারও সাহস হলো না, আইডি লগআউট করাও হলো না। ইতোমধ্যে তার প্রোফাইলের ছবিতে পরিচিত মানুষ, বন্ধু-বান্ধবরা রিয়্যাক্ট, কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে একজনকেই আরিন্তা খুঁজে পেল না। রাতে একা বসে সে সাহস করে ম্যাসেজে ঢুকল। ইনবক্স ভর্তি পরিচিত অনেক মানুষের ম্যাসেজ জমে আছে। প্রথমদিকের ম্যাসেজগুলো গত দু-তিন দিন আগের। আরিন্তা সেগুলো ডিঙিয়ে নিচে গেল। অনেকগুলো আইডির পর কাঙ্ক্ষিত নামটিতে তার আঙুল থামল। ‘পোল্ট্রি’ নামক মানুষটির আইডির ছবি উধাও। আরিন্তার বিয়ের পরদিন দেওয়া শেষ ম্যাসেজটি ভেসে আছে স্ক্রিনে। আরিন্তার দৃষ্টি সেই ম্যাসেজে আটকে আছে। কী অদ্ভুত ম্যাসেজ! ‘দোআ রইল।’ কিসের দোআ দিয়েছিল সে? আরিন্তার সংসার জীবনে সুখী হওয়ার দোআ? অনেকটা সময় নিয়ে আরিন্তা ইনবক্সে ঢুকল। খুব সম্ভবত মিশকাত অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস অফ করে রেখেছে। ইনবক্সে ঢুকতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল পরপর বহু ম্যাসেজ। প্রথমগুলো আরিন্তার বিয়ের আগে যখন পেলব তার ফোন কেড়ে নিয়েছিল, তখনকার। ম্যাসেজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে মিশকাত কতটা দুশ্চিন্তায় ছিল তখন। যোগাযোগ করার চেষ্টায় বারবার ম্যাসেজ করেছে, কল করেছে। আরিন্তার ফোনে সমস্যা হয়েছে শোনার পর আর ম্যাসেজ করেনি সে। তারপর আবার ম্যাসেজ করেছে আরিন্তার বিয়ের পরদিন। আরিন্তার সাথে কথা হওয়া সত্ত্বেও সে ম্যাসেজ করেছে। হয়তো সে তখন জানত আরিন্তা এই আইডিতে আসবে না। শেষের ম্যাসেজগুলোতে সে ডক্টর নিয়াজের প্রশংসা করেছে, আরিন্তার নতুন জীবনের সুখ কামনা করেছে, দোআ করেছে। কত স্বাভাবিক সেই ম্যাসেজগুলো! অথচ একসময় এই মানুষটাই তাকে অন্য পুরুষের পাশে কল্পনাও করতে পারত না। রেগেমেগে একাকার কাণ্ড করে ফেলত। রাগের মাথায় অন্য পুরুষকে খু’ন করার কথাও সে বলে বসত। এসব ম্যাসেজ লেখার সময় সেই মানুষটার মনের অবস্থা কল্পনা করেই আরিন্তা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। সে মিশকাতের আইডিতে ঢুকল। এখনকার কোনো পোস্ট-ও নেই। তবে কি সে এখন আর এই আইডি চালায় না? অবশ্যই না চালানোই স্বাভাবিক। আরিন্তার মতো দৃষ্টিতে পড়ার ভয় হয়তো তার মনেও আছে। অনেকক্ষণ আরিন্তা মিশকাতের আইডি ঘাঁটাঘাঁটি করে আগের পোস্ট দেখল, ছবি দেখল। সেসব সময়গুলোতে কতই না খুশি ছিল মানুষটা! আর এখন? কথা না হলেও তাকে হারানোর পরের অবস্থা আরিন্তার অজানা নয়। মানুষটাকে সে ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে।

নিয়াজ টেবিলে বসে আবিরের ল্যাপটপ ঘাঁটাঘাঁটি করে কী সব দেখছিল। আরিন্তাকে সে ঠিকই খেয়াল করেছে। তবু ‘টু’ শব্দটি করেনি। নিজে-নিজে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে থামার পর আরিন্তা হঠাৎ গলা তুলে ডাকল,
“শুনুন?”
নিয়াজ চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। আরিন্তা বলল,
“এদিকে আসুন।”

অতিশয় অবাক হয়ে নিয়াজ চেয়ার ছেড়ে উঠে যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেল। আরিন্তা তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল,
“তোমার কি মাথাব্যথা করছে?”
“আপনার কি আমাকে দেখলেই মনে হয় আমার মাথাব্যথা করছে? না কি এটা আপনার আমাকে যখন-তখন ঔষধ গেলানোর ধান্দা? আপনাকে না বলেছি আপনার ডাক্তারি ঘরে টিকবে না?”
“যখন-তখন কান্নাকাটি করতে দেখলে মনে তো হবেই। আমার ডাক্তারির আর কী দোষ?”
“আপনার মাথাব্যথার কী অবস্থা তা বলুন।”

নিয়াজের হাতটা অটোমেটিক চলে গেল তার মাথার পেছন দিকে। আঘাতটা জোরেশোরেই লেগেছিল কাল। এখনও হালকা ব্যথা আছে। সে উত্তর দিলো,
“ব্যথা নেই।”
“ব্যথা আছে। আপনি লুকাচ্ছেন। গতকাল আপনাকে আঘা’ত করার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে অমন রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি। সরি।”
“আরে সরি বলার কিছু নেই। আমি ঠিক আছি। বাদ দাও তো।”

হেসে উড়িয়ে দিয়ে কথাটা বলে সে চেয়ারে ফিরে যাওয়া ধরলে আরিন্তা বলে উঠল,
“আমি আপনাকে এখানে ডেকে এনেছি, চলে যেতে তো বলিনি।”
নিয়াজ থেমে গিয়ে শুধাল,
“পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?”
“না। আপনার সাথে কথা আছে। বসুন এখানে।”
“কী কথা?”
“জরুরী কথা।”
নিয়াজ বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“আমার সাথেও তোমার জরুরি কথা থাকে? কী দিন এল!”
আরিন্তা বিরক্ত হয়ে বলল,
“শুনবেন তো আগে।”
“ল্যাপটপটা বন্ধ করে আসছি।”

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে