#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৭
___________________
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।তৃধা সেই বেঞ্চে বসেই বৃষ্টির মধ্যে কাঁদছে।তার চোখের নোনা জলগুলো বৃষ্টির নোনাজলের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে!হঠাৎ কেউ এসে তার মাথার উপর ছাতা ধরলো।সে তাকিয়ে দেখলো আহাদ দাঁড়িয়ে আছে।আহাদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“এই বৃষ্টির মধ্যে বসে কাঁদার কোনো মানে নেই বাড়িতে যান অসুস্থ হয়ে যাবেন।”
-“তুমি যাও আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার।”
আহাদ আর কিছু না বলে তৃধার হাত ধরে টেনে নিয়ে তাকে গাড়িতে বসালো।আহাদ গাড়ি স্টার্ট করলো।তৃধা একদম ভিজে গেছে।আহাদ তা খেয়াল করে গাড়ি দাঁড়া করালো।গাড়ির এসি অফ করে নিজের গায়ের ব্লেজারটা খুলে তৃধার দিকে এগিয়ে দিল।তৃধা নিজেকে সামলে বললো,
-“লাগবে না!আমি ঠিক আছি।”
আহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“এইসব ড্রামা বন্ধ করে ব্লেজারটা পড়ে নিন।”
-“বললাম তো লাগবে না।”
-“জাস্ট সার্টআপ তৃধা!যা বললাম তাই করুন।”
তৃধা চোখ রাঙিয়ে ব্লেজার পড়ে বললো,
-“এইসব করে কি নিজে এখন দয়া দেখাচ্ছো?”
-“হ্যাঁ দেখাচ্ছি।”
কথাটা বলে আহাদ আবার গাড়ি স্টার্ট করলো।সারা রাস্তায় দুজনে একটা কথাও বলেনি।আহাদ তৃধাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।বৃষ্টি থেমে গেছে!তৃধা গাড়ি থেকে নেমে আহাদকে ব্লেজারটা দিতে গেলে সে বললো,
-“রেখে দেন লাগবে না আমার!”
আহাদ কথাটা বলে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল।তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো,
-“কি ত্যা*ড়া রে বাবা!একটা কথা বলারও সুযোগ দেয় না।”
তৃধা কথাটা বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।তার আজ ভীষণ মন খারাপ লাগছে।এতোদিন যাও একটু আশা ছিল সবটা জানলে হয়তো আহাদ তাকে আর ফিরিয়ে দিবে না কিন্তু সবটা জেনেও আহাদ তাকে ফিরিয়ে দিল!এখন সে কি করবে!চোখ বন্ধ করতে তার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।তোহা তৃধার রুমে এসে দেখলো তৃধা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।তোহা এসে তৃধার পাশে বসে দেখলো তৃধার চোখে পানি!তোহা তড়িঘড়ি করে বললো,
-“কি রে আপু কি হয়েছে তোর?কান্না করছিস কেনো?”
তৃধা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো তোহা বসে আছে তার পাশে।তৃধা উঠে বসে বললো,
-“আহাদ আজকে সবটা শুনেও আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে রে!”
তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মানে?”
তারপর তৃধা সবটা তোহাকে বললো।সবটা শুনে তোহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আপু’ আহাদ ভাইয়া যখন তুই সবটা বলার পরেও তোকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাহলে আমার মনে হয় তোর উনাকে ভুলে যাওয়া উচিত!”
তৃধা কিছুক্ষণ তোহার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমি যে বিরহডোরে বাঁধিয়াছি তারে
তাহারে ভুলিবার সাধ্য যে মোর নাই।
তাকে না পাইবার ক্ষত;
সে যে এক বিষধর বিষাদ হইয়া রইয়া যাবে!”
