#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৬
___________________
সৃজা রাগে কাঁপছে!সে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
-“কি আমি কালির তারা ছিলাম?”
-“অবিয়াসলি!আগে যতবার আপনাকে দেখেছি আমার এটা বলতে মন চাইতো পরে ভাবতাম না থাক বেচারি কষ্ট পাবে তাই আর বলতাম না।”
-“আমারো আপনাকে দেখলেই মন চাইতো কঙ্কাল বলে ডাক দেই কিন্তু পরে বেচারা কষ্ট পাবে তাই ভেবে আর ডাকতাম না।”
অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও মুহিত না আসায় আহাদ দরজার দিকে এগিয়ে যেতে দেখতে পেল মুহিত একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছে।তবে মেয়েটাকে চিনতে আহাদের সময় লাগলো না কারণ তাকে সে তৃধার সাথে অনেকবার দেখেছে।তৃধার বেস্টফ্রেন্ড সৃজা!সৃজার পাশে তাকাতে সে দেখলো তৃধা দাঁড়িয়ে আছে।তবে মুহিত আর সৃজার মাঝে কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি চলছে তৃধা অনেক চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারছে না।আহাদ গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কি হয়েছে এখানে?”
মুহিত চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“সৃজা আমাকে কঙ্কাল বলতেছে।”
সৃজা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“আর নিজে যে আমাকে কালির তারা বলেছেন তার বেলায়!”
তৃধা পাশে থেকে বললো,
-“আহাদ তুমি একটু বুঝাও আমি অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছি না।”
-“আপনার আমাকে তা বলা লাগবে না।আর মুহিত চল এখান থেকে যা হওয়ার হয়ে গেছে।”
মুহিত কিছু বলতে গেলে আহাদ বললো,
-“আজকের মতো ভেবে নে ঝগড়ার ঝুড়ি শেষ!পরে দেখা হলে আবার করে নিস।”
মুহিত আর কিছু না বলে আহাদের সাথে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।আহাদ একবার তৃধার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলল।তৃধা মুচকি হেসে বললো,
-“এখনো আগের মতো মজার কথা জানে তাহলে!”
সৃজা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“ওই কঙ্কালকে তো আমি ছাড়বো না আমাকে কালির তারা বলা!”
তৃধা সৃজার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“হয়েছে এবার ঠান্ডা হ।তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে।পেসেন্টদের চেক-আপ করার টাইম হয়ে গেছে।”
দুজনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে গেল।তৃধাকে চলে যেতে দেখে আহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
———————-
ক্লাস শেষ হলে রুহি আর তোহা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখল আদি দাঁড়িয়ে আছে।রুহি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“কিরে তুই এখানে কি করছিস?এশা আপুকে তো নিতে আসিসনি কারণ নিশ্চয়ই জানিস এশা আপুর আরো ক্লাস নেওয়া বাকি আছে!তাহলে তোর এখানে কি কাজ?”
-“আরে আমি তো তোকে নিতে এসেছি রুহি।”
রুহি আস্তে করে আদিকে বললো,
-“আমাকে না কাকে নিতে এসেছিস ভালো করেই জানি আমি!”
আদি তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।রুহি হাসি দিয়ে বললো,
-“তোহা চল আমার খাসি ভাই আমাদের ড্রাইভারের দায়িত্ব পালন করছে তো!বেশিক্ষণ দাঁড়া করিয়ে রাখলে তার আবার কষ্ট হবে।”
-“রুহি এইসব বলে ডাকিস না কেমন দেখায়!”
আদি তোহার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
-“শিখ কিছু।সম্মান করতে তো জানিস না।আমি কিন্তু তোর এক মাসের বড় ভুলে যাস না!”
-“ইশ্ আসছে আমার এক মাসের বড়!আর তোহা শোন খাসিকে না খাসি বললেই মানায় অন্য কোনো ডাকে না।”
কথাটা বলে রুহি তোহাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।আদিও গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করা শুরু করলো।ড্রাইভ করছে আর লুকিং গ্লাস দিয়ে তোহাকে দেখছে।তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“রুহি তোর এই ভাই আসার চক্করে আমরা কিন্তু এই দুইদিন ধরে একটুও ঘুরতে পারিনি।”
আদি হাসি দিয়ে বললো,
-“তুমি চাইলে আমরা এখন ঘুরতে পারি।”
তোহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“না থাক।আমরা দুই বান্ধবী একসাথে ঘুরে যা মজা পাই তা আপনি থাকলে হবে না।”
আদি অভিমানের সুরে বললো,
-“আবার আপনি করে বলছো!”
রুহি পাশে থেকে বললো,
-“আদি ও-কে একটু টাইম দে ও ওমন মেয়ে না যে দুইদিনের পরিচয়ে তোকে তুমি তুমি করবে!”
আদি আর কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভ করায় মন দিল।
_______________
তৃধা তার কেবিনে বসে ভাবছে,
-“আচ্ছা আহাদের হাতে তো ব্যান্ডেজ করা দেখলাম না।তার মানে ও ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে।এই ছেলেকে নিয়ে তো আর পারা যায় না!আমার উপর রাগ ঠিক আছে।তাই বলে ব্যান্ডেজটাও খুলে ফেলতে হবে!”
তৃধা তার হাত জোড়া কপালে ঠেকিয়ে বললো,
-“কিভাবে যে সবটা আবার ঠিক হবে কে জানে!ও তো আমার সাথে দেখাই করতে চায় না সেখানে কথা বলা তো দূরে থাক। ”
_____
-“রুহির থেকে আমি সবটা শুনেছি।আমি আসলে কিছুই জানতাম না এই বিষয়ে।”
আয়েশা বেগমের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাহেলা বেগম বললেন,
-“মেয়েটা একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে রে ভিতরে ভিতরে।আমি তো মা সব বুঝি!”
-“তুই চিন্তা করিস না আমি যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তৃধার সাথে আহাদের বিয়ে হবে আর তাই হবে!আমার কিছু কাজ আছে এখন কলটা কাটলাম ভালো থাকিস।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আয়েশা বেগম কলটা কেটে দিলেন।আয়েশা বেগম রান্নাঘরে কাজ করছেন রফিকুল সাহেব এসে বললেন,
-“সবটাই শুনলাম তুমি যা বলছিলে!তবে কি করে তুমি বিয়েটা দিবে?তোমার ছেলেকে চিনো না?একরোখা,অভ*দ্র ছেলে কোথাকার!”
-“দেখো ও তো আগে এমন ছিল না।তৃধার সাথে সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পরেই তো এমন হয়ে গিয়েছে।”
-“তুমি নিজের ছেলের সাইড নিও না তো!সবটাই তো বললে আমাকে তৃধা তো ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে অনেক তোমার ছেলেই তো শুনতে চায়নি একবার।শুনলে কি হবে?একবার শুনলেই তো সবটা ঠিক হয়ে যায়।”
আয়েশা বেগম আর কিছু না বলে চুপ করে রইলেন।রফিকুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে চলে গেলেন।
—————-
আগের দিন আহাদের সাথে যেখানে দেখা হয়েছিল তৃধা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে সে দেখলো আহাদের গাড়ি ওদিকে আসছে। তৃধার মুখে হাসি উঠলো।সে হাত নাড়িয়ে গাড়ি থামাতে ইশারা করলো।আহাদ দূর থেকে দেখলো একটা মেয়ে হাত নেড়ে ইশারা করছে গাড়ি থামাতে।কিছুটা কাছে যেতে সে দেখলো মেয়েটা আর কেউ না তৃধা।আহাদ চোয়াল শক্ত করে গাড়ি না থামিয়ে স্পিড বাড়িয়ে চালাতে শুরু করলো।তৃধা বুঝতে পেরেছে আহাদ গাড়ি থামাবে না সে গিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো।তৃধার এহেন কাজে আহাদ জোরসে ব্রেক কষলো!তৃধার একটু সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো।তৃধা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে!
আহাদ গাড়ি থেকে নেমে তৃধার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার হাত চেপে ধরে বললো,
-“পাগল হয়ে গেছেন নাকি?মরার শখ হয়েছে আপনার?একদম থা*প্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো।”
তৃধা চোখ খুলে তাকালো।আহাদ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।যা দেখে তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“যাক আমার প্রতি এতো চিন্তা দেখে ভালোই লাগছে।”
আহাদ তৃধার হাত ছেড়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
-“আপনার প্রতি আমার কোনো চিন্তা নেই!আমার কারণে কোনো মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি হোক আমি তা চাই না।”
কথাগুলো বলে আহাদ চলে যেতে গেলে তৃধা তার হাত টেনে ধরে বললো,
-“প্লিজ আহাদ আজ অন্তত আমার কথাগুলো শুনে যাও।”
আহাদ তৃধার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
-“আপনার কোনো কথা শোনার আমার ইচ্ছা নেই।
-“কিন্তু আজ তোমাকে শুনতেই হবে!”
-“না আমি শুনবো নাহ্!”
-“প্লিজ আহাদ একবার শুনো আর জোর করবো না।”
তৃধার মলিন মুখ দেখে আহাদের কিছুটা খারাপ লাগলো।সে বললো,
-“আচ্ছা বলুন কি বলবেন!”
-“চলো ওইদিকের বেঞ্চে গিয়ে বসি।”
আহাদ তৃধার সাথে গিয়ে বেঞ্চে বসলো।তবে সে বেশ দূরত্ব রেখে বসেছে!তৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আহাদ আমি সেদিন তোমার থেকে নিজের ইচ্ছায় বিচ্ছেদ চাইনি।”
-“আমি এই বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না।”
আহাদ উঠে চলে যেতে গেলে তৃধা বললো,
-“প্লিজ আহাদ সবটা শুনে যাও।নাহলে যে আমি ম*রেও শান্তি পাবো না।”
তৃধার এহেন কথায় আহাদের বেশ কষ্ট লাগলো যা তার চোখে ফুটে উঠেছে।তৃধা ভালো করেই বুঝতে পারলো আহাদ তার এই কথায় কষ্ট পেয়েছে।আগে কখনোই আহাদ তৃধার ম*রে যাওয়ার কথা শুনতে পারতো না।আহাদ আবার শান্ত হয়ে বসলো।তৃধা বলতে শুরু করলো,
-“বাবার মনে হয়েছিল আমাদের রিলেশনের জন্য আমার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে এর জন্য বাবা আমায় উনার মাথার কসম কাটিয়েছিল আমি যেন তোমার সাথে সম্পর্কটা শেষ করে ফেলি।আমার কাছে কোনো উপায়ও ছিল না।যতই হোক বাবা কসম কাটিয়েছে তা তো মানতেই হবে!কিন্তু জানো বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আমি তো কসম মেনেছিলাম তাও কেন বাবা চলে গেল!আমার জীবনের দুইজন ভালোবাসার পুরুষকেই হারিয়ে ফেললাম আমি।”
তৃধার চোখে পানি!তৃধার বাবার মৃত্যুর কথা শুনে আহাদের বেশ খারাপ লাগলো আবার রাগও উঠলো।একটা কসমের কারণে সবটা শেষ হয়ে গেল!আহাদ নিজেকে সামলায় বললো,
-“আপনি আমাকে এগুলো আগেই বলতে পারতেন।তাহলে আমি নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যেতাম।এতোগুলো বছর নষ্ট হতো না।আর শুনুন যে একবার ছেড়ে যায় সে আবারও ছেড়ে যেতে পারে।তাই আমাদের সম্পর্কের ইতিই ঠিক আছে;নতুন সূচনা এখানে অর্থহীন!”
আহাদ সেখান থেকে উঠে চলে গেল।তৃধা আর কিছু বলতে পারলো না।তার চোখ দিকে একভাবে পানি পড়ছে।সে ভেবেছিল হয়তো আহাদ সবটা শুনে তাকে আর ফিরিয়ে দিবে না।কিন্তু আহাদ তাকে প্রত্যাখ্যান করলো!
#চলবে………………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]