#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
২১.
মিশকাতের ফোন থেকে তার রুমমেট কল করেছে সুবর্ণাকে। ছেলেটার সাথে আগেও মিশকাত সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। নাম সৈকত। বয়সে মিশকাতের দুই-এক বছরের ছোটো। মিশকাতের আগেই সে আমেরিকা গিয়েছিল। মিশকাতকে রুমমেট হিসাবে পাওয়ার পর থেকে ছেলেটা মিশকাতকে বড়ো ভাইয়ের মতো মেনে চলে। গতকাল থেকে মিশকাতকে বারবার করে ফোন করেও না পেয়ে সুবর্ণা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। সৈকতের ফোন পেয়ে যেন রুহে পানি ফিরল সুবর্ণার। সৈকত তার খবরাখবর জিজ্ঞেস করল। সুবর্ণা জানতে চাইল,
“ভাইয়া কোথায় সৈকত ভাইয়া? গতকাল থেকে ফোন ধরছে না।”
সৈকত বলল,
“ভাইয়ের কথা বলতেই ফোন করলাম তোমায়। তোমাদের বাড়িতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“হ্যাঁ।”
“কী হয়েছে? সিরিয়াস কিছু?”
“আমার খালাতো বোনের সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক ছিল। গত পরশু আপুর বিয়ে হয়ে গেছে।”
সৈকত একটু অবাক হলো। এক মেয়ের সাথে মিশকাতের গভীর প্রেমের খবর তার অজানা নয়। রুমমেট হওয়ার সুবাদে মিশকাতকে সবসময় সে ফোনে কথা বলতে বা ম্যাসেজ করতে দেখেছে। মিশকাত তার কাছে অস্বীকার-ও করেনি। কয়েকদিন সে ভিডিয়ো কলে কথাও বলেছিল আরিন্তার সাথে। মিশকাত কথা বলার সময় তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সে বুঝত মিশকাত-আরিন্তার একে অপরের প্রতি ভালোবাসাটা খাঁটি। সুবর্ণার মুখে হঠাৎ এমন সংবাদ শুনে সৈকত যারপরনাই অবাক হলো। বলল,
“কী বলো! আরিন্তা আপুর বিয়ে হয়ে গেছে? এটা কীভাবে সম্ভব?”
“আপনি চেনেন আপুকে?”
“হুম, ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। আপু হঠাৎ ভাইয়াকে রেখে বিয়ে করে নিল কেন?”
“আপুর দোষ নেই। তাকে জোর করে রাজি করানো হয়েছে। ওসব অনেক কাহিনি। আমি আপনাকে পরে বলব। আপনি আগে ভাইয়ার খবর বলুন। ভাইয়া কী করছে? বাসায় ফিরেছে?”
“আমরা হসপিটালে আছি।”
সুবর্ণা আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করল,
“হসপিটালে কেন? ভাইয়া কিছু করেছে না কি?”
“সে কিছু করেনি। গতকাল রাতে হঠাৎ প্রেশার অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আমি একা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছি।”
“এখন কেমন আছে?”
“এখন একটু ভালো আছে। কিন্তু ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত।”
সুবর্ণা চিন্তিত মুখে বলল,
“ভাইয়া অনেক বড়ো একটা ধাক্কা খেয়েছে। আপাতত কদিন হয়তো একটু বেশি মানসিক চাপে থাকবে। একটু দেখে রাখবেন ভাইয়া। আমরা অনেক ভয়ে আছি তাকে নিয়ে।”
“ভয়ের কিছু নেই। ভাইয়া সুস্থ হলেই দেখবে আবার তোমাদের সাথে কথা বলবে। আমি খেয়াল রাখব, চিন্তা কোরো না। আর চাচা-চাচিকে এসব জানিয়ো না। তারা আরও চিন্তায় পড়ে যাবে।”
“ঠিক আছে। আপনি একটু বুঝাবেন ভাইয়াকে। মা চিন্তায় খেতে পারছে না ঠিকমতো।”
“সমস্যা নেই, আমি আছি তো। ভাইয়াকে একটু সময় দাও তোমরা। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা কি বিয়েতে গিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ, না গিয়ে উপায় আছে?”
“এখন কোথায় আছো?”
“আমি ওইদিনই বাড়ি চলে এসেছিলাম। বাবা-মা আজ এসেছে।”
বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানের পর আরিন্তা বাবার বাড়িতে এসেছে আজ দুদিন হলো। নিয়াজ আর থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে হসপিটাল থেকে তার ডাক পড়ে গেছে। আগামীকাল সকালেই সে চলে যাবে। পুলক তালুকদার বলেছেন আরিন্তা যেন আর কটা দিন থেকে যায়। নিয়াজ নিতে আসতে না পারলে পেলব নিজে তাকে নিয়ে যাবে। নিয়াজ বলেছে আরিন্তা থাকতে চাইলে থাকবে, তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আরিন্তা এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি। শুনেও চুপ ছিল। পেলবের সাথে বাইরে গিয়েছিল নিয়াজ। ফিরে দেখল আরিন্তা মেঝেতে বসে ব্যাগ গোছাচ্ছে। ব্যাগ গোছানোর ধরণ দেখে সে ভ্রুকুটি করল। শাড়ি, চুড়ি, হ্যান্ডব্যাগ, টুকটাক অনেক জিনিসপত্র ছোটো একটা ব্যাগে ঠেসে-ঠেসে ঢুকাচ্ছে আরিন্তা। তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে নিয়াজ এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কী করছো?”
আরিন্তা উত্তর দিলো,
“মিশু ভাইয়ের থেকে পাওয়া উপহার এগুলো। এখানে ফেলে রেখে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমার কাছে রেখে দিবো।”
“এগুলো নিয়ে যাবে?”
“কেন? আপনার আপত্তি আছে?”
“তা বলিনি।”
আরিন্তা হাতের ব্যাগটা সরিয়ে রেখে লাগেজ খুলে বসল। আলমারি থেকে একে-একে জামাকাপড় নামাতে দেখে নিয়াজ বলল,
“এসব তো যাওয়ার আগেই গোছাতে পারবে। এত তাড়াতাড়ি গোছাতে লাগলে কেন?”
“তাড়াতাড়ি কোথায়? কাল সকালে রওয়ানা দিবেন না?”
“কাল আমি যাচ্ছি, তুমি তো যাচ্ছ না।”
“কেন?”
“তোমাকে না বাবা আরও কদিন থেকে যেতে বলল?”
আরিন্তা নির্লিপ্তভাবে উলটা বলে বসল,
“আমি কি একবারও বলেছি আমি থাকতে চাই?”
নিয়াজ অবাক হয়ে শুধাল,
“তাহলে? তুমি কি আমার সাথে চলে যেতে চাইছ?”
“অবাক হওয়ার কী আছে? বিয়ের পর কি মেয়েরা বাবার বাড়িতে পড়ে থাকে?”
“না, তবে প্রথম-প্রথম তো সবারই বাবার বাড়িতে থাকতে ইচ্ছা করে।”
“সবার মতো বিয়ে কি আমার হয়েছে?”
নিয়াজ চুপ হয়ে গেল। আরিন্তা পুনরায় বলল,
“রোজ-রোজ কা’টা ঘায়ে নুনের ছিটা পেতে রেখে যেতে চাইছেন আমাকে?”
নিয়াজ এতক্ষণে বুঝল আরিন্তা কেন চলে যেতে চাইছে। এখানে থেকে সে রোজ তার বাবা-ভাইয়ের মুখোমুখি হতে চায় না। তার সাথে যা হয়ে গেছে, এরপর এখানে থাকলে হয়তো তার মনে আরও খারাপ প্রভাব পড়বে। এসব চিন্তা করে নিয়াজ বলল,
“ঠিক আছে। তোমার বাবাকে তবে বলে দিচ্ছি আমি তোমাকে সাথে নিয়েই যাব।”
আরিন্তা বাঁধা দিয়ে বলল,
“আমি শুধু মাকে বলেছি। আপনাকে মিথ্যা অজুহাত দেখাতে হবে না। বাবাকে আমিই বলতে পারব।”
“কী বলবে?”
“সত্য কথাই বলব। আমার এখানে থাকার ইচ্ছা নেই।”
“এভাবে বললে তারা কষ্ট পাবে।”
“আমার কষ্টের দায় কে নিয়েছে যে, আমি কারো কষ্টের দায় নেব?”
“তবু তারা তোমার আপনজন?”
“আমিও তাদের আপনজন ছিলাম। কই? আমার কথা তো কেউ ভাবেনি।”
“কিন্তু-”
“আপনাকে একটা অনুরোধ করি? দয়া করে আপনি তাদের হয়ে আমার কাছে সুপারিশ করবেন না। আমি শুধু একজনের ভালোবাসা হারাইনি। তিনজনের ভালোবাসা হারিয়েছি। ভালোবাসা বলতে আমি আজীবন সেই তিনজনকেই বুঝেছি। অথচ আজ তারা কেউ আর আগের মতো নেই। একজনকে আমি নিজে ঠকিয়েছি, বাকি দুজন আমাকেই ঠকিয়ে দিয়েছে। এই ঠকানোর, ঠকে যাওয়ার যে কী ব্যথা, আপনি তা বুঝবেন না। আমার পরিস্থিতি শুধু আমিই জানি।”
আরিন্তার চোখের কোণে এক ফোঁটা জল জমেছে। তা গড়িয়ে পড়ার আগেই সে মুছে ফেলল। নিয়াজ ব্যথিত চোখে চেয়ে থেকে বলল,
“সরি। তোমার যা ভালো মনে হয় করো।”
মেরিনা দুটো বাটিতে চটপটি নিয়ে এসেছে আরিন্তা আর নিয়াজের জন্য। আরিন্তাকে লাগেজ গোছাতে দেখে তিনি নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। অনেক করে বলেছিলেন কটা দিন থেকে যেতে। কিন্তু মেয়েটা নারাজ। কিছুতেই থাকবে না সে। চটপটি দেখে আরিন্তা শুধাল,
“চটপটি কখন বানালে?”
“আমি বানাইনি। তুই খেতে পছন্দ করিস তাই পেলব নিয়ে এসেছে।”
আরিন্তা চটপটির বাটি হাতে তুলে-ও রেখে দিলো। শান্ত স্বরে বলল,
“মা, আমার পছন্দ, অপছন্দের কথা আর কাউকে ভাবতে বারণ করে দিয়ো প্লিজ। আমার পছন্দের এত মূল্যায়ন আমি নিতে পারছি না।”
মেয়ে জামাইয়ের সামনে মেরিনা একটু অস্বস্তি বোধ করলেন। আরিন্তাকে পালটা কিছু বলতেও পারলেন না। যাওয়ার আগে শুধু নিয়াজকে বলে গেলেন,
“ঠান্ডা না হতে খেয়ে নাও বাবা। আরিকেও খেতে বোলো।”
এ বাড়িতে এসে হতেই নিয়াজ খেয়াল করেছে পেলব সবসময় আরিন্তার সাথে ভাব জমাতে চায়। কথা বলার জন্য আশেপাশে ঘুরঘুর করে, নানান অজুহাত খোঁজে। কিন্তু আরিন্তা কথা বলা তো দূর, ভাইয়ের ছায়া-ও মাড়াতে চায় না। পেলব যখনই বাইরে যায় পূর্বের স্বভাব বশত বোনের জন্য এটা-ওটা খাবার নিয়ে আসে। পূর্বে খাবারের ওপর হামলে পড়া আরিন্তা এখন ভাইয়ের আনা সেসব খাবার ছুঁয়েও দেখে না।
নিয়াজ একটা বাটি পুনরায় আরিন্তার হাতে দিয়ে বলল,
“খাবারের সাথে রাগ কোরো না। কাল তো চলেই যাবে। আজ ফিরিয়ে দিয়ো না, খেয়ে নাও। পেলব তো তোমার জন্যই এনেছে।”
আরিন্তা নিজেরটাসহ অপর বাটিটাও নিয়াজের দুই হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“দুটোই আপনার। খেয়ে নিন। আপনার আদরের শালাবাবু এনেছে বলে কথা!”
“আমি বাইরের খাবার এতটা খাই না।”
“এ বাড়িতে এলে খাবেন। আসার সময় ডাক্তারিটা হসপিটালে তুলে রেখে আসবেন। তাহলেই দেখবেন নির্দ্বিধায় বাইরের খাবার খেতে পারবেন।”
“ডাক্তারি তুলে রাখে কীভাবে?”
“সেটা আপনার ব্যাপার।”
“পরামর্শ তো তুমি দিলে।”
“পরামর্শ কাজে লাগাতে হয় নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে। সবই যদি পরামর্শদাতা বলে দেয়, তবে আপনার মগজের কী কাজ?”
“ও…আচ্ছা।”
পরিবারের কোনো কথাই আরিন্তাকে আটকাতে পারেনি। নিয়াজের সাথেই সে শশুরবাড়ি ফিরে এসেছে। নিয়াজ বাড়ি ফিরেই হসপিটালে ছুটেছে। আতাউর রহমান আজ শান্তিতে আরিন্তার সাথে গল্প করার সুযোগ পেয়েছেন। সন্ধ্যায় আরিন্তাকে ড্রয়িংরুমে ডেকে গল্প করতে বসেছেন। আরিন্তা নিজের হাতে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। দুজন চা খেতে-খেতে গল্প করছে। সামনে টিভিতে খবর চলছে, সেদিকে কারোর মনোযোগ নেই। আতাউর রহমান তার যুবক বয়সের গল্প করছেন। আরিন্তা বেশ আগ্রহ নিয়ে তার গল্প শুনছে। আতাউর রহমানের বন্ধুসুলভ মানসিকতা আরিন্তার ভালো লাগছে। বাবাসম শ্বশুর-ও যে বন্ধুর মতো পুত্রবধূর সঙ্গে আলাপ জমাতে পারে, আতাউর রহমানকে না দেখলে আরিন্তার বিশ্বাস হত না। তিনি যখন নিজের যুবক বয়সের কাহিনি বলছেন, আরিন্তার তখন মনে হচ্ছে তাদের মধ্যে বয়সের তফাত নেই। মনের দিক থেকে দুজন সমবয়সী। তাই তো লোকটা নির্দ্বিধায় এত কথা বলতে পারছেন। আতাউর রহমান কথায়-কথায় নিয়াজের মায়ের কথাও বলল। আরিন্তা আঁচ করতে পারছে লোকটা স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। আতাউর রহমান আরিন্তাকে বললেন তার সাথে রুমে আসতে। আরিন্তার পাওনা কিছু জিনিস না কি তার হেফাজতে আছে। আরিন্তা বুঝতে পারল না এখানে তার পাওনা কী আছে। আতাউর রহমানের সাথে সে তার রুমে গেল। আতাউর রহমানের ঘরে দুটো আলমারি। একটা পুরোনো, আরেকটা নতুনের মতো। আরিন্তার হাতে চাবি গুঁজে দিয়ে তিনি তাকে পুরোনো আলমারিটা খুলতে বললেন। আরিন্তা ইতস্তত বোধ করে বলল,
“আপনিই খুলুন না।”
“সমস্যা নেই, খোলো। ভেতরে যা আছে সব তোমার। এই আলমারির মালিকানা-ও এখন তোমার।”
আরিন্তা আলমারি খুলল। আলমারি ভর্তি নানান রকমের শাড়ি। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বুঝল শাড়িগুলোর মালিকানা নিয়াজের মায়ের। মহিলা এত শাড়ি দিয়ে কী করেছে? আতাউর রহমান আরিন্তার চোখের প্রশ্ন বুঝে হাসলেন। নিজেই বললেন,
“নিয়াজের মায়ের নতুন শাড়ি কেনার খুব শখ ছিল। জুয়েলারি থেকে শাড়ি বেশি পছন্দ ছিল। হাতে টাকা পেলেই সে আগে নতুন ডিজাইনের শাড়ি খুঁজে কিনে রাখত। আমিও তাই সবসময় শাড়ি উপহার দিতাম। আমার থেকে উপহার হিসাবে শাড়ি পেলেই সে সন্তুষ্ট থাকত। এমন করে-করে আলমারি ভর্তি হয়ে গেছে। কিছু শাড়ি সে তার আপনজনদের উপহার-ও দিয়েছে। আমি যখন জিজ্ঞেস করতাম এত শাড়ি কে পরে শেষ করবে। সে বলত তার ছেলের বউ পরবে।”
“এত শাড়ি সব পরেছিল সে?”
“হুম। এই মহিলার ধৈর্য সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই। এই আলমারিতে এমন কোনো শাড়ি নেই যেটা সে না পরে রেখে দিয়েছে। নতুন শাড়ি কিনেই সে একবার হলেও তা পরেছে। অনেক সময় তো অবসর পেলে বাড়িতেও শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াত। শাড়িতে তাকে সুন্দর-ও লাগত। খুব গুছিয়ে শাড়ি পরতে জানত সে।”
আরিন্তা চোখ ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে শাড়ি দেখছে। প্রতিটি শাড়ির ডিজাইন নজর কাড়া। নিয়াজের মায়ের পছন্দ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বলতে হয়। আতাউর রহমান জানতে চাইলেন,
“পছন্দ হয়েছে তোমার?”
“অনেক সুন্দর সব কালেকশন। অপছন্দের কারণ নেই।”
“ঠিক আছে। তাহলে আজই খলিলকে দিয়ে এগুলো তোমাদের রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”
“এত শাড়ি দিয়ে আমি কী করব?”
“তুমি কী করবে সেটা তোমার ব্যাপার। আমার দায়িত্ব তোমাকে তোমার মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া, দিলাম।”
“এগুলো সরালে তো এই আলমারিটা ফাঁকা পড়ে থাকবে।”
“তা ঠিক বলেছ। পুরোনো হলেও এটা একটা স্মৃতি। কিন্তু পুরোনো আলমারি তো তোমাদের কাজে আসবে না।”
“কাজে লাগালেই কাজে আসবে। পুরোনো হলেও আলমারিটার রং নষ্ট হওয়া ছাড়া ফেলে দেওয়ার মতো তেমন বেশি ক্ষতি হয়নি। ইচ্ছা করলে এটাকে নতুন করে রং করে এনে ব্যবহার করা যাবে।”
আতাউর রহমান শুধালেন,
“তুমি এটা ব্যবহার করতে চাও?”
