বিরহডোরে বাঁধিয়াছি তারে পর্ব-১০

0
220

#বিরহডোরে_বাঁধিয়াছি_তারে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১০
___________________
দেখতে দেখতে আহাদ আর তৃধার হলুদের দিন চলে আসলো।অনেক চেষ্টা করেও আহাদ বিয়েটা ভাঙতে সক্ষম হয়নি।তাই সে হাল ছেড়ে দিয়ে বিয়েটা মেনে নেওয়ার চেষ্টায় মনোনিবেশ করেছে!

হলুদ রঙের শাড়ি আর ফুলের গহনায় সাজানো হয়েছে তৃধাকে।দেখে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে হলুদ পরী নেমে এসেছে।তৃধা আর আহাদের হলুদের অনুষ্ঠান একসাথেই আয়োজন করা হয়েছে।দুজনে পাশাপাশি বসে আছে।আহাদ আড়চোখে তৃধাকে দেখছে।যা তৃধা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে!তৃধা সরাসরি আহাদের দিকে তাকালে আহাদ সামনের দিকে তাকিয়ে বসলো।তৃধা এক পলকে আহাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-“সিম্পল হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতেও কোনো ছেলেকে এতো সুন্দর লাগতে পারে!”

তৃধার কথা শুনে আহাদ তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কি সব বলছেন?”

-“যা শুনেছো তাই বলেছি।আমি তো আর তোমার মতো না যে দেখেও কোনো কমপ্লিমেন্ট দিবো না!”

-“আপনাকে দেখতেছে কে যে আবার কমপ্লিমেন্টের কথা বলেন।”

-“হ্যাঁ এতোক্ষণ যে আড়চোখে দেখছিলে তা আমি ভালো করেই জানি।এতো ভাব না দেখালেও হবে।”

আহাদ কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল।কি আর বলবে সে তো আসলেই আড়াচোখে তৃধাকে দেখছিল।আজকে তৃধাকে এতো সুন্দর লাগছে যে তার চোখ সরাতে মন চাইছে না তার দিক থেকে।কিন্তু অজানা এক বাঁধা তাকে ঘিরে রেখেছে!

আদি গিয়ে তোহার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

-“হলুদ লেহেঙ্গাতে কিন্তু বেশ মানিয়েছে তোমাকে!”

-“থ্যাংকস!”

তোহার আদির সাথে কথা বলার মুড নেই।কারণ সেদিন তোহা শপিংমলে ওই কথা বলার পরে থেকে আদি একেবারে নিখোঁজই হয়ে গেছিল।আজ আবার দেখা হলো তাদের!আদি ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-“আই নো তুমি রাগ করেছো!”

তোহা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“আমি কেনো রাগ করবো?”

-“এই যে এতোদিন তোমার সাথে একবারও যোগাযোগ করিনি।”

-“যোগাযোগ করবেন না তা তো জানা কথাই।এখনকার ছেলেরা প্রেম করতে আসে বিয়ে না।”

আদি হাসি দিয়ে বললো,

-“তোমার ধারণা ভুল!আহাদ ভাইয়া আর তোমার বোন মানে আমার ভাবির বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি।আর শোনো আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি।তুমি প্রেম করতে চাও না করো না!তবে বিয়ে কিন্তু আমাকেই করতে হবে।নাহলে কিন্তু কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো!”

আদি কথাগুলো বলে মুচকি হেসে চলে গেল।তোহার মুখে হাসি ফুটলো।



-“এতো সুন্দর করে যে সেজে এসেছেন সব ছেলেরা তো ফিদা হয়ে যাবে।পরে আমার কি হবে!”

মুহিতের কথা শুনে সৃজা তার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললো,

-“এইসব ফ্লার্টিং অন্য কারো সাথে গিয়ে করেন।আমার সাথে না!”

মুহিত মুখ গোমড়া করে বললো,

-“আপনি আমার মুডটাই নষ্ট করে দেন।”

-“তা যে মুড ভালো করতে পারে তার কাছে যান।”

-“না আপনার কাছেই থাকবো।আপনি না হয় শিখে নিন কিভাবে মুড ভালো করতে হয়।”

-“আমার শিখতে বয়েই গেছে।”

মুহিত সৃজার কানের কাছে গিয়ে বললো,

-“ডাক্তারি তো অনেক করলেন এখন না হয় একটু প্রেমবিলাস করুন!”

