#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৮
___________________
আহাদের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলেন রফিকুল সাহেব।তিনি কিছু বলতে গেলে আয়েশা বেগম বাঁধা দিয়ে বললেন,
-“আহাদ সিনক্রিয়েট করো না রাস্তায় দাঁড়িয়ে!”
-“আম্মু আমি এই বাড়ির ভিতরে যাবো না।তোমার উচিত হয়নি কিছু না জেনে আমাকে এখানে নিয়ে আসা!”
-“আমি সবটা জেনেই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।তাই কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলো।”
-“আম্মু আমি যাবো না বলছি!”
-“এই রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে মায়ের হাতে থাপ্প*ড় খেতে ভালো লাগবে?”
আহাদ কিছু না বলে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।আয়েশা বেগম আাহদের হাত ধরে বললেন,
-“এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে চলো।”
আহাদ আর কিছু না বলে সবার আগে হাঁটা শুরু করলো।রুহি গিয়ে কলিংবেল বাজাতে তোহা এসে দরজা খুলে দিল।তোহাকে দেখে আদির মুখে হাসি ফুটলো।সবাই তৃধাদের বাড়ির ভিতরে গিয়ে বসলো।আহাদের মেজাজ বিগড়ে আছে!সে কোনো কথা বলছে না।”
-“তা যাকে দেখতে আসা সে কোথায়?”
আয়েশা বেগমের কথায় হাসি দিয়ে রাহেলা বেগম বললেন,
-“আসতেছে!”
তৃধা চায়ের ট্রে আর তোহা নাস্তার ট্রে এনে সবার সামনে রাখলো।তৃধা সবাইকে সালাম করলো।আহাদ একবার তৃধার দিকে তাকিয়ে দেখলো তৃধাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে!নীল শাড়িতে বেশ মানিয়েছে!পরক্ষণেই আহাদ চোখ সরিয়ে ফেলল।
আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
-“মাশাআল্লাহ!কি মিষ্টি লাগছে তৃধা মাকে।আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।”
আহাদ চুপ করে বসে আছে।সবাই মিলে বিয়ের দিন ঠিক করলো।এক সপ্তাহ পরে বিয়ে!
আহাদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় আয়েশা বেগম বললেন,
-“আহাদ এই মুহুর্তে তুমি উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবে না।”
আহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে।তৃধা বুঝতে পারলো আহাদ বিয়েতে রাজি না।তাও সে কিছু বললো না।কারণ সে চায় বিয়েটা হোক আর তাদের মাঝের সব দূরত্ব কেটে যাক।আদি গিয়ে তোহার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে।”
তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আমি তো প্রতিদিন যেমন ভাবে থাকি তেমনই আছি।সুন্দর লাগার কি আছে?”
-“তোমাকে তো আমার প্রতিদিনই সুন্দর লাগে!”
কথাটা বলে আদি আহাদের পাশে গিয়ে বসলো।তোহা মুচকি হাসলো।সে হালকা আঁচ করতে পেরেছে আদি যে তাকে পছন্দ করে!রুহি গিয়ে তোহার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কিরে কি এমন বললো যে ব্লাশ করতেছিস?”
তোহা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“কোথায় ব্লাশ করলাম আবার!”
-“বুঝি বুঝি সব বুঝি আমি!”
-“হয়েছে অনেক বুঝেছিস।আমরা তো এখন বেয়াইন হয়ে গেলাম রে!”
-“একদম!”
দুজনে একসাথে হেসে দিল।
সব ঠিক করে আহাদরা তৃধাদের বাড়ি থেকে চলে আসলো।আহাদ কারো সাথেই কোনো কথা বলে নাই।তার রাগ চরম পর্যায় চলে গেছে।আহাদ বাড়িতে এসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আমি আবার বিদেশে চলে যাবো।এই দেশ আমার জন্য না।”
আয়েশা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,
-“সব তোমার ইচ্ছা মতো হবে না আহাদ।এই বিয়ে তোমার করতেই হবে।অনেক কথা শুনেছি তোমার আর না।আর তুমি যদি আবার বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে!”