“শাড়িগুলো সরিয়ে নিয়ে আলমারিটা ফেলে দিলে শাড়িগুলোর অভিমান হবে। এত বছর এই পুরোনো আলমারিটাই তো এগুলো যত্নে রেখেছে। আমি শাড়ি নিলে আলমারিসহ-ই নেব।”
আতাউর রহমান খুব সন্তুষ্ট হলেন। তিনি ভেবেই রেখেছিলেন আরিন্তাকে শাড়ি হস্তান্তর করে অকেজো আলমারিটা সরিয়ে ফেলবেন। এ যুগের ছেলে-মেয়েরা কী আর এত পুরোনো আসবাবপত্র ব্যবহার করতে চাইবে? আরিন্তার কথা শুনে তার ভীষণ খুশি লাগছে। শত হলেও এটা তার প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রিয় স্মৃতি। তিনি বললেন,
“তোমার চিন্তা-ভাবনা দেখে আমার যে কী শান্তি লাগছে মা। নিয়াজ সত্যিই সঠিক মানুষ পছন্দ করে এনেছে। খলিলকে আমি আজই বলছি আলমারি সারাতে নিয়ে যেতে।”
আরিন্তা আজ রান্না করেছে। কাজের মেয়েটাই সবসময় রান্না করে। কিন্তু তার হাতের রান্না আরিন্তার ভালো লাগেনি। তার মনে হয়েছে এর চেয়ে তার রান্নার স্বাদ কিছুটা হলেও ভালো। সারাদিন বসে থেকেও তার বিরক্তি ধরে যায়। এর চেয়ে রান্না করলে অনেকটা সময় কে’টে যাবে। কাজের মেয়েটা রান্নার সবকিছু গুছিয়ে দিয়েছে। তাই রান্না করতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। নিয়াজের দুপুরের খাবার বাইরেই খেতে হয়। আরিন্তার রান্নার খবর তার অজানা। রাতের খাবার খেতে বসে খাবারের পদ দেখে সে একটু অবাক হলো। কাজের মেয়েটা সাধারণত এত পদ রান্না করে না। তাড়াহুড়া করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রান্না শেষ করে টুকটাক কাজ করেই বিদায় হয় সে। আজকের খাবার দেখতেও অন্যরকম লাগছে। আরিন্তা চুপচাপ খাবার পরিবেশন করছিল। আতাউর রহমান দুপুরেই আরিন্তার হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছেন। বাড়িতে বসে সবসময় এভাবে তৃপ্তি করে খাওয়া হয় না তাদের। আরিন্তার রান্নার হাত মোটামুটি ভালো। চেষ্টা করলে আরও ভালো হবে নিশ্চিত। নিয়াজ খাওয়া শুরু করে বুঝল আজকের খাবারের স্বাদ আলাদা। সে আরিন্তাকে শুধাল,
“আজ কি তুমি রান্না করেছ?”
আরিন্তা মাথা ঝাঁকাল। নিয়াজ বলল,
“এজন্যই আজ অন্যরকম লাগছে।”
আতাউর রহমান ছেলেকে প্রশ্ন করলেন,
“কেমন লাগছে?”
“ভালো।”
“আমাদের বাড়িতে তাহলে এখন থেকে আবার তৃপ্তি করে খাওয়ার দিন ফিরল। কী বলিস?”
নিয়াজ উত্তর না দিয়ে কেবল মৃদু হাসল। সে জানে না আরিন্তা আদৌ এই সংসারটাকে নিজের করে নিবে কি না। আতাউর রহমান পুনরায় বললেন,
“আজ আমার সবকিছু কেমন অন্যরকম লাগছে, জানিস? তোর মা চলে যাওয়ার পর থেকে এই সংসারে বিরাট একটা শূন্যতা অনুভব করেছি। আজ মনে হচ্ছে সেই শূন্যতা অনেকখানি ঘুচে গেছে। মানতেই হবে কপাল করে বউমা পেয়েছি।”
নিয়াজ এবারেও হাসল। আরিন্তা আসার পর থেকে তার কাছেও বাড়ির পরিবেশটা অন্যরকম লাগছে। কিন্তু বাবার মতো সে প্রকাশ করতে পারছে না। সম্পর্কটা ঠিক থাকলে সবকিছু হয়তো আরও অন্যরকম হতে পারত। আরিন্তা চামচে একটু মাংস তুলে বলল,
“বাবা, আরেকটু মাংস নিন।”
আতাউর রহমান বললেন,
“আমার আর লাগবে না মা। নিয়াজকে দাও। বাইরের খাবার খেতে-খেতে ওর রুচি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার আগে ওর খাবারের দিকে নজর রেখো তুমি।”
চামচে তোলা মাংসটুকু আরিন্তা নিয়াজের প্লেটে দিলো। জিজ্ঞেস করল,
“আর কিছু লাগবে?”
নিয়াজ বলল,
“আমি নিয়ে নেব। তুমি খাও।”
মিশকাতের দেওয়া ফোনটা পেলব মেরিনার কাছে রেখে দিয়েছিল। ফেরার সময় মেরিনার কাছ থেকে আরিন্তা সেটা নিয়ে এসেছে। যদিও পেলব বারণ করেছিল দিতে। কিন্তু মেরিনা শোনেননি। আরিন্তা নিশ্চিত ছিল ফোনের সবকিছু পেলব মুছে দিয়েছে। ফোন চালু করার পর দেখল সত্যিই সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছে। সমস্ত ছবি, চ্যাটিং ডিলিট করে মিশকাতকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে। ফোনটা এখন একদম নতুনের মতো। আরিন্তা নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তার যে গুগল ব্যাকআপ আছে সে খবর হয়তো পেলব জানত না। হতে পারে খেয়ালও ছিল না। আরিন্তা ছবিগুলো ব্যাকআপ করেছে। নিয়াজ এখনও জানে না সে ফোন নিয়ে এসেছে। রাতের খাবারের পর নিয়াজ রুমে ফিরেই ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দায় চলে গেছে। হয়তো সে আরিন্তাকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না। আরিন্তা চুপচাপ শুয়ে গ্যালারি ঘেঁটে পুরোনো ছবিগুলো দেখছিল। গ্যালারি জুড়ে মিশকাতের যত স্মৃতি। একেকটা ছবি আরিন্তাকে একেক মুহূর্তের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতিচারণা করতে-করতে তার বুকের ভেতর টনটন করে ব্যথা ধরে যায়। চোখ দুটো বিনা বাঁধায় অশ্রু বিসর্জন দেয়। এক মুহুর্তের জন্য মিশকাতের মুখটা তার মন থেকে মোছে না। মস্তিষ্ক এক মুহুর্তের জন্য ওই নামটা ভোলে না। স্মৃতিরা এক মুহুর্তের জন্য শান্ত থাকে না। নিঃশব্দে কাঁদতে-কাঁদতে আরিন্তা ভুলে যায় নিজের অবস্থান। অজান্তেই তার নীরব কান্না ফুঁপিয়ে ওঠে। আরিন্তার গুনগুন কান্নার আওয়াজ নিয়াজের কানে পৌঁছায় খানিক বাদে। তার ল্যাপটপে চালানো আঙুল থেমে যায়। স্থির হয়ে ঠাঁয় বসে স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ শোনে সে। তবু জায়গা থেকে নড়ে না। কান্নারত স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে শান্ত করার মতো সম্পর্ক তার নেই। তার অধিকার আছে, তার চেয়ে বেশি আছে বাঁধা। আরিন্তার সামনে আছে সুউচ্চ অদৃশ্য দেয়াল। দেয়াল টপকে আরিন্তাকে ছোঁয়ার মানসিকতা নিয়াজের নেই। দুজনের মাঝের দেয়ালটা না ভাঙা অবধি তার সমস্ত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষারা চাপা পড়েই থাকবে। নিয়াজ অপেক্ষায় আছে কোনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে আরিন্তার চোখে তার জন্য বিশেষ অনুভূতি দেখার। কিন্তু সে জানে না ঠিক কবে, কখন তার সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত আসবে; কিংবা আদৌ আসবে কি না।
আরিন্তার কান্নার শব্দ কমে এলে নিয়াজ রুমে এল। আরিন্তার দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়ল আরিন্তার হাতের ফোনটার ওপর। তার দেওয়া ফোনটা টেবিলের ওপর দেখা যাচ্ছে। আরিন্তা তাকে বলেছিল মিশকাতের দেওয়া ফোনটা পেলবের কাছে আটকা আছে। এবার যে আরিন্তা সেটা নিয়ে এসেছে তা তার জানা ছিল না। নিয়াজ প্রশ্ন করতে গিয়েও করল না। ওই ফোনে এমন কী দেখে আরিন্তা এভাবে কাঁদতে পারে, তা বুঝার মতো জ্ঞান তার আছে। তাকে দেখে আরিন্তা ফোন রেখে চোখ মুছে ফেলল। তারপর ওপাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে রইল। নিয়াজ ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠল,
“আরিন্তা, জানি তুমি তোমার কষ্টের জ্বালায় কাঁদো। কিন্তু কাঁদলে তো আর কোনোকিছু ঠিক হবে না। বাস্তবতা বুঝতে হবে।”
“কোন বাস্তবতা বুঝতে বলছেন আপনি আমায়? মিশু ভাইকে ভুলে আপনাকে ভালোবাসতে হবে?”