তৃধা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে দিল।তোহা তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“কাঁদিস না আপু।এতো বছর যখন ধৈর্য্য ধরেছিস আরেকটু ধর।”
তৃধা আর কিছু না বলে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।তোহা তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
–
–
–
রাতে বিছানায় শুয়ে তৃধার বলা কথাগুলো ভাবছে আহাদ।
-“একটা কসম আমাদের সুন্দর সম্পর্কটাকে এভাবে শেষ করে দিল!যাইহোক এতোগুলো বছর যখন তোমাকে ছাড়া থাকতে পেরেছি বাকি জীবনও পারবো।কিন্তু আমি আর তোমাকে আমার জীবনে চাই না তৃধা।একবার যখন ছেড়ে যেতে পেরেছো আবারও পারবে তাই আমি আর তোমাকে গ্রহণ করবো না!”
কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ করলো আহাদ।
_______
-“আজকে তো ছুটির দিন।আজই আমি আহাদকে নিয়ে তৃধাদের বাড়িতে যাবো।যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে।”
আয়েশা বেগমের কথা শুনে রফিকুল সাহেব বললেন,
-“তোমার ছেলে যেতে রাজি হবে?”
-“দরকার হলে জোর করে নিয়ে যাব।আমি ওর মা আমার ওর উপর একটা অধিকার তো আছেই।”
-“দেখো তোমার ছেলে সেই অধিকার মানে নাকি!”
আহাদ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে বলল,
-“এত বেজে গেছে আমাকে ডাকলে না কেন আম্মু?”
আয়েশা বেগম সকালের নাস্তা এনে আহাদের সামনে রেখে বলল,
-“আজ তো ছুটির দিন তাই ডাকিনি!আর শোন আজকে সন্ধ্যায় আমি তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাব আর তুই আমার সাথে যাবি!”
আহাদ নাস্তা খেতে গিয়ে থেমে গেল।চোয়াল শক্ত করে বলল,
-“আম্মু তুমি আবার শুরু করলে!আমি কিন্তু তোমাকে নিষেধ করেছি।”
-“দেখ তোর বয়স কম হয়নি।যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে ওইসব এখন বাদ দে।আমি যা বললাম তাই হবে।আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।”
আয়েশা বেগুন কথাগুলো বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল রফিকুল সাহেব আর রুহি!রফিকুল সাহেব মৃদু হেসে রুমের দিকে চলে গেলেন।আহাদ নাস্তা না করে উঠে যেতে গেলে রুহি সেখানে গিয়ে বলল,
-“ভাইয়া যাই করিস খাবারের উপর রাগ করিস না।এটা কিন্তু ঠিক না।তুই এখন না খেয়ে উঠে গেলে এই খাবারগুলো নষ্ট হবে।আর এগুলো ফেলে দিতে হবে।কত মানুষ খেতে পায় না আর তুই এভাবে খাবার নষ্ট করবি!”
রুহির কথাগুলো শুনে আহাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নাস্তা খেতে বসলো।নাস্তা খেতে খেতে বলল,
-“ভালোই তো কথা শিখেছিস তা আম্মুকে একটু বুঝাতে পারছিস না যে আমার বিয়ে নিয়ে জানি মাতামাতি না করে!”
-“না বোঝাতে পারতেছি না কারণ আমার ভাবি চাই।”
আহাদ চোখ রাঙিয়ে রুহির দিকে তাকালো।সে এক দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেল।আহাদ বিড়বিড় করে বলল,
-“এই পুরো বাড়ি আমার শত্রু!”
আহাদ সকালের নাস্তা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে মুহিতকে কল করলো।
-“আম্মু আমাকে নিয়ে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে আজকে।কি করবো বল!”
-“কার বিয়ে?আন্টি কি কোনো ভাবে আঙ্কেলের আবার বিয়ে দিবেন নাকি?”
মুহিতের কথা শুনে আহাদের মেজাজ বিগড়ে গেল।সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“তোরে ধরে কানের নিচে তিন-চারটা দেওয়া উচিত।আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।”
-“তা ভালো তো!বিয়ে করে ফেল ভাই।কত দিন হলো কারো বিয়ে খাই না।”
-“মজা করতেছিস তুই?সব জেনে এসব বলতেছিস কেনো!”
-“বা রে!তুই তো তৃধাকেও চাস না আর তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কি!আর শোন মেয়ে দেখলে বিয়ে হয়ে যায় না।তাই মেয়ে দেখে আয় পরে কি করবি ভাবিস।”
আহাদ আর কিছু না বলে কলটা কেটে দিল।তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আসলেই তো মেয়ে দেখলেই তো বিয়ে হয়ে যাবে না।তাই মেয়ে না হয় দেখেই আসি।নাহলে আম্মু যা শুরু করবে নে!আজকে তো মনে হলো পুরো দিনের মতো রুদ্রমূর্তি ভাব চলে এসেছে আবার।”
____________
-“কি বললি তুই?আহাদ আসবে আমাকে দেখতে?”
তৃধার প্রশ্নে তোহা হাসি দিয়ে বললো,
-“হ্যাঁ রে আপু!আয়েশা আন্টি আম্মুকে কল করে বলেছে।”
-“আহাদ রাজি হয়েছে আসতে?”
-“তা তো জানি না।হয়তো হয়েছে নাহলে তো আর আন্টি বলতো না!শোন তোকে আজকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো।তোর হবু শ্বশুরবাড়ির সবাই আসবে।মোটেও বারণ করবি না সাজাতে!”
তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“না আজকে আর বারণ করবো নাহ্।তোর যেভাবে মন চায় সাজিয়ে দিস।”
–
–
–
-“তার মানে তোরা তোহা দের বাড়িতে যাবি?”
আদির কথা শুনে রুহি বললো,
-“তা তৃধা আপু তো তোহারই বড় বোন।তাহলে তো তোহার বাড়িতেই যাবো!”
-“আরে ওটাই তো বললাম।শোন আমাকে নিয়ে চল না!আহাদ ভাইয়ার সাথে সাথে আমি আমার রিশতাটাও পাক্কা করে আসি।”
রুহি কিছুক্ষণ আদির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“তুই পুরা আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেছিস।আচ্ছা সন্ধ্যার সময় রেডি হয়ে চলে আসিস তারপরে আমাদের সাথে যাস।”
-“ওকে।”
রুহি আদিদের বাড়ি থেকে চলে আসতে যাবে এমন সময় এশা বললো,
-“কই যাবি রে তোরা?”
-“ওই তো ভাইয়ার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।”
কথাটা শুনে বেশ কষ্ট পেল এশা।সে নিজেকে সামলে বললো,
-“আহাদ বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?”
-“ওই আম্মু জোর করে নিয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা আপু যাই এখন আমার আবার অনেক কাজ বাকি আছে!”
এশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।রুহি চলে গেল।আদিও তার নিজের রুমের দিকে চলে গেল।এশার চোখের কোণে পানি জমেছে।সে তা মুছে নিয়ে বললো,
-“আমার এই কপালে মনে হয় তোর নামটা লেখা নেই আহাদ।আমার এই এক তরফা ভালোবাসা হয়তো কখনোই পূর্ণতা পাবে না।তবে যাইহোক আমি সবসময় চাই তুই যেন সুখে থাকিস!আর সারাজীবন এটাই চাইবো।”
কথাগুলো বলে এশা মলিন হাসি দিল।
___________
সন্ধ্যা বেলা আদি রেডি হয়ে এসে হাজির।আদিকে দেখে আহাদ বললো,
-“তুইও যাবি নাকি?”
আদি কিছু বলার আগে রুহি বললো,
-“হ্যাঁ ভাইয়া কারণ ও হবু ভাবিকে দেখার জন্য খুব এক্সাইটেড!”
আহাদ চোখ রাঙিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এইসব ভাবি ভাবি করা বন্ধ কর।”
রুহি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“করবো না।”
আহাদ কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়েশা বেগম বললেন,
-“চুপ কর তোরা।আর চল এখন রওয়ানা দেই।”
সবাই এক সাথে রওয়ানা দিল।ড্রাইভার তৃধাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে আহাদ অবাকের চরম পর্যায় চলে গেল।সে চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“এই বাড়িতে আমি কিছুতেই যাবো না।”
#চলবে…………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]