বিরহডোরে বাঁধিয়াছি তারে পর্ব-০৯

0
164

#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৯
___________________
অয়নের কথা শুনে এশা কিছুক্ষণ চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর মলিন হাসি দিয়ে বললো,

-“তাহলে তুই কেনো এখনো আমার অপেক্ষায় বসে আছিস?”

এশার কথা শুনে চমকে গেল অয়ন।সে এশার দিকে তাকাতে দেখলো এশা তার দিকে তাকিয়ে আছে।অয়ন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।এশা মৃদু হেসে বললো,

-“অয়ন আমি বাচ্চা না।এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।আর প্রতিটা মেয়ের এই ক্ষমতাটা থাকে আমার জানা মতে!কোন ছেলে তাকে কি চোখে দেখছে তা সে বুঝতে পারে।”

অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“সব যখন বুঝিসই তাহলে মেনে নিতে সমস্যা কি?”

-“মেনে নিবো?কিন্তু কিভাবে!যখন থেকে ভালোবাসা বলে যে একটা বিষয় আছে তা বুঝতে শিখেছি তখন থেকে শুধু একজনকেই ভালোবেসে গেছি।এতো সহজে তাকে ভুলে আরেকজনকে কিভাবে আপন করবো!”

অয়ন এশার হাত জোড়া ধরে বললো,

-“বিশ্বাস রাখতে পারিস এই হাত আমি কখনো ছাড়বো না।শুধু তুই আমাকে একটি বার ভালোবাস!আমি কখনোই আহাদের জায়গা নিতে চাইবো না তবে আহাদকে যতটা ভালোবাসিস তার থেকে না হয় কিছুটা আমায় ভালোবাসিস!তাহলে আমার হবে।”

এশা কিছুক্ষণ অয়নের দিকো তাকিয়ে রইলো।তার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।এশা অয়নের থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে বললো,

-“পারবো না রে।আহাদকে ভুলে যাওয়া এতোটাও সহজ হবে না আমার জন্য।তবে চেষ্টা করবো!”

অয়ন আর কিছু না বলে এশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

___________
-“তুই কালকে আমায় জ্ঞান দিলি যে মেয়ে দেখতে গেলেই বিয়ে হয়ে যায় না।কিন্তু আমার তো বিয়ে পাকা করে চলে এসেছে!”

আহাদের কথা শুনে মুহিত বললো,

-“আরে পাত্রী যে তৃধা তা কে জানতো!তবে আমি অনেক খুশি।অবশেষে তোদের বিয়েটা হচ্ছে।”

আহাদ চোখ রাঙিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“হ্যাঁ তুই তো খুশি হবিই।তুই তো আমার বন্ধু নামক শত্রু!”

-“আরে ভাই এখন এইসব বাদ দে।দেখ তৃধা অনেক ভালো মেয়ে।তোকে অনেক ভালোওবাসে।তাই আর কষ্ট দিস না ও-কে।বিয়েটা করে ফেল!”

আহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“বিয়ে তো করতেই হবে।আম্মু যা সিনেমার ডায়লগ বলা শুরু করেছে!”

আহাদের কথা শুনে মুহিত হেসে দিল।আহাদ কিছু না বলে চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো।



শপিংমলে ঘুরছে সাথে আইসক্রিম খাচ্ছে রুহি আর তোহা।রুহি হাসি দিয়ে বললো,

-“আজকে আমার সবচেয়ে খুশির দিন।ওই হাঁদারাম শেষমেষ মুখ খুলে বলতে তো পারলো!”

তোহা হাসি দিয়ে বললো,

-“আসলেই রে বেচারা কবে থেকে চেষ্টা করতে করতে আজকে সাকসেসফুল হয়েছে!”

আদি নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে শপিংমলে এসে রুহি আর তোহার সামনে এসে হাজির।আদি তোহার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আরে এ তো দেখছি মেঘ না চাইতেই জল!”

আদির কথা শুনে তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“এটা বলে কি মিন করলেন?”

-“এই যে আমাদের আবার দেখা হয়ে গেল।তবে কাবাব ম্যায় হাড্ডি সঙ্গেই আছে।”

দ্বিতীয় বাক্যটি রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আদি।রুহি শয়তানী হাসি দিয়ে বললো,

-“তোকে খাসি তো খালি খালি বলি না আমি!আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করতে এসে আমাকে সাইড করে দিচ্ছিস।মানে তোর তো দেখছি সাহসের কমতি নেই।”

আদি রুহির কানের কাছে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

-“সবার সেট হয়ে যাচ্ছে আমারটা আটকে না রেখে এগিয়ে দিলেও তো পারিস!”

-“নিয়ে যা ভাই।তোরা দুজনে ঘুরতে থাক আমি বরং বাড়ি যাই!”

রুহি যেতে চাইলে তোহা বললো,

-“না রুহি আমি তোর সাথে এসেছি তোর সাথেই যাবো।আর মি.আদি!আমার এইসব প্রেম করার কোনো শখ নেই।বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলে আসবেন সো বাই।”

তোহা কথাগুলো বলে রুহির হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল।আদি মুচকি হেসে বললো,

-“আই লাইক ইওর অ্যাটিটিউড তোহাজান!”

আদির থেকে কিছুটা দূরে যেতে রুহি বললো,

-“তোহা আদি কিন্তু প্রেম করে ছেড়ে দেওয়ার মতো ছেলে না।ও তোকে ঠিকই আগলে রাখবে।”

-“আমি প্রেম করতে চাই না রে।করলে একেবারে বিয়েই করবো।তোর ভাই যদি ততদিন ওয়েট করতে পারে তাহলে বলিস!”

রুহি হাসি দিয়ে বললো,

-“আচ্ছা তুই যা বলবি তাই হবে।”

——————
-“ধূর আমাদের দুজনের বাড়ি উল্টো দিকে না হলেও পারতো তাহলে তো একসাথে যেতে পারতাম।”

সৃজার কথা শুনে তৃধা মুখ মলিন করে বললো,

-“আসলেই রে ঠিক বলেছিস!আচ্ছ শোন ভালোই রাত হয়ে গেছে।তুই যা আমিও যাই!”

-“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস।এখন যাওয়া উচিত।”

সৃজা চলে গেল।তৃধা কিছুটা হেঁটে একটা রিক্সা দেখতে পেল।সে যেই রিক্সার কাছে যেতে যাবে ঠিক তখনই সেখানে আহাদ এসে হাজির হলো।সে আহাদকে দেখে খানিকটা চমকে গেল।তারপর ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-“আহাদ তুমি এখানে?”

-“কেনো এখানে আসা নিষেধ নাকি?”

-“না তোমাকে তো আমার হসপিটালের আশেপাশে কখনো দেখা যায় না তাই বললাম আরকি!”

আহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“এতো কথা না বলে আমার সাথে চলুন।আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

-“কি?তোমার আমার সাথে কথা আছে?আমি কি ভুল শুনলাম নাকি?”

আহাদ চোখ রাঙিয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।তৃধা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

-“মি.খান আপনার এইসব চোখ রাঙানোতে আমি ভয় পাই না।আপনি হয়তো তা ভালো করেই জানেন!”

অনেক বছর পরে তৃধার মুখে এই ডাকটা শুনে আহাদের বেশ ভালো লাগলো।সে শান্ত গলায় বললো,

-“এতো কথা না বলে আমার সাথে গেলেই তো হয়।মে*রে তো আর ফেলবো না আপনাকে!”

-“চাইলে মে*রে ফেলতে পারো।তোমার হাতে মরতেও আমার কোনো কষ্ট নেই।”

আহাদ আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।হাঁটতে হাঁটতে বললো,

-“চাইলে আমার সাথে আসেন নাহলে ভাগাড়ে যান!”

আহাদের কথা শুনে তৃধা হেসে দিল।তারপরে আহাদের পিছনে হাঁটা শুরু করলো।আহাদ একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঘুরলো।তৃধাও তার সাথে গেল।দুজনে মুখোমুখি বসে আছে।তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“এমন বসে থাকার জন্য নিয়ে এসেছো এখানে?অনেক রাত হয়ে গেছে একা একা আমার বাড়ি যেতে সমস্যা হবে!”

-“আমি আপনার মতো অপক্ব না।আমি আপনাকে এতো রাতে একা যেতে দিবো না!আমি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবো।”

তৃধা চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“আমি অপক্ব?”

-“অবিয়াসলি!”

-“আহাদ রাগ উঠিয়ো না আমার।”

-“ওকে এইসব বাদ দেন।আমি যা বলতে চাচ্ছি তা শুনুন।”

-“হ্যাঁ তোমার কথা শুনতেই তো বসে আছি।বলো!”

তৃধা আহাদের কথা শোনার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসলো।আহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আমাদের বিয়েটা ভেঙে ফেলুন।”

আহাদের কথা শুনতেই তৃধার মেজাজ গরম হয়ে গেছে।তাও সে নিজেকে শান্ত রেখে বললো,

-“এটা বলতে এসেছিলে?”

-“হ্যাঁ!”

তৃধা হাসি দিয়ে বললো,

-“সরি।আমি বিয়েটা ভাঙতে পারবো না।আমার তোমার জন্য এতো দরদ নেই যে তুমি বললেই বিয়েটা ভেঙে দিবো।”

আহাদ চোখ রাঙিয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।সে জানতো তৃধাকে কিছু বলেও লাভ হবে না।আহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

-“চলুন আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেই।”

-“তুমি এতো কিপ্টে আগে তো জানতাম না।”

-“মানে?”

-“এতো রাতে কাউকে এমন রেস্টুরেন্টে এনে কিছু খাইয়ে চলে যেতে চাচ্ছো।”

আহাদ আবার বসে পড়লো।মেনু কার্ড তৃধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

-“যা খাবেন অর্ডার করুন!”

-“চলো দুজনে বিরিয়ানি খাই।অনেক বছর একসাথে আমাদের পছন্দের খাবার খাওয়া হয় না!”

আহাদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তৃধা হাসি দিয়ে বিরিয়ানি অর্ডার করলো।দুজনের খাওয়া শেষ হলে আহাদ বিল দিতে গেলে তৃধা বললো,

-“আজ না হয় আমি দেই।”

-“না আমি দিবো কারণ আপনি আমাকে কিপ্টে বলেছেন!”

তৃধা হাসি দিয়ে বললো,

-“আরে ওটা তো আমি মজা করে বলেছি।”

-“যাই বলুন বিল আমিই দিবো।”

-“ওকে দেও আমার টাকা বেঁচে গেল।”

কথাটা বলে তৃধা রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে গেল।আহাদ বিল দিয়ে গাড়িতে উঠে বললো,

-“উঠুন।”

তৃধা গাড়িতে উঠতে আহাদ গাড়ি চালানো শুরু করলো।দুজনের মাঝে নিরবতা!হঠাৎ তৃধা হাসতে হাসতে বললো,

-“আহারে আমার হবু বর বেচারা!বিয়ে ভাঙতে আমাকে বলতে আসছে!”

আহাদ চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“কারণ আম্মু আমাকে বলেছে আমি কিছু করলে আম্মুর মরা মুখ দেখবো!”

তৃধা হাসি দিয়ে বললো,

-“যাক ভালোই হয়েছে আমার কষ্টটা এখন টের পাবে।সবটা জানানের পরেও তো দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে।এখন বুঝো কেমন লাগে!”

আহাদ আর কিছু না বলে ড্রাইভ করায় মন দিল।সে তৃধাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।আহাদ গাড়ি থামাতে তৃধা আহাদের একটা হাত ধরে বললো,

-“আই রেলি লাভ ইউ আহাদ।তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।আমি চাই তুমি যেন আমার জীবনের শেষ ভালোবাসা হও।তাই প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিও না!”

আহাদ আলতো করে তৃধার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-“অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যান।’

তৃধা আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।তারপরে আহাদ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।তৃধা গাড়ি স্টার্ট করার আওয়াজ শুনে হাসি দিয়ে বললো,

-“বাহ্ বাড়ির ভিতরে আসার পরে গেল!”

#চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে