#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৩
___________________
আহাদ রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তোর কি আমার এমন হওয়া নিয়ে খুব বেশি সমস্যা নাকি?”
-“শুধু খুব না!খুব খুব খুব বেশি সমস্যা।”
-“তা তুই এতো সমস্যা নিয়ে কিভাবে টিকে আছিস রুহি?”
এশা প্রশ্নটা করে আহাদের পাশে গিয়ে বসলো।আহাদ সেখানে এক সেকেন্ডও না বসে পাশের সোফায় গিয়ে বসলো।আহাদের এমন কাজে এশা বেশ লজ্জায় পড়লো।আহাদ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললো,
-“এশা তুই ভালো করেই জানিস এমন গা ঘেঁষে বসা আমার পছন্দ না।তাই উঠে আসলাম!”
এশা ছলছল চোখে আহাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেকে সামলে বললো,
-“তুই আর পাল্টাবি না আহাদ!আমি ভেবেছিলাম বিদেশ থেকে ফিরে হয়তো এইসব অভ্যাস চলে যাবে তোর।”
আহাদ মৃদু হেসে বললো,
-“অভ্যাস পরিবর্তন করা এতো সহজ না।অভ্যাস পরিবর্তন করা যদি এতোই সহজ হতো তাহলে মানুষকে কখনো অভ্যাসের দাস বলা হতো না!”
এশা কিছু বলার আগের রবিউল সাহেব বললেন,
-“আহ্ এশা!আহাদ যা পছন্দ করে না তা তুই করিস না।আমি তোকে আগেও বারণ করেছি।”
এশা আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।আদি পরিস্থিতি সামলাতে বললো,
-“আরে এইসব বাদ দেও।চলো কিছুক্ষণ বসে জমিয়ে আড্ডা দেই।”
বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিল সবাই মিলে।তারপরে সবাই একসাথে রাতের খাবার খেল।আহাদ আর রুহি বাড়িতে ফিরতে আয়েশা বেগম বললেন,
-“খেয়েদেয়েই এসেছিস তাহলে একবারে?”
রুহি বললো,
-“আর বলো না মা,কাকা না খাইয়ে ছাড়লোই না।”
আহাদ এসে রুহির পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমরা খেয়েছো?”
আয়েশা বেগম বললেন,
-“হ্যাঁ খেয়েছি।আদি কল করে আমাদের যেতে বলেছিল কিন্তু গেলাম না আর!ও বললো তোরা ওদের বাড়িতে খাবি তাই আমরা খেয়ে নিয়েছি।”
-“ভালোই করেছো।অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।”
আহাদ কথাটা বলে তার রুমের দিকে চলে গেল।আহাদ যেতে রুহি বললো,
-“ভাইয়া না এশা আপুর সাথে আবার খারাপ ব্যবহার করেছে আম্মু!”
-“কি করেছে আবার?”
রুহি সবটা বললো।সবটা শুনে আয়েশা বেগম বললেন,
-“কি আর বলবো এই ছেলে তো এমনই।ওইসব একদমই পছন্দ করে না।”
———————–
তৃধা তার রুমে বসে স্টাডি করছে।তোহা তার জন্য আর নিজের জন্য কফি বানিয়ে এনে বললো,
-“ডাক্তার হওয়া কত কষ্ট তাই না আপু!এতো পড়ে ডাক্তার হলি কিন্তু তাতে কি ডাক্তার হয়েও পড়া লাগে!এর জন্য আমি এইসবে না গিয়ে বিবিএ করতেছি!”
তোহার কথা শুনে হাসলো তৃধা।কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
-“তা তুই এখনো না ঘুমিয়ে এখানে কি করছিস?কালকে তো ভার্সিটি আছে!”
-“ঘুম আসছে না।তোর ইতিহাস শোনার পরে থেকে ওটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”
-“ওইসব নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা কর।কেবল ফাস্ট ইয়ার!”
তোহা নাক ফুলিয়ে বললো,
-“আপু তুই এখন থেকেই আমাকে ভয় দেখানো শুরু করিস না তো!”
তোহার কথা শুনে তৃধা হেসে দিল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আচ্ছা রুহির সাথে তোর ফ্রেন্ডশিপ কবে থেকে?”
-“ক্লাস এইট থেকে।ও আগে অন্য স্কুলে ছিল পরে আমাদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিল।আগের স্কুলে নাকি রাজনীতির বিষয় নিয়ে ঝামেলা হতো!”
-“ওহ্ আচ্ছা তাহলে তো আহাদ কানাডায় যাওয়ার পরে তোদের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে!”
-“আহাদ ভাইয়া কত বছর আগে কানাডায় চলে গেছিল?”
-“আমি যখন ফাস্ট ইয়ারে তখনই!প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে!”
-“মানে তুই মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরে বাবা এমনটা করেছিল?”
-“হুম!”
-“কি অদ্ভুত বিষয়!আহাদ ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় তুই মেডিকেলে চান্স তো ঠিকই পেয়েছিস তাহলে কিভাবে তোর পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছিল?”
তৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“থাক বাদ দে এইসব।”
-“আচ্ছা যা বাদ দিলাম।”
________________________
সকাল বেলা রাহেলা বেগম ব্রেকফাস্ট রেডি করে তৃধা আর তোহাকে দিলেন।তোহা তা বক্সে ভরে ব্যাগে নিয়ে বললো,
-“আম্মু আমি ভার্সিটিতে গিয়ে খেয়ে নিবো এখন খেতে মন চাচ্ছে না।গেলাম আমি টাটা!”
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তোহা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।রাহেলা বেগম রাগান্বিত হয়ে বললেন,
-“এই মেয়েটা দিন দিন বেশি বেড়ে গিয়েছে একদম!”
তৃধা সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ করে বললো,
-“আচ্ছা আম্মু আমিও যাই আমার আবার আজকে আইসিইউ-র কিছু পেসেন্টকে চেক-আপ করতে হবে।বেশি লেট হয়ে গেলে সমস্যা!”
-“আচ্ছা যা।”
-“আর শোনো আম্মু তুমি কিন্তু তোহাকে বেশি বকাবকি করো না বাড়িতে আসলে।”
রাহেলা বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।তৃধা মৃদু হেসে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
ভার্সিটির ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে রুহি আর তোহা।এমন সময় পিছন থেকে জয় বললো,
-“রুহি একটু দাঁড়া!”
রুহি আর তোহা দাঁড়িয়ে পড়লো।তোহা মুচকি হেসে বললো,
-“তোর আশিক চলে এসেছে!”
রুহি চোখ রাঙিয়ে তোহার দিকে তাকালো।রুহি আর তোহাকে দাঁড়াতে দেখে জয় দৌড়ে তাদের সামনে গিয়ে বললো,
-“রুহি আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
রুহি তার হাত জোড়া বেঁধে বললো,
-“আমি তোকে…..এটুকুর পরে যা বলবি বল!সেই কলেজ থেকেই এটা শুনে আসছি।”
জয় মাথা নিচু করে বললো,
-“এর বেশি তো বলতে পারি না এটাই তো সমস্যা!”
রুহি চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“তাহলে তোর মতো ডাফারের কথা শোনারও কোনো মানে হয় না!”
রুহি কথাটা বলে তোহার হাত টেনে নিয়ে চলে গেল।তোহা যেতে যেতে বললো,
-“আহারে বেচারার মুখটা একদম চুপসে গেছে।”
রুহি তোহাকে ক্লাসে নিয়ে গিয়ে বললো,
-“তুই চুপ কর।নাহলে তোর মুখে কিন্তু সুপার গ্লু লাগিয়ে দিবো!”
তোহা আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।জয় ক্লাসে এসে কিছুটা পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে রুহির দিকে তাকালো।রুহি তার দিকে একবার তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ডাফার কোথাকার!”
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আনমনে বসে আছে এশা।আহাদের গতকালের ব্যবহারে বেশ কষ্ট পেয়েছে সে!
-“আমার ভালোবাসা কি কোনোদিনও বুঝবি না আহাদ?যার জন্য আমার এতো ভালোবাসা সে আমায় সর্বদা এভাবে আঘাত করে!আমারও তো খারাপ লাগে,কষ্ট হয়!”
কথাগুলো বলতেই তার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।ক্লাসের দিকে যেতে গিয়ে অয়ন খেয়াল করলো এশা একা একা ক্যাম্পাসে বসে আছে।অয়ন এশার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“কি রে ক্লাস করাতে না গিয়ে এখানে বসে আছিস কেনো?”
এশা নিজেকে সামলে বললো,
-“তুই যা আমি একটু পরে যাচ্ছি!”
-“কি হয়েছে তোর এশা?”
-“আহাদ আমাকে কখনোই বুঝবে না রে!ও আমার ভালোবাসা বুঝার চেষ্টাই করে না!”