“আমি বললেই কি তুমি তা করবে?”
“না।”
নিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তাহলে অন্তত নিজেকে এত কষ্ট দিয়ো না। শক্ত হও। পরিস্থিতির কাছে সমস্ত আবেগ হারিয়ে ফেলো না। সবকিছু আগের মতো না হলেও নিজেকে ভালোবাসতে ভুলো না।”
চলবে, ইন শা আল্লাহ্।
#বিরহবিধুর_চাঁদাসক্তি
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
২২.
বিয়ের পর থেকে আরিন্তার সাথে সুবর্ণা বা খালা-খালুর যোগাযোগ হয়নি। ফোন করার সাহস সয়নি তার। ফোন করলেই না জানি তারা কী খবর দিয়ে বসে। তাদের কাছে নিজেকে দোষী-ও মনে হয় তার। মা ফোন করলেই তাদের খবরাখবর জানতে চায় সে। কিন্তু সন্তুষ্ট হওয়ার মতো তেমন কোনো খবর সে মায়ের কাছে পায় না। মেরিনা ফোন করলে তারা না কি এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলে না। মেরিনা ফোন করে সুবর্ণাকে অনেকবার বাড়ি আসতে বললেও সে আসতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে মেরিনা নিজেই গিয়ে তাদের দেখে এসেছে। আয়েশা মুখে কিছু না বললেও ছেলের চিন্তায় দিন-রাত এক করে ফেলেছে, তা বোনের শুকনা মুখ দেখেই মেরিনার বুঝা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কথা তিনি আরিন্তাকে জানাননি। বিয়ের আগে দুদিন পরপর খালার বাড়ি ছুটে যাওয়া আরিন্তার পক্ষে বেশিদিন মন শক্ত করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আজ সকাল থেকেই তার মনটা বড্ড উতলা হয়ে আছে। বারবার খালার কথা মনে পড়ছে। সুবর্ণার পার্লারের খবর শুনতে ইচ্ছা করছে। অনেকদিন মেয়েটা উচ্ছাসিত মুখে বলছে না,
‘আপু জানো? আজ আমার এত জন কাস্টমার হয়েছে। সারাদিন ভীষণ চাপে ছিলাম, কিন্তু এখন আনন্দ হচ্ছে। কী খেতে চাও বলো। এই খুশিতে তোমাকে ট্রিট দেওয়া বাঞ্ছনীয়।’
সারাদিন ফোন করব-করব করেও মনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে আরিন্তার ফোন করা হলো না। অবশেষে সন্ধ্যায় সে সুবর্ণার নাম্বারে কল করল। প্রথমবারেই সুবর্ণা রিসিভ করল। তাকে কোনোরকম অস্বস্তিতে না ফেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই খোঁজখবর নিল। আরিন্তা জানতে চাওয়ার আগেই নিজের পার্লারের খবর জানাল। আরিন্তা খালা-খালুর কথা জানতে চাইলে সুবর্ণা জানাল তারা ভালো আছে। সুবর্ণা আরিন্তার শশুরবাড়ি নিয়ে নানান প্রশ্ন করছে। তার এমন স্বাভাবিক আচরণ আরিন্তার কাছে খুবই অস্বাভাবিক লাগছে। সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে মেয়েটা নিজের আসল অনুভূতি লুকাচ্ছে। স্বাভাবিক আলাপের আড়ালে অনেক অস্বাভাবিকতা লুকিয়ে রেখেছে। সে এমন কোনো কথা ভুলেও মুখে আনতে চাইছে না যাতে আরিন্তা অস্বস্তিতে পড়বে। অনেকটা সময় আলাপের পরও সুবর্ণা নিজে থেকে মিশকাতের নাম না তোলায়, আরিন্তা নিজেই কিছুক্ষণ হাঁসফাঁস করে শুধাল,
“মিশু ভাই কেমন আছে সুবর্ণা?”
“ভালো।”
“কাজ কেমন চলছে?”
“আগের মতোই।”
“আমার কথা কিছু বলে?”
সুবর্ণা খানিক সময় নিয়ে উত্তর দিলো,
“না।”
“সত্যি?”
“আপু, একটা কথা বলি, কিছু মনে কোরো না। বিয়েটা যেভাবেই হোক, তোমার এখন স্বামী আছে। তাকে তুমি অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ তার কোনো দোষ নেই। তোমার মনে যা-ই চলুক। ওই সংসারকে তোমায় নিজের করে নিতে হবে। জানো তো? মেয়েদের সংসার হলে তারা কোনোভাবেই সংসারের ওপরে অন্য কোনো ভাবনা রাখতে পারে না। নিজের অজান্তেই সবকিছু্ সংসারের পরে চলে যায়। হয়তো তুমি আমাকে নির্দয় ভাববে। তবু আমার পরামর্শ থাকবে, সময় যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দাও। নিজের মনকে মুক্তি দাও। এখন তুমি কী চাও সেটা অবশ্য তোমার ব্যাপার।”
আরিন্তার চোখ ভরে উঠল টলমলে জলে। ধরা গলায় বলল,
“মিশু ভাই কি আমাকে ক্ষমা করবে না সুবর্ণা?”
