#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৪
___________________
আদি হঠাৎ করে ব্রেক কষলো।আদির এহেন কাজে তোহা বেশ অবাক হলেও রুহি মিটিমিটি হাসছে!সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আদির যে তোহাকে পছন্দ হয়েছে!তোহা কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো,
-“এভাবে কেউ ব্রেক করে?আরেকটু হলে দম বের হয়ে যেতো!”
আদি নিজেকে শান্ত করে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“রুহি তুই আরেকটা উল্টাপাল্টা কথা বললে তোর খবর আছে।আর তোহা আই এম সরি এমনটা করার জন্য!”
রুহি হাত তালি দিয়ে বললো,
-“বাহ্ কেয়া সিন হ্যায়!”
আদি আর কিছু না বলে ড্রাইভ করা শুরু করলো।তোহাকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় রুহি বললো,
-“তোহাকে তোর পছন্দ হয়েছে তাই না?”
-“ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পেরেই এইসব করলি!”
রুহি হাসি দিয়ে বললো,
-“আমার কাজই তো এইসব।টেনশন করিস না তোদের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।জাস্ট ভাইয়া আর তৃধা আপুর বিয়েটা হয়ে যাক ব্যাস সব ক্লিয়ার!”
-“তৃধা আপু কে?”
-“তৃধা আপু হলো তোহার বড় বোন।আম্মু ভাইয়ার জন্য পছন্দ করেছে আপুকে।”
-“ওহ্ তা তো ভালো ব্যাপার!দুজনের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই হবে!”
-“আরে না অনেক কাহিনী আছে তো।তোহা আমাকে সব বললো আজকে!”
-“কি কাহিনী!”
(তোহা ক্লাসের ব্রেক টাইমে রুহিকে সবটা বলেছে যা তৃধা বলেছে!রুহি সেইসব আদিকে বললো।)
সবটা শুনে আদি বললো,
-“কি বলিস!তৃধা আপু’ ভাইয়ার এক্স?ভাইয়া কি রাজি হবে?”
-“এটাই তো চিন্তার!”
রুহি কথাটা বলে মুখটা মলিন করে ফেললো।
————————
তৃধা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কোনো রিক্সা না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলো।আজকে বেশ রাত হয়ে গেছে!বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা-ঘাটে তেমন মানুষও নেই!হঠাৎ করে কয়েকটা বখাটে টাইপ ছেলে এসে তাকে বিরক্ত করতে লাগলো।
-“কি হলো সুন্দরী একা একা কোথায় যাচ্ছো?আমাদেরও সঙ্গী করো!”
তৃধা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“দেখুন রাস্তা থেকে সরে যান।”
আহাদ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখলো তৃধাকে কিছু ছেলে ঘিরে রেখেছে।যা দেখে সে গাড়ি থামালো।সে গাড়ি থেকে নেমে সেদিকে যেতে গেলে দেখলো তৃধা একটা ছেলের গালে চ*ড় মেরেছে।ওই ছেলেটা তৃধার দিকে তেড়ে আসতে গেলে আহাদ গিয়ে তৃধার সামনে দাঁড়ালো।ছেলেটা আহাদকে দেখে বললো,
-“কে রে তুই?সরে যা সামনে থেকে।এই মেয়ের তো আজকে খবর আছে আমার গায়ে হাত দেওয়া!”
ছেলেটা কথাগুলো বলে আবার তৃধার দিকে এগিয়ে যেতে গেলে আহাদ তার পেট বরাবর একটা লাথি দিল।যার ফলে সে রাস্তায় পড়ে গেল। আহাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আমি থাকতে ওর গায়ে তোরা একটা টোকাও দিতে পারবি না!”