অয়ন মনে মনে বললো,
-“যেমন তুই তোর প্রতি আমার ভালোবাসা বুঝিস না!”
তারপর নিজেকে সামলে বললো,
-“সিরিয়াসলি এশা!তোর ক্লাসে স্টুডেন্টরা তোর জন্য ওয়েট করতেছে আর তুই বসে বসে এইসব ভাবছিস?”
এশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে।তুই ও তোর ক্লাসে যা তোর জন্যও তোর স্টুডেন্টরা বসে আছে!”
এশা কথাটা বলে চলে যেতে গেলে অয়ন বললো,
-“আজকে ভার্সিটি শেষে তোর কোনো কাজ আছে?”
-“না।কেনো?”
-“কালকে সব কলিগরা মিলে প্লান করেছি মুভি দেখতে যাবো।তুই তো কালকে তাড়াতাড়ি চলে গেছিলি তাই আর জানানো হয়নি।আজকে যেহেতু তোর কোনো কাজ নেই তাহলে চল সবাই মিলে আজকে একসাথে মুভি দেখতে যাই!”
-“না রে আমার মনমেজাজ ঠিক নেই।”
-“তোর মনমেজাজ ঠিক করার জন্যই বললাম!”
এশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আচ্ছা যাবো নে।”
এশা কথাটা বলে ক্লাসের দিকে চলে গেল।অয়নের মুখে হাসি ফুটলো!
–
–
–
ভার্সিটি শেষে এশা দেখলো আদি ভার্সিটির গেটে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এশা তার কাছে গিয়ে বললো,
-“কি রে তুই আজকে কোথা থেকে হাজির হলি?”
-“আজকে আমার ক্লাস এই টাইমেই ছিল তাই ভাবলাম তোকে যাওয়ার পথে নিয়ে যাই।আমার ভার্সিটি থেকে যাওয়ার পথেই তো তোর ভার্সিটি পরে!”
-“তুই এক কাজ কর রুহিকে নিয়ে যা আমি আজকে আমার কলিগদের সাথে মুভি দেখতে যাবো!”
-“কি?আমি ও-কে নিয়ে যেতে পারবো না।”
এর মধ্যে রুহি আর তোহা এসে সেখানে হাজির হলো।আদিকে দেখে রুহি বললো,
-“আরে ড্রাইভারের বদলে কি আজকে খাসি ভাই এসেছে নাকি!”
আদি কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার চোখ আটকে গেল তোহাকে দেখে।এশা রুহির কথায় হাসি দিয়ে বললো,
-“আরে না ওর ক্লাস শেষ তাই আমাকে নিতে এসেছিল।তবে তুই বরং তোহাকে নিয়ে ওর সাথে চলে যা।আমি আমার কলিগদের সাথে একটু মুভি দেখতে যাবো আজকে!”
রুহি কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
-“আমাদের জিনা হারাম করে তোমরা স্যার-ম্যাডামরা মুভি দেখতে যাচ্ছো!”
এশা হেসে দিল।তারপরে আদির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওদের সাবধানে নিয়ে যাবি।”
-“আচ্ছা আপু তুই যা।”
এশা চলে গেল।রুহি আর তোহা গাড়িতে উঠে বসতে আদি ড্রাইভ করা শুরু করলো।কিছুক্ষণ পরে হালকা কেশে আদি বললো,
-“রুহি তোর পাশের জনের সাথে তো পরিচয় করালি না!”
-“ও হলো তোহা আমার বেস্টফ্রেন্ড আর তোহা ও হলো খাসি না মানে আদি আমার চাচাতো ভাই!”
আদি চোখ রাঙিয়ে রুহির দিকে তাকালো।তোহা হাসি দিয়ে বললো,
-“উনাকে খাসি বলিস কিসের জন্য?”
-“খাসিকে তো খাসিই বলবো!”
-“রুহি তুই কিন্তু বেশি শুরু করেছিস।আর তোহা আপনি না না তুমি!আমরা সেম এইজ!তুমি করে বলাটাই ঠিক।তুমিও তুমি করেই বলো আমাকে।”
রুহি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“প্রথম দেখাতেই তুমি!বাহ্ তুই তো দেখছি দশ কাঠি উপরে থাকিস আদি।”
আদি হাসি দিয়ে বললো,
-“যেটা মানানসই সেটা বলাই ভালো!”
রুহি তোহার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হ্যাঁ একদম ঠিক এর জন্য তোহা তোকে তুই করে বলবে।আফটার অল আমার ভাই মানে তো তোহারও ভাই!”
চলবে……………..
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]