আয়েশা বেগম কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেলেন।আহাদ থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়েশা বেগমের বলা শেষ বাক্যটা তার মাথায় গেঁথে গেছে।সে আর কিছু না বলে তার রুমের দিকে চলে গেল।রুহি হাসি দিয়ে বললো,
-“আম্মু একদম ফর্মে চলে এসেছে!”
———————
সকালবেলা হসপিটালে যেতে দেরি হয়ে যাওয়ায় সৃজা দ্রুত রাস্তা পাড় হতে গিয়ে একটা গাড়ির সামনে পড়তে যাবে তার আগে কেউ তাকে টেনে ধরে অন্য পাশে নিয়ে গেল।সৃজা কিছুটা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল।সে চোখ খুলে দেখলো মুহিত তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সৃজা চোখ খুলতে মুহিত বললো,
-“মাথায় সমস্যা আছে নাকি আপনার?এভাবে কে রাস্তা পাড় হয়?এক্ষুনি তো একটা বিপদ ঘটে যেত।”
সৃজা কিছুক্ষণ মুহিতের দিকে তাকিয়ে থেকে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
-“থ্যাংকস আমাকে এমন একটা দূর্ঘটনা থেকে বাঁচানো জন্য।তবে আমাকে যে কালির তারা বলে তার সাথে আমার কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই।”
সৃজার কথায় মুহিত মুচকি হেসে বললো,
-“ভুল বললেন এখন তো আপনাকে কেউ কালির তারা বলছে না।আগে ছিলেন!পাস্ট ইজ পাস্ট!এখন তো আপনাকে দেখলে বলতে ইচ্ছা করে ‘হে সুন্দরী আপনি আমার হবেন কি!’
মুহিতের কথা শুনে সৃজা চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো।মুহিতের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
-“পাগল হয়ে গেছেন নাকি?”
-“হ্যাঁ আপনাকে সেদিন দেখার পরে থেকে।”
-“এই যে ভাই এইসব ফ্লার্ট করা বাদ দেন।আমার হসপিটালে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
-“এই ভাই আবার কি?হতে চাই জামাই বানায় দিচ্ছে ভাই!আর ফ্লার্ট কে করতেছে?যা বললাম সত্যি বললাম!”
-“হ্যাঁ বুঝেছি আপনি অনেক সত্যবাদী তবে আমার এখন এইসব শোনার টাইম নেই।আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”
সৃজা কথাগুলো বলে চলে যেতে গেলে মুহিত বললো,
-“চলুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি!”
-“কোনো দরকার নেই আমি একা যেতে পারবো।”
-“আরে এতো কথা না বলে চলুন তো নাহলে আরো লেট হয়ে যাবে।”
সৃজা তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ দেরি হয়ে গেছে তাই সে মুহিতের সাথে যেতে রাজি হলো।মুহিত গাড়ি নিয়ে হসপিটালের সামনে দাঁড়ালো।সৃজা গাড়ি থেকে নেমে বললো,
-“থ্যাঙ্কিউ!”
কথাটা বলেই সে এক প্রকার দৌড়ে ভিতরে চলে গেল।মুহিতকে কিছু বলার সুযোগই দিল না।মুহিত মুখ গোমড়া করে বললো,
-“ধ্যাত!এ কেমন মেয়ে!কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই চলে গেল।”
——————–
জয় রুহির সামনে একটা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“রুহি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।প্লিজ আমার এই ভালোবাসা তুই গ্রহণ কর!”
রুহি অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপরে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আজকে কি সূর্য উল্টো দিকে উঠলো নাকি!”
জয় মৃদু হেসে বললো,
-“না ঠিক দিকেই উঠেছে।আজকে অনেক সাহস সঞ্চয় করে তোকে কথাটা বলেই ফেললাম।কারণ আমি এর আগে বুঝতাম না তুই আসলে আমাকে পছন্দ করিস নাকি!তবে এই কিছুদিনে বুঝে গেছি যে তুইও আমাকে পছন্দ করিস তাই ভাবলাম বলেই ফেলি না হয়!”