কথাটা বলে সে সবগুলো ছেলেকে ইচ্ছা মতো পিটালো।সবগুলো ছেলে দৌড়ে পালিয়ে গেল।আহাদ তাদের পিছনে যেতে গেলে তৃধা তার হাত ধরে তাকে আটকালো।তৃধা বুঝতে পেরেছে আহাদ অনেক রেগে গেছে।আহাদ নিজেকে শান্ত করে খেয়াল করলো তৃধা তার হাত ধরে আছে।আহাদ এক ঝটকা দিয়ে তৃধার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ফেললো।চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“আমার হাত ধরার কোনো অধিকার আপনার নেই।”
তৃধা কিছু বলতে যাবে এমন সময় সে দেখলো আহাদের হাত থেকে র*ক্ত পড়ছে।তৃধা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
-“আরে হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।ওয়েট আমি এখনি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।”
সে তার ব্যাগ থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে আহাদের হাতটা ধরলো।আহাদ হাতটা ছাড়াতে গেলে তৃধা বললো,
-“স্টপ আহাদ!বাচ্চামো বাদ দেও।”
তৃধা এক প্রকার জোর করেই আহাদের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল।আহাদ ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলতে গেলে তৃধা আহাদের হাত চেপে ধরে বললো,
-“আমার উপর রাগ দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করো না!”
-“আমাকে ‘তুমি’ করে সম্বোধন করা বন্ধ করুন।আর আমার জীবনের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে আর কিছু বাদ নেই।”
তৃধা মুচকি হেসে বললো,
-“আমি তো তুমি করেই বলবো।এটা আটকানোর ক্ষমতা তোমার নেই।আর সমস্যা নেই যা ক্ষতি হয়েছে পুষিয়ে নিবো চিন্তা করো না।”
-“বিরক্তিকর!”
আহাদ কথাটা বলে চলে যেতে গিয়ে থেমে গেল।তৃধার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“যাবেন কিভাবে আপনি?”
-“রিক্সা তো পাচ্ছি না।হেঁটেই চলে যাবো।”
-“ক্যাব বুক করে নিলে তো হতো।”
-“পাইনি!”
-“ওয়েট আমি চেক করে দেখছি।”
সে মোবাইল বের করে চেক করা শুরু করলো।তৃধা মনে মনে বললো,
-“এতো বড় একটা গাড়ি থাকতে নাকি আবার ক্যাব বুক করে দেওয়া লাগে!”
আহাদ চেক করে বললো,
-“কার তো পেলাম না কিন্তু বাইক আছে।”
“ওকে বাইক বুক করে দেও তাহলে।রাইডারের পিছনে বসে বাড়িতে যাবো।”
আহাদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“থাক কোনো দরকার নেই।গাড়িতে উঠে বসুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
আহাদ গাড়িতে গিয়ে বসলো।তৃধা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।আহাদ ড্রাইভ করা শুরু করলো।
-“দেখুন বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি বলে এটা ভেবেন না যে আপনার প্রতি আমার এখনো ভালোবাসা আছে।কিছুই নেই!জাস্ট সহানুভূতি দেখাচ্ছি!”
তৃধা কিছুক্ষণ আহাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“তুমি যদি সত্যি সহানুভূতি দেখাতে তাহলে বাইকই বুক করে দিতে আহাদ!আমি ভালো করেই জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো!”
আহাদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“আপনার এইসব ভাবনা নিজের কাছেই রাখুন।এইসব প্রকাশ করে মানুষকে বিরক্ত করবেন না।”
তৃধা আর কিছু না বলে মৃদু হাসলো।আহাদ তৃধাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।তৃধা আহাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমাদের বাড়ি কোথায় তা মনে আছে এখনো?”
-“কিছু জিনিস ভুলা অসম্ভব!বাই দ্যা ওয়ে গাড়ি থেকে নামুন আমার বাড়ি যেতে হবে।”
তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ব্যবহার তো দেখছি যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে!”
আহাদ’ তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপনি ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য না।”
আহাদের কথায় কষ্ট পেলেও তৃধা নিজেকে সামলে বললো,
-“বাড়িতে চলো!”
-“কোনো ইচ্ছে নেই।গাড়ি থেকে নেমে যান প্লিজ।”
তৃধা আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।তৃধা গাড়ি থেকে নামতে আহাদ বললো,
-“ওইসব রাস্তা দিয়ে একা একা আসা বাদ দেওয়া উচিত।”
তৃধাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আহাদ গাড়ি চালিয়ে চলে গেল।তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“আমি আজ শিওর হয়ে গেলাম তুমি যে এখনো আমাকে ভালোবাসো!”
