#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১১
___________________
তৃধাকে আহাদদের বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।তৃধাকে দেখে আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
-“যাক আমার ঘরের লক্ষী চলে এসেছে।”
আহাদ তৃধার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে হাসছে।আহাদ নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“আম্মু সব তো হয়ে গেল এখন আমি রুমে যাই।আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে!”
পাশে থেকে আদি বললো,
-“এখনি টায়ার্ড হয়ে গেলে হবে নাকি রাত তো এখনো বাকি আছে!”
আহাদ চোখ রাঙিয়ে আদির দিকে তাকালো।আদি আর কিছু না বলে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো।রুহি গিয়ে আহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ভাইয়া তোর যখন এতো টায়ার্ড লাগছে এক কাজ কর তৃধা ভাবিকে কোলে করে তোর রুমে নিয়ে যা।এটা আমার একমাত্র আবদার।আর তোদের কোনো ডিস্টার্ব করবো না।”
আহাদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“কি বলছিস এইসব!বাড়ি ভর্তি মানুষ আর আমি ও-কে কোলে করে রুমে নিয়ে যাবো।”
আদি হাসি দিয়ে বললো,
-“আরে ভাইয়া’ ভাবি তো তোমার বউই।কোলে তুলে নেও সবাই হাততালি দিবে।”
তৃধা বাঁধা দিয়ে বললো,
-“আরে না দরকার নেই।আমি হেঁটেই যেতে পারবো।”
রুহি তৃধার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আমরা জানি ভাবি তুমি হেঁটে যেতে পারবে।এটা আমাদের ইচ্ছা।”
আয়েশা বেগম বললেন,
-“ওরা যখন এতোবার বলছে কোলে করে নিয়ে যা না তৃধাকে আহাদ!”
সবার জোরাজুরিতে আহাদ বাধ্য হয়ে তৃধাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে গেল।তৃধাকে বিছানায় বসিয়ে দরজা লাগাতে গেলে রুহি উঁকি দিয়ে বললো,
-“অল দ্যা বেস্ট!”
আহাদ যেই রুহিকে মা*রতে যাবে সে দৌড়ে চলে গেল।আহাদ দরজার লক লাগিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“দেখুন এইসব ওদের কথায় করেছি।আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আপনাকে কোলে করে নিয়ে আসার!”
কথাগুলো বলে আহাদ ওয়াশরুমের দিকে চলে যেতে গেলে তৃধা আহাদের হাত টেনে ধরলো।আহাদ দাঁড়িয়ে পড়লো।তৃধা তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আহাদ আমি জানি তুমি আমাকে এখন সহ্যই করতে পারো না।তবে প্লিজ আমাকে আর আপনি করে বলো না।আগের মতো তুমি করে বলো।সবার আবদার তো মানলে আমারটা না হয় একটু মানো!”
আহাদ কিছুক্ষণ তৃধার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আহাদ ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“এভাবেই আমি আবার তোমার আপন হয়ে যাবো!”
আহাদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো তৃধা বিছানায় বসে বসে চকলেট খাচ্ছে।যা দেখে আহাদের মুখে হাসি ফুটলো।তৃধা সবসময়ই চকলেট খুব পছন্দ করে।আগেও বাচ্চাদের মতো চকলেট খেতো।এখনও সেই স্বভাবই রয়ে গেছে।আহাদ তৃধার সামনে গিয়ে বসে বললো,
-“বয়স তো কম হলো না এখনো এভাবেই চকলেট খাও!”
আহাদের মুখে তুমি বলে সম্বোধন শুনে তৃধার বেশ ভালো লাগলো।কত বছর পরে আহাদ তাকে তুমি করে বললো!তৃধা হাসি দিয়ে বললো,
-“বয়স বেড়েছে মিস্টার কিন্তু মানুষ তো আর পাল্টে যাইনি।”
আহাদ নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“এইসব ভারি গহনা,শাড়ি পাল্টে অন্য কিছু পড়ো।রিলাক্স ফিল করবে!”
তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এতো কেয়ার?”
-“এটুকু কেয়ার সবার প্রতিই দেখানো যায়।”
আহাদ কথাটা বলে মোবাইল চালাতে শুরু করলো।তৃধা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল।কিছুক্ষণ পরে একটা লাল শাড়ি পড়ে বের হলো।লাল শাড়িতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে তৃধাকে!তৃধা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলে বেণু করতে শুরু করলো।আহাদ তৃধাকে দেখতে ব্যস্ত!যা তৃধা ড্রেসিং টেবিলের আয়না থেকে দেখতেছে।বেণু করা শেষ হতে তৃধা বললো,
-“এতো দেখলে যে নজর লেগে যাবে!”
আহাদ আর কিছু না বলে চোখ সরিয়ে ফেলল।তৃধা গিয়ে আহাদের পাশে বসে বললো,
-“কি হলো লজ্জা পেলে নাকি?”
আহাদ তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি মেবি আমাকে বশ করার চেষ্টা করতেছো?”
তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মানে?”
-“নাহলে ইদানীং এতো সুন্দর লাগছে কেনো তোমাকে!”
আহাদের কথা শুনে তৃধা হেসে দিল।কিছুক্ষণ পরে হাসি থামিয়ে বললো,
-“কেনো এর আগে সুন্দর লাগতো না?”
-“সুন্দর তো সবসময়ই লাগে।কিন্তু আগে আমার নিজের প্রতি কন্ট্রোল ছিল।তাকাবো না মানে তাকাবো না।কিন্তু সেই কন্ট্রোল বর্তমানে হারিয়ে ফেলেছি!”
তৃধা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“এখন তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমাদের তাই হয়তো মনের মাঝে থেকে দ্বিধাবোধটা অনেকটা কেটে গিয়েছে।”
-“সবকিছু এতোটা সহজ না তৃধা।তুমি আমাকে যা কষ্ট দিয়েছো তা আমি কোনোদিন ভুলবো না।”
-“আহাদ আজকের দিনে এইসব না মনে করালে হয় না?”
-“না হয় নাহ্!প্রতিটা ক্ষণে আমার ওইদিনটার কথা মনে হয় যেদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে। এতো সহজে তো ভুলে যাওয়া সম্ভব না।”
তৃধা আহাদের এক হাত শক্ত করে ধরে বললো,
-“এই যে হাত ধরলাম আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।এক মৃত্যু ছাড়া আমাদের আর কিছুতেই আলাদা করতে পারবে না।”
আহাদ কিছুক্ষণ তৃধার দিকে তাকিয়ে থেকে তার হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
-“অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো।আর শোনো বিছানার একপাশে তুমি শুবে আরেকপাশে আমি!কিন্তু আমাকে টার্চ করতে পারবে না।”
তৃধা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,
-“আসছে!উনাকে টার্চ করার জন্য মনে হয় আমি ম*রে যাচ্ছি।”
তৃধা কথাগুলো বলে উল্টো দিকে মুখ করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো।আহাদ মৃদু হেসে অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
–
–
–
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতে আহাদ দেখলো তৃধা তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।তৃধার ঘুমন্ত মুখ দেখে আহাদের মুখে হাসি ফুটলো।
-“ভেবেছিলাম আমি তোমাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি আর আজ তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছো তৃধা!কিন্তু আমি তো তোমাকে এতো সহজে মেনে নিতে পারছি না তৃধা।আমার বুকের গভীরের ক্ষত তো মুছে যাচ্ছে না!তবে আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো তৃধা।বিয়েটা যখন একবার হয়েই গিয়েছে আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”
তৃধা হঠাৎ নড়েচড়ে উঠতে আহাদ চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলো।তৃধা চোখ খুলে দেখলো সে আহাদকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।যা দেখে তার মুখে হাসি ফুটলো!
-“হায় মাশা-আল্লাহ কি সুন্দর আমার বরটা!কত কিউট লাগতেছে ঘুমন্ত মুখখানা দেখে।জেগে থাকলে তো এতোক্ষণে এই জড়িয়ে ধরে আছি দেখে কটকট শুরু করতো।”
তৃধা তারপরে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল আটটা বাজে।সে আহাদকে ছেড়ে উঠে বসে বললো,
-“না বাড়ি ভর্তি মানুষ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমানো ঠিক হবে না।যাই ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে আমার শ্বাশুড়ি মাকে সাহায্য করি!”
তৃধা বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।তৃধা ওয়াশরুমে যেতে আহাদ উঠে বসে হাসতে হাসতে বললো,
-“এই মেয়ের বাচ্চামি আর যাবে না।এতো বড় ডাক্তার আর এখনো বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা বলে!”
_________________
-“আপু চল না চাচি মা তোর কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করতেছিল।”
আদির কথা শুনে এশা বললো,
-“না রে আমার শরীরটা ভালো না।তুমি যা আমি বরং কালকে বৌভাতে যাবো!”
-“শরীর ভালো না মানে কি হয়েছে তোর?”
-“আরে তেমন কিছু না এমনিই ভালো লাগছে না।”
-“আচ্ছা তাহলে রেস্ট নে।আমি বরং যাই।”
-“হ্যাঁ যা।”
আদি আহাদদের বাড়িতে চলে গেল।এশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আমার জীবন থেকে এভাবেই আমার ভালোবাসার মানুষগুলো হারিয়ে যায়।প্রথমে আম্মু তারপরে আহাদ!”
এশার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
_______________
তৃধা নিচে নেমে আয়েশা বেগমের কাছে গিয়ে বললো,
-“মা বলো কি করতে হবে!”
আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
-“তোর মুখে মা ডাক শুনে ভালো লাগলো।আর তোকে কিছু করতে হবে না।সকালের সব নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে।তুই বরং আমার সাথে চল আহাদের বড় ফুপির সাথে দেখা করতে।উনি বিয়েতে ছিলেন না আজকে এসেছেন!”
তৃধা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।আয়েশা বেগম তৃধাকে নিয়ে রুমা বেগমের কাছে গেলেন।তৃধা’ রুমা বেগমকে সালাম করলেন।তৃধাকে দেখে রুমা বেগম বললেন,
-“দেখে তো মনে হচ্ছে মেয়ের বয়স কম হবে না।আয়েশা এতো বয়স্ক মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিলে কি মনে করে!কিছুদিন পরে তো মেয়ে বুড়ি হয়ে যাবে তখন সংসার বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে তো হিমশিম খেয়ে যাবে।বিয়ে দেওয়া উচিত ছেলের থেকে কম বয়সের মেয়ের সাথে আর তুমি সমবয়সী মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে!”
আহাদ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রুমা বেগমের কথাগুলো শুনতে পেল।সে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।তৃধার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আহাদ তৃধার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ফুপি তোমার চিন্তা ভাবনা দেখে তো আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।ছেলের বয়স বেশি হলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু মেয়ের বয়স বেশি হলেই সমস্যা!এই যুগে এসে তুমি এইসব চিন্তাধারা কিভাবে পুষে রাখো!আর শোনো তৃধা আমার বউ।ওর বয়স বেশি না কম সেটা আমি দেখবো।তা তোমার দেখার বিষয় না।খাও-দাও-থাকো কিন্তু তৃধাকে নিয়ে কোনো কথা বলবে না।তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
আহাদ কথাগুলো বলে স্টাডি রুমের দিকে চলে গেল।
#চলবে………………..
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]