#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১২(অন্তিম পর্ব)
___________________
তৃধার মুখে হাসি ফুটলো।রুমা বেগমের কথায় সে যতটা না কষ্ট পেয়ে ঠিক ততটাই আনন্দ পেয়েছে আহাদ তার পাশে আছে দেখে!রফিকুল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে রুমা বেগম বললেন,
-“দেখলি তো তোর ছেলে আমার সাথে কেমন ব্যবহার করলো!”
রফিকুল সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,
-“এতোদিন আহাদের কথাবার্তা নিয়ে আমার খুব সমস্যা ছিল।তবে আজ প্রথমবার ও যা যা বলেছে তার সাছে আমি একমত।”
রফিকুল সাহেব কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেলেন।রুমা বেগম চোয়াল শক্ত করে বললেন,
-“আমি আর এই বাড়িতে এক মুহুর্ত থাকবো না।”
আয়েশা বেগম গিয়ে রুমা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“আপা এমনটা করবেন না।কালকে বৌভাতের অনুষ্ঠান আছে তারপরে না হয় যেয়েন।”
রুমা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বললেন,
-“আরে আমি সবটা মজা করে বলেছি।”
আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
-“মানে?”
-“আরে আদি আমাকে সবটা বলেছিল ওদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে!তাই আমি ভাবলাম একটু পরীক্ষা করেই দেখি আহাদ ও-কে এখনো ভালোবাসে নাকি!আর পরীক্ষার ফলাফল দেখে আমার বুঝা হয়ে গেছে আহাদ এখনো তৃধাকে ভালোবাসে।”
কথাগুলো বলে রুমা বেগম তৃধার কাছে গিয়ে বললেন,
-“মা আমাকে ভুল বুঝো না।”
-“না ফুপি সমস্যা নেই কোনো।আপনি ওই কথাগুলো না বললে আমিও জানতাম না আহাদের যে আমার প্রতি এখনো এতোটা খেয়াল আছে!”
রুমা বেগম হাসি দিয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।
রাতের বেলা আহাদ বসে বসে বই পড়ছে আর তৃধা সৃজার সাথে মোবাইলে কথা বলছে।সৃজার সাথে কথা বলা শেষ হতে তৃধা বললো,
-“আজকে আমি খুব খুশি হয়েছি আহাদ।”
আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কেনো?”
-“এই যে এটা তো শিওর হলাম তুমি সবসময় আমার পাশে আছো।”
আহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আমার ওতোটা রিয়েক্ট করাও ঠিক হয়নি।ফুপি তো নাকি মজা করে বলেছে।”
-“হ্যাঁ তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়েছে।”
আহাদ আর কিছু না বলে বই পড়ায় মন দিল।তৃধা আহাদের থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বললো,
-“বউ বসে আছে সামনে কোথায় বউয়ের সাথে গল্প করবে তা না গল্পের বইতে মুখ গুঁজে বসে আছে।”
-আমার জন্য এটা বেস্ট!”
তৃধা আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে শুয়ে পড়লো।আহাদও কিছুক্ষণ পরে শুতে গিয়ে দেখলো তৃধা ঘুমিয়ে পড়েছে।আহাদ কিছুক্ষণ তৃধার দিকে তাকিয়ে থেকে তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
-“ভালোবাসি!অনেক বেশি ভালোবাসি!”
পরেরদিন,
আহাদ আর তৃধার বৌভাতের অনুষ্ঠান শুরু হলো।তৃধা আহাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সো মিস্টার আপনার মনে কি আমার জন্য আবার ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে?”
আহাদ মৃদু হেসে বললো,
-“যেই ভালোবাসা শেষই হয়নি তা আবার নতুন করে কি সৃষ্টি হবে!”
তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“স্বীকার করলে তাহলে?”
-“হ্যাঁ!স্বীকার না করে তো আর উপায় নেই।বিয়ে যখন হয়ে গেছে সারাজীবন তো একসাথেই কাটাতে হবে তাই ভাবলাম স্বীকার করেই নি।”
দুজনে একসাথে হেসে দিল।রুহি জয়কে নিয়ে এসে রফিকুল সাহেব আর আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়া করিয়ে বললো,
-“বাবা-মা আমি জয়কে ভালোবাসি।”
আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
-“তুইও এইসব শুরু করে দিলি?”