“করবে না কেন? তোমার তো ভুল ছিল না।”
“ক্ষমা করলে তো আমার খবর নিত।”
“খবর নেওয়া কি উচিত? তুমি আমার ভাইকে চেনো না? তোমার বিবাহিত জীবনে ধ্বস নামানোর মতো কোনো কাজই সে করবে না।”
“বিবাহিত জীবন? মিশু ভাই সত্যিই চাইছে আমি অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নিই?”
“এক্ষেত্রে তার চাওয়া, না চাওয়ায় কিছু আসে যায় না। যে ইতোমধ্যে তোমার স্বামী হয়ে গেছে, তাকে তুমি অস্বীকার করবে কীভাবে? জীবনে বিয়ে কতবার হয়, বলো? তাকে ছেড়ে দিলেও কি তুমি বা ভাইয়া আগের শান্তিটা খুঁজে পাবে? পাবে না। বরং তোমাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।”
“শান্তি আমি এই জীবনে আর পাব না রে। সেই আশা চিরতরে ম’রে গেছে। পৃথিবীতে অহরহ মেয়েদের ভালোবাসা বদলে যাচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে ধরে রাখতে না পেরে। তারা বাধ্য হচ্ছে জীবনের সাথে জুড়ে যাওয়া পরবর্তী মানুষটিকে ভালোবাসতে। কিন্তু আমি পারব না সুবর্ণা। বিশ্বাস কর, মিশু ভাইয়ের জায়গা আমি এই জীবনে কাউকে দিতে পারব না।”
“আপু, সময় সবকিছু বদলে দেয়। দেখবে, আজ থেকে এক বছর পরে গিয়ে এই পরবর্তী মানুষটাই তোমার একমাত্র ভরসার জায়গা হয়ে উঠবে। মিলিয়ে নিয়ো আমার কথা।”
“আমি পারব না। কোনোভাবেই পারব না। আমার মনে সেই জায়গাটাই নেই রে। মিশু ভাইকে দেওয়া সমস্ত কথা আমি কী করে ভাঙব?”
আরিন্তা হেঁচকি তুলে কাঁদছে। সুবর্ণা ভেজা চোখে বলল,
“আপু, তোমার মনে যা চলে আমাকে বলতে পারো সবসময়। আমি তোমাকে আটকাব না। কিন্তু তুমি তোমার জীবনকে এক জায়গায় আটকে রাখতে পারবে না। আমি বলছি না তোমায় আমার ভাইকে ভুলে যেতে। সেই অধিকার আমার নেই। কিন্তু তার কথা জানতে চেয়ো না। তুমি যেমন তোমার মতো থাকছো, তাকেও তার মতো থাকতে দাও। তোমার মনের কথা বলার মানুষ আছে, কিন্তু আমার ভাইটার নেই। তোমার মতো ইচ্ছা করলেই সে আমাদের ফোন করে কেঁদে-কেঁদে মনের ব্যথা প্রকাশ করতে পারে না। তোমার বিয়ের এক মাস হতে চলল। আজ পর্যন্ত ভাইয়া আমাদের নিজের মনের কথা বলেনি। আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস-ও করি না। কী দরকার কা’টা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার? সময় যেভাবে চলছে চলুক না। একটা সময় ঠিকই সবকিছু বদলে যাবে।”
“এসব এত সহজ নয়।”
“জানি, তবু তোমায় সহজ থাকতে হবে। আমি তোমাকে ভালো দেখতে চাই আপু। প্লিজ নিজেকে সুযোগ দাও। তুমি ভালো থাকলে আমার ভাই-ও ভালো থাকবে।”
“আমাকে মিথ্যা বুঝানোর চেষ্টা করিস না সুবর্ণা। আমি জানি তোর ভাই ভালো নেই। মিশু ভাই ভালো থাকতে পারবে না, সে আমি যেমনই থাকি।”
সুবর্ণা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রসঙ্গ পালটানোর চেষ্টা করে বলল,
“ভিডিয়ো কল দিই। তোমার শশুরবাড়ি দেখাও একটু।”
“কাল দিনের বেলায় দেখিস। এখন রাখছি, কাল ফোন করব নে আবার।”
“মায়ের সাথে কথা বলবে না?”
“কাল বলব।”
“আচ্ছা, রাখো তাহলে।”
আরিন্তা ফোন কে’টে দিলো। একা ঘরে নীরবে অনেকটা সময় কাঁদার পর টের পেল মাথাটা ভার হয়ে আসছে। চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। তাই সে ঘরের লাইট বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইল।
নিয়াজ বাড়ি ফিরে নিজের ঘরের লাইট বন্ধ দেখে কপাল কুঁচকাল। সাধারণত এই সময়ে আরিন্তাকে হয় বাবার ঘরে পাওয়া যায়, নয়তো বই পড়তে বা ফোন দেখতে দেখা যায়। বাবার ঘরে উঁকি দিয়ে এসেছে সে। আরিন্তাকে ওখানে দেখেনি। এখন ঘরে ফিরে চারদিকে অন্ধকার দেখে তার মন কেমন একটা করে উঠল। দ্রুত লাইট জ্বালিয়ে দেখল আরিন্তা বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। অন্ধকার ঘর হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠেছে টের পেয়ে সে মুখ তুলে তাকাল। নিয়াজকে দেখে বলল,
“আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে?”
নিয়াজ বিছানার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“ঠিক সময়েই এসেছি। তোমার হয়তো সময় খেয়াল নেই।”
“ওহ্।”
শব্দটা উচ্চারণ করেই আরিন্তা উঠে বসল। এতক্ষণ পর শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটার মধ্যে টনটন করে উঠল। আরিন্তা চোখ-কপাল কুঁচকে মাথা ঝাড়া দিলো। নিয়াজ মনোযোগ দিয়ে আরিন্তার মুখের অবস্থা লক্ষ্য করে শুধাল,
“তোমার কি মাথা ব্যথা করছে?”
“তেমন কিছু না।”
“তোমাকে ঠিক লাগছে না। শরীর বেশি খারাপ লাগলে শুয়ে থাকো।”
“সমস্যা নেই। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, টেবিলে খাবার দিচ্ছি আমি।”
আরিন্তা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানো মাত্রই নিয়াজ তার বাহু ধরে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে দিলো। আরিন্তা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকাতেই নিয়াছ হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আরিন্তা, তুমি না চাইলেও এখানে তোমার খেয়াল রাখার দায়িত্ব শুধু আমারই। আমি এতটাও নির্দয় নই যে, একজন অসুস্থ মানুষ খাবার বেড়ে না দিলে আমি নিজে নিয়ে খেতে পারব না। তুমি আসার আগে আমি নিজেই খাবার নিয়ে খেয়েছি।”
“আমার সমস্যা হবে না।”
“আমার সমস্যা হবে। চুপচাপ শুয়ে থাকো।”
“বাবাকে খাবার দিতে হবে।”
“আমি দিতে পারব। মেডিসিন খেয়েছ?”
