#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৫
___________________
সকালবেলা মোবাইলে কল আসায় আহাদের ঘুমটা ভেঙে গেল।সে ঘুম ঘুম চোখে দেখলো মুহিত কল করেছে।আহাদ কলটা রিসিভ করতে মুহিত বললো,
-“দোস্ত আমি বাংলাদেশে এসেছি।”
-“আরে তা তো ভালো খবর।ভালোই করেছিস তাড়াতাড়ি চলে এসেছিস তোকে ছাড়া একা লাগছিল ভাই!”
-“আজকে সারাদিন কি বিজি আছিস নাকি?”
-“না আজকে আমার তেমন কোনো কাজ নেই।তুই এক কাজ কর অফিসে চলে আয়।”
মুহিত হাসি দিয়ে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
মুহিত কলটা কেটে দিল।আহাদ বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে গিয়ে চোখ পড়লো হাতের ব্যান্ডেজের দিকে।তৃধা কত যত্ন করে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল।সেই আগের মতো কেয়ার!আহাদ কোনো আঘাত পেলে যেন তৃধাও আঘাত পেতো।আগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল আহাদের।ক্লাস টেনে থাকতে তাদের প্রেম শুরু হয়।তৃধা পড়তো গার্লস স্কুলে আর আহাদ বয়েজ স্কুলে!তবে দুটো স্কুল পাশাপাশিই ছিল।আহাদ প্রায় প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে তৃধাকে দেখতো।একদিন তৃধার কাছে ধরা পড়ে গেলে তৃধা তাকে ডেকে বললো,
-“এই তুমি প্রতিদিন আমাকে ফলো করো কেন?”
আহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের মনে সাহস সঞ্চয় করে বললো,
-“আমার তোমাকে ভালো লাগে।”
কথাটা বলেই আহাদ চোখ বন্ধ করে ফেললো।সে ভেবেছিল তৃধা হয়তো এই কথা শোনা মাত্রই থা*প্পড় মারবে।কিন্তু অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখার পরেও যখন গালে থা*প্পড় পড়লো না তখন আহাদ প্রথম এক চোখ খুলে দেখলো তৃধা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আহাদ তারপরে তার দুচোখ খুলে হালকা কেশে বললো,
-“কিছু বলবে না?”
তৃধা আহাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
-“আমার কিন্তু তোমাকে মন্দ লাগে না।”
কথাটা বলে সে সেখানে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে হাসতে হাসতে চলে গেল।আহাদের মুখে হাসি ফুটলো।এভাবেই তাদের প্রেম শুরু হলো।খুব সুন্দর কাটছিল দিনগুলো,মাসগুলো,বছরগুলো!তবে মেডিকেল ভর্তি হওয়ার পরে তৃধা পাল্টে।আহাদকে ইগনোর করতে শুরু করলো আর একদিন তো বিচ্ছেদই চেয়ে বসে।আহাদ কত কান্না করেছিল তৃধার হাত জোড়া ধরে কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অটুট ছিল।চলে গেল আহাদের হাত ছেড়ে!
বর্তমানে,
আহাদের চোখের কোণে পানি জমেছে।সে তা মুছে ফেলল।এক টান দিয়ে হাতের ব্যান্ডেজ খুলে বললো,
-“না!এইসব ড্রামাতে আমি আর বিশ্বাস করবো না।তোমাকে তো কোনো ভাবেই না আর তোমার করা ব্যান্ডেজও আমার সঙ্গে থাকবে না।আই হেট ইউ তৃধা।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না!”
কথাগুলো বলে রাগে কাঁপছে আহাদ।সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রুম থেকে বের হয়ে সোজা অফিসে চলে গেল।আয়েশা বেগম আহাদের যাওয়া দেখে বললেন,
-“আজকেও না খেয়ে চলে গেল।”
রফিকুল সাহেব বললেন,
-“যা মন চায় তাই করে কারো কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করে না।”
_____________
তৃধা পেসেন্টদের দেখে রুমে এসে বসতে সেখানে এসে হাজির হলো সৃজা।সৃজাকে দেখে তৃধার মুখে হাসি ফুটলো।সৃজা এসে তৃধাকে জড়িয়ে ধরলো।তৃধাও সৃজাকে জড়িয়ে ধরলো।তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“যাক সৃজু ম্যাডাম তাহলে ছুটি শেষ করে ফিরলো।”
-“একদম রে।বাড়ির সবার সাথে অনেক হৈ-হুল্লোড় করে কাটিয়েছি এই কয়দিন।তবে তোকেও মিস করেছি।যতই হোক তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা।”
-“আমিও তোকে মিস করেছি অনেক।তবে তোর জন্য একটা সুখবর আছে।আমি কলে বলবো ভেবেছিলাম পরে ভাবলাম না থাক সামনাসামনি বরং বলবো!”
-“কি সুখবর রে?”
-“আহাদ ইজ ব্যাক।আহাদ ফিরে এসেছে মানে তোর জিজু ফিরে এসেছে।”
সৃজা এক্সাইটেড হয়ে বললো,
-“কি বলিস?তা তোদের কথা হয়েছে?সবটা ঠিক হয়েছে দুজনের?”
তৃধা মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিল।তারপরে সৃজাকে সবটা বললো।সবটা শুনে সৃজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“চিন্তা করিস না সবটা ঠিক হয়ে যাবে।আর ও-কে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সবটা জানিয়ে দে কেন ওমনটা করেছিলি!”
-“হুম রে ঠিক বলেছিস।আহাদকে সবটা জানাতে হবে।”
———————
রুহি আর তোহা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে গল্প করছে।এমন সময় জয়ের আগমন ঘটলো।জয়কে দেখেই রুহির মেজাজটা বিগড়ে গেল।অবশ্য মেজাজ বিগড়ানো স্বাভাবিক!তিন বছর ধরে যদি এক কথায় সে আটকে থাকে মেজাজ তো বিগড়াবেই।জয় এসে রুহির সামনে দাঁড়াতে রুহি চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“কি আজকেও কি ওইটুকু বলতে এসেছিস?”
জয় শুকনো ঢোক গিলে বললো,
-“দেখ রুহি আমি অনেক সাহস নিয়ে তোর সামনে এসে দাঁড়াই পুরো কথাটা বলার জন্য।কিন্তু তোর এই ভয়ংকর দৃষ্টি দেখলেই তো আমার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়।পুরো কথা আর বলা হয় না।”
জয়ে কথা শুনে তোহা হেসে দিল।রুহি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“ওহ্ আচ্ছা এখন দোষ আমার!তিন বছর ধরে তুই ওটুকুতে আটকে আছিস তোর দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে না তাকিয়ে কি ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাবো?”
জয় মুচকি হেসে বললো,
-“তাকাতেই পারিস আমি কিছু মনে করবো না।”
রুহি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ওয়েট তোর দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি!”
এই বলে রুহি যেই জয়কে মা*রতে যাবে সে দৌড় দিকে ক্লাসের দিকে চলে গেল।জয়ের কান্ডে দেখে তোহা হাসতে হাসতে শেষ।রুহিও তার সাথে হেসে দিল।হাসি থামিয়ে তোহা বললো,
-“রুহি ও তো ভয়ে বলতে পারে না তুই বলে দিলেই পারিস।”
রুহি মুখ ভেঙচি কেটে বললো,
-“আমি কিসের জন্য বলবো ওরই বলা লাগবে।”
-“এমন চলতে থাকলে তো পরে গিয়ে কিছুই হবে না।”
-“না হলে না হবে তাও ওর বলা লাগবে!”
-“তোর ত্যা*ড়ামি আর গেল না।”
রুহি হাসি দিয়ে বললো,
-“ওটা তো যাওয়ার নয়।”
–
–
–
অফিসে বসে ফাইলগুলো চেক করছে আহাদ।মুহিত দরজায় নক করে বললো,
-“কি রে ভিতরে আসবো?”
মুহিতকে দেখে আহাদ উঠে দাঁড়িয়ে তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।তারপর হাসি দিয়ে বললো,
-“তোর আবার পারমিশন নেওয়া লাগে নাকি!আয় বস।”
মুহিত আহাদের সোজাসুজি চেয়ার টেনে বসলো।তারপরে হেসে বললো,
-“তা বল তোর কি খবর?এতোবছর পরে দেশে এসে কেমন লাগছে?”
-“ভালো লাগছে না।যার জন্য দেশ ছেড়ে চলে গেছিলাম দেশে ফিরতে না ফিরতেই তার সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছি!”
মুহিত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তোর কি তৃধার সাথে দেখা হয়েছে নাকি?”
আহাদ সব ঘটনা মুহিতকে বললো।সবটা শুনে মুহিত বললো,
-“তা তো ভালোই আন্টি তোর জন্য তৃধাকেই পছন্দ করলো শেষমেশ!তবে আহাদ’ তৃধা যখন এখন এইসব করছে মেনে নে ও-কে।অনেক বছর তো হলো।”
আহাদ চোখ রাঙিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“যা বলেছিস বলেছিস!এই কথা যেন আমি আর না শুনি।”
মুহিত নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“আচ্ছা কুল কুল!চল দুজনে গিয়ে কোথাও থেকে কফি খেয়ে আসি।”
-“কোথাও যেতে হবে কেন!অফিসেই তো সব আছে।”
-“আরে না ওই রেস্টুরেন্টে চল যেখানে আমরা স্কুল-কলেজে পড়াকালীন গিয়ে আড্ডা দিতাম!”
আহাদ মৃদু হেসে বললো,
-“আচ্ছা চল।”
________________
-“এই রেস্টুরেন্টে আসলে একটা আলাদা শান্তি লাগে তাই না তৃধা?”
-“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস কত স্মৃতিময় জায়গা!”
-“হ্যাঁ তোর আর আহাদ জিজুর প্রেমের স্বাক্ষী!”
সৃজার কথা শুনে তৃধা মৃদু হাসলো।রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে সৃজার চোখ যেতে সে বললো,
-“ওই দেখ আহাদ জিজু একটা লোকের সাথে এসেছে।”
তৃধা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আহাদ আর একটা লোক।তৃধা ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“লোকটাকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে!”
সৃজা ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,
-“আমারও রে।আচ্ছা ওয়েট আমি একটু কুশল বিনিময় করে আসি আহাদ জিজুর সাথে।”
তৃধা সৃজাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
-“দরকার নেই।দেখে মনে হচ্ছে মনমেজাজ ভালো আছে।আমাকে দেখলেই আবার তা বিগড়ে যাবে!”
-“কিন্তু……..”
-“কোনো কিন্তু না চুপচাপ কফি খা।”
আহাদ আর মুহিত গিয়ে এক পাশে বসলো।তবে তারা দুজনের কেউ তৃধাকে দেখেনি।খাবার অর্ডার দিয়ে মুহিত বললো,
-“এই যা আমি তো আমার মোবাইলটা গাড়িতে ফেলে এসেছি।আচ্ছা তুই বস আমি মোবাইলটা নিয়ে আসি।”
-“আচ্ছা যা।”
মুহিত মোবাইল আনতে চলে গেল।তৃধা আর সৃজা বিল দিয়ে চলে যেতে গেলে সৃজা গিয়ে মুহিতের সাথে ধাক্কা খেল।সৃজা পড়ে যাওয়ার আগেই মুহিত তাকে ধরে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে সৃজা বললো,
-“এই দেখে চলতে পারেন না?চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন নাকি?”
-“আপনি নিজেই তো ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি করে বের হচ্ছিলেন আমার কি দোষ!”
সৃজা কিছু বলতে যাবে তার আগে তৃধা বললো,
-“আচ্ছা বাদ দে না সৃজা।উনি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেননি।”
তৃধাকে দেখে মুহিতের মুখে হাসি ফুটলো।
-“আরে তৃধা তুমি!কেমন আছো?”
মুহিতের কথা শুনে তৃধা অবাক হয়ে বললো,
-“জ্বি ভালো আছি।তবে আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।”
-“আরে আমি মুহিত।আহাদের বেস্টফ্রেন্ড!”
তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“মুহিত!আমার তোমাকে চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু বুঝতে পারিনি।”
সৃজা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কি এই সেই কঙ্কাল মুহিত?একে তো চেনার কোনো উপায়ই নেই।কি থেকে কি হয়ে গেছে!”
মুহিত চোখ রাঙিয়ে সৃজার দিকে তাকালো।পরক্ষণেই হাসি দিয়ে বললো,
-“আমিও তো আপনাকে চিনতেই পারিনি নেহাৎ তৃধা নাম ধরে ডাকলো!তবে আমিও বুঝতে পারলাম না কালির তারা থেকে এমন রূপবতী হলেন কি করে!কোন ব্রান্ডের নাইট ক্রিম মেখেছেন নামটা জানিয়েন তো।”
#চলবে………………..
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]