সৃজা ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“আপনার মতো ইবলিশের সাথে প্রেমবিলাস করার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।”

-“আমি ইবলিশ?”

-“একদম!”

মুহিত আর কিছু না বলে মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে।সৃজা হাসি দিয়ে বললো,

-“টেক ইট ইজি মুহিত জি!আমি মজা করে বলেছি।”

-“মুহিত জি!বাহ্ সুন্দর লাগলো তো ডাকটা।”

-“আপনি এতো কথা না বলে এখন এখান থেকে যান আমি এখন তৃধার কাছে যাবো।”

মুহিত হাসি দিয়ে বললো,

-“আচ্ছা যান আজকে না হয় আর ডিস্টার্ব করলাম না।কালকে আবার করবো নে!”

মুহিত কথাগুলো বলে চলে গেল।সৃজা হাসি দিয়ে তৃধার কাছে গেল।

_____________
-“তোর এখন ভিডিও কল দেওয়ার কি দরকার ছিল জয়?”

-“বাহ্ রে তুই কেমন সেজেছিস দেখবো না তা!”

-“হ্যাঁ তুই ওই বন্ধুদের নিয়ে বান্দরবানে বান্দর সেজে বসে থাক আমাকে দেখা লাগবে না।”

-“আরে রাগ করছিস কেনো!চলে আসবো তো দুদিন পরে।”

-“এখন থাকলে ভাইয়ার বিয়েতে থাকতে পারতি না?আমিও এই সুযোগে আম্মু-আব্বুর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিতাম।”

-“আচ্ছা আমি ফিরেই সবার আগে তোর বাবা-মার সাথে পরিচিত হবো কথা দিলাম।”

রুহি আর কিছু না বলে মুখ ভেঙচি কাটলো।জয় মুখ গোমড়া করে বললো,

-“এখন একটু হাসি দে।তোকে না হাসলে ভালো লাগে না!”

রুহি কিছুক্ষণ জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিল।জয় বা পাশের বুকে হাত দিয়ে বললো,

-“হায় এখানে এসে লাগলো!”

তারপরে দুজনে একসাথে হেসে দিল।রুহি কল কাটতে তোহা এসে হাজির হলো।কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,

-“আমি তোকে সারা জায়গায় খুঁজে রেড়াচ্ছি আর তুই এখানে এসে প্রেম করতেছিস।তাড়াতাড়ি চল আমরা একসাথে হলুদ ছোঁয়াবো!”

-“আচ্ছা চল।”

রুহি আর তোহা গিয়ে একসাথে হলুদ লাগালো আহাদ আর তৃধাকে।অনেক আনন্দের সাথে হলুদের দিন পাড় করলো সকলে!

বিয়ের দিন,
তোহা তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“অনেক মিস করবো আপু তোকে!”

তৃধা তোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“আমিও তোকে অনেক মিস করবো রে।”

সৃজা এসে বললো,

-“অনেক দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে চল এখন আমাদের জিজু তোর জন্য বসে আছে।”

সৃজা আর তোহা মিলে তৃধাকে নিয়ে গিয়ে আহাদের পাশে বসালো।আহাদ তৃধার দিকে তাকাতে দেখলো লাল বেনারসিতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাকে!আহাদের চোখ সরাতেই মন চাইছে না।তৃধা আহাদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

-“বাহ্!তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো?আমি তো ধন্য হয়ে গেলাম।”

তৃধার কথা শুনে আহাদ চোখ সরিয়ে ফেললো।নিজেকে সামলে বললো,

-“সুন্দর লাগছে!”

আহাদের কথা শুনে তৃধার মুখে হাসি ফুটলো।কত বছর পরে আহাদ তার প্রশংসা করলো!সে আহাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বললো,

-“সাদা শেরওয়ানিতে কিন্তু তোমাকে বেশ মানিয়েছে!”