আরিন্তা না-বোধক মাথা নাড়ল। নিয়াজ হতাশ গলায় বলল,
“তুমি নিজের ব্যাপারে অনেক উদাসীন।”
নিয়াজ ড্রয়ার খুলে ঔষধের বক্স বের করল। গ্লাস ভর্তি পানি আর ঔষধ আরিন্তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“কান্নাকাটি করে মাথাব্যথা ডেকে এনেছ?”
আরিন্তা পানি মুখে নেওয়ার আগে উত্তর দিলো,
“সুবর্ণাকে ফোন করেছিলাম।”
নিয়াজ আরিন্তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বোধ হয় সহসা কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। তারপর ধীর গলায় বলল,
“এক মাস হতে চলল। আর কতদিন এভাবে সময়ে-অসময়ে চোখের পানি ফেলবে? তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে না।”
“স্বাভাবিক, ভালো লাগার মতো আচরণ আমি আপনার সাথে করি না। আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, মনের ওপর জোর খাটিয়ে আমাকে আপনার সহ্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যখন ইচ্ছা আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারেন।”
“আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলার জন্য স্ত্রীর সম্মান দিয়ে নিজের ঘরে তুলিনি।”
“আপনি সম্মান দিয়ে ঘরে তুলেছেন, কিন্তু আমি কখনোই সেই সম্মানের মর্যাদা দিই না।”
“আজ দাও না, কাল তো দিতেও পারো। ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে? জীবন তো একভাবে চলে না। সময় আর পরিস্থিতির সাথে বদলাতে থাকে।”
আরিন্তা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল,
“দয়া করে আমার ওপর কোনো প্রত্যাশা রাখবেন না। আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি মিশু ভাইয়ের জায়গা আমি দ্বিতীয় কাউকে দিতে পারব না। তা ভবিষ্যত কেন, এক জন্মেও না।”
“আমিও তোমাকে প্রথম থেকেই বলেছি তোমাকে জয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করব।”
আরিন্তা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। নিয়াজ শুধাল,
“রাগ করলে?”
“না। বাবাকে খাবার দিতে দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
“আমি যাচ্ছি। তোমার শরীর খারাপ, শুয়ে থাকো।”
“আমার শরীরের অবস্থা আমি আপনার থেকে ভালো জানি। দয়া করে আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না। হঠাৎ-হঠাৎ আমার আচরণে কষ্ট পেতে পারেন। আমি আপনার সাথে খারাপ আচরণ করতে চাই না।”
আরিন্তার শরীর খারাপ বলেই যে আজ খাবার দিতে দেরী হয়েছে বুঝতে পারলেন আতাউর রহমান। মেয়েটা মুখে কিছুই বলে না। অথচ চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। খেতে বসে তিনি জিজ্ঞেস করার পরও বলেছে শরীর ঠিক আছে। নিয়াজ বলার পরেই তিনি জানতে পেরেছেন। আতাউর রহমান নিয়াজকে বললেন সে যেন আগামীকাল আরিন্তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন। নিয়াজ সঙ্গে-সঙ্গেই রাজি হলো। কিন্তু আরিন্তা বলল সে হাসপাতালে যেতে চায় না। বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না তার। আতাউর রহমান তাকে বুঝিয়ে বললেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা কতটা জরুরী। আতাউর রহমান ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে আজকাল খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। প্রায় এক মাস হতে চলল তাদের বিয়ের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক দম্পতির মতো মনে হচ্ছে না। তারা কথাও বলে মেপে-মেপে। প্রয়োজনের বাইরে কোনো বিষয়ে কথা বলাই যেন তাদের জন্য বাক্য অপচয় বা সময়ের অপব্যবহার। অপরিচিত মানুষের মতো নিজ-নিজ ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে কথা বলে তারা। প্রথমদিকে সহজভাবে নিলেও, আজকাল এই বিষয়গুলো আতাউর রহমানের চোখে লাগছে। তিনি অভিজ্ঞ মানুষ। নারী-পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা পরিস্থিতি দেখেই আঁচ করতে পারেন। তবে তিনি এটাই মিলাতে পারছেন না এদের সম্পর্কে সমস্যাটা কোথায়। এমনিতে তো দুজনকেই একে অপরকে যথেষ্ট সম্মান দিতে দেখা যায়। কোনোরকম কথা কা’টাকা’টি-ও শোনা যায় না। দুজন সবদিক থেকে ঠিকঠাক থাকার পরেও তাদের সম্পর্ক কেন জটিল?
আজ আবধি আরিন্তাকে সাথে নিয়ে নিয়াজের বাড়ির বাইরে বেরোনো হয়নি। একেবারেই যে সময় পায়নি এমনটা নয়। সে সময় করে কয়েকবারই বেরোতে চেয়েছিল। আরিন্তা রাজি হয়নি। শপিং করতে যেতে-ও রাজি করা যায়নি তাকে। এমনকি এ কদিনে তার বাবা-মা হাজারবার বাড়ি যেতে অনুরোধ করেও তাকে রাজি করাতে পারেনি। নিয়াজকে তারা প্রতিদিন ফোন করে অনেক করে বলে আরিন্তাকে নিয়ে গিয়ে যেন কদিন থেকে আসে। নিয়াজ বলেছিল-ও। আরিন্তার এক কথা, ওই বাড়িতে একটা দিন পার করাও তার জন্য যন্ত্রণার। অথচ নিয়াজ জানে মেয়েটার মন মায়ের জন্য ছটফট করে। মেরিনার কান্নাকাটির কারণে একবার নিয়াজ আরিন্তাকে ভালোভাবে বুঝাতেও চেয়েছিল। আরিন্তা উলটা তাকে বলে বসেছিল,
“আপনার কাছে শশুরবাড়ি মধুর হাড়ি মনে হলে আপনি যান। ওই বাড়িতে মেয়ের আদর না থাকলেও, জামাই আদরে কমতি পড়বে না। নিশ্চিন্তে গিয়ে বেড়িয়ে আসুন। একমাত্র আদরের জামাইকে এক মাসে একবার দেখতে না পেয়ে হয়তো সবার মন খারাপ লাগছে।”
এরপর আর নিয়াজ তাকে বুঝাতে যায়নি। কিন্তু এবারে আরিন্তার বাড়ির বাইরে পা না রেখে উপায় নেই। নিয়াজের খালাতো ভাইয়ের বিয়ে এক বছর আগে হলেও, তখন ব্যক্তিগত কারণে রিসেপশন করতে পারেনি। তাই এখন তারা বিরাট আয়োজনে রিসেপশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিয়াজের খালা নিজে ফোন করে আরিন্তাকে বারবার করে বলে দিয়েছে সময়মতো তাদের বাড়ি চলে যেতে। খালুও একবার ফোন করে বলেছে। নিয়াজের খালার বাড়ি ময়মনসিংহ। আতাউর রহমান জার্নি করে এতদূরে যেতে চাইছেন না। তাই তিনি সবাইকে বলে দিয়েছেন নিয়াজ-আরিন্তা যাবে। শেষমেশ আতাউর রহমান-ও তাকে যাওয়ার কথা বলে বসার পর আর আরিন্তা নিজের অনিচ্ছা প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি। এবার অবশ্য নিয়াজকে কিছুই বলতে হয়নি। ফাঁদে পড়ে আরিন্তা নিজেই ব্যাগপত্র গোছাতে লেগে পড়েছে। তার চোখে-মুখে তীব্র অনিচ্ছা লক্ষ্য করে নিয়াজ বলল,
“এবার কিন্তু আমি তোমাকে কোথাও যেতে বলিনি।”
“সেজন্যই তো এবার যেতে হচ্ছে।”
“ওখানকার সবাই খুব মিশুক। তোমার খারাপ লাগবে না, দেখো। গিয়ে দেখবে সবাই কত আনন্দ করছে।”
“আনন্দে আমার রুচি নেই।”
“রুচি আছে, তুমি তা চাপা দিয়ে রাখছো।”
“যার জীবন থেকে আনন্দের উৎস-ই মুছে গেছে, সে আর কোন আনন্দ চাপা দিয়ে রাখবে?”
নিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা নেড়ে বলল,
“এভাবে নিজেকে হারাতে দিয়ো না আরিন্তা।”
“নিজেকে ধরে রাখার কোনো কারণ নেই আমার।”
“আমি সেই কারণ হতে চাই।”
“আমার কাছে সেই জায়গা নেই।”
“নিজের জায়গা আমি তৈরি করে নেব। তোমাকে দিতে হবে না।”
আরিন্তা আর কথা বাড়ায় না। ব্যাগের গোছানো কাপড় নতুন করে গোছানো ধরে ব্যস্ত হতে চায়। বুঝতে পেরে নিয়াজ আর কথা টানে না।
নিয়াজ এক চালাকি করে বসেছে। সে আরিন্তাকে বলেছে তার গাড়িতে কী এক সমস্যা হয়েছে, তাই এতদূর নেওয়া যাবে না। পথে গাড়ি খারাপ হলে পড়ে সমস্যায় পড়তে হবে। তাই তারা ভাড়া গাড়িতে যাচ্ছে। আসলে কথাটা সত্য নয়। নিয়াজের গাড়ি একদম ঠিক আছে। সে চাচ্ছে না এত পথ ড্রাইভ করে সময় নষ্ট করতে। তার চেয়ে ভাড়া গাড়িতে গেলে অনেকটা সময় আরিন্তার কাছাকাছি থাকা যাবে। মেয়েটা সঙ্গ-ও পাবে। এমনিতেই বাড়িতে একা পড়ে থাকে। নিয়াজ চায় না আরিন্তা বাইরে বেরিয়েও একাকী সময় কা’টাক। আতাউর রহমানের খেয়াল রাখার লোককে নিয়াজ বারবার বলে দিয়েছে বাবার খেয়াল রাখতে। আরিন্তা-ও কাজের মেয়েটাকে ভালোভাবে রান্নাবান্না করার কথা বলেছে। তাদের দুশ্চিন্তা দেখে আতাউর রহমান হেসে বললেন,
“দুই-তিনদিনে আমার বিশাল সমস্যা হবে না। এত চিন্তার কিছু নেই। নিশ্চিন্তে আনন্দ করে এসো তোমরা।”
আরিন্তা একা রাস্তা পেরোতে জানে না। দুদিক থেকে একের পর এক গাড়ি আসা-যাওয়ার মধ্যে রাস্তা পেরোতে তার ভীষণ ভয় লাগে। মনে হয় এক্ষুনি তাকে পিষে ফেলবে। প্রথমেই নিয়াজের সন্দেহ হয়েছিল আরিন্তা রাস্তা পার হতে পারে কি না। আরিন্তার ভীতু মুখ দেখে বলল,
“আমি পার করে নেব। ভয় পেয়ো না।”
নিয়াজ আরিন্তার হাত ধরতে গেলে আরিন্তা হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমি আপনার সাথে-সাথে যেতে পারব।”
আরিন্তাকে পাশে নিয়ে নিয়াজ দুহাত দুদিকে তুলে রাস্তা পেরোতে লাগল। কিন্তু আরিন্তা ভয়ে নিয়াজের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে ব্যর্থ হলো। রাস্তার মাঝামাঝি এসে আরিন্তা এগোতে না পারায় নিয়াজ দূর্ঘটনার ভয় পেল। আরিন্তার এক হাত মুঠোয় চেপে ধরে সে আরেক হাত তুলে দ্রুত আরিন্তাকে টেনে ওপারে নিয়ে গেল। ওপারে গিয়ে আরিন্তা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। নিয়াজের মুঠো থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
“এজন্য আমার রাস্তায় নামতে ভয় লাগে।”
গতকালই নিয়াজ পরিচিত এক প্রাইভেট কার ঠিক করে রেখেছিল। ড্রাইভারকে নিয়াজ বলেছিল গাড়ি নিয়ে তার বাড়ির সামনে থাকতে। কিন্তু লোকটা কী এক কাজে আটকে পড়ে গাড়ি নিয়ে তার বাড়ি অবধি যেতে পারেনি। নিয়াজকে ফোন করে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়ে বলেছে বেশি দেরী মনে হলে কষ্ট করে একটু পথ এগিয়ে গিয়ে গাড়ি ধরতে। নয়তো অপেক্ষা করতে। দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করার চেয়ে এগিয়ে গিয়ে গাড়ি ধরা ভালো মনে করে নিয়াজ পথ চলছিল। কিন্তু রাস্তা পেরোতে গিয়ে আরিন্তার অবস্থা দেখার পর হঠাৎ মনে হলো নিজের গাড়িটা নিয়ে না বেরিয়ে সে সত্যিই ভুল করে ফেলেছে। নিজের চালাকিতে এখন তার নিজেরই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করছে।
চলবে, ইন শা আল্লাহ্।