রুহি জয়ের হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে বললো,
-“আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করিলাম জনাব।”
তোহা হাত তালি দিয়ে বললো,
-“যাক এতোদিনে আমাদের জয়সাব বিড়াল থেকে সিংহ তে পরিণত হয়েছে তাহলে।”
তোহায় কথায় সবাই হেসে দিল।জয় হাসি দিয়ে লজ্জায় মাথা চুলকাচ্ছে।
________________
-“কিরে সৃজা তোর আজকে এতো দেরি হলো কেনো?”
সৃজা সব ঘটনা তৃধাকে বললো।তৃধা সবটা শুনে বললো,
-“কি মুহিত তোকে এইসব বলেছে?”
-“হ্যাঁ রে!আরে বুঝিস না ফ্লার্ট করতেছিল।এইসব আমি ভালো করেই বুঝি।”
-“মুহিত ফ্লার্ট করার মতো ছেলেই না।দেখ যদি তোকে পছন্দ করে তাহলে সব পাঁকা করে ফেল।ছেলে কিন্তু মন্দ না!তোর সাথে ঝগড়া করার এনার্জিও আছে।”
-“আপাতত এইসব বাদ দে।তোর কথা বল।বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেল। তা আহাদ জিজুর সাথে কথা হয়েছে?”
-“ও আমার সাথে কথা বলা তো দূরে থাক কালকে আমাদের বাড়িতে এসে একটা কথাও বলেনি।শুধু আম্মুকে এসে সালাম করেছিল মনে হয়।আমি তো জানি ও বিয়েতে রাজি না আন্টি জোর করায় রাজি হয়েছে।তবে যাইহোক বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক তারপর ওর বারোটা আমি বাজাবো।এতো কিসের ইগো!”
তৃধার কথা শুনে সৃজা হেসে দিল।তৃধাও তার সাথে হাসলো।
–
–
–
আহাদ অফিসে তার ক্যাবিনে আনমনে বসে আছে।সবকিছু কেমন যেন বিরক্ত লাগছে তার কাছে!সে তৃধাকে বিয়েটা করতে চাচ্ছে না কিন্তু বিয়েটা ভাঙাও তার পক্ষে সম্ভব না।কারণ আয়েশা বেগম যা বলেছেন!সে কোনোভাবেই তার মাকে হারাতে চায় না।
-“আম্মু যে কেনো বললো ওই কথা!তাহলে তো কিছু করতে পারতাম।এখন তো কিছু করা সম্ভবও না।আমি কি সবটা ভুলে তৃধাকে মেনে নিতে পারবো?তা তো মনে হয় না আমার।যা থেকে আমার মন একবার উঠে যায় তাতে আর কখনো মন আসে না।তৃধাকে আমি যতটা ভালোবাসি ঠিক ততটাই ঘৃণা করি!কি যে করবো কিছুই মাথায় আসছে না।”
আহাদ কথাগুলো বলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো।
____________________
এশা মুখ মলিন করে লাইব্রেরিতে বসে আছে।ভার্সিটি কখন ছুটি হয়ে গেছে কিন্তু তার বাড়িতে যেতে মন চাইছে না।অয়ন এশাকে খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরিতে এসে দেখলো এশা বসে আছে।অয়ন বুঝতে পেরেছে এশা কিছু নিয়ে আপসেট!এশা ভার্সিটিতে আসার পরে থেকেই সে খেয়াল করেছে এশার মন ভালো নেই।অয়ন গিয়ে এশার পাশে বসলো।অয়নকে দেখে এশা বললো,
-“তুই এখানে কি করছিস?ভার্সিটি তো ছুটি হয়ে গেছে!”
-“সেম প্রশ্ন আমি তোকে করি?”
-“আমি তো এমনি বসে আছি।একটু পরে চলে যাবো।”
-“এইসব না বলে সত্যিটা বল এশা।”
এশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আহাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সামনের সপ্তাহে বিয়ে!”
অয়ন কিছুক্ষণ এশার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আহাদকে নিয়ে এখন ভাবা বাদ দিয়ে নিজের জীবনকে নতুন করে গুছিয়ে নে।এক তরফা ভালোবাসা শুধু কষ্টই দেয় আর কিছু দিতে পারে না!”
#চলবে……………