তৃধা বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
—————————
সবাই মুভি দেখতে ব্যস্ত কিন্তু অয়নের চোখ এশাকে দেখতে ব্যস্ত!মুভির একেকটা সিনে এশা একেক রকম এক্সপ্রেশন দিচ্ছে যা দেখতে বেশ লাগছে অয়নের কাছে।মুভি শেষ হতে এশা বললো,
-“অয়ন মুভিটা কেমন লাগলো?অনেক সুন্দর না!”
অয়ন মনে মনে বললো,
-“আমি তো মুভি না তোকেই দেখতে ব্যস্ত ছিলাম।তোকে তো বেশ সুন্দরই লেগেছে কিন্তু তা তো বলা বারণ!”
অয়নকে চুপ থাকতে দেখে এশা বললো,
-“কিরে কিছু বলছিস না কেনো?”
-“হ্যাঁ সুন্দর ছিল!”
তারপরে অয়ন আর এশা তাদের বাকি কলিগদের সাথে রাতের খাবার খেল।সবাই যার যার মতো চলে যেতে শুরু করেছে।বাইরের আবহাওয়া তেমন ভালো না!এশা অয়নের কাছে গিয়ে বললো,
-“আচ্ছা থাক তাহলে আমি বাড়িতে গেলাম।”
-“চল দুজনে একসাথেই যাই।”
-“না তোর বাড়ি তো উল্টো দিকে।তুই যা আমি চলে যেতে পারবো!”
-“উল্টো দিকে তো কি হয়েছে?রাত ভালোই হয়েছে আমি তোকে একা ছেড়ে দিতে পারবো না এভাবে!”
এশা আর কথা বাড়ালো না।অয়ন গাড়ি নিয়ে এশাদের বাড়ির সামনে দাঁড়ালো।এশা গাড়ি থেকে নেমে বললো,
-“থ্যাংকস রে ভাই!আয় বাড়ি থেকে ঘুরে যা।”
এশার মুখে ভাই ডাক শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেল অয়নের।তাও সে নিজেকে শান্ত রেখে বললো,
-“আজকে না অন্য একদিন যাবো।”
-“আচ্ছা তাহলে সাবধানে যা।”
এশা কথাটা বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো,
-“ওফ!একদিকে ভালোবাসা বুঝে না আবার ডাকে ভাই!মানে আমি মরে যাই না কেন!”
অয়ন তার বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।বাড়ির ভিতরে যেতেই বৃষ্টি শুরু হলো।অয়ন হাসি দিয়ে বললো,
-“ওয়াও!পারফেক্ট টাইমিং।”
_________
আহাদ তার রুমের বিছানায় বসে ব্যান্ডেজ করা হাতটার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“নিজের ইচ্ছায় সম্পর্কটা শেষ করে দিয়ে এখন এইসব মিথ্যা নাটক করার মানে কি তৃধা?দয়া করছো তুমি আমার প্রতি?হুম বুঝেছি দয়াই করছো।ভাবছো আমি তোমাকে ছাড়া কষ্টে ম*রে যাচ্ছি তাই এইসব করছো।আমি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবো না!”
কথাগুলো বলে আহাদ ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় মনোনিবেশ করলো!
_
_
_
বেলকনিতে বসে বৃষ্টি পড়া দেখছে তৃধা।বৃষ্টি দেখতে তার বেশ ভালোই লাগে।আহাদের সাথে যখন তার সম্পর্ক ছিল তারা একসাথে প্রায়ই বৃষ্টিতে ভিজতো।এইসব ভাবতেই তৃধার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।পরক্ষণেই আজ আহাদের তার প্রতি যত্নশীল ব্যবহার মনে পড়তেই তৃধার মুখে হাসি ফুটলো।
-“আমি জানতাম আহাদ তুমি যে আমাকে এখনো ভালোবাসো।শুধু আমার সেদিনের বিচ্ছেদ চাওয়াটাই তোমাকে আমার সাথে ওমন রুক্ষ ব্যবহার করতে বাধ্য করে!ভালোবাসার তুলনায় ঘৃণার পাহাড়টা একটু বেড়ে গেছে।কিন্তু আমি আবার আমার প্রতি তোমার আগের সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে আনবো।তুমি আমার ছিলে আমারই হবে!আমি তোমাকে দ্বিতীয় বার আর হারাতে পারবো না।”
চোখের পানি মুছে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো তৃধা।
#চলবে……………..
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]