জয় মাথা নিচু করে বললো,
-“আন্টি আমি রুহিকে অনেক ভালোবাসি।আমি ও-কে খুব ভালো রাখবো।”
রফিকুল সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,
-“আমাদের ছেলে-মেয়ে দুজনই এডভান্স।আমাদের আর তাদের জন্য পাত্র-পাত্রী খোঁজা লাগবে না কষ্ট করে।”
রফিকুল সাহেবের কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে দিলেন।তৃধা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করেছে এশা যেন কেমন করে আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।যা দেখে তৃধা আহাদকে বললো,
-“আচ্ছা এশা কি তোমাকে পছন্দ করতো?”
-“হয়তো!জানি না আমি।”
-“কিন্তু ও তোমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিল তা দেখে তো মনে হলো হয়তো পছন্দ করে।”
-“করুক।আমাকে যেই পছন্দ করুক না কেনো আমার পছন্দ একজনেই সীমাবদ্ধ ছিল।তাই এইসব নিয়ে কথা না বলাই বেটার।”
তৃধা আর কিছু না বলে নিঃশব্দে হেসে দিল।
কিছুদিন পরে এশা আর অয়ন দেখা করলো।অয়ন হাসি দিয়ে বললো,
-“তুই আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিস যা দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি!”
-“অয়ন আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
-“বল আমি তো তোর কথা শোনার জন্য সর্বদা বসে থাকি।”
-“অয়ন আমি এই কয়দিন অনেক ভেবে দেখেছি।তুই ছাড়া আর গতি নেই!”
অয়ন ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মানে?”
-“আমি আমার জীবনের নতুন অধ্যায় তোর সাথে শুরু করতে চাই!”
-“সত্যি?”
-“হ্যাঁ।”
অয়ন হেসে দিল কিন্তু তার চোখে পানি।এশা অয়নের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
-“ভালোবাসাটা এখনো সৃষ্টি হয়নি তবে তোর এতো ভালোবাসা দেখে সৃষ্টি হতে সময় লাগবে না।”
তারপরে দুজনে একসাথে হেসে দিল।
–
–
–
-“এশা তুই বিয়ে করে ফেলেছিস।”
রবিউল সাহেবের কথা শুনে এশা বললো,
-“হ্যাঁ বাবা…আমি আর অয়ন বিয়ে করে ফেলেছি।”
-“তা আমাকে আগে বলতি।আমার একমাত্র মেয়ে তোর বিয়ে আমি ধুমধাম করে দিতাম।”
অয়ন পাশে থেকে বললো,
-“আসলে আমার মতো অনাথ ছেলেকে আপনি নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নেন নাকি সেই ভয়ে এশা এমনটা করেছে।”
এশা চোখ রাঙিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“অয়ন একদম এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।”
রবিউল সাহেব অয়নকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“তোমাকে আমার মেয়ের জামাই হিসেবে আমার খুব পছন্দ হয়েছে বাবা।”
আদি পাশে থেকে বললো,
-“আমারও দুলাভাই হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়েছে!”
এশার মুখে হাসি ফুটলো।
–
–
–
একবছর পরে,
আহাদ আর তৃধার সব ঝামেলা মিটে গিয়েছে।তারা এখন সুখী দম্পতি!আজকে মুহিত আর সৃজার বিয়ে।আহাদ গিয়ে মুহিতের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-“কখন কি ঘটিয়ে ফেললি আমরা টেরই পেলাম না।”
মুহিত হাসি দিয়ে বললো,
-“ভালোবাসা গোপনেই সুন্দর,প্রকাশ করলে আবার নজর লাগতে পারে।”
মুহিতের কথা শুনে সবাই হেসে দিল।কিন্তু সৃজা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“এমন কতগুলো গোপন ভালোবাসা আছে?”
মুহিত ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
-“আরে না তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।ওটা তো কথার কথা বললাম।”
সৃজা ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“পরে যদি কিছু শুনি তখন বুঝবে আমি কে!”
তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“তোর গুন্ডী ভাব আর গেল না সৃজা।”
সৃজা হাসি বললো,
-“ওটা আর যাবে না।”
মুহিত আর সৃজার বিয়ে সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হলো।
এভাবে তিন বছর কেটে গেল।আহাদ আর তৃধার একটা মেয়ে হয়েছে।মেয়ের বয়স দেড় বছর!মুহিত আর সৃজা এখন আমেরিকায় থাকে।অয়ন আর এশাও দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে গেছে।সেখানের এক ভার্সিটিতে দুজনে প্রফেসর হিসেবে নিয়োজিত।তাদের একটা দুই বছরের ছেলে আছে।
আজকে রুহি-জয় আর তোহা-আদির বিয়ে!আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“রুহির টা না হয় জানি কিন্তু আমার শালিকাও দেখি ছুপা রুস্তম!”
তোহা মুখ গোমড়া করে বললো,
-“মোটেও না জিজু।আমি তোমার ভাইয়ের সাথে কোনো প্রেম করিনি।আমি প্রথমেই বলেছিলাম করলে একেবারে বিয়ে করবো আর আজকে সেটাই হচ্ছে।”
আদি ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আর এই তিন বছর ধরে অপেক্ষা করতে করতে আমি আধমরা হয়ে গেছি।”
রুহি পাশে থেকে বললো,
-“সমস্যা নেই বিয়ে হলে আবার জীবিত হয়ে যাবি।”
জয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আর আমি সম্পূর্ণ মৃত হয়ে যাবো।”
রুহি জয়ের পিঠে একটা কিল মারলো।জয় হাসি দিয়ে বললো,
-“আরে আমি মজা করেছি!”
কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছে।আহাদ তার মেয়ে তৃহাকে কোলে নিয়ে তৃধার কাঁধে হাত রেখে তা দেখছে।আহাদ হাসি দিয়ে বললো,
-“আমাদেরও এমন একদিন বিয়ে হয়েছিল তাই না তৃধা।”
-“হ্যাঁ তবে বিয়েটা তোমাকে জোর করে দেওয়া হয়েছিল।”
-“আরে ওটা তো বাইরে বাইরে না করেছি ভিতরে ভিতরে তো রাজি ছিলাম।এই যে তার প্রমাণ এখন আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে।”
তারপরে দুজনে একসাথে হেসে দিল।দুই জোড়া বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।আহাদ আর তৃধা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদ দেখছে।আর তৃহা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।তৃধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আহাদ আমি একটা জিনিস বুঝেছি মানুষ যা মন থেকে চায় তা পায়।এই যে দেখো আমার মন সবসময় বলতো তুমি একদিন আমার হবে।তুমি ঠিকই আমার হয়েছো!”
আহাদ তৃধার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
-“তোমার অনেক ধৈর্য্য!আমি তো আর তোমাকে কম কথা শোনায়নি।”
-“ভালোবাসলে একটু বেহায়া হতে হয় নাহলে তো ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলতে হয়।আর আমি চাইনি আমার ভালোবাসার মানুষ আমার থেকে হারিয়ে যাক।তাই বেহায়া হয়েই না হয় তাকে নিজের করেছি।”
আহাদ তৃধার কানের পাশে একটা গোলাপ গুঁজে দিয়ে বললো,
-“অনেক ভালোবাসি তোমাকে তৃধা।এই ভালোবাসা সবসময় একই থাকবে।”
তৃধা আহাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি আহাদ।সারাজীবন এভাবেই আমার পাশে থেকো!”
হঠাৎ করে তৃহা কেঁদে উঠলো।আহাদ আর তৃধা দুজনেই দ্রুত তার কাছে গেল।তৃধা মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্না থামালো।একটু পরে তৃহা আবার ঘুমিয়ে পড়লো।আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মেয়ে তো দেখছি বাবা-মায়ের ভালোবাসা সহ্য করতে পারে না।এভাবে চললে ওর সঙ্গী তো আসতে পারবে না।”
তৃধা আহাদের কাঁধে একটা থাপ্প*ড় দিয়ে বললো,
-“কি সব যে বলো!”
-“ম্যাডাম এতো লজ্জা পাওয়ার কি হয়েছে।একটা হয়ে গিয়েছে আরেকটা তো আসবেই তাই না!”
দুজনে একসাথে হেসে দিল।আহাদ…তৃধা আর তৃহাকে একসাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমার শান্তি এখানেই মিলে!”
________________#সমাপ্ত________________