#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০২
___________________
আহাদ তার রুমের বেলকনির দোলনায় বসে তৃধার কথা ভাবছে।এতোবছর পরে তৃধাকে দেখলো!যতটা ভালো লাগা কাজ করছে ঠিক ততটাই ঘৃণা কাজ করছে।
-“তৃধা কেমন যেন অগোছালো হয়ে গিয়েছে।চোখ-মুখ ফ্যাকাসে,মনে হয় আগের চেয়ে আরো বেশি রোগা হয়েছে!খাওয়া-দাওয়া করে না নাকি ঠিকভাবে?……এটুকু বলে সে থামলো।পরক্ষনেই চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“নাহ্!এইসব নিয়ে আমি আর কিছু ভাববো না।ওই মেয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই আমার জীবনে।সে আমার কেউ না!”
কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহাদ।কিছুই ভালো লাগছে না তার।যার থেকে দূরে থাকতে চায় সেই তার কাছে চলে আসছে বারবার!
–
–
–
সকালবেলা নাস্তা করতে করতে রুহি বললো,
-“আম্মু আমার হিসাব একদম মিলে গেছে।”
আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
-“কিসের হিসাব?”
রুহি গতকালের সব ঘটনা আয়েশা বেগমকে বললেন।আয়েশা বেগম সবটা শুনে বললেন,
-“তার মানে ওরা একে-অপরকে আগে থেকে চিনে?”
-“হ্যাঁ!তবে ভাইয়া না তৃধা আপুকে সহ্যই করতে পারে না।কিন্তু কেন?এই কেনোর উত্তরই পেলাম না।”
আয়েশা বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
-“আহাদ যা ছেলে ও তো কিছুই মুখ খুলে বলবে না!আমার মনে হয় তৃধার সাথেই কথা বলতে হবে।”
রুহি’ আয়েশা বেগমের কথায় সম্মতি জানালো।
________________
সোফায় বসে সকালের নাস্তা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তৃধা।তার চোখ-মুখ ফুলে আছে,দেখে মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি!সবটা লক্ষ করলেন রাহেলা বেগম।তিনি গিয়ে তৃধার পাশে বসে বললেন,
-“কি হয়েছে মা তোর?”
তৃধা নিজেকে সামলে মৃদু হেসে বললো,
-“কই আম্মু আমার আবার কি হবে!আমি তো ঠিকই আছি।”
-“চোখ-মুখ ফুলে আছে,নাস্তা না খেয়ে নাড়াচাড়া করছিস আর বলছিস তুই ঠিক আছিস!”
-“আরে আম্মু কিছুই হয়নি।এমনি খেতে ইচ্ছা করছে না।আর চোখ-মুখ ফুলে আছে রাতে ঘুম হয়নি ঠিকভাবে!”
-“কিন্তু এই ঘুম না হওয়ার কারণটাই তো আমি জানতে চাচ্ছি।”
-“কোনো কারণ নেই!এমনিই ঘুম হয়নি।”
-“তৃধা তুই কিন্তু আমাকে মিথ্যা বলতে পারিস না এটা তুই নিজেও ভালো করে জানিস!”
তৃধা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।রাহেলা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।রাহেলা বেগম তৃধার পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
-“কি হয়েছে মা বল আমায়!”
তৃধা সবটা রাহেলা বেগমকে বললো।সবটা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে রাহেলা বেগম বললেন,
-“আহাদ!মানে তো রুহির ভাই।আহাদই কি সেই ছেলে?”
তৃধা চোখের পানি মুছে বললো,
-“হ্যাঁ আম্মু আহাদই সেই ছেলে যার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করছি!”
-“আরে আমি তো আহাদের সাথেই তোর বিয়ের বিষয়ে কথা বলেছি।আহাদের মা আয়েশার সাথে তো আমার ভালো সম্পর্ক!আমরা এক কলেজেই চাকরি করতাম।”
তৃধা খুশি হয়ে বললো,
-“কি?তুমি আহাদের সাথেই আমার বিয়ের কথা বলছো?”
-“হ্যাঁ!”
হঠাৎ তৃধার মুখ মলিন হয়ে গেল।সে বললো,
-“কিন্তু আহাদ তো এই বিয়েতে রাজি হবে না!”
-“কেনো?”
-“আম্মু’ বাবা আমাকে উনার মাথায় হাত রেখে কসম কাটিয়েছিল জানি আমি আহাদের সাথে সমস্ত সম্পর্ক নষ্ট করে দেই।আমাদের সম্পর্কের কারণে নাকি আমার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল।বাবা আরো বলেছিল আমি যদি কসম না মানি তাহলে নাকি উনার মরা মুখ দেখবো!কিন্তু আম্মু আমি তো কসম মেনেছিলাম।নিজের বুকে পাথর চেপে আহাদের সাথে সেদিনই সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে এসেছিলাম।জানো আম্মু ও না একদম বাচ্চাদের মতো কান্না করে বলেছিল আমাকে ছাড়া ও ভালো থাকবে না।কিন্তু আমি ওর কোনো কথাই শুনিনি বাবার কথাই রেখেছিলাম!কিন্তু কি হলো তাতে?বাবা তো আমাদের মাঝে থেকে ঠিকই হারিয়ে গেল।”
কথাগুলো বলে কেঁদে দিল তৃধা।রাহেলা বেগম ছলছল চোখে বললেন,
-“কি তোর বাবা এইসব করিয়েছিল?আমি তো জানতামই না কিছু!”
তৃধা কিছুক্ষণ কান্না করে নিজেকে সামলে বললো,
-“না আমি এতো সহজে হাল ছাড়বো নাহ্।বিয়ে করলে আমি আহাদ আহমেদ খানকেই করবো!ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ!”
তৃধার কথা শুনে রাহেলা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
-“এই না হলে আমার মেয়ে!”
তোহা হাই তুলতে তুলতে রাহেলা বেগম আর তৃধার মাঝে বসে বললো,
-“আপু তোর জীবনের এই ইতিহাসটা আমাকে না জানিয়ে পারলি কি করে?”
তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই তুই না রুমে ঘুমাচ্ছিলি?শুনলি কি করে তুই?”
-“তোর কান্না শুনে ঘুম ভেঙে গেছে।যা জোরে জোরে সবটা বলছিলি এমনিই শোনা যাচ্ছিল!”
তৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“অনেকদিনের লুকানো কষ্ট তো!বলার সময় নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।”
তোহা থুতনিতে হাত দিয়ে ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,
-“আহাদ ভাইয়াকে রাজি করাবি কি করে আপু?শপিংমলে উনার যা অ্যাটিটিউড দেখলাম!”
তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“আমি যখন আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম আমিই আবার আমার করে নিবো!আর এটা আমার পারতেই হবে।”
–
–
–
ব্রেকফাস্ট করে নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে আহাদ।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে দেখলো আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে তাই সে রিসিভ করলো না।কলটা কেটে গেল।কিছুক্ষণ পরে আবার কল আসলো।সে এবার কলটা রিসিভ করতে অপাশ থেকে তৃধা বললো,
-“অন্য নাম্বার থেকে কল করলাম তাও ধরতে এতো টাইম লাগে!”
কণ্ঠস্বর শুনেই আহাদ বুঝতে পারলো এটা তৃধা।সে কিছু না বলে কলটা কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে বিছানায় ছুড়ে মারলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“এই মেয়ের কি সমস্যা!নিজেই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল আর এখন এমন করতেছে।নতুন ড্রামা শুরু করেছে!”
তৃধা মোবাইলটা হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে আছে।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“এভাবে কলটা কেটে দিলে আহাদ?মোবাইলটাও অফ করে ফেললে!এতোটা অভিমান!”
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“সমস্যা নেই।আমি আবার তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি করবো!এতো সহজে ছাড়ার পাত্রী আমি না মি.খান!”
কথাগুলো বলে হেসে দিল তৃধা।তাদের যখন সম্পর্ক ছিল সে বেশিরভাগ সময়ই আহাদকে মি.খান বলে ডাকতো।এটা বলে ডাকতেই তার বেশি ভালো লাগতো!এতো স্মৃতি ভুলা কি সম্ভব নাকি!এগুলো আঁকড়েই তো সে এতোদিন বেঁচে ছিল।তৃধার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই সে তা মুছে ফেলে উজ্জ্বল হাসি দিল!
—————
-“একা একা এতো কাজের চাপ না নিলেও তো পারো!ছুটির দিনও কাজ করা লাগছে তোমার।”
স্টাডি রুমে বসে অফিসের কাজ করছিল আহাদ।রফিকুল সাহেবের কথা শুনে সে বললো,
-“কাজের মধ্যে থাকতে আমার ভালো লাগে।মনের শান্তি পাই!”
-“শুধু কাজ করলেই তো হবে না বাড়ির লোকদেরও তো একটু সময় দিতে হবে।এতোদিন পরে বিদেশ থেকে ফিরেছো মা-বোনকে একটু সময় দেও;আমাকে না দিলেও চলবে!”
আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কেনো তুমি কি বাইরের লোক নাকি?”
-“তা নয় তবে তোমার আর আমার কোনো কিছুই তো ম্যাচ খায় না!”
-“তারপরেও আমরা বাবা-ছেলে!মা আর বোনকে সময় দিতে গেলে তোমাকেও দিতে হবে এর জন্যই তাদের সময় দেই না আমি!”
রফিকুল সাহেবের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।এই ছেলেকে তিনি জীবনেও শুধরাতে পারবেন না।এ সারাজীবন এমন খাপছাড়াই থাকবে!হঠাৎ করে সেখানে আহাদের চাচাতো ভাই আদি এসে হাজির হলো।আদি এসে বললো,
-“ভাইয়া তুমি এসেছো তো কম দিন হলো না আমাদের বাড়িতে তো একবারও গেলে না!”
আদির কথা শুনে হাসি দিয়ে আহাদ বললো,
-“তোদের সবার সাথেই তো দেখা হয়েছে তা আর বাড়িতে গিয়ে কি হবে!”
-“এ আবার কি কথা!”
-“এগুলাই তোমার আহাদ ভাইয়ার কথা।”
কথাটা বলে রফিকুল সাহেব চলে গেলেন।আহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এসে পড়েছিস যখন তাহলে চল একসাথে লাঞ্চ করি!”
-“আমি খেয়ে এসেছি ভাইয়া।”
-“তো কি হয়েছে!একদিনে দুইবার খেলে কিছু হয় না।”
আহাদ জোর করে আদিকে নিয়ে খেতে বসালো।সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খাচ্ছে এমন সময় রুহি আদিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না খাসি নাকি খাসির মাংস খাচ্ছে!”
আদি চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“রুহি একদম এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।”
-“যা সত্যি তাই বললাম উল্টাপাল্টা কই!”
আদি’ আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“চাচি মা দেখছো তোমার মেয়ে আমাকে কি সব বলে!”
আয়েশা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,
-“রুহি একদম এইসব কথা বলবি না আদিকে।মা*র খাবি কিন্তু তুই আমার হাতে।আদি বাবা তুই ভালো রে খা তো ওর কথা বাদ দে।”
রুহি আর কিছু না বলে আদির দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি কাটলো।
/
/
/
-“আজ তোর সময় হলো আমাদের বাড়িতে আসার!”
রবিউল সাহেবের কথা শুনে হাসি দিয়ে আহাদ বললো,
-“জানোই তো কাকা আমি এমনই!”
এশা সবার জন্য চা আর নাস্তা নিয়ে এসে বললো,
-“এরজন্যই তো আহাদ সবার থেকে আলাদা।”
রুহি পাশে থেকে বললো,
-“একটু বেশিই আলাদা!”
#চলবে……………………
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]