আহাদ কিছু না বলে মৃদু হাসলো।

কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়িয়ে গেলেন।আহাদ আর তৃধার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।তৃধার চোখ দিয়ে একভাবে পানি পড়ছে কিন্তু তার মুখে হাসি।আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কান্না করার কি আছে?আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।”

-“এটাকে খুশির কান্নাই বলে।”

আহাদ আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সবার থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আহাদ আর তৃধাকে দেখছে এশা।তার চোখ ছলছল করছে।চোখ বন্ধ করতে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সে নিজেকে সামলে বললো,

-“আমি কখনোই তোর সুখের জীবনে বাঁধা হয়ে আসবো না আহাদ।আমার ভালোবাসা না হয় অপূর্ণই থাকলো।তোর পূর্ণতায় না হয় আমি পূর্ণ হলাম।”

এশা কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেল।রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে এশা।সে নিজের মাঝে নেই।হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিবে এমন সময় অয়ন এসে তার হাত টেনে ধরে রাস্তার অন্য পাশে নিয়ে গেল।তারপরে ঠাস করে এশার গালে একটা চ*ড় দিয়ে অয়ন বললো,

-“কি করছিস এইসব তুই?এতো ম*রার শখ জেগেছে কেনো?”

এশা গালে হাত দিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর নিজেকে সামলে বললো,

-“আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতি হয়তো।”

-“এশা আমি তোর চেয়েও খারাপ জায়গায় আছি।নিজের ভালোবাসার মানুষ যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে তা সহ্য করা কম কষ্টের নয়!”

-“আমার মতো মরিচিকার পিছনে ছুটিস না অয়ন।কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবি না।”

অয়ন হাসি দিয়ে বললো,

-“কিছু মানুষ কষ্ট পেয়ে খুশি হয়।ধরে নে আমি তাদেরই একজন!”

এশা কিছুক্ষণ অয়নের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-“তুই এখানে কি করছিস?”

-“এদিক দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম তখনই তোকে দেখলাম।”

-“আচ্ছা তাহলে বাড়ি যা।আমিও বাড়ি যাই ভালো লাগছে না আমার।”

-“চল আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।”

-“দরকার নেই আমি যেতে পারবো।”

-“বেশি কথা না বলে গাড়িতে উঠে বস।”

এশা আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো।অয়ন গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

-“এশা এভাবে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করবি না।”

এশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।এশাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতে এশা গাড়ি থেকে নেমে বললো,

-“ভিতরে চল।”

-“তোর বাড়িতে কেউ আছে?”

-“না।বাবা আর আদি তো আহাদের বিয়ের ওইখানে!”

-“তাহলে যাওয়া ঠিক হবে না।তুই যা আমি পরে আসবো নে।”

অয়ন গাড়ি চালিয়ে চলে গেল।এশা মৃদু হেসে বললো,

-“ছেলে তো বেশ বুঝদার!”

এশা বাড়ির ভিতরে চলে গেল।



খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে তৃধাকে নিয়ে আহাদদের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।আহাদ আর তৃধা পাশাপাশি বসে আছে।আদি গাড়ি ড্রাইভ করছে রুহি তার পাশের সিটে বসে আছে।আদির মনমরা দেখে রুহি বললো,

-“কি হয়েছে তোর?”

-“জানিসই তো আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন!”

রুহি বুঝতে পারলো তোহাকে নিয়ে যেতে পারেনি দেখে আদির মন খারাপ।কিন্তু তোহা তাদের সাথে আসলে রাহেলা বেগম একা হয়ে যেতেন।রুহি আদিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,

-“মন খারাপ করিস না একদিন পরেই দেখা হবে!”

আদি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।আহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“তোরা কি ফিসফিস করছিস?”

রুহি ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

-“তুই আমাদের দিকে মন না দিয়ে ভাবির দিকে দে।”

আহাদ রুহির কথা শুনে তৃধার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে হাসছে।আহাদ চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“তুই বেশি চালাক হয়ে গেছিস।”

-“তা তো আমি জন্ম থেকেই!”

#চলবে……………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে